- বইয়ের নামঃ সহিহ বুখারী ০৪র্থ খন্ড
- লেখকের নামঃ ইমাম বুখারী
- প্রকাশনাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
- বিভাগসমূহঃ ইসলামিক বই, হাদীস শরীফ
সহিহ বুখারী ০৪র্থ খণ্ড (১৯১৯-২৫১০)
ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায় (১৯১৯-২০৯৬)
হাদীস নং ১৯১৯
আবুল ইয়ামান রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আপনারা বলে থাকেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবু হুরায়রা রা. বেশী বেশী হাদীস বর্ণনা করে থাকে এবং আরো বলেন, মহাজির ও আনসারদের কি হল যে, তারা তো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেন না ? আমার মুহাজির ভাইগণ বাজারে কেনা-বেচায় ব্যস্ত থাকতেন আর আমি কোন প্রকারে আমার পেটের চাহিদা মিটিয়ে (খেয়ে না খেয়ে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে পড়ে থাকতাম। তাঁরা যখন (কাজের ব্যস্ততায়) অনুপস্থিত থাকতেন আমি তখন উপস্থিত থাকতাম। তাঁরা যা ভুলে যেতেন আমি তা সংরক্ষণ করতাম। আর আমার আনসার ভায়েরা নিজেদের খেত-খামারের কাজে ব্যাপৃত থাকতেন। আমি ছিলাম সুফফার মিসকীনদের একজন মিসকীন। তাঁরা যা ভুলে যেতেন, আমি তা সংরক্ষণ করতাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক বর্ণনায় বললেন : আমার এ কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে কেউ তার কাপড় বিছিয়ে দিবে এবং পরে নিজের শরীরের সাথে তার কাপড় জরিয়ে নেবে, আমি যা বলছি সে তা স্মরণ রাখতে পারবে। (আবু হুরায়রা রা. বলেন) আমি আমার গায়ের চাদরখানা বিছিয়ে দিলাম, যতক্ষণ না নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা শেষ করলেন, পরে আমি তা আমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। ফলে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সে কথার কিছুই ভুলিনি।
হাদীস নং ১৯২০
আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আবদুর রাহমান ইবনে আওফা রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন মদীনায় আসি, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার এবং সাদ ইবনে রাবী রা.-এর মাজে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি করে দেন। পরে সাদ ইবনে রাবী বললেন, আমি আনসারদের মাঝে অধিক ধন-সম্পত্তির অধিকারী। আমার অর্ধেক সম্পত্তি তোমাকে ভাগ করে দিচ্ছি এবং আমার উভয় স্ত্রীকে দেখে যাকে তোমার পছন্দ হয়, বল আমি তাকে তোমার জন্য পরিত্যাগ করব।যখন সে (ইদ্দত পূর্ণ করবে) তখন তুমি তাকে বিবাহ করে নিবে। আবদুর রাহমান রা. বললেন, এ সবে আমার কোন প্রয়োজন নেই । বরং (আপনি বলুন) ব্যবসা-বাণিজ্য করার মত কোন বাজার আছে কি ? তিনি বললেন, কায়নুকার বাজার আছে। পরের দিন আবদুর রাহমান রা. সে বাজারে গিয়ে পনীর ও ঘি (খরিদ করে) নিয়ে আসলেন। এরপর ক্রমাগত যাওয়া-আসা করতে থাকেন। কিছুকাল পরে আবদুর রাহমান রা.-এর কাপড়ে বিয়ের মেহেদী দেখা গেল। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বিবাহ করেছ ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে কে ? তিনি বললেন, জনৈকা আনাসারী মহিলা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কী পরিমাণ মহর দিয়েছ ? আবদুর রাহমান আ. বললেন, খেজুরের এক আটি পরিমাণ স্বর্ণ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর।
হাদীস নং ১৯২১
আহমদ ইবনে ইউনুস রহ…….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনে আওফা রা. মদীনায় আগমন করলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও সাদ ইবনে রাবী আনসারীর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। সাদ রা. ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আবদুর রাহমান রা.-কে বললেন, আমি তোমার উদ্দেশ্যে আমার সম্পত্তি অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিতে চাই এবং তোমাকে বিবাহ করিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা তোমার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। আমাকে বাজার দেখিয়ে দাও। তিনি বাজার হতে মুনাফা করে নিয়ে আসলেন পনীর ও ঘি। এভাবে কিছু কাল কাটালেন। একদিন তিনি এভাবে আসলেন যে, তাঁর গায়ে বিয়ের মেহেদীর রংয়ের চিহ্ন লেগে আছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার ? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে কে ? তিনি বললেন, জনৈকা আনাসারী মহিলা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কী পরিমাণ মহর দিয়েছ ? আবদুর রাহমান আ. বললেন, খেজুরের এক আটি পরিমাণ স্বর্ণ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর।
হাদীস নং ১৯২২
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উকায মাজিন্না ও যুল-মাজায (নামক স্থানে) জাহিলিয়্যাতের যুগে বাজার ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পরে লোকেরা ঐ সকল বাজারে যেতে গুনাহ মনে করতে লাগল। ফলে (কুরআন মজিদের আয়ত) নাযিল হল : তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধানে তোমাদের কোন পাপ নেই। (২ : ১৯৮) ইবনে আব্বাস রা. (আয়াতের সংগে) হজ্জের মওসুমে কথাটুকুও পড়লেন।
হাদীস নং ১৯২৩
মুহাম্মদ ইবন মুসান্না, আলী ইবনে আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ও মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……..নুমান ইবনে বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট, উভয়ের মাঝে অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয়া সুস্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুস্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হবার যথেষ্ট আশংকা রয়েছে। গুনাহসমূহ আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা, যে জানোয়ার সংরক্ষিত এলাকার চার পাশে চরতে থাকে, তার ঐ সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার সম্ভবনা রয়েছে।