রাস্তায় নেমে দ্রুতপায়ে চলে এল রানা বিশগজ দূরে মোডের পাবলিক টেলিফোন বুদে। রিঙ করল সোহানাদের হোটেলের নাম্বারে। পুরো দুই মিনিট লাগল ওর রিসিপশনের বুড়িকে বোঝাতে যে সোহানাকে চায় ও। আরও তিন। মিনিট পর ধরল সোহানা।
হ্যালো, কে বলছেন?
বস্। মাসুদ রানা। এই মুহূর্তে রওনা হয়ে যাও তোমরা আমার হোটেলের উদ্দেশ্যে।
এখন? প্রায় আর্তনাদ করে উঠল সোহানা। শ্যাম্পু করছিলাম…
ঠিক আছে, চুল মুছে নেয়ার জন্য দুই মিনিট সময় দেয়া গেল। দুই মিনিটের মধ্যে রওনা হয়ে যাও। মারিয়া কোথায়?
ঘুমোচ্ছে।
তোলো ওকে। ওরও আসতে হবে। দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছবে এখানে এসে। ভেতরে ঢুকবে না। সদর দরজা থেকে বিশ-পঁচিশ গজ দূরে অপেক্ষা করবে কোথাও।
কিন্তু বৃষ্টি নামবে মনে হচ্ছে আবার। বৃষ্টি নামলে?
ভিজতে না চাইলে ছাতা আনবে সঙ্গে। শোনো, কিছুক্ষণের মধ্যে। একটা মেয়ে বেরিয়ে আসবে এই হোটেল থেকে। তোমার সমানই লম্বা, তোমারই বয়স, তোমারই মত ফিগার–শুধু চুলটা সোনালী।
কমপক্ষে দশ হাজার মেয়ে আছে এই শহরে ঠিক এই রকম।
উঁহু। এই মেয়েটা সুন্দরীও। তোমার মত অতটা না, তবে সুন্দর। সবুজ একটা কোট থাকবে মেয়েটার গায়ে, সবুজ একটা ছাতাও থাকবে সঙ্গে, স্যান্ডাল উড পারফিউম মেখেছে, যদি কাছে থেকে লক্ষ করবার সুযোগ হয়–দেখবে বামদিকের জুলফির কাছে কায়দা করে ঢাকা-একটা ক্ষতচিহ্ন আছে। গতকাল বিকেলে আমার সাথে এক সংঘর্ষে সৃষ্টি হয়েছে ওই ক্ষতচিহ্ন।
তোমার সাথে সংঘর্ষ! মেয়েমানুষের? আজকাল সুন্দরী মেয়েদের সাথেও মারামারি করছ এ খবরটা তো জানা ছিল না? আমাদের জানাবার। প্রয়োজন বোধ করোনি নিশ্চয়ই?
প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি কথা মনে রাখা এবং অধীনস্থ কর্মচারীদের জানানো আমার জন্যে ফরজ নয়। মেয়েটাকে অনুসরণ করতে হবে তোমাদের। কোথায় যায় দেখবে, একজন পাহারায় থাকবে, আরেকজন ফিরে এসে রিপোর্ট করবে আমার কাছে। না–এই হোটেলে ঢুকতে পারবে না। রেমব্রান্টপ্লেইনের শেষ মাথায় ওল্ডবেল নামে একটা পা আছে–ওখানেই। পাবে আমাকে প্রায় মাতাল অবস্থায়। বোঝা গেছে? ওভার।
দ্রুতপায়ে ফিরে এল রানা। সবুজ কোট পরা মেয়েটা তেমনি বসে আছে সেই টেবিলে, ডুবে আছে খবরের কাগজে। রিসিপশন ডেস্ক থেকে গোটাকয়েক সাদা কাগজ চেয়ে নিয়ে ফিরে এল রানা নিজের টেবিলে, এবার একটু কাত হয়ে বসল, যেন ওর কার্যকলাপ সহজেই লক্ষ করতে পারে। মেয়েটা।
গ্লাসে একটা ছোট্ট চুমুক দিয়ে ওয়ালেট থেকে গত রাতের ডিনার বিলটা বের করে টেবিলের ওপর বিছাল রানা, তালু দিয়ে ঘষে সমান করল, তারপর একটা বলপয়েন্ট পেন বের করে সাদা কাগজের ওপর নোট লিখতে শুরু করল। খানিকক্ষণ নোট করবার পর বিরক্ত হয়ে পেনটা নামিয়ে রাখল সে টেবিলের ওপর, কাগজটা দলা-মোচড়া করে ফেলে দিল কাছেই একটা ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে। আবার লিখতে শুরু করল আরেকটা কাগজে। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই আবার অসন্তোষ ফুটে উঠল ওর চোখেমুখে, ভঙ্গিতে। এই কাগজটাও দলা পাকিয়ে ফেলে দিয়ে আবার নতুন করে শুরু করল। বারকয়েক এইভাবে হিসেব মেলাবার ব্যর্থ চেষ্টা করে যেন হাল ছেড়ে দিয়েছে, এমনি ভঙ্গিতে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল সে পাঁচমিনিট। একটা সিগারেট শেষ হয়ে যেতেই ধরাল আরেকটা, যেন অত্যন্ত জটিল কোন সমস্যার সমাধান বের করবার চেষ্টা করছে সে, ডুবে আছে গভীর চিন্তায়। আসলে সময় পার করছে রানা। দশ মিনিটের মধ্যে আসতে বলেছে সে। সোহানাকে, কিন্তু আরও অন্তত দশটা মিনিট সময় দেয়া দরকার ওদের হাজার হোক মেয়ে, তৈরি হয়ে নিয়ে বেরোতে একটু দেরি হবেই।
খানিকক্ষণ চিন্তায় মগ্ন থেকে আবার লেখায় মন দিল রানা-কয়েক মিনিট। ধরে লেখে, কয়েক মিনিট সেটা পড়ে, তারপর কাগজটা লাড্ড পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেলে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে। এইভাবে বিশ মিনিট পার করে হতাশ। ভঙ্গিতে উঠে পড়ল রানা প্লাসের অবশিষ্ট তরল পদার্থ গলাধঃকরণ করে, বারম্যানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল বার থেকে। বেরিয়ে গেল মানে, প্লাশ কার্টেনের আড়ালে গিয়েই থেমে দাঁড়াল। পর্দার আড়াল থেকে সাবধানে চোখ রাখল মেয়েটার ওপর। উঠে দাঁড়াল মেয়েটা, বার কাউন্টারের কাছে গিয়ে অর্ডার দিল আরেকটা ড্রিঙ্কের, তারপর যেন কোন চেয়ারে। বসেছিল ভুলে গিয়েছে এমনি ভঙ্গিতে বসে পড়ল রানার ছেড়ে যাওয়া চেয়ারে। কেউ লক্ষ করছে কিনা দেখবার জন্যে সহজ দৃষ্টিতে এপাশ-ওপাশ চাইল, তারপর আলগোছে তুলে নিল একটা দলা পাকানো কাগজ।
নিঃশব্দে এগোল রানা মেয়েটার দিকে। কাগজটা সোজা করেই কেমন একটু বিবর্ণ হয়ে গেল মেয়েটার চেহারা। বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রয়েছে সে। লেখাগুলোর দিকে। কাগজের ওপর বড় হাতের অক্ষরে লেখা রয়েছে বোকা মেয়ে। কেমন জব্দ?
আর সব কাগজেও এই একই গোপন বার্তা রয়েছে, বলল রানা। গুড ইভনিং, মিস শেরম্যান।
মেয়েটা এত জোরে পাশ ফিরল যে কড়মড় করে পিঠের হাড় ফুটল। রানার মুখের দিকে চেয়েই দপ করে নিভে গেল ওর চোখের জ্যোতি। প্রথমে একটু ফ্যাকাসে হয়ে গেল, তারপরেই লাল হয়ে উঠল ওর মুখটা। লজ্জায়।
বাহ! খুব কম মেয়েই পারে এত সুন্দর ব্লাশ করতে।
আমি দুঃখিত। ইংরেজি বলতে পারি না।