- বইয়ের নামঃ সহিহ বুখারী ০৫ম খন্ড
- লেখকের নামঃ ইমাম বুখারী
- প্রকাশনাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
- বিভাগসমূহঃ ইসলামিক বই, হাদীস শরীফ
সহিহ বুখারী ০৫ম খণ্ড (২৫১১-৩০৯০)
সন্ধি অধ্যায় (২৫১১-২৫২৯)
হাদীস নং ২৫১১
সাঈদ ইবন আবু মারয়াম (রহঃ)……..সাহল ইবন সা‘দ (রা) থেকে বর্ণিত যে, আমর ইবন আওফ গোত্রের কিছু লোকের মধ্যে সামান্য বিবাদ ছিল। তাই নাবী (সাঃ) . তাঁর সাহাবীগণের একটি জামায়াত নিয়ে তাদের মধ্যে আপস-মিমাংশা করে দেওয়ার জন্য সেখানে গেলেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে গেল। কিন্তু নাবী (সাঃ) . মসজিদে নববীতে এসে পৌছেন নি। বিলাল (রা- সালাতের আযান দিলেন, কিন্তু নাবী (সাঃ) . তখনও এসে পৌঁছেন নি। পরে বিলাল (রা) আবূ বকর (রা)-এর কাছে এসে বললেন, নাবী (সাঃ) . কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাতেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি সালাতে লোকদের ইমামতি করবেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি ইচ্ছা কর।’ তারপর বিলাল (রা) সালাতের ইকামত বললেন, আর আবূ বকর (রা) এগিয়ে গেলেন। পরে নাবী (সাঃ) . এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম করে প্রথম কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকেরা হাততালি দিতে শুরু করল এবং তা অধিক মাত্রায় দিতে লাগলেন। আবু বকর (রা) সালাত অবস্থায় কোন দিকে তাকাতেন না, কিন্তু (হাততালির কারণে) তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন যে, নাবী (সাঃ) . তাঁর পেছনে দাঁড়িয়েছেন। নাবী (সাঃ) . তাঁকে হাতের ইশারায় আগের ন্যায় সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিলেন। আবু বকর (রা) তাঁর দু’হাত উপরে তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেকে পেছনে ফিরে এসে কাতারে শামির হলেন। তখন নাবী (সাঃ) . আগে বেড়ে লোকদের ইমামত করলেন এবং সালাত সমাপ্ত করে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, ‘হে লোক সকল! সালাত অবস্থায় তোমাদের কিছু ঘটলে তোমরা হাততালি দিতে শুরু কর। অথচ হাততালি দেওয়া মহিলাদের কাজ। সালাত অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন সুবাহান্নাল্লাহ বলে। কেননা এটা মুনলে তার দিকে দৃষ্টিপাত না করে পারতো না।’ ‘হে আবু বকর! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন সালাত আদায় করাতে তোমার কিসের বাধা ছিল?’ তিনি বললেন, ‘আবূ কূহাফার পুত্রের জন্য শোভা পায় না নাবী (সাঃ) . -এর সামনে ইমামত করা।
হাদীস নং ২৫১২
মুসাদ্দাদ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হল, আপনি যদি আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কাছে একটু যেতেন । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে যাওয়ার জন্য গাধায় আরোহণ করলেন এবং মুসলিমগণ তাঁর সঙ্গে হেটে চলল। আর সে পথ ছিল কংকরময়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এসে পৌঁছলে সে বলল, সরো আমার সম্মুখ থেকে । তোমার গাধার দুর্গন্ধ আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। তাদের মধ্য থেকে একজন আনসারী বলল, আল্লাহর কসম ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গাধা সুগন্ধে তোমার চাইতে উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-এর গোত্রের এক ব্যক্তি রেগে উঠল এবং উভয়ে একে অপরকে গালাগালি করল। এভাবে উভয়ের পক্ষের সঙ্গীরা ক্রুব্ধ হয়ে উঠল এবং উভয় দলের সাথে লাঠালাঠি, হাতাহাতি ও জুতা মারামারি হল। আমাদের জানান হয়েছে যে, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হল : “মুমিনদের দু’দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দিবে” (৪৯ : ৯) আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, মুসাদ্দাদ রহ. বসার এবং হাদীস বর্ণনার পূর্বে আমি তার থেকে এ হাদীস হাসিল করেছি।
হাদীস নং ২৫১৩
আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে মিমাংসা করার জন্য ভাল কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভাল কথা বলে।
হাদীস নং ২৫১৪
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত যে, কুবা-এর অধিবাসীরা লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ল। এমনকি তারা পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সে সংবাদ দেওয়া হলে তিনি বললেন, “চলো তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দেই”।
হাদীস নং ২৫১৫
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তা’আলার বাণী : “কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশংকা করে” এই আয়াতটি সম্পর্কে তিনি বলেন, আয়াতের লক্ষ্য হল, সে ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর মধ্যে বার্ধক্য বা অন্য ধরনের অপছন্দনীয় কিছু দেখতে পেয়ে তাকে ত্যাগ করতে মনস্থ করে আর স্ত্রী এ বলে অনুরোধ করে যে, তুমি আমাকে তোমার কাছে রাখ এবং যতটুকু ইচ্ছা আমার প্রাপ্য অংশ নির্ধারণ কর। আয়িশা রা. বলেন, উভয়ে সম্মত হলে এতে দোষ নেই।
হাদীস নং ২৫১৬
আদম রহ………..আবদু হুরায়রা রা. ও যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী রা. থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন যে, এক বেদুঈন এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাকে কিতাব মুতাবেক আমাদের মাঝে ফায়সালা করে দিন। তখন তার প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে বলল, সে ঠিকই বলেছে, হ্যাঁ, আপনি আমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ মুতাবেক ফায়সালা করুন। পরে বেদুঈন বলল, আমার ছেলে এ লোকরে বাড়ীতে মজুর ছিল। তারপর তার স্ত্রীর সাথে যিনা করে। লোকেরা আমাকে বলল, তোমার ছেলের উপর রজম ওয়াজিব হয়েছে। তখন আমি আমার ছেলেকে একশত বকরী এবং একটি বাদীর বিনিময়ে এর কাছ থেকে মুক্ত করে এনেছি। পরে আমি আলিমদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললেন, তোমার ছেলের উপর একশত বেত্রাঘাত এবং এব বছরের নির্বাসন ওয়াজিব হয়েছে। সব শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ মুতাবেকই ফয়সালা করব। বাদী এবং বকরী পাল তোমাকে ফেরত দেওয়া হবে, আর তোমার ছেলেকে একশত বেত্রাঘাত সহ এক বছরের নির্বাসন দেওয়া হবে। আর অপরজনকে বললেন, হে উনাইস তুমি আগমীকাল সকালে এ লোকের স্ত্রীর কাছে যাবে (এবং সে স্ত্রী যদি স্বীকার করে) তাকে রজম করবে। উনাইস তার কাছে গেলেন এবং তাকে রজম করলেন।