আমরা কি খুঁজতে এসেছি সেটা জানতে চান না আপনি? নরম গলায় জিজ্ঞেস করল কর্নেল।
কী হবে জেনে! দুঃখে ভেঙে গেল ওর গলা! শেষ! মান-সম্মান ইজ্জত-ব্যবসা সব গেল আমার খোদা! একশো পঞ্চাশ বছর ধরে…
সার্চ ওয়ারেন্ট আর পুলিসের নাম শুনলেই কেন যে পাবলিকের এই রকম অবস্থা হয়! হাসিহাসি মুখ করে বলল কর্নেল ডি গোল্ড। শুনুন, মিস্টার ভলেনহোভেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার ধারণা, স্বর্ণমৃগের পেছনে ছুটছি আমরা। এটা রুটিন চেক। অফিশিয়াল অনুরোধ এসেছে আমাদের কাছে, কাজেই নিয়ম অনুযায়ী সার্চ করতেই হবে আমাদের। এতে আপনার। সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে না। ভেঙে পড়বারও কিছু নেই। আমাদের কাছে ইনফরমেশন এসেছে যে আপনাদের এখানে বেআইনীভাবে সংগ্রহ করা কিছু ডায়মন্ড আছে…
ডায়মন্ড! একেবারে আসমান থেকে পড়ল মোটা লোকটা। রানা লক্ষ করল, এই একটি শব্দে অর্ধেক দুশ্চিন্তা যেন দূর হয়ে গেল লোকটার মুখ থেকে। কোলাব্যাঙের মত মাথাটা নাড়ল এপাশ-ওপাশ। মান হেসে বলল, ডায়মন্ড? আশ্চর্য! ঠিক আছে, দেখুন খুঁজে। শুধু একটা অনুরোধ যদি পাওয়া যায়, এক-আধটা দয়া করে দিয়ে যাবেন আমাকে। জীবনে দেখিনি আমি এ জিনিস।
এসব টিটকারি গায়ে না মেখে অবিচলিত দৃঢ়তার সাথে বলল কর্নেল, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে সন্দেহ করা হচ্ছে, আপনাদের এখানে ডায়মন্ড কাটিং মেশিনারিও রয়েছে।
তাই নাকি? আরও সিকিভাগ দুশ্চিন্তা উড়ে গেল লোকটার চেহারা। থেকে। সত্যিই? সেটা তো নিশ্চয়ই লুকিয়ে রাখবার মত জিনিস না, পেয়ে যাবেন একটু খুঁজলেই। দেখুন খুঁজে।
সেইসাথে আপনাদের ইনভয়েস ফাইলটাও দেখতে হবে।
একশোবার। দেখুন, দেখুন। ভাল করে খতিয়ে দেখুন সব। কোন আপত্তি নেই আমার।
আপনার সহযোগিতার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ, বলল কর্নেল ডি গোল্ড। মাথা ঝাঁকিয়ে ইশারা করল ইন্সপেক্টর মাগেনথেলারকে। চট করে উঠে দাঁড়াল মাগেনথেলার, দ্রুতপায়ে বেরিয়ে গেল সার্চের ব্যবস্থা করতে। যেন গোপনীয় কিছু বলছে এমনি ভঙ্গিতে সামনে ঝুঁকে এল কর্নেল। এই অসুবিধে সৃষ্টি করার। জন্যে আমি সত্যিই আন্তরিক দুঃখিত, মি. ভলেনহোভেন। পুলিসের কাজ জনসাধারণকে সাহায্য করা, তাদের স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি করা নয়। কিন্তু কি করব…জানি, এটা বেহুদা সময় নষ্ট, আপনাকে হয়রানি করা, নিজেরাও হয়রানি হওয়া, তবু…
তিরিশ মিনিটের মধ্যেই হয়রান হয়ে ফিরে এল মাগেনথেলার। ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই সার্চ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বুঝতে পেরে আবার হাসিখুশি দয়াল ভাবটা ফিরে এসেছে ভলেনহোভেনের মধ্যে! কেক, বিস্কিট, কফি আনিয়ে আপ্যায়ন করল, অবাঞ্ছিত হলেও, ক্ষমতাধারী অতিথিদের। এক ফাঁকে রানাও ঘুরে এল পুরোটা বাড়ি। গতরাতে যেখানে যা দেখে গিয়েছিল, প্রায় তেমনি রয়েছে সবকিছু। শুধু ক্যানাবিসের গন্ধটা অনুপস্থিত। সেই জায়গায় মিষ্টি একটা এয়ার ফ্রেশনারের গন্ধ। এ ব্যাপারে কাউকে কিছুই বলল না সে।
নিচে নেমে এসে বিদায় দিল ভলেনহোভেন ওদের হাসিমুখে, যতটা না। ওদের কৃতার্থ করতে, তার চেয়ে বেশি প্রতিবেশী আর সব ওয়েরহাউজের মালিক ও কর্মচারীদের জানাতে যে সার্চ হয়েছে বটে, কিন্তু বে-আইনী কিছুই পাওয়া যায়নি ওর ঘরে। গাড়িতে ওঠার আগে ওর হাত ঝাঁকিয়ে দিল কর্নেল।
আপনার অসুবিধের জন্যে সত্যিই আন্তরিক দুঃখিত, মিস্টার। ভলেনহোভেন। আমাদের ভুল তথ্য সরবরাহ করা হয়েছিল। অবশ্য কবেই বা ঠিক তথ্য পাই আমরা। যাই হোক, এই সন্দেহ এবং সার্চ সম্পর্কে সব কিছু কেটে দেব আমরা আমাদের ফাইল থেকে। হাসল। ইনভয়েসের ফাইল ধরা। বামহাতটা নাড়ল। এগুলো পরীক্ষার জন্যে দেব আমরা সেই ইন্টারেস্টেড ডিপার্টমেন্টকে। যে মুহূর্তে ওরা নিশ্চিত হবে যে এর মধ্যে কোন বে-আইনী ডায়মন্ড সাপ্লায়ারের নাম নেই, সাথে সাথেই ফেরত দেয়া হবে ফাইলটা। ঠিক আছে? চলি, গুডমর্নিং।
মাগেনথেলার এবং রানাও ওর হাত ধরে ঝাঁকাল, বিরক্ত করবার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করল, তারপর উঠে পড়ল গাড়িতে। রানার হাসিতে কোন। মালিন্য দেখতে পেল না ভলেনহোভেন। পাওয়ার কথাও নয়, কারণ বেচারা। তো আর থট রিডিং জানে না। জানা থাকলে টের পেত, বন্ধুত্বের বিন্দুমাত্র। ছিটেফোঁটাও নেই ওর ভিতর; বরং শত্রুতা রয়েছে রানার হাসিতে, হাত। ঝাঁকুনিতে–সম্পূর্ণ অন্য ধরনের চিন্তা চলেছে ওর মাথায়।
কারণ, গতরাতে এই লোকটাকেই দেখেছিল সে ব্যালিনোভা নাইট-ক্লাব থেকে সোহানা ও মারিয়ার পিছন পিছন রওনা হতে।
.
০২.
প্রায় নিঃশব্দে ফিরে এল ওরা পুলিস হেডকোয়ার্টারে। ভ্যান ডি গোল্ড আর মাগেনথেলারের মধ্যে যে সামান্য কথা হলো সেটা ভলেনহোভেন বা সার্চ সংক্রান্ত কিছুই না, সম্পূর্ণ অন্য বিষয়ে সাধারণ আলাপ। বোঝা গেল আজকের এই সাৰ্চটা যে একেবারে অনর্থক সময় নষ্ট, বাজে ব্যাপার হয়েছে, সে সম্পর্কে দুজনের কারও মনেই কোন সন্দেহের লেশমাত্র নেই। এই প্রসঙ্গে কোন কথা তুললে পাছে রানা লজ্জা পায় সেজন্যেই নেহায়েত ভদ্রতার খাতিরে অন্য কথা বলছে ওরা। নেমেই নিজের কাজে চলে গেল মাগেনথেলার।
কর্নেলের পিছু পিছু তার অফিসে গিয়ে ঢুকল রানা।
কফি? ভুরু নাচাল কর্নেল ডি গোল্ড। অ্যামস্টার্ডামের সেরা কফি খাওয়াতে পারি আপনাকে।