না, ধন্যবাদ। পরে একদিন হবে। আজ একটু বেশি ব্যস্ত।
ব্যস্ত? তার মানে প্ল্যান তৈরি হয়ে গেছে? কাজে নামতে যাচ্ছেন নিশ্চয়ই?
আরে না। হাসল রানা। রিছানায় শুয়ে শুয়ে খানিক আকাশ পাতাল ভাবব।
তাহলে… তাহলে কেন
তাহলে কেন এখানে এলাম? ছোট্ট দুটো অনুরোধ আছে আমার। আমার জন্যে কোন টেলিফোন মেসেজ আছে কিনা একটু খোঁজ করে দেখবেন?
মেসেজ?
ওয়েরহাউজে আপনাদের বসিয়ে রেখে যার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তার কাছ থেকে আপনার অফিসে একটা মেসেজ আসবার কথা আছে। দেখবেন একটু?
গভীরভাবে মাথা ঝাঁকাল ডি গোল্ড, একটা রিসিভার কানে তুলে নিয়ে। দুএকটা কথা বলল, ভ্রূ কুঁচকে কি যেন শুনল, তারপর কাগজ কলম টেনে নিয়ে বলল, রিপিট করো।
খসখস করে ইঞ্চি চারেক লম্বা ইংরেজি অক্ষর ও নম্বরযুক্ত একটা মেসেজ লিখে কাগজটা রানার দিকে বাড়িয়ে দিল কর্নেল। অক্ষরগুলো অর্থহীন, রানা। জানে, কিন্তু সংখ্যাগুলো ওল্টালেই পাওয়া যাবে সোহানাদের হোটেলের টেলিফোন নাম্বার। কাগজটা পকেটে ফেলল সে।
অসংখ্য ধন্যবাদ। এটা ডিকোড করতে হবে আমার আবার।
এবার দ্বিতীয় অনুরোধ!
একজোড়া বিনকিউলার ধার দিতে পারবেন?
বিনকিউলার?
আমার হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়ালে বহুদূরে একটা সুইমিং পুল দেখা যায়। আমার বিশ্বাস অনেক সুন্দরী মেয়ে আসে ওখানে, এতদূর থেকে ভালমত দেখা যায় না। একটা বিনকিউলার হলে…
অবশ্যই, অবশ্যই। নিরানন্দ অবিবাহিত জীবনে এইটুকু আনন্দ থেকে আপনাকে বঞ্চিত করা নিতান্তই অন্যায় হবে। এক্ষুণি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কথাগুলো হালকা সুরে বলল ঠিকই, কিন্তু সামান্যতম হাসির আভাসও নেই, কর্নেলের মুখে। গলার সুর পরিবর্তন করে বলল, দেখুন, মেজর মাসুদ রানা, আপনার সাথে আমার কথা ছিল ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার। ছিল কি না?
নিশ্চয়ই ছিল, এবং আছে।
তাহলে এইসব গোপন তৎপরতার কি অর্থ? অনেক কিছুই আপনি। আমাদের এড়িয়ে চেপে যাচ্ছেন।
চাপছি না, বলল রানা। আপনাদের জানাবার মত কোন তথ্য হাতে এলেই জানাব। ভুলে যাবেন না, আপনারা বছরের পর বছর কাজ করছেন এই ব্যাপারটা নিয়ে, আমি এখানে এসে পৌঁছেছি দুদিনও পুরো হয়নি। চেপে যাওয়ার মত তথ্য থাকলে বরং আপনাদের কাছেই থাকা সম্ভব, আমার কাছে তথ্য কোথায় যে চাপবার প্রশ্ন উঠবে? মিথ্যে বলিনি, আমার কাছে কয়েকটা ব্যাপার বেশ বিদঘুটে ঠেকেছে, ঘরে ফিরে শুয়ে শুয়ে ওগুলো নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করব আমি এখন।
রানাকে বেশি ঘাটাল না কর্নেল। বুঝে নিয়েছে, এই লোকটার কাজে কোনরকম বাধা সৃষ্টি করা বোকামি হবে। এর কাজের ধারা আলাদা হতে পারে, কিন্তু যোগ্যতা সম্পর্কে কোনরকমের কোন সন্দেহ নেই তার মনে। পুলিসী নিয়ম মেনে এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে মেমো আর সার্কুলারের মাধ্যমে করবার মত কাজ যে এটা নয়, সেটুকু বুঝবার ক্ষমতা তার আছে–বিশেষ করে গত কয়েকটা বছরের নিষ্ফল চেষ্টার পর ধারণাটা বদ্ধমূল হয়েছে। বিনকিউলারটা কাঁধে ঝুলিয়ে রানা যখন বেরিয়ে গেল, মস্তবড় একটা শ্বাস ছেড়ে মন দিল সে কাজে।
আধমাইল দূরে একটা টেলিফোন বুদের সামনে গাড়ি থামাল রানা। কর্নেলের কাছ থেকে পাওয়া নাম্বারে ডায়াল করতেই একটা পুরুষ কণ্ঠস্বর ভেসে এল, হোটেল প্লাযা।
রানার মনে পড়ল শহরের পূর্বদিকে এই নামের একটা হোটেল দেখেছে সে। ভাল কোন হোটেল না, কিন্তু ওদের দুজনের পরিচয় অনুযায়ী ঠিক যে। ধরনের হোটেলে ওঠা উচিত, তাই পছন্দ করেছে সোহানা।
আমার নাম রানা। মাসুদ রানা। দুজন মহিলা আজ আপনাদের ওখানে। উঠেছেন। এই ঘণ্টাখানেক কি তার চেয়ে কিছু বেশি হবে। ওদের সাথে কথা বলতে পারি?
আমি দুঃখিত। ওঁরা বেরিয়ে গেলেন একটু আগে।
দুজনই? আরও একটু নিশ্চিত হতে চাইল রানা।
হ্যা! দুজনই। হাঁপ ছেড়ে বাচল রানা। তার মানে মারিয়াকে পেয়ে গেছে সোহানা, এখন হয় বিট্রিক্সের খোঁজে বেরিয়েছে, নয়তো গেছে হোস্টেল প্যারিসের মেয়েদের উপর নজর রাখতে। রানার অকথিত প্রশ্ন আঁচ করে নিয়ে। অপর প্রান্ত থেকে লোকটা বলল, আপনার জন্যে একটা মেসেজ রেখে গেছেন। ওরা, মিস্টার রানা। আপনাকে জানাতে বলেছেন যে আপনার হোস্টেস বান্ধবীকে পাওয়া যায়নি।
ভুরুজোড়া কুঁচকে উঠল রানার। লোকটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নামিয়ে রাখল রিসিভার। একলাফে উঠে পড়ল গাড়িতে। বিট্রিক্সকে পাওয়া না যাওয়ার কি কারণ থাকতে পারে?
একেবারে অ্যাপার্টমেন্ট হাউজের সামনে এসে গাড়ি থামাল রানা। দৌড়ে উঠে গেল তিনতলায়। বন্ধ। তালামারা। খুলতে অবশ্য এক মিনিটও লাগল না। রানার। ভেতরে ঢুকে দেখল, গতরাতে যেমন দেখে গিয়েছিল, ঠিক তেমনি রয়েছে ঘরটা। সাদামাঠা, বাহুল্যবর্জিত, ছিমছাম। কোথাও ধস্তাধস্তির কোন চিহ্ন নেই। ঘরের যেটা যেখানে ছিল সেখানেই রয়েছে। তন্নতন্ন করে দুটো ঘরই খুজল রানা, কিন্তু এমন কোন তথ্য বা ইঙ্গিত চোখে পড়ল না যা দেখে টের পাওয়া যায় বিট্রিক্স বা হেনরী কি অবস্থায় কোথায় গেছে। বারবার। আশঙ্কার একটা কালো ছায়া ভর করতে চাইল ওর মনের উপর, বারবারই মাথা ঝাঁকিয়ে দূর করে দিল সে অশুভ চিন্তা। দরজায় তালা দিয়ে দ্রুতপায়ে। নেমে এল সে নিচে। ব্যালিনোভা নাইট-ক্লাবে দেখতে হবে খোঁজ করে।