হ্যাঁ। সাধারণ দুই টাইপিস্টের পক্ষে এটাকে পরম সৌভাগ্যই বলা যায়। আচ্ছা সোহানা, যে পুতুলটা পছন্দ করল, সেটা ভালমত দেখেছ তো?
দেখছি। অনেক পয়সা খরচ করে অবজার্ভেশন ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। আমাকে।
ভুরুজোড়া কপালে তুলে বারকয়েক পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখল রানা। সোহানাকে বাকা দৃষ্টিতে, তারপর বলল, সুসংবাদ। হাইলারের কস্টিউম। পরা পুতুল ছিল ওটা। ঠিক যেমনটা দেখেছিলাম আমরা ওয়েরহাউজে।
আশ্চর্য! তুমি জানলে কি করে?
বলতে পারতাম ইনটিউশন, কিংবা বলতে পারতাম অনেক পয়সা খরচ করে আন্দাজ ট্রেনিং দেয়া হয়েছে আমাকে, কিংবা এটা একটা বিশেষ প্রতিভা। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে কিছু তথ্য জানা আছে আমার যেটা তোমরা জানো না।
বললেই জানতে পারি। বলে ফেলো।
উঁহু। মাথা নাড়ল রানা।
কেন নয়? ভুরু নাচাল সোহানা। আমাদের মানুষ বলে গণ্য করো না তুমি?
করি। তবে ঠিক মানুষ বললে ভুল বলা হবে। তোমাদের আমি। মেয়েমানুষ বলে গণ্য করি। খারাপ অর্থে নয়, ভাল অর্থেই মেয়েমানুষ। এসব কথা তোমাদের জানানো যায় না এজন্যে যে অ্যামস্টার্ডামে খুব একটা নিরাপদ নও তোমরা। এখানে এমন একটা দল আছে যারা ইচ্ছে করলেই যে-কোন সময় যে-কোনখান থেকে তুলে নিয়ে যেতে পারে তোমাদের, পুরে দিতে পারে নিরিবিলি, অন্ধকার কোন কুঠুরিতে। যা জানা সব গড়গড় করে বলে দিতে বাধ্য হবে তাহলে তোমরা।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল-সোহানা। তারপর বলল, তোমাকে ধরলে তুমিও বলবে।
হয়তো তাই মেনে নিল রানা। নির্যাতন সহ্য করবার ক্ষমতা সবার সমান হয় না; কিন্তু সবারই একটা শেষ সীমা আছে। ওটা পেরিয়ে গেলে আমিছাড়া আর কিছুর অস্তিত্ব থাকে না মানুষের কাছে। ওই পর্যায়ে গেলে হয়তো আমিও বাধ্য হব সব কথা বলতে। কিন্তু তোমরা দুজন সেই পর্যায়ে। নিতে পারবে না আমাকে। আর ওদের পক্ষে আমাকে নিরিবিলি অন্ধকার। কোন কুরিতে পুরে দেয়া খুব একটা সহজ কাজ হবে না। ইনভয়েসের ফাইলটা হাতে তুলে নিল রানা। ক্যাসটিল লিভেন বলে কোন প্রতিষ্ঠানের। নাম শুনেছ কখনও? শোনোনি? আমিও না। এর মধ্যে পেলাম নামটা। দেখা যাচ্ছে ভলেনহোভেন অ্যান্ড কোম্পানীকে প্রচুর দেয়ালঘড়ি সাপ্লাই দিয়ে থাকে এরা।
তাতে কি? প্রশ্ন করল মারিয়া।
নিঃসন্দেহ হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে কোন সম্পর্ক থাকতেও পারে আমাদের অ্যাসাইনমেন্টের সাথে। বিট্রিক্স থাকলে ওকে লাগানো যেত এই ব্যাপারে, কিন্তু ও ভড়কে গিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় কাজটা আমাকেই করতে হবে। এখন। ঠিক আছে, কাল দেখা যাবে, এটা নিয়ে এখন তেমন কোন চিন্তা নেই।
আমাদের ওপর ভার দিলে আজই সেরে রাখতে পারি আমরা কাজটা, বলল মারিয়া। একদিন এগিয়ে থাকবেন তাহলে। আমরা ওই ক্যাসটিলে গিয়ে..
না। সোজা মারিয়ার চোখের দিকে চাইল রানা। গম্ভীর। আমার নির্দেশ ছাড়া যদি কোনকিছু করতে যাও, নেক্সট প্লেনে ফিরে যেতে হবে। প্যারিসে। তাও আবার হেঁটে উঠতে পারবে না প্লেনে, কফিনের মধ্যে শুয়ে পা আগে মাথা পেছনে, এই অবস্থায় উঠতে হবে। আমিও খুব খুশিমনে বিদায় দিতে পারব না তোমাদের–কারণ পুরো একটা বেলা নষ্ট হবে আমার ওই দুর্গের পরিখা থেকে তোমাদের লাশ খুঁজে বের করতে। বোঝা গেছে?
একসাথে মাথা নাড়ল সোহানা আর মারিয়া। ফাইলের কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়াল রানা। ব্যস, আজকের দিনের জন্যে তোমাদের ছুটি। কাল সকালে দেখা হবে, ইনশাল্লাহ।
আর তুমি? রানাকে দরজার দিকে রওনা হতে দেখে চট করে ওর। কোটের হাতা খামচে ধরল সোহানা। কাল সকাল পর্যন্ত তুমি কোথায় কি করছ?
বিকেলে গাড়িতে করে গ্রামের দিকে বেড়াতে যাব ভাবছি। উন্মুক্ত হাওয়ায় মাথাটা পরিষ্কার করে আনব। তারপর ঘুম। তারপর হয়তো নৌকাভ্রমণে বেরোতে পারি।
রাত দুটোয়? প্রশ্ন করল মারিয়া।
চট করে ওর মুখের দিকে চাইল রানা। যতটা ভেবেছিল, তার চেয়ে। অনেক বেশি তীক্ষ্ণ বুদ্ধি রাখে মেয়েটা। মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিতেই খামচে ধরল সে রানার আরেক হাতের আস্তিন। দুজনের চোখের দৃষ্টিতে অনুনয় দেখতে পেল রানা। বুঝল, কিছু একটা টের পাচ্ছে ওরা, যেটা ও নিজে বুঝতে পারছে
প্লীজ! বলল মরিয়া। আপনার একা যাওয়া ঠিক হবে না। ভয়ানক কোন বিপদ ঘটতে যাচ্ছে আজ রাতে। আমরাও যাব। অন্তত পেছন থেকে যেন কোন অতর্কিত আক্রমণ না হয়, সেটুকু দেখতে পারব আমরা।
সেসব আরেকদিন দেখো। আজ না। আমার জন্যে ভেব না। বিপদ কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা আমার আছে। তোমরা এই ঘরে বসে থেকেও আমার চেয়ে অনেক বেশি বিপদে পড়তে পারো। কিছুই বলা যায় না।
কিন্তু কথাটা শোনার সাথে সাথেই মনে হলো, কেউ যেন আমার কবরের ওপর দিয়ে হেঁটে চলে গেল। আমি বুঝতে পারছি, আজ রাতে লাক ফেভার করবে না আপনাকে।
লাক ইজ ইনফ্যাচুয়েটেড উইথ দ্য এফিশিয়েন্ট! মুখস্থ বুলি ঝেড়ে দিল। রানা সুযোগ পেয়ে। আর একটা কথা। আগামী চব্বিশ ঘণ্টা তোমাদের জন্যে ঘর থেকে যত কম বেরোতে পারো ততই মঙ্গল। যদি একান্তই বেরোতে হয়, লোকজনের মধ্যে থাকবে–এমন কোথাও, যেখান থেকে খপ করে মুখ চেপে ধরে একটানে গাড়িতে তোলা যায় না। খেয়াল রেখো, তোমাদের পরিচয়। জানা হয়ে গেছে ওদের।
রাত দুটোর সময় যেতেই হবে তোমার ওই কোস্টারে? এবার আক্রমণ এল সোহানার তরফ থেকে।