অসম্ভব! সোহানা চৌধুরীর কাছে পিস্তল, নেই।
কে বলল? হাসল রানা। ভয়ে তোমার বুদ্ধি ঘোলা হয়ে গেছে, মাগেনথেলার। অনেক আগেই বোঝা উচিত ছিল তোমার, আমি তোমাদের ফাঁদে ঢুকিনি, তুমিই ঢুকেছ আমাদের ফাঁদে। তুমি যে মাদাগাস্কার শব্দটার। সাহায্যে সোহানাকে ধরে আনবার ব্যবস্থা করবে সেটা জেনেই তোমার সামনে উচ্চারণ করেছিলাম আমি শব্দটা আজ সকালে। সোহানা যখন। এসেছে, প্রস্তুত হয়েই এসেছে। চেয়েই দেখো না, অদৃশ্য হয়ে গেছে ওর খোঁপাটা-তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসেছে পিস্তল। চারফুট তফাত থেকে মিস হবে না ওর গুলি।
কথাটা বিশ্বাস করবে কি করবে না বুঝতে পারল না মাগেনথেলার কয়েক সেকেন্ড। তারপর ঘাড় ফিরিয়ে যখন দেখল, চারফুট নয়, ঠিক চার ইঞ্চি দূরে স্থির হয়ে রয়েছে ছোট্ট একটা লিলিপুট পিস্তলের মুখ। মুহূর্তে ফ্যাকাসে, রক্তশূন্য হয়ে গেল মাগেনথেলারের চেহারাটা, নিবে গেল চোখের জ্যোতি।
কাজেই দয়া করে হাত থেকে পিস্তলটা ফেলে ছেড়ে দাও কর্নেলকে। এক ইঞ্চি নড়লেই গুলি খাবে কপালের পাশে।
হাত থেকে ছেড়ে দিল মাগেনথেলার পুলিস কোল্ট অটোমেটিকটা। এক ঝটকায় ওর হাত সরিয়ে দিয়ে রানার পিস্তলের সামনে থেকে সরে দাঁড়াল। কর্নেল, পকেট থেকে বের করল দুইজোড়া হ্যাঁন্ডকাফ। মাগেনথেলারের কোমর থেকে রানার পিস্তল আর নিজের রিভলভারটা বের করে নিয়ে রানার দিকে চাইল কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে।
আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না, মেজর মাসুদ রানা। শুধু একটা কথা জানতে চাই–সত্যিই কি আপনার চোখের সামনে হত্যা করা হয়েছিল আপনার সহকর্মীকে হেফর্ক দিয়ে? সত্যিই কি মারিয়া ডুক্লজকে..
সত্যি। দপ করে জ্বলে উঠল রানার দুচোখ। কিন্তু পলকের মধ্যেই সামলে নিল নিজেকে। শান্ত কণ্ঠে বলল, আত্মরক্ষার প্রয়োজন ছাড়া মিথ্যে কথা বলি না আমি।
সেক্ষেত্রে আমি মনে করি নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার অধিকার আপনার আছে। লুকা বার্যিনি যদি পালাবার চেষ্টা করতে গিয়ে গুলি খেয়ে মারা পড়ে, আমার আপত্তি নেই।
আমার আছে, বলল রানা। হত্যা করবার নেশা নেই আমার কর্নেল। আমি সাইকোপ্যাথ নই। বিচার দেখতে চাই আমি ওদের। খানিক আগে মিথ্যে হুমকি দিয়েছিলাম আমি, ভাব দেখিয়েছিলাম যেন এক্ষুণি গুলি করতে যাচ্ছি …
বুঝতে পেরেছি। আপনি চাইছিলেন, স্ব-মূর্তি ধারণ করুক মাগেনথেলার। ইরিন যে র্যাকের আড়ালে লুকিয়ে ছিল সেটা টের পেলেন কি করে?
টের পাইনি। আমি কেন সোহানাও বোধ হয় জানত না যে ওখানটায়। লুকিয়ে রয়েছে ইরিন তামাশা দেখবার জন্যে। যাই হোক, ভালই হয়েছে–নাটকের শেষ দৃশ্যে সব শিল্পীর উপস্থিতিতে চমৎকার জমে গেল। শেষটুকু।
রানার নির্দেশে বিশালবপু ভলেনহোভেনের দুইহাতে পরাল কর্নেল দুটো হ্যান্ডকাফের একটা কড়া। খালি কড়া দুটো পরিয়ে দেয়া হলো একটা লুকা বার্যিনির, অন্যটা মাগেনথেলারের একেকটা হাতে। নিরস্ত্র করা হয়েছে। দুজনকেই। দুজনে মিলে প্রাণপণ শক্তিতে টানাহেঁচড়া করলেও কয়েকফুটের বেশি নড়াতে পারবে না ওরা ভলেনহোভেনের বিপুল ধড়।
দ্রুতহাতে কাপড় পরে নিয়েছে সোহানা ইতিমধ্যে। তিনতলার প্রহরীটাকে একটা খুটির সাথে আচ্ছা করে কষে বেঁধে নেমে এল ওরা রাস্তায়। হাত-পা ছড়িয়ে উপুড় হয়ে পড়ে আছে ইরিনের লাশ। ভ্রুক্ষেপ না করে এগিয়ে। গেল ওরা ভ্যানের উদ্দেশে। গলির শেষ মাথায় পৌঁছে থামল রানা।
আমরা বরং এখান থেকেই বিদায় নিই, কর্নেল। আমাদের কাজ শেষ। বাকিটুকু আপনি একা পারবেন না?
বাকিটা কি রেখেছেন, বলুন? হাসল ডি গোল্ড। আমার কাজ তো শুধু ওয়েরলেসে হেডকোয়ার্টারে খবর দেয়া। আর সবই তো সেরে দিয়েছেন আপনি একাই। ঠিক আছে, যান। সকাল থেকে যে ধকল গিয়েছে আপনার উপর দিয়ে..
সকাল নয়, রাত দুটো থেকে। এখন কাহিল লাগছে খুব।
ঠিক আছে, বিশ্রাম করুন গিয়ে। আজ রাতের মধ্যেই যতগুলোকে পারি অ্যারেস্ট করে ফেলব। রানার কাঁধের উপর হাত রাখল কর্নেল। অলরাইট, ব্রেভ ইয়াংম্যান। কাল দেখা হবে আবার। গুড নাইট।
কর্নেলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ড্যামের দিকে হাঁটতে শুরু করল ওরা। দুজন। দেড়শো গজ যেতে না যেতেই সাইরেনের শব্দ শুনতে পেল ওরা। প্রবলবেগে ছুটে আসছে কয়েকটা গাড়ি। সাঁই সাঁই করে ওদের পাশ কাটিয়ে ভলেনহোভেন অ্যান্ড কোম্পানীর দিকে ছুটে গেল ছয়-সাতটা ট্রাক। ট্রাক ভর্তি ঠাসাঠাসি করে দাঁড়ানো সশস্ত্র পুলিস।
পরস্পরের দিকে চেয়ে মৃদু হাসল রানা আর সোহানা। আবার হাঁটছে। বেশ কিছুদূর হাঁটবার পর সোহানা বলল, মারিয়ার জন্যে বড় কষ্ট লাগছে, রানা। কিছুতেই ভুলতে পারছি না ওকে।
এইজন্যেই আমাদের সার্ভিসে কারও সাথে মাখামাখি করতে বারণ করা হয়।
খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে রানার মুখের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল সোহানা, তুমি এই বারণ মেনে চলো?
চেষ্টা করি।
তাই বুঝি এড়িয়ে চলো আমাকে?
চেষ্টা করি। কিন্তু পারি কই?
পারো না?
খানিক চুপ করে থেকে মাথা নাড়ল রানা।
না।