আপনার চোখের সামনে?
হ্যাঁ। হাত-পা বেঁধে নেয়া হয়েছিল আমার। গত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তিন তিনবার খুন করবার চেষ্টা করেছে সে আমাকেও। এই লোকই। মৃত্যুপথযাত্রী নেশাখোরের হাতে তুলে দেয় নিজের বোতল–ধু মজা দেখবার জন্যে।
এ-ও কি সম্ভব! কিছুতেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না ডি গোল্ড রানার কথাগুলো। সে কি করে হবে না, না, এটা হতেই পারে না। ডক্টর রজার? একজন ধর্মযাজক…
ওটা ছদ্মবেশ। আপনাদের জানা নেই, কিন্তু ইন্টারপোলের ফাইলে ওর নাম লেখা আছে। অবশ্য নিকোলাস রজার হিসেবে নয়, ওর আসল নামে। ওর আসল নাম হচ্ছে লুকা বার্যিনি। ঈস্টার্ন সিবোর্ড কোসা নোস্ট্রার প্রাক্তন সভ্য। কিন্তু মাফিয়া হজম করতে পারেনি ওকে। ব্যবসার প্রয়োজনে ছাড়া খুন করে না মাফিয়া, এমন কি ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ পর্যন্ত নেয় না যদি সেইসাথে কিছু টাকার প্রশ্ন জড়িত না থাকে। কিন্তু বার্ষিনি হত্যা করে শুধু হত্যারই খাতিরে। মার্ডার ফর মার্ডারস সেক। আলটিমেটাম পেয়ে ইউনাইটেড স্টেটস ছেড়ে চলে আসতে হয় ওকে–মাফিয়ার হাতে খুন হয়ে। যাওয়া থেকে বাচবার এছাড়া আর কোন পথ ছিল না।
এসব কী বলছেন আপনি! বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রয়েছে নিকোলাস রজার রানার মুখের দিকে। এসব অত্যন্ত অন্যায়, মানহানিকর কথাবার্তা। যার তার নামে যা খুশি তাই বলতে পারেন না আপনি, মেজর মাসুদ রানা। মুখে যাই বলুক, রানার কথা শুনে আরও ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে ওর। চেহারাটা। একজন নিরীহ…
চুপ করুন! ধমকে উঠল রানা। আপনার হাতের ছাপ থেকে নিয়ে। সিফালিক ইনডেক্স পর্যন্ত রয়েছে আমাদের কাছে। ধোকাবাজি করে কোন লাভ হবে না। বোকার ভান করে কিছুতেই বাঁচতে পারবেন না আপনি, লুকা বার্যিনি। আপনার অতীত জানা আছে আমাদের, বর্তমান সম্পর্কে এবার কিছুটা আলোকপাত করা যাক। সাইকোপ্যাথ হিসেবে আপনার বিরুদ্ধে যে চাজ আনা হবে সেটাই প্রধান নয়–আপনার বিরুদ্ধে আসল চার্জ হচ্ছে হেরোইন ব্যবসা পরিচালনা। বড় চমৎকার সিসটেম তৈরি করে নিয়েছিলেন যাহোক। একেবারে ফুলফ। কারও কিছু টের পাওয়ার উপায় নেই। মাল নিয়ে আসছে কোস্টার, জানা কথা, অথচ সার্চ করে পাওয়া যায় না কিছুই। বন্দরে ভিড়বার আগেই বিশেষ একটা বয়ার পাশে সমুদ্রের নিচে ডুবিয়ে দেয়া হচ্ছে সীল করা স্টীলের বাক্স। সেই রাতেই একটা বার্জ রওনা হচ্ছে। হাইলারের উদ্দেশে-যাবার পথে রশিতে রড বেঁধে তুলে আনছে বয়া, নোঙর, তারপর সেই স্টীলের বাক্স, হাইলারের একটা কটেজ ইন্ডাস্ট্রির ফ্যাক্টরিতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বাক্সটা, সেখান থেকে বিশেষভাবে চিহ্ন দেয়া। পুতুলের মধ্যে করে চালান হয়ে আসছে এই ভলেনহোভেন অ্যান্ড কোম্পানীর ওয়েরহাউজে। কি? ঠিক বলিনি? ভুরু নাচাল রানা ভলেনহেভেনের উদ্দেশে।
হাঁ হয়ে রয়েছে মোটা লোকটার মুখ, কোন জবাব দিতে পারল না, বারকয়েক ঢোক গিলল কেবল। কিন্তু ছটফট করে উঠল নিকোলাস রজার। বলল, প্রিপস্টারাস! পাগলের প্রলাপ। একটা কথাও প্রমাণ করতে পারবেন না, আপনি, মেজর রানা।
প্রমাণ তো আপনিই দিচ্ছেন, রেভারেন্ড। আমার নাম জানলেন কি করে। আপনি? বলুন? ওকে চুপ করে থাকতে দেখে নির্দয় হাসি হাসল রানা। আসলে কোন প্রমাণের দরকার নেই আমার। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজহাতে খুন করতে যাচ্ছি আমি আপনাকে.। যাই হোক, কি যেন বলছিলাম? কর্নেলের দিকে ফিরল রানা। অত্যন্ত নিখুঁত একটা চক্র তৈরি করে নিয়েছিল লুকা বার্ষিনি। ব্যারেল অর্গানবাদক বুড়ো থেকে নিয়ে স্ট্রিপ-টীজ ডালার পর্যন্ত, হোটেলের ওয়েটার থেকে নাইট-ক্লাবের হোস্টেস পর্যন্ত দলের। প্রত্যেকে উঠছে বসছে ওর আঙুলের ইশারায়। টু শব্দ বেরোচ্ছে না কারও মুখ থেকে, জানা আছে সবার-বেরোলেই মৃত্যু অবধারিত। ইতিমধ্যে সবারই জানা হয়ে গেছে এই সৌম্যদর্শন বৃদ্ধের আসল রূপ। নিষ্ঠার সাথে নীরবে কাজ করে যাচ্ছে সবাই, কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ প্রাণের ভয়ে।
কিভাবে? প্রশ্ন করল ডি গোল্ড। কি কাজ করছে ওরা?
সোজা ভাষায় বলতে গেলে পুশিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং। হেরোইনের কিছুটা অংশ রয়ে যাচ্ছে এখানে বিদেশে রপ্তানির জন্যে, কিছু চলে যাচ্ছে। অ্যামস্টার্ডামের বিভিন্ন দোকানে। কিছু ডিস্ট্রিবিউট করা হচ্ছে ভ্যানে করে ভভেল পার্ক এবং অন্যান্য জায়গায়। লুকা বার্যিনির মহিলা ফোর্স বিভিন্ন। দোকান থেকে বিশেষ চিহ্ন দেয়া পুতুল কিনে সাপ্লাই দিচ্ছে ছোট ছোট স্টোর, হোটেল আর নাইট-ক্লাবে, ভ্যান থেকে সাপ্লাই দেয়া হচ্ছে ব্যারেল অর্গানবাদকদের–ওরা আবার বিক্রি করছে রিটেলে।
কিন্তু এইরকম আনন্দমেলা চলছে, আমরা ঘুণাক্ষরেও টের পাচ্ছি না কেন? জানতে চাইল ডি গোল্ড।
সে প্রসঙ্গে আসছি আমি খানিক বাদেই। ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যাপারটা শেষ। হয়নি এখনও। বাইবেলের মধ্যে করে চালান দেয়া হচ্ছে হেরোইনের বেশ একটা মোটা অংশ। হাইলার থেকে অর্ধেকের বেশি হেরোইন চলে আসছে। হিউগানট সোসাইটির চার্চে, ফাপা বাইবেলের মধ্যে ভরা হচ্ছে মাল। বার্যিনির মহিলা ফোর্সের এক অংশ অত্যন্ত ধর্মপ্রাণা। বাইবেল হাতে যায় তারা চার্চে। এই মহাপুরুষের কাছ থেকে দুই একটা কঠিন পংক্তির তাৎপর্য বুঝে নিতে, যখন বেরিয়ে আসে, তখন তাদের হাতে অন্য বাইবেল। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে পাঠানো হয় এইসব বাইবেল বিনামূল্যে। এ ছাড়াও রয়েছে ঘড়ির পেণ্ডুলাম। ক্যাসটিল লিভেনে যে ঘড়ির কারখানা রয়েছে তার দোলকগুলো তৈরি এবং সাপ্লাই করা হয় চার্চের বেজমেন্টের এক আধুনিক ফ্যাক্টরি থেকে–ভেতরে পোরা থাকে হেরোইন। ঠিক বলেছি না, বার্যিনি? নাকি কিছু বাদ পড়ে গেছে বর্ণনায়? ২