ওকে ওর বাসায় পেলাম না। ওখানেই জানতে পারলাম আপনার। এখানে কাজ করে মেয়েটা।
মেয়ে?
হ্যাঁ। ওর নাম হচ্ছে বিট্রিক্স শেরম্যান।
কি নাম বললেন? বিট্রিক্স শেরম্যান। উঁহু। যেন রানাকে সাহায্য করতে পারলে সুখী হত, কিন্তু মা পারায় বিব্রত বোধ করছে, এমনি ভঙ্গিতে বলল লোকটা, এখানে কাজ করে? অনেক মেয়েই কাজ করে এখানে, কিন্তু ওই নামেনাহ, ওই নামে কেউ আছে বলে তো মনে পড়ছে না!
কিন্তু ওর প্রতিবেশীরা যে বলল এখানেই কাজ করে? বোকা হয়ে। যাওয়ার ভাব করল রানা।
নিশ্চয়ই ভুল হয়েছে কোথাও। স্যামুয়েল?
প্যাঁচামুখ করে মাথা নাড়ল লম্বা লোকটা। ও নামে কেউ নেই আমাদের এখানে।
আগে ছিল? সহজে হাল ছাড়তে চাইল না রানা।
বিরক্ত ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকাল স্যামুয়েল, এগিয়ে গিয়ে দেয়ালের গায়ে বসানো ফাঁইলিং ক্যাবিনেটের একটা ড্রয়ার টেনে তার মধ্যে থেকে ফাইল বের করল একখানা। ঝপাং করে সেটা রানার সামনে টেবিলের উপর ফেলে বলল, গত একবছর ধরে যত মেয়ে এখানে কাজ করেছে বা করছে তাদের। সবার নাম ঠিকানা লেখা রয়েছে। নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন।
এর উপর আর কোন কথা চলে না। ফাইলের দিকে না চেয়ে সোজা। গুডবডির দিকে চাইল সে, হাসল লজ্জিত ভঙ্গিতে। বোঝা যাচ্ছে, ভুল তথ্য দিয়েছে ওরা। আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।
রানার উঠি উঠি ভাব দেখে সামান্য একটু প্রসন্নতার আভাস ফুটে উঠল গুডবডির মুখে। হয়তো কৃপা হলো। বলল, আমার মনে হয়, আশেপাশে আরও নাইট-ক্লাব আছে, সেখানে খোঁজ করলে পেয়ে যেতেও পারেন। কথাটা শেষ করবার আগেই চশমাটা লাগিয়ে নিয়ে কাজে মন দিল। ম্যানেজার। খসখস করে লিখছে একটা কাগজের উপর দামী পার্কার বলপেন, দিয়ে। চোখ না তুলেই বলল, গুড ডে, মিস্টার রবার্টসন।
ইতিমধ্যেই দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করছে স্যামুয়েল। রানাও এগোল ওর পেছন পেছন। দরজার কাছে গিয়ে আবার পেছন ফিরল সে। মুখে লজ্জিত হাসি টেনে এনে বলল, সত্যিই অত্যন্ত দুঃখিত
গুড ডে। মাথা তুলবার প্রয়োজন বোধ করল না লোকটা। ব্যস্ত। দুই সেকেন্ড অনিশ্চিত হাসি হেসে সৌজন্যের খাতিরে আস্তে করে ভিড়িয়ে দিল। রানা দরজাটা। মনে মনে আশা করল, কেবল পুরু আর ভারীই নয়, দরজাটা হয়তো সাউন্ডপ্রূফও।
প্যাসেজে দাঁড়িয়ে নিমপাতার রস খাওয়ার হাসি হাসল স্যামুয়েল রানার। দিকে চেয়ে। মাথা ঝাঁকিয়ে ইঙ্গিত করল আগে আগে হাঁটবার জন্যে। রানা। বুবল, ওরই মত অস্বস্তি বোধ করে লোকটা বিপজ্জনক কেউ পিছু পিছু হাটলে। মিষ্টি করে হাসল রানা, পাশ কাটিয়ে সামনে যাওয়ার সময় হাসিমুখেই, অত্যন্ত তৃপ্তির সাথে কনুইটা চালাল সে প্রচণ্ডবেগে। নাক দিয়ে। হুক শব্দ বেরোল লোকটার, দুভাজ হয়ে গেল ওর লম্বা শরীরটা পেটের। উপর বেমক্কা গুতো খেয়ে। একটাই যথেষ্ট, তবু ফাউ হিসেবে আরেকটা রদ্দা কষিয়ে দিল সে লোকটার ঘাড়ের পাশে। গুলি খাওয়া সাদা বকের মত ভেঙেচুরে পড়ে গেল লোকটা মেঝের উপর।
পিস্তল বের করে সাইলেন্সরটা পেচিয়ে লাগাল রানা ওটার মাথায়। তারপর কলার চেপে ধরে টেনে নিয়ে এল স্যামুয়েলকে আবার ম্যানেজারের। দরজার সামনে। হ্যাঁন্ডেলে চাপ দিয়েই কাঁধের ধাক্কায় খুলে ফেলল দরজা।
চোখ তুলে আঁতকে উঠল গুডবডি। চশমার ওপাশে বিস্ফারিত চোখ আরও বড় দেখাচ্ছে। স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে সে রানার হাতে ধরা। পিস্তলটার দিকে। রানা লক্ষ করল, সামান্য একটু পরিবর্তন হলো লোকটার। মুখের চেহারায়–মানুষ মনের কোন ভাব বা ইচ্ছা গোপন করতে চাইলে যেমন হয়, তেমনি।
উঁহু! ভাল হবে না। মাথা নাড়ল রানা। কোন চালাকি করতে যাবেন। না। কোন বোতামে চাপ দিতে গেলে, কিংবা ডান পাশের ড্রয়ার থেকে পিস্তলটা বের করতে গেলে মারা পড়বেন। কেউ কোন সাহায্য করবার অনেক আগেই।
হাত বাড়াতে গিয়েও থেমে গেল লোকটা রানার কথা শুনে। এবার সত্যিকার ভীতি দেখা দিল ওর চেহারায়।
দুই ফুট পেছনে সরিয়ে নিন চেয়ারটা।
চেয়ার সরিয়ে নিল গুডবডি। ওর উপর থেকে চোখ না সরিয়েই কলার। ধরে টেনে ঘরের ভেতর নিয়ে এল রানা স্যামুয়েলের জ্ঞানহীন দেহ, পেছনে। হাত বাড়িয়ে বন্ধ করে দিল দরজা, ফুটোয় লাগানো চাবি ঘুরিয়ে দিয়ে পকেটে। ফেলল চাবিটা। ছোট একটা হুঙ্কার ছাড়ল গুডবডির প্রতি, উঠে দাঁড়ান।
কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়াল গুডবডি। টেলিফোনটার দিকে একবার চাইল, তারপর বলল, দয়া করে গোলাগুলি ছুঁড়বেন না, মিস্টার রবার্টসন। যা খুশি নিয়ে যান, আপনার কাজে বাধা দেব না আমি। ডাকাতি করতে…
এদিকে আসুন, মাথা ঝাঁকিয়ে কাছে ডাকল রানা। ভয়ে ভয়ে কাছে এসে দাঁড়াল গুডবডি। আপনি জানেন, আমি কে?
কি করে জানব? গুডবডির চেহারায় বিভ্রান্তির ছাপ। এই একটু আগে আপনি বললেন…
যে আমার নাম রবার্টসন। আসলে কে আমি?
ঠিক বুঝতে পারছি না আপনি
চেঁচিয়ে উঠল লোকটা কানের উপর সাইলেন্সারের এক ওতো খেয়ে। পিস্তলের ফোরসাইট দিয়ে ইঞ্চি তিনেক লম্বা করে চিরে দিল রানা ওর গালটা। কুলকুল করে রক্ত নেমে এল, টপটপ চিবুক বেয়ে পড়ছে সাদা শার্টের উপর।
কে আমি?
মাসুদ রানা। ভীতির পাশাপাশি ঘৃণাও দেখতে পেল রানা এবার ওর দৃষ্টিতে। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল লোকটা, ইন্টারপোল।