সত্যিই সুখী হব, বলল মাগেনথেলার, যদি আমরা দুজন মিলে কিছু একটা কিনারা করতে পারি। চেয়ারে বসে রানার দিকে ঝুঁকে এল। আমরা জানি, বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স থেকে এসেছেন আপনি আসলে। যদিও ফিলিপ কার্টারেটের ছত্রছায়ায় এসেছেন আপনি এখানে, আমরা ধরে নিচ্ছি আপনার আসল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের ট্রাফিক বন্ধ করা। কাজেই। একেবারে গোড়া থেকে আমাদের আলোচনা শুরু হলেই সব দিক থেকে মঙ্গল। শোনা যাক, বাংলাদেশে ঠিক কতটা অগ্রসর হয়েছেন আপনারা। সাপ্লাই রিঙ ব্রেক করবার পর্যায়ে পৌঁছেছেন?
বেশ কয়েক মাস আগেই। বলল রানা। ট্রাফিক চ্যানেল সম্পর্কে মোটামুটি জানা আছে আমাদের, অত্যন্ত সংঘবদ্ধ একটা ডিসট্রিবিউশন পাইপ লাইনেরও সন্ধান পেয়েছি।
কোনদিকে ইন্টারেস্ট আপনাদের ট্রাফিক চ্যানেল নাকি ডিসট্রিবিউশন পাইপ লাইন?
সত্যি কথা বলতে কি, বার্মা, ভারত আর নেপাল থেকে কিভাবে, কাদের মাধ্যমে বিরাট সব কনসাইনমেন্ট চালান হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে সেটা আমরা জানি–অর্থাৎ, ট্রাফিক চ্যানেল আমাদের সমস্যা নয়। আমরা জানি এই মাল কোথায় যাচ্ছে। আমরা জানি ফিনিশড গুড হিসেবে এই মালের বিরাট এক অংশ আবার ফিরে যাচ্ছে বাংলাদেশে। যারা ডিসট্রিবিউট করছে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের গতিবিধি আমাদের নখদর্পণে। অনেক কিছুই জানা আছে, কিন্তু আমরা যেটা জানি না সেটা হচ্ছে বাইরে থেকে কোন পথে, কিভাবে ঢুকছে ফিনিশড় গুড় আমাদের দেশে; জানি না, কে বা কারা কলকাঠি নাড়ছে গোটা ব্যবসাটার মাথায় বসে।
আপনি বলতে চান বাংলাদেশ হয়ে যে কাঁচামাল বাইরে যাচ্ছে সে ব্যাপারে আপনারা পূর্ণ ওয়াকিফহাল? অবাক হলো ইন্সপেক্টর মাগেনথেলার। এমন কি ফিনিশড গুড যারা ডিসট্রিবিউট এবং বিক্রি করছে তাদেরও কারও কারও গতিবিধি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে আপনাদের? তাই যদি হয়। তাহলে চুপচাপ বসে আঙুল চুষছেন কেন? টপাটপ সবটাকে ধরে ফেললেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না?
মাথা নাড়ল রানা, তারপর জিজ্ঞেস করল, তাতে কি লাভ হবে, ইন্সপেক্টর? আমরা একটা রিঙ ব্রেক করব, একটা মাস অচল হয়ে যাবে ওদের সবকিছু, কিন্তু একমাসের মধ্যেই আরও আন্ডারগ্রাউন্ডে আরও সাবধানে চালু হয়ে যাবে আরেকটা রিঙযাদের খুঁজে বের করা আরও মুশকিল হবে। আমরা যতবার ভাঙব, ততবারই ওরা আরও নিত্য নতুন কৌশলের আশ্রয় নেবে। আমরা গোড়াটা ধ্বংস করতে চাই। শুধু কিভাবে পাঠানো হচ্ছে। আমার দেশে হেরোইন সেটা জানলেই চলবে না, আমরা জানতে চাই কে পাঠাচ্ছে ওসব।
আপনার অনুমান–অবশ্য তা নইলে এখানে এসে হাজির হতেন না আপনি যে হেরোইনের সাপ্লাইটা যাচ্ছে এখান থেকে, কিংবা আশেপাশেরই কোন জায়গা থেকে?
আশেপাশের কোন জায়গা থেকে নয়। যাচ্ছে এখান থেকেই। আর এটা অনুমান নয়। আমার ধারণা। আমি জানি। আমরা যাদের গতিবিধির ওপর নজর রেখেছি, তাদের শতকরা নব্বই ভাগেরই যোগাযোগ রয়েছে এদেশের সঙ্গে আরও স্পষ্ট ভাষায় বলতে গেলে, অ্যামস্টার্ডামের সঙ্গে। নব্বই ভাগই তাই। এখানে হয় আত্মীয়স্বজন আছে, নয়তো বন্ধুবান্ধব আছে; হয়। বিজনেস কন্ট্যাক্ট আছে, নয়তো নিজেদের ব্যবসা আছে, অথবা ছুটি কাটাতে। আসে এখানে প্রায়ই। গত একটা বছর ধরে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তৈরি করেছি। আমরা ওদের ডোশিয়ে।
অর্থাৎ, আপনারা সেন্ট পার্সেন্ট শিওর? জিজ্ঞেস করল কর্নেল।
ফাইভ হানড্রেড পার্সেন্ট।
মাগেনথেলার জিজ্ঞেস করল, ওই ডোশিয়ের কপি আছে?
আছে। একটা।
আপনার কাছে?
হ্যাঁ।
আপনার সঙ্গেই আছে?
হ্যাঁ। অত্যন্ত নিরাপদ জায়গায়। নিজের মাথায় টোকা দিয়ে দেখাল। রানা।
খুবই নিরাপদ জায়গা, সন্দেহ নেই, বলল কর্নেল ডি গোল্ড। মাথা আঁকাল। তারপর চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনার এমন লোকের সঙ্গে দেখা হচ্ছে যে কিনা আপনারই পদ্ধতিতে সমস্যা সমাধানে অভ্যন্ত।
আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না, কর্নেল।
জটিল ধাঁধা আর রূপকে কথা বলা আমার একটা বদভ্যাস, অমায়িক ভঙ্গিতে বলল কর্নেল, পরমুহূর্তে গম্ভীর হয়ে গেল। ঠিক আছে, স্বীকার করে নিচ্ছি। সবদিক থেকে আঙুল দেখাচ্ছে সবাই এখন নেদারল্যান্ডের দিকে। আমাদের এই দুর্নামের কথা আমরা যে জানি না তা নয়। আমরাও জানি। এই দোষারোপ যদি অসত্য হত, সূখী হতাম। কিন্তু আমরা জানি, বিরাট সব। কনসাইনমেন্ট আসছে বার্মা, ভারত, নেপাল আর টার্কি থেকে। আমরা জানি, পপি রূপান্তরিত হচ্ছে হেরোইনে আমাদের এখানেই; জানি, এখান থেকে। আবার ছড়িয়ে পড়ছে সারা দুনিয়াময়–শুধু জানি না কোথায়, কিভাবে কি হচ্ছে।
অথচ এটা আপনাদের এলাকা। নরম গলায় বলল রানা।
অর্থাৎ?
আইন রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপর।
এই দোষারোপের সঙ্গে আমরা অপরিচিত নই, মেজর মাসুদ রানা। জ্ব কুঁচকে বলল মাগেনথেলার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যে আমরা সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারছি না সেটাও বহুবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে আমাদের বহু দেশ। কিন্তু দোষারোপ করে কি বন্ধুত্ব অর্জন সম্ভব?
আমি এখানে বন্ধুর সংখ্যা বাড়াতে আসিনি, ইন্সপেক্টর। ইন্টারপোল। থেকে দায়িত্ব নিয়ে এসেছি কাজে।
ঠিক বলেছেন, বলল কর্নেল ডি গোল্ড। আপনার কাজটা হচ্ছে, যারা মানুষকে ধ্বংস করছে তাদের ধ্বংস করা। আপনার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি আমরা। আপনার সম্পর্কে চমৎকার একটা ভোশিয়ে রয়েছে আমাদের কাছে। দেখতে চান?