হাদীস নং ১৩৭১
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি যাকাতের যে বিধান দিয়েছেন তা আবু বকর রা. তাঁর নিকট লিখে পাঠান তাঁতে রয়েছে : অধিক বয়সে দাঁত পড়া বৃদ্ধি ও ত্রুটিপূর্ণ বকরী এবং পাঠা যাকাত হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না, তবে উসুলকারী যা ইচ্ছা করেন।
হাদীস নং ১৩৭২
আবুল ইয়ামান ও লায়স রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর রা. বলেছেন, আল্লাহর কসম ! তারা যদি (যাকাতের) ঐ রূপে একটি ছাগল ছানাও দিতে অস্বীকার করে যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দিত, তবুও তাদের বিরুদ্ধে যাকাত না দেওয়ার কারণে আমি লড়াই করব। উমর রা. বলেন, আমি স্পষ্ট বুঝেছি যে, যুদ্ধের ব্যাপারে আল্লাহ আবু বকরের হৃদয় খুলে দিয়েছেন, তাই বুঝলাম তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।
হাদীস নং ১৩৭৩
উমায়্যা ইবনে বিসতাম রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুআযা (ইবনে জাবাল) রা.-কে ইয়ামনের শাসনকর্তা হিসেবে পাঠান, তখন বলেছিলেন : তুমি আহলে কিতাব লোকদের কাছে যাচ্ছ। কাজেই প্রথমে তাদের আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিবে। যখন তারা আল্লাহর পরিচয় লাভ করবে, তখন তাদের তুমি বলবে যে, আল্লাহ দিন-রাতে তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিয়েছেন। যখন তারা আদায় করতে থাকবে, তখন তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের সম্পদ থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে। যখন তারা এর অনুসরণ করবে তখন তাদের থেকে তা গ্রহণ করবে এবং লোকের উত্তম মাল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে।
হাদীস নং ১৩৭৪
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পাঁচ ওসাক-এর কম পরিমাণ খেজুরের যাকাত নেই। পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ রূপার যাকাত নেই এবং পাঁচটির কম উটের যাকাত নেই।
হাদীস নং ১৩৭৫
উমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস রহ……..আবু যার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম। তিনি বললেন : কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ (বা তিনি বললেন) কসম সেই সত্তার, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, অথবা অন্য কোন শব্দের শপথ করলেন, উট, গরু বা বকরী থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এদের হক আদায় করেনি সেগুলো যেমন ছিল তার চেয়ে বৃহদাকার ও মোটা তাজা করে কিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে এবং তাকে পদপিষ্ট করবে এবং শিং দিয়ে গুতো দিবে। যখনই দলের শেষটি চলে যাবে তখন পালাক্রমে আবার প্রথমটি ফিরিয়ে আনা হবে। মানুষের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে এরূপ চলতে থাকবে। হাদীসটি বুকাইর রহ. আবু সালিহ রহ.-এর মাধ্যমে আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৩৭৬
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনার আনসারীগণের মধ্যে আবু তালহা রা. সবচেয়ে অধিক খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন। মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বাযরুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাগানে প্রবেশ করে এর সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস রা. বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল : “তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না” (৩ : ৯২) তখন আবু তালহা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহ বলছেন : তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না। আর বাযরুহা নামক বাগানটি আমার কাছে অধিক প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সাদকা করা হল, আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার জন্য সঞ্চাররূপে থাকবে। কাজেই আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন তাকে দান করুন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাকে ধন্যবাদ, এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ, এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ তা শুনলাম। আমি মনে করি, তোমার আপনজনদের মধ্যে তা বন্টন করে দাও। আবু তালহা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তাই করব। তারপর তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশদরের মধ্যে তা বন্টন করে দিলেন। রাবী রাওহ রহ. (রাবেহ) শব্দে আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। আর রাবী ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া রহ. ও ইসমাঈল রহ. মালিক রহ. থেকে (রায়েহ) শব্দ বলেছেন।
হাদীস নং ১৩৭৭
ইবনে আবু মারয়াম রহ………..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতর দিনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গেলেন এবং সালাত শেষ করলেন। পরে লোকদের উপদেশ দিলেন এবং তাদের সাদকা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন আর বললেন : লোক সকল ! তোমরা সাদকা দিবে। তারপর মহিলাগণের নিকট গিয়ে বললেন : মহিলাগণ ! তোমরা সাদকা দাও। আমাকে জাহান্নামে তোমাদেরকে অধিক সংখ্যক দেখানো হয়েছে। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এর কারণ কি ? তিনি বললেন : তোমরা বেশী অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হয়ে থাক। হে মহিলাগণ ! জ্ঞান ও দীনে অপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ়চেতা পুরুষের বুদ্ধি হরণকারিণী তোমাদের মত কাউকে দেখিনি। যখন তিনি ফিরে এসে ঘরে পৌছালেন, তখন ইবনে মাসউদ রা.-এর স্ত্রী যায়ানাব রা. তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! যায়নাব এসেছেন। তিনি বললেন, কোন যায়নাব ? বলা হল, ইবনে মাসউদের স্ত্রী। তিনি বললেন : হ্যাঁ, তাকে আসতে দাও। তাকে অনুমতি দেওয়া হল। তিনি বললেন, ইয়া নবীয়াল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ আপনি সাদকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা সাদকা করব ইচ্ছা করছি। ইবনে মাসউদ রা. মনে করেন, আমার এ সাদকায় তাঁর এবং তাঁর সন্তানদেরই হক বেশী। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবনে মাসউদ রা. ঠিক বলেছে। তোমার স্বামী ও সন্তানই তোমার এ সাদকায় অধিক হকদার।