- বইয়ের নামঃ সহিহ বুখারী ৩য় খন্ড
- লেখকের নামঃ ইমাম বুখারী
- প্রকাশনাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
- বিভাগসমূহঃ ইসলামিক বই, হাদীস শরীফ
সহিহ বুখারী ০৩য় খণ্ড (১৩১৩-১৯১৮)
যাকাত অধ্যায় (১৩১৩-১৪২৪)
হাদীস নং ১৩১৩
আবু আসিম যাহহাক ইবনে মাখলাদ রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয রা.কে (শাসকরূপে) ইয়ামান অভিমুখে প্রেরণ কালে বলেন, সেখানের অধিবাসীদের কে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আমি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল- এ কথার সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দিবে। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দিবে, আল্লাহ তাদের উপর প্রতিদিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তারা যদি এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দিবে, আল্লাহ তাদের সম্পদের উপর সাদকা (যাকাত) ফরয করেছেন। তাদের মধ্যকার (নেসাব পরিমাণ) সম্পদশালীদের নিকট থেকে (যাকাত) উসুল করে তাদের দরিদ্রদের বিতরণ করে দেওয়া হবে।
হাদীস নং ১৩১৪
হাফস ইবনে উমর রহ……….আবু আইয়্যূব রা. থেকে বর্ণিত যে, এক সাহাবী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলল, আমাকে এমন আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বললেন, তার কি হয়েছে, তার কি হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তার প্রয়োজন রয়েছে তো। তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। (ইমাম বুখারী রহ. বলেন) বাহয রহ. শুবা রহ.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ ইবনে উসমান ও তাঁর পিতা উসমান ইবনে আবদুল্লাহ উভয়ে মূসা ইবনে তালহা রা. আবু আইয়্যূব রা. সুত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবু আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী রহ. বলেন, (শুবা রহ. রাবীর নাম বলতে ভুল করেছেন) আমার আশংকা হয় যে, মুহাম্মদ ইবনে উসমান -এর উল্লেখ সঠিক নয়, এবং এখানে রাবীর নাম হবে আমর ইবনে উসমান।
হাদীস নং ১৩১৫
মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, এক মরুবাসী সাহাবী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, আমাকে এমন আমলের পথনির্দেশ করুন যা আমল করলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পরব। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, (পাঁচ ওয়াক্ত) ফরয সালাত আদায় করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে ও রমযানের সাওম পালন করবে। সাহাবী বললেন, আমার প্রাণ যার হাতে তাঁর কসম, আমি এর উপর বৃদ্ধি করব না। তিনি যখন ফিরে গেলেন তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : কেউ যদি জান্নাতী লোক দেখতে আগ্রহী হয় সে যেন তার দিকে তাকিয়ে দেখে।
হাদীস নং ১৩১৬
মুসাদ্দাদ রহ……….আবু যুরআ রহ.-এর মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
হাদীস নং ১৩১৭
হাজ্জাজ ইবনে মিনহার রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা রাবীআ গোত্রের লোক, আমাদের ও আপনার (মদীনার) মাঝে মুযার গোত্রের কাফিররা প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে। আমরা আপনার নিকট কেবল নিষিদ্ধ মাস (যুদ্ধ বিরতির মাস) ব্যতীত নির্বিঘ্নে আসতে পানি না। কাজেই এমন কিছু আমলের নির্দেশ দিন যা আমরা আপনার নিকট থেকে শিখে (আমাদের গোত্রের) অনুপস্থিতদের কে সেদিকে দাওয়াত দিতে পারি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ করছি ও চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। (পালনীয় বিষয়গুলো হল: ) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তথা সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (রাবী বলেন) এ কথা বলার সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )একক নির্দেশক) তাঁর হাতের অঙ্গুলী বন্ধ করেন, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ও তোমরা গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ আদায় কবে এবং আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি যে,( الدباء) শুস্ক কদু খোলস,( الحنتم) সবুজ রং প্রলেপযুক্ত পাত্র,( النقير) খেজুর কাণ্ড নির্মিত পাত্র,( المزفت) তৈলজ পদার্থ প্রলেপযুক্ত মাটির পাত্র ব্যবহার করতে। সুলাইমান ও আবু নুমান রহ. হাম্মাদ রহ. থেকে বর্ণিত হাদীসে الإيمان بالله شهادة أن لا إله إلا الله এরূপ বর্ণনা করেছেন واو ব্যতীত।
হাদীস নং ১৩১৮
আবুল ইয়ামান হাকাম ইবনে নাফি রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিন বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর, আবু বকর রা. -এর খিলাফতকালে আরবের কিছু সংখ্যক লোক মুরতাদ হয়ে যায়। তখন উমর রা.(আবু বকর রা. -কে লক্ষ্য বললেন, আপনি (সে সব) লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন (যারা সম্পূর্ণ ধর্ম ত্যাগ করেনি বরং যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন মাত্র) ? অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন বলার لا إله إلا الله বলার পূর্ব পর্যন্ত মানুষের বিরদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ আমাকে দেওয়া হয়েছে, যে কেউ তা বলল, সে তার সম্পদ ও জীবন আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের বিধান লঙ্ঘন করলে (শাস্তি দেওয়া যাবে), আর তার অন্তরের গভীরে (হৃদয়াভ্যন্তরে কুফরী বা পা লুকানো থাকলে এর হিসাব-নিকাশ আল্লাহর জিম্মায়। আবু বকর রা. বললেন, আল্লাহর কসম! তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই আমি যুদ্ধ করব যারে সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, কেননা যাকাত হল সম্পদের উপর আরোপিত হক। আল্লাহর কসম ! যদি তার একটি মেষ শাবক যাকাত দিতেও অস্বীকার করে যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে তারা দিত, তাহলে যাকাত না দেওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ করব। উমর রা. বলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আবু বকর রা. -এর হৃদয় বিশেষ জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত করেছেন বিধায় তাঁর এ দৃঢ়তা, এতে আমি বুঝতে পারলাম তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।
হাদীস নং ১৩১৯
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নুমাইর রহ………জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট সালাত কায়েম করা, যাকাত দেয়া ও সকল মুসলমানের কল্যাণ করার উপর বায়আত করি।
হাদীস নং ১৩২০
আবুল ইয়ামান হাকাম ইবনে নাফি রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের উটের (উপর দরিদ্র, বঞ্চিত, মুসাফিরের) হক আদায় না করবে, (কিয়ামত দিবসে) সে উট দুনিয়া অপেক্ষ অধিক শক্তিশালী হয়ে খুর দিয়ে আপন মালিককে পিষ্ট করতে আসবে এবং যে ব্যক্তি নিজের বকরীর হক আদায় না করবে, সে বকরী দুনিয়া অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে এসে মালিককে খুর দিয়ে পদদলিত করবে ও শিং দিয়ে আঘাত করবে। উট ও বকরীর হক হল পানির নিকট (জনসমাগম স্থলে) ওদের দোহন করা (ও দরিদ্র বঞ্চিতদের মধ্যে দুধ বন্টন করা)। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন : তোমাদের কেউ যেন কিয়ামত দিবসে (হক অনাদায়জনিত কারণে শাস্তিস্বরূপ) কাঁধের উপর চিৎকার রত বকরী বহন করে (আমার নিকট) না আসে এবং বলেন, হে মুহাম্মদ ! (আমাকে রক্ষা করুন) । তখন আমি বলব : তোমাকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। আমি তো (হক অনাদায়ের পরিণতির কথা) পৌঁছে দিয়েছি। আর কেউ যেন চিৎকার রত উট কাঁধের উপর বহন করে এসে না বলে, হে মুহাম্মদ ! (আমাকে রক্ষা করুন)। তখন আমি বলব : তোমাকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। আমি তো (শেষ পরিণতির কথা) পৌঁছে দিয়েছি।
হাদীস নং ১৩২১
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে) টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পার্শ্ব কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করেন : “আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথচ তার সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরেই কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হবে”।(৩ : ১৮০)
হাদীস নং ১৩২২
আহমদ ইবনে শাবীব ইবনে সাঈদ রহ……..খালিদ ইবনে আসলাম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর সাথে বের হলাম। এক মরু বাসী তাকে বলল, আল্লাহ তা’আলার বাণী : “যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে-এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। ইবনে উমর রা. বললেন, যে ব্যক্তি সম্পদ জমা করে রাখে আর এর যাকাত আদায় করে না, তার জন্য রয়েছে শাস্তি-এ তো ছিল যাকাত বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগের কথা। এরপর যখন যাকাত বিধান অবতীর্ণ হল তখন একে আল্লাহ সম্পদের পবিত্রতা লাভের উপায় কারে দিলেন।
হাদীস নং ১৩২৩
ইসহাক ইবনে ইয়াযীদ রহ………..আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পাঁচ উকিয়া পরিমাণের কম সম্পদের উপর যাকাত নেই এবং পাঁচ উটের কমের উপর যাকাত নেই। পাঁচ ওসাকের কম উৎপন্ন দ্রব্যের উপর যাকাত নেই।
হাদীস নং ১৩২৪
আলী ইবনে আবু হাশিম রহ……….যায়েদ ইবনে ওহব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাবাযা নামক স্থান দিয়ে চলার পথে আবু যার রা. -এর সাথে আমার সাক্ষাত হল। আমি তাকে বললাম, আপনি এখানে কি কারণে আসলেন ? তিনি বললেন, আমি সিরিয়ার অবস্থানকালে নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে মুআবিয়া রা.-এর সাথে আমার মতানৈক্য হল : “যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় তা ব্যয় করে না……..”। মুআবিয়া রা. বলেন, এ আয়াত কেবল আহলে কিতাবদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি বললাম আমাদের ও তাদের সকলের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এক সময় মু’আবিয়া রা. উসমান রা.-এর নিকট আমার নামে অভিযোগ করে পত্র পাঠালেন। তিনি পত্রযোগে আমাকে মদীনায় ডেকে পাঠান। মদীনায় পৌঁছলে আমাকে দেখতে লোকেরা এত ভিড় করল যে, এর পূর্বে যেন তারা কখনো আমাকে দেখিনি। উসমান রা.-এর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি আমাকে বললেন, ইচ্ছা করলে আপনি মদীনার বাইরে নিকটে কোথাও থাকতে পারেন। এ হল আমার এ স্থানে অবস্থানের কারণ। খলীফা যদি কোন হাবশী লোককেও আমার উপর কর্তৃত্ব প্রদান করেন তবুও আমি তাঁর কথা শুনব এবং আনুগত্য করব।
হাদীস নং ১৩২৫
আয়্যাশ ও ইসহাক ইবনে মানসুর রহ……..আহনাফ ইবনে কায়স রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি কুরাইশ গোত্রীয় একদল লোকের সাথে বসেছিলাম, এমন সময় রুক্ষ্ম চুল, মোটা কাপড় ও খসখসে শরীর বিশিষ্ট এক ব্যক্তি তাদের নিকট এসে সালাম দিয়ে বলল, যারা সম্পদ জমা করে রাখে তাদেরকে এমন গরম পাথরের সংবাদ দাও, যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হচ্ছে। তা তাদের স্তনের বোঁটার উপর স্থাপন করা হবে আর তা কাঁধের পেশী ভেদ করে বের হবে এবং কাঁধের উপর স্থাপন করা হবে, তা নড়াচড়া করে সজোরে স্তনের বোঁটা ছেদ করে বের হবে। এরপর লোকটি ফিরে গিয়ে একটি স্তম্ভের পাশে বসল। আমিও তাঁর অনুগমন বক্তব্য লোকেরা পছন্দ করেনি। তিনি বললেন, তারা কিছুই বুঝে না। কথাটি আমাকে আমার বন্ধু বলেছেন। রাবী বলেন, আমি বললাম, আপনার বন্ধু কে ? সে বলল, তিনি হলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন) হে আবু যার ! তুমি কি উহুদ পাহাড় দেখেছ ? তিনি বলেন, তখন আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দিনের কতটুকু অংশ বাকি রয়েছে। আমার ধারণা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে পাঠাবেন। আমি জওয়াবে বললাম, জী-হ্যাঁ। তিনি বললেন : তিনটি দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ব্যতীত উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ স্তূপ আমার কাছে আসুক আর আমি সেগুলো দান করে দেই তাও আমি নিজের জন্য পছন্দ করি না। (আবু যার রা. বলেন) তারা তো বুঝে না, তারা শুধু দুনিয়ার সম্পদই একত্রিত করছে। আল্লাহর কসম, না ! না ! আমি তাদের নিকট দুনিয়ার কোন সম্পদ চাই না এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করা পর্যন্ত দীন সম্পর্কেও তাদের নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করব না।
হাদীস নং ১৩২৬
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্ন রহ………ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কেবল মাত্র দু’ধরনের ব্যক্তির প্রতি ঈর্ষা রাখা যেতে পারে, একজন এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং ন্যায় পথে তা ব্যয় করার মত ক্ষমতাবান বানিয়েছেন। অপরজন এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ দীনের জ্ঞান দান করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা দেন ও অন্যদেরকে তা শিক্ষা দেন।
হাদীস নং ১৩২৭
আবদুল্লাহ ইবনে মুনীর রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সাদকা করবে, (আল্লাহ তা কবুল করবেন) এবং আল্লাহ কেবল পবিত্র মাল কবুল করেন আর আল্লাহ তাঁর কুদরতী ডান হাত দিয়ে তা কবুল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সাদকা পাহাড় বরাবর হয়ে যায়। সুলাইমান রহ. ইবনে দীনার রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় আবদুর রহমান রহ. এর অনুসরণ করেছেন এবং ওয়ারকা রহ……..আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। এবং মুসলিম ইবনে আবু মারয়াম, যায়েদ ইবনে আসলাম ও সুহাইল রহ. আবু সালিহ রহ.-এর মাধ্যমে আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে হাদীসটি বর্ণনা করেন।
হাদীস নং ১৩২৮
আদম রহ……..হারিসা ইবনে ওহব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সাদকা কর, কেননা তোমাদের উপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ আপন সাদকা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাবে না। (যাকে দাতা দেওয়ার ইচ্ছা করবে সে) লোকটি বলবে, গতকাল পর্যন্ত নিয়ে আসলে আমি গ্রহণ করতাম। আজ আমার কোন প্রয়োজন নেই।
হাদীস নং ১৩২৯
আবুল ইয়ামান রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমাদের মধ্যে সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে উপচে না পড়বে, এমনকি সম্পদের মালিকগণ তা সাদকা কে গ্রহণ করবে তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। যাকেই দান করতে চাইবে সে-ই বলবে, প্রয়োজন নেই।
হাদীস নং ১৩৩০
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………আদী ইবনে হাতিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-এর কাছে ছিলাম, এমন সময় দু’ জন সাহাবী আসলেন, তাদের একজন দারিদ্র্যের অভিযোগ করছিলেন আর অপরজন রাহাজানির অভিযোগ করছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন বললেন : রাহাজানির অবস্থা এই যে, কিছু দিন পর এমন সময় আসবে যখন কাফেলা মক্কা পর্যন্ত বিনা পাহারায় পৌছে যাবে। আর দারিদ্র্যের অবস্থা এই যে, তোমাদের কেউ সাদকা নিয়ে ঘুরাফেরা করবে, কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাবে না। এমন সময় না আসা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না। তারপর (বিচার দিবসে) আল্লাহর নিকট তোমাদের কেউ এমনভাবে খাড়া হবে যে, তার ও আল্লাহর মাঝে কোন আড়াল থাকবে না বা কোন ব্যাখ্যাকারী দোভাষীও থাকবে না। এরপর তিনি বলবেন, আমি কি তোমার নিকট রাসূল প্রেরণ করিনি ? সে অবশ্যই বলবে হ্যাঁ, তখন সে ব্যক্তি যান দিকে তাকিয়ে শুধু আগুন দেখতে পাবে, তেমনিভাবে বাম দিকে তাকিয়েও আগুন দেখতে পাবে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের উচিত এক টুকরা খেজুর (সাদকা) দিয়ে হলেও যেন আগুন থেকে আত্মরক্ষা করে। যদি কেউ তা না পায় তবে যেন উত্তম কথা দিয়ে হলেও।
হাদীস নং ১৩৩১
মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ………আবু মূসা (আশআরী) রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মানুষের উপর অবশ্যই এমন এক সময় আসবে যখন লোকেরা সাদকার সোনা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু একজন গ্রহীতা ও পাবে না । পুরুষের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় এবং নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চল্লিশজন নারী একজন পুরুষের অনুগমন করবে এবং তার আশ্রয়ে আশ্রিতা হবে।
হাদীস নং ১৩৩২
আবু কুদামা উবায়দুল্লাহ ইবনে সাঈদ রহ………আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন সাদকার আয়াত অবতীর্ণ হল তখন আমরা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বোঝা বহন করতাম। এক ব্যক্তি এসে প্রচুর মাল সাদকা করল। তারা (মুনাফিকরা) বলতে লাগল, এ ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান করেছে, আর এক ব্যক্তি এসে এক সা’ পরিমান দান করলে তারা বলল, আল্লাহ তো এ ব্যক্তির এক সা’ থেকে অমুখাপেক্ষী। এ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয় : “মুমিনগণের মধ্যে যার নিজ ইচ্ছায় সাদকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না তাদেরকে যারা দোষারোপ করে……….। (৯ : ৭৯)
হাদীস নং ১৩৩৩
সাঈদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ………..আবু মাসউদ আনাসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাদকা করতে আদেশ করলেন তখন আমাদের কেউ বাজারে গিয়ে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বোঝা বহন করে মুদ পরিমাণ অর্জন করত (এবং তা থেকেই সাদকা করত) অথচ আজ তাদের কেউ লাখপতি।
হাদীস নং ১৩৩৪
সুলাইমান ইবনে হারব রহ………..আদী ইবনে হাতিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর এক টুকরা খেজুর সাদকা করে হলেও।
হাদীস নং ১৩৩৫
বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ভিখারিণী দুটি শিশু কন্যা সংগে করে আমার নিকট এসে কিছু চাইল। আমার নিকট একটি খেজুর ব্যতীত অন্য কিছু ছিলনা। আমি তাকে তা দিলাম। সে নিজে না খেয়ে খেজুরটি দু’ ভাগ করে কন্যা দুটিকে দিয়ে দিল। এরপর ভিখারিণী বেরিয়ে চলে গেলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসলেন। তাঁর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি বললেন, যাকে এরূপ কন্যা সন্তানের ব্যাপারে কোনরূপ পরীক্ষা করা হয় তবে সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে পর্দা হয়ে দাঁড়াবে।
হাদীস নং ১৩৩৬
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! কোন সাদকার সওয়াব বেশী পাওয়া যায় ? তিনি বললেন : কৃপণ অবস্থায় তোমার সাদকা করা যখন তুমি দারিদ্যর আশংকা করবে ও ধনী হওয়ার আশা রাখবে। সাদকা করতে দেরি করবে না। অবশেষে যখন প্রাণবায়ু কন্ঠাগত হবে আর তুমি বলতে থাকবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য একটুকু, অথচ তা অমুকের জন্য হয়ে যাচ্ছে।
হাদীস নং ১৩৩৭
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, কোন নবী-সহধর্মিণী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমাদের মধ্য থেকে সবার আগে (মৃত্যুর পর) আপনার সাথে কে মিলিত হবে ? তিনি বললেন : তোমাদের মধ্যে যার হাত দীর্ঘতর। তাঁরা একটি বাঁশের কাঠির সাহায্যে হাত মেপে দেখতে লাগলেন। সাওদার হাত সকলের হাতের চেয়ে দীর্ঘতর বলে প্রমাণিত হল। পরে আমরা অনুধাবন করতে পারলাম যে, সাদকার আধিক্য তাঁর হাত দীর্ঘ করে দিয়েছিল। আমাদের মাঝে তিনিই সবার আগে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মিলিত হন। তিনি সাদকা করা ভালবাসতেন।
হাদীস নং ১৩৩৮
আবুল ইয়ামান রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : (পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে) এক ব্যক্তি বলল, আমি কিছু সাদকা করব। সাদকা নিয়ে বের হয়ে (ভুলে) সে এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, চোরকে সাদকা দেওয়া হয়েছে। এতে সে বলল, হে আল্লাহ ! সকল প্রশংসা আপনারই, আমি অবশ্যই সাদকা করব। সাদকা নিয়ে বের হয়ে তা এক ব্যভিচারিণীর হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, রাতে এক ব্যভিচারিণীর হাতে সাদকা দেওয়া হয়েছে। লোকটি বলল, হে আল্লাহ ! সকল প্রশংসা আপনারই, (আমার সাদকা) ব্যভিচারিণী হাতে পৌঁছল। আমি অবশ্যই সাদকা করব। এরপর সে সাদকা নিয়ে বের হয়ে কোন এক ধনী ব্যক্তির হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলতে লাগল, ধনী ব্যক্তিকে সাদকা দেওয়া হয়েছে। লোকটি বলল, হে আল্লাহ ! সকল প্রশংসা আপনারই, (আমার সাদকা) চোর, ব্যভিচারিণী ও ধনী ব্যক্তির হাতে গিয়ে পড়লো ! পরে স্বপ্নযোগে তাকে বলা হল, তোমারা সাদকা চোর পেয়েছে, সম্ভবত সে চুরি করা হতে বিরত থাকবে, তোমার সাদকা ব্যভিচারিণী পেয়েছে সম্ভবত এজন্য যে, সে তার ব্যভিচার থেকে পবিত্র থাকবে আর ধনী ব্যক্তি তোমার সাদকা পেয়েছে, সম্ভবত সে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর দেওয়া সম্পদ থেকে সাদকা করবে।
হাদীস নং ১৩৩৯
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ……..মা’ন ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতা (ইয়াযীদ) ও আমার দাদা (আখনাস) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বায়আত হলেন। তিনি আমার বিবাহের প্রস্তাব করেন এবং আমার বিবাহ সম্পন্ন করে দেন। আমি তাঁর কাছে (একটি বিষয়ে) বিচার প্রার্থী হই। তা হল, একদা আমার পিতা ইয়াযীদ কিছু স্বর্ণমুদ্রা সাদকা করার নিয়্যাতে মসজিদে এক ব্যক্তির নিকট রেখে (তাকে তা বিতরণ করার সাধারণ অনুমতি দিয়ে) আসেন। আমি সে ব্যক্তির নিকট থেকে তা গ্রহণ করে পিতার নিকট আসলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম ! তোমকে দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিলনা। বিষয়টি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পেশ করলাম। তিনি বললেন : হে ইয়াযীদ ! তুমি যে নিয়্যাত করেছ, তা তুমি পাবে আর হে মা’ন ! তুমি যা গ্রহণ করেছ তা তোমারই ।
হাদীস নং ১৩৪০
মুসাদ্দাদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না সে দিন আল্লাহ তা’আলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। ১. ন্যয়পরায়ণ শাসক। ২. যে যুবক আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থেকে যৌবনে উপনীত হয়েছে। ৩. যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের সাথে থাকে । ৪. আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে দু’ ব্যক্তি পরস্পর মহব্বত রাখে, উভয়ে একত্রিত হয় সেই মহব্বতের উপর আর পৃথক হয় সেই মহব্বতের উপর। ৫. এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (অবৈধ মিলনের জন্য) আহবান জানিয়েছে। তখন সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। ৬. যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সাদকা করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না। ৭. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাঁতে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ থেকে অশ্রু বের হয়ে পড়ে।
হাদীস নং ১৩৪১
আলী ইবনে জা’দ রহ……….হারিসা ইবনে ওহব খুযায়ী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সাদকা কর। কেননা অচিরেই তোমাদের উপর এমন সময় আসবে, যখন মানুষ সাদকার মাল নিয়ে ঘুরে বেড়াবে, তখন গ্রহীতা বলবে, গতকাল নিয়ে এলে গ্রহণ করতাম কিন্তু আজ এর কোন প্রয়োজন আমার নেই।
হাদীস নং ১৩৪২
উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : স্ত্রী যদি তার ঘর থেকে বিপর্যয় সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যতিরেকে খাদ্যদ্রব্য সাদকা করে তবে এ জন্য সে সওয়াব পাবে আর উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে এব খাজাঞ্চীও অনুরূপ সওয়াব পাবে। তাদের একজনের কারণে অন্যজনের সওয়াবে কোন কম হবে না।
হাদীস নং ১৩৪৩
আবদান রহ………আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সাদকা করা উত্তম। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে, প্রথমে তাদেরকে দিবে।
হাদীস নং ১৩৪৪
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………হাকীম ইবনে হিযাম রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উপরের হাত (দাতার হাত) নীচের হাত (গ্রহীতার হাত) অপেক্ষা উত্তম। প্রথমে তাদেরকে দিবে যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সাদকা করা উত্তম। যে ব্যক্তি (পাপ ও ভিক্ষা করা থেকে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে দেন। ওহাব রহ. আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।
হাদীস নং ১৩৪৫
আবু নুমান রহ. ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মিম্বরের উপর থাকা অবস্থায় সাদকা করা ও ভিক্ষা করা থেকে বেচে থাকা ও ভিক্ষা করা সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন : উপরের হাত নীচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত দাতার, আর নীচের হাত হল ভিক্ষুকের।
হাদীস নং ১৩৪৬
আবু আসিম রহ………উকবা ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করে তাড়াতাড়ি ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর দেরি না করে বের হয়ে আসলেন। আমি বললাম বা তাকে বলা হল, তখন তিনি বললেন : ঘরে সাদকার একখণ্ড সোনা রেখে এসেছিলাম কিন্তু রাত পর্যন্ত তা ঘরে থাকা আমি পছন্দ করিনি। কাজেই তা বন্টন করে দিয়ে এলাম।
হাদীস নং ১৩৪৭
মুসলিম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন বের হলেন এবং দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন, এর আগে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি। এরপর তিনি বিলাল রা.-কে সাথে নিয়ে মহিলাদের কাছে গেলেন। তাদের উপদেশ দিলেন এবং সাদকা করার নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলাগণ কানের দুল ও হাতের কংকন ছুড়ে মারতে লাগলেন।
হাদীস নং ১৩৪৮
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..আবু মূসা (আশআরী) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কেউ কিছু চাইলে বা প্রয়োজনীয় কিছু চাওয়া হলে তিনি বলতেন : তোমরা সুপারিশ কর সওয়াব পাবে, আল্লাহ যেন তাঁর ইচ্ছা তাঁর রাসূলের মুখে চূড়ান্ত করেন।
হাদীস নং ১৩৪৯
সাদাকা ইবনে ফাযল রহ………আসমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন : তুমি এরূপ করলে তোমার জন্য (আল্লাহর দান) (সম্পদ কমে যাওয়ার আশংকায় সাদকা দেওয়া বন্ধ করবে না) বন্ধ করে দেওয়া হবে।
হাদীস নং ১৩৫০
উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ………আবদা রহ. থেকে বর্ণিত, (পূর্বোক্ত সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন) তুমি (সম্পদ) জমা করে রেখো না, (এরূপ করলে) আল্লাহ তোমার রিযক বন্ধ করে দিবেন।
হাদীস নং ১৩৫১
আবু আসিম রহ. ও মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম রহ………আসমা বিনতে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এক সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাকে বললেন : তুমি সম্পদ জমা করে রেখো না, এরূপ করলে আল্লাহ তোমার থেকে তা আটকে রাখবেন। কাজেই সাধ্যানুসারে দান করতে থাক।
হাদীস নং ১৩৫২
কুতাইবা রহ……….হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার উমর ইবনে খাত্তাব রা. বললেন, তোমাদের মধ্যে কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ফিতনা সম্পর্কিত হাদীস স্মরণ রেখেছ ? হুযায়ফা রা. বলেন, আমি আরয করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে বলেছেন, আমি ঠিক সে ভাবেই তা স্মরণ রেখেছি। উমর রা. বললেন, তুমি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে) বড় দুঃসাহসী ছিলে, তিনি কীভাবে বলেছেন (বলত)? তিনি বলেন, আমি বললাম, (হাদীসটি হল 🙂 মানুষ পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশী নিয়ে ফিতনায় পতিত হবে আর সালাত, সাদকা ও নেক কাজ সেই ফিতনা মিটিয়ে দিবে। সুলাইমান (অর্থাৎ আমাশ রহ. বলেন, আবি ওয়াইল কোন কোন সময় ‘নামায’ ‘সাদকা’ এরপর ‘সৎকাজ’ শব্দের স্থলে ‘সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’ বলতেন। উমর রা. বলেন, আমি এ ধরনের ফিতনার কথা জানতে চাইনি, বরং যে ফিতনা সাগরের ঢেউয়ের ন্যায় প্রবল বেগে ছুটে আসবে। হুযায়ফা রা. বলেন, আমি বললাম, আমীরুল মু’মিনীন ! আপনার জীবনকালে ঐ ফিতনার কোন আশংকা নেই। সেই ফিতনা ও আপনার মাঝে বদ্ধ দরজা রয়েছে। উমর রা. প্রশ্ন করলেন, দরজা কি ভেঙ্গে দেওয়া হবে না কি খুলে দেওয়া হবে ? হুযায়ফা রা. বলেন, আমি বললাম, না, বরং ভেঙ্গে দেওয়া হবে। উমর রা. বললেন, দরজা ভেঙ্গে দেওয়া হলে কোন দিন তা আর বন্ধ করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আমি বললাম, সত্যই বলেছেন। আবু ওয়াইল রা .বলেন, দরজা বলতে কাকে বুঝানো হয়েছে ? এ কথা হুযায়ফা রা.-এর নিকট প্রশ্ন করে জানতে আমর কেউ সাহসী হলাম না। তাই প্রশ্ন করতে মাসরূককে অনুরোধ করলাম। মাসরূক রহ. হুযায়ফা রা. -কে প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন : দরজা হলেন উমর রা. আমরা বললাম, আপনি দরজা বলে যাকে উদ্দেশ্য করেছেন, উমর রা. কি তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আগামীকালের পূর্বে রাতের আগমন যেমন সুনিশ্চিত (তেমনি নিঃসন্দেহে তিনি তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন) এর কারণ হল, আমি তাকে এমন হাদীস বর্ণনা করেছি, যাতে কোন ভুল ছিলনা।
হাদীস নং ১৩৫৩
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! ঈমান আনয়নের পূর্বে (সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে) আমি সাদকা প্রদান, দাসমুক্ত করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ন্যায় যত কাজ করেছি সেগুলোতে সওয়াব হবে কি ? তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি যে সব ভাল কাজ করেছ তা নিয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছ (তুমি সেসব কাজের সওয়াব পাবে)।
হাদীস নং ১৩৫৪
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : স্ত্রী তার স্বামীর খাদ্য থেকে বিপর্যয়ের উদ্দেশ্য ব্যতীত সাদকা করলে সে সাদকা করার সওয়াব পাবে, উপার্জন করার কারণে স্বামীও এর সওয়াব পাবে এবং অনুরূপ সওয়াব পাবে।
হাদীস নং ১৩৫৫
মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ……….আবু মূসা রা. সুত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে বিশ্বস্ত মুসলিম খাজাঞ্চী (আপন মালিক কর্তৃক) নির্দেশীত পরিমাণ সাদকার সবটুকুই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সানন্দচিত্তে আদায় করে, কোন কোন সময় তিনি (বাস্তবায়িত করে) শব্দের স্থলে (আদায় করে) শব্দ বলেছেন, সে খাজাঞ্চীও নির্দেশদাতার ন্যায় সাদকাদানকারী হিসেবে গণ্য।
হাদীস নং ১৩৫৬
আদম ও উমর ইবনে হাফস রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ফাসাদের উদ্দেশ্য ব্যতীত স্ত্রী তার স্বামীর ঘর থেকে কাউকে কিছু সাদকা করলে বা আহার করালে স্ত্রী এর সওয়াব পাবে, স্বামীও সমপরিমাণ সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চী সেই পরিমাণ সওয়াব পাবে। স্বামী উপার্জন করার কারণে আর স্ত্রী দান করার কারণে সওয়াব পাবে।
হাদীস নং ১৩৫৭
ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া রহ………আয়িশা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ফাসাদের উদ্দেশ্য ব্যতীত স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের খাদ্য সামগ্রী থেকে সাদকা করলে সে এর সওয়াব পাবে। উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও সেই পরিমাণ সওয়াব পাবে।
হাদীস নং ১৩৫৮
ইসমাঈল রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : প্রতিদিন সকালে দু’ জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ ! দাতাকে তার দানের প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ ! কৃপণ কে ধ্বংস করে দিন।
হাদীস নং ১৩৫৯
মূসা রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : কৃপণ ও সাদকা দানকারীর দৃষ্টান্ত এমন দু’ ব্যক্তির মত, যাদের পরিধানে দুটি লোহার বর্ম রয়েছে। অপর সনদে আবুল ইয়ামান রহ. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, কৃপণ ও সাদকা দানকারীর দৃষ্টান্ত এমন দু’ ব্যক্তির মত, যাদের পরিধানে দুটি লোহার বর্ম রয়েছে যা তাদের বুক থেকে কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত। দাতা ব্যক্তি যখন দান করে তখন বর্মটি তার সম্পূর্ণ দেহ পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে যায়। এমনকি হাতের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত ঢেকে ফেলে ও (পায়ের পাতা পর্যন্ত ঝুলন্ত বর্ম) পদচিহ্ন মুছে ফেলে। আর কৃপণ ব্যক্তি যখন যৎসামান্যও দান করতে চায়, তখন যেন বর্মের প্রতিটি আংটা যথাস্থানে সেটে যায়, সে তা প্রশস্ত করতে চেষ্টা করলেও তা প্রশস্ত হয় না। হাসান ইবনে মুসলিম রহ. তাউস রহ. থেকে في الجبتين বর্ণনায় ইবনে তাউস রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। আর হানযালা রহ. তাউস রহ. থেকে جنتان উল্লেখ করেছেন। লায়স রহ. আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে جنتان (ঢাল) শব্দের উল্লেখ রয়েছে।
হাদীস নং ১৩৬০
মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………আবু মূসা আশআরী রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : প্রত্যেক মুসলিমের সাদকা করা উচিত। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! কেউ যদি সাদকা দেওয়ার মত কিছু না পায় ? (তিনি উত্তরে) বললেন : সে ব্যক্তি নিজ হাতে কাজ করবে এতে নিজেও লাভবান হবে, সাদকাও করতে পারবে। তাঁরা বললেন, যদি এরও সামর্থ্য না থাকে ? তিনি বললেন : কোন বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে। তাঁরা বললেন, যদি এতটুকুও সামর্থ্য না থাকে ? তিনি বললেন : এ অবস্থায় সে যেন নেক আমল করে এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে। এটা তার জন্য সাদকা বলে গণ্য হবে।
হাদীস নং ১৩৬১
আহমদ ইবনে ইউনুস রহ……….উম্মে আতিয়্যাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নুসায়ব নাম্নী আনসারী মহিলার জন্য একটি ববকরী (সাদকা স্বরূপ) পাঠানো হল। তিনি বকরীর কিছু অংশ আয়িশা রা.-কে (হাদিয়া স্বরূপ) পাঠিয়ে দিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাদের কাছে (আহার্য) কিছু আছে কি ? আয়িশা রা. বললেন, নুসায়বা কর্তৃক প্রেরিত সেই বকরীর গোশত ব্যতীত আর কিছুই নেই। তখন তিনি বললেন : তাই নিয়ে এসো, কেননা বকরী (সাদকা) যথাস্থানে গেছে (সাদকা গ্রহীতার নিকট)।
হাদীস নং ১৩৬২
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন বলেছেন : পাঁচ যাওদ (পাঁচটি) উটের সংখ্যকের উপর যাকাত নেই, পাঁচ উকিয়া-এর কম পরিমাণ রূপার উপর যাকাত নেই এবং পাঁচ ওয়াসক-এর কম পরিমাণ উৎপন্ন দ্রব্যের উপর সাদকা (উশর / নিসফে উশর) নেই।
হাদীস নং ১৩৬৩
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……..আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন থেকে এ হাদীসটি শুনেছি।
হাদীস নং ১৩৬৪
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, আবু বকর রা. আনাস রা.-এর কাছে আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন -কে যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন সে সম্পর্কে লিখে জানালেন, যে ব্যক্তির উপর যাকাত হিসেবে বিনতে মাখায ওয়াজিব হয়েছে কিন্তু তার কাছে তা নেই বরং বিনতে লাবুন রয়েছে, তাহলে তা-ই (যাকাত স্বরূপ) গ্রহণ করা হবে। এ অবস্থায় যাকাত আদায়কারী যাকাতদাতাকে বিশটি দিরহাম বা দুটি বকরী দিবে। আর যদি বিনতে মাখায না থাকে বরং ইবনে লাবুন থাকে তাহলে তা-ই গ্রহণ করা হবে। এমতাবস্থায় আদায়কারীর যাকাতদাতাকে কিছু দিতে হবে না।
হাদীস নং ১৩৬৫
মুআম্মাল রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা প্রদানের পূর্বেই (ঈদের) সালাত আদায় করেন, এরপর বুঝতে পারলেন যে, (সকলের পিছনে থাকা বিধায়) মহিলাগণকে খুতবার আওয়াজ পৌঁছাতে পারেননি। তাই তিন মহিলাগণের নিকট আসলেন, তাঁর সাথে বিলাল রা. ছিলেন। তিনি একখণ্ড বস্ত্র প্রসারিত করে ধরলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে উপদেশ দিলেন ও সাদকা করতে আদেশ করলেন। তখন মহিলাগণ তাদের (অলংকারদি) ছুড়ে মারতে লাগলেন। (রাবী) আইয়্যূব রহ. তার কান ও গলার দিকে ইঙ্গিত করে (মহিলাগণের অলংকারাদি দান করার বিষয়) দেখালেন।
হাদীস নং ১৩৬৬
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন তা আবু বকর রা. তাঁর নিকট লিখে পাঠান, যাকাতের (পরিমাণ কম-বেশী হওয়ার) আশংকায় পৃথক (প্রাণী)-গুলোকে একত্রিত করা যাবে না এবং একত্রিত গুলোকে পৃথক করা যাবে না।
হাদীস নং ১৩৬৭
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন আবু বকর রা. তা তাকে লিখে জানালেন, এক অংশীদার অপর অংশীদারের নিকট থেকে তার প্রাপ্য আদায় করে নিবে।
হাদীস নং ১৩৬৮
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন এক বেদুঈন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন : তোমার তো বড় সাহস ! হিজরতের ব্যাপারটি কঠিন, বরং যাকাত দেওয়ার মত তোমার কোন উট আছে কি ? সে বলল, জী হ্যাঁ, আছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সাগরের ওপারে হলেও (যেখানেই থাক) তুমি আমল করবে। তোমার সামান্যতম আমলও আল্লাহ নষ্ট করবেন না।
হাদীস নং ১৩৬৯
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, আবু বকর রা. তাঁর কাছে আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন তা লিখে পাঠান : যে ব্যক্তির উপর উটের যাকাত হিসাবে জাযা’আ ফরয হয়েছে, অথচ তার কাছে জাযা’আ নেই বরং তার নিকট হিক্কা রয়েছে, তখন হিক্কা গ্রহণ করা হবে । এর সাথে সম্ভব হলে (পরিপূর্ণরূপে) দুটি বকরী দিবে, অথবা বিশটি দিরহাম দিবে। আর যার উপর যাকাত হিসেবে হিক্কা ফরয হয়েছে, অথচ তার কাছে হিক্কা নেই বরং জাযা’আ রয়েছে, তখন তার থেকে জাযা’আ গ্রহণ করা হবে। আর যাকাত উসুলকারী (ক্ষতিপূরণ স্বরূপ) মালিককে বিশটি দিরহাম বা দুটি বকরী দিবে। যার উপর হিক্কা ফরয হয়েছে, অথচ তার নিকট বিনতে লাবূন রয়েছে, তখন বিনতে লাবূনই গ্রহণ করা হবে। তবে মালিক দুটি বকরী বা বিশটি দিরহাম দিবে। আর যার উপর বিনতে লাবূন ফরয হয়েছে, কিন্তু তার কাছে হিক্কা রয়েছে, তখন তার থেকে হিক্কা গ্রহণ করা হবে এবং আদায়কারী মালিককে বিশটি দিরহাম বা দুটি বকরী দিবে। আর যার উপর বিনতে লাবূন ফরয হয়েছে কিন্তু তার নিকট তা নেই বরং বিনতে মাখায রয়েছে, তবে তাই গ্রহণ করা হবে, অবশ্য মালিক বিশটি দিরহাম বা দুটি বকরী দিবে।
হাদীস নং ১৩৭০
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুসান্না আনসারী রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, আবু বকর রা. তাকে বাহরাইন পাঠানোর সময় এই বিধানটি তাঁর জন্য লিখে দেন : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এটাই যাকাতের নিসাব যা নির্ধারণ করেছেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসালিমদের প্রতি এবং যা আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিমদের মধ্যে যার কাছ থেকে নিয়ামানুযায়ী চাওয়া হয়, সে যেন তা আদায় করে দেয় আর তার চেয়ে বেশী চাওয়া হলে তা যেন আদায় না করে। চব্বিশ ও তার চাইতে কম সংখ্যক উটের যাকাত বকরী দ্বারা আদায় করা হবে। প্রতি পাঁচটি উটে একটি বকরী এবং উটের সংখ্যা পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত হলে একটি মাদী বিনতে মাখায। (এক বছর বয়স্কা উষ্ট শাবক)। ছত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত একটি মাদী বিনতে লাবূন (দু’ বছর বয়স্কা উটের শাবক)। ছয়চল্লিশ থেকে ষাট পর্যন্ত ষাড়ের পালযোগ্য একটি হিক্কা (তিন বছর পূর্ণ হয়েছে এমন উট), একষট্রি থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত একটি জাযা’আ (চার বছর পূর্ণ দাতাল উট(, ছিয়াত্তর থেকে নব্বই পর্যন্ত দুটি বিনতে লাবূন, একানব্বইটি থেকে একশ বিশ পর্যন্ত ষাড়ের পালযোগ্য দুইটি হিক্কা। সংখ্যায় একশ বিশের অধিক হলে (অতিরিক্ত) প্রতি চল্লিশটিতে একটি করে বিনতে লাবূন এবং (অতিরিক্ত) প্রতি পঞ্চাশটিতে এক করে হিক্কা। যার চারটির বেশী উট নেই, সেগুলোর উপর কোন যাকাত নেই, তবে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দিতে চাইলে দিতে পারবে। কিন্তু যখন পাঁচে পৌছে তখন একটি বকরী ওয়াজিব। আর বকরীর যাকাত সম্পর্কে : সায়েমা বকরী চল্লিশটি থেকে একশ বিশটি পর্যন্ত একটি বকরী। এর বেশী হলে দুশতটি পর্যন্ত দুটি বকরী। দুইশর অধিক হলে তিনশত পর্যন্ত তিনটি বকরী। তিনশর অধিক হলে প্রতি একশতে একটি করে বকরী। কারো সায়েমা বকরীর সংখ্যা চল্লিশ থেকে একটিও কম হলে তার উপর যাকাত নেই । তবে স্বেচ্ছায় দান করলে তা করতে পারে। রূপার যাকাত চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। একশ নব্বই দিরহাম হলে তার যাকাত নেই, তবে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দান করলে করতে পারে।
হাদীস নং ১৩৭১
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি যাকাতের যে বিধান দিয়েছেন তা আবু বকর রা. তাঁর নিকট লিখে পাঠান তাঁতে রয়েছে : অধিক বয়সে দাঁত পড়া বৃদ্ধি ও ত্রুটিপূর্ণ বকরী এবং পাঠা যাকাত হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না, তবে উসুলকারী যা ইচ্ছা করেন।
হাদীস নং ১৩৭২
আবুল ইয়ামান ও লায়স রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর রা. বলেছেন, আল্লাহর কসম ! তারা যদি (যাকাতের) ঐ রূপে একটি ছাগল ছানাও দিতে অস্বীকার করে যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দিত, তবুও তাদের বিরুদ্ধে যাকাত না দেওয়ার কারণে আমি লড়াই করব। উমর রা. বলেন, আমি স্পষ্ট বুঝেছি যে, যুদ্ধের ব্যাপারে আল্লাহ আবু বকরের হৃদয় খুলে দিয়েছেন, তাই বুঝলাম তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।
হাদীস নং ১৩৭৩
উমায়্যা ইবনে বিসতাম রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুআযা (ইবনে জাবাল) রা.-কে ইয়ামনের শাসনকর্তা হিসেবে পাঠান, তখন বলেছিলেন : তুমি আহলে কিতাব লোকদের কাছে যাচ্ছ। কাজেই প্রথমে তাদের আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিবে। যখন তারা আল্লাহর পরিচয় লাভ করবে, তখন তাদের তুমি বলবে যে, আল্লাহ দিন-রাতে তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিয়েছেন। যখন তারা আদায় করতে থাকবে, তখন তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের সম্পদ থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে। যখন তারা এর অনুসরণ করবে তখন তাদের থেকে তা গ্রহণ করবে এবং লোকের উত্তম মাল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে।
হাদীস নং ১৩৭৪
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পাঁচ ওসাক-এর কম পরিমাণ খেজুরের যাকাত নেই। পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ রূপার যাকাত নেই এবং পাঁচটির কম উটের যাকাত নেই।
হাদীস নং ১৩৭৫
উমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস রহ……..আবু যার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম। তিনি বললেন : কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ (বা তিনি বললেন) কসম সেই সত্তার, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, অথবা অন্য কোন শব্দের শপথ করলেন, উট, গরু বা বকরী থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এদের হক আদায় করেনি সেগুলো যেমন ছিল তার চেয়ে বৃহদাকার ও মোটা তাজা করে কিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে এবং তাকে পদপিষ্ট করবে এবং শিং দিয়ে গুতো দিবে। যখনই দলের শেষটি চলে যাবে তখন পালাক্রমে আবার প্রথমটি ফিরিয়ে আনা হবে। মানুষের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে এরূপ চলতে থাকবে। হাদীসটি বুকাইর রহ. আবু সালিহ রহ.-এর মাধ্যমে আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৩৭৬
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনার আনসারীগণের মধ্যে আবু তালহা রা. সবচেয়ে অধিক খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন। মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বাযরুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাগানে প্রবেশ করে এর সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস রা. বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল : “তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না” (৩ : ৯২) তখন আবু তালহা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহ বলছেন : তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না। আর বাযরুহা নামক বাগানটি আমার কাছে অধিক প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সাদকা করা হল, আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার জন্য সঞ্চাররূপে থাকবে। কাজেই আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন তাকে দান করুন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাকে ধন্যবাদ, এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ, এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ তা শুনলাম। আমি মনে করি, তোমার আপনজনদের মধ্যে তা বন্টন করে দাও। আবু তালহা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তাই করব। তারপর তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশদরের মধ্যে তা বন্টন করে দিলেন। রাবী রাওহ রহ. (রাবেহ) শব্দে আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। আর রাবী ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া রহ. ও ইসমাঈল রহ. মালিক রহ. থেকে (রায়েহ) শব্দ বলেছেন।
হাদীস নং ১৩৭৭
ইবনে আবু মারয়াম রহ………..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতর দিনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গেলেন এবং সালাত শেষ করলেন। পরে লোকদের উপদেশ দিলেন এবং তাদের সাদকা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন আর বললেন : লোক সকল ! তোমরা সাদকা দিবে। তারপর মহিলাগণের নিকট গিয়ে বললেন : মহিলাগণ ! তোমরা সাদকা দাও। আমাকে জাহান্নামে তোমাদেরকে অধিক সংখ্যক দেখানো হয়েছে। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এর কারণ কি ? তিনি বললেন : তোমরা বেশী অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হয়ে থাক। হে মহিলাগণ ! জ্ঞান ও দীনে অপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ়চেতা পুরুষের বুদ্ধি হরণকারিণী তোমাদের মত কাউকে দেখিনি। যখন তিনি ফিরে এসে ঘরে পৌছালেন, তখন ইবনে মাসউদ রা.-এর স্ত্রী যায়ানাব রা. তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! যায়নাব এসেছেন। তিনি বললেন, কোন যায়নাব ? বলা হল, ইবনে মাসউদের স্ত্রী। তিনি বললেন : হ্যাঁ, তাকে আসতে দাও। তাকে অনুমতি দেওয়া হল। তিনি বললেন, ইয়া নবীয়াল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ আপনি সাদকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা সাদকা করব ইচ্ছা করছি। ইবনে মাসউদ রা. মনে করেন, আমার এ সাদকায় তাঁর এবং তাঁর সন্তানদেরই হক বেশী। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবনে মাসউদ রা. ঠিক বলেছে। তোমার স্বামী ও সন্তানই তোমার এ সাদকায় অধিক হকদার।
হাদীস নং ১৩৭৮
আদম রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুসলিমের উপর তার ঘোড়া ও গোলামের কোন যাকাত নেই।
হাদীস নং ১৩৭৯
মুসাদ্দাদ ও সুলাইমান ইবনে হারব রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুসলিমের উপর তার গোলাম ও ঘোড়ার কোন যাকাত নেই।
হাদীস নং ১৩৮০
মুআয ইবনে ফাযালা রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাঁর আশেপাশে বসলাম। তিনি বললেন : আমার পরে তোমাদের ব্যাপারে আমি যা আশংকা করছি তা হল এই যে দুনিয়ার চাকচিক্য ও সৌন্দর্য (ধন-সম্পদ) তোমাদের সামনে খুলে দেওয়া হবে। এক সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! কল্যাণ কি কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে ? এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরব রইলেন। প্রশ্নকারীকে বলা হল, তোমার কি হয়েছে ? তুমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর কথা বলছ, কিন্তু তিনি তোমাকে জওয়াব দিচ্ছেন না ? তখন আমরা অনুভব করলাম যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তাঁর ঘাম মুছলেন এবং বললেন : প্রশ্নকারী কোথায় ? যেন তা প্রশ্নকে প্রশংসা করে বললেন, কল্যাণ কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে না। অবশ্য বসন্ত মৌসুম যে ঘাস উৎপন্ন করে তা (সবটুকুই সুস্বাদু ও কল্যাণকর বটে তবে) অনেক সময় হয়ত (ভোজনকারী প্রাণীর) জীবন নাশ করে অথবা তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। তবে ঐ তৃণভোজী জন্তু, যে পেট ভরে খাওয়ার পর সূর্যের তাপ গ্রহণ করে এবং মল ত্যাগ করে, প্রস্রাব করে এবং পুনরায় চরে (সেই মৃত্যু থেকে রক্ষা পায় তেমনি) এই সম্পদ হল আকর্ষনীয় সুস্বাদু। কাজেই সে-ই ভাগ্যবান মুসলিম, যে এই সম্পদ থেকে মিসকীন, ইয়াতীম ও মুসাফিরকে দান করে অথবা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ বলেছেন, আর যে ব্যক্তি এই সম্পদ অন্যায়ভাবে উপার্জন করে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে খেতে থাকে এবং তার পেট ভরে না। কিয়ামত দিবসে ঐ সম্পদ তা বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে ।
হাদীস নং ১৩৮১
উমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস রহ……….আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা.-এর স্ত্রী যায়নাব রা. থেকে বর্ণিত, (রাবী আমাশ রহ. বলেন) আমি ইবরাহীম রহ.-এর সাথে এ হাদীসের আলোচনা করলে তিনি আবু উবায়দা সূত্রে আমর ইবনে হারিস রহ.-এর মাধ্যমে আবদুল্লাহ রা.-এর স্ত্রী যায়নাব রা. থেকে হুবহু বর্ণনা করেন। তিনি (যায়নাব রা.) বলেন, আমি মসজিদে ছিলাম। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখলাম তিনি বলছেন : তোমরা সাদকা দাও যদিও তোমাদের অলংকার থেকে হয়। যায়নাব রা. আবদুল্লাহ রা. ও তাঁর পোষ্য ইয়াতীমের প্রতি খরচ করতেন। তখন তিনি আবদুল্লাহকে বললেন, তুমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জেনে এসো যে, তোমার প্রতি এবং আমার পোষ্য ইয়াতীমদের প্রতি খরচ করলে আমার পক্ষ থেকে সাদকা আদায় হবে কি ? তিনি (ইবনে মাসউদ রা.) বললেন, বরং তুমিই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জেনে এসো। এরপর আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম। তাঁর দরজায় আরো একজন আনসারী মহিলাকে দেখলাম, তার প্রয়োজনও আমার প্রয়োজনের অনুরূপ। তখন বিলাল রা.-কে আমাদের পাশ দিয়ে যেতে দেখে বললাম, আপনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞাসা করুন, স্বামী ও আপন (পোষ্য) ইয়াতীমের প্রতি সাদকা করলে কি আমার পক্ষ থেকে তা যথেষ্ট হবে ? এবং এ কথাও বলেছিলাম যে ,আমাদের কথা জানাবেন না। তিনি প্রবেশ করে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তারা কে ? বিলাল রা. বললেন, যায়নাব। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কোন যায়নাব ? তিনি উত্তর দিলেন, আবদুল্লাহর স্ত্রী। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তার জন্য দুটি সাওয়াব রয়েছে, আত্মীয়কে দেওয়ার সাওয়াব আর সাদকা দেওয়ার সাওয়াব।
হাদীস নং ১৩৮২
উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ……….উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (আমার স্বামী) আবু সালমার সন্তান, যারা আমারও সন্তান, তাদের প্রতি ব্যয় করলে আমার সাওয়াব হবে কি ? তিনি বললেন : তাদের প্রতি ব্যয় কর। তাদের প্রতি ব্যয় করার সাওয়াব তুমি অবশ্যই পাবে।
হাদীস নং ১৩৮৩
আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত দেওয়ার নির্দেশ দিলে বলা হল, ইবনে জামীল, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ ও আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. যাকাত প্রদানে অস্বীকার করছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ইবনে জামীলের যাকাত না দেওয়ার কারণ এ ছাড়া কিছু নয় যে, সে দরিদ্র ছিল, পরে আল্লাহ অনুগ্রহে ও তাঁর রাসূলের বরকতে সম্পদশালী হয়েছে। আর খালিদের ব্যাপারে হল তোমরা খালিদের উপর অন্যায় করেছ, কারণ সে তার বর্ম ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র আল্লাহর পথে আবদ্ধ রেখেছছে। আর আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. তো আল্লাহর রাসূলের চাচা। তাঁর যাকাত তাঁর জন্য সাদকা এবং সমপরিমাণও তার জন্য সাদকা। ইবনে আবুয যিনাদ রহ. তাঁর পিতা থেকে হাদীস বর্ণনায় শুআইব রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। আর ইবনে ইসহাক রহ. আবুয যিনাদ রহ. থেকে হাদীসের শেষাংশে ‘সাদকা’ শব্দের উল্লেখ করেননি। ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন, আরাজ রহ. থেকে অনুরূপ হাদীস আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে।
হাদীস নং ১৩৮৪
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, কিছুসংখ্যক আনসারী সাহাবী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাদের দিলেন, পুনরায় তাঁরা চাইলে তিনি তাদের দিলেন। এমনকি তাঁর নিকট যা ছিল সবই শেষ হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন : আমার নিকট যে মাল থাকে তা তোমাদের না দিয়ে আমার নিকট জমা রাখিনা। তবে, যে যাচনা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন আর যে পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চাইতে উত্তম ও ব্যাপক কোন নিয়ামত কাউকে দেওয়া হয়নি।
হাদীস নং ১৩৮৫
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যার হাতে আমার জীবন, সেই সত্তার কসম ! তোমাদের মধ্যে কারো রশি নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে পিঠে করে বয়ে আনা, কোন লোকের কাছে এসে যাচনা করার চাইতে অনেক ভাল, চাই সে দিক বা না দিক।
হাদীস নং ১৩৮৬
মূসা রহ………..যুবাইর ইবনে আওয়াম রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : তোমাদের মধ্যে কেউ রশি নিয়ে তার পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে আনা এবং তা বিক্রি করা, ফলে আল্লাহ তার চেহারাকে (যাচনা করার অপমান থেকে) রক্ষা করেন, তা মানুষের কাছে সাওয়াল করার চাইতে উত্তম, চাই তারা দিক বা না দিক।
হাদীস নং ১৩৮৭
আবদান রহ……….হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। তারপর বললেন : হে হাকীম, এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু। যে ব্যক্তি প্রশস্ত অন্তরে (লাভ ছাড়া) তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় করা হয় । আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় করা হয় না। যেন সে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম। হাকীম রা. বলেন, আমি বললাম, যিনি আপনাকে সত্য সহ পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম ! ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত (সাওয়াল করে) আমি কাউকে সামান্যতমও ক্ষতিগ্রস্থ করব না। এরপর আবু বকর রা. হাকীম রা.-কে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তিনি তাঁর কাছ থেকে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। তারপর উমর রা. (তাঁর যুগে) তাকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকলেন। তিনি তাঁর কাছ থেকেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। উমর রা. বললেন, মুসলিমগণ ! হাকীম রা. -এর ব্যাপারে আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি। আমি তাঁর কাছে এই গনীমত থেকে তাঁর প্রাপ্য পেশ করেছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। (সত্য সত্যই) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর হাকীম মৃত্যু পর্যন্ত কারো নিকট কিছু চেয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ করেননি।
হাদীস নং ১৩৮৮
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর রা.-কে বলতে শুনেছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু দান করতেন, তখন আমি বলতাম যে, আমার চাইতে বেশী অভাবগ্রস্ত, তাকে দিন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন : তা গ্রহণ কর। যখন তোমার কাছে এসব মালের কিছু আসে অথচ তার প্রতি তোমার অন্তরের লোভ নেই এবং তা গ্রহণ কর। যখন তোমার কাছে এসব মালের কিছু আসে অথচ তার প্রতি তোমার অন্তরের লোভ নেই এবং তার জন্য তুমি যাচনাকারীও নও, তখন তা তুমি গ্রহণ করবে। (এরূপ না হলে তুমি তার প্রতি অন্তর ধাবিত করবে না।
হাদীস নং ১৩৮৯
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সব সময় মানুষের কাছে চাইতে থাকে, সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার চেহারায় কোন গোশত থাকবে না। তিনি আরো বলেন : কিয়ামতের দিন সূর্য তাদের অতি কাছে আসবে, এমনকি ঘাম কানের অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছবে। যখন তারা এই অবস্থায় থাকবে, তখন তারা সাহায্য চাইবে আদম আ.-এর কাছে, তারপর মূসা আ.-এর কাছে, তারপর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে। আবদুল্লাহ রহ. লায়স রহ.-এর মাধ্যমে ইবনে আবু জাফর রহ. থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টের মধ্যে ফয়সালা করার জন্য সুপারিশ করবেন। তিনি যেতে যেতে জান্নাতের ফটকের কড়া ধরবেন। সেদিন আল্লাহ তাকে মাকামে মাহমুদে পৌছে দিবেন। হাশরের ময়দানে সমবেত সকলেই তাঁর প্রশংসা করবে। রাবী মুআল্লা রহ……….ইবনে উমার রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যাচনা করা সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৩৯০
হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সে ব্যক্তি প্রকৃত মিসকীন নয়, যাকে এক দু’ লোকমা ফিরিয়ে দেয় (যথেষ্ট হয়) বরং সে-ই প্রকৃত মিসকীন যার কোন সম্পদ নেই, অথচ সে (চাইতে) লজ্জাবোধ করে অথবা লোকদেরকে আকড়ে ধরে সাওয়াল করে না।
হাদীস নং ১৩৯১
ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ…….শাবী রহ. থেকে বর্ণিত যে, মুগীরা ইবনে শু’বা রহ.-এর কাতিব (একান্ত সচিব) বলেছেন, মুআবিয়া রা. মুগীরা ইবনে শু’বা রা.-এর কাছে লিখে পাঠালেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে আপনি যা শুনেছেন তার কিছু আমাকে লিখে জানান। তিনি তাঁর কাছে লিখলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজ অপছন্দ করেন, ১. অনর্থক কথাবার্তা, ২. সম্পদ নষ্ট করা এবং ৩. অত্যাধিক সাওয়াল করা।
হাদীস নং ১৩৯২
মুহাম্মদ ইবনে গুরাইর যুহরী রহ………সা’দ ইবনে আবু ওক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে কিছু দান করলেন। আমি তাদের মধ্যে বসা ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তিকে দিলেন না। অথচ সে ছিল আমার বিবেচনায় তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে চুপে চুপে বললাম, অমুক সম্পর্কে আপনার কি হল ? আমি তো তাকে অবশ্য মু’মিন বলে মনে করি। তিনি বললেন : বরং মুসলিম (বল) সা’দ রা. বলেন, এরপর আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। আবার তার সম্পর্কে আমর ধারণা প্রবল হয়ে উঠলে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক সম্পর্কে আপনার কি হল ? আল্লাহর কসম ! আমি তো তাকে মুমিন বলে মনে করি। তিনি বললেন : বরং মুসলিম। এবারও কিছুক্ষণ নিরব রইলাম। আবার তার সম্পর্কে আমার ধারণা প্রবল হয়ে উঠলে আমি বললাম, অমুক সম্পর্কে আপনার কি হল ? আল্লাহর কসম ! আমি তো তাকে মু’মিন বলে মনে করি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : অথবা মুসলিম ! এভাবে তিনবার বললেন : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি একজনকে দিয়ে থাকি অথচ অন্য ব্যক্তি আমার কাছে অধিক প্রিয় ই আশংকায় যে, তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অপর সনদে ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মদ রহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে এভাবে বলতে শুনেছি, তিনি হাদীসটি বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন, তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাঁধে হাত রাখলেন, এরপর বললে, হে সা’দ ! অগ্রসর হও। আমি তো এক ব্যক্তিকে দিয়ে থাকি……..। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, فكبكبوا অর্থ উল্টিয়ে দেওয়া হয়েছে। مكبا আরবী বাগধারা অনুসারে أكب الرجل থেকে গৃহীত হয়েছে অর্থাৎ কর্তার কর্ম যখন কারো প্রতি না বর্তায় তখনই এরূপ বলা হয়ে থাকে। আর যদি কর্ম কারোর উপর বর্তায়, তখন বলা হয় كبه الله لوجهه ও كببته أنا আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, সালিহ ইবনে ফায়সাল রহ. যুহরী রহ. থেকে বয়সে বড় ছিলেন আর তিনি ইবনে উমর রা.-এর সাক্ষাত পেয়েছেন।
হাদীস নং ১৩৯৩
ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রকৃত মিসকীন সে নয়, যে মানুষের কাছে ভিক্ষায় জন্য ঘুরে বেড়ায় এবং এক-দু’ লুকমা অথবা এক-দুটি খেজুর পেলে ফিরে যায় বরং প্রকৃত মিসকীন সে ব্যক্তি, যার এতটুকু সম্পদ নেই যাতে তার প্রয়োজন মিটাতে পারে এবং তার অবস্থা সেরূপ বোঝা যায় না যে, তাকে দান খয়রাত করা যাবে আর সে মানুষের কাছে যাচনা করে বেড়ায় না।
হাদীস নং ১৩৯৪
উমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে সূত্রে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা বের হয়, (রাবী বলেন) আমার ধারণা যে, তিনি বলেছেন, পাহাড়ের দিকে, তারপর লাকড়ী সংগ্রহ করে এবং তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে, তা তার পক্ষে লোকের কাছে যাচনা করার চাইতে উত্তম।
হাদীস নং ১৩৯৫
সাহল ইবনে বাক্কার রহ………আবু হুমাইদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাবুকের যুদ্ধে শরীক হয়েছি। যখন তিনি ওয়াদিল কুরা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন এক মহিলা তার নিজের বাগানে উপস্থিত ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের লক্ষ্য করে বললেন : তোমরা এই বাগানের ফলগুলোর পরিমাণ আন্দাজ কর। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে দশ ওসাক পরিমাণ আন্দাজ করলেন। তারপর মহিলাকে বললেন : উৎপন্ন ফলের হিসাব রেখো। আমরা তাবুক পৌঁছলে, তিনি বললেন : সাবধান ! আজ রাতে প্রবল ঝড় প্রবাহিত হবে। কাজেই কেউ যেন দাঁড়িয়ে না থাকে এবং প্রত্যেকেই যেন তার উট বেঁধে রাখে। তখন আমরা নিজ নিজ উট বেঁধে নিলাম। প্রবল ঝড় হতে লাগল। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেলে ঝড় তাকে তায় নামক পর্বতে নিক্ষেপ করল। আয়লা নগরীর শাসনকর্তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য একটি সাদা খচ্চর ও চাদর হাদিয়া দিলেন। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেখানকার শাসনকর্তারূপে বহাল থাকার লিখিত নির্দেশ দিলেন। (ফেরার পথে) ওয়াদিল কুরা পৌছে সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তোমার বাগানে কি পরিমাণ ফল হয়েছে ? মহিলা বলল, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি পরিমাণ, দশ ওসাকই হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি দ্রুত মদীনায় পৌঁছতে ইচ্ছুক। তোমাদের কেউ আমার সাথে দ্রুত যেতে চাইলে জলদী কর। ইবনে বাক্কার রহ. এমন একটি বাক্য বললেন, যার অর্থ, যখন তিনি মদীনা দেখতে পেলেন তখন বললেন : ইহা ত্বাবা (মদীনার অপর নাম) এরপর যখন তিনি উহুদ পর্বত দেখতে পেলেন তখন বললেন : এই পর্বত আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি। আনসারদের সর্বোত্তম গোত্রটি সম্পর্কে আমি তোমাদের খবর দিব কি ? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন : বনু নাজ্জার গোত্র, তারপর বনু আবদুল আশহাল গোত্র, এরপর বনু সাঈদা গোত্র অথবা বনু হারিস ইবনে খাযরাজ গোত্র। আনসারদের সকল গোত্রই কল্যাণ রয়েছে। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, যে বাগান দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত তাকে বলা হয় (হাদীকাতুন) এবং যা দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত নয় তাকে (হাদীকাতুন) বলা হয় না। সাহল ইবনে বাক্কার রহ. সুলাইমান ইবনে বিলাল সুত্রে আমর রহ. থেকে বর্ণনা করেন : এরপর বনু হারিস ইবনে খাযরাজ গোত্র, এরপর বনু সায়িদা গোত্র। এবং সুলাইমান রহ…….. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ পর্বত আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও তাকে ভালবাসি।
হাদীস নং ১৩৯৬
সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত উৎপাদিত ফসল বা সেচ ছাড়া উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের উপর উশর ওয়াজিব হয়। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর অর্ধ উশর। ইমাম বুখারী রহ. বলেন, এই হাদীসটি প্রথম হাদীসের ব্যাখ্যা স্বরূপ। কেননা, প্রথম হাদীস অর্থাৎ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে উশর বা অর্ধ উশর-এর ক্ষেত্র নির্দিষ্টরূপে বর্ণিত হয়নি। আর এই হাদীসে তার নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বর্ণিত হয়েছে। রাবী নির্ভরযোগ্য হলে তাঁর বর্ণনায় অন্য সূত্রের বর্ণনা অপেক্ষা বর্ধিত অংশ থাকলে গ্রহণযোগ্য হয় এবং এ ধরনের বিস্তারিত বর্ণনা অস্পষ্ট বর্ণনার ফয়সালাকারী হয়। যেমন, উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফাযল ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবাগৃহে সালাত আদায় করেননি। বিলাল রা. বলেন, সালাত আদায় করেছেন। এ ক্ষেত্রে বিলাল রা.-এর বর্ণনা গৃহীত হয়েছে আর ফাযল রা.-এর বর্ণনা গৃহীত হয়নি।
হাদীস নং ১৩৯৭
মুসাদ্দাদ রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পাঁচ ওসাক-এর কম উৎপন্ন দ্রব্যের যাকাত নেই এবং পাঁচটির কম উটের যাকাত নেই। এমনিভাবে পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ রৌপ্যেরও যাকাত নেই।
হাদীস নং ১৩৯৮
উমর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাসান আসাদী রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খেজুর কাটার মৌসুমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে (সাদকার) খেজুর আনা হত। অমুকে তার খেজুর নিয়ে আসত, অমুকে এর খেজুর নিয়ে আসত। এভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে খেজুর স্তুপ হয়ে গেল। হাসান ও হুসাইন রা. সে খেজুর নিয়ে খেলতে লাগলেন, তাদের একজন একটি খেজুর নিয়ে তা মুখে দিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং তার মুখ থেকে খেজুর বের করে বললেন, তুমি কি জান না যে, মুহাম্মদের বংশধর (বনু হাশিম) সাদকা খায় না।
হাদীস নং ১৩৯৯
হাজ্জাজ রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর ব্যবহারযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। যখন তাকে ব্যবহারযোগ্যতা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হল, তখন তিনি বললেন: ফল নষ্ট হওয়া থেকে নিরাপদ হওয়া।
হাদীস নং ১৪০০
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফল ব্যবহারযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীস নং ১৪০১
কুতাইবা রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রং ধরার আগে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এর অর্থ লালচে হওয়া।
হাদীস নং ১৪০২
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করতেন যে, উমর ইবনে খাত্তাব রা. আল্লাহর রাস্তায় তাঁর একটি ঘোড়া সাদকা করেছিলেন। পরে তা বিক্রয় করা হচ্ছে জেনে তিনি নিজেই তা ক্রয় করার ইচ্ছা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাঁর মত জানতে চাইলেন। তিনি বললেন : তোমার সাদকা ফিরিয়ে নিবে না। সে নির্দেশের কারণে ইবনে উমর রা.-এর অভ্যাস ছিল নিজের দেওয়া সাদকার বস্তু কিনে ফেললে সেটি সাদকা না করে ছাড়তেন না।
হাদীস নং ১৪০৩
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার একটি ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় দান করলাম। যার কাছে ঘোড়াটি ছিল সে এর হক আদায় করতে পারল না। তখন আমি তা ক্রয় করতে চাইলাম এবং আমার ধারণা ছিল যে, সে সেটি কম মূল্যে বিক্রি করবে। এ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন : তুমি ক্রয় করবে না এবং তোমার সাদকা ফিরিয়ে নিবে না, সে তা এক দিরহামের বিনিময়ে দিলেও। কেননা, যে ব্যক্তি সাদকা ফিরিয়ে নেয় সে আপন বমি পুনরায় গলাধঃকরণ করে।
হাদীস নং ১৪০৪
আদম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাসান ইবনে আলী রা. সাদকার একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ফেলে দেওয়ার জন্য কাখ কাখ (ওয়াক ওয়াক) বললেন। তারপর বললেন : তুমি কি জান না যে, আমরা সাদকা খাইনা।
হাদীস নং ১৪০৫
সা’ই ইবনে উফাইর রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মায়মূনা রা. কর্তৃক আযাদকৃত জনৈক দাসীকে সাদকা স্বরূপ প্রদত্ত একটি বকরীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমরা এর চামড়া দিয়ে উপকৃত হও না কেন ? তারা বললেন :এটা তো মৃত। তিনি বললেন : এটা কেবল খাওয়া হারাম করা হয়েছে।
হাদীস নং ১৪০৬
আদম রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বারীরা নাম্নী দাসীকে আযাদ করার উদ্দেশ্যে কিনতে চাইলেন, তার মালিকরা বারীরার ‘ওয়ালা’ (অভিভাবকত্বের অধিকার)-এর শর্ত আরোপ করতে চাইল। আয়িশা রা.(বিষয়টি সম্পর্কে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উল্লেখ করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : তুমি তাকে ক্রয় কর। কারণ যে (তাকে) আযাদ করবে ‘ওয়ালা’ তারই। আয়িশা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একটু গোশত হাজির করা হল। আমি বললাম, এ বারীরাকে সাদকা স্বরূপ দেওয়া হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বারীরা’র জন্য সাদকা, আর আমাদের জন্য হাদিয়া।
হাদীস নং ১৪০৭
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………উম্মে আতিয়্যা আনসারীয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা রা.-এর নিকট গিয়ে বললেন : তোমাদের কাছে (খাওয়ার) কিছু আছে কি ? আয়িশা রা. বললেন : না, তবে আপনি সাদকা স্বরূপ নুসায়বাকে বকরীর যে গোশত পাঠিয়েছিলেন, সে তার কিছু পাঠিয়ে দিয়েছিল (তা ছাড়া কিছু নেই)। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সাদকা তার যথাস্থানে পৌছেছে।
হাদীস নং ১৪০৮
ইয়াহইয়া ইবনে মূসা রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, বারীরা রা.-কে সাদকাকৃত গোশতের কিছু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেওয়া হল । তিনি বললেন, তা বারীরার জন্য সাদকা এবং আমাদের জন্য হাদীয়া। আবু দাউদ রহ.বলেন যে, শু’বা রহ. কাতাদা রহ. সূত্রে আনাস রা.-এর মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৪০৯
মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুআয ইবনে জাবাল রা.-কে ইয়ামানের (শাসক নিয়োগ করে) পাঠানোর সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন : তুমি আহলে কিতাবের কাছে যাচ্ছ। কাজেই তাদের কাছে যখন পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ কথার দিকে দাওয়াত দিবে তারা যেন সাক্ষ্য দিয়ে বলে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তোমার এ কাথা মেনে নেয় তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যদি তারা এ কথাও মেনে নেয় তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর সাদকা (যাকাত) ফরয করেছেন যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে। তোমার এ কথা যদি তারা মেনে নেয়, তবে (কেবল) তাদের উত্তম মাল গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে এবং মজলুমের বদদু’আকে ভয় করবে। কেননা, তার (বদদু’আ) এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না।
হাদীস নং ১৪১০
হাফস ইবনে উমর রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিজেদের সাদকা নিয়ে উপস্থিত হত তখন তিনি বলতেন : আল্লাহ ! অমুকের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। একবার আমার পিতা সাদকা নিয়ে হাজির হলে তিনি বললেন : হে আল্লাহ ! আবু আওফার বংশধরের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।
হাদীস নং ১৪১১
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : চতুষ্পদ জন্তুর আঘাত দায়মুক্ত, কূপ (খননে শ্রমিকের মৃত্যুতে মালিক) দায়মুক্ত, খনি (খননে কেউ মারা গেলে মালিক) দায়মুক্ত। রিকাযে এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব।
হাদীস নং ১৪১২
ইউসুফ ইবনে মূসা রহ……….আবু হুমাইদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আসদ গোত্রের ইবনে লুতবিয়া নামক জনৈক ব্যক্তিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু সুলাইম গোত্রের যাকাত উসুল করার কাজে নিয়োগ করেন। তিনি ফিরে আসলে তার নিকট থেকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিসাব নিলেন।
হাদীস নং ১৪১৩
মুসাদ্দাদ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উরাইনা গোত্রের কতিপয় লোকেরা মদীনার আবহাওয়া প্রতিকুল হওয়ায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে যাকাতের উটের কাছে গিয়ে উটের দুধ পান করার ও পেশাব (ব্যবহার করার) অনুমতি প্রদান করেন। তারা রাখালকে (নির্মমভাবে) হত্যা করে এবং উট হাঁকিয়ে নিয়ে (পালিয়ে) যায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পশ্চাদ্ধাবনে লোক প্রেরণ করেন, তাদেরকে ধরে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাদের হাত পা কেটে দেন এবং তাদের চোখে তপ্ত শলাকা বিদ্ধ করেন আর তাদেরকে হাররা নামক উত্তপ্ত স্থানে ফেলে রাখেন। তারা (যন্ত্রণায়) পাথর কামড়ে ধরে ছিল। আবু কিলাবা, সাবিত ও হুমাইদ রহ. আনাস রা. থেকে হাদীস বর্ণনায় কাতাদা রহ-এর অনুসরণ করেন।
হাদীস নং ১৪১৫
ইয়াহইয়া ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সাকান রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
হাদীস নং ১৪১৬
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, মুসলিমদের প্রত্যেক আযাদ, গোলাম পুরুষ ও নারীর পক্ষ থেকে সাদকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর অথবা যব-এর এক সা’ পরিমাণ আদায় করা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয করেছেন।
হাদীস নং ১৪১৭
কাবীসা ইবনে উকবা রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সা’ পরিমাণ যব দ্বারা সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম।
হাদীস নং ১৪১৮
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সা’ পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা’ পরিমাণ যব অথবা এক সা’ পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা’ পরিমাণ পনির অথবা এক সা’ পরিমাণ কিসমিস দিয়ে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম।
হাদীস নং ১৪১৯
আহমদ ইবনে ইউনুস রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকাতুল ফিতর হিসাবে এক সা’ পরিমাণ খেজুর বা এক সা’ পরিমাণ যব দিয়ে আদায় করতে নির্দেশ দেন। আবদুল্লাহ রা. বলেন, তারপর লোকেরা যবের সমপরিমাণ হিসেবে দু’ মুদ (অর্ধ সা’) গম আদায় করতে থাকে।
হাদীস নং ১৪২০
আবদুল্লাহ ইবনে মুনীর রহ…….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এক সা’ খাদ্যদ্রব্য বা এক সা’ খেজুর বা এক সা’ যব বা এক সা’ কিসমিস দিয়ে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। মুআবিয়া রা.-এর যুগে যখন গম আমদানী হল তখন তিনি বললেন, এক মুদ গম (পূর্বোক্তগুলোর) দু’ মুদ-এর সমপরিমাণ বলে আমার মনে হয়।
হাদীস নং ১৪২১
আদম রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন।
হাদীস নং ১৪২২
মুআয ইবনে ফাযালা রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ঈদের দিন এক সা’ পরিমাণ খাদ্য সাদকাতুল ফিতর হিসাবে আদায় করতাম। আবু সাঈদ রা. বলেন, আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর।
হাদীস নং ১৪২৩
আবু নুমান রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক পুরুষ, মহিলা, আযাদ ও গোলামের পক্ষ থেকে সাদকাতুল ফিতর অথবা (বলেছেন) সাদকা-ই রমাযান হিসাবে এক সা’ খেজুর বা এক সা’ যব আদায় করা ফরয করেছেন। তারপর লোকেরা অর্ধ সা’ গমকে এক সা’ খেজুরের সমপরিমাণ দিতে লাগল। (রাবী নাফি রহ. বলেন) ইবনে উমর রা. খেজুর (সাদকাতুল ফিতর হিসাবে) দিতেন। এক সময় মদীনায় খেজুর দুর্লভ হলে যব দিয়ে তা আদায় করেন। ইবনে উমর রা. প্রাপ্ত বয়স্ক ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক সকলের পক্ষ থেকেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করতেন, এমনকি আমার সন্তানদের পক্ষ থেকেও সাদকার দ্রব্য গ্রহীতাদের কে দিয়ে দিতেন এবং ঈদের এক দু’ দিন পূর্বেই আদায় করে দিতেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, আমার সন্তান অর্থাৎ নাফি রহ.-এর সন্তান। তিনি আরও বলেন, সাদকার মাল একত্রিত করার জন্য দিতেন, ফকিরদের দেওয়ার জন্য নয়।
হাদীস নং ১৪২৪
মুসাদ্দাদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপ্রাপ্ত বয়স্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক, আযাদ ও গোলাম প্রত্যেকের পক্ষ থেকে এক সা’ যব অথবা এক সা’ খেজুর সাদকাতুল ফিতর হিসাবে আদায় করা ফরয করে দিয়েছেন।
হজ্জ অধ্যায় (১৪২৫-১৭৪৫)
হাদীস নং ১৪২৫ Missing
হাদীস নং ১৪২৬
আহমদ ইবনে ঈসা রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দেখেছি, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুযাইফা নামক স্থানে তাঁর বাহনের উপর আরোহণ করেন, বাহনটি সোজা হয়ে দাঁড়াতেই তিনি তালবিয়া উচ্চারণ করতে থাকেন।
হাদীস নং ১৪২৭
ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালবিয়া পাঠ যুল-হুলাইফা থেকে শুরু হত যখন তাঁর বাহন তাকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াত। হাদীসটি আনাস ও ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেছেন অর্থাৎ ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ.-এর বর্ণিত হাদীসটি।
হাদীস নং ১৪২৮
আমর ইবনে আলী রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনারা উমরা করলেন, আর আমি উমরা করতে পারলাম না । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে আবদুর রহমান ! তোমার বোন (আয়িশা)-কে সাথে নিয়ে তানঈম থেকে গিয়ে উমরা করিয়ে নিয়ে এসো। তিনি আয়িশাকে উটের পিঠে ছোট একটি হাওদার পশ্চাদ্ভাগে বসিয়ে দেন এবং তিনি উমরা সমাপন করেন।
হাদীস নং ১৪২৯
আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, সর্বোত্তম আমল কোনটি ? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোনটি ? তিনি বললেন : আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোনটি ? তিনি বললেন : হজ্জ-ই মাবরূর (মাকবুল হজ্জ)।
হাদীস নং ১৪৩০
আবদুর রহমান ইবনে মুবারক রহ………উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! জিহাদকে আমরা সর্বোত্তম আমল মনে করি। কাজেই আমরা কি জিহাদ করব না ? তিনি বললেন : না, বরং তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আমল হল, হজ্জে মাবরূর।
হাদীস নং ১৪৩১
আদম রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করল এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু, যাকে তার মা এ মুহূর্তেই প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে।
হাদীস নং ১৪৩২
মালিক ইবনে ইসমাঈল রহ………যায়েদ ইবনে জুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর কাছে তাঁর অবস্থান স্থলে যান, তখন তাঁর জন্য তাঁবু ও চাদওয়া টানানো হয়েছিল। (যায়েদ রা. বলেন) আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন স্থান থেকে উমরার ইহরাম বাঁধা জায়িজ হবে ? তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদবাসীদের জন্য কারন, মদীনাবাসীদের জন্য যুল-হুলাইফা ও সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা (ইহরামের মীকাত) নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
হাদীস নং ১৪৩৩
ইয়াহইয়া ইবনে বিশর রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়ামানের অধিবাসীগণ হজ্জে গমনকালে পাথেয় সংগে নিয়ে যেত না এবং তারা বলছিল, আমরা আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল। কিন্তু মক্কায় উপনীত হয়ে তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচনা করে বেড়াত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ অবতীর্ণ করেন : তোমরা পাথেয়র ব্যবস্থা করা, আত্মসংযম ই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হাদীসটি ইবনে উয়ায়না রহ. আমর রহ. সূত্রে ইকরিমা রহ. থেকে মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৪৩৪
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বাঁধার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, মদীনাবাসীদের জন্য যুল- হুলাইফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা, নজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল, ইয়ামানবাসীদের জজন্য ইয়ালামলাম। হজ্জ ও উমরা নিয়্যাতকারী সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং ঐ সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসী সকলের জন্য উক্ত স্থানগুলো মীকাতরূপে গণ্য এবং যারা এ সব মীকাতের ভিতরে (অর্থাৎ মক্কার নিকটবর্তী) স্থানের অধিবাসী, তারা যেখান হতে হজ্জের নিয়্যাত করে বের হবে (সেখান হতে ইহরাম বাঁধবে) এমনকি মক্কাবাসী মক্কা থেকেই (হজ্জের) ইহরাম বাঁধবে।
হাদীস নং ১৪৩৫
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : মদীনাবাসীগণ যুল-হুলাইফা থেকে, সিরিয়াবাসীগণ জুহফা থেকে ও নজদবাসীগণ কারন থেকে ইহরাম বাঁধবে। আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমি (অন্যের মাধ্যমে) জানতে পেরেছি, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ইয়ামানবাসীগণ ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাঁধবে।
হাদীস নং ১৪৩৬
মুসাদ্দাদ রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বাঁধার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, মদীনাবাসীদের জন্য যুল-হুলাইফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা, নজদবাসীদের জন্য কারনুল-মানাযিল, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম। উল্লিখিত স্থানসমূহ হজ্জ ও উমরার নিয়্যাতকারী সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং ঐ সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য ইহরাম বাঁধার স্থান এবং মীকাতের ভিতরে স্থানের লোকেরা নিজ বাড়ি থেকে ইহরাম বাঁধবে। এমনকি মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকেই ইহরাম বাঁধবে।
হাদীস নং ১৪৩৭
আলী ও আহমদ রহ………..আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মীকাতের সীমা নির্ধারিত করেছেন। তিনি বলেন, মদীনাবাসীদের মীকাত হল যুল-হুলাইফা, সিরিয়াবাসীদের মীকাত হল মাহয়াআ যার অপর নাম জুহফা এবং নজদবাসীদের মীকাত হল কারন। ইবনে উমর রা. বলেন, আমি শুনিনি, তবে লোকেরা বলে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ইয়ামনবাসীদের মীকাত হল ইয়ালামলাম।
হাদীস নং ১৪৩৮
কুতাইবা রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাবাসীদের জন্য মীকাত নির্ধারণ করেন যুল-হুলাইফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম, নজদবাসীদের জন্য কারন। উল্লিখিত স্থানসমূহ হজ্জ ও উমরার নিয়্যাতকারী সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং ঐ সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য ইহরাম বাঁধার স্থান। আর যে মীকাতের ভিতরের অধিবাসী সে নিজ বাড়ি থেকে ইহরাম বাঁধবে। এমনকি মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকেই ইহরাম বাঁধবে।
হাদীস নং ১৪৩৯
মুআল্লা ইবনে আসাদ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাবাসীদের জন্য মীকাত নির্ধারণ করেন যুল-হুলাইফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম, নজদবাসীদের জন্য কারন। উল্লিখিত স্থানসমূহ হজ্জ ও উমরার নিয়্যাতকারী সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং ঐ সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য ইহরাম বাঁধার স্থান। এ ছাড়াও যারা মীকাতের ভিতরের অধিবাসী তারা সেখান থেকেই (ইহরাম আরম্ভ করবে) এমনকি মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকেই (ইহরাম বাঁধবে)।
হাদীস নং ১৪৪০
আলী ইবনে মুসলিম রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ শহর দুটি (কুফা ও বসরা) বিজিত হল, তখন সে স্থানের লোকগণ উমর রা.-এর নিকট এসে নিবেদন করল, হে আমীরুল মু’মিনীন ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নজদবাসীদের জন্য (মীকাত হিসাবে) সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন কারন, কিন্তু তা আমাদের পথ থেকে দূরে। কাজেই আমরা কারন-সীমায় অতিক্রম করতে চাইলে তা হবে আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। উমর রা. বললেন, তাহলে তোমরা লক্ষ্য করা তোমাদের পথে কারন-এর সম দূরত্ব-রেখা কোন স্থানটি ? তারপর তিনি যাতু’ইরক মীকাতরূপে নির্ধারণ করেছেন।
হাদীস নং ১৪৪১
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ ইবেন উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলাইফার বাতহা নামক উপত্যকায় উট বসিয়ে সালাত আদায় করেন। (রাবী নাফি বলেন) ইবনে উমর রা.ও তাই করতেন।
হাদীস নং ১৪৪২
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হজ্জের সফরে) শাজারা নামক পথ দিয়ে গমন করতেন এবং মুআররাস নামক পথ দিয়ে (মদীনায়) প্রবেশ করতেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার দিকে সফর করতেন, মসজিদুশ-শাজারায় সালাত আদায় করতেন ও ফিরার পথে যুল-হুলাইফার বাতনুল-ওয়াদীতে সালাত আদায় করতেন এবং সেখানে সকাল পর্যন্ত রাত যাপন করতেন।
হাদীস নং ১৪৪৩
হুমায়দী রহ……….উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আকীক উপত্যকায় অবস্থানকালে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : আজ রাতে আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একজন আগন্তুক আমার নিকট এসে বললেন, আপনি এই বরকতময় উপত্যকায় সালাত আদায় করুন এবং বলুন, (আমার এ ইহরাম) হজ্জের সাথে উমরারও।
হাদীস নং ১৪৪৪
মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, যুল-হুলাইফার (আকীক) উপত্যকায় রাত যাপনকালে তাকে স্বপ্নযোগে বলা হয়, আপনি বরকতময় উপত্যকায় অবস্থান করছেন। (রাবী মূসা ইবনে উকরা রা. বলেন) সালিম রহ. আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে উট বসিয়ে ঐ উট বসাবার স্থানটির সন্ধান চালান, যেখানে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. উট বসিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রাত যাপনের স্থানটি সন্ধান করতেন। সে স্থানটি উপত্যকায় মসজিদের নীচু জায়গায় অবতরণকারীদের ও রাস্তার একেবারে মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
হাদীস নং ১৪৪৫
মুহাম্মদ ……..সাফওয়ান ইবনে ইয়ালা রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইয়ালা রা. উমর রা. -কে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর ওহী অবতরণ মুহূর্তটি আমাকে দেখাবেন। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “জি’রানা” নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন, তাঁর সংগে কিছু সংখ্যক সাহাবী ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! কোন ব্যক্তি সুগন্ধিযুক্ত পোশাক পরে উমরার ইহরাম বাঁধলে তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। এরপর তাঁর নিকট ওহী আসল। উমর রা. ইয়ালা রা.-কে ইঙ্গিত করায় তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। তখন একখণ্ড কাপড় দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপর ছায়া করা হয়েছিল, ইয়ালা রা. মাথা পবেশ করিয়ে দেখতে পেলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখমণ্ডল লাল বর্ণ, তিনি সজোরে শ্বাস গ্রহণ করছেন। এরপর সে অবস্থা দূর হল। তিনি বললেন : উমরা সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায় ? প্রশ্নকারীকে উপস্থিত করা হলে তিনি বললেন : তোমার শরীরের সুগন্ধি তিনবার ধুয়ে ফেল ও জুব্বাটি খুলে ফেল এবং হজ্জে যা করে থাক উমরাতেও তাই কর। (রাবী ইবনে জুরাইজ বলেন) আমি আতা রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনবার ধোয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি কি উত্তমরূপে পরিষ্কার করা বুঝিয়েছেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাই।
হাদীস নং ১৪৪৬
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ……….সাঈদ ইবনে জুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে উমর রা .(ইহরাম বাঁধা অবস্থায়) যায়তুন তেল ব্যবহার করতেন। (রাবী মানসুর বলেন) এ বিষয় আমি ইবরাহীম রহ.-এর কাছে করলে তিনি বললেন, তাঁর কথায় তোমার কি দরকার ! আমাকে তো আসওয়াদ রহ. আয়িশা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, ইহরাম বাঁধা অবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সিথিতে যে সুগন্ধি তেল চকচক করছিল তা যেন আজও আমি দেখতে পাচ্ছি।
হাদীস নং ১৪৪৭
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………নবী সহধর্মিনী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইহরাম বাঁধঅর সময় আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গায়ে সুগন্ধি মেখে দিতাম এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পূর্বে ইহরাম খোলার সময়ও।
হাদীস নং ১৪৪৮
আসবাগ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চুলে আঠালো দ্রব্য লাগিয়ে ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি।
হাদীস নং ১৪৪৯
আলী ইবনে আবদুল্লাহ ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলাইফার মসজিদের নিকট থেকে ইহরাম বেঁধেছেন।
হাদীস নং ১৪৫০
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! মুহরিম ব্যক্তি কি প্রকারের কাপড় পড়বে ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সে জামা, পাগড়ী, পায়জামা, টুপি ও মোজা পরিধান করবে না। তবে কারো জুতা না থাকলে সে টাখনুর নিচ পর্যন্ত মোজা কেটে (জুতার ন্যায়) পরবে। তোমরা জাফরান বা ওয়ারস (এক প্রকার খুশবু) রঞ্জিত কোন কাপড় পরবে না। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, মুহরিম ব্যক্তি মাথা ধুতে পারবে। চুল আচড়াবে না, শরীর চুলকাবে না। মাথা ও শরীর থেকে উকুন যমীনে ফেলে দিবে।
হাদীস নং ১৪৫১
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, আরাফা থেকে মযদালিফা পর্যন্ত একই বাহনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে উসামা ইবনে যায়েদ রা. উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর মুযদালিফা থেকে মিনা পর্যন্ত ফযল (ইবনে আব্বাস রা.)-কে তাঁর পিছনে আরোহণ করান। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তাঁরা উভয়ই বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরা আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
হাদীস নং ১৪৫২
মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর মুকাদ্দামী রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ চুল আচড়িয়ে, তেল মেখে, লুঙ্গি ও চাদর পরে (হজ্জের উদ্দেশ্যে) মদীনা থেকে রওয়ানা হন। তিনি কোন প্রকার চাদর বা লুঙ্গি পরতে নিষেধ করেননি, তবে শরীরের চামড়া রঞ্জিত হয়ে যেতে পারে এরূপ জাফরানী রঙ্গের কাপড় পরতে নিষেধ করছেন। যুল-হুলাইফা থেকে সাওয়ারীতে আরোহণ করে বায়দা নামক স্থানে পৌছে তিনি ও তাঁর সাহাবীগণ তালবিয়া পাঠ করেন এবং কুরবানীর উটের গলায় মালা ঝুলিয়ে দেন, তখন যুলকাদা মাসের পাঁচদিন অবশিষ্ট ছিল। যিলহজ্জ মাসের চতুর্থ দিনে মক্কায় উপনীত হয়ে সর্বপ্রথম কাবাঘরের তাওয়াফ করে সাফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ী করেন। তাঁর কুরবানীর উটের গলায় মালা পরিয়েছেন বলে তিনি ইহরাম খুলেননি। তারপর মক্কার উটু ভূমিতে হাজূন নামক স্থানের নিকটে অবস্থান করেন, তখন তিনি হজ্জের ইহরামের অবস্থায় ছিলেন। (প্রথমবার) তাওয়াফ করার পর আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করার পূর্বে আর কাবার নিকটবর্তী হন নি। অবশ্য তিনি সাহাবাগণকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সায়ী সম্পাদনা করে মাথার চুল ছেটে হালাল হতে নির্দেশ দেন। কেননা যাদের সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই, এ বিধানটি কেবল তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । আর যার সাথে তার স্ত্রী রয়েছে তার জন্য স্ত্রী-সহবাস, সুগন্ধি ব্যবহার ও যে কোন ধরনের কাপড় পরা বৈধ।
হাদীস নং ১৪৫৩
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় চার রাকআত ও যুল-হুলাইফায় পৌছে দু’ রাকআত সালাত আদায় করেন। তারপর ভোর পর্যন্ত সেখানে রাত যাপন করেন। এরপর যখন তিনি সওয়ারীতে আরোহণ করেন এবং তা তাকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় তখন তিনি তালবিয়া পাঠ করেন।
হাদীস নং ১৪৫৪
কুতাইবা রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় যোহরের সালাত চার রাকআত আদায় করেন এবং যুল-হুলাইফায় পৌছে আসরের সালাত দু’ রাকআত আদায় করেন। রাবী বলেন, আমার ধারণা যে, তিনি ভোর পর্যন্ত সেখানে রাত যাপন করেন।
হাদীস নং ১৪৫৫
সুলাইমান ইবনে হারব রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত মদীনায় চার রাকআত আদায় করলেন এবং আসরের সালাত যুল-হুলাইফায় দু’ রাকআত আদায় করেন। আমি শুনতে পেলাম তাঁরা সকলে উচ্চস্বরে হজ্জ ও উমরার তালবিয়া পাঠ করছেন।
হাদীস নং ১৪৫৬
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালবিয়া নিম্নরূপ : আমি হাযির হে আল্লাহ, আমি হাযির, আপনার কোন অংশীদার নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও সকল নিয়ামত আপনার এবং কর্তৃত্ব আপনারই, আপনার কোন অংশীদার নেই।
হাদীস নং ১৪৫৭
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে তালবিয়া পাঠ করতেন তা আমি ভালোরূপে অবগত (তাঁর তালবিয়া ছিল) আমি হাযির হে আল্লাহ ! আমি হাযির, আমি হাযির, আপনার কোন অংশীদার নেই, আমি হাযির, সকর প্রশংসা ও সকল নিয়ামত আপনারই। আবু মুআবিয়া রহ. আমাশ রহ. থেকে বর্ণনায় সফিয়া রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। শুবা রহ…..আবু আতিয়্যা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা রা. থেকে শুনেছি।
হাদীস নং ১৪৫৮
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে মদীনায় যুহরের সালাত আদায় করেন চার রাকআত এবং যুল-হুলাইফায় (পৌছে) আসরের সালাত আদায় করলেন দু’ রাকআত। এরপর সেখানেই ভোর পর্যন্ত রাত কাটালেন। সকালে সাওয়ারীতে আরোহণ করে বায়দা নামক স্থানে উপনীত হলেন। তখন তিনি আল্লাহর হামদ, তাসবীহ ও তাকবীর পাঠ করছিলেন। এরপর তিনি হজ্জ ও উমরার তালবিয়া পাঠ করলেন। সাহাবীগণও উভয়ের তালবিয়া পাঠ করলেন। যখন আমরা (মক্কার উপকণ্ঠে) পৌছলাম তখন তিনি সাহাবীগণকে (উমরা শেষ করে) হালাল হওয়ার নির্দেশ দিলেন এবং তাঁরা হালাল হয়ে গেলেন। অবশেষে যিলহজ্জ মাসের আট তারিখে তাঁরা হজ্জের ইহরাম বাঁধলেন। রাবী বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে কিছুসংখ্যক দাঁড়ানো উট নহর করলেন। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় সাদা কাল মিশ্রিত রং-এর দুটি মেষ যবেহ করেছিলেন। আবু আবদুল্লাহ (বুখারী) রহ. বলেন, কোন কোন রাবী হাদীসটি আইয়্যূব রহ. সূত্রে জনৈক রাবীর মাধ্যমে আনাস রা. থেকে বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন।
হাদীস নং ১৪৫৯
আবু আসিম রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিয়ে তাঁর সাওয়ারী সোজা দাঁড়িয়ে গেলে তিনি তালবিয়া পাঠ করেন।
হাদীস নং ১৪৬০
সুলাইমান ইবনে দাউদ আবু রবী রহ……নাফি রহ. থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ইবনে উমর রা. মক্কা গমনের ইচ্ছা করলে দেহে সুগন্ধিহীন তেল লাগাতেন। তারপর যুল-হুলাইফার মসজিদে পৌছে সালাত আদায় করে সাওয়ারীতে আরোহণ করতেন। তাকে নিয়ে সাওয়ারী সোজা দাঁড়িয়ে গেলে তিনি ইহরাম বাঁধতেন। এরপর তিনি (ইবনে উমর রা. ) বলতেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এরূপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং ১৪৬১
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ…….মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইবনে আব্বাস রা. -এর নিকটে ছিলাম, লোকেরা দাজ্জালের আলোচনা করে বলল যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তার দু’ চোখের মাঝে (কপালে) কা-ফি-র লেখা থাকবে। রাবী বলেন, ইবনে আব্বাস রা. বললেন, এ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু শুনিনি । অবশ্য তিনি বলেছেন : আমি যেন দেখছি মূসা আ. নীচু ভূমিতে অবতরণকালে তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
হাদীস নং ১৪৬২
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বিদায় হজ্জের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হয়ে উমরার নিয়্যাতে ইহরাম বাঁধি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যার সঙ্গে কুরবানীর পশু আছে সে যেন উমরার সাথে হজ্জের ইহরামও বেঁধে নেয়। তারপর সে উমরা ও হজ্জ উভয়টি সম্পন্ন না করা পর্যন্ত হালাল হতে পারবে না। (আয়িশা রা. বলেন) এরপর আমি মক্কায় ঋতুবতী অবস্থায় পৌঁছলাম। কাজেই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সায়ী কোনটিই আদায় করতে সমর্থ হলাম না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার অসুবিধার কথা জানালে তিনি বললেন : মাথার চুল খুলে নাও এবং তা আচড়িয়ে নাও এবং হজ্জের ইহরাম বহাল রাখ এবং উমরা ছেড়ে দাও। আমি তাই করলাম, হজ্জ সম্পন্ন করার পর আমাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা.-এর সঙ্গে তানঈম-এ প্রেরণ করেন। সেখান থেকে আমি উমরার ইহরাম বাঁধি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : এ তোমার (ছেড়ে দেওয়া) উমরার স্থলবর্তী। আয়িশা রা. বলেন, যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, তাঁরা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সায়ী সমাপ্ত করে হালাল হয়ে যান এবং মিনা থেকে ফিরে আসার পর দ্বিতীয়বার তাওয়াফ করেন আর যারা হজ্জ ও উমরা উভয়ের ইহরাম বেঁধেছিলেন তাঁরা একবার তাওয়াফ করেন।
হাদীস নং ১৪৬৩
মক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা-কে ইহরাম বহাল রাখার আদেশ দিলেন, এরপর জাবির রা. সুরাকা রা.-এর উক্তি বর্ণনা করেন। মুহাম্মদ ইবনে বকর রহ. ইবনে জুরাইজ রহ. থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন ; নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.-কে বললেন : হে আলী ! তুমি কোন প্রকার ইহরাম বেঁধেছ ? আলী রা. বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইহরামের অনুরূপ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে কুরবানীর পশু প্রেরণ কর এবং ইহরাম অবস্থায় যেভাবে আছ সে ভাবেই থাক।
হাদীস নং ১৪৬৪
হাসান ইবনে আলী খাল্লাল হুযালী রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী রা. ইয়ামান থেকে এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি প্রশ্ন করলেন : তুমি কী প্রকার ইহরাম বেঁধেছ ? আলী রা. বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুরূপ । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমার সঙ্গে কুরবানীর পশু না হলে আমি হয়ে যেতাম।
হাদীস নং ১৪৬৫
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু মূসা (আশআরী) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়ামানে আমার গোত্রের নিকট পাঠিয়েছিলেন; তিনি (হজ্জের সফরে) বাতহা নামক স্থানে অবস্থানকালে আমি (ফিরে এসে) তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বললেন : তুমি কোন প্রকার ইহরাম বেঁধেছ ? আমি বললাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুরূপ আমি ইহরাম বেঁধেছি। তিনি বললেন : তোমার সংগে কুরবানীর পশু আছে কি ? আমি বললাম, নেই। তিনি আমাকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে আদেশ করলেন। আমি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সায়ী করলাম। পরে তিনি আদেশ করলে আমি হালাল হয়ে গেলাম। তারপর আমি আমার গোত্রীয় এক মহিলার নিকট আসলাম। সে আমার মাথা আঁচড়িয়ে দিল অথবা বলেছেন, আমার মাথা ধুয়ে দিল। এরপর উমর রা. তাঁর খিলাফতকালে এক উপলক্ষে আসলেন। (আমরা তাকে বিষয়টি জানালে) তিনি বললেন : কুরআনের নির্দেশ পালন কর। কুরআন তো আমাদেরকে হজ্জ ও উমরা পৃথক পৃথকভাবে যথাসময়ে পূর্ণরূপে আদায় করার নির্দেশ দান করে। আল্লাহ বলেন : “তোমরা হজ্জ ও উমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে পূর্ণ কর”(২ : ১৯৬)। আর যদি আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতকে অনুসরণ করি, তিনি তো কুরবানীর পশু যবেহ করার আগে হালাল হননি।
হাদীস নং ১৪৬৬
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজ্জের মাসে, হজ্জের দিনগুলোতে, হজ্জের মৌসুমে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হয়ে সারিফ নামক স্থানে আমরা অবতরণ করলাম। আয়িশা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণের কাছে বেরিয়ে ঘোষণা করলেন : যার সাথে কুরবানীর পশু নেই এবং যে এ ইহরাম উমরার ইহরামে পরিণত করতে আগ্রহী, সে তা করতে পারবে। আর যার সাথে কুরবানীর পশু আছে সে তা পারবে না। আয়িশা রা. বলেন, কয়েকজন সাহাবী উমরা করলেন, আর কয়েকজন তা করলেন না। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কয়েকজন সাহাবী (দীর্ঘ ইহরাম রাখতে) সক্ষম ছিলেন এবং তাদের সাথে কুরবানীর পশুও ছিল। তাই তাঁরা (শুধু) উমরা করতে (ও পরে হালাল হয়ে যেতে) সক্ষম হলেন না। তিনি আরো বলেন, আমি কাঁদছিলাম, এমন সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন : ওহে কাঁদছ কেন ? আমি বললাম, আপনি সাহাবাদের যা বলেছেন, আমি তা শুনেছি, কিন্তু আমার পক্ষে উমরা করা সম্ভব নয়। তিনি বললেন : তোমার কি হয়েছে ? আমি বললাম, আমি আদম-সন্তানের এক মহিলা। সকর নারীর জন্য আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন, তোমার জন্যও তাই নির্ধারণ করেছেন। কাজেই তুমি হজ্জের ইহরাম অবস্থায় থাক। আল্লাহ তোমাকে উমরা করার সুযোগও দিতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা হজ্জের জন্য বের হয়ে মিনায় পৌঁছলাম। সে সময় আমি পবিত্র হলাম। পরে মিনা থেকে ফিরে (বায়তুল্লাহ পৌছে) তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করি। আয়িশা রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সর্বশেষ দলে বের হলাম। তিনি মহাসসাব নামক স্থানে অবতরণ করেন, আমি তাঁর সাথে অবতরণ করলাম। এখানে এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. কে ডেকে বললেন : তোমার বোন (আয়িশা)-কে নিয়ে হরম সীমারেখা হতে বেরিয়ে যাও। সেখান থেকে সে উমরার ইহরাম বেঁধে মক্কা থেকে উমরা সমাধা করলে তাকে নিয়ে এখানে ফিরে আসবে। আমি তোমাদের আগমন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকব। আয়িশা রা. বলেন, আমরা বের হয়ে গেলাম এবং আমি ও আমার ভাই তাওয়াফ সমাধা করে ফিরে এসে প্রভাত হওয়ার আগেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌছে গেলাম। তিনি বললেন : কাজ সমাধা করেছ কি ? আমি বললাম, জী হ্যাঁ। তখন তিনি রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দিলেন। সকলেই মদীনার দিকে রওয়ানা করলেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) রহ. বলেন, يضير শব্দটি ضيرا – يضير – ضار (ক্ষতিকর) শব্দ হতে উদগত এমনই ভাবে ضرورا – يضور – ضار ও ضرا – يضر – ضر একই অর্থ বোঝায়।
হাদীস নং ১৪৬৭
উসমান রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বের হলাম এবং একে হজ্জের সফর বলেই আমরা জানতাম। আমরা যখন (মক্কায়) পৌছে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলাম তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন : যারা কুরবানীর পশু সংগে নিয়ে আসেনি তারা যেন ইহরাম ছেড়ে দেয়। তাই যিনি কুরবানীর পশু সংগে আনেননি তিনি ইহরাম ছেড়ে দেন। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীগণ তাঁরা ইহরাম ছেড়ে দিলেন। আয়িশা রা. বলেন, আমি ঋতুবতী হয়েছিলাম বিধায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারিনি। (ফিরতি পথে) মুহাসসাব নামক স্থানে রাত যাপনকালে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সকলেই উমরা ও হজ্জ উভয়টি সমাধা করে ফিরছে আর আমি কেবল হজ্জ করে ফিরছি। তিনি বললেন : মক্কা পৌঁছলে তুমি কি সে দিনগুলোতে তাওয়াফ করনি ? আমি বললাম, জী-না। তিনি বললেন : তোমার ভাই-এর সাথে তানঈম চলে যাও, সেখান থেকে উমরার ইহরাম বাঁধবে। তারপর অমুক স্থানে তোমার সাথে সাক্ষাত ঘটবে। সাফিয়্যা রা. বললেন, আমার মনে হয় আমি আপনাদেরকে আটকে রাখার কারণ হয়ে যাচ্ছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : কি বললে ! তুমি কি কুরবানীর দিনগুলোতে তাওয়াফ করনি। আমি বললাম, হ্যাঁ, করেছি। তিনি বললেন : তবে কোন অসুবিধা নেই, তুমি চল। আয়িশা রা. বলেন, এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এমতাবস্থায় আমার সাক্ষাত হল যখন তিনি মক্কা ছেড়ে উপরের দিকে উঠছি ও তিনি অবতরণ করছেন।
হাদীস নং ১৪৬৮
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজ্জাতুল বিদার বছর আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বের হই। আমাদের মধ্যে কেউ কেবল উমরার ইহরাম বাঁধলেন, আর কেউ হজ্জ ও উমরা উভয়টির ইহরাম বাঁধলেন। আর কেউ শুধু হজ্জ-এর ইহরাম বাঁধলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ-এর ইহরাম বাঁধলেন। যারা কেবল হজ্জ বা এক সংগে হজ্জ ও উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন তাদের একজনও কুরবানী দিনের পূর্বে ইহরাম খোলেন নি।
হাদীস নং ১৪৬৯
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….মারওয়ান ইবনে হাকাম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উসমান ও আলী রা.-কে দেখেছি, উসমান রা. তামাত্তু ও হজ্জ ও উমরা একত্রে আদায় করতে নিষেধ করতেন। আলী রা. এ অবস্থা দেখে হজ্জ ও উমরার ইহরাম একত্রে বেঁধে তালবিয়া পাঠ করেন “হে আল্লাহ ! আমি উমরা ও হজ্জ-এর ইহরাম বেঁধে হাযির হলাম) এবং বললেন, কারো কথায় আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত বর্জন করতে পারব না।
হাদীস নং ১৪৭০
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা হজ্জ-এর মাসগুলোতে উমরা করাকে দুনিয়ার সবচেয়ে ঘৃণ্য পাপের কাজ বলে মনে করত। তারা মুহাররম মাসের স্থলে সফর মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ মনে করত। তারা বলত, উটের পিঠের যখম ভাল হলে, রাস্তার মুসাফিরের পদচিহ্ন মুছে গেলে এবং সফর মাস অতিক্রান্ত হলে উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি উমরা করতে পারবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ হজ্জ-এর ইহরাম বেঁধে চার তারিখ সকালে (মক্কায়) উপনীত হন। তখন তিনি তাদের এই ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিণত করার নির্দেশ দেন। তাঁরা এ কাজকে কঠিন মনে করলেন (উমরা শেষ করে) তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাদের জন্য কি কি জিনিস হালাল ? তিনি বললেন : সবকিছু হালাল (ইহরামের পূর্বে যা হালাল ছিল তার সব কিছু এখন হালাল)।
হাদীস নং ১৪৭১
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……….আবু মূসা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি আমাকে (ইহরাম ভঙ্গ করে) হালাল হয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন।
হাদীস নং ১৪৭২
ইসমাঈল ও আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..নবী সহধর্মিণী হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! লোকদের কি হল, তারা উমরা শেষ করে হালাল হয়ে গেল, অথচ আপনি আপনার উমরা থেকে হালাল হচ্ছেন না ? তিনি বললেন : আমি মাথায় আঠালো বস্তু লাগিয়েছি এবং কুরবানীর পশুর গলায় মালা ঝুলিয়েছি। কাজেই কুরবানী করার পূর্বে হালাল হতে পারিনা।
হাদীস নং ১৪৭৩
আদম রহ………আবু জামরা নাসর ইবনে ইমরান যুবায়ী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তামাত্তু হজ্জ করতে ইচ্ছা করলে কিছু লোক আমাকে নিষেধ করল । আমি তখন ইবনে আব্বাস রা.-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা করতে আমাকে নির্দেশ দেন। এরপর আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন এক ব্যক্তি আমাকে বলছে, উত্তম হজ্জ ও মাকবুল উমরা। ইবনে আব্বাস রা.-এর নিকট স্বপ্নটি বললাম। তিনি বললেন, তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত । এরপর আমাকে বললেন, তুমি আমার কাছে থাক, তোমাকে আমার মালের কিছু অংশ দিব। রাবী শুবা রহ. বলেন, আমি (আবু জামরাকে) বললাম, তা কেন ? তিনি বললেন, আমি যে স্বপ্ন দেখেছি সে জন্য।
হাদীস নং ১৪৭৪
আবু নুআইম রহ…….আবু শিহাব রহ. থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমি উমরার ইহরাম বেঁধে হজ্জে তামাত্তুর নিয়্যাতে তারবিয়্যা দিবস (আট তারিখ)-এর তিন দিন পূর্বে মক্কায় প্রবেশ করলাম, মক্কাবাসী কিছু লোক আমাকে বললেন, এখন তোমার হজ্জের কাজ মক্কা থেকে শুরু হবে। আমি বিষয়টি জানার জন্য আতা রহ.-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি বললেন, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. আমাকে বলেছেন, যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর উট সংগে নিয়ে হজ্জে আসেন তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন। সাহাবীগণ ইফরাদ হজ্জ-এর নিয়্যাতে শুধু হজ্জের ইহরাম বাঁধেন। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায় পৌছে) তাদেরকে বললন : বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সায়ী সমাধা করে তোমরা ইহরাম ভঙ্গ করে হালাল হয়ে যাও এবং চুল ছোট কর। এরপর হালাল অবস্থায় থাক। যখন যিলহজ্জ মাসের আট তারিখ হবে তখন তোমরা হজ্জ-এর ইহরাম বেঁধে নিবে, আর যে ইহরাম বেঁধে এসেছ তা তামাত্তু হজ্জের উমরা বানিয়ে নিবে। সাহাবীগণ বললেন, এই ইহরামকে আমরা কিরূপে উমরার ইহরাম বানাব ? আমরা হজ্জ-এর নাম নিয়ে ইহরাম বেঁধেছি। তখন তিনি বললেন : আমি তোমাদেরকে যা আদেশ করেছি তাই কর। কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়ে না আসলে তোমাদেরকে যা করতে বলছি, আমিও সেরূপ করতাম। কিন্তু কুরবানী করার পূর্বে (ইহরামের কারণে) নিষিদ্ধ কাজ (আমার জন্য) হালাল নয়। সাহাবীগণ সেরূপ পশু যবেহ করলেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) বহ. বলেন, আবু শিহাব রহ. থেকে মারফু বর্ণনা মাত্র এই একটিই পাওয়া যায়।
হাদীস নং ১৪৭৫
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উসফান নামক স্থানে অবস্থানকালে আলী ও উসমান রা. -এর মধ্যে হজ্জে তামাত্তু করা সম্পর্কে পরস্পরে দ্বিমত সৃষ্টি হয়। আলী রা. উসমান রা.-কে লক্ষ্য করে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজ করেছেন, আপনি কি তা থেকে বারণ করতে চান ? উসমান রা. বললেন, আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দিন। আলী রা. এ অবস্থা দেখে তিনি হজ্জ ও উমরা উভয়ের ইহরাম বাঁধেন।
হাদীস নং ১৪৭৬
মুসাদ্দাদ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমরা হজ্জের তালবিয়া পাঠ করতে করতে (মক্কায়) উপনীত হলাম। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিলেন, আমরা হজ্জকে উমরায় পরিণত করলাম।
হাদীস নং ১৪৭৭
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে হজ্জে তামাত্তু করেছি, কুরআনেও তার বিধান নাযিল হয়েছে অথচ এক ব্যক্তি তার ইচ্ছামত অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
হাদীস নং ১৪৭৮
ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ………নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে উমর রা. হারামের নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছলে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিতেন। তারপর যী-তুয়া নামক স্থানে রাত যাপন করতেন। এরপর সেখানে ফজরের সালাত আদায় করতেন ও গোসল করতেন। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন।
হাদীস নং ১৪৭৯
মুসাদ্দাদ রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোর পর্যন্ত যা-তুয়ায় রাত যাপন করেন, তারপর মক্কায় প্রবেশ করেন। (রাবী নাফি বলেন) ইবনে উমর রা.-ও এরূপ করতেন।
হাদীস নং ১৪৮০
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ…….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সানিয়্যা উলয়া (হরমের উত্তর-পূর্বদিকে কাদা নামক স্থান দিয়ে) মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং সানিয়্যা সুফলা (হরমের দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে কুদা নামক স্থান) দিয়ে বের হতেন।
হাদীস নং ১৪৮১
মুসাদ্দাদ ইবনে মুসারহাদ বাসরী রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাতহায় অবস্থিত সানিয়্যা উলয়ার কাদা নাম স্থান দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন এবং সানিয়্যা সুফলার দিক দিয়ে বের হন।
হাদীস নং ১৪৮২
হুমাইদী রহ. ও মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় আসেন তখন এর উচ্চ স্থান দিয়ে প্রবেশ করেন এবং নীচু স্থান দিয়ে ফিরার পথে বের হন।
হাদীস নং ১৪৮৩
মাহমুদ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর কাদা-র পথে (মক্কায়) প্রবেশ করেন এবং বের হন কুদা-র পথে যা মক্কার উচু স্থানে অবস্থিত।
হাদীস নং ১৪৮৪
আহমদ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর কাদা নামক স্থান দিয়ে মক্কায় উচু ভূমির দিক থেকে প্রবেশ করেন। রাবী হিশাম রহ. বলেন, (আমার পিতা) উরওয়া রা. কাদা ও কুদা উভয় স্থান দিয়ে (মক্কায়) প্রবেশ করতেন। তবে অধিকাংশ সময় কুদা দিয়ে প্রবেশ করতেন, কেননা, তাঁর বাড়ি এ পথে অধিক নিকটবর্তী ছিল।
হাদীস নং ১৪৮৫
আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওহহাব রহ……উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর মক্কার উচু ভূমি কাদা দিয়ে (মক্কায়) প্রবেশ করেন। (রাবী হিশাম রহ. বলেন) উরওয়া রহ. অধিকাংশ সময় কুদা-র পথে প্রবেশ করতেন, কেননা তাঁর বাড়ি এ পথের অধিক নিকটবর্তী ছিল।
হাদীস নং ১৪৮৬
মূসা রহ………উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর কাদা-র পথে মক্কায় প্রবেশ করেন। (রাবী হিশাম রহ. বলেন) উরওয়া রহ. উভয় পথেই প্রবেশ করতেন, তবে কুদা-র পথে তাঁর বাড়ি নিকটবর্তী হওয়ার কারণে সে পথেই অধিকাংশ সময় প্রবেশ করতেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী রহ.) বলেন, কাদা ও কুদা দুটি স্থানের নাম।
হাদীস নং ১৪৮৭
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কাবা ঘর পুনঃনির্মাণের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আব্বাস রা. পাথর বহন করছিলেন। আব্বাস রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, তোমার লুঙ্গিটি কাঁধের উপর নাও। তিনি তা করলে মাটিতে পড়ে গেলেন এবং তাঁর উভয় চোখ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল। তখন তিনি বললেন : আমার লুঙ্গি দাও এবং তা বেঁধে নিলেন।
হাদীস নং ১৪৮৮
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলাম রহ. আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : তুমি কি জান না ! তোমার সম্প্রদায় যখন কাবা ঘরের পুনঃ নির্মাণ করেছিল তখন ইবরাহীম আ. কর্তৃক কাবা ঘরের মূল ভিত্তি থেকে তা সংকুচিত করেছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি কি একে ইবরাহীমী ভিত্তির উপর পুনঃস্থাপন করবেন না ? তিনি বললেন : যদি তোমার সম্প্রদায়ের যুগ কুফরীর নিকটবর্তী না হত তাহলে অবশ্য আমি তা করতাম। আবদুল্লাহ (ইবনে উমর রা. বলেন, যদি আয়িশা রা. নিশ্চিতরূপে তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে থাকেন, তাহলে আমার মনে হয় যে, বায়তুল্লাহ হাতীমের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ইবরাহীমী ভিত্তির উপর নির্মিত না হওয়ার কারণেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাওয়াফের সময়) হাতীম সংলগ্ন দুটি কোণ স্পর্শ করতেন ন।
হাদীস নং ১৪৮৯
মুসাদ্দাদ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলাম, (হাতীমের) দেয়াল কি বায়তুল্লাহর অন্তর্ভূক্ত, তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, তাহলে তারা বায়তুল্লাহর অন্তর্ভূক্ত করল না কেন ? তিনি বললেন : তোমার গোত্রের সময় অর্থ নিঃশেষ হয়ে যায়। আমি বললাম, কাবার দরজা এত উচু হওয়ার কারণ কি ? তিনি বললেন : তোমার কওম তা এ জন্য করেছে যে, তারা যাকে ইচ্ছা তাকে ঢুকতে দিবে এবং যাকে ইচ্ছা নিষেধ করবে। যদি তোমার কওমের যুগ জাহিলিয়্যাতের নিকটবর্তী না হত এবং আশংকা না হত যে, তারা একে ভাল মনে করবে না, তাহলে আমি দেয়ালকে বায়তুল্লাহর অন্তর্ভূক্ত করে দিতাম এবং তার দরজা ভূমি বরাবর করে দিতাম।
হাদীস নং ১৪৯০
উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন : যদি তোমার গোত্রের যুগ কুফরীর নিকটবর্তী না হত তাহলে অবশ্যই কাবাঘর ভেঙ্গে ইবরাহীম আ.-এর ভিত্তির উপর তা পুনঃ নির্মাণ করতাম । কেননা কুরাইশগণ এর ভিত্তি সংকুচিত করে দিয়েছে। আর আমি আরো একটি দরজা করে দিতাম। আবু মুআবিয়া রহ. বলেন, হিশাম রহ. বলেছেন “খালফান” অর্থ দরজা।
হাদীস নং ১৪৯১
বায়ান ইবনে আমর রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন : হে আয়িশা ! যদি তোমার কওমের যুগ জাহিলিয়াতের নিকটবর্তী না হত তাহলে আমি কাবা ঘর সম্পর্কে নির্দেশ দিতাম এবং তা ভেঙ্গে ফেলা হত। তারপর বাদ দেওয়া অংশটুকু আমি ঘরের অন্তর্ভূক্ত করে দিতাম এবং তা ভূমি বরাবর করে দিতাম ও পূর্ব-পশ্চিমে এর দুটি দরজা করে দিতাম। এভাবে কাবাকে ইবরাহীম আ. নির্মিত ভিত্তিতে সম্পন্ন করতাম। (বর্ণনাকারী বলেন) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ উক্তি কাবাঘর ভাঙ্গতে (আবদুল্লাহ) ইবনে যুবাইর রা.-কে অনুপ্রাণিত করেছে। (রাবী) ইয়াযীদ বলেন, আমি ইবনে যুবাইর রা.-কে দেখেছি তিনি যখন কাবা ঘর ভেঙ্গে তা পুনঃ নির্মাণ করেন এবং বাদ দেওয়া অংশটুকু (হাতীম) তার সাথে সংযোজিত করেন এবং ইবরাহীম আ.-এর নির্মিত ভিত্তির পাথরগুলো উটের কুঁজের ন্যায় আমি দেখতে পেয়েছি। (রাবী) জারীর রহ. বলেন, আমি তাকে বললাম, কোথায় সেই ভিত্তিমূলের স্থান ? তিনি বললেন, এখনই আমি তোমাকে দেখিয়ে দিব। আমি তাঁর সাথে বাদ দেওয়া দেয়াল বেষ্টনীতে (হাতীমে) প্রবেশ করলাম। তখন তিনি একটি স্থানের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এই খানে। জারীর রহ. বলেন, দেওয়াল বেষ্টিত স্থানটুকু পরিমাপ করে দেখলাম ছয় হাত বা তার কাছাকাছি।
হাদীস নং ১৪৯২
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এ শহরকে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন, এর একটি কাটাও কর্তন করা যাবে না, এতে বিচরণকারী শিকারকে তাড়া করা যাবে না, এখানে মুআরিফ ব্যতীত পড়ে থাকা কোন বস্তু কেউ তুলে নিবে না ।
হাদীস নং ১৪৯৩
আসবাগ রহ…….উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি মক্কায় অবস্থিত আপনার বাড়ির কোন স্থানে অবস্থান করবেন ? তিনি বললেন : আকীল কি কোন সম্পত্তি বা ঘর-বাড়ি অবশিষ্ট রেখে গেছে ? আকীল এবং তালিব আবু তালিবের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হযেছিলেন, জাফর ও আলী রা. হন নি। কেননা তাঁরা দুজন ছিলেন মুসলমান। আকীল ও তালিব ছিল কাফির। এ জন্যই উমর ইবনে খাত্তাব রা. বলতেন, মু’মিন কাফিরের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না। ইবনে শিহাব রহ. বলেন, (পূর্ববর্তী গণ নিম্ন উদ্ধৃত আয়াতে উক্ত বিলায়াতকে উত্তরাধিকার বলে) এই তাফসীর করতেন। আল্লাহ বলেন : যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের জানমাল নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, আর যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে এবং সাহায্য করেছে, তারা একে অপরের ওলী হবে (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। (৮ : ৭২)।
হাদীস নং ১৪৯৪
আবুল ইয়ামান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মিনা থেকে ফিরে) যখন মক্কা প্রবেশের ইচ্ছা করলেন তখন বললেন : আগামীকাল খায়ফ বনী কেনানায় (মুহাসসাবে) ইনশাআল্লাহ আমাদের অবস্থানস্থল হবে যেখানে তার (বনূ খায়ফ ও কুরাইশগণ) কুফরীর উপর শপথ নিয়েছিল।
হাদীস নং ১৪৯৫
হুমাইদী রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিনে মিনায় অবস্থানকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমরা আগামীকাল (ইনশাআল্লাহ) খায়ফ বনী কিনানায় অবতরণ করব, যেখানে তারা কুফরীর উপরে শপথ নিয়েছিল। (রাবী বলেন) খায়ফ বনী কিনানাই হল মুহাসসাব। কুরাইশ ও কিনানা গোত্র বনূ হাশিম ও বনূ আবদুল মুত্তালিবের বিরুদ্ধে এই বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল, যে পর্যন্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের হাতে সমর্পণ করবে না সে পর্যন্ত তাদের সাথে বিয়ে-শাদী ও বেচা-কেনা বন্ধ থাকবে। সালাম রহ. উকাইল রহ. সূত্রে এবং ইয়াহইয়া ইবনে যাহহাক রহ. আওযায়ী রহ. সূত্রে ইবনে শিহাব যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত, এবং তাঁরা উভয়ে বনূ হাশিম ও বনূ মুত্তালিব বলে উল্লেখ করেছেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) রহ. বলেন, বনূ মুত্তালিব হওয়াই অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।
হাদীস নং ১৪৯৫
হুমাইদী রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিনে মিনায় অবস্থানকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমরা আগামীকাল (ইনশাআল্লাহ) খায়ফ বনী কিনানায় অবতরণ করব, যেখানে তারা কুফরীর উপরে শপথ নিয়েছিল। (রাবী বলেন) খায়ফ বনী কিনানাই হল মুহাসসাব। কুরাইশ ও কিনানা গোত্র বনূ হাশিম ও বনূ আবদুল মুত্তালিবের বিরুদ্ধে এই বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল, যে পর্যন্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের হাতে সমর্পণ করবে না সে পর্যন্ত তাদের সাথে বিয়ে-শাদী ও বেচা-কেনা বন্ধ থাকবে। সালাম রহ. উকাইল রহ. সূত্রে এবং ইয়াহইয়া ইবনে যাহহাক রহ. আওযায়ী রহ. সূত্রে ইবনে শিহাব যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত, এবং তাঁরা উভয়ে বনূ হাশিম ও বনূ মুত্তালিব বলে উল্লেখ করেছেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) রহ. বলেন, বনূ মুত্তালিব হওয়াই অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।
হাদীস নং ১৪৯৬
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন : হাবশার অধিবাসী পায়ের সরু নলা বিশিষ্ট লোকেরা কাবাঘর ধ্বংস করবে।
হাদীস নং ১৪৯৭
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর এবং মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে মুসলিমগণ আশুরার সাওম পালন করতেন। সে দিনই কাবাঘর (গিলাফে) আবৃত করা হত। তারপর আল্লাহ যখন রমযানের সাওম ফরয করলেন, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আশুরার সাওম যার ইচ্ছা পালন করবে আর যার ইচ্ছা সে ছেড়ে দিবে।
হাদীস নং ১৪৯৮
আহমদ ইবনে হাফস রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াজুজ ও মাজুজ বের হওয়ার পরও বায়তুল্লাহর হজ্জ ও উমরা পালিত হবে । আবান ও ইমরান রহ. কাতাদা রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় হাজ্জাজ ইবনে হাজ্জাজের অনুসরণ করেছেন। আবদুর রহমান রহ. শুবা রহ. থেকে বর্ণনা করেন, বায়তুল্লাহর হজ্জ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। প্রথম রিওয়ায়াতটি অধিক গ্রহণযোগ্য। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) রহ. বলেন, কাতাদা রহ. রিওয়ায়েতটি আবদুল্লাহ রহ. থেকে এবং আবদুল্লাহ রহ. আবু সাঈদ রা. থেকে শুনেছেন।
হাদীস নং ১৪৯৯
আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব এবং কাবীসা রহ………..আবু ওয়াইল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কাবার সামনে আমি শায়বার সাথে কুরসীতে বসলাম। তখন তিনি বললেন, উমর রা. এখানে বসেই বলেছিলেন, আমি কাবাঘরে রক্ষিত সোনা ও রূপা বন্টন করে দেওয়ার ইচ্ছা করেছি। (শায়বা বলেন) আমি বললাম, আপনার উভয় সঙ্গী (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা.) তো এরূপ করেননি। তিনি বললেন, তাঁরা এমন দু’ ব্যক্তিত্ব যাদের অনুসরণ আমি করব।
হাদীস নং ১৫০০
আমর ইবনে আলী রহ…………ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি যেন দেখতে পাচ্ছি কাল বর্ণের বাঁকা পা বিশিষ্ট লোকেরা (কাবাঘরের) একটি একটি করে পাথর খুলে এর মূল উৎপাটন করে দিচ্ছে।
হাদীস নং ১৫০১
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হাবশার অধিবাসী পায়ের সরু নলা বিশিষ্ট লোকেরা কাবাঘর ধ্বংস করবে।
হাদীস নং ১৫০২
মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……….উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।
হাদীস নং ১৫০৩
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং উসামা ইবনে যায়েদ, বিলাল ও উসমান ইবনে তালহা রা. বায়তুল্লাহর ভিতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। যখন খুলে দিলেন তখন প্রথম আমিই প্রবেশ করলাম এবং বিলালের সাক্ষাত পেয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কাবার ভিতরে সালাত আদায় করেছেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইয়ামানের দিকের দুটি স্তম্ভের মাঝখানে।
হাদীস নং ১৫০৪
আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রহ…….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, যখন তিনি কাবা ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতেন, তখন দরজা পিছনে রেখে সোজা সম্মুখের দিকে চলে যেতেন, এতদূর অগ্রসর হতেন যে, সম্মুখের দেওয়ালটি মাত্র তিন হাত পরিমাণ দূরে থাকত এবং বিলাল রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে সালাত আদায় করেছেন বলে বর্ণনা করেছেন, সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি সালাত আদায় করতেন। অবশ্য কাবার ভিতরে যে কোন স্থানে সালাত আদায় করাতে কোন দোষ নেই।
হাদীস নং ১৫০৫
মুসাদ্দাদ রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা করতে গিয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন ও মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’ রাকআত সালাত আদায় করলেন এবং তাঁর সাথে ঐ সকল সাহাবী ছিলেন যারা তাকে লোকদের থেকে আড়াল করে ছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার ভিতরে প্রবেশ করেছিলেন কি না — জনৈক ব্যক্তি আবু আওফা রা.-এর নিকট তা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, না।
হাদীস নং ১৫০৬
আবু মামার রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (মক্কা) এলেন, তখন কাবাঘরে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানান। কেননা কাবাঘরের ভিতরে মূর্তি ছিল। তিনি নির্দেশ দিলেন এবং মূর্তিগুলো বের করে ফেলা হল। (এক পর্যায়ে) ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ.-এর প্রতিকৃতি বের করে আনা হয়-তাদের উভয়ের হাতে জুয়া খেলার তীর ছিল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আল্লাহ ! (মুশরিকদের) ধ্বংস করুন। আল্লাহর কসম ! অবশ্যই তারা জানে যে, (ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ.) তীর দিয়ে অংশ নির্ধারণের ভাগ্য পরীক্ষা কখনো করেননি। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবাঘরে প্রবেশ করেন এবং ঘরের চারদিকে তাকবীর বলেন। কিন্তু ঘরের ভিতরে সালাত আদায় করেননি।
হাদীস নং ১৫০৭
সুলাইমান ইবনে হারব রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণকে নিয়ে মক্কা আগমন করলে মুশরিকরা মন্তব্য করল, এমন একদল লোক আসছে যাদেরকে ইয়াসরিব-এর জ্বর দূর্বল করে দিয়েছে (এ কথা শুনে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণকে তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করতে (উভয় কাঁধ হেলেদুলে জোর কদমে চলতে) এবং উভয় রুকনের মধ্যবর্তী স্থানটুকু স্বাভাবিক গতিতে চলতে নির্দেশ দিলেন, সাহাবাদের প্রতি দয়াবশত সব কয়টি চক্করে রমল করতে আদেশ করেননি।
হাদীস নং ১৫০৮
আসবাগ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মক্কায় উপনীত হয়ে তাওয়াফের শুরুতে হজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম করতে এবং সাত চক্করের মধ্যে প্রথম তিন চক্করে রমল করতে দেখেছি।
হাদীস নং ১৫০৯
মুহাম্মদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ এবং উমরার তাওয়াফে (প্রথম) তিন চক্করে রমল করেছেন, অবশিষ্ট চার চক্করে স্বাভাবিক গতিতে চলেছেন। লাইস রহ. হাদীস বর্ণনায় সুরাইজ ইবনে নুমান রহ.-এর অনুসরণ করে বলেন, কাসীর ইবনে ফারকাদ রহ……….ইবনে উমর রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৫১০
সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ…….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনে খাত্তাব রা. হাজরে আসওয়াদকে লক্ষ্য করে বললেন, ওহে ! আল্লাহর কসম ! আমি নিশ্চিত রূপে জানি তুমি একটি পাথর, তুমি কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। এরপর তিনি চুম্বন করলেন। পরে বললেন, আমাদের রমল করার উদ্দেশ্যে কি ছিল? আমরা তো রমল করে মুশরিকদেরকে আমাদের শক্তি প্রদর্শন করেছিলাম। আল্লাহ এখন তাদের ধ্বংস করে দিয়েছেন। এরপর বললেন, যেহেতু এই (রমল) কাজটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন, তাই তা পরিত্যাগ করা পছন্দ করি না।
হাদীস নং ১৫১১
মুসাদ্দাদ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (তাওয়াফ করার সময়) এ দুটি রুকন ইস্তিলাম করতে দেখেছি, তখন থেকে ভীড় থাকুক বা নাই থাকুক কোন অবস্থাতেই এ দুইয়ের ইস্তিলাম করা বাদ দেইনি। (রাবী উবায়দুল্লাহ রহ. বলেন) আমি নাফিকে রহ. জিজ্ঞাসা করলাম, ইবনে উমর রা. কি ঐ রুকনের মধ্যবর্তী স্থানে স্বাভাবিক গতিতে চলতেন ? তিনি বললেন, সহজে ইস্তিলাম করার উদ্দেশ্যে তিনি (এতদূভয়ের মাঝে) স্বাভাবিকভাবে চলতেন।
হাদীস নং ১৫১২
আহমদ ইবনে সালিহ ও ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে আরোহণ করে তাওয়াফ করার সময় ছড়ির মাধ্যমে হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম করেন। দারাওয়ার্দী রহ. হাদীস বর্ণনায় ইউনুস রহ.-এর অনুসরণ করে ইবনে আবিয যুহরী রহ. সূত্রে তার চাচা (যুহরী) রহ. থেকে রিওয়ায়েত করেছেন।
হাদীস নং ১৫১৩
আবুল ওয়ালীদ রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কেবল ইয়ামানী দু’ রুকনকে ইস্তিলাম করতে দেখেছি।
হাদীস নং ১৫১৪
আহমদ ইবনে সিনান রহ……….আসলাম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর ইবনে খাত্তাব রা.-কে হজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে দেখেছি। আর তিনি বললেন, যদি আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তাহলে আমিও তোমায় চুম্বন করতাম ন।
হাদীস নং ১৫১৫
মুসাদ্দাদ রহ…….যুবাইর ইবনে আরাবী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হজরে আসওয়াদ সম্পর্কে ইবনে উমর রা.-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তা স্পর্শ ও চুম্বন করতে দেখেছি। সে ব্যক্তি বলল, যদি ভীড়ে আটকে যাই বা অপারগ হই তাহলে আপনার অভিমত কি ? তিনি বললেন, আপনার অভিমত কি ? এ কথাটি ইয়ামনে রেখে দাও। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তা স্পর্শ ও চুম্বন করতে দেখেছি। মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ ফেরেবরী রহ. বলেন, আমি আবু জাফর রহ.-এর কিতাবে পেয়েছি তিনি বলেছেন, আবু আবদুল্লাহ যুবাইর ইবনে আদী রহ. তিনি হলেন কুফী আর যাবাইর ইবনে আরাবী রহ .তিনি হলেন বসরী।
হাদীস নং ১৫১৬
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে (আরোহণ করে) বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন, যখনই তিনি হজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন তখনই কোন কিছু দিয়ে তার প্রতি ইশারা করতেন।
হাদীস নং ১৫১৭
মুসাদ্দাদ রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে আরোহণ করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন, যখনই তিনি হজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন তখনই কোন কিছু দিয়ে তার প্রতি ইশারা করতেন। ইবরাহীম ইবনে তাহমান রহ. খালিদ হাযযা রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় খালিদ ইবনে আব্দুল্লাহ রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং ১৫১৮
আসবাগ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সর্বপ্রথম উযূ করে তাওয়াফ সম্পন্ন করেন। (রাবী) উরওয়া রহ. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই তাওয়াফটি উমরার তাওয়াফ ছিল না। তারপর আবু বকর ও উমর রা. অনুরূপভাবে হজ্জ করেছেন। এরপর আমার পিতা যুবাইর রা.-এর সাথে আমি হজ্জ করেছি তাতেও দেখেছি যে, সর্বপ্রথম তিনি তাওয়াফ করেছেন। এরপর মুহাজির, আনসার সকল সাহাবা রা. খে এরূপ করতে দেখেছি। আমার মা আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি তাঁর বোন এবং যুবাইর ও অমুক অমুক ব্যক্তি উমরার ইহরাম বেঁধেছেন, যখন তাঁরা তাওয়াফ সমাধা করেছেন, হালাল হয়ে গেছেন।
হাদীস নং ১৫১৯
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে হজ্জ বা উমরা উভয় অবস্থায় সর্বপ্রথম যে তাওয়াফ করতেন, তাঁর প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন এবং পরবর্তী চার চক্করে স্বাভাবিকভাবে হেটে চলতেন। তাওয়াফ শেষে দু’ রাকআত সালাত আদায় করে সাফা ও মারওয়ায় সায়ী করতেন।
হাদীস নং ১৫২০
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহ পৌছে প্রথম তাওয়াফ করার সময় প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন এবং পরবর্তী চার চক্করে স্বাভাবিক গতিতে হেটে চলতেন। সাফা ও মারওয়ায় সায়ী করার সময় উভয় টিলার মধ্যবর্তী নিচু স্থানটুকু দ্রুতগতিতে চলতেন।
হাদীস নং ১৫২১
ইসমাঈল রহ…….নবী সহধর্মিণী উম্মু সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অসুস্থতার কথা জানালে তিনি বললেন : বাহনে আরোহণ করে মানুষের পেছনে পেছনে থেকে তাওয়াফ কর। আমি মানুষের পেছনে পেছনে থেকে তাওয়াফ করছিলাম, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবাঘরের পার্শ্বে সালাত আদায় করছিলেন এবং তাঁতে তিনি والطور وكتاب مسطور এই (সূরাটি) তিলাওয়াত করেছিলেন।
হাদীস নং ১৫২২
ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর তাওয়াফের সময় এক ব্যাক্তির নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, সে চামড়ার ফিতা বা সূতা অথবা অন্য কিছু দ্বারা আপন হাত অপর এক ব্যক্তির সাথে বেঁধে দিয়েছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে তার বাঁধন ছিন্ন করে দিয়ে বললেন : হাত ধরে টেনে নাও।
হাদীস নং ১৫২৩
আবু আসিম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে কাবাঘর তাওয়াফ করতে দেখতে পেলেন এ অবস্থায় যে, চাবুকের ফিতা বা অন্য কিছু দিয়ে তখন তিনি তা ছিন্ন করে দিলেন।
হাদীস নং ১৫২৪
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের পূর্বে যে হজ্জে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রা.-কে আমীর নিযুক্ত করেন, সে হজ্জে কুরবানীর দিন (আবু বকর রা.) আমাকে একদল লোকের সঙ্গে পাঠালেন, যারা লোকদের কাছে ঘোষণা করবে যে, এ বছরের পর থেকে কোন মুশরিক হজ্জ করবে না এবং বিবস্ত্র হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না।
হাদীস নং ১৫২৫
কুতাইবা রহ………আমর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইবনে উমর রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, উমরাকারীর জন্য সাফা ও মারওয়া সায়ী করার পূর্বে স্ত্রী সহবাস বৈধ হবে কি ? তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সাত চক্করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ সমাপ্ত করে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’ রাকআত সালাত আদায় করেন, তারপর সাফা ও মারওয়া সায়ী করেন। এরপর ইবনে উমর রা. তিলাওয়াত করেন, “তোমাদের জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে”। (রাবী) আমর রহ. বলেন, আমি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, সাফা ও মারওয়া সায়ী করার পূর্বে স্ত্রী সহবাস বৈধ নয়।
হাদীস নং ১৫২৬
মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সাত চক্করে তাওয়াফ করে, সাফা ও মারওয়া সায়ী করেন, এরপর (প্রথম) তাওয়াফের পরে আরাফা থেকে ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত বায়তুল্লাহর নিকটবর্তী হন নি (তাওয়াফ করেননি)।
হাদীস নং ১৫২৭
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..উম্মু সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট অসুস্থতার কথা জানালাম, অন্য সূত্রে মুহাম্মদ ইবনে হারব রহ……..নবী সহধর্মিণী উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্ক থেকে প্রস্থান করার ইচ্ছা করলে উম্মে সালামা রা.-ও মক্কা ত্যাগের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন, অথচ তিনি তখনও বায়তুল্লাহ তওয়াফ করতে পারেননি। (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন তাকে বললেন : যখন ফজরের সালাতের ইকামত দেওয়া হবে আর লোকেরা সালাত আদায় করতে থাকবে, তখন তোমার উটে আরোহণ করে তুমি তাওয়াফ আদায় করে নিবে। তিনি তাই করলেন। এরপর সালাত আদায় করার পূর্বেই মক্কা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
হাদীস নং ১৫২৮
আদম রহ…..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সাত চক্করে তাওয়াফ সম্পন্ন করে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’ রাকআত সালাত আদায় করলেন। তারপর সাফার দিকে বেরিয়ে গেলেন। (ইবনে উমর রা. বলেন) মহান আল্লাহ বলেছেন : “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”।
হাদীস নং ১৫২৯
হাসান ইবনে উমর বাসরী রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, কিছু লোক ফজরের সালাতের পর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করল। তারপর তার নসীহতকারীর (নসীহত শোনার জন্য) বসে গেল। অবশেষে সূর্যোদয় হলে তারা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করল। তখন আয়িশা রা. বললেন, তারা বসে রইল আর যে সময়টিতে সালাত আদায় করা মাকরূহ তখন তারা সালাতে দাঁড়িয়ে গেল।
হাদীস নং ১৫৩০
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ……..আবদুল্লাহ (ইবনে উমর) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি সূর্যোদয়ের সময় এবং সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীস নং ১৫৩১
হাসান ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবদুল আযীয ইবনে রূফায়ই রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-কে ফজরের সালাতের পর তাওয়াফ করতে এবং দু’ রাকআত সালাত আদায় করতে দেখেছি। আবদুল আযীয রহ. আরও বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রহ.-কে আসরের সালাতের পর দু’ রাকআত সালাত আদায় করতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন আয়িশা রা. তাকে বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আসরের সালাতের পরের) এই দু’ রাকআত সালাত আদায় করা ব্যতীত তাঁর ঘরে প্রবেশ করতেন না।
হাদীস নং ১৫৩২
ইসহাক ওয়াসিতী রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে সাওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন, যখনই তিনি হজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন তখন তাঁর হাতের বস্তু (লাঠি) দিয়ে তার দিকে ইশারা করতেন ও তাকবীর বলতেন।
হাদীস নং ১৫৩৩
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ…….উম্মে সালামা রাপ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আমার অসুস্থতার কথা জানালে তিনি বললেন : তুমি সাওয়ার হয়ে লোকদের পিছন দিক দিয়ে তাওয়াফ করে নাও। তাই আমি তাওয়াফ করছিলাম এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার পাশে সালাত আদায় করছিলেন ও সূরা والطور وكتاب مسطور তিলাওয়াত করছিলেন।
হাদীস নং ১৫৩৪
আবদুল্লাহ ইবনে আবুল আসওয়াদ রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পানি পান করানোর উদ্দেশ্যে মিনায় অবস্থানের রাতগুলো মক্কায় কাটানোর অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দেন।
হাদীস নং ১৫৩৫
ইসহাক ইবনে শাহীন রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি পান করার স্থানে এসে পানি চাইলেন, আব্বাস রা. বললেন, হে ফাযল ! তোমার মার নিকট যাও। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য তার নিকট থেকে পানীয় নিয়ে এস। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এখান থেকেই পান করান। আব্বাস রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! লোকেরা এই পানিতে হাতে রাখে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এখান থেকেই দিন এবং এই পানি থেকেই পান করলেন। এরপর যমযম কূপের নিকট এলেন। লোকেরা পানি তুলে (হাজীদের) পান করচ্ছিল, তখন তিনি বললেন : তোমরা কাজ করে যাও। তেমরা নেক কাজে রত আছ। এরপর তিনি বললেন : তোমরা পরাভূত হয়ে যাবে এ আশংকা না থাকলে আমি নিজেই নেমে (বালতির) রজ্জু এখানে নিতাম; এ বলে তিনি আপন কাঁধের প্রতি ইশারা করেন।
হাদীস নং ১৫৩৬
মুহাম্মদ ইবনে সালাম রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যমযমের পানি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পেশ করলাম। তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করলেন। (রাবী) আসিম বলেন, ইকরিমা রা. হলফ করে বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন উটের পিঠে আরোহী অবস্থায়ই ছিলেন।
হাদীস নং ১৫৩৭
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বিদায় হজ্জে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বের হলাম এবং উমরার ইহরাম বাঁধলাম। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যার সাথে হাদী-এর জানোয়ার আছে সে যেন হজ্জ ও উমরা উভয়ের ইহরাম বেঁধে নেয়। তারপর উভয় কাজ সমাপ্ত না করা পর্যন্ত সে হালাল হবে না। আমি মক্কায় উপনীত হয়ে ঋতুবতী হলাম। যখন আমরা হজ্জ সমাপ্ত করলাম, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রাহমান রা.-এর সঙ্গে আমাকে তানঈম প্রেরণ করলেন। এরপর আমি উমরা পালন করলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এ হল তোমার পূর্ববর্তী উমরার স্থলবর্তী। ঐ হজ্জের সময় যারা (কেবল) উমরার নিয়্যাতে ইহরাম বেঁধে এসেছিলেন, তারা তাওয়াফ করে হালাল হয়ে গেলেন। এরপর তাঁরা মিনা হতে প্রত্যাবর্তন করে দ্বিতীয়বার তাওয়াফ করেন। আর যারা একসাথে উমরা ও হজ্জের নিয়ত করেছিলেন, তাঁরা একবার তাওয়াফ করলেন।
হাদীস নং ১৫৩৮
ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ……..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে উমর রা. তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ-এর নিকট গেলেন, যখন তাঁর বাহন প্রস্তুত, তখন তাঁর ছেলে বললেন, আমার আশংকা হয় এ বছর মানুষের মধ্যে লড়াই হবে, তারা আপনাকে কাবায় যেতে বাঁধা দিবে। কাজেই এবার নিবৃত্ত হওয়াটাই উত্তম। তখন ইবনে উমর রা. বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএকবার রওনা হয়েছিলেন, কুরাইশ কাফিররা তাকে বায়তুল্লাহয় যেতে বাঁধা দিয়েছিল। আমাকেও যদি বায়তুল্লাহয় বাঁধা দেওয়া হয়, তবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছিলেন, আমিও তাই করব। কেননা, আমি উমরার সাথে হজ্জ-এর সংকল্প করছি। (রাবী) নাফি রহ. বলেন, তিনি মক্কায় উপনীত হয়ে উভয়টির জন্য মাত্র একটি তাওয়াফ করলেন।
হাদীস নং ১৫৩৯
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, যে বছর হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-এর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য মক্কায় আসেন, ঐ বছর ইবনে উমর রা. হজ্জের এরাদা করেন। তখন তাকে বলা হল, মানুষের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে। আমাদের আশংকা হচ্ছে যে, আপনাকে তারা বাঁধা দিবে। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। কাজেই এমন কিছু হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছিলেন আমিও তাই করব। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি উমরার সংকল্প করলাম। এরপর তিনি বের হলেন এবং বায়দার উচু অঞ্চলে পৌছার পর তিনি বললেন, হজ্জ ও উমরার বিধান একই, তোমরা সাক্ষী থেকো, আমি উমরার সঙ্গে হজ্জেরও নিয়্যাত করলাম এবং তিনি কুদায়দ থেকে ক্রয় করা একটি হাদী পাঠালেন, এর অতিরিক্ত কিছু করেন নি। এরপর তিনি কুরবানী করেন নি এবং ইহরামও ত্যাগ করেননি এবং মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটা কোনটাই করেননি। অবশেষে কুরবানীর দিন এলে তিনি কুরবানী করলেন, মাথা মুণ্ডালেন। তাঁর অভিমত হল, প্রথম তাওয়াফের মাধ্যমেই তিনি হজ্জ ও উমরার উভয়ের তাওয়াফ সেরে নিয়েছেন। ইবনে উমর রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করেছেন।
হাদীস নং ১৫৪০
আহমদ ইবনে ঈসা রহ………মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে নাওফাল কুরাশী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি উরওয়া ইবনে যুবাইর রহ.-কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হজ্জ সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হজ্জ-এর বিষয়টি আয়িশা রা. আমাকে এইরূপে বর্ণনা দিয়েছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সর্বপ্রথম উযূ করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন। তা উমরার তাওয়াফ ছিল না। পরে আবু বকর রা. হজ্জ করেছেন, তিনিও হজ্জের প্রথম কাজ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ দ্বারাই শুরু করতেন, তা উমরার তাওয়াফ ছিল না। তারপর উমর রা.-ও অনুরূপ করতেন। এরপর উসমান রা. হজ্জ করেন। আমি তাকেও বায়তুল্লাহর তাওয়াফ দ্বারাই শুরু করতে দেখেছি, তাঁর এই তাওয়াফও উমরার তাওয়াফ ছিল না। মুআবিয়া এবং আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. (অনুরূপ করেন)। এরপর আমি আমার পিতা যুবাইর ইবনে আওয়াম রা.-এর সঙ্গে হজ্জ করলাম। তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ থেকেই শুরু করেন, আর তাঁর এ তাওয়াফ উমরার তাওয়াফ ছিল না। মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণ রা.-কে আমি এরূপ করতে দেখেছি। তাদের সে তাওয়াফও উমরার তাওয়াফ ছিল না। সবশেষে আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কেও অনুরূপ করতে দেখেছি। তিনিও সে তাওয়া উমরার তাওয়াফ হিসাবে করেননি। ইবনে উমর রা. তো তাদের নিকটেই আছেন তাঁর কাছে জেনে নিন না কেন ? সাহাবীগণের মধ্যে যারা অতীত হয়ে গেছেন তাদের কেউই মসজিদে হারামে প্রবেশ করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ সমাধা করার পূর্বে অন্য কোন কাজ করতেন না এবং তাওয়াফ করে ইহরাম ভঙ্গ করতেন না। আমার মা ও খালা রা.কে দেখেছি। তাঁরা উভয়ে মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম তাওয়াফ সমাধা করেন, কিন্তু তাওয়াফ করে ইহরাম ভঙ্গ করেন নি। আমার মা আমাকে বলেছেন যে, তিনি তাঁর বোন (আয়িশা রা. ও (আমার পিতা) যুবাইর রা. এবং অমুক অমুক উমরার নিয়্যাতে ইহরাম বাঁধেন। এরপর তাওয়াফ শেষে হালাল হয়ে যান।
হাদীস নং ১৫৪১
আবুল ইয়ামান রহ……….উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, মহান আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে আপনার অভিমত কি ? (অনুবাদ) সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। কাজেই যে কেউ কাবাঘরে হজ্জ বা উমরা সম্পন্ন করে, এ দুটির মাঝে যাতায়াতে করলে তার কোন দোষ নেই। (২ : ১৫৮) (আমার ধারণা যে,) সাফা-মারওয়ার মাঝে কেউ সায়ী না করলে তার কোন দোষ নেই। তখন তিনি (আয়িশা রা.) বললেন, হে ভাতিজা ! তুমি যা বললে, তা ঠিক নয়। কেননা, যা তুমি তাফসীর করলে, যদি আয়াতের মর্ম তাই হত, তাহলে আয়াতের শব্দবিন্যাস এভাবে لا جناح عليه أن لا يتطوف بهما হত দুটোর মাঝে সায়ী না করায় কোন দোষ নেই। কিন্তু আয়াতটি আনসারদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মুশাল্লাল নামক স্থানে স্থাপিত মানাত নামের মূর্তির পূজা করত, তার নামেই তারা ইহরাম বাঁধত। সে মূর্তির নামে যারা ইহরাম বাঁধত তার সাফা-মারওয়া সায়ী করাকে দোষ মনে করত। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! পূর্বে আমরা সাফা ও মারওয়া সায়ী করাকে দূষণীয় মনে করতাম। (এখন কি করব ?) এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ পাক إن الصفا والمروة من شعائر الله الآية অবতীর্ণ করেন। আয়িশা রা. বলেন, (সাফা ও মারওয়ার মাঝে) উভয় পাহাড়ের মাঝে সায়ী করা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিধান দিয়েছেন। কাজেই কারো পক্ষে এ দুয়ের সায়ী পরিত্যাগ করা ঠিক নয়। (রাবী বলেন) এ বছর আবু বকর ইবনে আবদুর রাহমান রা.-কে ঘটনাটি জানালাম। তখন তিনি বললেন, আমি তো এ কথা শুনিনি, তবে আয়িশা রা. ব্যতীত বহু আলিমকে উল্লেখ করতে শুনেছি যে, মানাতের নামে যার ইহরাম বাঁধত তার সকলেই সাফা মাওয়া সায়ী করত, যখন আল্লাহ কুরআনে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের কথা উল্লেখ করলেন, কিন্তু সাফা ও মারওয়ার আলোচনা তাঁতে হল না, তখন সাহাবাগণ বলতে লাগলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা সাফা ও মারওয়া সায়ী করতাম, এখন দেখি আল্লাহ কেবল বায়তুল্লাহ তাওয়াফের কথা অবতীর্ণ করেছেন, সাফার উল্লেখ করেননি। কাজেই সাফা ও মারওয়া মাঝে সায়ী করলে আমাদের দোষ হবে কি ? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক إن الصفا والمروة من شعائر الله الآية অবতীর্ণ করেন আবু বকর রা. আরো বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি, আয়াতটি দু’ প্রকার লোকদের উভয়ের প্রতি লক্ষ্য করেই অবতীর্ণ হয়েছে, অর্থাৎ যারা জাহিলী যুগে সাফা ও মারওয়া সায়ী করা হতে বিরত থাকতেন, আর যারা তৎকালে সায়ী করত বটে, কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর সায়ী করার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাদের দ্বিধার কারণ ছিল আল্লাহ বায়তুল্লাহ তাওয়াফের নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু সাফা ও মারওয়ার কথা উল্লেখ করেননি ? অবশেষে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের কথা আলোচনা করার পর আল্লাহ সাফা ও মারওয়া সায়ী করার কথা উল্লেখ করেন।
হাদীস নং ১৫৪২
মুহাম্মদ ইবনে উবাইদ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফে কুদূমের সময় প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন ও পরবর্তী চার চক্কর স্বাভাবিক গতিতে হেটে চলতেন এবং সাফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ীর সময় বাতনে মসীরে দ্রুত চলতেন। আমি (উবাইদুল্লাহ) নাফি কে বললাম, আবদুল্লাহ রা. কি রুকন ইয়ামানীতে পৌছে হেটে চলতেন ? তিনি বললেন, না । তবে হজরে আসওয়াদের নিকট ভীড় হলে (একটুখানি মন্থর গতিতে চলতেন) কারণ তিনি তা চুম্বন না করে সরে যেতেন না।
হাদীস নং ১৫৪৩
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আমর ইবনে দীনার রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইবনে উমর রা.-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, কোন ব্যক্তি যদি উমরা করতে গিয়ে শুধু বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে, আর সাফা ও মারওয়া সায়ী না করে, তার পক্ষে কি স্ত্রী সহবাস বৈধ হবে ? তখন তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) উপনীত হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ সাত চক্করে সমাধা করে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’ রাকআত সালাত আদায় করলেন, এরপরে সাত চক্করে সাফা ও মারওয়া সায়ী করলেন। (এতটুকু বলে ইবনে উমর রা. বলেন) তেমাদের জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। আমরা জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা.-কে উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, সাফা ও মারওয়ার সায়ী করার পূর্বে কারো পক্ষে স্ত্রী সহবাস করা মোটেই বৈধ হবে না।
হাদীস নং ১৫৪৪
মক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ সম্পন্ন করলেন। এরপর দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। এরপর সাফা ও মারওয়া সায়ী করলেন। এরপর তিনি (ইবনে উমর) তিলাওয়াত করলেন : “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”।
হাদীস নং ১৫৪৫
আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রহ………আসিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক রা.-কে বললাম, আপনার কি সাফা ও মারওয়া সায়ী করতে অপছন্দ করতেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। কেননা তা ছিল জাহিলী যুগের নিদর্শন। অবশেষে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করেন : “নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন। কাজই হজ্জ বা উমরাকারীদের জন্য এ দুইয়ের মধ্যে সায়ী করায় কোন দোষ নেই”। (২ : ১৫৮)
হাদীস নং ১৫৪৬
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের নিজ শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহর তাওয়াফে ও সাফা ও মারওয়ার মধ্যকার সায়ীতে দ্রুত চলে ছিলেন।
হাদীস নং ১৫৪৭
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কায় আসার পর ঋতুবতী হওয়ার কারণে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা ও মারওয়া সায়ী করতে পারিনি। তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অসুবিধার কথা জানালে তিনি বললেন : পবিত্র হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত অন্য সকল কাজ অপর হাজীদের ন্যায় সম্পন্ন করে নাও।
হাদীস নং ১৫৪৮
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না ও খলীফা রহ…….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ হজ্জ-এর ইহরাম বাঁধেন, তাদের মাঝে কেবল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তালহা রা. ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিলনা, আলী রা. ইয়ামান থেকে আগমন করেন, তাঁর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ ইহরাম বেঁধেছেন, আমিও সেরূপ ইহরাম বেঁধেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের মধ্যে যাদের নিকট কুরবানীর পশু ছিলনা, তাদের ইহরামকে উমরায় পরিণত করার নির্দেশ দিলেন, তারা যেন তাওয়াফ করে, চুল ছেটে অথবা মাথা মুণ্ডিয়ে হালাল হয়ে যায়। তাঁরা বলাবলি করতে লাগলেন, (যদি হালাল হয়ে যাই তাহলে) স্ত্রীর সাথে মিলনের পরপরই আমাদের পক্ষে মিনায় যাওয়াটা কেমন হবে ! তা অবগত হয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি পরে যা জানতে পেরেছি তা যদি আগে জানতে পারতাম, তাহলে কুরবানীর পশু সাথে আনতাম না। আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে অবশ্যই ইহরাম ভঙ্গ করতাম। (হজ্জের সফরে) আয়িশা রা. ঋতুবতী হওয়ার কারণে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত হজ্জের জন্য অন্য সকল কাজ সম্পন্ন করে নেন। পবিত্র হওয়ার পর তাওয়াফ আদায় করেন, (ফিরার পথে) আয়িশা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সকলেই হজ্জ ও উমরা উভয়টি আদায় করে ফিরছে, আর আমি কেবল হজ্জ আদায় করে ফিরছি, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা.-কে নির্দেশ দিলেন, যেন আয়িশা রা.-কে নিয়ে তানঈমে চলে যান, (যেখানে যেয়ে উমরার ইহরাম বাঁধবেন) আয়িশা রা. হজ্জের পর উমরা আদায় করে নিলেন।
হাদীস নং ১৫৪৯
মুআম্মাল ইবনে হিশাম রহ………হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আমাদের যুবতীদেরকে বের হতে নিষেধ করতাম। এক মহিলা বনূ খালীফা-এর দুর্গে এলেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, তাঁর বোন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক সাহাবী সহধর্মিণী ছিলেন। যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, ছয়টি যুদ্ধে আমার আমার বোনও স্বামীর সঙ্গে ছিলেন। তাঁর বোন বলেন, আমরা আহত যোদ্ধা ও অসুস্থ সৈনিকদের সেবা করতাম। আমার বোন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমাদের মধ্যে যার চাদর নেই, সে বের না হলে অন্যায় হবে কি ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমাদের একজন অপরজনকে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাদরটি দিয়ে দেওয়া উচিত এবং কল্যাণমূলক কাজে ও মুমিনদের দু’আয় বের হওয়া উচিত। উম্মে আতিয়্যা রা. আসলে এ বিষয়ে তাঁর নিকট আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক কথা (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি আমার পিতা উৎসর্গ হউন) ব্যতীত কখনও উচ্চারণ করতেন না। আমি তাকে বললাম, আপনি কি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ বলতে শুনেছেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। আমার পিতা উৎসর্গ হউন। তিনি বললেন : যুবতী ও পর্দানশিন মহিলাদেরও বের হওয়া উচিত। অথবা বললেন : পর্দানশিন যুবতী ও ঋতুবতীদেরও বের হওয়া উচিত। তারা কল্যাণমূলক কাজে এবং মুসলমানদের দু’আয় যথাস্থানে উপস্থিত হবে। তবে ঋতুবতী মহিলাগণ সালাতের স্থানে উপস্থিত হবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ঋতুবতী মহিলাও কি ? তিনি বললেন : (কেন উপস্থিত হবে না?) তারা কি আরাফার ময়দানে এবং অমুক অমুক স্থানে উপস্থিত হবে না ?
হাদীস নং ১৫৫০
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..আবদুল আযীয ইবনে রুফাইয় রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আপনি যা উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছেন তার কিছুটা বলুন। বলুন, যিলহজ্জ মাসের আট তারিখ যুহর ও আসরের সালাত তিনি কোথায় আদায় করতেন ? তিনি বললেন, মিনায়। আমি বললাম, মিনা থেকে ফিরারদিন আসলের সালাত তিনি কোথায় আদায় করেছেন ? তিনি বললেন, মুহাসসাবে। এরপর আনাস রা. বললেন, তোমাদের আমীরগণ যেরূপ করবে, তোমরাও অনুরূপ কর।
হাদীস নং ১৫৫১
আলী ও ইসমাঈল ইবনে আবান রহ………আবদুল আযীয রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যিলহজ্জ মাসের আট তারিখ মিনার দিকে বের হলাম তখন আনাস রা.-এর সাক্ষাত লাভ করি, তিনি গাধার পিঠে আরোহণ করে যাচ্ছিলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এ দিনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় যুহরের সালাত আদায় করেছিলেন ? তিনি বললেন, তুমি লক্ষ্য রাখবে যেখানে তোমার আমীরগণ সালাত আদায় করবে, তুমিও সেখানেই সালাত আদায় করবে।
হাদীস নং ১৫৫২
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় দু’ রাকআত সালাত আদায় করেছেন, এবং আবু বকর উমর রা.ও । আর উসমান রা. তাঁর খিলাফতের প্রথম ভাগেও দু’ রাকআত আদায় করেছেন।
হাদীস নং ১৫৫৩
আদম রহ……..হারিসা ইবনে ওয়াহব খুযায় রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে মিনাতে দু’ রাকআত সালাত আদায় করেছেন। এ সময় আমরা আগের তুলনায় সংখ্যায় বেশী ছিলাম এবং অতি নিরাপদে ছিলাম।
হাদীস নং ১৫৫৪
কাবীসা ইবনে উকরা রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (মিনায়) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে দু’ রাকআত সালাত আদায় করেছি। আবু বকর রা.-এর সাথে দু’ রাকআত এবং উমর -এর সাথেও দু’ রাকআত আদায় করেছি। এরপর তোমাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে (অর্থাৎ উসমান রা.-এর সময় থেকে চার রাকআত সালাত আদায় করা শুরু হয়েছে) হায় ! যদি চার রাকআতের পরিবর্তে মকবুল দু’ রাকআতই আমার ভাগ্যে জুটত।
হাদীস নং ১৫৫৫
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..উম্মে ফাযল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আরাফার দিনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাওমের ব্যাপারে লোকজন সন্দেহ করতে লাগলেন। তাই আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শরবত পাঠিয়ে দিলাম। তিনি তা পান করলেন।
হাদীস নং ১৫৫৬
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ আশ-শামী রহ………মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর সাকাফী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস ইবনে মালিক রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তাঁরা উভয়ে সকাল বেলায় মিনা থেকে আরাফার দিকে যাচ্ছিলেন, আপনারা এ দিনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে থেকে কিরূপ করতেন ? তিনি বললেন, আমাদের মধ্যে যারা তালবিয়া পড়তে চাইত তারা পড়ত, তাঁতে বাঁধা দেয়া হত না এবং তাকবীর পড়তে চাইত তারা তাকবীর পড়ত, এতেও বাঁধা দেয়া হত না।
হাদীস নং ১৫৫৭
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ আশ-শামী রহ………সালিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল মালিক (মক্কার গভর্নর) হাজ্জাজের নিকট লিখে পাঠালেন যে, হজ্জের ব্যাপারে ইবনে উমরের বিরোধিতা করবে না। আরাফার দিনে সূর্য ঢলে যাবার পর ইবনে উমর রা. হাজ্জাজের তাঁবুর কাছে গিয়ে উচ্চস্বরে ডাকলেন। আমি তখন তাঁর সাথেই ছিলাম, হাজ্জাজ হলুদ রঙের চাদর পরিহিত অবস্থায় বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, কি ব্যাপার, হে আবু আবদুর রাহমান ? ইবনে উমর রা. বললেন, যদি সুন্নাতের অনুসরণ করতে চাও তাহলে চল। হাজ্জাজ জিজ্ঞাসা করলেন, এ মুহূর্তেই ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। হাজ্জাজ বললেন, সামান্য অবকাশ দিন, মাথায় পানি ঢেলে বের হয়ে আসি। তখন তিনি তার সওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন। অবশেষে হাজ্জাজ বেরিয়ে এলেন। এরপর হাজ্জাজ চলতে লাগলেন, আমি ও আমার পিতার মাঝে তিনি চললেন, আমি তাকে বললাম, যদি আপনি সুন্নাতের অনুসরণ করতে চান তাহলে খুতবা সংক্ষিপ্ত করবেন এবং উকুফে জলদি করবেন। হাজ্জাজ আবদুল্লাহর দিকে তাকাতে লাগলেন। আবদুল্লাহ রা. যখন তাকে দেখলেন তখন বললেন, সে ঠিকই বলছে।
হাদীস নং ১৫৫৮
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……..উম্মে ফাযল বিনতে হারিস রা. থেকে বর্ণিত যে, লোকজন তাঁর সামনে আরাফার দিনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাওম সম্পর্কে মতভেদ করছিলেন। কেউ বলছিলেন তিনি সায়িম আবার কেউ বলছিলেন তিনি সায়িম নন। তারপর আমি তাঁর কাছে এক পিয়ালা দুধ পাঠিয়ে দিলাম, তিনি তখন উটের উপর ছিলেন, তিনি তা পান করে নিলেন।
হাদীস নং ১৫৫৯
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….সালিম ইবনে আবদুল্লাহ রহ. থেকে বর্ণিত যে, (খলীফা) আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান হাজ্জাজকে লিখে পাঠালেন, তিনি যেন হজ্জের ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে অনুসরণ করেন। যখন আরাফার দিন হল, তখন সূর্য হেলে যাওয়ার পর ইবনে উমর রা. আসলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তাঁর তাঁবুর কাছে এসে উচ্চস্বরে ডাকলেন, ও কোথায় ? হাজ্জাজ বেরিয়ে আসলেন। ইবনে উমর রা. বললেন, চল। হাজ্জাজ বললেন, এখনই ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। হাজ্জাজ বললেন, আমাকে সামান্য অবকাশ দিন, মাথায় পানি ঢেলে বের হয়ে আসি। তখন তিনি তার সওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন। অবশেষে হাজ্জাজ বেরিয়ে এলেন। এরপর হাজ্জাজ চলতে লাগলেন, আমি ও আমার পিতার মাঝে তিনি চললেন, আমি তাকে বললাম, যদি আপনি সুন্নাতের অনুসরণ করতে চান তাহলে খুতবা সংক্ষিপ্ত করবেন এবং উকুফে জলদি করবেন। ইবনে উমর রা. বললেন, সে (সালিম) ঠিকই বলেছে।
হাদীস নং ১৫৬০
আলী ইবনে আবদুল্লাহ ও মুসাদ্দাদ রহ………যুবাইর ইবনে মুতঈম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার একটি উট হারিয়ে আরাফার দিনে তা তালাশ করতে লাগলাম। তখন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আরাফায় ওকুফ করতে দেখলাম এবং বললাম, আল্লাহর কসম ! তিনি তো কুরাইশ বংশীয়। এখানে তিনি কি করছেন ?
হাদীস নং ১৫৬১
ফারওয়া ইবনে আবু মাগরা রহ………উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত যে, জাহিলী যুগে হুমস ব্যতীত অন্য লোকেরা উলঙ্গ অবস্থায় (বায়তুল্লাহর) তাওয়াফ করত। আর হুমস হল কুরাইশ এবং তাদের ঔরসজাত সন্তান-সন্তুতি। হুমসরা লোকদের সেবা করে সাওয়াবের আশায় পুরুষ পুরুষকে কাপড় দিত এবং সে তা পরে তাওয়াফ করত। আর স্ত্রীলোক স্ত্রীলোককে কাপড় দিত এবং কাপড়ে সে তাওয়াফ করত। হুমসরা যাকে কাপড় না দিত সে উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করত। সব লোক আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করত আর হুমসরা প্রত্যাবর্তন করত মুযদালিফা থেকে। রাবী হিশাম রহ .বলেন, আমার পিতা আমার নিকট আয়িশা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এই আয়াতটি হুমস সম্পর্কে নযিল হয়েছে : “এরপর যেখান থেকে অন্য লোকেরা প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করবে” রাবী বলেন, তারা মুযদালিফা থেকে প্রত্যাবর্তন করত, এতে তাদের আরাফা পর্যন্ত যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল।
হাদীস নং ১৫৬২
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উসামা রা. কে জিজ্ঞাসা করা হল, তখন আমিও সেখানে বসা ছিলাম, বিদায় হজ্জের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আরাফা থেকে ফিরতেন তখন তাঁর চলার গতি কি ছিল ? তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্রুতগতিতে চলতেন এবং যখন পথ মুক্ত পেতেন তখন তার চাইতেও দ্রুতগতিতে চলতেন। রাবী হিশাম রহ. বলেন, عنق থেকেও দ্রুতগতির ভ্রমণকে نص বলা হয়। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, فجوة অর্থ متسع খোলা পথ, এর বহুবচন হল فجوات ও فجاء- ركوة ও ركاء শব্দদ্বয়ও অনুরূপ। (কুরআনে বর্ণিত) ولات حين مناص এর অর্থ হল, পরিত্রাণের কোন উপায়-অবকাশ নেই।
হাদীস নং ১৫৬৩
মুসাদ্দাদ রহ………উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি একটি গিরিপথের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটিয়ে উযূ করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি সালাত আদায় করবেন ? তিনি বললেন : সালাত তোমার আরো সামনে।
হাদীস নং ১৫৬৪
মূসা ইবেন ইসমাঈল রহ…….নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লহ ইবনে উমর রা. মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার সালাত এক সাথে আদায় করতেন। এ ছাড়া তিনি সেই গিরিপথ দিয়ে অতিক্রম করতেন যে দিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিয়েছিলেন। আর সেখানে প্রবেশ করে তিনি ইসতিনজা করতেন এবং উযূ করতেন কিন্তু সালাত আদায় করতেন না। অবশেষে তিনি মুযদালিফায় পৌছে সালাত আদায় করতেন।
হাদীস নং ১৫৬৫
কুতাইবা রহ………উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আরাফা থেকে সওয়ারীতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পেছনে আরোহণ করলাম। মুযদালিফার নিকটবর্তী বামপার্শ্বের গিরিপথে পৌঁছলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটটি বসালেন। এরপর পেশাব করে আসলেন। আমি তাকে উযূর পানি ঢেলে দিলাম। আর তিনি হাল্কাভাবে উযূ করে নিলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সালাত ? তিনি বললেন : সালাত তোমার আরো সামনে। এ কথা বলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ারীতে আরোহণ করে মুযদালিফা আসলেন এবং সালাত আদায় করলেন। মুযদালিফার ভোরে ফযল (ইবনে আব্বাস রা.) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে আরোহণ করলেন। কুরাইব রহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ফযল রা. থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায় পৌছা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতে থাকেন।
হাদীস নং ১৫৬৬
সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি আরাফার দিনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ফিরে আসছিলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছনের দিকে খুব হাকডাক ও উট পেটানোর শব্দ শুনতে উট দ্রুত হাকানোর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই (হাদীসে উল্লেখিত إيضاع এর প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী রহ. কুরআনে উদ্ধৃত কয়েকটি শব্দের মর্মার্থ দেন) (কুরআনে উদ্ধৃত) أوضعوا তারা দ্রুত চলত। خلالكم তোমাদের ফাঁকে ঢুকে فجرنا خلالهما উভয়টির মধ্যে প্রবাহিত করেছি।
হাদীস নং ১৫৬৭
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফা থেকে ফেরার সময় গিরিপথে অবতরণ করে পেশাব করলেন এবং উযু করলেন। তবে পূর্ণাঙ্গ উযু করলেন না। আমি তাকে বললাম সালাত ? তিনি বললেন : সালাত তো তোমার সামনে। তারপর তিনি মুযদালিফায় এসে উযু করলেন এবং পূর্ণাঙ্গ উযু করলেন। তারপর সালাতের ইকামত হলে তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। এরপর প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে নিজ নিজ উট দাঁড় করিয়ে রাখার পর সালাতের ইকামত দেওয়া হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত আদায় করলেন। ইশা ও মাগরিবের মধ্যে তিনি আর কোন সালাত পড়েননি।
হাদীস নং ১৫৬৮
আদম রহ……..উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশা একসাথে আদায় করেন। প্রত্যেকটির জন্য আলাদা ইকামত দেওয়া হয়। তবে উভয়ের মধ্যে বা পরে তিনি কোন নফল সালাত আদায় করেননি।
হাদীস নং ১৫৬৯
খালিদ ইবনে মাখলাদ রহ………আবু আইয়্যূব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের সময় মুযদালিফায় মাগরিব এবং ইশা একত্রে আদায় করেছেন।
হাদীস নং ১৫৭০
আমর ইবনে খালিদ রহ………আবদুর ইবনে ইয়াযিদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ রা. হজ্জ আদায় করলেন। তখন ইশার আযানের সময় বা তার কাছাকাছি সময় আমরা মুযদালিফা পৌঁছলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে আদেশ দিলেন। সে আযান দিল এবং ইকামত বলল। তিনি মাগরিব আদায় করলেন এবং এরপর আরো দু’ রাকআত আদায় করলেন। তারপর তিনি রাতের খাবার আনলেন এবং তা খেয়ে নিলেন। (রাবী বলেন) তারপর তিনি একজনকে আদেশ দিলেন। আমার মনে হয়, লোকটি আযান দিল এবং ইকামত বলল। আমর রহ. বলেন, আমার বিশ্বাস এ সন্দেহ যুহাইর রহ. থেকেই হয়েছে। তারপর তিনি দু’ রাকআত ইশার সালাত আদায় করলেন। ফজর হওয়া মাত্রই তিনি বললেন : এ সময়, এ দিনে, এ স্থানে, এ সালাত ব্যতীত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর কোন সালাত আদায় করেননি। আবদুল্লাহ রা. বলেন, এ দুটি সালাত তাদের প্রচলিত ওয়াক্ত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই লোকেরা মুযদালিফা পৌঁছার পর মাগরিব আদায় করেন এবং ফজরের সময় হওয়া মাত্রই ফজরের সালাত আদায় করেন। আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এইরূপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং ১৫৭১
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………সালিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. তাঁর পরিবারের দুর্বল লোকদের আগেই পাঠিয়ে দিয়ে রাতে মুযদালিফাতে মাশআরে হারামের নিকট ওকুফ করতেন এবং সাধ্যমত আল্লাহর যিকির করতেন। তারপর ইমাম ওকুফ করার ও রওয়ানা হওয়ার আগেই তাঁরা (মিনায়) ফিরে যেতেন। তাদের থেকে কেউ মিনাতে আগমন করতেন ফজরের সালাতের সময় আর কেউ এরপরে আসতেন, মিনাতে এসে তাঁরা কংকর মারতেন। ইবনে উমর রা. বলতেন, তাদের জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ ব্যাপারে কড়াকড়ি শিথিল করে সহজ করে দিয়েছেন।
হাদীস নং ১৫৭২
সুলাইমান ইবনে হারব রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রাতে মুযদালিফা থেকে পাঠিয়েছেন।
হাদীস নং ১৫৭৩
আলী রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফার রাতে তাঁর পরিবারের যে সব লোককে এখানে পাঠিয়েছিলেন, আমি তাদের একজন।
হাদীস নং ১৫৭৪
মুসাদ্দাদ রহ……….আসমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি মুযদালিফার রাতে মুযদালিফার কাছেকাছি স্থানে পৌছে সালাতে দাঁড়ালেন এবং কিছুক্ষণ সালাত আদায় করেন। তারপর বলেন, হে বৎস ! চাঁদ কি অস্তমিত হয়েছে ? আমি বললাম, না। তিনি আরো কিছুক্ষণ সালাত আদায় করলেন। তারপর বললেন, হে বৎস ! চাঁদ কি ডুবেছে ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, চল। আমরা রওয়ানা হলাম এবং চললাম। পরিশেষে তিনি জামরায় কংকর মারলেন এবং ফিরে এসে নিজের অবস্থানের জায়গায় ফজরের সালাত আদায় করলেন। তারপর আমি তাকে বললাম, হে ! আমার মনে হয়, আমরা বেশী অন্ধকার থাকতেই আদায় করে ফেলেছি। তিনি বললেন, বৎস ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের জন্য এর অনুমতি দিয়েছেন।
হাদীস নং ১৫৭৫
মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাওদা রা. মুযদালিফার রাতে (মিনা যাওয়ার জন্য) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি চাইলেন, তিনি তাকে অনুমতি দেন। সাওদা রা. ছিলেন ভারী ও ধীরগতি মহিলা।
হাদীস নং ১৫৭৬
আবু নুআইম রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মুযদালিফায় অবতরণ করলাম। মানুষের ভিড়ের আগেই রওয়ানা হওয়ার জন্য সাওদা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনুমতি চাইলেন। আর তিনি ছিলেন ধীরগতি মহিলা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন। তাই তিনি লোকের ভিড়ের আগেই রওয়ানা হলেন। আর আমরা সকাল পর্যন্ত সেখানেই থেকে গেলাম। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা হলেন, আমরা তাঁর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। সাওদার মত আমিও যদি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট অনুমতি চেয়ে নিতাম তাহলে তা আমার জন্য যে কোন খুশির কারণ থেকে অধিক সন্তুষ্টির ব্যাপার হত।
হাদীস নং ১৫৭৭
আমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দুটি সালাত ছাড়া কোন সালাত তার নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত আদায় করতে দেখিনি। তিনি মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করেছেন এবং ফজরের সালাত তার (নিয়মিত) ওয়াক্তের আগে আদায় করেছেন।
হাদীস নং ১৫৭৮
আবদুল্লাহ ইবনে রাজা রহ………..আবদুর রাহমান ইবনে ইয়াযীদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ রা.-এর সঙ্গে মক্কা রওয়ানা হলাম। এরপর আমরা মুযদালিফায় পৌঁছলাম। তখন তিনি পৃথক পৃথক আযান ও ইকামতের সাথে উভয় সালাত আদায় করলেন এবং এই দু’ সালাতের মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিলেন। তারপর ফজর হতেই তিনি ফজরের সালাত আদায় করলেন। কেউ কেউ বলছিল যে, ফজরের সময় হয়ে গেছে, আবার কেউ বলছিল যে, এখনো ফজরের সময় আসেনি। এরপর আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ দু’ সালাত অর্থাৎ মাগরিব ও ইশা এ স্থানে তাদের নিজ সময় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই ইশার ওয়াক্তের আগে কেউ যেন মুযদালিফায় না আসে। আর ফজরের সালাত এই মুহূর্তে। এরপর তিনি ফর্সা হওয়া পর্যন্ত সেখানে ওকুফ করেন। এরপর বললেন, আমীরুল মু’মিনীন যদি এখন রওয়ানা হন তাহলে তিনি সুন্নাত মুতাবিক কাজ করলেন। (রাবী বলেন) আমার জানা নেই, তাঁর কথা দ্রুত ছিল, না উসমান রা-এর রওয়ানা হওয়াটা। এরপর তিনি তালবিয়া পাঠ করতে থাকলেন, কুরবানীর দিন জামরায়ে আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত।
হাদীস নং ১৫৭৯
হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ………আমর ইবনে মায়মুন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর রা.-এর সাথে ছিলাম। তিনি মুযদালিফাতে ফজরের সালাত আদায় করে (মাশআরে হারামে) উকুফ করলেন এবং তিনি বললেন, মুশরিকরা সূর্য না উঠা পর্যন্ত রওয়ানা হত না। তারা বলত, হে সাবীর ! আলোকিত হও। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিপরীত করলেন এবং তিনি সূর্য উঠার আগেই রওয়ানা হলেন।
হাদীস নং ১৫৮০
আবু আসিম যাহহাক ইবনে মাখলাদ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযল রা.-কে তাঁর সওয়ারীর পেছনে বসিয়েছিলেন। সেই ফযল রা. বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায় পৌছে কংকর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
হাদীস নং ১৫৮১
যুহাইর ইবনে হারব রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, আরাফা থেকে মুযদালিফা আসার পথে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সওয়ারীর পেছনে উসামা রা. বসা ছিলেন। এরপর মুযদালিফা থেকে মিনার পথে তিনি ফযলকে সওয়ারীর পেছনে বসালেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তারা উভয়ই বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায়ে আকাবতে কংকর না মারা পর্যন্ত অনবরত তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
হাদীস নং ১৫৮২
ইসহাক ইবনে মানসূর রহ………..আবু জামরা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা.-কে তামাত্তু হজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা আদায় করতে আদেশ দিলেন। এরপর আমি তাকে কুরবানী সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তামাত্তুর কুরবানী হল একটি উট, গরু বা বকরী অথবা এক কুরবানীর পশুর মধ্যে শরীকানা এক অংশ। আবু জামরা রহ. বলেন, লোকেরা তামাত্তু হজ্জকে যেন অপছন্দ করত। একবার আমি ঘুমালাম তখন দেখলাম, একটি লোক যেন (আমাকে লক্ষ্য করে) ঘোষণা দিচ্ছে, উত্তম হজ্জ এবং মাকবুল তামাত্তু। এরপর আমি ইবনে আব্বাস রা.- এর কাছে এসে স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি আল্লাহ আকবার উচ্চারণ করে বললেন, এটাই তো আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত। আদম, ওয়াহাব ইবনে জারীর এবং গুনদর রহ. শুবা রহ. থেকে মাকবুল উমরা এবং উত্তম এবং উত্তম হজ্জ বলে উল্লেখ করেছেন।
হাদীস নং ১৫৮৩
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে কুরবানীর উট হাকিয়ে নিতে দেখে বললেন, এর পিঠে আরোহণ কর। সে বলল, এ তো কুরবানীর উট। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর পিঠে সওয়ার হয়ে চল। এবারও লোকটি বলল, এতো কুরবানীর উট। এরপরও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর পিঠে আরোহণ কর, তোমার সর্বনাশ ! এ কথাটি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারে বলেছেন।
হাদীস নং ১৫৮৪
মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে কুরবানীর উট হাকিয়ে নিতে দেখে বললেন, এর উপর সাওয়ার হয়ে যাও। সে বলল, এ তো কুরবানীর উট। তিনি বললেন, এর উপর সাওয়ার হয়ে যাও। লোকটি এ তো কুরবানীর উট। তিনি বললেন, এর উপর সাওয়ার হয়ে যাও। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন।
হাদীস নং ১৫৮৫
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ ও উমরা একসাথে পালন করেছেন। তিনি হাদী পাঠান অর্থাৎ যুল-হুলাইফা থেকে কুরবানীর জানোয়ার সাথে নিয়ে নেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে উমরার ইহরাম বাঁধেন, এরপর হজ্জের ইহরাম বাঁধেন সাহাবীগণ তাঁর সঙ্গে উমরার ও হজ্জের নিয়্যাতে তামাত্তু করলেন। সাহাবীগণের কতেক হাদী সাথে নিয়ে চললেন, আর কেউ কেউ হাদী সাথে নেননি। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা পৌছে সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন : তোমাদের মধ্যে যারা হাদী সাথে নিয়ে এসেছ, তাদের জন্য হজ্জ সমাপ্ত করা পর্যন্ত কোন নিষিদ্ধ জিনিস হালাল হবে না। আর তোমাদের মধ্যে যারা হাদী সাথে নিয়ে আসনি, তারা বায়তুল্লাহর এবং সাফা-মারওয়ার তাওয়াফ করে চুল কেটে হালাল হয়ে যাবে। এরপর হজ্জের ইহরাম বাঁধবে। তবে যারা কুরবানী করতে পারবে না তারা হজ্জের সময় তিনদিন এবং বাড়িতে ফিরে গিয়ে সাতদিন সাওম পালন করবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা পৌঁছেই তাওয়াফ করলেন। প্রথমে হজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন এবং তিন চক্কর রমল করে আর চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হেটে তাওয়াফ করলেন। বায়তুল্লাহর তাওয়াফ সম্পন্ন করে তিনি মাকামে ইবরাহীমের নিকট দু’ রাকআত সালাত আদায় করলেন, সালাম ফিরিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফায় আসলেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাত চক্কর সায়ী করলেন। হজ্জ সমাধা করা পর্যন্ত তিনি যা কিছু হারাম ছিল তা থেকে হালাল হননি। তিনি কুরবানীর দিনে হাদী কুরবানী করলেন, সেখান থেকে এসে তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন। তারপর তাঁর উপর যা হারাম ছিল সে সবকিছু থেকে তিনি হালাল হয়ে গেলেন। সাহাবীগণের মধ্যে যারা হাদী সাথে নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা সেরূপ করলেন, যেরূপ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন। উরওয়া রহ. আয়িশা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের সাথে উমরা পালন করেন এবং তাঁর সঙ্গে সাহাবীগণও তামাত্তু করেন, যেমনি বর্ণনা করেছেন সালিম রহ .ইবনে উমর রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ।
হাদীস নং ১৫৮৬
আবু নুমান রহ……..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পুত্র আবদুল্লাহ রা. তাঁর পিতাকে বললেন, আপনি (এবার বাড়িতেই) অবস্থান করুন। কেননা, বায়তুল্লাহ থেকে আপনার বাঁধাপ্রাপ্ত হওয়ার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। আবদুল্লাহ রা. বললেন, তাহলে আমি তাই করব যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন। তিনি আরা বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। সুতরাং আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, (এবার) উমরা আদায় করা আমি আমার উপর ওয়াজিব করে নিয়েছি। তাই তিনি উমরার জন্য ইহরাম বাঁধলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি রওয়ানা হলেন, যখন বায়দা নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন তিনি হজ্জ এবং উমরা উভয়টির জন্য ইহরাম বেঁধে বললেন, হজ্জে এবং উমরার ব্যাপার তো একই। এরপর তিনি কুদাইদ নামক স্থান থেকে কুরবানীর জানোয়ার কিনলেন এবং মক্কা পৌছে (হজ্জ ও উমরা) উভয়টির জন্য একটি তাওয়াফ করলেন। উভয়ের সব কাজ শেষ করা পর্যন্ত তিনি ইহরাম খুললেন না।
হাদীস নং ১৫৮৭
আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রহ………মিসওয়ার ইবনে মাখরামা ও মারওয়ান রহ. থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ই বলেছেন, হুদাইবিয়ার সন্ধির পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাজারেরও অধিক সাহাবী নিয়ে মদীনা থেকে বের হয়ে যুল-হুলাইফা পৌছে কুরবানীর পশুটিকে কিলাদা পরালেন এবং ইশআর করলেন। এরপর তিনি উমরার ইহরাম বাঁধলেন।
হাদীস নং ১৫৮৮
আবু নুআইম রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নিজ হাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর পশুর কিলাদা পাকিয়ে দিয়েছি। এরপর তিনি তাকে কিলাদা পরিয়ে ইশআর করার পর পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর যা হালাল ছিল এতে তা হারাম হয়নি।
হাদীস নং ১৫৮৯
মুসাদ্দাদ রহ……….হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! লোকদের কি হল তারা হালাল হয়ে গেল আর আপনি হালাল হলেন না? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি তো আমার মাথার তালবিদ করেছি এবং আমার কুরবানীর জানোয়ারকে কিলাদা পরিয়ে দিয়েছি, তাই হজ্জ সমাধা না করা পর্যন্ত আমি হালাল হতে পারি না।
হাদীস নং ১৫৯০
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা থেকে কুরবানীর পশু পাঠাতেন, আমি তার গলায় কিলাদার মালা পাকিয়ে দিতাম। এরপর মুহরিম যে কাজ বর্জন করে, তিনি তার কিছু বর্জন করতেন না।
হাদীস নং ১৫৯১
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রা……… আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর পশুর কিলাদা পাকিয়ে দিলাম। এরপর তিনি তার ইশআর করলেন এবং তাকে কিলাদা পরিয়ে দিলেন অথবা আমি একে কিলাদা পরিয়ে দিলাম। এরপর তিনি তা বায়তুল্লাহর দিকে পাঠালেন এবং নিজে মদীনায় থাকলেন এবং তাঁর জন্য যা হালাল ছিল তা থেকে কিছুই তাঁর জন্য হারাম হয়নি।
হাদীস নং ১৫৯২
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…….যিয়াদ ইবনে আবু সুফিয়ান রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি আয়িশা রা.-এর নিকট পত্র লিখলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরবানীর পশু (মক্কা) পাঠায় তা যবেহ না করা পর্যন্ত তার জন্য ঐ সমস্ত কাজ হারাম হয়ে যায়, যা হাজীদের জন্য হারাম। (বর্ণনাকারিণী) আমরা রহ. বলেন, আয়িশা রা. বললেন, ইবনে আব্বাস রা. যেমন বলেছেন, ব্যাপারে তেমন নয়। আমি নিজ হাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর পশুর কিলাদা পাকিয়ে দিয়েছি আর তিনি নিজ হাতে তাকে কিলাদা পরিয়ে দিন। এরপর আমার পিতার সংগে তা পাঠান। সে জানোয়ার যবেহ করা পর্যন্ত আল্লাহ কর্তৃক হালাল করা কোন বস্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি হারাম হয়নি।
হাদীস নং ১৫৯৩
আবু নুআইম রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর জন্য বকরী পাঠান।
হাদীস নং ১৫৯৪
আবু নুমান রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (কুরবানীর পশুর) কিলাদাগুলো পাকিয়ে দিতাম আর তিনি তা বকরীর গলায় পরিয়ে দিতেন। এরপর তিনি নিজ পরিবারে হালাল অবস্থায় থেকে যেতেন।
হাদীস নং ১৫৯৫
আবু নুমান রহ. ও মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বকরীর কিলাদা পাকিয়ে দিতাম আর তিনি সেগুলো পাঠিয়ে দিয়ে হালাল অবস্থায় থেকে যেতেন।
হাদীস নং ১৫৯৬
আবু নুআইম রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর পশুর কিলাদা পাকিয়ে দিয়েছি, তাঁর ইহরাম বাঁধার আগে।
হাদীস নং ১৫৯৭
আমর ইবনে আলী রহ………উম্মুল মু’মিনীন (আয়িশা রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে যে পশম ছিল আমি তা দিয়ে কিলাদা পাকিয়ে দিয়েছি।
হাদীস নং ১৫৯৮
মুহাম্মদ রহ…….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একটি কুরবানীর উট হাকিয়ে নিতে দেখে বললেন : এর উপর সাওয়ার হয়ে যাও। লোকটি বলল, এটি কুরবানীর উট। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এর উপর সাওয়ার হয়ে যাও। বর্ণনাকারী বলেন, আমি লোকটিকে দেখেছি যে, সে ঐ পশুটির পিঠি চড়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাথে চলছিল আর পশুটির গলায় জুতার মালা ঝুলান ছিল। মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ. এ বর্ণনার অনুসরণ করেছেন। উসমান ইবনে উমর রহ……….আবু হুরায়রা রা. সুত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৫৯৯
কাবীসা রহ………আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যবেহকৃত কুরবানীর উটের পৃষ্ঠের আবরণ এবং তার চামড়া সাদকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
হাদীস ১৬০০
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে যুবাইরের খিলাফতকালে খারিজীদের হজ্জ আদায়ের বছর ইবনে উমর রা. হজ্জ পালন করার ইচ্ছা করেন। তখন তাকে বলা হল, লোকদের মাঝে পরস্পর লড়াই সংঘটিত হতে যাচ্ছে, আর তারা আপনাকে বাঁধা দিতে পারে বলে আমরা আশংকা করি। ইবনে উমর রা. বললেন, (আল্লাহ তা’আলা বলেছেন) নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যেই রয়েছে উত্তম আর্দশ। কাজেই আমি সেরূপ করব যেরূপ করেছিলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, আমি আমার উপর উমরা ওয়াজিব করে ফেলেছি। এরপর বায়দার উপকণ্ঠে পৌছে তিনি বললেন, হজ্জ এবং উমরার ব্যাপার তো একই। আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, উমরার সাথে আমি হজ্জকেও একত্রিত করলাম। এরপর তিনি কিলাদা পরিহিত কুরবানীর পশু নিয়ে চললেন, যেটি তিনি আসার পথে কিনেছিলেন। তারপর তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সায়ী করলেন। তাছাড়া অতিরিক্ত কিছু করেননি এবং সে সব বিষয় থেকে হালাল হননি যেসব বিষয় তাঁর উপর হারাম ছিল-কুরবানীর দিন পর্যন্ত। তখন তিনি মাথা মুড়ালেন এবং কুরবানী করলেন। তাঁর মতে প্রথম তাওয়াফ দ্বারা হজ্জ ও উমরার তাওয়াফ সম্পন্ন হয়েছে। এ সব করার পর তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই করেছেন।
হাদীস নং ১৬০১
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যিল-কাদাহ মাসের পাঁচ দিন বাকী থাকতে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হজ্জ আদায় ছাড়া আমাদের অন্য কোন ইচ্ছা ছিল না। যখন আমরা মক্কার কাছাকাছি পৌঁছলাম, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করলেন : যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই সে যেন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার সায়ী করে হালাল হয়ে যায়। আয়িশা রা. বলেন, কুরবানীর দিন আমাদের কাছে গুরুর গোশত আনা হলে আমি বললাম, উক্ত হাদীসখানা কাসিমের নিকট আলোচনা করলে তিনি বললেন, সঠিকভাবেই তিনি হাদীসটি তোমার কাছে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৬০২
ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ………..নাফি রহ .থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ রা. কুরবানীর স্থানে কুরবানী করতেন। উবায়দুল্লাহ রহ. বলেন, (অর্থাৎ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর স্থানে।
হাদীস নং ১৬০৩
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে উমর রা. মুযদালিফা থেকে শেষ রাতের দিকে হাজীদের সাথে, যাদের মধ্যে আযাদ ও ক্রীতদাস থাকত, নিজ কুরবানীর জানোয়ার পাঠিয়ে দিতেন, যাতে তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর স্থানে পৌছে যায়।
হাদীস নং ১৬০৪
সাহল ইবনে বাক্কার রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে সাতটি উট দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কুরবানী করেন এবং মদীনাতেও হৃষ্টপুষ্ট শিং বিশিষ্ট সুন্দর দুটি দুম্বা তিনি কুরবানী করেছেন। এখানে হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে।
হাদীস নং ১৬০৫
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………যিয়াদ ইবনে যুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর রা. কে দেখেছি যে, তিনি আসলেন এমন এক ব্যক্তির নিকট, যে তার নিজের উটটিকে নহর করার জন্য বসিয়ে রেখেছিল। ইবনে উমর রা. বললেন, সেটি উঠিয়ে দাঁড়ান অবস্থায় বেঁধে নাও। (এ) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত । (ইমাম বুখারী রহ. বলেন) শুবা রহ. ইউনুস সুত্রে যিয়াদ রহ. থেকে হাদীসটি (আখবারানী) শব্দ দিয়ে বর্ণনা করেন।
হাদীস নং ১৬০৬
সাহল ইবনে বাক্কার রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাতে যুহর চার রাকআত এবং যুল হুলাইফাতে আসর দু’ রাকআত আদায় করলেন এবং এখানেই রাত যাপন করলেন। ভোর হলে তিনি সাওয়ারীতে আরোহণ করে তাহলীল ও তাসবীহ পাঠ করতে লাগলেন। এরপর বায়দায় যাওয়ার পর তিনি হজ্জ ও উমরা উভয়ের জন্য তালবিয়া পাঠ করেন এবং মক্কায় প্রবেশ করে তিনি সাহাবাদের ইহরাম খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। আর (সে হজ্জে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি উট দাঁড় করিয়ে নিজ হাতে কুরবানী করেন আর মদীনাতে হৃষ্টপুষ্ট শিং বিশিষ্ট সুন্দর দুটি মেষ কুরবানী দেন।
হাদীস নং ১৬০৭
মুসাদ্দাদ রহ……..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাতে যুহর চার রাকআত এবং যুল হুলাইফাতে আসর দু’ রাকআত আদায় করলেন আয়্যূব রহ. এক ব্যক্তির মাধ্যমে আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণনা করেন, এরপর এখানেই রাত যাপন করলেন। ভোর হলে তিনি ফজরের সালাত আদায় করার পর সাওয়ারীতে আরোহণ করেন। এরপর বায়দায় পৌঁছলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ ও উমরা উভয়ের জন্য তালবিয়া পাঠ করেন ।
হাদীস নং ১৬০৮
মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ………আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠালেন, আমি কুরবানীর পশুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, তারপর তিনি আমাকে আদেশ করলেন। আমি এর পিঠের আবরণ এবং চামড়াগুলোও বিতরণ করে দিলাম। সুফিয়ান রহ. আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করলেন কুরবানীর পশুর পাশে দাঁড়াতে এবং এর থেকে পারিশ্রমিক হিসাবে কাসাইকে কিছু না দিতে।
হাদীস নং ১৬০৯
মুসাদ্দাদ রহ………আলী রা. থেকে বর্ণিত যে, তাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের কুরবানীর জানোয়ারের পাশে দাঁড়াতে আর এগুলোর সমুদয় গোশত, চামড়া এবং পিঠের আবরণ সমূহ বিতরণ করতে নির্দেশ দেন এবং এর থেকে যেন কসাইকে পারিশ্রমিক হিসাবে কিছুই না দেওয়া হয়।
হাদীস নং ১৬১০
আবু নুআইম রহ……..আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর একশ উট পাঠান এবং আমাকে গোশত সম্বন্ধে নির্দেশ দিলেন। আমি তা বন্টন করে দিলাম। এরপর তিনি তার পিঠের আবরণ সম্বন্ধে আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি তা বন্টন করে দিলাম। তারপর তিনি আমাকে চামড়া সম্বন্ধে নির্দেশ দেন, আমি তা বন্টন করে দিলাম।
হাদীস নং ১৬১১
মুসাদ্দাদ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আমাদের কুরবানীর গোশত মিনার তিন দিনের বেশি খেতাম না। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অনুমতি দিলেন এবং বললেন : খাও এবং সঞ্চয় করে রাখ। তাই আমরা খেলাম এবং সঞ্চয়ও করলাম। রাবী বলেন, আমি আতা রহ.-কে বললাম, জাবির রা. কি বলেছেন আমরা মদীনায় আসা পর্যন্ত ? তিনি বললেন, না।
হাদীস নং ১৬১২
খালিদ ইবনে মাখলাদ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যুল-কুদার পাঁচ দিন অবশিষ্ট থাকতে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হজ্জ ছাড়া আমরা অন্য কিছু উদ্দেশ্য করিনি, অবশেষে আমরা যখন মক্কার নিকটে পৌঁছলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করলেন : যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই সে যেন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে হালাল হয়ে যায়। আয়িশা রা. বলেন, এরপর কুরবানীর দিন আমাদের কাছে গুরুর গোশত পাঠানো হল। আমি বললাম, এ কি ? বলা হয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের তরফ থেকে কুরবানী করেছেন। ইয়াহইয়া রহ. বলেন, আমি কাসিম রহ.-এর নিকট হাদীসটি উল্লেখ করলে তিনি বললেন, আমরা রহ. হাদীসটি ঠিকভাবেই তোমার নিকট বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৬১৩
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হাওশাব রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সে ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে মাথা কামানোর আগে কুরবানী অথবা অনুরূপ কোন কাজ করেছে। তিনি বললেন : এতে কোন দোষ নেই, এত কোন দোষ নেই।
হাদীস নং ১৬১৪
আহমদ ইবনে ইউনুস রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক বাহাবী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমি কংকর মারার আগেই তাওয়াফে যিয়ারত করে ফেলেছি। তিনি বললেন : কোন দোষ নেই। সাহাবী পুনরায় বললেন, আমি যবেহ করার আগেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেন : কোন দোষ নেই। সাহাবী আবারও বললেন, আমি কংকর মারার আগেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেন : কোন দোষ নেই। আবদুর রহীম ইবনে সুলাইমান রাযী, কাসিম ইবনে ইয়াইইয়া ও আফফান রহ………ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। হাম্মাদ রহ…….জাবির রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন।
হাদীস নং ১৬১৫
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, সন্ধ্যার পর আমি কংকর মেরেছি। তিনি বললেন : কোন দোষ নেই। সে আবার বলল, কুরবানী করার আগেই আমি মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেন : এতে কোন দোষ নেই।
হাদীস নং ১৬১৫
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, সন্ধ্যার পর আমি কংকর মেরেছি। তিনি বললেন : কোন দোষ নেই। সে আবার বলল, কুরবানী করার আগেই আমি মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেন : এতে কোন দোষ নেই।
হাদীস নং ১৬১৫
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, সন্ধ্যার পর আমি কংকর মেরেছি। তিনি বললেন : কোন দোষ নেই। সে আবার বলল, কুরবানী করার আগেই আমি মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেন : এতে কোন দোষ নেই।
হাদীস নং ১৬১৬
আবদান রহ………আবূ মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বাতহা নামক স্থানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম। তিনি বললেন : হজ্জ সমাধা করেছ ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন : কিসের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলে ? আমি বললাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মত ইহরাম বেঁধে আমি তালবিয়া পাঠ করেছি। তিনি বললেন : ভালই করেছ। যাও বায়তুল্লাহর তাওয়াফ কর এবং সাফা-মারওয়ার সায়ী কর। এরপর আমি বনূ কায়স গোত্রের এক মহিলার নিকট এলাম। তিনি আমার মাথার উকুন বেছে দিলেন। তারপর আমি হজ্জের ইহরাম বাঁধলাম। (তখন থেকে) উমর রা.-এর খিলাফতকালে পর্যন্ত এ ভাবেই আমি লোকদের (হজ্জ এবং উমরা সম্পর্কে) ফতোয়া দিতাম। তারপর তাঁর সঙ্গে আমি এ বিষয়ে আলোচনা করলে তিনি বললেন, আমরা যদি আল্লাহর কিতাবকে অনুসরণ করি তাহলে তা তো আমাদের পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়। আর যদি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের অনুসরণ করি তাহলে তো (দেখি যে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর পশু যথাস্থানে পৌঁছার আগে হালাল হননি।
হাদীস নং ১৬১৭
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! লোকদের কি হল যে, তারা উমরা করে হালাল হয়ে গেল অথচ আপনি উমরা থেকে হালাল হননি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি তো আমার মাথায় আঠালো বস্তু লাগিয়েছি এবং পশুর গলায় কিলাদা ঝুলিয়েছি। তাই কুরবানী না করে আমি হালাল হতে পারিনা।
হাদীস নং ১৬১৮
আবুল ইয়ামান রহ…….নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে উমর রা. বলতেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের সময় তাঁর মাথা কামিয়েছিলেন।
হাদীস নং ১৬১৯
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ইয়া আল্লাহ ! মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! যারা মাথার চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ইয়া আল্লাহ ! মাথা মুণ্ডন কারীদের প্রতি রহম করুন। সাহবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। এবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। লায়স রহ. বলেন, আমাকে নাফি রহ. বলেছেন, আল্লাহ মাথামুণ্ডনকারীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, এ কথাটি তিনি একবার অথবা দু’ বার বলেছেন। রাবী বলেন, উবাদুল্লাহ রহ. নাফি রহ. থেকে বর্ণনা করেন, চতুর্থবার বলেছেন : চুল যারা ছোট করেছে তাদের প্রতিও।
হাদীস নং ১৬২০
আয়্যাশ ইবনে ওয়ালীদ রহ……আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ইয়া আল্লাহ ! মাথা মুণ্ডন কারীদের ক্ষমা করুন। সাহাবীগণ বললেন, যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ইয়া আল্লাহ ! মাথা মুণ্ডন কারীদের ক্ষমা করুন। সাহাবীগণ বললেন, যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিনবার বলেন, এরপর বললেন : যারা চুল ছোট করেছে তাদেরকেও।
হাদীস নং ১৬২১
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আসমা রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা কামালেন এবং সাহাবীদের এক দলও। আর অন্য একটি দল চুল ছোট করলেন।
হাদীস নং ১৬২২
আবু আসিম রহ………ইবনে আব্বাস রা. ও মুআবিয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একটি কাঁচি দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চুল ছোট করে দিয়েছিলাম।
হাদীস নং ১৬২৩
মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় এসে সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন, তারা যেন বায়তুল্লাহ এবং সাফা ও মারওয়ার তাওয়াফ করে। এরপর মাথার চুল মুড়িয়ে বা চুল ছেটে হালাল হয়ে যায়।
হাদীস নং ১৬২৪
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে হজ্জ আদায় করে কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত করলাম। এ সময় সাফিয়্যা রা.-এর হায়েয দেখা দিল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে তা ইচ্ছা করছিলেন যা একজন পুরুষ তার স্ত্রীর সঙ্গে ইচ্ছা করে থাকে। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি তো হায়েযা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তবে তো সে আমাদের আটকিয়ে ফেলবে। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সাফিয়্যা রা. তো কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত করে নিয়েছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তবে রওয়ানা হও। কাসিম, উরওয়া ও আসাদ রহ. সূত্রে আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, সাফিয়্যা কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করেছেন।
হাদীস নং ১৬২৫
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যবেহ করা, মাথা কামান ও কংকর মারা এবং (এ কাজগুলো) আগে-পিছে করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন : কোন দোষ নেই।
হাদীস নং ১৬২৬
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিনাতে কুরবানীর দিন জিজ্ঞাসা করা হত, তখন তিনি বলতেন : কোন দোষ নেই। তাকে এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করে বললেন, আমি যবেহ করার আগেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেন : যবেহ করে নাও, এতে দোষ নেই। সাহাবী আরো বললেন, আমি সন্ধ্যার পর কংকর মেরেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : কোন দোষ নেই।
হাদীস নং ১৬২৭
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত যে, বিদায় হজ্জের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাওয়ারীতে) অবস্থান করছিলেন, তখন সাহাবীগণ তাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন : একজন জিজ্ঞাসা করলেন, আমি জানতাম না, তাই কুরবানী করার আগেই (মাথা) কামিয়ে ফেলেছি। তিনি ইরশাদ করলেন : তুমি কুরবানী করে নাও, কোন দোষ নেই। তারপর অপর একজন এসে বললেন, আমি না জেনে কংকর মারার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি ইরশাদ করলেন : কংকর মেরে নাও, কোন দোষ নেই। সেদিন যে কোন কাজ আগে পিছে করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, করে নাও, কোন দোষ নেই।
হাদীস নং ১৬২৮
সাঈদ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত যে, কুরবানীর দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর খুতবা দেওয়ার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তখন এক সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন, আমার ধারণা ছিল অমুক কাজের আগে অমুক কাজ। এরপর অপর এক সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন, আর আমার ধারণা ছিল অমুক কাজের আগে অমুক কাজ, আমি কুরবানী করার আগে মাথা কামিয়ে ফেলেছি। আর কংকর মারার আগে কুরবানী করে ফেলেছি। এরূপ অনেক কথা জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : করে নাও, কোন দোষ নেই। সব কটির জবাবে তিনি এ কথাই বললেন। সেদিন তাকে যা-ই জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, উত্তরে তিনি বলেন, করে নাও, কোন দোষ নেই।
হাদীস নং ১৬২৯
ইসহাক ইবনে মানসুর রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটনীর উপর অবস্থান করছিলেন। তারপর হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। যুহরী রহ. থেকে এ হাদীস বর্ণনায় মামার রহ. সালেহ রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং ১৬৩০
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন লোকদের উদ্দেশ্যে একটি খুতবা দিলেন। তিনি বললেন : হে লোক সকল ! আজকের এ দিনটি কোন দিন ? সকলেই বললেন, সম্মানিত দিন। তারপর তিনি বললেন : এ শহরটি কোন শহর? তাঁরা বললেন, সম্মানিত শহর। তারপর তিনি বললেন : এ মাসটি কোন মাস ? তারা বললেন : সম্মানিত মাস। তিনি বললেন : তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের ইযযত-হুরমত তোমাদের জন্য তেমনি সম্মানিত, যেমন সম্মানিত তোমাদের এ দিনটি, তোমাদের এ শহরে এবং তোমাদের এ মাসে । এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। পরে মাথা উঠিয়ে বললেন : ইয়া আল্লাহ ! আমি ক (আপনার পয়গাম) পৌঁছিয়েছি ? হে আল্লাহ ! আমি কি পৌঁছিয়েছি ? ইবনে আব্বাস রা. বলেন, সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই এ কথাগুলো ছিল তার উম্মতের জন্য অসিয়ত। (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেন) উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছিয়ে দেয়। আমার পরে তোমরা কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না যে, পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করবে।
হাদীস নং ১৬৩১
হাফস ইবনে উমর রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরাফার ময়দানে খুতবা দিতে শুনেছি। ইবনে উয়াইনা রহ. আমর রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় শুবা রহ. -এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং ১৬৩২
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের খুতবা দিলেন এবং বললেন : তোমরা কি জান আজ কোন দিন ? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচাইতে বেশী জানেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হয়ে গেলেন। আমরা ধারণা করলাম সম্ভবত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম পাল্টিয়ে অন্য নামে নামকরণ করবেন। তিনি বললেন : এটা কি কুরবানীর দিন নয় ? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই সব চাইতে বেশী জানেন। তিনি নীরব হয়ে গেলেন। আমরা মনে করতে লাগলাম, হয়ত তিনি এর নাম পাল্টিয়ে অন্য কোন নামে নামকরণ করবেন। তিনি বললেন : এ কি যিলহজ্জের মাস নয় ? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তারপর তিনি বললেন : এটি কোন শহর ? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই সবচাইতে বেশী জানেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হয়ে গেলেন। ফলে আমরা ভাবতে লাগলাম, হয়ত তিনি এর নাম বদলিয়ে অন্য নামকরণ করবেন। তিনি বললেন : এ কি সম্মানিত শহর নয় ? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাদের জান এবং তোমাদের মাল তোমাদের জন্য তোমাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত এমন সম্মানিত যেমন সম্মান রয়েছে তোমাদের এ দিনের, তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের শহরে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেন : শোন ! আমি পৌঁছিয়েছি তোমাদের কাছে ? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ (ইয়া রাসূলাল্লাহ !) তারপর তিনি বললেন : প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে (আমার দাওয়াত) পৌঁছিয়ে দেয়। কেননা, কোন কোন মুবাল্লাগ শ্রবণকারী থেকে কখনো কখনো অধিক সংরক্ষণকারী হয়ে থাকে। তোমরা আমার পরে কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করো না যে, পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করবে।
হাদীস নং ১৬৩৩
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় অবস্থানকালে বললেন : তোমরা কি জান, এটি কোন দিন ? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচাইতে বেশী জানেন। তিনি বললেন : এটি সম্মানিত দিন। (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : তোমরা কি জান এটি কোন শহর ? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচাইতে বেশী জানেন। তিনি বললেন : এটি সম্মানিত শহর। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমরা কি জান এটি কোন মাস ? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন : এটি সম্মানিত মাস। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এ মাসে, এ শহরে, এ দিনটি তোমাদের জন্য যেমন সম্মানিত, তেমনিভাবে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের ইযযত-আবরুকে তোমাদের পরস্পরের জন্য সম্মানিত করে দিয়েছেন। হিশাম ইবনে গায রহ. নাফি রহ.-এর মাধ্যমে ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হজ্জ আদায়কালে কুরবানীর দিন জামারাতের মধ্যবর্তী স্থলে দাঁড়িয়ে এ কথাগুলো বলেছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন যে, এটি হল হজ্জে আকবরের দিন। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে লাগলেন : ইয়া আল্লাহ ! তুমি সাক্ষী থাক। এরপর তিনি সাহাবীগণকে বিদায় জানালেন। তখন সাহাবীগণ বললেন, এ-ই বিদায় হজ্জ।
হাদীস নং ১৬৩৪
মুহাম্মদ ইবনে উবাইদ ইবনে মায়মুন, ইয়াহইয়া ইবনে মূসা ও মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নুমাইর রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, আব্বাস রা. পানি পান করানোর জন্য মিনার রাতগুলোতে মক্কায় অবস্থানের ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি চাইলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। আবু উসামা, উকবা ইবনে খালিদ ও আবু যামরা রহ. এ হাদীস বর্ণনায় মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নুমাইরের অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং ১৬৩৫
আবু নুআইম রহ………ওবারা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কখন কংকর মারব ? তিনি বললেন, তোমার ইমাম যখন কংকর মারবে, তখন তুমিও মারবে। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, আমরা সময়ের অপেক্ষা করতাম, যখন সূর্য ঢলে যেত তখনই আমরা কংকর মারতাম।
হাদীস নং ১৬৩৬
মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ………আবদুর রাহমান ইবনে ইয়াযীদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ রা. বাতনে ওয়াদী থেকে কংকর মারেন। তখন আমি তাকে বললাম, হে আবু আবদুর রহমান ! লোকেরা তো এর উচ্চস্থান থেকে কংকর মারে। তিনি বললেন, সে সত্তার কসম ! যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এটা সে স্থান, যেখানে সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওয়ালীদ রহ……..আমাশ রহ. থেকে এরূপ বর্ণনা করেন।
হাদীস নং ১৬৩৭
হাফস ইবনে উমর রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বড় জামরার কাছে গিয়ে বায়তুল্লাহকে বামে ও মিনাকে ডানে রেখে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন। আর বলেন, যার প্রতি সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে তিনিও এরূপ কংকর মেরেছেন।
হাদীস নং ১৬৩৮
আদম রহ………আবদুর রহমান ইবনে ইয়াযিদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ইবনে মাসউদ রা.-এর সঙ্গে হজ্জ আদায় করলেন। তখন তিনি বায়তুল্লাহকে নিজের বামে রেখে এবং মিনাকে ডানে রেখে বড় জামরাকে সাতটি কংকর মারতে দেখেছেন। এরপর তিনি বললেন, এ তাঁর দাঁড়াবার স্থান যার প্রতি সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে।
হাদীস নং ১৬৩৯
মুসাদ্দাদ রহ……..আমাশ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাজ্জাজকে মিম্বরের উপর এরূপ বলতে শুনেছি, যে সূরার মধ্যে বাকারার উল্লেখ রয়েছে, যে সূরার মধ্যে আলে ইমরানের উল্লেখ রয়েছে এবং যে সূরার মধ্যে নিসা-এর উল্লেখ রয়েছে অর্থাৎ সে সূরা বাকারা, সূরা আলে ইমরান ও সূরা নিসা বলা পছন্দ করত না। বর্ণনাকারী আমাশ রহ. বলেন, এ ব্যাপারটি আমি ইবরাহীম রহ.-কে বললাম। তিনি বললেন, আমার কাছে আবদুর রাহমান ইবনে ইয়াযীদ রা. বর্ণনা করেছেন যে, জামরায়ে আকাবাতে কংকর মারার সময় তিনি ইবনে মাসউদ রা.-এর সঙ্গে ছিলেন। ইবনে মাসউদ রা. বাতনে ওয়াদীতে গাছটির বরাবর এসে জামরাকে সামনে রেখে দাঁড়ালেন এবং তাকবীর সহকারে কংকর মারলেন। এরপর বললেন, সে সত্তার কসম যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, এ স্থানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি, যার উপর নাযিল হয়েছে সূরা বাকারা (অর্থাৎ সূরা বাকারা বলা বৈধ।
হাদীস নং ১৬৪০
উসমান ইবনে আবু শাইবা রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি প্রথম জামরায় সাতটি কংকর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। তারপর সামনে অগ্রসর হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং তাঁর উভয় হাত তুলে দু’আ করতেন। তারপর মধ্যবর্তী জামরায় কংকর মারতেন এবং একটু বাঁ দিকে চলে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাঁর উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। এরপর বাতনে ওয়াদী থেকে জামরায়ে আকাবায় কংকর মারতেন। এর কাছে তিনি বিলম্ব না করে ফিরে আসতেন এবং বলতেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং ১৬৪১
ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ………সালিম ইবনে আবদুল্লাহ রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. নিকটবর্তী জামরায় সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। এরপর সামনে এগিয়ে গিয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন। তারপর মধ্যবর্তী জামরায় অনুরূপভাবে কংকর মারতেন। এরপর বাঁ দিক হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন। তারপর বাতনে ওয়াদী থেকে জামরায়ে আকাবায় কংকর মারতেন এবং এর কাছে তিনি দেরী করতেন না। তিনি বলতেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি অনুরূপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং ১৬৪২
মুহাম্মদ রহ……….যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত যে, মসজিদে মিনার দিক থেকে প্রথমে অবস্থিত জামরায় যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কংকর মারতেন, সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রত্যেকটি কংকর মারার সময় তিনি তাকবীর বলতেন। এরপর সামনে এগিয়ে সামনে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন এবং এখানে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। তারপর দ্বিতীয় জামরায় এসে সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় তিনি তাকবীর বলতেন। তারপর বাঁ দিকে মোড় নিয়ে ওয়াদীর কাছে এসে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন। অবশেষে আকাবার কাছের জামরায় এসে তিনি সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় তাকবীর বলতেন। এরপর ফিরে যেতেন, এখানে বিলম্ব করতেন ন। যুহরী রহ. বলেন, সালিম ইবনে আবদুল্লাহ রহ.-কে তাঁর পিতার মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি। (রাবী বলেন) ইবনে উমর রা.-ও তাই করতেন।
হাদীস নং ১৬৪৩
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার এ দু’ হাত দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুশবু লাগিয়েছি, যখন তিনি ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করেছেন এবং তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে যখন তিনি ইহরাম খুলে হালাল হয়েছেন। এ কথা বলে তিনি তাঁর উভয় হাত প্রসারিত করলেন।
হাদীস নং ১৬৪৪
মুসাদ্দাদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকদের নির্দেশ দেওয়া হয় যে, তাদের শেষ কাজ যেন হয় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ। তবে এ হুকুম ঋতুবতী মহিলাদের জন্য শিথিল করা হয়েছে।
হাদীস নং ১৬৪৫
আসবাগ ইবনে ফারজ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর, আসর, মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করে উপত্যকায় কিছুক্ষণ শুয়ে থাকেন। তারপর সাওয়ারীতে আরোহণ করে বায়তুল্লাহর দিকে এসে তিনি বায়তুল্লাহ দিকে এসে তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন। লায়স রহ………আনাস ইবনে মালিক রা.-এর মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ণনায় আমর ইবেন হারিস রহ-এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং ১৬৪৬
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রা. হায়েযা হলেন এবং পরে এ কথাটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবগত করানো হয়। তখন তিনি বললেন : সে কি আমাদের আটকিয়ে রাখবে ? তারা বললেন, তিনি তো তাওয়াফে যিয়ারত সমাধা করে নিয়েছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে তো আর বাধা নেই।
হাদীস নং ১৬৪৭
আবু নুমান রহ………ইকরিমা রহ. থেকে বর্ণিত যে, তাওয়াফে যিয়ারতের পর হায়েয এসেছে এমন মহিলা সম্পর্কে মদীনাবাসী ইবনে আব্বাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাদের বললেন, সে রওয়ানা হয়ে যাবে। তার বললেন, আমরা আপনার কথা গ্রহণ করব না এবং যায়েদের কথাও বর্জন করব না। তিনি বললেন, তোমরা মদীনায় ফিরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে নেব। তাঁরা মদীনায় এসে জিজ্ঞাসা করলেন। যাদের কাছে তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাদের মধ্যে উম্মে সুলাইম রা.-ও ছিলেন। তিনি তাদের সাফিয়্যা (উম্মুল মু’মিনীন) রা.-এর ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। হাদীসটি খালিদ ও কাতাদা রহ. ইকরিমা রহ. থেকে বর্ণনা করেন।
হাদীস নং ১৬৪৮
মুসলিম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করার পর ঋতুবতী মহিলাকে রওনা হয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ইবনে উমর রা.-কে বলতে শুনেছি যে, সে মহিলা রওয়ানা হতে পারবে না। পরবর্তীতে তাকে এ কথাও বলতে শুনেছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন।
হাদীস নং ১৬৪৯
আবু নুমান রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বের হলাম। হজ্জই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পৌছে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সায়ী করলেন। তবে ইহরাম ফেলেননি। তাঁর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। তাঁর সহধর্মিণী ও সাহাবীগণের মধ্যে যারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁরাও তাওয়াফ করলেন। তবে যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল না, তাঁরা হালাল হয়ে গেলেন। এরপর আয়িশা রা. ঋতুবতী হয়ে পড়লেও আমরা হজ্জের সমুদয় হুকুম-আহকাম আদায় করলাম। এরপর যখন লায়লাতুল-হাসবা অর্থাৎ রওয়ানা হওয়ার রাত হল, তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি ব্যতীত আপনার সকল সাহাবী তো হজ্জ ও উমরা করে ফিরছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমরা যে রাতে এসেছি সে রাতে তুমি কি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করনি ? আমি বললাম, না। তারপর তিনি বললেন : তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে তানঈম (নামক স্থানে) চলে যাও এবং সেখান থেকে উমরার ইহরাম বেঁধে নাও। আর অমুক অমুক স্থানে তোমার সঙ্গে সাক্ষাতের ওয়াদা থাকল। আয়িশা রা. বলেন, এরপর আমি আবদুর রাহমান রা.-এর সঙ্গে তানঈমের দিকে গেলাম এবং উমরার ইহরাম বাঁধলাম। আর সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রা.-এর ঋতু দেখা দিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বিরক্ত হয়ে বলেন। তুমি তো আমাদেরকে আটকিয়ে ফেললে। তুমি কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করছিলে ? তিনি বললেন : হ্যাঁ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে কোন বাঁধা নেই, রওয়ানা হও। (আয়িশা রা. বলেন) আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মিলিত হলাম। এমতাবস্থায় যে, তিনি মক্কার উপরের দিকে উঠছিলেন, আর আমি নিচের দিকে নামছিলাম। অথবা আমি উঠছিলাম আর তিনি নামছিলেন। মুসাদ্দাদ রহ.-এর বর্ণনায় এ হাদীসে (হ্যাঁ)-এর পরিবর্তে ‘লা’ (না) রয়েছে। রাবী জারীর রহ. মনসূর রহ. থেকে এ হাদীস বর্ণনায় মুসাদ্দাদ রহ.-এর অনুরূপ ‘লা’ (না) বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৬৫০
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……..আবদুল আযীয ইবনে রুফায় রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক রা.-কে বললাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মনে রেখেছেন আমন কিছু কথা আমাকে বলুন। তারবিয়ার দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত আদায় করেছেন ? তিনি বললেন, মিনাতে। আমি বললাম, প্রত্যাবর্তনের দিন আসরের সালাত কোথায় আদায় করেছেন ? তিনি বললেন, আবতাহ নামক স্থানে। (তারপর বললেন) তুমি তাই কর যেভাবে তোমার শাসক গণ করেন।
হাদীস নং ১৬৫১
আবদুল মুতাআলী ইবনে তালিব রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর, আসর, মাগরিব ও ইশার সালাত আদায়ের পর মুহাসসাবে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকেন, পরে সাওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহর দিকে গেলেন এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন।
হাদীস নং ১৬৫২
আবু নুআইম রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তা হল একটি মানযিল মাত্র, যেখানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করতেন, যাতে বেরিয়ে যাওয়া সহজতর হয় অর্থাৎ আবতাহ।
হাদীস নং ১৬৫৩
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাসসাবে অবতরণ করা (হজ্জের) কিছুই নয়। এ তো শুধু একটি মানযিল, যেখানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেছিলেন।
হাদীস নং ১৬৫৪
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ……….নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, তিন বলেন, ইবনে উমর রা. দু’ পাহাড়ের মধ্যস্থিত যু-তুয়া নামক স্থানে রাত যাপন করতেন। এরপর মক্কার উচু গিরিপথের দিক থেকে প্রবেশ করতেন। হজ্জ বা উমরা আদায়ের জন্য মক্কা আসলে তিনি মসজিদে হারামের দরজার সামনে ব্যতীত কোথাও উট বসাতেন না। তারপর মসজিদে প্রবেশ করে হজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন এবং সেখান থেকে তাওয়াফ আরম্ভ করতেন এবং সাত চক্কর তাওয়াফ করতেন। তিনবার দ্রুতবেগে আর চারবার স্বাভাবিক গতিতে। এরপর ফিরে এসে দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং নিজের মনযিলে ফিরে যাওয়ার আগে সাফ-মারওয়ার মধ্যে সায়ী করতেন। আর যখন হজ্জ বা উমরা থেকে ফিরতেন তখন যুল-হুলাইফা উপত্যকার বাতহা নামক স্থানে অবতরণ করতেন, যেখানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেছিলেন।
হাদীস নং ১৬৫৫
আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব রহ………..খালিদ ইবনে হারিস রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন উবায়দুল্লাহ রহ.-কে মুহাসসাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি নাফি রহ. থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করলেন যে, তিনি বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর ও ইবনে উমর রা. সেখানে অবতরণ করেছেন। নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, রয়েছে যে, ইবনে উমর রা. মুহাসসাবে যুহর ও আসরের সালাত আদায় করতেন। আমার মনে হচ্ছে, তিনি মাগরিবের কথাও বলেছেন। খালিদ রা. বলেন, ইশা সম্পর্কে আমার কোন সন্দেহ নেই এবং তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নিদ্রা যেতেন। এ কথা ইবনে উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করতেন।
হাদীস নং ১৬৫৬
উসমান ইবনে হায়সাম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলী যুগে যল-মাজায ও উকায লোকদের ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। ইসলাম আসার পর মুসলিমগণ যেন তা অপছন্দ করতে লাগল, অবশেষে এ আয়াত নাযিল হয় : “তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোন পাপ নেই হজ্জের মৌসুমে” (২ : ১৯৮)।
হাদীস নং ১৬৫৭
উমর ইবসে হাফস রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যাবর্তনের দিন সাফিয়্যা রা.-এর ঋতু দেখা দিলে তিনি বললেন, আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাদেরকে আটকিয়ে ফেললাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে ‘আকরা’ ‘হালকা’ বলে বিরক্তি প্রকাশ করলেন এবং বললেন : সে কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করেছে ? বলা হল, হ্যাঁ। তিনি বললেন : তবে চল। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখালি রহ.) অন্য সূত্রে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হজ্জ আদায় করাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা (মক্কায়) আসলাম, তখন আমাদের হালাল হওয়ার নির্দেশ দেন। তারপর প্রত্যাবর্তনের রাত এলে সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রা..-এর ঋতু আরম্ভ হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘হালকা’ ‘আকরা’ বলে বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন : আমার ধারণা, সে তোমাদের আটকিয়েই ফেলবে। তারপর বললেন, তুমি কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করছিলে ? সাফিয়্যা রা. বললেন, হ্যাঁ। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তবে চল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তো (উমরা আদায় করে) হালাল হইনি। তিনি বললেন : তাহলে এখন তুমি তানঈম থেকে উমরা আদায় করে নাও। তারপর তাঁর সঙ্গে তাঁর ভাই (আবদুর রাহমান ইবনে আবু বকর রা.) গেলেন। আয়িশা রা. বলেন, (উমরা আদায় করার পর) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়, যখন তিনি শেষ রাতে (বিদায়ী তাওয়াফের জন্য) যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন : অমুক স্থানে তোমরা সাক্ষাত করবে।
হাদীস নং ১৬৫৮
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এক উমরার পর আর এক উমরা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হল হজ্জে মাবরূরের প্রতিদান।
হাদীস নং ১৬৫৯
আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….ইকরিমা ইবনে খালিদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি ইবনে উমর রা.-কে হজ্জের আগে উমরা আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বললেন, এতে কোন দোষ নেই। ইকরিমা রহ. বলেন, ইবনে উমর রা. বলেছেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের আগে উমরা আদায় করেছেন। ইবরাহীম ইবেন সাদ রা. ইবনে ইসহাক রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, ইকরিমা ইবনে খালিদ রহ. বলেছেন, আমি ইবনে উমর রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম। পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরূপ।
হাদীস নং ১৬৬০
আমর ইবনে আলী রহ……….ইকরিমা ইবনে খালিদ রহ. বলেন, আমি ইবনে উমর রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম। অবশিষ্ট অংশে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ।
হাদীস নং ১৬৬১
কুতাইবা রহ………..মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং উরওয়া ইবনে যুবাইর রহ. মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. আয়িশা রা.-এর হুজরার পাশে বসে আছেন। ইতিমধ্যে কিছু লোক মসজিদে সালাতুদ্দোহা আদায় করতে লাগল। আমরা তাকে এদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বিদআত। এরপর উরওয়া ইবনে যুবাইর রহ. তাকে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার উমরা আদায় করেছেন ? তিনি বললেন, চারবার। এর মধ্যে একটি রজব মাসে। আমরা তাঁর কথা রদ করা পছন্দ করলাম না। আমরা উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা রা.-এর হুজরার ভিতর থেকে তাঁর মিসওয়াক করার আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন উরওয়া রা. বললেন, হে আম্মাজন, হে মুমিনীন ! আবু আবদুর রাহমান কি বলছেন, আপনি কি শুনেননি ? আয়িশা রা. বললেন, তিনি কি বলছেন ? উরওয়া রহ বললেন, তিনি বলছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারবার উমরা আদায় করেছেন। এর মধ্যে একটি রজব মাসে। আয়িশা রা. বললেন, আবু আবদুর রাহমানের প্রতি আল্লাহর রহম করুন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কোন উমরা আদায় করেননি, যে তিনি তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে কখনো উমরা আদায় করেননি।
হাদীস নং ১৬৬২
আবু আসিম রহ………উরওয়া ইবনে যুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা রা. -কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে কখনো উমরা আদায় করেননি।
হাদীস নং ১৬৬৩
হাসসান ইবনে হাসসান রহ……..কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত যে, আমি আনাস রা. -কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার উমরা আদায় করেছেন ? তিনি বললেন, চারবার। তন্মধ্যে হুদায়বিয়ার উমরা যুল-কাদা মাসে যখন মুশরিকরা তাকে মক্কা প্রবেশ করতে বাঁধা দিয়েছিল। পরবর্তী বছরের যুল-কাদা মাসের উমরা, যখন মুশরিকদের সাথে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল জীরানার উমরা, যেখানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল, সম্ভবতঃ হুনায়নের যুদ্ধে বন্টন করেন। আমি বললাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার হজ্জ করেছেন ? তিনি বললেন, একবার।
হাদীস নং ১৬৬৪
আবুল ওয়ালীদ হিশাম ইবনে আবদুল মালিক রহ……….কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত যে, আমি আনাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার উমরা করেছেন যখন তাকে মুশরিকরা ফিরিয়ে দিয়েছিল। তার পরবর্তী বছর ছিল হুদায়বিয়ার (চুক্তি অনুযায়ী) উমরা, (তৃতীয়) উমরা (জীরানা) যুল-কাদা মাসে আর হজ্জের মাসে অপর একটি উমরা করেছেন।
হাদীস নং ১৬৬৫
হুদবা ইবনে খালিদ রহ………হাম্মাম রহ. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি উমরা করেছেন। তন্মধ্যে হজ্জের মাসে যে উমরা করেছেন তা ছাড়া বাকী সব উমরাই যুল-কুদা মাসে করেছেন। অর্থাৎ হুদায়বিয়ার উমরা, পরবর্তী বছরের উমরা, জীরানার উমরা, যেখানে তিনি হুনায়নের মালে গনীমত বন্টন করেছিলেন এবং হজ্জের মাসে আদায়কৃত উমরা।
হাদীস নং ১৬৬৬
আহমদ ইবনে উসমান রহ………আবু ইসহাক রহ. বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মাসরূক, আতা এবং মুজাহিদ রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তাঁরা বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-কাদা মাসে হজ্জের আগে উমরা করেছেন। রাবী বলেন, আমি বারা ইবনে আযিব রা.-কে বলতে শুনেছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ করার আগে দু’বার যুল-কাদা মাসে উমরা করেছেন।
হাদীস নং ১৬৬৭
মুসাদ্দাদ রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনাসারী মহিলাকে বললেন : আমাদের সঙ্গে হজ্জ করতে তোমার বাঁধা কিসের ? ইবনে আব্বাস রা. মহিলার নাম বলেছিলেন কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি। মহিলা বলল, আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল। কিন্তু তাতেই অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছেন। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আচ্ছা, রমযান এলে তখন উমরা করে নিও । কেননা, রমযানের একটি উমরা একটি হজ্জের সমতুল্য। অথবা সেরূপ কোন কথা তিনি বলেছিলেন।
হাদীস নং ১৬৬৮
মুহাম্মদ ইবনে সালাম রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম যখন যিলহজ্জ আগতপ্রায়। তখন তিনি আমাদের বললেন : তোমাদের মধ্যে যে হজ্জের ইহরাম বাঁধতে চায়, সে যেন হজ্জের ইহরাম বেঁধে নেয়। আর যে উমরার ইহরাম বাঁধতে চায় সে যেন উমরার ইহরাম বেঁধে নেয়। আমি যদি কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে না আনতাম তাহলে অবশ্যই আমি উমরার ইহরাম বাঁধতাম । আয়িশা রা. বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ উমরার ইহরাম বাঁধলেন, আবার কেউ হজ্জের । যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, আমি তাদের একজন। আরাফার দিন এল, তখন আমি ঋতুবতী ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তা জানালাম। তিনি বললেন : উমরা ছেড়ে দাও এবং মাথার বেণী খুলে মাথা আচড়িয়ে নাও। তারপর হজ্জের ইহরাম বাঁধ। যখন মুহাসসাবের রাত হল, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সঙ্গে (আমার ভাই) আবদুর রাহমানকে তানঈমে পাঠালেন এবং আমি ছেড়ে দেওয়া উমরার স্থলে নতুনভাবে উমরার ইহরাম বাঁধলাম।
হাদীস নং ১৬৬৯
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আবদুর রাহমান ইবনে আবু বাকর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তাঁর সাওয়ারীর পিঠে আয়িশা রা. -কে বসিয়ে তানঈম থেকে উমরা করানোর নির্দেশ দেন। রাবী সুফিয়ান রহ. একবার বলেন, এ হাদীস আমি আমরের কাছে বহুবার শুনেছি।
হাদীস নং ১৬৭০
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……….জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তালহা রা. ছাড়া কারো সাথে কুরবানীর পশু ছিল না। আর আলী রা. ইয়ামান থেকে এলেন এবং তাঁর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। তিনি বলেছিলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়ের ইহরাম বেঁধেছেন, আমিও তার ইহরাম বাঁধলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ইহরামকে উমরায় পরিণত করতে এবং তাওয়াফ করে এরপরে মাথার চুল ছোট করে হালাল হয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন। তবে যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু রয়েছে। (তারা হালাল হবে না)। তাঁরা বললেন, আমরা মীনার দিকে রওয়ানা হব এমতাবস্থায় আমাদের কেউ স্ত্রীর সাথে সহবাস করে এসেছে। এ সংবাদ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌছলে তিনি বললেন : যদি আমি এ কুরবানীর পশু আমার সঙ্গে না থাকত অবশ্যই আমি হালাল হয়ে যেতাম। আর (একবার) আয়িশা রা.-এর ঋতু দেখা দিল। তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া হজ্জের সব কাজই সম্পন্ন করে নিলেন। রাবী বলেন, এরপর যখন তিনি পাক হলেন এবং তাওয়াফ করলেন, তখন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনারা তো হজ্জ এবং উমরা উভয়টি পালন করে ফিরেছেন, আমি কি শুধু হজ্জ করেই ফিরব? তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রাহমান ইবনে আবু বকর রা.-কে নির্দেশ দিলেন তাকে সঙ্গে নিয়ে তানঈমে যায়। তারপর যিলহজ্জ মাসেই হজ্জ আদায়ের পর আয়িশা রা. উমরা আদায় করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জামরাতুল আকাবায় কংকর মারছিলেন তখন সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জুশুম রা.-এর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এ হজ্জের মাসে উমরা আদায় করা কি আপনাদের জন্য খাস ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : না, এতো চিরদিনের জন্য।
হাদীস নং ১৬৭১
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন যিলহজ্জ মাস আগত প্রায়, তখন আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওয়ানা দিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যে ব্যক্তি উমরার ইহরাম বাঁধতে চায়, সে যেন উমরার ইহরাম বেঁধে নেয়। আমি যদি কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে না আনতাম তাহলে অবশ্যই আমি উমরার ইহরাম বাঁধতাম। তাই তাদের কেউ উমরার ইহরাম বাঁধলেন আর কেউ হজ্জের ইহরাম বাঁধলেন। যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, আমি তাদের মধ্যে একজন। এরপর মক্কা পৌছার আগেই আমার ঋতু দেখা দিল। আরাফার দিবস চলে এল, আর আমি ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম। তারপর আমার এ অসুবিধার কথা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বললাম। তিনি বললেন : উমরা ছেড়ে দাও। আর বেণী খুলে মাথা আচড়িয়ে নাও। তারপর হজ্জের ইহরাম বেঁধে নাও। আমি তাই করলাম। মুহাসসাবের রাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে আবদুর রামহমানকে তানঈম পাঠালেন। (রাবী বলেন) আবদুর রাহমান রা. তাকে সাওয়ারীতে নিজের পেছনে বসিয়ে নিলেন। তারপর আয়িশা রা. আগের উমরার স্থলে নতুন উমরার ইহরাম বাঁধলেন। এমনিভাবেই আল্লাহ তা’আলা তাঁর হজ্জ এবং উমরা উভয়টিই পুরা করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এর কোন ক্ষেত্রেই কুরবানী বা সাদকা দিতে কিংবা সিয়াম পালন করতে হয়নি।
হাদীস নং ১৬৭২
মুসাদ্দাদ রহ……….আসওয়াদ রহ. থেকে বর্ণিত যে, আয়িশা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সাহাবীগণ ফিরেছেন দুটি নুসুক (অর্থাৎ হজ্জ এবং উমরা) পালন করে আর আমি ফিরছি একটি নুসুক (শুধু হজ্জ) আদায় করে। তাকে বলা হল, অপেক্ষা কর। পরে যখন তুমি পবিত্র হবে তখন তানঈমে গিয়ে ইহরাম বাঁধবে এরপর অমুক স্থানে আমাদের কাছে আসবে। এ উমরা (এর সাওয়াব) হবে তোমার খরচ বা কষ্ট অনুপাতে।
হাদীস নং ১৬৭৩
আবু নাআইম রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হজ্জের ইহরাম বেঁধে বের হলাম, হজ্জের মাসে এবং হজ্জের অনুষ্ঠানাদি পালনের উদ্দেশ্যে। যখন সারিফ নামক স্থানে অবতরণ করলাম, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাগণকে বললেন : যার সাথে কুরবানীর পশু নেই এবং সে এই ইহরামকে উমরায় পরিণত করতে চায়, সে যেন তা করে নেয় (অর্থাৎ উমরা করে হালাল হয়)। আর যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার আছে সে এরূপ করবে না। (অর্থাৎ হালাল হতে পারবে না)। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কয়েকজন সমর্থ সাহাবীর নিকট কুরবানীর জানোয়ার ছিল তাদের উমরা হয়নি। (আয়িশা রা. বললেন) আমি কাঁদছিলাম, এমতাবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বললেন : তুমি কাঁদছ কেন ? আমি বললাম, আপনি আপনার সাহাবীগণকে যা বলেছেন, আমি তা শুনেছি। আমি তো উমরা থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমার কি অবস্থা ? আমি বললাম, আমি তো সালাত আদায় করছি না। তিনি বললেন : এতে তোমার ক্ষতি হবে না। তুমি তো একজন আদম কন্যাই। তাদের অদৃষ্টে যা লেখা ছিল তোমার জন্যও তা লিখিত হয়েছে। সুতরাং তুমি তোমার হজ্জ আদায় কর। সম্ভবত : আল্লাহ তা’আলা তোমাকে উমরাও দান করবেন। আয়িশা রা. বলেন, আমি এ অবস্থায়ই থেকে গেলাম এবং পরে মিনা থেকে প্রত্যাবর্তন করে মুহাসসাবে অবতরণ করলাম। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রাহমান রা.-কে ডেকে বললেন : তুমি তোমার বোনকে হারামের বাইরে নিয়ে যাও। সেখান থেকে যেন সে উমরার ইহরাম বাঁধে । তারপর তোমরা তাওয়াফ করে নিবে। আমি তোমাদের জন্য এখানে অপেক্ষা করব। আমরা মধ্যরাত এলাম। তিনি বললেন : তোমরা কি তাওয়াফ সমাধা করেছ ? আমি বললাম, হ্যাঁ। এ সময় তিনি সাহাবীগণকে রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দিলেন। তাই লোকজন এবং যারা ফজরের পূর্বে তাওয়াফ করেছিলেন তাঁরা রওয়ানা হলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হলেন।
হাদীস নং ১৬৭৪
আবু নুআইম রহ……..ইয়ালা ইবনে উমায়্যা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিররানাতে ছিলেন। এ সময় জুব্বা পরিহিত একব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললেন, আপনি উমরাতে আমাকে কি কাজ করার নির্দেশ দেন ? লোকটির জুব্বাতে খালূক বা হলদে রঙের দাগ ছিল। এ সময় আল্লাহ তা’আলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর ওহী নাযিল করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করে দেওয়া হল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি উমর রা.-কে বললাম, আল্লাহ তাঁর নবীর প্রতি ওহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে চাই। উমর রা. বললেন, এসো, আল্লাহ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ওহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় তুমি কি তাকে দেখতে আগ্রহী ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তারপর উমর রা. কাপড়ের একটি কোণ উচু করে ধরলেন। আমি তাঁর দিকে নজর করলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আওয়াজ করছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলছিলেন, উটের আওয়াজের মত আওয়াজ। এ অবস্থা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দূরীভূত হলে তিনি বললেন : উমরা সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায় ? তিনি বললেন : তুমি তোমার থেকে জুব্বাটি খুলে ফেল, খালূকের চিহ্ন ধুয়ে ফেল এবং হলদে রং পরিষ্কার করে নাও। আর তোমার হজ্জে যা করেছ উমরাতে তুমি তাই করবে।
হাদীস নং ১৬৭৫
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বাল্যকালে একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা.-কে বললাম, আল্লাহর বাণী : সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবাগৃহের হজ্জ কিংবা উমরা সম্পন্ন করে এ দুটির মধ্যে সায়ী করে, তার কোন পাপ নেই। (২ : ১৫৮) তাই সাফা-মারওয়ার সায়ী না করা আমি কারো পক্ষে অপরাধ মনে করি না। আয়িশা রা. বলেন, বিষয়টি এমন নয়। কেননা, তুমি যেমন বলছ, ব্যাপারটি তেমন হলে আয়াতটি অবশ্যই এমন হত অর্থাৎ এ দুটির মাঝে তাওয়াফ না করলে কোন পাপ নেই। এ আয়াত তো আনসাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। কেননা তারা মানাতের জন্য ইহরাম বাঁধত। আর মানাত কুদায়দের সামনে ছিল। তাই আনসাররা সাফা-মারওয়া তাওয়াফ করতে দ্বিধাবোধ করত। এরপর ইসলামের আবির্ভাবের পর তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন : সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবাগৃহের হজ্জ কিংবা উমরা সম্পন্ন করে এ দুটির মধ্যে সায়ী করে, তার কোন পাপ নেই। সুফিয়ান ও আবু মুআবিয়া রহ. আবু মুআবিয়া রা. হিশাম রহ. থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ না করলে আল্লাহ কারো হজ্জ এবং উমরাকে পূর্ণাঙ্গ গণ্য করেন না।
হাদীস নং ১৬৭৬
ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে উমরা করলাম। তিনি মক্কা প্রবেশ করে তাওয়াফ করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে তাওয়াফ করলাম। এরপর তিনি সাফা-মারওয়ায় সায়ী করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে সায়ী করলাম। আর আমরা তাকে মক্কাবাসীদের থেকে লুকিয়ে রাখছিলাম যাতে কোন মুশরিক তাঁর প্রতি কোন কিছু নিক্ষেপ করতে না পারে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার এক সাথী তাকে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কাবা শরীফে প্রবেশ করেছিলেন ? তিনি বললেন, না। প্রশ্নকারী তাকে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা রা. সম্বন্ধে কি বলেছেন ? তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : খাদীজাকে বেহেশতের মাঝে একটি মোতি দিয়ে নির্মিত এমন একটি ঘরের সুসংবাদ দাও যেখানে কোন শোরগোল থাকবে না এবং কোন প্রকার কষ্ট ক্লেশ থাকবে না।
হাদীস নং ১৬৭৭
হুমায়দী রহ………আমর ইবনে দীনার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমরার মাঝে বায়তুল্লাহর তাওয়াফের পর সাফা-মারওয়ার তাওয়াফ না করে যে স্ত্রীর নিকট গমন করে, এমন ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা ইবনে উমর রা.-কে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) এসে বায়তুল্লাহর সাতবার তাওয়াফ করে মাকামে ইবরাহীমের পাশে দু’ রাকআত সালাত আদায় করেছেন। এরপর সাতবার সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করেছেন। আর তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ তো রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মাঝেই। (রাবী) আমর ইবনে দীনার রহ. বলেন, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা.-কেও আমরা জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেছেন, সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ না করা কেউ তার স্ত্রীর নিকট অবশ্যই যাবে না।
হাদীস নং ১৬৭৮
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..আবু মূসা আল-আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার বাতহায় অবতরণ করলে আমি তাঁর নিকট গেলাম। তিনি বললেন, তুমি কি হজ্জ করেছ ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন : তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছিলে ? আমি বললাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইহরামের মত আমিও ইহরামের তালবিয়া পাঠ করেছি। তিনি বলেলেন : ভাল করেছ। এখন বায়তুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার সায়ী করে হালাল হয়ে যাও। তারপর আমি বায়তুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার সায়ী করে কায়স গোত্রের এক মহিলার কাছে গেলাম। সে আমার মাথার উকুন বেছে দিল। এরপর আমি হজ্জের ইহরাম বাঁধলাম এবং উমর রা.-এর খিলাফত পর্যন্ত আমি এভাবেই ফতোয়া দিতে থাকি। উমর রা. বললেন, যদি আমরা আল্লাহর কিতাব গ্রহণ করি তা তো আমাদের পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়। আর যদি আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী গ্রহণ করি তাহলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর জানোয়ার তার স্থানে পৌছার পূর্ব পর্যন্ত হালাল হননি।
হাদীস নং ১৬৭৯
আহমদ রহ…….আবুল আসওয়াদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর রা.-এর কন্যা আসমা রা.-এর আযাদকৃত গোলাম আবদুল্লাহ রা. তাঁর বর্ণনা করেছেন, যখনই আসমা রা. হাজ্জুন এলাকা দিয়ে গমন করতেন তখনই তাকে বলতে শুনেছেন (সাল্লাল্লাহু আলা রাসূলিহী) আল্লাহ তাঁর রাসূলের প্রতি রহমত নাযিল করুন, এ স্থানে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে অবতরণ করেছিলাম। তখন আমাদের বোঝা ছিল খুব অল্প, যানবাহন ছিল একেবারে নগণ্য এবং সম্বল ছিল খুবই কম। আমি, আমার বোন আয়িশা রা. যুবাইর রা. এবং অমুক অমুক উমরা আদায় করলাম। তারপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে আমরা সকলেই হালাল হয়ে গেলাম এবং সন্ধ্যাকালে হজ্জের ইহরাম বাঁধলাম।
হাদীস নং ১৬৮০
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন জিহাদ, বা হজ্জ অথবা উমরা থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন তখন তিনি প্রত্যেক উচু ভূমিতে তিনবার তাকবীর বলতেন এবং পরে বলতেন : আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। সর্বময় ক্ষমতা এবং সকল প্রশংসা কেবল তাঁরই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী ও তাওবাকারী, ইবাদতকারী, আমাদের প্রভূর উদ্দেশ্যে সিজদাকারী ও প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, নিজ বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সকল শত্রু দলকে পরাজিত করেছেন।
হাদীস নং ১৬৮১
মুআল্লা ইবনে আসাদ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় এলে আবদুল মুত্তালিব গোত্রীয় কয়েকজন তরুণ তাকে খোশ-আমদেদ জানায়। তিনি একজনকে তাঁর সাওয়ারীর সামনে ও অন্যজনকে পেছনে তুলে নেন।
হাদীস নং ১৬৮২
আহমদ ইবনে হাজ্জজ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উদ্দেশ্যে বের হয়ে মসজিদে শাজারাতে সালাত আদায় করতেন। আর যখন ফিরতেন, যুল-হুলাইফার বাতনুল ওয়াদীতে সালাত আদায় করতেন এবং এখানে সকাল পর্যন্ত রাত যাপন করতেন।
হাদীস নং ১৬৮৩
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে কখনো পরিবারের কাছে প্রবেশ করতেন না। তিনি সকালে কিংবা বিকালে ছাড়া পরিবারের কাছে প্রবেশ করতেন না।
হাদীস নং ১৬৮৪
মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ……..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা পরিবারের কাছে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীস নং ১৬৮৫
সাঈদ ইবনে মারইয়াম রহ……..হুমাইদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস রা.-কে বলতে শুনেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে যখন মদীনার উচু রাস্তাগুলো দেখতেন তখন তিনি তাঁর উটনী দ্রুতগতিতে চালাতেন আর বাহন অন্য জানোয়ার হলে তিনি তাকে তাড়া দিতেন।
হাদীস নং ১৬৮৬
কুতাইবা রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (উচু রাস্তা) এর পরিবর্তে (দেয়ালগুলো) শব্দ বলেছেন। হারিস ইবনে উমরার রহ. ইসমাঈল রহ.-এর অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, হারিস ইবনে উমায়র হুমায়দ রহ. সূত্রে তাঁর বর্ণনায় আরো বাড়িয়ে বলেছেন, মদীনার মুহব্বাতে তিনি বাহনকে দ্রুত চালিত করতেন।
হাদীস নং ১৬৮৭
আবুল ওয়ালিদ রহ……..আবু ইসহাক রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বারা রা.-কে বলতে শুনেছি, এ আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। হজ্জ করে এসে আনসারগণ তাদের বাড়িতে সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেন। এক আনসার ফিরে এসে তার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে তাকে এ জন্য লজ্জা দেওয়া হয়। তখনই নাযিল হয় : পশ্চাৎ দিক দিয়ে তোমাদের গৃহ-প্রবেশ করাতে কোন কল্যাণ নেই। বরং কল্যাণ আছে যে তাকওয়া অবলম্বন করে। সুতরাং তোমরা (সামনের) দরজা দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর। (২ : ১৮৯)
হাদীস নং ১৬৮৮
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সফর আযাবের অংশ বিশেষ। তা তোমাদের যথাসময় পানাহার ও নিদ্রায় বাঁধা সৃষ্টি করে। তাই প্রত্যেকেই যেন নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে অবিলম্বে আপন পরিজনের কাছে ফিরে যায়।
হাদীস নং ১৬৮৯
সাঈদ ইবনে আবু মারইয়াম রহ………আসলাম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কার পথে আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর সঙ্গে ছিলাম। সাফিয়্যা বিনতে আবু উবায়দ রা.-এর গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সংবাদ তাঁর কাছে পৌঁছল। তখন তিনি গতি বাড়িয়ে দিলেন। (পশ্চিম আকোশের) লালিমা অদৃশ্য হবার পর সাওয়ারী থেকে নেমে মাগরিব ও ইশা একসাথে আদায় করেন। তারপর বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি, সফরে দ্রুত চলার প্রয়োজন হলে তিনি মাগরিবকে বিলম্ব করে মাগরিব ও ইশা একসাথে আদায় করতেন।
হাদীস নং ১৬৯০
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, হাঙ্গামা চলাকালে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. উমরার নিয়ত করে মক্কায় রওয়ানা হওয়ার পর বললেন, বায়তুল্লাহর পথে বাঁধাগ্রস্ত হলে, তাই করব যা করেছিলাম আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে । তাই তিনি উমরার ইহরাম বাঁধলেন। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও হুদায়বিয়ার বছর উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন।
হাদীস নং ১৬৯১
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আসমা রহ………নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ও সালিম ইবনে আবদুল্লাহ রহ. উভয়ই তাকে সংবাদ দিয়েছেন, যে বছর হাজ্জাজ (ইবনে ইউসুফ) বাহিনী ইবনে যুবায়র রা.-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, সে সময়ে তাঁরা উভয়ে কয়েকদিন পর্যন্ত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে বুঝালেন। তাঁরা বললেন, এ বছর হজ্জ না করলে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। আমরা আশংকা করিছি, আপনার ও বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা সৃষি।ট হতে পারে। তিনি বললেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওয়ানা হয়েছিলাম। কিন্তু বায়তুল্লাহর পথে কাফির কুরাইশরা আমাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়াল । তাই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর পশু যবেহ করে মাথা মুড়িয়ে নিয়েছিলেন। এখন আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আমার নিজের জন্য উমরা ওয়াজিব করে নিয়েছি। আল্লাহ চাহেন তো আমি এখন রওয়ানা হয়ে যাব। যদি আমার এবং বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা না আসে তাহলে আমি তাওয়াফ করে নিব। কিন্তু যদি আমার এবং বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা সৃষ্টি করা হয় তাহলে আমি তখনই সেরূপ করব যেরূপ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন আর আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তারপর তিনি যুল-হুলাইফা থেকে উমরার ইহরাম বেঁধে কিছুক্ষণ চললেন, এরপরে বললেন, হজ্জ এবং উমরার ব্যাপার তো একই। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, নিশ্চয়ই আমি আমার উমরার সাথে হজ্জও নিজের জন্য ওয়াজিব করে নিলাম। তাই তিনি হজ্জ ও উমরা কোনটি থেকেই হালাল হননি। অবশেষে কুরবানীর দিন কুরবানী করলেন এবং হালাল হলেন। তিনি বসতেন, আমরা হালাল হব না যতক্ষণ পর্যন্ত না মক্কায় প্রবেশ করে একটি তাওয়াফ করে নিই।
হাদীস নং ১৬৯২
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ রা.-এর কোন এক ছেলে তাঁর পিতাকে বললেন, যদি আপনি এ বছর বাড়িতে অবস্থান করতেন (তাহলে আপনার জন্য কতই না কল্যাণকর হত)।
হাদীস নং ১৬৯৩
মুহাম্মদ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হুদায়বিয়াতে বাঁধাপ্রাপ্ত হন। তাই তিনি মাথা কামিয়ে নেন। স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হন এবং প্রেরিত জানোয়ার কুরবানী করেন। অবশেষে পরবর্তী বছর উমরা আদায় করেন।
হাদীস নং ১৬৯৪
আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রহ…….সালিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে উমর রা. বলতেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নতই কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় ? তোমাদের কেউ যদি হজ্জ করতে বাঁধাপ্রাপ্ত হয় সে যেন (উমরার জন্য) বায়তুল্লাহর ও সাফা-মারওয়ার মধ্যে তাওয়াফ করে সব কিছু থেকে হালাল হয়ে যায়। অবশেষে পরবর্তী বছর হজ্জ আদায় করে নেয়। তখন সে কুরবানী করবে আর যদি কুরবানী দিতে না পারে তবে সিয়াম পালন করবে। আবদুল্লাহ রহ……..ইবেন উমর রা. থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ।
হাদীস নং ১৬৯৫
মাহমুদ রহ………মিসওয়ার রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা কামানোর আগেই কুরবানী করেন এবং সাহাবাদের অনুরূপ করার নির্দেশ দেন।
হাদীস নং ১৬৯৬
মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহীম রহ……..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ এবং সালিম রহ. উভয়ই আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে উমরার নিয়ত করে আমরা রওয়ানা হলে যখন কুরাইশের কাফিররা বায়তুল্লাহর অনতিদূরে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উট কুরবানী করেন এবং মাথা কামিয়ে ফেলেন।
হাদীস নং ১৬৯৭
ইসমাঈল রহ……..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, (মক্কা মুকাররামায়) গোলযোগ চলাকালে উমরার নিয়ত করে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. যখন মক্কার দিকে রওয়ানা হলেন, তখন বললেন, বায়তুল্লাহ থেকে যদি আমি বাঁধাপ্রাপ্ত হই তাহলে তাই করব যা করেছিলাম আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে। তাই তিনি উমরার ইহরাম বাঁধলেন। কারণ, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও হুদায়বিয়ার বছর উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন। তারপর আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. নিজের ব্যাপারে ভেবেচিন্তে বললেন, উভয়টিই (হজ্জ ও উমরা) এক রকম। এরপর তিনি তাঁর সাথীদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, উভয়টি তো একই রকম। আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, আমি আমার উপর উমরার সাথে হজ্জকে ওয়াজিব করে নিলাম। তিনি উভয়টির জন্য একই তাওয়াফ করলেন এবং এটাই তাঁর পক্ষ থেকে যথেষ্ট মনে করেন, আর তিনি কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়েছিলেন।
হাদীস নং ১৬৯৮
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..কাব ইবনে উজরা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বোধ হয় তোমার এই কীটেরা (উকুন) তোমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মাথা মাথা মুড়িয়ে ফেল এবং তিন দিন সিয়াম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকিনকে আহার করাও কিংবা একটি বকরী কুরবানী কর।
হাদীস নং ১৬৯৯
আবু নুআইম রহ………কাব ইবনে উজরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে দাঁড়ালেন। এ সময় আমার মাথা থেকে উকুন ঝরে পড়ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন : তোমার এই কীটগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে ? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন : মাথা মুড়িয়ে নাও অথবা বললেন, মুড়িয়ে নাও। কাব ইবনে উজরা রা. বলেন, আমার সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে এই আয়াতটি : তোমাদের মধ্যে কেউ যদি পীড়িত হয় কিংবা মাথায় ক্লেশ থাকে……..(২ : ১৯৬)। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি তিনদিন সিয়াম পালন কর কিংবা ফরক (তিন সা’ পরিমাণ) ছয়জন মিসকীনের মধ্যে সাদকা কর, অথবা কুরবানী কর যা তোমার জন্য সহজসাধ্য।
হাদীস নং ১৭০০
আবুল ওয়ালীদ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে মাকিল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কাব ইবনে উজরা রা.-এর পাশে বসে তাকে ফিদয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এ আয়াত বিশেষভাবে আমার সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। তবে এ হুকুম সাধারণভাবে তোমাদের সকলের জন্যই । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল। তখন আমার চেহারায় উকুন বেয়ে পড়ছে। তিনি বললেন : তোমার কষ্ট বা পীড়া যে পর্যায়ে পৌছেছে দেখতে পাচ্ছি, আমার তো আগে এ ধারণা ছিল না। তুমি কি একটি বকরীর ব্যবস্থা করতে পারবে ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন : তাহলে তুমি তিন দিন সিয়াম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে অর্ধ সা’ করে খাওয়াও।
হাদীস নং ১৭০১
ইসহাক রহ………কাব ইবনে উজরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চেহারায় উকুন ঝরে পড়তে দেখে তাকে বললেন : এই কীটগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মাথা কামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ায় ছিলেন। এখানেই তাদের হালাল হয়ে যেতে হবে এ বিষয়টি তখনও তাদের কাছে স্পষ্ট হয়নি। তাঁরা মক্কায় প্রবেশের আশা করছিলাম। তখন আল্লাহ তা’আলা ফিদয়ার হুকুম নাযিল করলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এক ফরক খাদ্যশস্য ছয়জন মিসকীনের মধ্যে দিতে কিংবা একটি বকরী কুরবানী করতে অথবা তিনদিন সিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন। মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ…….কাব ইবনে উজরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এমতাবস্থায় দেখলেন যে, তাঁর চেহারার উপর উকুন পড়ছে। এর বাকি অংশ উপরের হাদীসের অনুরূপ।
হাদীস নং ১৭০২
সুলাইমান ইবনে হারব রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এ ঘরের হজ্জ আদায় করল এবং স্ত্রী সহবাস করল না এবং অন্যায় আচরণও করল না, সে প্রত্যাবর্তন করবে মাতৃগর্ভে থেকে সদ্য প্রসূত শিশুর মত হয়ে।
হাদীস নং ১৭০৩
মুহাম্মদ ইনবে ইউসুফ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি এ ঘরের হজ্জ আদায় করল, অশ্লীলতায় লিপ্ত না এবং আল্লাহর নাফরমানী করল না, সে মাতৃগর্ভ থেকে সদ্য প্রসূত শিশুর মত হয়ে (হজ্জ থেকে)) প্রত্যাবর্তন করবে।
হাদীস ১৭০৪
Missing
হাদীস নং ১৭০৫
সাঈদ ইবেন রাবী রহ……….আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার বছর আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যাত্রা করলাম। তাঁর সকল সাহাবীই ইহরাম বেঁধেছিলেন কিন্তু আমি ইহরাম বাঁধিনি। এরপর আমাদেরকে গায়কা নামক স্থানে শত্রুরা উপস্থিতি সম্পর্কে খবর দেয়া হলে আমরা শত্রুর অভিমুখে রওয়ানা হলাম। আমার সঙ্গী সাহাবীগণ একটি বন্য গাধা দেখতে পেয়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলেন। আমি সেদিকে তাকাতেই তাকে দেখে ফেললাম। সাথে সাথে আমি ঘোড়ার পিঠে চড়ে বর্শা দিয়ে গাধাটিকে আঘাত করে ঐ জায়গাতেই ফেলে দিলাম। তারপর তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করলে তাঁরা সকলেই সাহায্য করতে অসম্মতি প্রকাশ করলেন। তবে আমরা সবাই এর গোশত খেলাম। এরপর গিয়ে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মিলিত হলাম। (এর পূর্বে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকাবোধ করছিলাম। তাই আমি আমার ঘোড়াটি কখনো দ্রুতগতিতে আবার কখনো স্বাভাবিক গতিতে চালিয়ে যাচ্ছিলাম। মধ্যরাতে গিয়ে গিফার গোত্রীয় এক লোকের সাথে সাক্ষাত হলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কোথায় রেখে এসেছেন ? তিনি বললেন, আমি তাহিন নামক স্থানে তাকে রেখে এসেছি। তিনি এখন সুকয়া নামক স্থানে বিশ্রাম করছেন। এরপর আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মিলিত হলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ! আপনার সাহাবীগণ আপনার প্রতি সালাম পাঠিয়েছেন এবং রহমতের দু’আ করেছেন। শত্রুরা আপনার থেকে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে এ ভয়ে তাঁরা আতংকিত হয়ে পড়েছিলেন। সুতরাং আপনি তাদের জন্য অপেক্ষ করুন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই করলেন। অতঃপর আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা একটি জংলী গাধা শিকার করেছি। এর অবশিষ্ট কিছু অংশ এখনও আমাদের নিকট আছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে বললেন : তোমরা খাও। অথচ তাঁরা ছিলেন ইহরাম অবস্থায়।
হাদীস নং ১৭০৬
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ. ও আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আবু কাতাদা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনা থেকে তিন মারহালা দূরে অবস্থিত কাহা নামক স্থানে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমাদের কেউ ইহরামধারী ছিলেন আর কেউ ছিলেন ইহরামবিহীন। এ সময় আমি আমার সাথী সাহাবীদেরকে দেখলাম তাঁরা একে অন্যকে কিছু দেখাচ্ছেন। আমি তাকাতেই একটি জংগী গাধা দেখতে পেলাম। (রাবী বলেন) এ সময় তার চাবুকটি পড়ের গেল। (তিনি আনিয়ে দেওয়ার কথা বললে) সকলেই বললেন, আমরা মুহরিম। তাই এ কাজে আমরা তোমাকে সাহায্য করতে পারব না। অবশেষে আমি নিজেই তা উঠিয়ে নিলাম এরপর টিলার পিছনদিক থেকে গাধাটির কাছে এসে তা শিকার করে সাহবীদের কাছে নিয়ে আসলাম। তাদের কেউ বললেন, খাও আবার কেউ বললেন, খেয়ো না। সুতরাং গাধাটি আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট নিয়ে আসলাম । তিনি আমাদের সকলের আগে ছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন : খাও, এতো হালাল। সুফিয়ান রহ. বলেন, আমাদেরকে আমর ইবনে দীনার বললেন, তোমরা সালিহ রহ. এবং অন্যান্যের নিকট গিয়ে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা কর। তিনি আমাদের এখানে আগমন করেছিলেন।
হাদীস নং ১৭০৭
মূসা ইবেন ইসমাঈল রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তাকে তাঁর পিতা বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জে যাত্রা করলে তাঁরাও সকলে যাত্রা করলেন। তাদের থেকে একটি দলকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য পথে পাঠিয়ে দেন। তাদের মধ্যে আবু কাতাদা রা.-ও ছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমরা সমুদ্র তীরের রাস্তা ধরে অগ্রসর হবে আমাদের পরস্পর সাক্ষাত হওয়া পর্যন্ত। তাই তাঁরা সকলেই সমুদ্র তীরের পথ ধরে চলতে থাকেন। ফিরার পথে তাঁরা সবাই ইহরাম বাঁধলেন কিন্তু আবু কাতাদা রা. ইহরাম বাঁধলেন না। পথ চলতে চলতে হঠাৎ তাঁরা কতগুলো বন্য গাধা দেখতে পেলেন। আবু কাতাদা রা. গাধাগুলোর উপর হামলা করে একটি মাদী গাধাকে হত্যা করে ফেললেন। এরপর এক স্থানে অবতরণ করে তাঁরা সকলেই এর গোশত খেলেন। তারপর বললেন, আমরা তো মুহরিম, এ অবস্থায় আমরা কি শিকার জন্তুর গোশত খেতে পারি ? তাই আমরা গাধাটির অবশিষ্ট গোশত উঠিয়ে নিলাম। তাঁরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌছে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা ইহরাম বেঁধেছিলাম কিন্তু আবু কাতাদা রা. ইহরাম বাঁধেননি। এ সময় আমরা কতগুলো বন্য গাধা দেখতে পেলাম। আবু কাতাদা রা. এগুলোর উপর আক্রমণ করে একটি মাদী গাধা হত্যা করে ফেললেন । এক স্থানে অবতরণ করে আমরা সকলেই এর গোশত খেয়ে নিই। এরপর বললাম, আমরা কি শিকারকৃত জানোয়ারের গোশত খেতে পারি ? এখন আমরা এর অবশিষ্ট গোশত নিয়ে এসেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাদের কেউ কি এর উপর আক্রমণ করতে তাকে আদেশ বা ইশারা করেছে ? তাঁরা বললেন, না, আমরা তা করিনি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে বাকী গোশত তোমরা খেয়ে নাও।
হাদীস নং ১৭০৮
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..সাব ইবনে জাসসামা লায়সী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আবওয়া বা ওয়াদ্দান নামক স্থানে অবস্থানকালে তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে একটি জংলী গাধা হাদিয়া দিলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চেহারায় মলিনতা লক্ষ্য করে বললেন : তা আমি কখনো তোমার নিকট ফিরিয়ে দিতাম না যদি আমি মুহরিম না হতাম।
হাদীস নং ১৭০৯
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করা মুহরিমের জন্য দূষণীয় নয়। আবদুল্লাহ ইবনে দীনার ও মুসাদ্দাদ রহ……..ইবনে উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীগণের একজন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, মুহরিম ব্যক্তি (নির্দিষ্ট) প্রাণী হত্যা করতে পারবে । আসবাগ ইবনে ফারাজ রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর সুত্রে হাফসা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করাতে তার কোন দোষ নেই। (যেমন) কাক, চিল, ইঁদুর, বিচ্ছু ও পাগলা কুকুর।
হাদীস নং ১৭১০
ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পাঁচ প্রকার প্রাণী এত ক্ষতিকর যে, এগুলোকে হারম শরীফেও হত্যা করা যেতে পারে। (যেমন) কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর ও পাগলা কুকুর।
হাদীস নং ১৭১১
উমর ইবেন হাফস ইবেন গিয়াস রহ……..আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মিনাতে পাহাড়ের কোন এক গুহায় আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। এমতাবস্থায় নাযিল হল তাঁর উপর সূরা ওয়াল মুরসালাত। তিনি সূরাটি তিলাওয়াত করছিলেন। আর আমি তাঁর পবিত্র মুখ থেকে গ্রহণ করছিলাম। তাঁর মুখ (তিলাওয়াতের ফলে) সিক্ত ছিল। এমতাবস্থায় আমাদের সামনে একটি সাপ লাফিয়ে পড়ল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : একে মেরে ফেল। আমরা দৌড়িয়ে গেলে সাপটি চলে গেল। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : রক্ষা পেল সাপটি তোমাদের অনিষ্ট থেকে যেমন তোমরা রক্ষা পেলে এর অনিষ্ট থেকে। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, এ হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, মিনা হারম শরীফের অন্তর্ভূক্ত এবং তাঁরা সাপ মারাকে দোষ মনে করতেন না।
হাদীস নং ১৭১২
ইসমাঈল রহ……….. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাকলাসকে ক্ষতিকর বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু একে হত্যা করার আদেশ দিতে আমি তাকে শুনিনি।
হাদীস নং ১৭১৩
কুতাইবা রহ…….আবু শুরায়হ আদাবী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আমর ইবনে সাঈদ রহ.-কে বললেন, যখন আমর মক্কায় সেনাবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন, হে আমীর ! আমাকে অনুমতি দিন। আমি আপনাকে এমন কথা শুনাব যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের পরের দিন ইরশাদ করেছিলেন। আমার দুটি কান ঐ কথাগুলো শুনেছে, হৃদয় সেগুলোকে স্মৃতিতে একে রেখেছে এবং আমার চোখ দুটো তা প্রত্যক্ষ করেছে। যখন তিনি কথাগুলো বলেছিলেন, তখন তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করার পর বললেন : আল্লাহ তা’আলা মক্কাকে মহাসম্মানিত করেছেন। কোন মানুষ তাকে মহাসম্মানিত করেনি। সুতরাং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মানুষের জন্য মক্কায় রক্তপাত করা বা এর কোন গাছ কাটা বৈধ নয়। আল্লাহর রাসূল কর্তৃক লড়াই পরিচালনার কারণে যদি কেউ যুদ্ধ করার অনুমতি দেয় তাহলে তাকে তোমরা বলে দিও, আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তো অনুমতি দিয়েছিলেন। তোমাদেরকে তো আর তিনি অনুমতি দেননি। আর এ অনুমতিও কেবল শুধু আমাকে দিনের কিছু সময়ের জন্য দেওয়া হয়েছিল। আজ পুনরায় তার নিষিদ্ধতা পুনর্বহাল করা হয়েছে দেয়। আবু শুরায়হ রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনাকে আমর কি জবাব দিয়েছিলেন ? তিনি বললেন, আমর বলেছিলেন, হে আবু শুরায়হ ! এর বিষয়টি আমি তোমার থেকে ভাল জানি। হারম কোন অপরাধীকে, হত্যা করে পলাতক ব্যক্তিকে এবং চুরি করে পলায়নকারী ব্যক্তিকে আশ্রয় দেয় না। আবু আবদুল্লাহ রহ. خربة বলেন, শব্দের অর্থ হল بلية বা ফিতনা-ফাসাদ।
হাদীস নং ১৭১৪
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আল্লাহ তা’আলা মক্কাকে সম্মানিত করেছেন। সুতরাং তা আমার পূর্বে কারো জন্য হালাল ছিল না এবং আমার পরেও কারো জন্য হালাল হবে না। তবে আমার জন্য কেবল দিনের কিছু সময়ের জন্য হালাল করে দেওয়া হয়েছিল। তাই এখানকার ঘাস, লতাপাতা কাটা যাবে না ও গাছ কাটা যাবে না। কোন শিকার জন্তুকে তাড়ান যাবে না এবং কোন হারানো বস্তুকেও হস্তগত করা যাবে না। অবশ্য ঘোষণাকারী ব্যক্তি এ নিয়মের ব্যতিক্রম। আব্বাস রা. বললেন : হ্যাঁ, ইযখিরকে বাদ দিয়েই। খালিদ রহ. ইকরিমা রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, হারমের শিকার জানোয়ারকে তাড়ান যাবে না, এর অর্থ তুমি কি জান ? এর অর্থ হল ছায়া থেকে তাকে তাড়িয়ে তার স্থানে অবতরণ করা।
হাদীস নং ১৭১৫
উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন : এখন থেকে আর হিজরত নেই , রয়েছে কেবল জিহাদ এবং নিয়ত। সুতরাং যখন তোমাদেরকে জিহাদের জন্য ডাকা হবে, এ ডাকে তোমরা সাড়া দিবে। আসমান-যমীন দিন থেকেই আল্লাহ তা’আলা এ শহরকে মহাসম্মানিত করে দিয়েছেন। আল্লাহ কর্তৃক সম্মানিত করার কারণেই কিয়ামত পর্যন্ত এ শহর থাকবে মহাসম্মানিত হিসেবে। এ শহরে লড়াই করা আমার পূর্বেও কারো জন্য বৈধ ছিল না এবং আমর জন্যও দিনের কিছু অংশ ব্যতীত বৈধ হয়নি। আল্লাহ কর্তৃক সম্মানিত করার কারণে তা থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত হিসেবে। এর কাটা উপড়িয়ে ফেলা যাবে না, তাড়ান যাবে না এর শিকার জানোয়ারকে, ঘোষণা করার উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ এ স্থানে পড়ে থাকা কোন বস্তুকে উঠিয়ে নিতে পারবে না এবং কর্তন করা যাবে না এখানকার কাঁচা ঘাস ও তরুলতাগুলোকে। আব্বাস রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! ইযখির বাদ দিয়ে কেননা, এতো তাদের কর্মকারদের জন্য এবং তাদের ঘরে ব্যবহারের জন্য। বর্ণনাকারী বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হ্যাঁ, ইযখির বাদ দিয়ে।
হাদীস নং ১৭১৬
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় সিংগা লাগিয়েছিলেন। অপর এক সূত্রে সুফিয়ান রহ. ইবনে আব্বাস রা. থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, এ হাদীসটি আমর রহ. আতা রহ. এবং তাউস রহ. উভয় থেকে শুনেছেন।
হাদীস নং ১৭১৭
খালিদ ইবনে মাখলাদ রহ……..ইবনে বুহায়না রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় লাহইয়ে জামাল নামক স্থানে তাঁর মাথার মধ্যখানে সিংগা লাগিয়েছিলেন।
হাদীস নং ১৭১৮
আবুল মুগীরা আবদুল কুদ্দুস ইবনে হাজ্জাজ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় মায়মুনা রা.-কে বিবাহ করেছেন।
হাদীস নং ১৭১৯
আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! ইহরাম অবস্থায় আপনি আমাদেরকে কী ধরনের কাপড় পরতে আদেশ করেন ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : জামা, পায়জামা, পাগড়ি ও টুপি পরিধান করবে না। তবে কারো যদি জুতা না থাকে তাহলে সে যেন মোজা পরিধান করে তার গিরার নিচের অংশটুকু কেটে নেয়। তোমরা জাফরান এবং ওয়ারস লাগানো কোন কাপড় পরিধান করবে না। মুহরিম মহিলাগণ মুখে নেকাব এবং হাতে হাত মোজা লাগাবে না। মূসা ইবনে উকবা, ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম ইবনে উকবা, জুওয়ায়রিয়া, ইবনে ইসহাক রহ. নেকাব এবং হাত মোজার বর্ণনায় লায়স রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। উবায়দুল্লাহ রহ. এর স্থলে বলেছেন এবং তিনি বলতেন , ইহরাম বাঁধা মেয়েরা নেকাব ও হাত মোজা ব্যবহার করবে না। মালিক রহ. নাফি রহ. এর মাধ্যমে ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইহরাম বাঁধা মেয়েরা নেকাব ব্যবহার করবে না। লায়স ইবনে আবু সুলাইমান রহ. এ ক্ষেত্রে মালিক রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং ১৭২০
কুতাইবা রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মুহরিম ব্যক্তিকে তার উষ্ট্রী ফেলে দেয়, ফলে তার ঘাড় ভেঙ্গে যায় এবং মারা যায়। তাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হয়। তিনি বললেন : তোমরা তাকে গোসল করাও এবং কাফন পরাও। তবে তার মাথা ঢেকে দিওনা এবং সুগন্ধি লাগিও না । তাকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় কিয়ামতের ময়দানে উঠানো হবে।
হাদীস নং ১৭২১
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে হুনায়ন রহ. তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবওয়া নামক স্থানে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এবং মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা.-এর মধ্যে মতানৈক্য হল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বললেন, মুহরিম ব্যক্তি তার মাথা ধৌত করতে পারবে আর মিসওয়ার রহ. বললেন, মুহরিম তার মাথা ধৌত করতে পারবে না। এরপর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আমাকে আবু আয়্যূব আনসারী রা.-এর নিকট পাঠালেন। আমি তাকে সালাম করলাম । তিনি বললেন, কে ? বললাম, আমি আবদুল্লাহ ইবনে হুনায়ান। মুহরিম অবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে তাঁর মাথা ধৌত করতেন, এ বিষয়টি জিজ্ঞাসা করার জন্য আমাকে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। এ কথা শুনে আবু আয়্যূব রা. তাঁর হাতটি কাপড়ের উপর রাখলেন এবং কাপড়টি নিচু করে দিলেন। ফলে তাঁর মাথাটি আমি পরিষ্কারভাবে দেখতে পেলাম। তারপর তিনি এক ব্যক্তিকে, যে তার মাথায় পানি ঢালছিল, বললেন, পানি ঢাল। সে তাঁর মাথায় পানি ঢালতে থাকল। তারপর তিনি দু’ হাত দ্বারা মাথা নাড়া দিয়ে হাত দু’ খানা একবার সামনে আনলেন আবার পেছনের দিকে টেনে নিলেন। এরপর বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং ১৭২২
আবুল ওয়ালীদ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মুহরিমদের উদ্দেশ্যে আরাফাতে ভাষণ দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন : যার চপ্পল নেই সে মোজা পরিধান করবে আর যার লুঙ্গি নেই সে পায়জামা পরিধান করবে।
হাদীস নং ১৭২৩
আহমদ ইবনে ইউনুস রহ…….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, মুহরিম ব্যক্তি কী কাপড় পরিধান করবে এ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন : মুহরিম ব্যক্তি জামা, পাগড়ি, পায়জামা, টুপি এবং জাফরান কিংবা ওয়ারস দ্বারা রঞ্জিত কাপড় ব্যবহার করতে পারবে না। যদি তার চপ্পল না থাকে তাহলে মোজা পরবে, তবে মোজা দুটি পায়ের গিরার নিচ থেকে কেটে নিবে।
হাদীস নং ১৭২৪
আদম রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে আমাদেরকে লক্ষ্য করে তাঁর ভাষণে বললেন : (মুহরিম অবস্থায়) যার লুঙ্গি নেই সে যেন পায়জামা পরিধান করে এবং যার চপ্পল নেই সে যেন মোজা পরিধান করে।
হাদীস নং ১৭২৫
উবায়দুল্লাহ রহ………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল- কাদা মাসে উমরা আদায় করার নিয়তে রওয়ানা হলে মক্কাবাসী লোকেরা তাকে মক্কা প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে তিনি তাদের সাথে এই শর্তে চুক্তি করেন যে, সশস্ত্র অবস্থায় নয় বরং তলোয়ার কোষবদ্ধ অবস্থায় তিনি মক্কা প্রবেশ করবেন।
হাদীস নং ১৭২৬
মুসলিম রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাবাসীদের জন্য যুল-হুলাইফা, নজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম নামক স্থানকে ইহরামের জন্য মীকাত নির্ধারণ করেছেন। এ স্থানগুলোর অধিবাসীদের জন্য এবং হজ্জ ও উমরার সংকল্প করে বাইরে থেকে আগত যাত্রী, যারা এ স্থান দিয়ে অতিক্রম করবে, তাদের জন্য এ স্থানগুলো মীকাত হিসাবে গণ্য হবে। আর মীকাতের অভ্যন্তরে অবস্থানকারী লোকদের জন্য তারা যেখান থেকে যাত্রা করবে সেটাই তাদের ইহরাম বাঁধার জায়গা। এমন কি মক্কাবাসী লোকেরা মক্কা থেকেই ইহরাম বাঁধবে।
হাদীস নং ১৭২৭
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় (মক্কা) প্রবেশ করেছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিরস্ত্রাণটি মাথা থেকে খোলার পর এক ব্যক্তি এসে তাকে বললেন, ইবনে খাতাল কাবার গিলাফ ধরে আছে। তিনি বললেন : তাকে তোমরা হত্যা কর।
হাদীস নং ১৭২৮
আবুল ওয়ালীদ রহ……..ইবেন ইয়ালা রা. তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। এমতাবস্থায় হলুদ বা অনুরূপ রংগের চিহ্ন বিশিষ্ট জামা পরিহিত এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন। আর উমর রা. আমাকে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি যখন ওহী নাযিল হয় সে মুহূর্তে তুমি কি তাকে দেখতে চাও ? এরপর (ঐ সময়ে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ওহী নাযিল হল। তারপর এ অবস্থা পরিবর্তন হলে তিনি (প্রশ্নকারীকে) বললেন : হজ্জে তুমি যা কর উমরাতেও তাই কর। এক ব্যক্তি অন্য একজনের হাত কামড়িয়ে ধরলে তার সামনের দুটি দাঁত উৎপাটিত হয়ে যায়, এ সংক্রান্ত নালিশ তিনি বাতিল করে দেন।
হাদীস নং ১৭২৯
সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আরাফাত ময়দানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে উকুক (অবস্থায়) করছিলেন। হঠাৎ তিনি তাঁর সাওয়ারী থেকে পড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেংগে যায় অথবা সাওয়ারীটি তাঁর ঘাড় ভেংগে দেয়। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে অথবা বলেন তার পরিধেয় দুটি কাপড়ে কাফন দাও। তবে তার মাথা ঢেকে দিও না এবং হানুত নামক সুগন্ধিও ব্যবহার কর না। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামতের দিনে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
হাদীস নং ১৭৩০
সুলাইমান ইবনে হারব রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আরাফাত ময়দানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উকুক (অবস্থায়) করছিলেন। হঠাৎ তিনি তাঁর সাওয়ারী থেকে পড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেংগে যায় অথবা সাওয়ারীটি তাঁর ঘাড় ভেংগে দেয়। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে অথবা বলেন তার পরিধেয় দুটি কাপড়ে কাফন দাও। তবে তার শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না তার মাথা ঢাকবে না এবং হানুতও লাগাবে না । কেননা আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামতের দিনে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
হাদীস নং ১৭৩১
ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইহরাম অবস্থায় এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলেন। হঠাৎ তাঁর সাওয়ারী তাঁর ঘাড় ভেংগে দেয় । ফলে তিনি মারা যান। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমরা তাকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে কাফন দাও। তবে তার শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামতের দিনে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে।
হাদীস নং ১৭৩২
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুহায়না গোত্রের একজন মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আমার আম্মা হজ্জের মান্নত করেছিলেন তবে তিনি হজ্জ আদায় না করেই ইন্তিকাল করেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ করতে পানি ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তার পক্ষ হতে তুমি হজ্জ আদায় কর। তুমি কি মনে কর যদি তোমার আম্মার উপর ঋণ থাকত তা হলে কি তুমি তা আদায় করতে না? সুতরাং আল্লাহর হক আদায় করে দাও। কেননা, আল্লাহর হকই সবচাইতে অধিক আদায়যোগ্য।
হাদীস নং ১৭৩৩
আবু আসিম রহ………ফাযল ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা বললেন, (অপর সূত্রে) মূসা ইবনে ইসমাঈর রহ……..ইবনে আব্বস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, বিদায় হজ্জের বছর খাসআম গোত্রের একজন মহিলা এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার উপর যে হজ্জ ফরয হয়েছে তা আমার বৃদ্ধ পিতার উপর এমন সময় ফরয হয়েছে যখন তিনি সওয়ারীর উপর ঠিকভাবে বসে থাকতে সক্ষম নন। আমি তার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় করলে তার হজ্জ আদায় হবে কি ? তিনি বললেন : (নিশ্চয়ই আদায় হবে)।
হাদীস নং ১৭৩৪
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফযল (ইবনে আব্বাস) রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাওয়ারীতে তাঁর পেছনে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় খাসআম গোত্রের এক মহিলা আসলেন। ফযল রা. মহিলার দিকে তাকাতে লাগলেন এবং মহিলাও তার দিকে তাকাতে লাগলেন। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযল রা.-এর মুখটি অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে লাগলেন। এ সময় মহিলাটি বললেন, আমার পিতার বৃদ্ধ অবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে তার উপর হজ্জ ফরয হয়েছে এমন সময়. যখন তিনি সওয়ারীর উপর বসে থাকতে পারছেন না। আমি কি তার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় করতে পানি ? তিনি বললেন : হ্যাঁ। এ ছিল বিদায় হজ্জের সময়কার ঘটনা।
হাদীস নং ১৭৩৫
আবুন নুমান রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মালপত্রের সাথে মুযদালিফা থেকে রাত্রিকালে প্রেরণ করেছিলেন।
হাদীস নং ১৭৩৬
ইসহাক রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার গাধীর পিঠে আরোহণ করে (মিনায়) আগমন করলাম। তখন আমি সাবালক হওয়ার নিকটবর্তী ছিলাম। ঐ সময়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। আমি চলতে চলতে প্রথম কাতারে কিছু অংশ অতিক্রম করে চলে যাই। এরপর সাওয়ারী থেকে নিচে অবতরণ করি। গাধীটি চরে খেতে লাগল। আর আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে লোকদের সাথে কাতারে শামিল হয়ে যাই। ইউসুফ রহ. ইবনে শিহাব রহ. সূত্রে তাঁর বর্ণনায় মিনা শব্দের পর বিদায় হজ্জের সময় কথাটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৭৩৭
আবদুর রাহমান ইবনে ইউনুস রহ……….সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার সাত বছর বয়সে আমাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হজ্জ করানো হয়েছে।
হাদীস নং ১৭৩৮
আমর ইবনে যুরারা রহ…….উমর ইবনে আবদুল আযীয রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি সায়িব ইবনে ইয়াযীদ সম্পর্কে বলতেন, সায়িবকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সফর সামগ্রীর কাছে বসিয়ে হজ্জ করানো হয়েছে।
হাদীস নং ১৭৩৯
মুসাদ্দাদ রহ………উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম : হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা কি আপনার সঙ্গে যুদ্ধ ও জিহাদে অংশগ্রহণ করব না ? তিনি বললেন, তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হল মাকবুল হজ্জ। আয়িশা রা. বললেন : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শোনার পর আমি আর কখনো হজ্জ ছাড়ব না।
হাদীস নং ১৭৪০
আবু নুমান রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : মেয়েরা মাহরাম (যার বিবাহ নিষিদ্ধ) ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই এমতাবস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকট গমন করতে পারবে না। এ সময় এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমি অমুক অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জ করতে যেতে যাচ্ছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি তার সাথেই যাও।
হাদীস নং ১৭৪১
আবদান রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ থেকে ফিরে এসে উম্মে সিনান রা. নামক এক আনসারী মহিলাকে বললেন : হজ্জ আদায় করাতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তিনি বললেন, অমুকের আব্বা অর্থাৎ তাঁর স্বামী, কারণ পানি টানার জন্য আমাদের মাত্র দুটি উট আছে। একটিতে সাওয়ার হয়ে তিনি হজ্জ আদায় করতে গিয়েছেন। আর অন্যটি আমাদের জমিতে পানি সিঞ্চনের কাজ করছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : রমযান মাসে একটি উমরা আদায় করা একটি ফরয হজ্জ আদায় করার সমান অথবা বলেছেন : আমার সাথে একটি হজ্জ আদায় করার সমান। হাদীসটি ইবনে জুরায়জ রহ…….আতা রহ. ও ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন এবং উবায়দুল্লাহ রহ. জাবির রা.-এর সূত্রে এ হাদীসটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৭৪২
সুলাইমান ইবনে হারব রহ……..যিয়াদের আযাতকৃত গোলাম কাযাআ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ রা.-কে যিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, বলতে শুনেছি, চারটি বিষয় যা আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি (অথবা) তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন। আবু সাঈদ রা. বলেন, এ বিষয়গুলো আমাকে আশ্চর্যাম্বিত করে দিয়েছে এবং চমত্কৃত করে ফেলেছ। (তা হল এই,) স্বামী কিংবা মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলা দুই দিনের পথ সফর করবে না। ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা-এ দুই দিন কেউ কোন সালাত আদায় করবে না। মসজিদে হারাম, আমার মসজিদ এবং মসজিদে আকসা-এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে না।
হাদীস নং ১৭৪৩
মুহাম্মদ ইবনে সালাম রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে তার দুই ছেলের উপর ভর করে হেটে যেতে দেখে বললেন : তার কি হয়েছে ? তারা বললেন, তিনি পায়ে হেটে হজ্জ করার মানত করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : লোকটি নিজেকে কষ্ট দিক আল্লাহ তা’আলার এর কোন প্রয়োজন নেই । তাই তিনি তাকে সওয়াব হয়ে চলার জন্য আদেশ করলেন।
হাদীস নং ১৭৪৪
ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………উকবা ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার বোন পায়ে হেটে হজ্জ করার মানত করেছিল। আমাকে এ বিষয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ফতোয়া আনার নির্দেশ করলে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন : পায়ে হেঁটেও চলুক, সওয়ারও হোক। ইয়াযীদ ইবনে আবু হাবীব রহ. বলেন, আবুল খায়ের রহ. উকবা রা. থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হতেন না।
হাদীস নং ১৭৪৫
আবু আসিম রহ………উকবা রা. থেকেও এ হাদীস বর্ণিত রয়েছে।
মদীনার ফযীলত অধ্যায় (১৭৪৬-১৭৬৯)
হাদীস নং ১৭৪৬
আবু নুমান রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মদীনা এখান থেকে ওখান পর্যন্ত হারম (রূপে গণ্য)। সুতরাং তার গাছ কাটা যাবে না এবং কুরআন-সুন্নাহর খেলাফ কোন কাজ মদীনায় করা যাবে না। যদি কেউ কুরআন-সুন্নাহর খেলাফ কোন কাজ করে তাহলে তার প্রতি আল্লাহর লানত এবং ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের।
হাদীস নং ১৭৪৭
আবু মামার রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় এসে মসজিদ নির্মাণের আদেশ দেন। তারপর বলেন : হে বনূ নাজ্জার ! আমার নিকট থেকে মূল্য নিয়ে (ভূমি) বিক্রি কর। তাঁরা বললেন, আমরা এর মূল্য কেবল আল্লাহর নিকটই চাই । এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ মুশরিকদের কবর খুড়ে ফেলা হল, ধ্বংসাবশেষ সমতল করা হল, খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলা হল। কেবল মসজিদের কিবলার দিকে কিছু খেজুর গাছ সারিবদ্ধভাবে রাখা হল।
হাদীস নং ১৭৪৮
ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মদীনার দু’ পাথুরে ভূমির মধ্যবর্তী স্থান আমার ঘোষণা মোতাবেক নির্ধারিত করা হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ হারিসার নিকট তাশরীফ আনেন এবং বলেন, হে বনূ হারিসা ! আমার ধারণা ছিল যে, তোমরা হারমের বাইরে অবস্থান করছ, তারপর তিনি সেদিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন : (না তোমরা হারমের বাইরে নও) বরং তোমরা হারমের ভিতরেই আছ।
হাদীস নং ১৭৪৯
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, এই সহীফা ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি আরো বলেন, আয়ির নামক স্থান থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত মদীনা হল হারম। যদি কেউ এতে কুরআর-সুন্নাহর খেলাফ অসঙ্গত কোন কাজ করে অথবা কুরআর-সুন্নাহর খেলাফ আচরণকারী কে আশ্রয় দেয়, তাহলে তার উপর আল্লাহর লানত এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের। সে ব্যক্তির কোন নফল এবং ফরয ইবাদত কবুল করা হবে না। তিনি আরো বলেন, মুসলমান কর্তৃক নিরাপত্তা দানের অধিকার সকলের ক্ষেত্রে সমান। তাই যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দেওয়া নিরাপত্তাকে লংঘন করবে, তার প্রতি আল্লাহর লানত এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের। আর কবুল করা হবে না তার কোন নফল কিংবা ফরয ইবাদত। যে ব্যক্তি তার মাওলার (মিত্রের) অনুমতি ব্যতীত অন্য কওমের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তার প্রতিও আল্লাহ লানত এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের। তার নফল কিংবা ফরয কোন ইবাদতই কবুল করা হবে না। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, ‘আদলুন’ অর্থ বিনিময়।
হাদীস নং ১৭৫০
আবদুল্লাহ ইবেন ইউসুফ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমি এমন এক জনপদে হিজরত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি, যে জনপদ অন্য সকল জনপদের উপর জয়ী হবে । লোকেরা তাকে ইয়াসরিব বলে থাকে। এ হল মদীনা। তা অবাঞ্ছিত লোকদেরকে এমনভাবে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনভাবে কামারের অগ্নিচুলা লোহার মরিচা দূর করে দেয়।
হাদীস নং ১৭৫১
খালিদ ইবনে মাখলাদ রহ………আবু হুমায়দ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমরা তাবূক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদীনার নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছলে, তিনি বললেন : এই হল তাবা।
হাদীস নং ১৭৫২
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, আমি যদি মদীনাতে কোন হরিণকে বেড়াতে দেখি তাহলে তাকে আমি তাড়াব না। (কেননা) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মদীনার কংকরময় দুই এলাকার মধ্যবর্তী এলাকা হল হারম বা সম্মানিত স্থান।
হাদীস নং ১৭৫৩
আবুল ইয়ামান রহ……আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তোমরা উত্তম অবস্থায় মদীনাকে রেখে যাবে । আর তখন জীবিকা অন্বেষণে বিচরণকারী অর্থাৎ পশু-পাখি এসে মদীনাকে আচ্ছন্ন করে নেবে। সবশেষে যাদের মদীনাতে একত্রিত করা হবে তারা হল মুযায়না গোত্রের দু’জন রাখাল। তারা তাদের বকরীগুলোকে হাক-ডাক দিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই, মদীনাতে আসবে । এসে দেখবে মদীনা বন্য পশুতে ছেয়ে আছে। এরপর তারা সানিয়্যাতুল-বিদা নামক স্থানে পৌঁছতেই মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে।
হাদীস নং ১৭৫৪
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…….সুফিয়ান ইবনে আবু যুহায়র রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি : ইয়ামান বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সাওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। অথচ মদীনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা জানত। এরপর ইরাক বিজিত হবে তখন একদল লোক নিজেদের সাওয়ারী হাকিয়ে এসে স্বজন এবং অনুগতদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে, অথচ মদীনাই তাদের জন্য ছিল কল্যাণকর, যদি তারা জানত।
হাদীস নং ১৭৫৫
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ঈমান মদীনাতে ফিরে আসবে যেমন সাপ তার গর্তে ফিরে আসে।
হাদীস নং ১৭৫৬
হুসাইন ইবনে হুরায়স রহ………সা’দ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যে কেউ মদীনাবাসীর সাথে ষড়যন্ত্র বা প্রতারণা করবে, সে লবণ যেভাবে পানিতে গলে যায়, সেভাবে গলে যাবে।
হাদীস নং ১৭৫৭
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..উসামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার কোন একটি টিলায় আরোহণ করে বললেন : আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ ? (তিনি বললেন) বৃষ্টি বিন্দু পতিত হওয়ার স্থানসমূহের মত আমি তোমাদের গৃহসমূহের মাঝে ফিতনার স্থানসমূহ দেখতে পাচ্ছি। মামার ও সুলাইমান ইবনে কাসীর রহ. যুহরী রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় সুফিয়ানের অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং ১৭৫৮
আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদীনাতে দাজ্জালের ত্রাস ও ভীতি প্রবেশ করতে পারবে না। ঐ সময় মদীনার সাতটি প্রবেশ পথ থাকবে। প্রত্যেক পথে দু’জন করে ফেরেশতা (মোতায়ন) থাকবে।
হাদীস নং ১৭৫৯
ইসমাঈল রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মদীনার প্রবেশ পথসমূহে ফেরেশতা প্রহরায় নিয়োজিত থাকবে । তাই প্লেগ এবং দাজ্জাল মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না।
হাদীস নং ১৭৬০
ইয়াহইয়া ইবনে বুকায়র রহ……..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে দাজ্জাল সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেছেন। বর্ণিত, কথাসমূহের মাঝে তিনি এ কথাও বলেছিলেন যে, মদীনার প্রবেশ পথে অনুপ্রবেশ করা দাজ্জালের জন্য হারাম জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে। তাই সে মদীনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মদীনার নিকটবর্তী কোন একটি লোনা জমিতে অবতরণ করবে। তখন তার নিকট এক ব্যক্তি যাবে যে উত্তম ব্যক্তি হবে বা উত্তম মানুষের একজন হবে এবং সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই হলে সে দাজ্জাল যার সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে অবহিত করেছেন। দাজ্জাল বলবে, আমি যদি তাকে হত্যা করে পুনারায় জীবিত করতে পারি তাহলেও কি তোমরা আমার ব্যাপারে সন্দেহ করবে ? তারা বলবে, না। এরপর দাজ্জাল লোকটিকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। জীবিত হয়েই লোকটি বলবে, আল্লাহর শপথ ! আজকের চেয়ে অধিক প্রত্যয় আমার আর কখনো ছিলনা। তারপর দাজ্জাল বলবে, আমি তাকে হত্যা করে ফেলব। কিন্তু সে লোকটিকে হত্যা করতে আর সক্ষম হবে না।
হাদীস নং ১৭৬১
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মক্কা ও মদীনা ব্যতীত এমন কোন শহর নেই যেখানে দাজ্জাল অনুপ্রবেশ করবে না। মক্কা এবং মদীনার প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেই ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে পাহারায় নিয়োজিত থাকবে। এরপর মদীনা তার অধিবাসীদেরক নিয়ে তিনবার কেঁপে উঠবে। এভাবেই আল্লাহ তা’আলা সমস্ত কাফির এবং মুনাফিকদের কে বের করে দিবেন।
হাদীস নং ১৭৬২
আমর ইবনে আব্বাস রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন বেদুঈন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে ইসলামের উপর বায়আত গ্রহণ করল। পরদিন সে জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, আমার (বায়আত) ফিরিয়ে নিন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা প্রত্যাখ্যান করলেন। এভাবে তিনবার হল। তারপর বললেন : মদীনা কামারের হাঁপরের মত, যা তার আবর্জনা ও মরিচাকে দূরীভূত করে এবং খাঁটি ও নির্ভেজাল কে পরিচ্ছন্ন করে।
হাদীস নং ১৭৬৩
সুলাইমান ইবনে হারব রহ………যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে উহুদ যুদ্ধে যাত্রা করে তাঁর কতিপয় সাথী ফিরে আসলে একদল লোক বলতে লাগল, আমরা তাদেরকে হত্যা করব, আর অন্য দলটি বলতে লাগল, না, আমরা তাদেরকে হত্যা করব না। এ সময়ই (তোমাদের হল কি, তোমরা মুনাফিকদের সম্পর্কে দু’দল হয়ে পড়েছ ?) আয়াতটি নাযিল হয়। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : মদীনা লোকদেরকে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনভাবে আগুন লোহার মরিচাকে দূর করে দেয়।
হাদীস নং ১৭৬৪
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ…….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে আল্লাহ ! মক্কাতে তুমি যে বরকত দান করেছ, মদীনাতে এর দ্বিগুণ বরকত দাও। উসমান ইবনে উমর রা. ইউনুস রহ. থেকে হাদীসটি জাবির রা.-এর মতই বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৭৬৫
কুতাইবা রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে আসার পথে যখন তিনি মদীনার প্রাচীরগুলোর দিকে তাকাতেন, তখন তিনি উটকে দ্রুত চালাতেন আর তিনি অন্য কোন জন্তুর উপর থাকলে তাকেও দ্রুত চালিত করতেন, মদীনার ভালবাসার কারণে।
হাদীস নং ১৭৬৬
ইবনে সালাম রহ……..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু সালিমা গোত্রের লোকেরা মসজিদে নববীর নিকটে চলে যাওয়ার সংকল্প করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাকে জনশূন্য করা অপছন্দ করলেন, তাই তিনি বললেন : হে বনু সালিমা ! মসজিদে নববীর দিকে তোমাদের হাঁটার সওয়াব কি তোমরা হিসাব করা না ? এরপর তারা সেখানেই রয়ে গেল।
হাদীস নং ১৭৬৭
মুসাদ্দাদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটি হল জান্নাতের বাগানের একটি বাগান, আর আমার মিম্বরটি হল আমার হাউজের উপর অবস্থিত।
হাদীস নং ১৭৬৮
উবায়দ ইবনে ইসমাঈল রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় শুভাগমন করলে আবু বকর ও বিলাল রা. জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আবু বকর রা. জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লে তিনি এ কবিতা অংশটি আবৃত্তি করতেন : “প্রত্যেক ব্যক্তিই তার পরিবার ও স্বজনদের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন, অথচ মৃত্যু তার জুতোর ফিতার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী”। আর বিলাল রা. জ্বর উপশম হলে উচ্চস্বরে এ কবিতা অংশ আবৃত্তি করতেন : “হায়, আমি যদি মক্কার প্রান্তরে একটি রাত কাটাতে পারতাম এমনভাবে যে, আমার চারদিকে থাকবে ইযখির এবং জালীল নামক ঘাস। মাজান্না ঝর্ণার পানি কোন দিন পান করার সূযোগ পাব কি ? শামা এবং তাফীল পাহাড় আবার প্রকাশিত হবে কি ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : হে আল্লাহ ! তুমি শায়বা ইবনে রাবীআ উতবা ইবনে রাবীআ এবং উমায়্যা ইবনে খালফের প্রতি লানত বর্ষণ কর; যেমনিভাবে তারা আমাদেরকে আমাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে মহামারির দেশে ঠেলে দিয়েছে। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করলেন : হে আল্লাহ ! মদীনাকে আমাদের নিকট প্রিয় বানিয়ে দাও যেমন মক্কা আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও। স্থানান্তরিত করে দাও জুহফাতে এর জ্বরের প্রকোপ বা মহামারীকে। আয়িশঅ রা. বলেন, আমরা যখন মদীনা এসেছিলাম তখন তা ছিল আল্লাহর যমীনে সর্বাপেক্ষা অধিক মহামারীর স্থান। তিনি আরো বলেন, সে সময় মদীনায় বুতহান নামক একটি ঝর্ণা ছিল যার থেকে বিকৃত বর্ণ ও বিকৃত স্বাদের পানি প্রবাহিত হত।
হাদীস নং ১৭৬৯
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এ বলে দুআ করতেন, হে আল্লাহ ! আমাকে তোমার পথে শাহাদাত বরণ করার সুযোগ দান কর এবং আমার মৃত্যু তোমার রাসূলের শহরে দাও। ইবনে যুবায়ই রহ…….হাফসা বিনতে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর রা.-কে অনুরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি। হিশাম রহ. বলেন, যায়েদ তাঁর পিতার সূত্রে হাফসা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি উমর রা.-কে বলতে শুনেছি। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, রাওই তাঁর মায়ের সূত্রে এরূপ বলেছেন।
সাওম অধ্যায় (১৭৭০-১৮৮১)
হাদীস নং ১৭৭০
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ…….তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, এলোমেলো চুলসহ একজন গ্রাম্য আরব নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন । তারপর বললেন : ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাকে বলুন, আল্লাহ তা’আলা আমার উপর কত সালাত ফরয করেছেন ? তিনি বললেন : পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত; তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় কর তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন :বলুন, আমার উপর কত সিয়াম আল্লাহ তা’আলা ফরয করেছেন? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : রমযান মাসের সাওম; তবে তুমি যদি কিছু নফল সিয়াম আদায় করা তা হল স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন : বলুন, আল্লাহ আমার উপর কি পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন ? রাবী বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন। এরপর তিনি বললেন : ঐ সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ আমার উপর যা ফরয করেছেন, আমি এর মাঝে কিছু বাড়াব না এবং কমাবও না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সে সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করল।
হাদীস নং ১৭৭১
মুসাদ্দাদ রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার দিন সিয়াম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সিয়াম ফরয হল তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। আব্দুল্লাহ রহ. এ সিয়াম পালন করতেন না, তবে মাসের যে দিনগুলোতে সাধারণ সিয়াম পালন করতেন, তার সাথে মিল হলে করতেন।
হাদীস নং ১৭৭২
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, জাহিলী যুগে কুরাইশগণ আশুরার দিন সাওম পালন করত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও পরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমযানের সিয়াম ফরয হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যার ইচ্ছা আশুরার সিয়াম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে সাওম পালন করবে না।
হাদীস নং ১৭৭৩
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলাম রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুইবার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময়ে দশ গুণ।
হাদীস নং ১৭৭৪
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন উমর রা. বললেন, ফিতনা সম্পকির্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসটি কার মুখস্থ আছে ? হুযায়ফা রা. বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, পরিবার, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশীই মানুষের জন্য ফিতনা। সালাত, সিয়াম এবং সাদকা এর কাফফারা হয়ে যায়। উমর রা. বললেন, এ ফিতনা সম্পর্কে আমি জিজ্ঞাসা করছি না, আমি তে জিজ্ঞাসা করেছি ঐ ফিতনা সম্পর্কে যা সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আন্দোলিত হতে থাকবে। হুযায়ফা রা. বললেন, এ ফিতনার সামনে বন্ধ দরজা আছে। উমর রা. বললেন, এ দরজা কি খুলে যাবে, না ভেঙ্গে যাবে ? হুযায়ফা রা. বললেন ভেঙ্গে যাবে। উমর রা. বললেন, তাহলে তো তা কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। আমরা মাসরূক রহ.কে বললাম, বললাম, হুযায়ফা রা.-কে জিজ্ঞাসা করুন, উমর রা. কি জানতেন, কে সেই দরজা ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি এরূপ জানতেন যে রূপ কালকের দিনের পূর্বে আজকের রাত।
হাদীস নং ১৭৭৫
খালিদ ইবনে মাখলাদ রহ………সাহল রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায় ? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।
হাদীস নং ১৭৭৬
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা ! এটাই উত্তম। অতএব যে সালাত আদায়কারী, তাকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে মুজাহিদ তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সিয়াম পালনকারী, তাকে রায়্যান দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সাদকা দানকারী, তাকে সাদকার দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবু বকর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান, সকল দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোন প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , হ্যাঁ। আমি আশা করি তুমি তাদের মধ্যে হবে।
হাদীস নং ১৭৭৭
কুতাইবা রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়।
হাদীস নং ১৭৭৮
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শৃংখলিত করে দেয়া হয় শয়তানগুলোকে।
হাদীস নং ১৭৭৯
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা তা দেখবে তখন সাওম পালন করবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফতার করবে। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার সময় হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে। ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ. ব্যতীত অন্যরা লায়স রহ. থেকে উকাইল এবং ইউনুস রহ. সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি বলেছেন রমযানের চাঁদ সম্পর্কে।
হাদীস নং ১৭৮০
মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পিছনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সাওয়াবের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করবে, তারও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে।
হাদীস নং ১৭৮১
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিবরাঈল আ. যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল তাঁর সঙ্গে একবার সাক্ষাত করতেন। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কুরআন শোনাতেন। জিবরাঈল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।
হাদীস নং ১৭৮২
আদম ইবনে আবু ইয়াস রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।
হাদীস নং ১৭৮৩
ইবরাহীম ইবেন মূসা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, সাওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য। তাই আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। যার কবজায় মুহাম্মদের প্রাণ, তাঁর শপথ ! অবশ্যই সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি। সায়িমের জন্য রয়েছে দুটি খুশী যা তাকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাত করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে।
হাদীস নং ১৭৮৪
আবদান রহ………আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ রা.-এর সঙ্গে চলতে ছিলাম, তখন তিনি বললেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম, তিনি বললেন : যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিবাহ করে দেয় । কেননা বিবাহ চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। সাওম তার প্রবৃত্তিকে দমন করে। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, البائة শব্দের অর্থ বিবাহ।
হাদীস নং ১৭৮৫
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের কথা আলোচনা করে বললেন : চাঁদ না দেখে তোমরা সাওম পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফতার করবে না। যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার সময় (ত্রিশ দিন) পরিমাণ পূর্ণ করবে।
হাদীস নং ১৭৮৬
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মাস ঊনত্রিশ রাত বিশিষ্ট হয়। তাই তোমরা চাঁদ না দেখে সাওম শুরু করবে না। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তোমরা ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।
হাদীস নং ১৭৮৭
আবুল ওয়ালীদ রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’হাতের অঙ্গুলী তুলে ইশারা করে) বলেন : মাস এত এত দিন হয় এবং তৃতীয়বার বৃদ্ধাঙ্গুলিটি বন্ধ করে নিলেন।
হাদীস নং ১৭৮৮
আদম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা বললেন, আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম আরম্ভ করবে এবং চাঁদ দেখে ইফতার করবে। আকাশ যদি মেঘে ঢাকা থাকে তাহলে শাবানের গণনা ত্রিশ দিন পুরা করবে।
হাদীস নং ১৭৮৯
আবু আসিম রহ………উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাসের জন্য তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে ঈলা করলেন। ঊনত্রিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর সকালে বা সন্ধ্যায় তিনি তাদের নিকট গেলেন। তাকে প্রশ্ন করা হল, আপনি তো এক মাস পর্যন্ত না আসার শপথ করেছিলেন ? তিনি বললেন : মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।
হাদীস নং ১৭৯০
আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে ঈলা করলেন। এ সময় তাঁর পা মচকে গিয়েছিল। তখন তিনি উপরের কামরায় ঊনত্রিশ রাত অবস্থান করেন। এরপর অবতরণ করলে সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি তো এক মাসের জন্য ঈলা করেছিলেন। তিনি বললেন : মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।
হাদীস নং ১৭৯১
মুসাদ্দাদ রহ…..আবু বকরা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুটি মাস কম হয়না। তা হল ঈদের দু’মাস রমযানের মাস ও যুলহজ্জের মাস। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেছেন, আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন, রমযান ঘাটতি হলে যুলহজ্জ পূর্ণ হবে। আর যুলহজ্জ ঘাটতি হলে রমযান পূর্ণ হবে। আবুল হাসান রহ. বলেন, ইসহাক ইবনে রাহওয়াই রহ. বলেন, ফজিলতের দিক থেকে এ দুই মাসে কোন ঘাটতি নেই, মাস ঊনত্রিশ দিনে হোক বা ত্রিশ দিনে হোক।
হাদীস নং ১৭৯২
আদম রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমরা উম্মী জাতি । আমরা লিখি না এবং হিসাবও করি না। মাস এরূপ অর্থাৎ কখনও ঊনত্রিশ দিনের আবার কখনো ত্রিশ দিনের হয়ে থাকে।
হাদীস নং ১৭৯৩
মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা কেউ রমযানের একদিন কিংবা দুই দিন আগে থেকে সাওম শুরু করবে না। তবে কেউ যদি এ সময় সিয়াম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিন সাওম করতে পারবে।
হাদীস নং ১৭৯৪
উবাইদুল্লাহ ইবনে মূসা রহ……..বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের অবস্থা এই ছিল যে, যদি তাদের কেউ সাওম পালন করতেন ইফতারের সময় হলে ইফতার না করে ঘুমিয়ে গেলে সে রাতে এবং পরের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছুই খেতেন না। কায়স ইবনে সিরমা আনসারী রা. সাওম পালন করেছিলেন। ইফতারের সময় তিনি তাঁর স্ত্রীর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার নিকট কিছু খাবার আছে কি ? তিনি বললেন, না, তবে আমি যাচ্ছি, দেখি আপনার জন্য কিছু তালাশ করে আনি। তিনি দিনে কাজে রত থাকতেন। তাই ঘুমে তাঁর দুচোখ বুজে গেল। এরপর তাঁর স্ত্রী এসে যখন তাকে দেখলেন, তখন তাকে বললেন, হায়, তুমি বঞ্চিত হয়ে গেলে ! পরদিন দুপুরে হলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। এ ঘটনাটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উল্লেখ করা হলে কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয় : সিয়ামের রাত্রে তোমাদের স্ত্রী সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে। (২ : ১৮৭)-এর হুকুম সম্বন্ধে অবহিত হয়ে সাহাবীগণ খুবই আনন্দিত হলেন। এরপর নাযিল হল : তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কাল রেখা হতে (ভোরের) সাদা রেখা স্পষ্টভাবে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। (২ : ১৮৭)
হাদীস নং ১৭৯৫
হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ………আদী ইবনে হাতিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হল : “তোমরা পানাহার করা (রাতের) কাল রেখা হতে (ভোরের) সাদা রেখা যতক্ষণ স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়” তখন আমি একটি কাল এবং একটি সাদা রশি নিলাম এবং উভয়টিকে আমার বালিশের নিচে রেখে দিলাম। রাতে আমি এগুলোর দিকে বারবার তাকাতে থাকি। কিন্তু আমার নিকট পার্থক্য প্রকাশিত হল না। তাই সকালেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে এ বিষয় বললাম। তিনি বললেন : এতো রাতের আধার এবং দিনের আলো।
হাদীস নং ১৭৯৬
সাঈদ ইবনে আবু মারইয়াম রহ………সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হল : “তোমরা পানাহার করা (রাতের) কাল রেখা হতে (ভোরের) সাদা রেখা যতক্ষণ স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়”। কিন্তু তখনো من الفجر কথাটি নাযিল হয়নি। তখন সাওম পালন করতে ইচ্ছুক লোকেরা নিজেদের দুই পায়ে একটি কাল এবং একটি সাদা সুতলি বেঁধে নিতেন এবং সাদা কাল এই দুটির মধ্যে পার্থক্য না দেখা পর্যন্ত না দেখা পর্যন্ত তাঁরা পানাহার করতে থাকতেন। এরপর আল্লাহ তা’আলা من الفجر শব্দটি নাযিল করলে সকলেই বুঝতে পারলেন যে, এ দ্বারা উদ্দেশ্য হল রাত (-এর আঁধার) এবং দিন (-এর আলো)।
হাদীস নং ১৭৯৭
উবায়দ ইবনে ইসমাঈল রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে এবং কাসিম ইবনে মুহাম্মদ রহ……আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিলাল রা. রাতে আযান দিতেন। তাই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : ইবনে উম্মে মাকতুম রা. আযান না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার কর। কেননা ফজর না হওয়া পর্যন্ত সে আযান দেয় না। কাসিম রহ. বলেন, এদের উভয়ের আযানের মাঝে শুধু এতটুকু ব্যবধান ছিল যে, একজন নামতেন এবং অন্যজন উঠতেন।
হাদীস নং ১৭৯৮
মুহাম্মদ ইবনে উবায়দুল্লাহ রহ……..সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে সাহরী খেতাম। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাতে শরীক হওয়ার জন্য তাড়া তাড়ি করতাম।
হাদীস নং ১৭৯৯
মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাহরী খাই এরপর তিনি সালাতের জন্য দাঁড়ান। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আযান ও সাহরীর মাঝে কতটুকু ব্যবধান ছিল ? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত (পাঠ করা) পরিমাণ।
হাদীস নং ১৮০০
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটানা সাওম পালন করতে থাকলে লোকেরাও একটানা সাওম পালন করতে শুরু করে। এ কাজ তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়াল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিষেধ করলেন। তারা বলল, আপনি যে একনাগাড়ে সাওম পালন করছেন ? তিনি বললেন : আমি তো তোমাদের মত নই । আমাকে খাওয়ানো হয় ও পান করানো হয়।
হাদীস নং ১৮০১
আদম ইবনে আবু ইয়াস রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে।
হাদীস নং ১৮০২
আবু আসিম রহ……..সালমা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত যে, আশুরার দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে এ বলে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেওয়ার জন্য পাঠালেন যে, যে ব্যক্তি খেয়ে ফেলেছে সে যেন পূর্ণ করে নেয় অথবা বলেছেন, সে যেন সাওম আদায় করে নেয় আর যে এখনো খায়নি সে যেন আর না খায়।
হাদীস নং ১৮০৩
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……..আবু বকর ইবনে আবদুর রাহমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং আমার পিতা আয়িশা রা. এবং উম্মে সালামা রা.-এর নিকট গেলাম। (অপর বর্ণনায়) আবুল ইয়ামান রহ………মারওয়ান রহ. থেকে বর্ণিত যে, আয়িশা রা. এবং উম্মে সালামা রা. তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, নিজ নিজ স্ত্রীর সাথে মিলনজনিত জুনুবী অবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফজরের সময় হয়ে যেত। তখন তিনি গোসল করতেন এবং সাওম পালন করতেন। মারওয়ান রহ. আবদুর রাহমান ইবনে হারিস রহ.-কে বললেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, এ হাদীস শুনিয়ে তুমি আবু হুরায়রা রা. কে শংকিত করে দিবে। এ সময় মারওয়ান রহ. মদীনার গভর্নর ছিলেন। আবু বকর রহ. বলেন, মারওয়ান রা.-এর কথা আবদুর রাহমান রহ. পছন্দ করেন নি। রাবী বলেন, এরপর ভাগ্যক্রমে আমরা যুল-হুলাইফাতে একত্রিত হয়ে যাই। সেখানে আবু হুরায়রা রা.-এর একখণ্ড জমি ছিল। আবদুর রাহমান রহ. আবু হুরায়রা রা. কে বললেন, আমি আপনার নিকট একটি কথা বলতে চাই, মারওয়ান যদি এ বিষয়টি আমাকে কসম দিয়ে না বলতেন, তাহলে আমি তা আপনার সঙ্গে আলোচনা করতাম না। তারপর তিনি আয়িশা রা. ও উম্মে সালামা রা.-এর বর্ণিত উক্তিটি উল্লেখ করলেন, ফাযল ইবনে আব্বাস রা. অনুরূপ একটি হাদীস আমাকে শুনিয়েছেন এবং এ বিষয়ে তিনি সর্বাধিক অবহিত। হাম্মাম রহ. এবং ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সূত্রে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, এরূপ ক্ষেত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম ত্যাগ করে খাওয়ার হুকুম দিতেন। প্রথমোক্ত হাদীসটি সনদের দিক থেকে বিশুদ্ধ।
হাদীস নং ১৮০৪
সুলাইমান ইবনে হারব রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমের অবস্থায় চুমু খেতেন এবং গায়ে গা লাগাতেন। তবে তিনি তাঁর প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চাইতে অধিক সক্ষম চিলেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, إرب মানে হাজত বা চাহিদা। তাউস রহ. বলেন, غير أولى الأربة মানে বোধহীন, যার মেয়েদের প্রতি কোন খাহিশ নেই।
হাদীস নং ১৮০৫
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সায়িম অবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন কোন স্ত্রীকে চুমু খেতেন। (এ কথা বলে) আয়িশা রা. হেসে দিলেন।
হাদীস নং ১৮০৬
মুসাদ্দাদ রহ……..উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে একই চাদরে আমি ছিলাম। এমন সময় আমার হায়য শুরু হল। তখন আমি আমার হায়যের কাপড় পরিধান করলাম। তিনি বললেন : তোমার কি হল ? তোমার কি হায়য দেখা দিয়েছে ? আমি বললাম, হ্যাঁ, তারপর আমি আবার তাঁর সঙ্গে চাদরের ভিতর ঢুকে পড়লাম। তিনি এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র থেকে গোসল করতেন এবং সায়িম অবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চুমু দিতেন।
হাদীস নং ১৮০৭
আহমদ ইবনে সালিহ রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমযান মাসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভোর হত ইহতিলাম ব্যতীত (জুনুবী অবস্থায়) তখন তিনি গোসল করতেন এবং সাওম পালন করতেন।
হাদীস নং ১৮০৮
ইসমাঈল রহ……….আবু বকর ইবনে আবদুর রাহমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে রওয়ানা হয়ে আয়িশা রা.-এর নিকট পৌঁছলাম। তিনি বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি ইহতিলাম ছাড়া স্ত্রী সহবাসের কারণে জুনুবী অবস্থায় সকাল পর্যন্ত থেকেছেন এবং এরপর সাওম পালন করেছেন। তারপর আমরা উম্মে সালামা রা.-এর নিকট গেলাম। তিনিও অনুরূপ কথাই বললেন। আবু জাফর বলেন, আবদুল্লাহ রহ.-কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোন ব্যক্তি সাওম ভঙ্গ করলে সে কি স্ত্রী সহবাসকারীর মত কাফফারা আদায় করবে ? তিনি বললেন, না, তুমি কি সে হাদীসগুলো সম্পর্কে জান না যাতে বর্ণিত আছে যে, যুগ যুগ ধরে সাওম পালন করলেও তার কাযা আদায় হবে না।
হাদীস নং ১৮০৯
আবদান রহ……..আবু হুরায়রা. রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : রোযাদার ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে, তাহলে সে যেন তার সাওম পুরা করে নেয়। কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।
হাদীস নং ১৮১০
আবদান রহ………হুমরান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উসমান রা.-কে উযু করতে দেখেছি। তিনি তিনবার হাতের উপর পানি ঢাললেন। এরপর তিনি কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন। তারপর তিনবার চেহারা (মুখমণ্ডল) ধুইলেন। এরপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন এবং বামহাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন। এরপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। তারপর ডান পা তিনবার ধুইলেন তারপর বাম পা তিনবার ধুইলেন। এরপর বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উযূ করতে দেখেছি আমার এ উযুর মতই। এরপর তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ উযূর মত উযূ করে দু’রাকআত সালাত আদায় করবে এবং এতে মনে মনে কোন কিছুর চিন্তা-ভাবনায় লিপ্ত হবে না, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
হাদীস নং ১৮১১
আবদুল্লাহ ইবনে মুনীর রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, সে তা জ্বলে গেছে। তিনি বললেন : তোমার কি হয়েছে ? লোকটি বলল, রমযানে আমি স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। এ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে (খেজুর ভর্তি) ঝুড়ি এল, যাকে আরাক (১৫ সা’ পরিমাণ) বলা হয়। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : অগ্নিদগ্ধ লোকটি কোথায় ? লোকটি বলল, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এগুলো সাদকা করে দাও।
হাদীস নং ১৮১২
আবুল ইয়ামান রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসাছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমার কি হয়েছে ? সে বলল, আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কি ? সে বলল, না। তিনি বললেন : তুমি কি একধারে দুমাস সাওম পালন করতে পারবে ? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেন : ষাটজন মিসকিন খাওয়াতে পারবে কি ? সে বলল, না। রাবী বলেন, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এক আরাক পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। আরাক হল ঝুড়ি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : প্রশ্নকারী কোথায় ? সে বলল, আমি। তিনি বললেন : এগুলে নিয়ে সাদকা করে দাও। তখন লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার চাইতেও বেশী অভাবগ্রস্তকে সাদকা করব ? আল্লাহর শপথ, মদীনার উভয় লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার চাইতেও বেশী অভাবগ্রস্ত সাদকা করব ? আল্লাহর শপথ, মদীনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চাইতে অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত দেখা গেল। এরপর তিনি বললেন : এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও।
হাদীস নং ১৮১৩
উসামান ইবনে আবু শায়বা রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, এই হতভাগা স্ত্রী সহবাস করেছে রমযানে। তিনি বলেলেন : তুমি কি একটি গোলাম আযাদ করতে পারবে ? লোকটি বলল, না। তিনি বললেন : তুমি কি ক্রমাগত দু’ মাস সিয়াম পালন করতে পারবে ? লোকটি বলর, না। তুমি কি ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে ? সে বলল, না। এমতাবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক আরাক অর্থাৎ এক ঝুড়ি খেজুর এল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এগুলো তোমার তরফ থেকে লোকদেরকে আহার করাও। লোকটি বলল, আমার চাইতেও অধিক অভাবগ্রস্ত কে ? অথচ মদীনার উভয় লাবার অর্থাৎ হাররার মধ্যবর্তী স্থলে আমার পরিবারের চাইতে অধিক অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে তোমার পরিবারকেই খাওয়াও।
হাদীস নং ১৮১৪
মুআল্লা ইবনে আসাদ রহ……ইবনে আব্বস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম অবস্থায় শিংগা লাগিয়েছেন এবং সায়িম অবস্থায়ও শিংগা লাগিয়েছেন।
হাদীস নং ১৮১৫
আবু মামার রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায়িম অবস্থায় শিংগা লাগিয়েছেন।
হাদীস নং ১৮১৬
আদম ইবনে আবু ইয়াস রহ………সাবিত আল-বুনানী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস ইবনে মালিক রা.-কে প্রশ্ন করা হল, আপনার কি সায়িমের শিংগা লাগানো অপছন্দ করতেন ? তিনি বললেন, না। তবে দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে অপছন্দ করতাম। শাবাবা রহ. শুবা রহ. থেকে ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে’ কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৮১৭
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন : সওয়ারী থেকে নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সূর্য এখনো অস্ত যায়নি। তিনি বললেন : সওয়ারী থেকে নেমে আমার জন্য জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সূর্য এখনো ডুবেনি। তিনি বললেন : সওয়ারী থেকে নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। যখন দেখবে সে সওয়ারী থেকে নেমে ছাতু গুলিয়ে আনলে তিনি তা পান করলেন এবং হাতের ইশারায় বললেন : যখন দেখবে রাত এদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে তখন বুঝবে, সাওম পালনকারী ব্যক্তির ইফতারের সময় হয়েছে। জারীর রা. এবং আবু বকর ইবনে আইয়াশ রা…….ইবনে আবু আওফা রা. থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম।
হাদীস নং ১৮১৮
মুসাদ্দাদ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, হামযা ইবনে আমর আসলামী রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি ক্রমাগত সিয়াম পালন করছি।
হাদীস নং ১৮১৯
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, হামযা ইবনে আমর আসলামী রা. অধিক সাওম পালনে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমি সফরেও কি সাওম পালন করতে পারি ? তিনি বললেন : ইচ্ছা করলে তুমি সাওম পালন করতে পার, আবার ইচ্ছা করলে নাও করতে পার।
হাদীস নং ১৮২০
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমের অবস্থায় কোন এক রমযানে মক্কার পথে যাত্রা করলেন। কাদীদ নামক পৌঁছার পর তিনি সাওম ভঙ্গ করে ফেললে লোকেরা সকলেই সাওম ভঙ্গ করলেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, উসফাস ও কদায়দ নামক দুই স্থানের মধ্যে কাদীদ একটি ঝর্ণা।
হাদীস নং ১৮২১
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সফরে প্রচণ্ড গরমের দিনে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। গরম এত প্রচণ্ড ছিল যে, প্রত্যেকেই নিজ নিজ হাত মাথার উপর তুলে ধরেছিলেন। এ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ইবনে রাওয়াহা রা. ছাড়া আমাদের কেউই সায়িম ছিলনা।
হাদীস নং ১৮২২
আদম রহ……..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন, হঠাৎ তিনি লোকেরা জটলা এবং ছায়ার নিচে এক ব্যক্তিকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন : এর কী হয়েছে ? লোকেরা বলল, সে সায়িম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সফরে সাওম পালনে কোন নেকী নেই।
হাদীস নং ১৮২৩
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলাম রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সফরে যেতাম। সায়িম ব্যক্তি গায়ের সায়িমকে (যে সাওম পালন করছে না) এবং গায়ের সায়িম ব্যক্তি সায়িমকে দোষারোপ করত না।
হাদীস নং ১৮২৪
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা থেকে মক্কায় রওয়ানা হলেন। তখন তিনি সাওম পালন করছিলেন। উসফানে পৌঁছার পর তিনি পানি আনার জন্য আদেশ করলেন। তারপর তিনি লোকদেরকে দেখানোর জন্য পানি হাতের উপর উচু করে ধরে সাওম ভঙ্গ করলেন এবং এ অবস্থায় মক্কায় পৌঁছলেন। এ ছিল রমযান মাসে। তাই ইবনে আব্বাস রা. বলতেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন করেছেন এবং সাওম ভঙ্গও করেছেন। যার ইচ্ছা সাওম পালন করতে পারে আর যার ইচ্ছা সাওম ভঙ্গ করতে পারে।
হাদীস নং ১৮২৫
আইয়াশ রহ……ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি فدية طعام مسكين আয়াতটি পড়ে বলেছেন যে, ইহা রহিত
হাদীস নং ১৮২৬
আহমদ ইবনে ইউনুস রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার উপর রমযানের যে কাযা থেকে যেত তা পরবর্তী শাবান ছাড়া আমি আদায় করতে পারতাম না। ইয়াহইয়া রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ব্যস্ততার কারণে কিংবা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ব্যস্ততার কারণে।
হাদীস নং ১৮২৭
ইবনে আবু মারইয়াম রহ………আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এ কথা ঠিক নয় যে, হায়য শুরু হলে মেয়েরা সালাত আদায় করে না এবং সাওমও পালন করে না। এ হল তাদের দীনেরই ত্রুটি।
হাদীস নং ১৮২৮
মুহাম্মদ ইবনে খালিদ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সাওমের কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে সাওম আদায় করবে। ইবনে ওয়াহব রহ. আমর রহ. থেকে উক্ত হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনে আইয়্যূব রহ……ইবনে আবু জাফর রহ. থেকেও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৮২৯
মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার মা এক মাসের সাওম যিম্মায় রেখে মারা গেছেন, আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে এ সাওম কাযা করতে পারি ? তিনি বলেন : হ্যাঁ, আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করাই হল অধিক যোগ্য। সুলাইমান রহ. বলেন, হাকাম রহ. এবং সালামা রহ. বলেছেন, মুসলিম রহ. এ হাদীস বর্ণনা করার সময় আমরা সকলেই একসাথে উপবিষ্ট ছিলাম। তাঁরা উভয়ই বলেছেন যে, ইবনে আব্বাস রা. বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমার বোন মারা গেছে। ইয়াহইয়া রহ. ও আবু মুআবিয়া…… ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আমার মা মারা গেছেন। উবায়দুল্লাহ রহ……ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আমার মা মারা গেছে, অথচ তার যিম্মায় মানতের সাওম রয়েছে। আবু হারীয রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আমার মা মারা গেছে, অথচ তার যিম্মায় পনের দিনের সাওম রয়ে গেছে।
হাদীস নং ১৮৩০
হুমাইদী রহ……..উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন রাত্র সে দিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এ দিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন সায়িম ইফতার করবে।
হাদীস নং ১৮৩১
ইসহাক ওয়াসিতী রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। আর তিনি ছিলেন সায়িম। যখন সূর্য ডুবে গেল তখন তিনি দলের কাউকে বললেন : হে অমুক ! উঠ। আমাদের জন্য জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেন : নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেন : নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, দিন তো আপনার এখনো রয়েছে। তিনি বললেন : তুমি নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে নামল এবং তাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আনল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পান করলেন, তারপর বললেন : যখন তোমরা দেখবে, রাত একদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে, তখন সায়িম ইফতার করবে।
হাদীস নং ১৮৩২
মুসাদ্দাদ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওয়ানা দিলাম এবং তিনি রোযাদার ছিলেন। সূর্য অস্ত যেতেই তিনি বললেন : তুমি সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেন : নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, দিন তো আপনার এখনো রয়েছে। তিনি বললেন : তুমি নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে নামলেন এবং তাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আনলেন। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দ্বারা পূর্বদিকে ইশারা করে বললেন : যখন তোমরা দেখবে যে, রাত এদিক থেকে আসছে, তখনই রোযাদারের ইফতারের সময় হয়ে গেল।
হাদীস নং ১৮৩৩
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : লোকেরা যতদিন যাবত ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।
হাদীস নং ১৮৩৪
আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত সাওম পালন করেন। এরপর এক ব্যাক্তিকে বললেন : সওয়ারী হতে নেমে ছাতু গুলিয়ে আন। লোকটি বলল, আপনি যদি (পূর্ণ সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত) অপেক্ষা করতেন। তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় বললেন : নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। (তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ) যখন তুমি এদিক (পূর্বদিক) হতে রাত্রির আগমন দেখতে পাবে তখন রোযাদার ইফতার করবে।
হাদীস নং ১৮৩৫
আবদুল্লাহ ইবনে আবু শায়বা রহ……….আসমা বিনতে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে একবার মেঘাচ্ছন্ন দিনে আমরা ইফতার করলাম, এরপর সূর্য দেখা যায় । বর্ণনাকারী হিশামকে জিজ্ঞাসা করা হল, তাদের কি কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? হিশাম রহ. বললেন, কাযা ছাড়া উপায় কি ? (অপর বর্ণনাকারী) মামার রহ. বলেন, আমি হিশামকে বলতে শুনেছি, তাঁরা কাযা করেছিলেন কি না তা আমি জানিনা।
হাদীস নং ১৮৩৬
মুসাদ্দাদ রহ……….রুবায়্যি বিনতে মুআব্বিয রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আশুরার সকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন : যে ব্যক্তি সাওম পালন করেনি সে যেন দিনে বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার সাওম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সাওম পূর্ণ করে। তিনি (রুবায়্যি) রা. বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন রোযা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের রোযা রাখতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরী করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ইফতার পর্যন্ত ভুলিয়ে রাখতাম। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, (ইহনুন) পশম।
হাদীস নং ১৮৩৭
মুসাদ্দাদ রহ………আনাস রা. থেকে বর্নিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না। লোকেরা বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল করেন ? তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই। আমাকে পানাহার করানো হয় (অথবা বললেন) আমি পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি।
হাদীস নং ১৮৩৮
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমে বেসাল হতে নিষেধ করলেন। লোকেরা বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল পালন করেন ! তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই, আমাকে পানাহার করানো হয়।
হাদীস নং ১৮৩৯
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছে যে, তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না। তোমাদের কেউ সাওমে বেসাল করতে চাইলে সে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি যে সাওমে বেসাল পালন করেন ? তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই, আমি রাত্রি যাপন করি এরূপ অবস্থায় যে, আমার জন্য একজন খাদ্য পরিবেশনকারী থাকেন যিনি আহার করান এবং একজন পানীয় পরিবেশনকারী আমাকে পান করান।
হাদীস নং ১৮৪০
উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ. ও মুহাম্মদ রহ……. আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের উপর দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে সাওমে বেসাল হতে নিষেধ করলে তারা বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল করে থাকেন। তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। আবু আবদুল্লাহ বুখারী রহ. বলেন, রাবী উসামন রহ. ‘তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে’ কথাটি উল্লেখ করেননি।
হাদীস নং ১৮৪১
আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি যে বিরতিহীন সাওম পালন করেন ? তিনি বললেন : তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছ ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালাক আমাকে পানাহার করান। এরপর যখন লোকেরা সাওমে বেসাল করা হতে বিরত থাকল না তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন সাওমে বেসাল করতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ দেখতে পেল তখন তিনি বললেন : যদি চাঁদ উঠতে আরো দেরী হত তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে আরো বেশী দিন সাওমে বেসাল করতাম। এ কথা তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান স্বরূপ বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
হাদীস নং ১৮৪২
ইয়াহইয়া রহ…….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমরা সাওমে বেসাল পালন করা হতে বিরত থাক (বাক্যটি তিনি) দু’ বার বললেন । তাকে বলা হল, আপনি তে সাওমে বেসাল করেন। তিনি বললেন : আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন। তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আমল করার দায়িত্ব গ্রহণ করো।
হাদীস নং ১৮৪৩
ইবরাহীম ইবনে হামযা রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা সাওমে বেসাল করবে না। তোমাদের কেউ যদি সাওমে বেসাল করতে চায়, তবে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি তো সাওমে বেসাল পালন করেন ? তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই। আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার জন্য একজন আহার দাতা রয়েছেন যিনি আমাকে আহার করান, একজন পানীয় দানকারী আছেন যিনি আমাকে পান করান।
হাদীস নং ১৮৪৪
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..আবু জুহায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান রা. ও আবুদ দারদা রা.-এর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। (একবার) সালমান রা. আবুদ দারদা রা.-এর সাথে সাক্ষাত করতে এসে উম্মুদ দারদা রা.-কে মলিন কাপড় পরিহিত দেখতে পান । তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে উম্মদ দারদা রা. বললেন, আপনার ভাই আবুদ দারদার পার্থিব কোন কিছুর প্রতি মোহ নেই । কিছুক্ষণ পরে আবুদ দারদা রা. এলেন। তারপর তিনি সালমান রা.-এর জ্য আহার্য প্রস্তুত করান এবং বলেন, আপনি খেয়ে নিন, আমি সাওম পালন করছি। সালমান রা. বললেন, আপনি না খেলে আমি খাবো না। এরপর আবুদ দারদা রা. সালমান রা.–এর সঙ্গে খেলেন। রাত হলে আবুদ দারদা রা. (সালাত আদায়ে) দাঁড়াতে গেলেন। সালমান রা. বললেন, এখন ঘুমিয়ে যান। আবুদ দারদা রা. ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবুদ দারদা রা. আবার সালাতে দাঁড়াতে উদ্যত হলেন, সালমান রা. বললেন, ঘুমিয়ে যান। যখন রাতের শেষ ভাগ হল, সালমান রা. আবুদ দারদা রা.-কে বললেন, এখন দাঁড়ান। এরপর তাঁরা দু’ জনে সালাত আদায় করলেন। পরে সালমান রা. তাকে বললেন, আপনার প্রতিপালকের হক আপনার উপর আছে। আপনার নিজেরও হক আপনার উপর রয়েছে। আবার আপনার পরিবারেরও হক রয়েছে। প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করুন। এরপর আবুদ দারদা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। (সব শুনে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সালমান ঠিকই বলেছে।
হাদীস নং ১৮৪৫
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে (এত বেশী) সাওম পালন করতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর সাওম পরিত্যাগ করবেন না। (আবার কখনো এত বেশী) সাওম পালন না করা অবস্থায় একাধারে কাটাতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর (নফল) সাওম পান করবেন না। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে রমযান ব্যতীত কোন পুরা মাসের সাওম পালন করতে দেখিনি এবং শা’বান মাসের চেয়ে কোন মাসে বেশী (নফল) সাওম পালন করতে দেখিনি।
হাদীস নং ১৮৪৬
মুআয ইবনে ফাযালা রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শা’বান মাসের চেয়ে বেশী (নফল) সাওম কোন মাসে পালন করতেন না। তিনি (প্রায়) পুরা শা’বান মাসই সাওম পালন করতেন এবং তিনি বলতেন : তোমাদের সাধ্যে যতটুকু কুলায় ততটুকু (নফল) আমল কর, কারণ তোমরা (আমল করতে করতে) ক্লান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা (সাওয়াব দান) বন্ধ করেন না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় সালাত ছিল তাই-যা যথাযথ নিয়মে সর্বদা আদায় করা হত, যদিও তা পরিমাণে কম হত এবং তিনি যখন কোন (নফল) সালাত আদায় করতেন পরবর্তীতে তা অব্যাহত রাখতেন।
হাদীস নং ১৮৪৭
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ব্যতীত কোন মাসে পুরা মাসের সাওম পালন করেন নাই। তিনি এমনভাবে (নফল) সাওম পালন করতেন যে, কেউ বলতে চাইলে বলতে পারতো, আল্লাহর কসম ! তিনি আর সাওম পালন পরিত্যাগ করবেন না। আবার এমনভাবে (নফল) সাওম ছেড়ে দিতেন যে, কেউ বলতে চাইলে বলতে পারতো আল্লাহর কসম ! তিনি আর সাওম পালন করবেন না।
হাদীস নং ১৮৪৮
আবদুল আযীয আবদুল্লাহ রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাসে এভাবে সাওম ছেড়ে দিতেন যে, আমরা মনে করতাম, তিনি এ মাসে আর সাওম পালন করবেন না। আবার কোন মাসে এভাবে সাওম পালন করতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি এ মাসে আরমা সাওম ছাড়বেন না। আর তুমি যদি তাকে রাতে সালাত আদায়রত অবস্থায় দেখতে চাইতে তবে তা দেখতে পেতে, আবার যদি তুমি তাকে ঘুমন্ত দেখতে চাইতে তবে তাও দেখতে পেতে। সুলাইমান রহ. হুমায়দ রহ. সূত্রে বলেন, যে, তিনি আনাস রা.-কে সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন।
হাদীস নং ১৮৪৯
মুহাম্মদ রহ………হুমাইদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস রা.-কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর (নফল) সাওমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, যে কোন মাসে আমি তাকে সাওম পালনরত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি, তাকে সে অবস্থায় দেখেছি, আবার তাকে সাওম পালন না করা অবস্থায় দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। রাতে যদি তাকে সালাত আদায়রত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি, তা প্রত্যক্ষ করেছি। আবার ঘুমন্ত দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত মুবারক হতে নরম কোন পশমী বা রেশমী কাপড় স্পর্শ করি নাই। আর আমি তাঁর (শরীরের) ঘ্রাণ হতে অধিক সুগন্ধযুক্ত কোন মিশক বা আম্বর পাইনি।
হাদীস নং ১৮৫০
ইসহাক রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন। এরপর তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেন অর্থাৎ “তোমাদের উপর মেহমানের হক আছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে”। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সাওমে দাউদ আ. কি ? তিনি বললেন : “অর্ধেক বছর” (-এর সাওম পালন করা)।
হাদীস নং ১৮৫১
মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন : হে আবদুল্লাহ ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন সাওম পালন কর এবং সারারাত সালাত আদায় করে থাক। আমি বললাম, ঠিক (শুনেছেন) ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি বললেন : এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে) সাওম পালন কর আবার সাওম ছেড়েও দাও। (রাতে) সালাত আদায় কর আবার ঘুমাও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হক রয়েছে, তোমার চোখের হক রয়েছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রী হক আছে, তোমার মেহমানের হক আছে। তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম পালন কর। কেননা নেক আমলের বদলে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকী। এভাবে সারা বছরের সাওম হয়ে যায়। আমি (বললাম) আমি এর চেয়েও কঠোর আমল করতে সক্ষম। তখন এভাবে সারা বছরের সাওম হয়ে যায়। আমি (বললাম) আমি এর চেয়েও কঠোর আমল করতে সক্ষম। তখন আমাকে আরও কঠিন আমলের অনুমতি দেওয়া হল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আরো বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেন : তবে আল্লাহর নবী দাউদ আ.-এর সাওম পালন কর, এর থেকে বেশী করতে যেয়ো না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নবী দাউদ আ.-এর সাওম কেমন ? তিনি বললেন : অর্ধেক বছর। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ রা. বৃদ্ধ বয়সে বলতেন, আহা ! আমি যদি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত রুখসত (সহজতর বিধান) কবুল করে নিতেন।
হাদীস নং ১৮৫২
আবুল ইয়ামান রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আমার সম্পর্কে এ কথা পৌছে যায় যে, আমি বলেছি, আল্লাহর কসম ! আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন সাওম পালন করব এবং রাতভর সালাত আদায় করব। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করায় আমি বললাম, আপনার উপর আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক ! আমি এ কথা বলেছি । তিনি বললেন : তুমি তো এরূপ করতে সক্ষম হবে না। বরং তুমি সাওম পালন কর ও ছেড়েও দাও, (রাতে) সালাত আদায় কর ও নিদ্রা যাও। তুমি মাসে তিন দিন করে সাওম পালন কর, কারণ নেক কাজের ফল তার দশগুণ; এভাবেই সারা বছরের সাওম পালন হয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি এর থেকে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন : তাহলে একদিন সাওম পালন কর এবং একদিন সাওম পালন কর আর একদিন ছেড়ে দাও। এই হল দাউদ আ.-এর সাওম এবং এই হল সর্বোত্তম (সাওম) আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এর চেয়ে উত্তম সাওম (রাখার পদ্ধতি) আর নেই।
হাদীস নং ১৮৫৩
আমর ইবনে আলী রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌছে যে, আমি একটানা সাওম পালন করি এবং রাতভর সালাত আদায় করি। এরপর হয়ত তিনি আমার কাছে লোক পাঠালেন অথবা আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম। তিনি বললেন : আমি কি এ কথা ঠিক শুনি নাই যে, তুমি সাওম পালন করতে থাক আর ছাড় না এবং তুমি (রাতভর) সালাত আদায় করতে থাক আর ঘুমাও না ? (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) তুমি সাওম পালন কর এবং মাঝে মাঝে তা ছেড়েও দাও। রাতে সালাত আদায় কর এবং নিদ্রাও যাও। কেননা তোমার উপর তোমার চোখের হক রয়েছে এবং তোমার নিজের শরীরের ও তোমার পরিবারের হক তোমার উপর আছে। আবদুল্লাহ রা. বললেন, আমি এর চেয়ে বেশী শক্তি রাখি। তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : তাহলে তুমি দাউদ আ.-এর সিয়াম পালন কর। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ রা. বললেন, তা কিভাবে ? তিনি বললেন : দাউদ আ. একদিন সাওম পালন করতেন, একদিন ছেড়ে দিতেন এবং তিনি (শত্রুর) সম্মুখীন হলে পলায়ন করতেন না। আবদুল্লাহ রা. বললেন : হে আল্লাহর নবী ! আমাকে এ শক্তি কে যোগাবে ? বর্ণনাকারী আতা রহ. বলেন, (এই হাদীসে) কি ভাবে সব সময়ের সিয়ামের প্রসঙ্গ আসে সে কথাটুকু আমার মনে নেই (অবশ্য) এতটুকু মনে আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ বার এ কথাটি বলেছেন, সব সময়ের সাওম কোন সাওম নয়।
হাদীস নং ১৮৫৪
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তুমি প্রতি মাসে তিন দিন সাওম পালন কর। আবদুল্লাহ রা. বললেন, আমি এর চাইতে বেশী করার শক্তি রাখি। এভাবে তিনি বৃদ্ধির আবেদন করতে লাগলেন যে, অবশেষে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : একদিন সাওম পালন কর আর একদিন ছেড়ে দাও এবং আরো বললেন : প্রতি মাসে (এক খতম) কুরআন পাঠ কর। তিনি বললেন, আমি এর চেয়ে বেশী শক্তি রাখি। এভাবে বলতে লাগলেন, অবশেষে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে তিন দিনে (পাঠ কর)।
হাদীস নং ১৮৫৫
আদম রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কি সব সময় সাওম পালন কর এবং রাতভর সালাত আদায় করে থাক? আমি বললাম, জী হ্যাঁ। তিনি বললেন : তুমি এরূপ করলে চোখ বসে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। যে সারা বছর সাওম পালন করে সে যেন সাওম পালন করে না। মাসে তিন দিন করে সাওম পালন করা সারা বছর সাওম পালনের সমতুল্য। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন : তাহলে তুমি দাউদী সাওম পালন কর, তিনি একদিন সাওম পালন করতেন আর একদিন ছেড়ে দিতেন এবং যখন শত্রুর সম্মুখীন হতেন তখন পলায়ন করতেন না।
হাদীস নং ১৮৫৬
ইসহাক ওয়াসিতী রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আমার সাওমের আলোচনা করায় তিনি আমার এখানে আগমন করেন। আমি তাঁর জন্য খেজুরের গাছের ছালে পরিপূর্ণ চামড়ার বালিশ (হেলান দিয়ে বসার জন্য) পেশ করলাম। তিনি মাটিতে বসে পড়লেন। বালিশটি তাঁর ও আমার মাঝে পড়ে থাকল। তিনি বললেন : প্রতি মাসে তুমি তিন দিন রোযা রাখলে হয় না ? আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (আরো)। তিনি বললেন : সাত দিন । আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (আরো)। তিনি বললেন : নয় দিন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (আরো) । তিনি বললেন : এগারো দিন। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : দাউদ আ.-এর সাওমের চেয়ে উত্তম সাওম আর হয় না- অর্ধেক বছর, একদিন সাওম পালন কর ও একদিন ছেড়ে দাও।
হাদীস নং ১৮৫৭
আবু মামার রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার বন্ধু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতি মাসে তিন দিন করে সাওম পালন করা এবং দু’রাকআত সালাতুয-যুহা এবং ঘুমানোর পূর্বে বিতর সালাত আদায় করা।
হাদীস নং ১৮৫৮
মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার মাতা) উম্মে সুলাইম রা.-এর ঘরে আগমন করলেন। তিনি তাঁর সামনে খেজুর ও ঘি পেশ করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাদের ঘি মশকে এবং খেজুর তার বরতনে রেখে দাও। কারণ আমি রোযাদার। এরপর ঘরের এক পাশে গিয়ে নফল সালাত আদায় করলেন এবং উম্মে সুলাইম রা. ও তাঁর পরিজনের জন্য দু’আ করলেন। উম্মে সুলাইম রা. আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার একটি ছোট ছেলে আছে। তিনি বললেন : কে সে ? উম্মে সুলাইম রা. বললেন, আপনার খাদেম আনাস । তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণের দু’আ করলেন। তিনি বললেন : হে আল্লাহ ! তুমি তাকে মাল ও সন্তান-সন্ততি দান কর এবং তাকে বরকত দাও। আনাস রা. বলেন, আমি আনসারগণের মধ্যে অধিক সম্পদশালীদের একজন এবং আমার কন্যা উমায়না আমাকে জানিয়েছে যে, হাজ্জাজ (ইবনে ইউসুফ) -এর বসরায় আগমনের পূর্ব পর্যন্ত একশত বিশের অধিক আমার নিজের সন্তান মারা গেছে।
হাদীস নং ১৮৫৯
ইবনে আবু মারইয়াম রহ……….হুমায়দ রহ. আনাস রা.-কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন।
হাদীস নং ১৮৬০
সালত ইবনে মুহাম্মদ রহ……..ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অথবা (রাবী বলেন) অন্য এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করেন এবং ইমরান রা. তা শুনছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে অমুকের পিতা ! তুমি কি এ মাসের শেষভাগে সাওম পালন করনি ? (রাবী) বলেন, আমার মনে হয় (আমার ওস্তাদ) বলেছেন, অর্থাৎ রমযান। লোকটি উত্তর দিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! না। তিনি বললেন : যখন সাওম পালন শেষ করবে তখন দুদিন সাওম পালন করে নিবে। আমার মনে হয় সালত রহ. রমযান শব্দটি বর্ণনা করেননি। সাবিত রহ. ইমরান সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শা’বানের শেষভাগে বলে উল্লেখ করেছেন । আবু আবদুল্লাহ বুখারী রহ. বলেন, শা’বান শব্দটি অধিকতর সহীহ।
হাদীস নং ১৮৬১
আবু আসিম রহ…….মুহাম্মদ ইবনে আব্বাদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জুমুআর দিনে (নফল) সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন ? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবু আসিম রহ. ব্যতীত অন্যেরা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, পৃথকভাবে জুমুআর দিনের সাওম পালন (-কে নিষেধ করেছেন)।
হাদীস নং ১৮৬২
উমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কেউ যেন শুধু জুমুআর দিনে সাওম পালন না করে কিন্তু তার আগে একদিন অথবা পরের দিন (যদি পালন করে তবে জুমুআর দিনে সাওম পালন করা যায়)।
হাদীস নং ১৮৬৩
মুসাদ্দাদ ও মুহাম্মদ রহ………জুয়াইরিয়া বিনতে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআর দিনে তাঁর নিকট প্রবেশ করেন তখন তিনি সাওম পালনরত ছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কি গতকাল সাওম পালন করেছিলে ? তিনি বললেন, না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কি আগামীকাল সাওম পালনের ইচ্ছা রাখ? তিনি বললেন, না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে সাওম ভেঙ্গে ফেল। হাম্মাদ ইবনুল জাদ রহ. স্বীয় সূত্রে জুয়াইরিয়া রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আদেশ দেন এবং তিনি সাওম ভঙ্গ করেন।
হাদীস নং ১৮৬৪
মুসাদ্দাদ রহ…….আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কোন দিন কোন কাজের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতেন ? উত্তরে তিনি বললেন, না, বরং তাঁর আমল স্থায়ী হত এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব আমল করার শক্তি-সামর্থ্য রাখতেন তোমাদের মধ্যে কে আছে যে সবের সামর্থ্য রাখে ?
হাদীস নং ১৮৬৫
মুসাদ্দাদ রহ. ও আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..উম্মুল ফাযল বিনতে হারিস রা. সূত্রে বর্ণনা করেন যে, কিছুসংখ্যক লোক আরাফাতের দিনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাওম পালন সম্পর্কে তাঁর কাছে সন্দেহ প্রকাশ করে। তাদের কেউ বলল, তিনি সাওম পালন করেছেন। আর কেউ বলল, না, তিনি করেন নাই। এতে উম্মুল ফাযল রা. এক পেয়ালা দুধ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং তিনি তা পান করে নিলেন। এ সময় তিনি উটের পিঠে উকুফ অবস্থায় ছিলেন।
হাদীস নং ১৮৬৬
ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………মায়মূনা রা. থেকে বর্ণিত যে, কিছু সংখ্যক লোক আরাফাতের দিনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাওম পালন সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করলে তিনি স্বল্প পরিমাণ দুধ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পাঠিয়ে দিলে তিনি তা পান করলেন ও লোকেরা তা প্রত্যক্ষ করছিল। তখন তিনি (আরাফাতের) অবস্থান স্থলে ওকুফ করছিলেন।
হাদীস নং ১৮৬৭
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………বনূ আযহারের আযাদকৃত গোলাম আবু উবায়দ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার ঈদে উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর সঙ্গে ছিলাম, তখন তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুই দিনে সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন। যে দিন তোমরা তোমাদের সাওম ছেড়ে দাও। আরেক দিন, যেদিন তোমরা তোমাদের কুরবানীর গোশত খাও। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, ইবনে উয়ায়না রহ. বলেন, যিনি ইবনে আযহারের মাওলা বলে উল্লেখ করেছেন, তিনি ঠিক বর্ণনা করেছেন; আর যিনি আবদুর রাহমান ইবনে আওফা রা.-এর মাওলা বলেছেন, তিনিও ঠিক বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৮৬৮
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর ঈদের দিন সাওম পালন করা থেকে, সাম্মা ধরনের কাপড় পরিধান করতে, এক কাপড় পরিধানরত অবস্থায় দুই হাঁটু তুলে নিতম্বের উপর বসতে (কেননা এতে সতর প্রকাশ পাওয়ার আশংকা রয়েছে) এবং ফজর ও আসরের পরে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীস নং ১৮৬৯
ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দু’ (দিনের) সাওম ও দু’ (প্রকারের) ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে, ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর (দিনের) সাওম এবং মুলামাসা ও মুনাবাযা (পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয়) হতে।
হাদীস নং ১৮৭০
মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না রহ…….যিয়াদ ইবনে জুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি এসে (আবদুল্লাহ) ইবনে উমর রা.-কে বলল যে, এক ব্যক্তি কোন এক দিনের সাওম পালন করার মানত করেছে, আমার মনে হয় সে সোমবারের কথা বলেছিল। ঘটনাক্রমে ঐ দিন ঈদের দিন পড়ে যায়। ইবনে উমর রা. বললেন, আল্লাহ তা’আলা মানত পুরা করার নির্দেশ দিয়েছেন আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই (ঈদের) দিনে সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীস নং ১৮৭১
হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, যিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চারটি কথা শুনেছি, যা আমার খুব ভালো লেগেছে। তিনি বলেছেন, স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ ছাড়া কোন নারী যেন দুই দিনের দূরত্বের সফর না করে। ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিনে সাওম নেই। ফজরের সালাতের পরে সূর্যোদয় এবং আসরের সালাতের পরে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন সালাত নেই। মসজিদে হারাম, মসজিদে আকসা ও আমার এই মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে যেন সফর না করে।
হাদীস নং ১৮৭২
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..আয়িশা রা. ও ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন, যার নিকট কুরবানীর পশু নেই তিনি ছাড়া অন্য কারোও জন্য আইয়্যামে তাশরীকে সাওম পালন করার অনুমতি দেওয়া হয় নাই।
হাদীস নং ১৮৭৩
আবদুল্লাহ ইবেন ইউসুফ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি একই সঙ্গে হজ্জ ও উমরা পালনের সুযোগ পালন করল সে আরাফাত দিবস পর্যন্ত সাওম পালন করবে। সে যদি কুরাবনী না করতে পারে এবং সাওম পালন না করে থাকে তবে মিনার দিনগুলোতে সাওম পালন করবে। ইবনে শিহাব রহ…….আয়িশা রা. থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইবরাহীম ইবনে সাদ রহ. ইবনে শিহাব রহ. থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৮৭৪
আবু আসিম রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আশুরার দিনে কেউ চাইলে সাওম পালন করতে পারে।
হাদীস নং ১৮৭৫
আবুল ইয়ামান রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে আশুরার দিনে সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, পরে যখন রমযানের সাওম ফরয করা হল তখন যার ইচ্ছা (আশুরার) সাওম পালন করত আর যার ইচ্ছা করত না।
হাদীস নং ১৮৭৬
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে কুরাইশগণ আশুরার সাওম পালন করত এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও এ সাওম পালন করতেন। যখন তিনি মদীনায় আগমন করেন তখনও এ সাওম পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমযানের সাওম ফরয করা হল তখন আশুরার সাওম ছেড়ে দেয়া হল, ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না।
হাদীস নং ১৮৭৭
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………হুমায়দ ইবনে আবদুর রাহমান রহ. থেকে বর্ণিত, যে বছর মুআবিয়া রা. হজ্জ করেন সে বছর আশুরার দিনে (মসজিদে নববীর) মিম্বরে তিনি (রাবী) তাকে বলতে শুনেছেন যে, হে মদীনাবাসীগণ! তোমাদের আলিমগণ কোথায় ? আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আজকে আশুরার দিন, আল্লাহ তা’আলা এর সাওম তোমাদের উপর ফরয করেননি বটে, তবে আমি (আজ) সাওম পালন করছি। যার ইচ্ছা সে সাওম পালন করুক যার ইচ্ছা সে পালন না করুক।
হাদীস নং ১৮৭৮
আবু মামার রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীগণ আশুরার দিনে সাওম পালন করে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন : কি ব্যাপার ? (তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর কেন ?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এ দিনে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল হতে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মূসা আ. সাওম পালন করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী, এরপর তিনি এ দিনে সাওম পালন করেন এবং সাওম পালনের নির্দেশ দেন।
হাদীস নং ১৮৭৯
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…….আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আশুরার দিনকে ইয়াহুদীগণ ঈদ মনে করত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণকে) বললেন : তোমরাও এ দিনের সাওম পালন কর।
হাদীস নং ১৮৮০
উবায়দুল্লাহ ইবনে মূসা রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আশুরার দিনের সাওমের উপরে অন্য কোন দিনের সাওমকে প্রাধান্য প্রদান করতে দেখি নাই এবং এ মাস অর্থাৎ রমযান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখি নাই)।
হাদীস নং ১৮৮১
মক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ…….সালামা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তিকে লোকজনের মধ্যে এ মর্মে ঘোষণা দিতে আদেশ করলেন যে, যে ব্যক্তি খেয়েছে, সে যেন দিনের বাকি অংশে সাওম পালন করে আর যে খায় নাই, সে যেন সাওম পালন করে। কেননা, আজকের দিন আশুরার দিন।
তারাবীহর সালাত অধ্যায় (১৮৮২-১৮৯৭)
হাদীস নং ১৮৮২
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রমযান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রমযানের ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় কিয়ামে রমযান অর্থাৎ তারাবীহর সালাত আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে।
হাদীস নং ১৮৮৩
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় তারাবীহর সালাতে দাঁড়াবে তা পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। হাদীসের রাবী ইবনে শিহাব রহ. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এবং তারাবীহর ব্যাপারটি এ ভাবেই চালু ছিল। এমনকি আবু বকর রা.-এর খিলাফতকালে ও উমর রা.-এর খিলাফতের প্রথম ভাগে এরূপই ছিল। ইবনে শিহাব রহ. উরওয়া ইবনে যুবাইর রহ. সূত্রে আবদুর রাহমান ইবনে আবদ আল-কারী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রমাযানের এক রাতে উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে, লোকেরা বিক্ষিপ্ত জামায়াতে বিভক্ত । কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং তার ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। উমর রা. বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দেই, তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি উবাই ইবনে কাব রা.-এর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তাঁর (উমর রা.) সঙ্গে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। উমর রা. বললেন, কত না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা ! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন, কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত আদায় করত।
হাদীস নং ১৮৮৪
ইসমাঈল রহ……..নবী সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেন এবং তা ছিল রমযানে।
হাদীস নং ১৮৮৫
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গভীর রাতে বের হয়ে মসজিদে সালাত আদায় করেন, কিছু সংখ্যক পুরুষ তাঁর পিছনে সালাত আদায় করেন। সকালে লোকেরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেন, ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হন। তিনি সালাত আদায় করেন লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। সকালে তাঁরা এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। তৃতীয় রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে সালাত আদায় করেন ও লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হল না, কিন্তু তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফজরের সালাতে বেরিয়ে আসলেন এবং সালাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়ার পর বললেন : শোন ! তোমাদের (গতরাতের) অবস্থান আমার অজানা ছিল না, কিন্তু আমি এই সালাত তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবার আশংকা করছি (বিধায় বের হই নাই)। কেননা তোমরা তা আদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হল আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়।
হাদীস নং ১৮৮৬
ইসমাঈল রহ………আবু সালামা ইবনে আবদুর রাহমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি আয়িশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রমযানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত কিরূপ ছিল ? তিনি বললেন, রমযান মাসে ও রমযান ছাড়া অন্য সময়ে (রাতে) তিনি এগারো রাকআত হতে বৃদ্ধি করতেন না। তিনি চার রাকআত সালাত আদায় করতেন, সে চার রাকআতের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য ছিল প্রশ্নাতীত। এরপর চার রাকআত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য ছিল প্রশ্নাতীত। এরপর তিন রাকআত সালাত আদায় করতেন। আমি (আয়িশা রা.) বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি বিতর আদায়ের আগে ঘুমিয়ে যাবেন ? তিনি বললেন : হে আয়িশা ! আমার দু’ চোখ ঘুমায় বটে কিন্তু আমার কালব নিদ্রাভিভূত হয় না।
হাদীস নং ১৮৮৭
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় সাওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কাদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। সুলাইমান ইবনে কাসীর রহ. যুহরী রহ. থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ১৮৮৮
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নযোগে রমযানের শেষের সাত রাতে লাইলাতুল কাদর দেখানো হয়। (এ শুনে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে।
হাদীস নং ১৮৮৯
মুয়ায ইবনে ফাযালা রহ…….আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রমযানের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন : আমাকে লাইলাতুল কাদর (-এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভূলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান কর। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি । অতএব যে ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছে, সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ হতে বের হয়ে না)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হাল্কা মেঘ খণ্ডও দেখতে পাই নাই। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হল যে, খেজুরের শাখায় তৈরী মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত শুরু করা হলে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই।
হাদীস নং ১৮৯০
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কাদরের সন্ধান কর।
হাদীস নং ১৮৯১
ইবরাহীম ইবনে হামযা রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের মাঝের দশকে ইতিকাফ করেন। বিশ তারিখ অতীত হওয়ার সন্ধ্যায় এবং একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাঁর সঙ্গে যারা ইতিকাফ করেছিলেন সকলেই নিজ নিজ বাড়ীতে প্রস্থান করেন এবং তিনি যে মাসে ইতিকাফ করেন ঐ মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকরেদ সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ, তাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন, তারপর বলেন যে, আমি এই দশকে ইতিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত করেছি যে, শেষ দশকে ইতিকাফ করব। যে আমার সঙ্গে ইতিকাফ করেছিল সে যেন তার ইতিকাফস্থলে থেকে যায় । আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) শেষ দশকে ঐ রাতের তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তা তালাশ কর। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, ঐ রাতে আমি কাদা-পানিতে সিজদা করছি। ঐ রাতে আকাশে প্রচুর মেঘের সঞ্চার হয় এবং বৃষ্টি হয়। মসজিদে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফজরের সালাত শেষে ফিরে বসেন তখন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর মুখমণ্ডল কাদা-পানি মাখা।
হাদীস নং ১৮৯২
মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, তোমরা (লাইলাতুল কাদর) তালাশ কর।
হাদীস নং ১৮৯৩
মুহাম্মদ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন : তোমরা রমযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কাদর তালাশ কর।
হাদীস নং ১৮৯৪
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা তা (লাইলাতুল কাদর) রমযানের শেষ দশকে তালাশ কর। লাইলাতুল কাদর (শেষ দিক হতে গণনায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে।
হাদীস নং ১৮৯৫
আবদুল্লাহ ইবনে আবুল আসওয়াদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তা শেষ দশকে, তা অতিবাহিত নবম রাতে অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে অর্থাৎ লাইলাতুল কাদর। ইবনে আব্বাস রা. থেকে অন্য সূত্রে বর্ণিত যে, তোমরা ২৪তম রাতে তালাশ কর।
হাদীস নং ১৮৯৬
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……..উবাদা ইবনুস সামিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখের) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দু’জন মুসলমান ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বললেন : আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কাদরের সংবাদ দিবার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফরে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবত : এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কর।
হাদীস নং ১৮৯৭
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রমযানের শেষ দশক আসত তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশী বেশী ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্রে জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।
ই’তিকাফ অধ্যায় (১৮৯৮-১৯১৮)
হাদীস নং ১৮৯৮
ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন।
হাদীস নং ১৮৯৯
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………নবী সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিণীগণও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন।
হাদীস নং ১৯০০
ইসমাঈল রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করতেন। এক বছর এরূপ ইতিকাফ করেন, যখন একুশের রাত এল, যে রাতের সকালে তিনি তাঁর ইতিকাফ হতে বের হবেন, তখন তিনি বললেন : যারা আমার সংগে ইতিকাফ করেছে তারা যেন শেষ দশক ইতিকাফ করে। আমাকে স্বপ্নে এই রাত (লাইলাতুল কাদর) দেখানো হয়েছিল, পরে আমাকে তা (সঠিক তারিখ) ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য আমি স্বপ্নে দেখতে পেয়েছি যে, ঐ রাতের সকালে আমি কাদা-পানির মাঝে সিজদা করছি। তোমরা তা শেষ দশকে তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ কর। পরে এই রাতে আকাশ হতে বৃষ্টি পড়তে লাগল। একুশের রাতের সকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কপালে কাদা-পানির চিহ্ন আমার এ দু’চোখ দেখতে পায়।
হাদীস নং ১৯০১
মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না রহ……….নবী সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে তাঁর মাথা ঝুঁকিয়ে দিতেন আর আমি ঋতুবতী অবস্থায় তাঁর চুল আঁচড়িয়ে দিতাম।
হাদীস নং ১৯০২
কুতাইবা রহ……..নবী সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে থাকাবস্থায় আমার দিকে মাথা বাড়িয়ে দিতেন আর আমি তা আঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি যখন ইতিকাফে থাকতেন তখন (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতেন না।
হাদীস নং ১৯০৩
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঋতুবতী অবস্থায় আমার সঙ্গে কাটাতেন এবং তিনি ইতিকাফরত অবস্থায় মসজিদ হতে তাঁর মাথা বের করে দিতেন, আমি ঋতুবতী অবস্থায় তা ধুয়ে দিতাম।
হাদীস নং ১৯০৪
মুসাদ্দাদ রহ…….ইবনে উমর রা. সূত্রে বর্ণিত যে, উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমি জাহিলিয়্যা যুগে মসজিদুল হারামে এক রাত ইতিকাফ করার মানত করেছিলাম। তিনি (উত্তরে) বললেন : তোমরা মানত পুরা কর।
হাদীস নং ১৯০৫
আবুন নুমান রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমযানের শেষ দশকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করতেন। আমি তাঁর তাবু তৈরী করে দিতাম। তিনি ফজরের সালাত আদায় করে তাঁতে প্রবেশ করতেন। হাফসা রা. তাবু খাটাবার জন্য আয়িশা রা.-এর কাছে অনুমতি চাইলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলে হাফসা রা. তাবু খাটালেন। যায়নাব বিনতে জাহাশ রা. তা দেখে আরেকটি তাবু তৈরী করলেন। সকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁবুগুলো দেখলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন : এগুলো কী ? তাকে জানানো হলে তিনি বললেন : তোমরা কি মনে কর এগুলো দিয়ে নেকী হাসিল হবে ? এ মাসে তিনি ইতিকাফ ত্যাগ করলেন এবং পরে শাওয়াল মাসে দশ দিন ইতিকাফ করেন।
হাদীস নং ১৯০৬
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করার ইচ্ছা করলেন। এরপর যে স্থানে ইতিকাফ করার ইচ্ছা করেছিলেন সেখানে এসে কয়েকটি তাবু দেখতে পেলেন। আয়িশা রা. , হাফসা রা. ও যায়বান রা.-এর তাবু। তখন তিনি বললেন : তোমরা কি এগুলো দিয়ে নেকী হাসিলের ধারণা কর ? এরপর তিনি চলে গেলেন আর ইতিকাফ করলেন না । পরে শাওয়াল মাসে দশ দিনের ইতিকাফ করলেন।
হাদীস নং ১৯০৭
আবুল ইয়ামান রহ………নবী সহধর্মিণী সাফিয়্যা রা. বর্ণনা করেন যে, একবার তিনি রমযানের শেষ দশকে মসজিদে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে হাজির হন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফরত ছিলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন। তারপর ফিরে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ান। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মসজিদের দরজা পর্যন্ত পৌছলেন, তখন দু’জন আনসারী সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা উভয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাম করলেন। তাদের দু’জনকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমরা দু’জন থাম। ইনি তো (আমার স্ত্রী) সাফিয়্যা বিনতে হুয়ায়্যী। এতে তাঁরা দু’জনে সুবহানাল্লাহ ইয়া রাসূলাল্লাহ বলে উঠলেন এবং তাঁরা বিব্রত বোধ করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : শয়তান মানুষের রক্ত শিরায় চলাচল করে। আমি আশংকা করলাম যে, যেস তোমাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করতে পারে।
হাদীস নং ১৯০৮
আবদুল্লাহ ইবনে মুনীর রহ………আবু সালামা ইবনে আবদুর রাহমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে লাইলাতুল কাদর প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে শুনেছেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমরা রমযানের মধ্যম দশকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছিলাম। রাবী বলেন, এরপর আমরা বিশ তারিখের সকালে বের হতে চাইলাম। তিনি বিশ তারিখের সকালে আমাদেরকে সম্বোধন করে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন : আমাকে (স্বপ্নযোগে) লাইলাতুল কাদরের (নির্দিষ্ট তারিখ) দেখানো হয়েছিল। পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় তারিখে তা তালাশ কর। আমি দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে । লোকেরা মসজিদে ফিরে এল। আমরা তখন আকাশে এক খণ্ড মেঘও দেখতে পাইনি । একটু পরে এক খণ্ড মেঘ দেখা দিল ও বর্ষণ হল এবং সালাত শুরু হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাদা-পানির মাঝে সিজদা করলেন। এমনকি আমি তাঁর কপালে ও নাকে কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম।
হাদীস নং ১৯০৯
কুতাইবা রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে তাঁর এক মুস্তাহাযা সহধর্মিণী ইতিকাফ করেন। তিনি লাল ও হলুদ রংয়ের স্রাব নির্গত হতে দেখতে পেতেন। অনেক সময় আমরা তাঁর নীচে একটি গামলা রেখে দিতাম আর তিনি উপর সালাত আদায় করতেন।
হাদীস নং ১৯১০
সাঈদ ইবনে উফায়র রহ. ও আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..আলী ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিণী সাফিয়্যা রা. বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইতিকাফ অবস্থায়) মসজিদে অবস্থান করছিলেন, ঐ সময় তাঁর নিকট তাঁর সহধর্মিণীগণ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা যাওয়ার জন্য রহওয়ানা হন। তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাফিয়্যা বিনতে হুয়ায়্যীকে বললেন : তুমি তাড়াতাড়ি করো না। আমি তোমার সাথে যাব। তাঁর ঘর ছিল উসামার বাড়িতে। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সঙ্গে করে বের হলেন। এমতাবস্থায় দু’জন আনসার ব্যক্তির সাক্ষাত ঘটলে তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেয়ে আগে বেড়ে গেলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দু’জনকে বললেন : তোমরা এদিকে আস। এ তো সাফিয়্যা বিনতে হুয়ায়্যী। তাঁরা দু’জন বলে উঠলেন, সুবহানাল্লাহ ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি বললেন : শয়তান মানব দেহে রক্তের মত চলাচল করে। আমি আশংকা বোধ করলাম যে, সে তোমাদের মনে কিছু সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়।
হাদীস নং ১৯১১
ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ. এবং ইবনে আবদুল্লাহ রহ………সাফিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইতিকাফ অবস্থায় একবার তিনি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসেন। তিনি যখন ফিরে যান তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে কিছু দূর হেঁটে আসেন। ঐ সময়ে এক আনসার ব্যক্তি তাকে দেখতে পায়। তিনি যখন তাকে দেখতে পেলেন তখন তাকে ডাক দিলেন ও বললেন : এসো, এ তো সাফিয়্যা বিনতে হুয়ায়্যী শয়তান মানব দেহে রক্তের মত চলাচল করে থাকে। রাবী বলেন, আমি সুফিয়ান রা.-কে বললাম, তিনি রাতে এসেছিলেন ? তিনি বললেন, রাতে ছাড়া আর কি?
হাদীস নং ১৯১২
আবদুর রহামান ইবনে বিশর রহ…… আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রমযানের মধ্যম দশকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছিলাম। বিশ তারিখের সকালে (ইতিকাফ শেষ করে চলে আসার উদ্দেশ্যে) আমরা আমাদের আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকটে এসে বললেন :যে ব্যক্তি ইতিকাফ করেছে সে যেন তার ইতিকাফস্থলে ফিরে যায়। কারণ আমি এই রাতে দেখতে পেয়েছি এবং আমি আরো দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। এরপর যখন তিনি তাঁর ইতিকাফের স্থানে ফিরে গেলেন ও আকাশে মেঘ দেখা দিল, তখন আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হল। সেই সত্তার কসম ! যিনি তাকে যথাযথই প্রেরণ করেছেন, ঐ দিনের শেষভাগে আকাশে মেঘ দেখা দিল। মসজিদ ছিল খেজুর পাতার ছাউনীর। আমি তাঁর নাকে অগ্রভাগে পানি ও কাদার চিহ্ন দেখেছিলাম।
হাদীস নং ১৯১৩
মুহাম্মদ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমযানে ইতিকাফ করতেন। ফজরের সালাত শেষে ইতিকাফের নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করতেন। আয়িশা রা. তাঁর কাছে ইতিকাফ করার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন। আয়িশা রা. মসজিদে একটি তাবু করে নিলেন। হাফসা রা. তা শুনে একটি তাবু তৈরী করে নিলেন এবং যায়নাব রা.-ও তা শুনে আর একটি তাবু তৈরী করে নিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত শেষে এসে চারটি তাবু দেখতে পেয়ে বললেন : একি ? তাকে তাদের ব্যাপারে জানানো হলে, তিনি বললেন : নেক আমলের প্রেরণা তাদেরকে এ কাজে উদ্ধুদ্ধ করেনি। সব খুলে ফেলা হল। তিনি সেই রমযানে আর ইতিকাফ করলেন না। পরে শাওয়াল মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করেন।
হাদীস নং ১৯১৪
ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি জাহিলিয়্যাতের যুগে মসজিদে হারামে এক রাত ইতিকাফ করার মানত করেছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : তোমার মানত পুরা কর। তিনি এক রাতের ইতিকাফ করলেন।
হাদীস নং ১৯১৫
উবায়দ ইবনে ইসমাঈল রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. জাহিলিয়্যাতের যুগে মসজিদে ইতিকাফ করার মানত করেছিলেন। (বর্ণনাকারী) বলেন, আমার মনে হয় তিনি এক রাতের কথা উল্লেখ করেছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : তোমার মানত পুরা কর।
হাদীস নং ১৯১৬
আবদুল্লাহ ইবনে আবু শায়বা রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমযানে দশ দিনের ইতিকাফ করতেন। যে বছর তিনি ইন্তিকাল করেন সে বছর তিনি বিশ দিনের ইতিকাফ করেছিলেন।
হাদীস নং ১৯১৭
মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ……আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশক ইতিকাফ করার অভিপ্রায় প্রকাশ করলে আয়িশা রা. তাঁর কাছে ইতিকাফ করার অনুমতি প্রার্থনা করায় তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। এরপর হাফসা রা. আয়িশা রা. -এর নিকট অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। তা দেখে যায়নাব বিনতে জাহাশ রা. নিজের জন্য তাবু লাগানোর নির্দেশ দিলে তা পালন করা হল। আয়িশা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে নিজের তাবুতে ফিরে এসে কয়েকটি তাবু দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন : এ কি ব্যাপার ? লোকেরা বলল, আয়িশা, হাফসা ও যায়নাব রা.-এর তাবু। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাঁরা কি নেকী পেতে চায় ? আমি আর ইতিকাফ করবো না। এরপর তিনি ফিরে আসলেন। পরে সাওম শেষ করে শাওয়াল মাসের দশ দিন ইতিকাফ করেন।
হাদীস নং ১৯১৮
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ঋতুবতী অবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চুল আঁচড়িয়ে দিতেন। ঐ সময়ে তিনি মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় থাকতেন আর আয়িশা রা. তাঁর হুজরায় অবস্থান করতেন। তিনি আয়িশা রা.-এর দিকে তাঁর মাথা বাড়িয়ে দিতেন।