• বইয়ের নামঃ সহিহ বুখারী ০৫ম খন্ড
  • লেখকের নামঃ ইমাম বুখারী
  • প্রকাশনাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
  • বিভাগসমূহঃ ইসলামিক বই, হাদীস শরীফ

সহিহ বুখারী ০৫ম খণ্ড (২৫১১-৩০৯০)

 সন্ধি অধ্যায় (২৫১১-২৫২৯)

হাদীস নং ২৫১১

সাঈদ ইবন আবু মারয়াম (রহঃ)……..সাহল ইবন সা‘দ (রা) থেকে বর্ণিত যে, আমর ইবন আওফ গোত্রের কিছু লোকের মধ্যে সামান্য বিবাদ ছিল। তাই নাবী (সাঃ) . তাঁর সাহাবীগণের একটি জামায়াত নিয়ে তাদের মধ্যে আপস-মিমাংশা করে দেওয়ার জন্য সেখানে গেলেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে গেল। কিন্তু নাবী (সাঃ) . মসজিদে নববীতে এসে পৌছেন নি। বিলাল (রা- সালাতের আযান দিলেন, কিন্তু নাবী (সাঃ) . তখনও এসে পৌঁছেন নি। পরে বিলাল (রা) আবূ বকর (রা)-এর কাছে এসে বললেন, নাবী (সাঃ) . কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাতেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি সালাতে লোকদের ইমামতি করবেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি ইচ্ছা কর।’ তারপর বিলাল (রা) সালাতের ইকামত বললেন, আর আবূ বকর (রা) এগিয়ে গেলেন। পরে নাবী (সাঃ) . এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম করে প্রথম কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকেরা হাততালি দিতে শুরু করল এবং তা অধিক মাত্রায় দিতে লাগলেন। আবু বকর (রা) সালাত অবস্থায় কোন দিকে তাকাতেন না, কিন্তু (হাততালির কারণে) তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন যে, নাবী (সাঃ) . তাঁর পেছনে দাঁড়িয়েছেন। নাবী (সাঃ) . তাঁকে হাতের ইশারায় আগের ন্যায় সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিলেন। আবু বকর (রা) তাঁর দু’হাত উপরে তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেকে পেছনে ফিরে এসে কাতারে শামির হলেন। তখন নাবী (সাঃ) . আগে বেড়ে লোকদের ইমামত করলেন এবং সালাত সমাপ্ত করে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, ‘হে লোক সকল! সালাত অবস্থায় তোমাদের কিছু ঘটলে তোমরা হাততালি দিতে শুরু কর। অথচ হাততালি দেওয়া মহিলাদের কাজ। সালাত অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন সুবাহান্নাল্লাহ বলে। কেননা এটা মুনলে তার দিকে দৃষ্টিপাত না করে পারতো না।’ ‘হে আবু বকর! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন সালাত আদায় করাতে তোমার কিসের বাধা ছিল?’ তিনি বললেন, ‘আবূ কূহাফার পুত্রের জন্য শোভা পায় না নাবী (সাঃ) . -এর সামনে ইমামত করা।

হাদীস নং ২৫১২

মুসাদ্দাদ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হল, আপনি যদি আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কাছে একটু যেতেন । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে যাওয়ার জন্য গাধায় আরোহণ করলেন এবং মুসলিমগণ তাঁর সঙ্গে হেটে চলল। আর সে পথ ছিল কংকরময়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এসে পৌঁছলে সে বলল, সরো আমার সম্মুখ থেকে । তোমার গাধার দুর্গন্ধ আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। তাদের মধ্য থেকে একজন আনসারী বলল, আল্লাহর কসম ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গাধা সুগন্ধে তোমার চাইতে উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-এর গোত্রের এক ব্যক্তি রেগে উঠল এবং উভয়ে একে অপরকে গালাগালি করল। এভাবে উভয়ের পক্ষের সঙ্গীরা ক্রুব্ধ হয়ে উঠল এবং উভয় দলের সাথে লাঠালাঠি, হাতাহাতি ও জুতা মারামারি হল। আমাদের জানান হয়েছে যে, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হল : “মুমিনদের দু’দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দিবে” (৪৯ : ৯) আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, মুসাদ্দাদ রহ. বসার এবং হাদীস বর্ণনার পূর্বে আমি তার থেকে এ হাদীস হাসিল করেছি।

হাদীস নং ২৫১৩

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে মিমাংসা করার জন্য ভাল কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভাল কথা বলে।

হাদীস নং ২৫১৪

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত যে, কুবা-এর অধিবাসীরা লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ল। এমনকি তারা পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সে সংবাদ দেওয়া হলে তিনি বললেন, “চলো তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দেই”।

হাদীস নং ২৫১৫

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তা’আলার বাণী : “কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশংকা করে” এই আয়াতটি সম্পর্কে তিনি বলেন, আয়াতের লক্ষ্য হল, সে ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর মধ্যে বার্ধক্য বা অন্য ধরনের অপছন্দনীয় কিছু দেখতে পেয়ে তাকে ত্যাগ করতে মনস্থ করে আর স্ত্রী এ বলে অনুরোধ করে যে, তুমি আমাকে তোমার কাছে রাখ এবং যতটুকু ইচ্ছা আমার প্রাপ্য অংশ নির্ধারণ কর। আয়িশা রা. বলেন, উভয়ে সম্মত হলে এতে দোষ নেই।

হাদীস নং ২৫১৬

আদম রহ………..আবদু হুরায়রা রা. ও যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী রা. থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন যে, এক বেদুঈন এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাকে কিতাব মুতাবেক আমাদের মাঝে ফায়সালা করে দিন। তখন তার প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে বলল, সে ঠিকই বলেছে, হ্যাঁ, আপনি আমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ মুতাবেক ফায়সালা করুন। পরে বেদুঈন বলল, আমার ছেলে এ লোকরে বাড়ীতে মজুর ছিল। তারপর তার স্ত্রীর সাথে যিনা করে। লোকেরা আমাকে বলল, তোমার ছেলের উপর রজম ওয়াজিব হয়েছে। তখন আমি আমার ছেলেকে একশত বকরী এবং একটি বাদীর বিনিময়ে এর কাছ থেকে মুক্ত করে এনেছি। পরে আমি আলিমদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললেন, তোমার ছেলের উপর একশত বেত্রাঘাত এবং এব বছরের নির্বাসন ওয়াজিব হয়েছে। সব শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ মুতাবেকই ফয়সালা করব। বাদী এবং বকরী পাল তোমাকে ফেরত দেওয়া হবে, আর তোমার ছেলেকে একশত বেত্রাঘাত সহ এক বছরের নির্বাসন দেওয়া হবে। আর অপরজনকে বললেন, হে উনাইস তুমি আগমীকাল সকালে এ লোকের স্ত্রীর কাছে যাবে (এবং সে স্ত্রী যদি স্বীকার করে) তাকে রজম করবে। উনাইস তার কাছে গেলেন এবং তাকে রজম করলেন।

হাদীস নং ২৫১৭

ইয়াকুব ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কেউ আমাদের এ শরীয়াতে সংগত নয় এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর মাখরামী রহ. ও আবদুল ওয়াহিদ ইবনে আবু আউন, সাদ ইবনে ইবরাহীম রহ. থেকে তা বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২৫১৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়াতে সন্ধি করার সময় আলী রা. উভয় পক্ষের মাঝে এক চুক্তিপত্র লিখলেন। তিনি লিখলেন, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মুশরিকরা বলল, ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ লেখা চলবে না। আপনি রাসূল হলে আপনার সঙ্গে লড়াই কিসের? তখন তিনি আলীকে বললেন, ওটা মুছে দাও। আলী রা. বললেন, আমি তা মুছব না। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে তা মুছে দিলেন এবং এই শর্তে তাদরে সাথে সন্ধি করলেন যে, তিনি এবং তাঁর সাহাবা তিন দিনের জন্য মক্কায় প্রবেশ করবেন এবং جلبان السلاح ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করবেন না। তারা জিজ্ঞাসা করল, جلبان السلاح মানে কি? তিনি বললেন, ‘জুলুব্বান’ অর্থ ভিতরে তরবারীসহ খাপ।

হাদীস নং ২৫১৯

উবায়দুল্লাহ ইবনে মূসা রহ………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যিলকাদ মাসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরার উদ্দেশ্যে বের হলেন। কিন্তু মক্কাবাসীরা তাকে মক্কা প্রবেশের জন্য ছেড়ে দিতে অস্বীকার করল। অবশেষে এই শর্তে তাদের সাথে ফয়সালা করলেন যে, তিনদিন সেখানে অবস্থান করবেন। সন্দিপত্র লিখতে গিয়ে মুসলিমরা লিখলেন, এ সন্ধিপত্র সম্পাদন করেছেন, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তারা (মুশরিকরা) বলল, আমরা তাঁর রিসালত স্বীকার করি না। আমরা যদি একথাই মানে করতাম যে, আপনি আল্লাহর রাসূল তাহলে আপনাকে বাধা দিতাম না। তবে আপনি হলেন, আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল এবং আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ । তারপর তিনি আলীকে বললেন, রাসূলুল্লাহ শব্দটি মুছে দাও। তিনি বললেন, না। আল্লাহর কসম, আমি আপনাকে (রাসূলুল্লাহ শব্দটি) কখনো মুছব না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন চুক্তিপত্রটি নিলেন এবং লিখলেন, এ সন্ধিপত্র মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ সম্পন্ন করেন-খাপ বদ্ধ অস্ত্র ছাড়া আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কাবাসীদের কেউ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে দিবেন না। আর তাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাকে বাঁধা দিবেন না। তিনি যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেল, তখন তারা এসে আলীকে বলল, তোমার সঙ্গীকে আমাদের এখান থেকে বের হতে বল। কেননা, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা হলেন। তখন হামজার মেয়ে হে চাচা, হে চাচা, বলেন তাদের পেছনে পেছনে চলল। আলী রা. তাকে হাত ধরে নিয়ে এলেন এবং ফাতিমাকে বললেন, এই নাও, তোমার চাচার মেয়েকে। আমি ওকে তুলে এনেছি। আলী, যায়েদ ও জাফর তাকে নেওয়ার ব্যাপারে বিতর্কে প্রবৃত্ত হলেন। আলী রা. বললেন, আমি তার বেশী হকদার। কারণ সে আমার চাচার মেয়ে। জাফর রা. বললেন, সে আমার চাচার মেয়ে এবং তার খালা আমার স্ত্রী। যায়েদ রা. বললেন, সে আমার ভাইয়ের মেয়ে। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালার অনুকূলে ফয়সালা দিলেন এবং বললেন, খালা মায়ের স্থলবর্তী। আর আলীকে বললেন, আমি তোমার এবং তুমি আমার। জাফরকে বললেন, তুমি আকৃতি ও প্রকৃতিতে আমার সদৃশ্য। আর যায়েদকে বললেন, তুমি তো আমাদের ভাই ও আযাদকৃত গোলাম।

হাদীস নং ২৫২০

মুহাম্মদ ইবনে রাফি রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা করতে রওয়ানা হলেন। কিন্তু কুরাইশ কাফিরার তাঁর ও বায়তুল্লাহর মাঝে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল। তখন তিনি হুদায়বিয়াতে তাঁর হাদী কুরবানী করলেন, আর মাথা মুড়াইলেন এবং তাদের সাথে সন্ধি করলেন এই শর্তে যে, আগামী বছর তিনি উমরা করবেন আর তরবারি ছাড়া অন্য কোন অস্ত্র নিয়ে তাদের কাছে আসবেন না । আর তারা যতদিন পছন্দ করবে তিনি ততদিন সেখানে থাকবেন। পরের বছর তিনি উমরা করলেন এবং যেমন সন্ধি করেছিলেন তেমনিভাবে মক্কায় প্রবেশ করলেন। তিনি সেখানে তিনদিন অবস্থান করলেন। তারা তাকে বেরিয়ে যেতে বললে, তিনি বেরিয়ে গেলেন।

হাদীস নং ২৫২১

মুসাদ্দাদ রহ……..সাহল ইবনে আবু হাসমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার সন্ধিবদ্ধ থাকাকালে আবদুল্লাহ ইবনে সাহল ও মুহাইয়াসা ইবনে মাসউদ ইবনে যায়েদ রা. খায়বার গিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২৫২২

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রুবাইয়্যি বিনতে নাযর রা. এক কিশোরীর সামনের দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিল। তারা ক্ষতিপূরণ দাবী করল আর অপর পক্ষ ক্ষমা চাইল। তারা অস্বীকার করল এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এল। তিনি কিসাসের নির্দেশ দিলেন। আনাস ইবনে নাযর রা. তখন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! রুবাইয়্যি-এর দাঁত ভাঙ্গা হবে? না যিনি আপনাকে সত্য সহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম তার দাঁত ভাঙ্গা হবে না। তিনি বললেন, হে আনাস ‍! আল্লাহর বিধান হল কিসাস। তারপর বাদীপক্ষ রাযী হয় এবং ক্ষমা করে দেয়। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লারহ বান্দাদের মধ্যে এমন বান্দাও রয়েছেন যে, আল্লাহর নামে কোন কসম করলে তা পূরণ করেন। ফাযারী রহ. হুমায়দ রহ. সূত্রে আনাস রা. থেকে রিওয়ায়াত করতে গিয়ে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তখন লোকেরা সম্মত হল এবং ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করল।

হাদীস নং ২৫২৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….হাসান (বসরী) রহ. বলেন, আল্লাহর কসম, হাসান ইবনে আলী রা. পর্বত সদৃশ সেনাদল নিয়ে মুআবিয়া রা.-এর মুখোমুখি হলেন। আমর ইবনে আস রা. বললেন, আমি এমন সেনাদল দেখতে পাচ্ছি যারা প্রতিপক্ষকে হত্যা না করে ফিরে যাবে না। মুআবিয়া রা. তখন বললেন, আল্লাহর কসম ! আর (মুআবিয়া ও আমর ইবনে আস) রা. উভয়ের মধ্যে মুআবিয়া রা. ছিলেন উত্তম ব্যক্তি। হে আমর ! এরা ওদের এবং ওরা এদের হত্যা করলে, আমি কাকে দিয়ে লোকের সমস্যার সমাধান করব? তাদের নারীদের কে তত্ত্বাবধান করবে? তাদের দুর্বল ও শিশুদের কে রক্ষণাবেক্ষণ করবে ? তারপর তিনি কুরাইশের বনূ আবদে শামস খার দু’জন আবদুর রহমান ইবনে সামুরাহ ও আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা.-কে হাসান রা.-এর কাছে পাঠালেন। তিনি তাদের বললেন, তোমরা উভয়ে এ লোকটির কাছে যাও এবং তাঁর কাছে (সন্ধির) প্রস্তাব দাও, তাঁর সঙ্গে আলোচনা কর ও তাঁর বক্তব্য জানতে চেষ্টা কর। তার তাঁর কাছে গেলেন এবং তাঁর সঙ্গে কথা বললেন, আলাপ-আলোচনা করলেন এবং তাঁর বক্তব্য জানলেন। হাসান ইবনে আলী রা. তাদের বললেন, আমরা আবদুল মুত্তালিবের সন্তান, এই সম্পদ আমরা পেয়েছি। আর এর রক্তপাতে লিপ্ত হয়েছে। তার উভয়ে বললেন, (মুআবিআ রা. আপনার কাছে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছেন। আর আপনার বক্তব্যও জানতে চেয়েছেন ও সন্ধি কামনা করেছেন। তিনি বললেন, এ দায়িত্ব কে নিবে? তারা বললেন, আমরা আপনার জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণ করছি। এরপর তিনি তাদের কাছে যে সব প্রশ্ন করলেন, তারা বললেন, আমরা এ দায়িত্ব নিচ্ছি। তারপর তিনি তাঁর সাথে সন্ধি করলেন। হাসান (বসরী) রহ. বলেন, আমি আবু বাকরা রা.-কে বলতে শুনেছি : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি মিম্বরের উপর দেখেছি, হাসান রা. তাঁর পাশে ছিলেন। তিনি একবার লোকদের দিকে আরেকবার তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, আমার এ সন্তান নেতৃস্থানীয়। সম্ভবত তার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা মুসলমানের দুটি বড় দলের মধ্যে মিমাংসা করাবেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, আলী ইবনে আবদুল্লাহ আমাকে বলেছেন যে, এ হাদীসের মাধ্যমেই আবু বাকরা রা. থেকে হাসানের শ্রুতি আমাদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে।

হাদীস নং ২৫২৪

ইসমাঈল ইবনে আবু উওয়াইস রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার দরজায় বিবাদের আওয়াজ শুনতে পেলেন ; দুজন তাদের আওয়াজ উচ্চ করেছিল। একজন আরেকজনের কাছে ঋণের কিছু মাফ করে দেওয়ার এবং সহানুভূতি দেখানোর অনুরোধ করছিল। আর অপর ব্যক্তির বলছিল, না, আল্লাহর কসম ! আমি তা করব না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে তাদের কাছে এলেন এবং বললেন, সৎকাজ করবে না বলে যে আল্লাহর নামে কসম করেছে, সে লোকটি তাদের কাছে এলেন এবং বললেন, সৎকাজ করবে না বলে যে আল্লাহর কসম করেছে, সে লোকটি কোথায়? সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি। সে যা চাইবে তার জন্য তা-ই হবে।

হাদীস নং ২৫২৫

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………কাব ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনে আবু হাদরাদ আল-আসলামীর কাছে তার কিছু মাল পাওনা ছিল। রাবী বলেন, একবার সাক্ষাত পেয়ে তিনি তাকে ধরলেন, এমনকি তাদের আওয়াজ চড়ে গেল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি যেন হাতের ইশারায় বলছিলেন, অর্ধেক (নাও)। তারপর তিনি তার পাওনার অর্ধেক নিলেন আর অর্ধেক ছেড়ে দিলেন।

হাদীস নং ২৫২৬

ইসহাক রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মানুষের প্রতিটি হাতের জোড়ার জন্য তার উপর সাদকা রয়েছে। সূর্যোদয় হয় এমন প্রতিদিন মানুষের মধ্যে সুবিচার করাও সাদকা।

হাদীস নং ২৫২৭

আবুল ইয়ামান রহ………..যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি এক আনসারীর সাথে বিবাদ করেছিলেন, যিনি বদরে শরীক ছিলেন। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে পাথরী যমীনের একটি নালা সম্পর্কে অভিযোগ করলেন। তারা উভয়ে সে নালা থেকে পানি সেব করতেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইরকে বললেন, হে যু্বাইর! তুমি প্রথমে পানি সেচবে। তারপর তোমার প্রতিবেশীর দিকে পানি ছেড়ে দিবে। আনসারী তখন রেগে গেল এবং বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সে আপনার ফুফুর ছেলে বলে (এ বিচার) ? এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারার রং বদলে গেল। তারপর তিনি বললেন, তুমি সেচ কর, তারপর পানি আটকে রাখ, বেষ্টনীর বরাবর পৌঁছা পর্যন্ত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর রা.-কে তার পূর্ণ হক দিলেন। এর আগে যুবাইর রা.-কে তিনি এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন যা আনসারীর জন্য সুবিধাজনক ছিল। কিন্তু আনসারী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাগান্বিত করলে সুস্পষ্ট নির্দেশের যুবাইর রা.-কে তিনি তার পূর্ণ হক দান করলেন। উরওয়া রা. বলেন, যুবাইর রা. বলেছেন, আল্লাহর কসম! আমার নিশ্চিত ধারণা যে (আল্লাহর বাণী) : কিন্তু না, আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ তারা তাদের নিজেদের বিবাদ বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পন না করে (৪: ৬৫) আয়াতটি সে ব্যাপারেই নাযিল হয়েছিল।

হাদীস নং ২৫২৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতার মৃত্যু হল, আর তার কিছু ঋণ ছিল। আমি তাঁর ঋণের বিনিময়ে পাওনাদারদের খেজুর নেওয়ার প্রস্তাব দিলাম। তাঁতে ঋণ পরিশোধ হবে না বলে তারা তা নিতে অস্বীকার করল। আমি তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে এ বিষয়ে তাঁর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, খেজুর পেড়ে মাচায় রেখে রাসূলুল্লাহকে খবর দিও। (যথা সময়ে) তিনি এলেন এবং তাঁর সঙ্গে আবু বকর ও উমর রা.-ও ছিলেন। তিনি খেজুর স্তুপের পার্শ্বে বসলেন এবং বরকতের দুআ করলেন। পরে বললেন, তোমার পাওনাদারদের ডাক এবং তাদের প্রাপ্য পরিশোধ করে দাও। তারপর আমার পিতার পাওনাদারদের কেউ এমন ছিল না যার ঋণ পরিশোধ করিনি। এরপরও (আমার কাছে) তের ওয়াসক খেজুর রয়ে গেল। সাত ওয়াসক মিশ্র খেজুর আর ছয় ওয়াসক নিম্নমানের খেজুর কিংবা ছয় ওয়াসক মিশ্র ও সাত ওয়াসক নিম্নমানের খেজুর । তারপর আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম এবং তাকে তা বললাম। তিনি হাসলেন এবং বললেন, আবু বকর ও উমরের কাছে গিয়ে তা বল। তাঁরা বললেন, আমরা আগেই জানতাম যে, যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করার তা করেছেন, তখন অবশ্য এ রূপই হবে। হিশাম রহ. ওয়াহাব রহ-এর মাধ্যমে জাবির রা. থেকে আসরের সালাতের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি আবু বকর রা. এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাসার কথা উল্লেখ করেননি। তিনি বর্ণনা করেছেন, (জাবির রা. বলেছেন) আমার পিতা তাঁর জিম্মায় ত্রিশ ওয়াসক ঋণ রেখে মারা গিয়েছেন। ইবনে ইসহাক রহ. ওয়াহাব রহ.-এর মাধ্যমে জাবির রা. থেকে যুহরের সালাতের কথা উল্লেখ করেছেন।

হাদীস নং ২৫২৯

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..কাব ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যামানায় একবার তিনি ইবনে আবু হাদরাদের কাছে মসজিদের পাওনা ঋণের তাগাদা করলেন। এতে উভয়ের আওয়াজ চড়ে গেল। এমনকি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘর থেকেই আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরার পর্দা সরিয়ে তাদের কাছে এলেন আর কাব ইবনে মালিক রা.-কে ডাকলেন এবং বললেন, হে কাব ! কাব রা. বললেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ ! রাবী বলেন, তিনি হাতে ইশারা করলেন, অর্ধেক মওকুফ করে দাও। কাব রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তাই করলাম। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইবনে আবু হাদরাদেকে) বললেন, যাও, তার ঋণ পরিশোধ করে দাও।

 শর্তাবলী অধ্যায় (২৫৩০-২৫৫০)

হাদীস নং ২৫৩০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………মারওয়ান ও মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ থেকে বর্ণনা করেন, (সুলহে হুদায়বিয়ার দিন) সেদিন সুহাইল ইবনে আমর যখন সন্ধিপত্র লিখলেন তখন সুহাইল ইবনে আমর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি এরূপ শর্তারোপ করলে যে, আমাদের কেউ আপনার কাছে আসলে সে আপনার দীন গ্রহণ করা সত্ত্বেও আপনি তাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিবেন। আর আমাদের ও তার মধ্যে হস্তক্ষেপ করবেন না। মুমিনরা এটা অপছন্দ করলেন এবং এতে ক্রুদ্ধ হলেন। সুহাইল এটা ছাড়া সন্ধি করতে অস্বীকার করল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে শর্ত মেনেই সন্ধিপত্র লেখালেন। সেদিন তিনি আবু জামদান রা.-কে তার পিতা সুহাইল ইবনে আমরের কাছে ফেরত দিলেন। মুমিন মহিলাগণও হিজরত করে আসলেন। সে সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা ইবনে আবু মুয়ায়ত রা. ছিলেন। তিনি ছিলেন যুবতী। তাঁর পরিজন একা তাকে তাদের নিকট ফেরত দেওয়ার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দাবী জানালো। কিন্তু তাকে তিনি তাদের কাছে ফেরত দিলেন না। কেননা, সেই মহিলাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা আয়াত নাযিল করেছিলেন : মুমিন মহিলাগণ হিজরত করে তোমাদের কাছে আসলে তাদের তোমরা পরীক্ষা কর। আল্লাহ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠাবে না (৬০ : ১০)। উরওয়া রা. বলেন, আয়িশা রা. আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতের ভিত্তিতেই তাদের পরীক্ষা করে দেখতেন। উরওয়া রা. বলেন, আয়িশা রা. বলেছেন, তাদরে মধ্যে যারা এই শর্তে সম্মত হত তাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু একথা বলতেন, আমি তোমাকে বায়আত করলাম। আল্লাহর কসম ! বায়আত গ্রহণে তাঁর হাত কখনো কোন মহিলার হাত স্পর্শ করেনি। তিনি তাদের শুধু (মুখের) কথার মাধ্যমে বায়আত করেছেন।

হাদীস নং ২৫৩১

আবু নুআঈম রহ…..যিয়াদ ইবনে ইলাকা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জারীর রা.-কে বলতে শুনেছি যে, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বায়আত গ্রহণ করলাম। তিনি আমাকে প্রত্যেক মুসলিমের প্রতি কল্যাণ কামনার শর্তারোপ করলেন।

হাদীস নং ২৫৩২

মুসাদ্দাদ রহ………জারীর ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বায়আত গ্রহণ করেছি, সালাত কায়েম করার, যাকাত প্রদান করার এবং প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কল্যাণ কামনা করার ব্যাপারে।

হাদীস নং ২৫৩৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ তাবীর করার পর খেজুর গাছ বিক্রি করলে বিক্রেতা তার ফল পাবে, অবশ্য ক্রেতা শর্তারোপ করলে ভিন্ন কথা অর্থাৎ সে পাবে।

হাদীস নং ২৫৩৪

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারীরা রা. একবার তাঁর কাছে এসে তার চুক্তি পত্রের ব্যাপারে সাহায্য প্রার্থনা করল, তখন পর্যন্ত সে চুক্তির অর্থ কিছুই আদায় করেনি। আয়িশা রা. তাকে বললেন, তুমি তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও। তারা যদি ইহা পছন্দ করে যে, আমি তোমার পক্ষ থেকে তোমার চুক্তিপত্রের প্রাপ্য পরিশোধ করে দিব, আর তোমার ওয়ালা আমার জন্য থাকবে, তাহলে আমি তাই করব। বারীরা রা. তার মালিককে সে কথা জানালে তারা অস্বীকার করল এবং বলল, তিনি যদি তোমাকে দিয়ে সাওয়াব হাসিল করতে চান তবে করুন, তোমার ওয়ালা কিন্তু আমাদেরই থাকবে। আয়িশা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সে কথা জানালে তিনি তাকে বললেন, তুমি তাকে খরিদ কর এবং আযাদ করে দাও। ওয়ালা সেই পাবে যে আযাদ করবে।

হাদীস নং ২৫৩৫

আবু নুআইম রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাঁর এক উটের উপর সওয়ার হয়ে ভ্রমণ করছিলেন, সেটি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং উটটাকে (চলার জন্য) আঘাত করে সেটির জন্য দুআ করলেন। ফলে উটটি এত দ্রুত অতিক্রম লাগল যে, কখনো তেমন দ্রুত চলেনি। তারপর তিনি বললেন, এক উকিয়ার বিনিময়ে এটি আমার কাছে বিক্রি কর। আমি বললাম, না। তিনি বললেন, এটি আমার জন্য এক উকিয়ার বিনিময়ে বিক্রি কর। তখন আমি সেটি বিক্রি করলাম। কিন্তু আমার স্বজনের কাছে পৌঁছা পর্যন্ত সওয়ার হওয়ার অধিকার রেখে দিলাম। তারপর উট নিয়ে আমি তাঁর কাছে গেলাম। তিনি আমাকে এর নগদ মূল্য দিলেন। তারপর আমি চলে গেলাম। তখন আমার পেছনে লোক পাঠালেন। পরে বললেন, তোমার উট নেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না। তোমার এ উট তুমি নিয়ে যাও এটি তোমারই মাল। শুবা রহ. জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটটির পেছনে মদীনা পর্যন্ত আমাকে সওয়ার হতে দিলেন। ইসহাক রহ. জারীর রহ. সূত্রে মুগীরা রহ. থেকে বর্ণনা করেন, আমি সেটি এ শর্তে বিক্রি করলাম যে, মদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত তার পিঠে সওয়ার হওয়ার অধিকার আমার থাকবে। আতা রহ .প্রমুখ বলেন, মদীনা পর্যন্ত তোমার তাঁতে সওয়ার হওয়ার অধিকার থাকবে। ইবনে মুনকাদির রহ. জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি মদীনা পর্যন্ত এর পিঠে সওয়ার হওয়ার শর্ত করেছেন। যায়েদ ইবনে আসলাম রহ. জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তোমার প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত এর পিঠে সওয়ার হতে পারবে। আবু যুবাইর রহ. জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তোমাকে মদীনা পর্যন্ত এর পিঠে সওয়ার হতে দিলাম। আমাশ রহ .সালিম রহ. সূত্রে জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন, এর উপর সওয়ার হয়ে তুমি পরিজনের কাছে পৌঁছবে। উবাইদুল্লাহ ও ইবনে ইসহাক রহ. ওয়াহাব রহ. সূত্রে জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক উকিয়ার বিনিময়ে সেটি খরিদ করেছিলেন। তবে শাবী রহ. কর্তৃক বর্ণিত, এক উকিয়াই অধিক বর্ণিত। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, (রিওয়ায়াতে বিভিন্ন রকমের হলেও) শর্তারোপ কৃত রিওয়ায়েতই অধিক সূত্রে বর্ণিত এবং আমার মতে এটাই অধিক সহীহ।

হাদীস নং ২৫৩৬

আবুল ইয়ামান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমাদের ও আমাদের (মুহাজির) ভাইদের মাঝে খেজুর গাছ ভাগ করে দিন। তিনি বললেন, না। তখন তাঁর বললেন, তোমরা আমাদের শ্রমে সাহায্য করবে আর তোমাদের আমরা ফলের অংশ দিব । তারা (মুহাজিরগণ) বললেন, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।

হাদীস নং ২৫৩৭

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার (এর-ভূমি) ইয়াহুদীদেরকে দিলেন এ শর্তে যে, তারা তাঁতে কাজ করবে এবং তাঁতে ফসল ফলাবে, তাঁতে যা উৎপন্ন হবে তারা অর্ধেক পাবে।

হাদীস নং ২৫৩৮

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….উকবা ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : শর্তাবলীর মধ্যে যা পূরণ করার অধিক দাবী রাখে তা হল সেই শর্ত যার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করেছ।

হাদীস নং ২৫৩৯

মালিক ইবনে ইসমাঈল রহ……..রাফি ইবনে খাদিজ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারদের মধ্যে আমরা অধিক শষ্য ক্ষেতের মালিক ছিলাম। তাই আমরা ক্ষেত বর্গা দিতাম। কখনো এ অংশে ফসল হত, আর ঐ অংশে ফসল হত না। তখন আমাদের তা করতে নিষেধ করে দেওয়া হল। কিন্তু অর্থের বিনিমিয়ে চাষ করতে দিতে নিষেধ করা হয়নি।

হাদীস নং ২৫৪০

মুসাদ্দাদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : শহরবাসী গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রয় করবে না। আর তোমরা (দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে) দালালী করবে না। কেউ যেন তার ভাইয়ের ক্রয়ের উপরে দাম না বাড়ায় এবং কেউ যেন তার ভাইয়ের (বিয়ের) প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়।

হাদীস নং ২৫৪১

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………আবু হুরায়রা ও যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী রা. থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, এক বেদুঈন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আমার ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব মুতাবিক ফয়সালা করুন। তখন তার প্রতিপক্ষ, যে তার তুলনায় সমঝদার সে বলল, হ্যাঁ, আপনি আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করুন এবং আমাকে (ঘটনাটি খুলে বলার) অনুমতি দিন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বল । সে বললে, আমার ছেলে এ লোকরে বাড়ীতে মজুর ছিল। তারপর তার স্ত্রীর সাথে যিনা করে। লোকেরা আমাকে বলল, তোমার ছেলের উপর রজম ওয়াজিব হয়েছে। তখন আমি আমার ছেলেকে একশত বকরী এবং একটি বাদীর বিনিময়ে এর কাছ থেকে মুক্ত করে এনেছি। পরে আমি আলিমদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললেন, তোমার ছেলের উপর একশত বেত্রাঘাত এবং এব বছরের নির্বাসন ওয়াজিব হয়েছে। আর স্ত্রীর দণ্ড রজম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর কসম, অবশ্যই আমি তোমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ মোতাবেকই ফয়সালা করব। বাদী এবং বকরী পাল তোমাকে ফেরত দেওয়া হবে, আর তোমার ছেলেকে একশত বেত্রাঘাত সহ এক বছরের নির্বাসন দেওয়া হবে। আর অপরজনকে বললেন, হে উনাইস তুমি আগমীকাল সকালে এ লোকের স্ত্রীর কাছে যাবে। সে স্ত্রী যদি স্বীকার করে তাহলে তাকে রজম করবে। (রাবী বলেন) উনাইস রা. পরদিন সকালে সে স্ত্রীলোকের কাছে গেলেন। সে যিনার অপরাধ স্বীকার করল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে দিলেন এবং তাকে রজম করা হল।

হাদীস নং ২৫৪২

খাল্লাদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুকাতাবা অবস্থায় বারীরা আমার কাছে এসে বলল, হে উম্মুল মুমিনীন। আপনি আমাকে খরিদ করুন। কারণ আমার মালিক আমাকে বিক্রি করে ফেলবে। তারপর আমাকে আযাদ করে দিন। তিনি বললেন, বেশ, বারীরা বলল, ওয়ালার অধিকার মালিকের থাকবে-এ শর্ত না রেখে তারা আমাকে বিক্রি করবে না। তিনি বললেন, তবে তোমাকে দিয়ে আমার কোন প্রয়োজন নেই। পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনলেন। কিংবা তাঁর কাছে সে সংবাদ পৌঁছল। তখন তিনি বললেন, বারীরার ব্যাপার কী? এবং বললেন, তাকে খরিদ কর। তারপর তাকে আযাদ করে দাও। তারা যত ইচ্ছা শর্তারোপ করুক। আয়িশা রা. বলেন, তারপর আমি তাকে খরিদ করলাম এবং আযাদ করে দিলাম। তার মালিক পক্ষ ওয়ালার শর্তারোপ করল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়ালা তারই হবে, যে আযাদ করবে, তারা শর্তারোপ করলেও।

হাদীস নং ২৫৪৩

মুহাম্মদ ইবনে আরআরা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে শহরের বাইরে গিয়ে বাণিজ্যিক কাফেলা থেকে মাল খরিদ করতে নিষেধ করেছেন। আর বেদুইনের পক্ষ হয়ে মুহাজিরদের বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর কোন স্ত্রীলোক যেন তার বোনের (অপর স্ত্রীলোকের) তালাকের শর্তারোপ না করে আর কোন লোক যেন তার ভাইয়ের দামের উপর দাম না করে এবং নিষেধ করেছেন দালালী করতে, এবং স্তনে দুধ জমা করতে (ধোকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে)। মুআয ও আবদুস সামাদ রহ. শুবা রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় মুহাম্মদ ইবনে আরআরা রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। গুনদার ও আবদুর রাহমান রহ. ‘নুহিয়া’ বলেছেন এবং আদম রহ. বলেছেন, ‘নুহিনা’ আর নাযর ও হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল বলেছেন, ‘নাহা’।

হাদীস নং ২৫৪৪

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……….উবাই ইবনে কাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর রাসূল মূসা আ. বলেন। তারপর তিনি সম্পূর্ণ ঘটনাটি বর্ণনা করেন। (এ প্রসঙ্গে খিযর আ.-এর এ উক্তিটি উল্লেখ করেন যা তিনি মূসা আ.-কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন), আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবে না? (মূসা আ.-এর আপত্তি) প্রথমটি ছিল ভুলবশত, দ্বিতীয়টি শর্ত স্বরূপ, তৃতীয়টি ইচ্ছাকৃত। মূসা আ. বললেন, আপনি আমার ভুলের কারণে আমার দোষ ধরবেন না এবং আমার ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করবেন না। তাঁরা উভয়ে এক বালকের সাক্ষাত পেলেন এবং খিযর আ. তাকে হত্যা করলেন। তারপর তাঁরা উভয়ে পথ চলতে লাগলেন। কিছু দূর এগিয়ে তাঁরা পতনোন্মুখ একটি প্রাচীর দেখতে পেলেন। খিযর আ. প্রাচীরটি সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। ইবনে আব্বাস রা. আয়াতের ورائهم ملك এর স্থলে أمامهم ملك পড়েছেন।

হাদীস নং ২৫৪৫

ইসমাঈল রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারীরা আমার কাছে এসে বলল, আমি আমার মালিকের সঙ্গে নয় উকিয়ার বিনিময়ে আমাকে আযাদ করার এক চুক্তি করেছি। প্রতি বছর এক উকিয়া করে পরিশোধ করতে হবে। তাই আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আয়িশা রা. বললেন, তারা যদি এ শর্তে রাযী হয় যে, আমি তাদের সমস্ত প্রাপ্য এক সাথে দিয়ে দিই এবং তোমার ওয়ালা আমার জন্য থাকবে, তাহলে আমি তা করব। বারীরা তার মালিকের কাছে গিয়ে তাদের একথা বলল, কিন্তু তারা তা অস্বীকার করল। তারপর বারীরা তাদের কাছ থেকে ফিরে এল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা ছিলেন। বারীরা বলল, আমি তাদের কাছে প্রস্তাবটি পেশ করেছি, ওয়ালার অধিকার তাদের জন্য না হলে, এতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনলেন এবং আয়িশা রা.-ও তাকে অবহিত করলেন। তারপর তিনি বললেন, তুমি বারীরাকে নিয়ে নাও এবং তাদের জন্য ওয়ালার অধিকারের শর্ত মেনে নাও। কেননা, ওয়ালার অধিকার তো তারই যে আযাদ করবে। আয়িশা রা. তাই করলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মাঝে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা করে বললেন, লোকদের কি হল যে, তারা এমন সব শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই? আল্লাহর কিতাবের বহির্ভূত যে কোন শর্ত বাতিল, যদিও শত শর্তারোপ করা হয়। আল্লাহর ফায়সালা যথার্থ ও তাঁর শর্ত সুদৃঢ়। ওয়ালা তো তারই যে আযাদ করে।

হাদীস নং ২৫৪৬

আবু আহমদ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন খায়বারবাসীরা আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর হাত পা ভেঙ্গে দিল, তখন উমর রা. ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন এবং বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের ইয়াহুদীদের সাথে তাদের বিষয়ে সম্পত্তি সম্পর্কে চুক্তি করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আল্লাহ তা’আলা যতদিন তোমাদের রাখেন, ততদিন আমরাও তোমাদের রাখব। এমতাবস্থায় আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. তাঁর নিজ সম্পত্তি দেখাশুনা করার জন্য খায়বার গমন করলে এক রাতে তাঁর উপর আক্রমণ করা হয় এবং তাঁর দুটি হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। সেখানে ইয়াহুদীরা ছাড়া আর কোন শত্রু নেই। তারাই আমাদের দুশমন। তাদের উপর আমাদের সন্দেহ। অতএব আমি তাদের নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েই। উমর রা. যখন এ ব্যাপারে তাঁর দৃঢ় মত প্রকাশ করলেন, তখন আবু হুকায়ক গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন, আপনি কি আমাদের খায়বার থেকে বহিষ্কার করবেন ? অথচ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এখানে অবস্থানের অনুমতি দিয়েছিলেন। আর উক্ত সম্পত্তির ব্যাপারে আমাদের সাথে বর্গাচাষের ব্যবস্থা করেন এবং আমাদের এ শর্তে দেন। উমর রা. বললেন, তুমি কি মনে করেছ যে, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সে উক্তি ভুলে গিয়েছি, তোমার কি অবস্থা হবে, যখন তোমাকে খায়বার থেকে বের করে দেয়া হবে এবং তোমার উটগুলো রাতের পর রাত তোমাকে নিয়ে ছুটবে। সে বলল, এ উক্তি তো আবুল কাসিম এর পক্ষ থেকে বিদ্রুপ স্বরূপ ছিল। উমর রা. বললেন, হে আল্লাহর দুশমন ! তুমি মিথ্যা বলছ। তারপর উমর রা. তাদের নির্বাসিত করেন এবং তাদের ফসলাদি, মালপত্র, উট, লাগাম রশি ইত্যাদি সামগ্রীর মূল্য দিয়ে দেন। রিওয়ায়াতটি হাম্মাদ ইবনে সালামা রহ………উমর রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেন।

হাদীস নং ২৫৪৭

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….মিসওয়াব ইবনে মাখরামা রা. ও মারওয়ান রা. থেকে বর্ণিত, তাদের উভয়ের একজনের বর্ণনা অপরজনের বর্ণনার সমর্থন করে তাঁরা বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার সময় বের হলেন। যখন সাহাবীগণ রাস্তার এক জায়গায় এসে পৌঁছলেন, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ কুরাইশদের অশ্বারোহী অগ্রগামী বাহিনী নিয়ে গোমায়ম নামক স্থানে অবস্থান করছে। তোমরা ডান দিকে চল। আল্লাহর কসম! খালিদ মুসলমানদের উপস্থিতি টেরও পেল না, এমনকি যখন তারা মুসলিম সেনাবাহিনীর পশ্চাতে ধূলিরাশি দেখতে পেল, তখন সে কুরাইশাদের সংবাদ দেওয়ার জন্য ঘোড়া দৌঁড়িয়ে চলে গেল। এদিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অগ্রসর হয়ে বসে পড়ল। লোকজন হাল-হাল বলল, কাসওয়া ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, কাসওয়া ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাসওয়া ক্লান্ত হয়নি এবং তা তার স্বভাবও নয় বরং তাকে তিনিই আটকিয়েছেন যিনি হাতি বাহিনীকে আটকিয়েছিলেন। তারপর তিনি বললেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, কুরাইশরা আল্লাহর সম্মানিত বিষয় সমূহের মধ্যে যে কোন বিষয়ের সম্মান প্রদর্শনার্থে কিছু চাইলে আমি তা পূরণ করব। এরপর তিনি তাঁর উষ্ট্রীকে ধমক দিলে সে উঠে দাঁড়াল। রাবী বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পথ ত্যাগ করে হুদায়বিয়ার শেষপ্রান্তে অল্প পানি বিশিষ্ট কূপের কাছে অবতরণ করেন। লোকজন তা থেকে অল্প অল্প পানি নিচ্ছিল । এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকজন পানি শেষ করে ফেলল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পিপাসার অভিযোগ করা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোষ থেকে একটি তীর বের করলেন এবং সে তীরটি সেই কূপে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। আল্লাহর কসম, তখন পানি উপচে উঠতে লাগল, এমনকি সকালেই তৃপ্তি সহকারে তা থেকে পানি পান করলেন। এমন সময় বুদায়ল ইবনে ওয়ারকা খুযাঈ তার খুযাআ গোত্রের কিছু লোক নিয়ে এল। তারা তিহামাবাসীদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আন্তরিক হিতাকাঙ্ক্ষী ছিল। বুদাইল বলল, আমি কাব ইবনে লুওয়াই ও আমির ইবনে লুওয়াইকে রেখে এসেছি। তারা হুদায়বিয়ার প্রচুর পানির নিকট অবস্থান করছে। তাদের সঙ্গে আছে শাবক সহ দুগ্ধবতী অনেক উষ্ট্রী। তারা আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ও বায়তুল্লাহর যিয়ারতে বাধা প্রদান করতে প্রস্তুত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আম তো কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসেনি ; বরং উমরা করতে এসেছি। যুদ্ধ নিঃসন্দেহে কুরাইশদের দুর্বল করে ফেলেছে, ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তারা যদি চায়, তবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের সঙ্গে সন্ধি করতে পারি আর তারা আমার ও কাফিরদের মধ্যকার বাঁধা তুলে নিবে। যদি আমি তাদের উপর জয়ী হই তাহলে অন্যান্য লোক ইসলামে যেভাবে প্রবেশ করেছে, তারাও চাইলে তা করতে পারবে। আর না হয়, তারা এ সময়টুকুতে শান্তিতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি আমার প্রস্তাব অস্বীকার করে, তাহলে সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আমার গর্দান বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাব। আর নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাঁর দীনকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। বুদায়ল বলল, আমি আপনার বক্তব্য তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিব। এরপর বুদায়ল কুরাইশদের কাছে এসে বলল, আমি সেই লোকটির নিকট থেকে এসেছি এবং তাঁর কাছে কিছু কথা শুনে এসেছি। তোমরা যদি চাও, তাহলে তোমাদের তা শোনাতে পারি। তাদের মধ্যে নির্বোধ লোকেরা বলল, তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে তোমার কিছু বলার প্রয়োজন মনে করি না। কিন্তু তাদের বিবেকবান লোকেরা বলল, তুমি তাকে যা বলতে শুনেছ, আমাদের তা বল। তারপর বুদায়ল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছিলেন, সব তাদের শুনাল। তারপর উরওয়া ইবনে মাসউদ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, হে লোকেরা ! আমি কি তোমাদের পিতৃতুল্য নই? তারা বলল, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। উরওয়া বলল, তোমরা কি আমার সন্তান তুল্য নও? তারা বলল, হ্যাঁ, অবশ্যই। উরওয়া বলল, আমার সম্বন্ধে তোমাদের কি কোন অভিযোগ আছে ? তারা বলল, উরওয়া বলল, তোমরা কি জান না যে, আমি তোমাদের সাহায্যের জন্য উকাযবাসীদের কাছে আবেদন করেছিলেন এবং তারা আমাদের আহবানে সাড়া দিতে অস্বীকার করলে আমি আমার আত্মীয়-স্বজন, সন্তান-সন্তুতি ও আমার অনুগতদের নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছিলাম? তারা বলল, হ্যাঁ। জানি। উরওয়া বলল, এই লোকটি তোমাদের কাছে একটি ভাল প্রস্তাব পেশ করেছেন। তোমরা তা মেনে নাও এবং আমাকে তার কাছে যেতে দাও। তারা বলল, আপনি তাঁর কাছে যান। তারপর উরওয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এল এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সঙ্গে কথা বললেন, যেমনিভাবে বুদায়লের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। উরওয়া তখন বলল, হে মুহাম্মদ, আপনি কি চান যে, আপনার কওমকে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন, আপনি কি আপনার পূর্বে আরববাসীদের এমন কারো কথা শুনেছেন যে, সে নিজ কওমের মূলোৎপাটন করতে উদ্যত হয়েছিল? আর যদি অন্য রকম হয়, (তখন আপনার কি অবস্থা হবে?) আল্লাহর কসম ! আমি কিছু চেহারা দেখছি এবং বিভিন্ন ধরনের লোক দেখতে পাচ্ছি যারা পালিয়ে যাবে এবং আপনাকে পরিত্যাগ করবে। তখন আবু বকর রা. তাকে বললেন, তুমি লাত দেবীর লজ্জাস্থান চেটে খাও। আমরা কি তাকে ছেড়ে পালিয়ে যাব। উরওয়া বলল, সে কে ? লোকজন বললেন, আবু বকর । উরওয়া বলল, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি তাঁর কসম করে বলছি, আমার উপর যদি আপনার ইহসান না থাকত, যার প্রতিদিন আমি দিতে পারিনি, তাহলে নিশ্চয়ই আপনার কথার জবাব দিতাম। রাবী বলেন, উরওয়া পুনরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল। কথা বলার ফাকে ফাকে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং তাঁর সাথে ছিল একটি তরবারী ও মাথার ছিল লৌহ শিরস্ত্রাণ। উরওয়া যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাঁড়ির দিকে তার হাত বাড়াতো মুগীরা রা. তাঁর তরবারীর হাতল দিয়ে তার হাতে আঘাত করতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাঁড়ি থেকে তোমার হাত হটাও। উরওয়া মাথা তুলে বলল, এ কে? লোকজন বললেন, মুগীরা ইবনে শুবা। উরওয়া বলল, হে গাদ্দার । আমি কি তোমার গাদ্দারীর পরিণতি থেকে তোমাকে উদ্ধারের চেষ্টা করিনি? মুগীরা রা. জাহেলী যুগে কিছু লোকদের সাথে ছিলেন। একদিন তাদের হত্যা করে তাদের সহায় সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। তারপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেণ, আমি তোমার ইসলাম মেনে নিলাম, কিন্তু যে মাল তুমি নিয়েছ, তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তারপর উরওয়া চোখের কোণ দিয়ে সাহাবীদের দিকে তাকাতে লাগল। সে বলল, আল্লাহর কসম ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো থুথু ফেললে তা সাহাবীদের হাতে পড়ত এবং তা গায়ে মুখে মেখে ফেলতেন। তিনি তাদের কোন আদেশ দিলে তা তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পালন করতেন। তিনি উযূ করলে তাঁর উযূর পানির জন্য তাঁর সম্মানার্থে সাহাবীগণ তাঁর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাতেন না। তারপর উরওয়া তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে গেল এবং বলল, হে আমার কওম, আল্লাহর কসম ! আমি অনেক রাজ-বাদশাহর দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কায়সার, কিসরা ও নাজ্জালী সম্রাটের দরবারে দূত হিসেবে গিয়েছি, কিন্তু আমি আল্লাহর কসম করে বলতে পানি যে, কোন রাজা বাদশাহকেই তার অনুসারীদের ন্যায় এত সম্মান করতে দেখিনি, যেমন মুহাম্মদের অনুসারীরা তাকে করে থাকে। আল্লাহর কসম ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি থুথু ফেলেন, তখন তা কোন সাহাবীর হাতে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তা তাদের গায়ে মুখে মেখে ফেলেন। তিনি কোন আদেশ দিলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে পালন করেন; তিনি উযূ করলে তাঁর উযূর পানি নিয়ে সাহাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়, তিনি কথা বললে, সাহাবীগণ নিশ্চুপ হয়ে শুনেন। এমন কি তাঁর সম্মানার্থে তারা তাঁর চেহারার দিকেও তাকান না। তিনি তোমাদের কাছে একটি ভালো প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, তোমরা তা মেনে নাও। তা শুনে কিনানা গোত্রের এক ব্যক্তি বলল, আমাকে তাঁর নিকট যেতে যাও। লোকেরা বলল, যাও। সে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের কাছে এল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হল অমুক ব্যক্তি এবং এমন গোত্রের লোক, যারা কুরবানীর পশুকে সম্মান করে থাকে। তোমরা তার কাছে কুরবানীর পশু নিয়ে আস। তারপর তার কাছে তা নিয়ে আসা হল এবং লোকজন তালবিয়া পাঠ করতে করতে তার সামনে এলেন। তা দেখে লোকটি বলল, সুবহানাল্লাহ ! এমন সব লোকদেরকে কাবা যিয়ারত থেকে বাধা দেওয়া সঙ্গত নয়। তারপর সে তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে গিয়ে বলল, আমি কুরবানীর পশু দেখে এসেছি, সেগুলোকে কিলাদা পরানো হয়েছে ও চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই তাদের কাবা যিয়ারত বাধা প্রদান সঙ্গত মনে করি না। তখন তাদের মধ্য থেকে মিকরায ইবনে হাফস নামক এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে তাঁর কাছে যেতে দাও। তারা বলল, তাঁর কাছে যাও। তারপর সে যখন মুসলিমদের নিকটবর্তী হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হল মিকরায আর সে দুষ্টু লোক। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কথা বলছিল, এমন সময় সুহাইল ইবনে আমর এল। মামার বলেন, ইকরিমা রহ. সূত্রে আইয়্যুব রহ. আমাকে বলেছেন যে, যখন সুহাইল এল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ সহজ হয়ে গেল। মামার রহ. বলেন, যুহরী রহ. তাঁর বর্ণিত হাদীসে বলেছেন যে, সুহাইল ইবনে আমর এসে বলল, আসুন আমাদের ও আপনাদের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র লিখি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন লেখককে ডাকলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (লিখ) بسم الله الرحمن الرحيم এতে সুহাইল বলল, আল্লাহর কসম ! রাহমান কে-? আমরা তা জানি না, বরং পূর্বে আপনি যেমন লিখতেন, লিখুন باسمك اللهم মুসলিমগণ বললেন, আল্লাহর কসম ! আমরা بسم الله الرحمن الرحيم ছাড়া আর কিছু লিখব না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লিখ, باسمك اللهم তারপর বললেন, এটা যার উপর চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা.)। তখন সুহাইল বলল, আল্লাহর কসম ! আমরা যদি আপনাকে আল্লাহর রাসূল বলেই বিশ্বাস করতাম, তাহলে আপনাকে কাবা যিয়ারত থেকে বাধা দিতাম না এবং আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে উদ্যত হতাম না। বরং আপনি লিখুন আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ (এর তরফ থেকে)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসূল ; কিন্তু তোমরা যদি আমাকে অস্বীকার কর তবে লিখ, আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। যুহরী রহ. বলেন এটি এজন্য যে, তিনি বলেছিলেন, তারা যদি আল্লাহর পবিত্র বস্তুগুলোর সম্মান করার কোন কথা দাবী করে তাহলে আমি তাদের সে দাবী মেনে নিব। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ চুক্তি কর যে, তারা আমাদের ও কাবা শরীফের মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে না, যাতে আমরা তাওয়াফ করতে পারি। সুহাইল বলল, আল্লাহর কসম ! আরববাসীরা যেন একথা বলার সুযোগ না পায় যে, এ প্রস্তাব গ্রহণে আমাদের বাধ্য করা হয়েছে। বরং আগামী বছর তা হতে পারে। তারপর লেখা হলো। সুহাইল বলল, এ-ও লিখা হউক যে, আমাদের কোন লোক যদি আপনার কাছে চলে আসে এবং সে যদিও আপনার দীন গ্রহণ করে থাকে, তবুও তাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিবেন। মুসলিমগণ বললেন, সুবহানাল্লাহ ! যে ইসলাম গ্রহণ করে আমাদের কাছে এসেছে, তাকে কেমন করে মুশরিকদের কাছে ফেরত দেওয়া যেতে পারে? এমন সময় আবু জানদাল ইবনে সুহাইল ইবনে আমর সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি বেড়ী পরিহিত অবস্থায় ধীরে ধীরে চলছিলেন। তিনি মক্কার নিম্নাঞ্চল থেকে বের হয়ে এসে মুসলিমদের সামনে নিজেকে পেশ করলেন। সুহাইল বলল, হে মুহাম্মদ ! আপনার সাথে আমার চুক্তি হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রথম কাজ হল তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখনো তো চুক্তি সম্পাদিত হয়নি। সুহাইল বলল, আল্লাহর কসম ! তাহলে আমি আপনাদের সঙ্গে আর কখনো সন্ধি করব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেবল এ লোকটিকে আমার কাছে থাকার অনুমতি দাও। সে বলল, না এ অনুমতি আমি দেব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তুমি এটা কর। সে বলল, আমি তা কবর না। মিকরায বলল, আমরা তাকে আপনার কাছে থাকার অনুমতি দিলাম। আবু জানদাল রহ বলেন, হে মুসলিম সমাজ! আমাকে মুশরিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, অথচ আমি মুসলিম হয়ে এসেছি। আপনারা কি দেখছেন না, আমি কত কষ্ট পাচ্ছি। আল্লাহর রাস্তায় তাকে অনেক নির্যাতিত করা হয়েছে। উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম এবং বললাম, আপনি কি আল্লাহর সত্য নবী নন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, আমরা কি হকের উপর নই আর আমাদের দুশমনরা কি বাতিলের উপর নয়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, তাহলে দীনের ব্যাপারে কেন আমরা এত হেয় হবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি অবশ্যই রাসূল; অতএব আমি তাঁর অবাধ্য হতে পারি না, অথচ তিনিই আমার সাহায্যকারী। আমি বললাম আপনি কি আমাদের বলেন নাই যে, আমরা শীঘ্রই বায়তুল্লাহ যাব এবং তাওয়াফ করব। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি কি এ বছরই আসার কথা বলেছি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি অবশ্যই কাবা গৃহে যাবে এবং তাওয়াফ করবে। উমর রা. বলেন, তারপর আমি আবু বকর রা.-এর কাছে গিয়ে বললাম, হে আবু বকর ! তিনি কি আল্লাহর সত্য নবী নন? আবু বকর রা. বললেন, অবশ্যই। আমি বললাম, আমরা কি সত্যের উপর নই এবং আমাদের দুশমনরা কি বাতিলের উপর নয়? আবু বকর রা. বললেন, ওহে ! নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসূল এবং তিনি তাঁর রবের নাফরমানী করতে পারেন না। তিনিই তাহার সাহায্যকারী। তুমি তাঁর অনুসরণকে আকড়ে ধর। আল্লাহর কসম ! তিনি সত্যের উপর আছেন। আমি বললাম, তিনি কি বলেননি যে, আমরা অচিরেই বায়তুল্লাহ যাব এবং তার তাওয়াফ করব? আবু বকর রা. বললেন, অবশ্যই। কিন্তু তুমি এবারই যে যাবে একথা কি তিনি বলেছিলেন ? আমি বললাম, না । আবু বকর রা. বললেন, তবে নিশ্চয়ই তুমি সেখানে যাবে এবং তার তাওয়াফ করবে । যুহরী রহ. বলেন যে, উমর রা. বলেছেন, আমি এর জন্য অনেক নেক আমল করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, সন্ধিপত্র লেখা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে বললেন, তোমরা উঠ এবং কুরবানী কর ও মাথা কামিয়ে ফেল। রাবী বলেন, আল্লাহর কসম ! রাসূলুল্লাহ তিনবার তা বলার পরও কেউ উঠলেন না। তাদের কাউকে উঠতে না দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামা রা-এর কাছে এসে লোকদের এই আচরণের কথা বলেন। উম্মে সালামা রা. বললেন, হে আল্লাহর নবী ! আপনি যদি চান, তাহলে আপনি বাইরে যান ও তাদের সাথে কোন কথা না বলে আপনার উট আপনি কুরবানী করুন এবং ক্ষুরধার ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিন। সেই অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে গেলেন এবং কারো সাথে কোন কথা না বলে নিজে পশু কুরবানী দিলেন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়াইলেন। তা দেখে সাহাবীগণ উঠে দাঁড়ালেন ও নিজ নিজ পশু কুরবানী দিলেন এবং একে অপরের মাথা কামিয়ে দিলেন। অবস্থা এমন হল যে, ভীড়ের কারণে একে অপরের উপর পড়তে লাগলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কয়েকজন মুসলিম মহিলা এলেন। তখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন : “হে মুমিনগণ ! মহিলার তোমাদের কাছে হিজরত করে আসলে………………….. কাফির নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না” (৬০ : ১০)। সেদিন উমর র. দুজন স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিলেন, তারা ছিল মুশরিক থাকাকালে তাঁর স্ত্রী। তাদের একজনকে মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান এবং অপরজনকে সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া বিয়ে করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় ফিরে আসলেন। তখন আবু বাশীর রা. নামক কুরাইশ গোত্রের এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলেন। মক্কার কুরাইশরা তাঁর তালাশে দুজন লোক পাঠাল। তারা বলল, আপনি আমাদের সাথে যে চুক্তি করেছেন (তা পূর্ণ করুন) । তিনি তাকে ঐ দুই ব্যক্তির হাওয়ালা করে দিলেন। তারা তাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল এবং যুল-হুলায়ফায় পৌছে অবতরণ করল আর তাদের সাথে যে খেজুর ছিল তা খেতে লাগল। আবু বাশীর রা. তাদের একজনকে বললেন, আল্লাহর কসম ! হে অমুক, তোমার তরবারীটি খুবই চমৎকার দেখছি। সে লোকটি তরবারীটি বের করে বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম ! এটি একটি উৎকৃষ্ট তরবারী। আমি একাধিকবার তা পরীক্ষা করেছি। আবু বাশীর রা. বললেন, তলোয়ারটি আমি দেখতে চাই আমাকে তা দেখাও। তারপর লোকটি আবু বাশীরকে তলোয়ারটি দিল। আবু বাশীর রা. সেটি দ্বারা তাকে এমন আঘাত করলেন যে, তাঁতে সে মরে গেল। তার অপর সঙ্গী পালিয়ে মদীনায় এসে পৌঁছল এবং দৌড়িয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে বললেন, এই লোকটি ভীতিজনক কিছু দেখে এসেছে। ইতিমধ্যে লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌছে বলল, আল্লাহর কসম ! আমার সঙ্গীকে হত্যা করা হয়েছে, আমিও নিহত হতাম। এমন সময় আবু বাশীর রা.-ও সেখানে এসে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহর কসম ! আল্লাহ আপনার দায়িত্ব সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন। আমাকে তার কাছে ফেরত দিয়েছেন ; এ ব্যাপারে আল্লাহ আমাকে তাদের কবল থেকে নাজাত দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সর্বনাশ ! এত যুদ্ধের আগুন প্রজ্ব্বলিত, কেউ যদি তাকে বিরত রাখত। আবু বাশীর রা. যখন একথা শুনলেন, তখন বুঝতে পারলেন যে, তাকে আবার তিনি কাফিরদে কাছে ফেরত পাঠাবেন। তাই তিনি বেরিয়ে নদীর তীরে এসে পড়লেন। রাবী বলেন, এ দিকে আবু জানদাল ইবনে সুহাইল কাফিরদের কবল থেকে পালিয়ে এসে আবু বাশীরের সঙ্গে এসে মিলিত হত। এভাবে তাদের একটি দল হয়ে গেল। আল্লাহর কসম ! তাঁরা যখনই শুনতেন যে, কুরাইশদের কোন বাণিজ্য কাফেলা সিরিয়া যাবে, তখনই তাঁরা তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন আর তাদের হত্যা করতেন ও তাদের মাল সামান কেড়ে নিতেন। তখন কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরনিকট লোক পাঠাল। আল্লাহ ও আত্মীয়তার ওয়াসীলা দিয়ে আবেদন করল যে, আপনি আবু বাশীরের কাছে এর থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ পাঠান। এখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কেউ এলে সে নিরাপদ থাকবে । তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে নির্দেশ পাঠালেন। এ সময় আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেন : “তিনি তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের থেকে বিরত রেখেছেন………..জাহেলী যুগের অহমিকা পর্যন্ত” (৮৪ : ২৬)। তাদের অহমিকা এই ছিল যে, তারা মুহাম্মদ (সা.) কে আল্লাহর নবী বলে স্বীকার করেনি এবং “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” মেনে নেইনি ; বরং বায়তুল্লাহ ও মুসলিমদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। উকাইল রহ. যুহরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, উরওয়া রহ. বলেন যে, আমার কাছে আয়িশা রা. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম মহিলাদের পরীক্ষা করতেন এবং আমাদের কাছে বর্ণনা পৌছেছে যে, যখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেন, মুসলমানগণ যেন মুশরিক স্বামীদের সে সব খরচ আদায় করে দেয়, যা তারা তাদের হিজরতকারী স্ত্রীদের জন্য ব্যয় করেছে এবং মুসলিমদের নির্দেশ দেন যেন তারা কাফির স্ত্রীদের আটকিয়ে না রাখে। তখন উমর রা. তাঁর দুই স্ত্রী কুরায়বা বিনতে আবু উমায়্যা ও বিনতে জারওয়াল খুযায়ীকে তালাক দিয়ে দেন। এরপর কুরায়বাকে মুআবিয়া ও অপর জনকে আবু জাহাম বিয়ে করে নেয়। তারপর কাফিররা যখন মুসলমানদের তাদের স্ত্রীদের জন্য খরচকৃত অর্থ ফেরত দিতে অস্বীকার করল, তখন নাযিল হল : “তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যদি কেউ হাত ছাড়া হয়ে কাফিরদের কাছে চলে যায়, তবে তোমরা তার বদলা নিবে”(৬০: ১১) বদলা হল : কাফিরদে স্ত্রী যারা হিজরত করে চলে আসে, তাদের কাফির স্বামীকে মাহর মুসলিমদের যা দিতে হয়, এ সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দেন যে, তারা যেন মুসলিমদের যে সব স্ত্রী চলে গেছে ঐ অর্থ তাদের মুসলিম স্বামীদেরকে দিয়ে দেয়। (যুহরী রহ. আরো বলেন) এমন কোন মুহাজির রমণীর কথা আমাদের জনা নেই, যে ঈমান আনার পর মুরতাদ হয়ে চলে গেছে। আমাদের কাছে এ বর্ণনা পৌছেছে যে, আবু বাশীর ইবনে আসীদ সাকাফী রা. ঈমান এনে চুক্তির মেয়াদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে হিজরত করে চলে আসলেন। তখন আখনাস ইবনে শারীক আবু বাশীর রা.-কে ফেরত চেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পত্র লিখল। তারপর তিনি হাদীসের অবশিষ্ট অংশ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২৫৪৮

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারীরা তার কিতাবতের ব্যাপারে তাঁর কাছে সাহায্যের আবেদন নিয়ে এল। তিনি বললেন, তুমি চাইলে আমি তোমার মালিককে দিয়ে দিতে পারি এবং ওয়ালার অধিকার হবে আমার । তারপর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন, তিনি তাঁর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাকে কিনে আযাদ করে দাও। কেননা ওয়ালার অধিকার তারই, যে আযাদ করে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন, লোকদের কি হয়েছে যে, তারা এমন সব শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যে এমন শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই, সে তার অধিকারী হবে না যদিও শত শর্তারোপ করে।

হাদীস নং ২৫৪৯

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর নিরানব্বই অর্থাৎ এক কম একশটি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি তা স্মরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

হাদীস নং ২৫৫০

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনে খাত্তাব রা. খায়বারে কিছু জমি লাভ করেন। তিনি এ জমির ব্যাপারে পরামর্শের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি খায়বারে এমন উৎকৃষ্ট জমি লাভ করেছি যা ইতিপূর্বে আর কখনো পাইনি। আপনি আমাকে এ ব্যাপারে কি আদেশ দেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে জমির মূল সত্ত্ব ওয়াকফে আবদ্ধ করতে এবং উৎপন্ন বস্তু সাদকা করতে পার। ইবনে উমর রা. বলেন, উমর রা. এ শর্তে তা সাদকা করেন যে, তা বিক্রি করা যাবে না, তা দান করা যাবে না এবং কেউ এর উত্তরাধিকারী হবে না। তিনি সাদকা করে দেন এর উৎপন্ন বস্তু অভাবগ্রস্ত, আত্মীয়-স্বজন, দাসমুক্তি, আল্লাহর রাস্তায়, মুসাফির ও মেহমানদের জন্য। (বারী আরোও বলেন) যে এর মুতাওয়াল্লী হবে তার জন্য সম্পদ সঞ্চয় না করে যথাবিহিত খাওয়া ও খাওয়ানোতে কোন দোষ নেই। তারপর আমি ইবনে সীরীন রহ.-এর নিকট হাদীসটি বর্ণনা করলে তিনি বলেন, অর্থাৎ মাল জমা না করে।

 অসীয়াত অধ্যায় (২৫৫১-২৫৯০)

হাদীস নং ২৫৫১

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয় যে, তার অসীয়াতযোগ্য কিছু রয়েছে, সে দু’রাত কাটাবে অথচ তার কাছে তার অসীয়াত লিখিত থাকবে না। মুহাম্মদ ইবনে মুসলিম রহ. এ হাদীস বর্ণনায় মালিক রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। এ সনদে আমর রহ. ইবনে উমর রা.-এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২৫৫২

ইবরাহীম ইবনে হারিস রহ………. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শ্যালক অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন জুয়াইরিয়া বিনতে হারিসের ভাই ইবনুল হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ইনতিকাল সময় তাঁর সাদা খচ্চরটা, তাঁর হাতিয়ার এবং সে জমি যা তিনি সাদকা করেছিলেন, তাছাড়া কোন স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রা, কোন দাস-দাসী কিংবা কোন জিনিস রেখে যাননি।

হাদীস নং ২৫৫৩

খাল্লাদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ……..তালহা ইবনে মুসাররিফ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আদী আওফা রা.-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি অসীয়াত করেছিলেন ? তিনি বলেন, না। আমি বললাম, তাহলে কিভাবে লোকদের উপর অসীয়াত ফরয করা হল, কিংবা অসীয়াতের নির্দেশ দেয়া হল? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের (অনুযায়ী আমল করার) অসীয়াত করেছেন।

হাদীস নং ২৫৫৪

আমর ইবনে যুরারা রহ……..আসওয়াদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীগণ আয়িশা রা.-এর কাছে আলোচনা করলেন যে, আলী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওয়াসী ছিলেন। আয়িশা রা. বলেন, তিনি কখন তাঁর প্রতি অসীয়াত করলেন ? অথচ আমি তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার বুকে অথবা বলেছেন আমার কোলে হেলান দিয়ে রেখেছিলাম। তখন তিনি পানির তস্তুরি চাইলেন, তারপর আমার কোলে ঝুঁকে পড়লেন। আমি বুঝতেই পারিনি যে, তিনি ইন্তিকাল করেছেন। অতএব তাঁর প্রতি কখন অসীয়াত করলেন।

হাদীস নং ২৫৫৫

আবু নুআইম রহ………সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে রোগাক্রান্ত অবস্থায় দেখতে আসেন। সে সময় আমি মক্কায় ছিলাম। কোন ব্যক্তি যে স্থান থেকে হিজরত করে, সেখানে মৃত্যুবরণ করাকে তিনি অপছন্দ করতেন। এজন্য তিনি বলতেন, আল্লাহর রহম করুক ইবনে আফরা-র উপর। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি কি আমার সমুদয় মালের ব্যবহারের অসীয়াত করে যাব? তিনি বললেন, না । আমি আরয করলাম, তবে অর্ধেক ? তিনি ইরশাদ করলেন, না। আমি আরয করলাম, তবে এক তৃতীয়াংশ ? তিনি ইরশাদ করলেন, (হ্যাঁ) এক তৃতীয়াংশ আর এক তৃতীয়াংশও অনেক। ওয়ারিসগণকে দরিদ্র পরমুখাপেক্ষী করে রেখে যাওয়ার চেয়ে ধনী অবস্থায় রেখে যাওয়া শ্রেয়। তুমি যখনই কোন খরচ করবে, তা সাদকারূপে গণ্য হবে। এমনকি সে লোকমাও যা তোমার স্ত্র্রীর মুখে তুলে দিবে। হয়ত আল্লাহ পাক তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং লোকেরা তোমার দ্বারা উপকৃত হবেন, আবার কিছু লোক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সে সময় তার একটি মাত্র কন্যা ছাড়া কেউ ছিল না।

হাদীস নং ২৫৬৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু তালহা রা.-কে বলেন, মত হল, তোমার বাগানটি তোমার আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে দাও। আবু তালহা রা. বলেন, আমি তাই করব ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তাই আবু তালহা রা. তার বাগানটি তার আত্মীয়-স্বজন ও চাচাত ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করে দেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যখন এই আয়াতটি নাযিল হল : (হে মুহাম্মদ) আপনার নিকট আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দেন (২৬ : ২১৪)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গোত্রদের ডেকে বললেন, হে বানু ফিহর, হে বানু আদী, তোমরা সতর্ক হও। আবু হুরায়রা রা. বলেনে যে, যখন কুরআনের এই আয়াত নাযিল হল: (হে মুহাম্মদ) আপনার নিকট আত্মীয় বর্গকে সতর্ক করে দেন (২৬ : ২১৪)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়।

হাদীস নং ২৫৫৭

মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম রহ……….আমির ইবনে সাদ রা.-এর পিতা সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একবার) অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে পেছন দিকে ফিরিয়ে না নেন। তিনি বললেন, আশা করি আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার দ্বারা লোকদের উপকৃত করবেন। আমি বললাম, আমি অসীয়াত করতে চাই। আমার তো একটি মাত্র কন্যা রয়েছে। আমি আরো বললাম, আমি অর্ধেক অসীয়াত করতে চাই। তিনি বললেন, অর্ধেক অনেক বেশী। আমি বললাম, এক তৃতীয়াংশ। তিনি বললেন, আচ্ছা এক তৃতীয়াংশ এবং এক তৃতীয়াংশ বেশ বা তিনি বলেছেন বিরাট। সাদ রা. বলেন, এরপর লোকেরা এক তৃতীয়াংশ অসীয়াত করতে লাগল। আর তা-ই বৈধ হল।

হাদীস নং ২৫৫৮

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……… রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উতবা ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. তাঁর ভাই সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা.-কে এই বলে অসীয়াত করেন যে, যামআর দাসীর ছেলেটি আমার ঔরসজাত। তাকে তুমি তোমার অধিকারে আনবে। মক্কা বিজয়ের বছর সাদ রা. তাকে নিয়ে নেন এবং বলেন, সে আমার ভাতিজা আমাকে এর ব্যাপারে অসীয়াত করে গেছেন। আবদ ইবনে যামআ রা. দাঁড়িয়ে বললেন, সে আমার ভাই এবং আমার পিতার দাসীর পুত্র। আমার পিতার বিছানায় তার জন্ম হয়েছে। তারা উভয়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসেন। সাদ রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সে আমার ভাইয়ের পুত্র এবং তিনি আমাকে তা সম্পর্কে অসীয়াত করে গেছেন। আবদ ইবনে যামআ রা. বললেন, সে আমার ভাই এবং আমার পিতার দাসীর পুত্র। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবদ ইবনে যামআ সে তোমারই প্রাপ্য। কেননা যার বিছানায় সন্তান জন্মেছে, সেই সন্তানের অধিকারী। ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর। তারপর তিনি সাওদা বিনতে যামআ রা.-কে বললেন, তুমি এই ছেলেটি থেকে পর্দা কর। কেননা তিনি ছেলেটির সঙ্গে উতবা-র সাদৃশ্য দেখতে পান। ছেলেটির আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত সে কখনো সাওদা রা.-কে দেখেনি।

হাদীস নং ২৫৫৯

হাসসান ইবনে আবু আব্বাদ রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, এক ইয়াহুদী একটি মেয়ের মাথা দুইটি পাথরের মাঝে মাঝে রেখে তা তেথলে ফেলে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কে তোমাকে এমন করেছে ? কি অমুক, না অমুক ব্যক্তি ? অবশেষে যখন সেই ইয়াহুদীর নাম নেওয়া হল তখন মেয়েটি মাথা দিয়ে ইশারা করল, হ্যাঁ। তারপর সেই ইয়াহুদীকে নিয়ে আসা হল এবং তাকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে সে স্বীকার করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাপারে নির্দেশ দিলেন। সে মতে পাথর দিয়ে তার মাথা তেথরিয়ে দেয়া হল।

হাদীস নং ২৫৬০

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উত্তরাধিকারী হিসেবে সম্পদ পেত সন্তান আর পিতা-মাতার জন্য ছিল অসীয়াত । এরপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর পছন্দ মোতাবেক এ বিধান রহিত করে ছেলের অংশ মেয়ের দ্বিগুণ, পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য এক ষষ্ঠমাংশ, স্ত্রীর জন্য (যদি সন্তান থাকে) এক অষ্টমাংশ, (না থাকলে) এক চতুর্থাংশ, স্বামীর জন্য (সন্তান না থাকলে) অর্ধেক, (থাকলে) এক চতুর্থাংশ নির্ধারণ করেন।

হাদীস নং ২৫৬১

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! উত্তম সাদকা কোনটি ? তিনি বলেন, সুস্থ এবং সম্পদের প্রতি অনুরাগ থাকা অবস্থায় দান খায়রাত করা, যখন তোমরা ধনী হওয়ার আকাঙ্খা থাকে এবং তুমি দারিদ্র্যের আশংকা রাখ, আর তুমি এভাবে অপেক্ষায় থাকবে না যে, যখন তোমার প্রাণ কণ্ঠাগত হয়ে আসে, তখন তুমি বলবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু অথচ তা অমুকের জন্য হয়েই গেছে।

হাদীস নং ২৫৬২

সুলাইমান ইবনে দাউদ আবু রাবী রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি : যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, আমানত রাখলে তা খেয়ানত করে এবং প্রতিশ্রুতি দিলে তা ভঙ্গ করে।

হাদীস নং ২৫৬৩

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আমি সওয়াল করলাম, তিনি আমাকে দান করলেন। আবার সওয়াল করলাম, তিনি আমাকে দান করলেন। তারপর তিনি আমাকে বললেন, হে হাকীম ! এই ধন সম্পদ সবুজ-শ্যামল, মধুর। যে ব্যক্তি দানশীলতার মনোভাব নিয়ে তা গ্রহণ করবে, তাঁতে তার বরকত হবে। আর যে ব্যক্তি প্রতীক্ষা কাতর অন্তরে তা গ্রহণ করবে, তাঁতে তার বরকত হবে না। সে ঐ ব্যক্তির মত যে খায়, কিন্তু তৃপ্ত হয় না। উপরের (দাতার) হাত নীচের (গ্রহীতার) হাতের চাইতে উত্তম। হাকীম রা. বলেন, তারপর আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, আপনার পরে আমি দুনিয়া থেকে বিদায়ের আগে আর কারো কিছু চাইব না। (কোন কিছু নেব না) এরপর আবু বকর রা. কিছু দান করার জন্য হাকীমকে আহবান করেন, কিন্তু হাকীম রা. তাঁর কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তারপর উমর রা.-ও কিছু দান করার জন্য ডেকে পাঠান, কিন্তু তাঁর কাছে থেকেও কিছু গ্রহণ করতে তিনি অস্বীকার করেন। তখন উমর রা. বলেন, হে মুসলিম সমাজ ! আমি আল্লাহ প্রদত্ত গনীমতের মাল থেকে প্রাপ্য তাঁর অংশ তাঁর সামনে পেশ করেছি, কিন্তু তিনি তা নিতে অস্বীকার করেছেন, হাকীম রা. তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরে আর কারো নিকট কিছু চাননি।

হাদীস নং ২৫৬৪

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্ববান এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাই শাসক হলেন দায়িত্ববান, তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্ববান এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্ববান, তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। গোলাম তার মালিকের ধন-সম্পদের দায়িত্ববান, তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। রাবী বলেন, আমার মনে হয় তিনি এও বলেছেন যে, পুত্র তার পিতার সম্পদের দায়িত্ববান।

হাদীস নং ২৫৬৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু তালহা রা.-কে বলেন, মত হল, তোমার বাগানটি তোমার আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে দাও। আবু তালহা রা. বলেন, আমি তাই করব ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তাই আবু তালহা রা. তার বাগানটি তার আত্মীয়-স্বজন ও চাচাত ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করে দেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যখন এই আয়াতটি নাযিল হল : (হে মুহাম্মদ) আপনার নিকট আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দেন (২৬ : ২১৪)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গোত্রদের ডেকে বললেন, হে বানু ফিহর, হে বানু আদী, তোমরা সতর্ক হও। আবু হুরায়রা রা. বলেনে যে, যখন কুরআনের এই আয়াত নাযিল হল: (হে মুহাম্মদ) আপনার নিকট আত্মীয় বর্গকে সতর্ক করে দেন (২৬ : ২১৪)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়।

হাদীস নং ২৫৬৬

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আল্লাহ তা’আলা কুরআনের এই আয়াতটি নাযিল করলেন, (হে মুহাম্মদ) আপনার নিকট আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দেন (২৬ : ২১৪)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়। কিংবা অনুরূপ শব্দ বললেন, তোমরা (আল্লাহর আযাব থেকে) আত্মরক্ষা কর। আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হে বানু আবদ মানাফ ! আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব ! আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হে সাফিয়্যা ! রাসূলুল্লাহর ফুফু, আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হে ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ! আমার ধন-সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। আসবাগ রহ. ইবনে ওয়াহব রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে হাদীস বর্ণনায় আবুল ইয়ামান রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ২৫৬৭

কুতাইবা রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন দেখতে পেলেন যে, এক ব্যক্তি কুরবানীর উট হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে বললেন, এর উপর সওয়ার হও। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এটি তো কুরবানীর উট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয়বার বা চতুর্থবার তাকে বললেন, তার উপর সওয়ার হয়ে যাও, দুর্ভোগ তোমার জন্য কিংবা বললেন, তোমার প্রতি আফসোস।

হাদীস নং ২৫৬৮

ইসমাঈল রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন যে, সে একটি কুরবানীর উট হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে বললেন, এর উপর সওয়ার হও। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এটি তো কুরবানীর উট। তিনি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার তাকে বললেন, এর উপর সওয়ার হয়ে যাও, দুর্ভোগ তোমার জন্য।

হাদীস নং ২৫৬৯

মুহাম্মদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, সাদ ইবনে উবাদা রা.-এর মা মারা গেলেন এবং তিনি সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন। পরে (সাদ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার মা আমার অনুপস্থিতে মারা যান। আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে কিছু সাদকা করি, তাহলে কি তা তাঁর কোন উপকারে আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সাদ রা. বললেন, তাহলে আমি আপনাকে সাক্ষী করছি আমার মিখরাফ নামক বাগানটি তাঁর জন্য সাদকা করলাম।

হাদীস নং ২৫৭০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………কাব ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আমার তাওবা (কবুলের শুকরিয়া) হিসাবে আমি আমার যাবতীয় মাল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে সাদকা করে মুক্ত হতে চাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিছু মাল নিজের জন্য রেখে দাও, তা তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, তাহলে আমি আমার খায়বারের অংশটি নিজের জন্য রেখে দিলাম।

হাদীস নং ২৫৭১

আবু নুমান মুহাম্মদ ইবনে ফাযল রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকদের ধারণা, উক্ত আয়াতটি মানসুখ হয়ে গেছে; কিন্তু আল্লাহর কসম ! আয়াতটি মানসুখ হয়নি; বরং লোকেরা এর উপর আমল করতে অনীহা প্রকাশ করছে। আত্মীয় দু’ধরনের- এক. আত্মীয় যারা ওয়ারিস হয়, এবং তারা উপস্থিত কিছু দিবে। দুই. এমন আত্মীয় যারা ওয়ারিস নয়, তারা উপস্থিতদের সঙ্গে সদালাপ করবে এবং বলবে, আমাদের অধিকার কিছু নেই, যা তোমাদের দিতে পারি।

হাদীস নং ২৫৭২

ইসমাঈল রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমার মা হঠাৎ মারা যান। আমার ধারণা যে, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন, তাহলে সাদকা করতেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে সাদকা করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে সাদকা কর।

হাদীস নং ২৫৭৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, সাদ ইবনে উবাদা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জানতে চাইলেন যে, আমার মা মারা গেছেন এবং তার উপর মান্নত ছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তা পক্ষ থেকে তা আদায় কর।

হাদীস নং ২৫৭৪

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, বানু সাঈদার নেতা সাদ ইবনে উবাদা রা.-এর মা মারা গেলেন। তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার মা আমার অনুপস্থিতে মারা যান। আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে কিছু সাদকা করি, তাহলে কি তা তাঁর কোন উপকারে আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সাদ রা. বললেন, তাহলে আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে আমি আমার মিখরাফ নামক বাগানটি তাঁর জন্য সাদকা করলাম।

হাদীস নং ২৫৭৫

আবুল ইয়ামান রহ……….উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি আয়িশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করেন: “তোমরা যদি আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করবে, যাকে তোমাদের ভাল লাগে”(৪:৩)। আয়াতটির অর্থ কি? আয়িশা রা. বললেন, এখানে সেই ইয়াতীম মেয়েদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যে তার অভিভাবকের লালন-পালনে থাকে। এরপর সে অভিভাবক তার রূপ-লাবণ্য ও ধন-সম্পদে আকৃষ্ট হয়ে, তার সমমানে মেয়েদের প্রচলিত মহর থেকে কম দিয়ে তাকে বিয়ে করতে চায়। অতএব যদি মহর পূর্ণ করার ব্যাপারে এদের প্রতি ইনসাফ করতে না পারে তবে ঐ অভিভাবকদেরকে নিষেধ করা হয়েছে এদের বিবাহ করতে এবং নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের ছাড়া অন্য মেয়েদের বিবাহ করতে। আয়িশা রা. বলেন, এরপর লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত করেন : “এবং লোকে আপনার কাছে মহিলাদের বিষয়ে জানতে চায়। বলুন, আল্লাহ তোমাদের তাদের সম্বন্ধে ব্যবস্থা জানাচ্ছেন। (৪:১২৭)। আশিয়া রা. বলেন, আল্লাহ তা’আলা এই আয়াতে বর্ণনা করেন যে, ইয়াতীম মেয়েরা সুন্দরী ও সম্পদশালী হলে অভিভাবকরা তাদের বিয়ে করতে আগ্রহী হয়, কিন্তু পূর্ণ মহর প্রদান করে না। আবার ইয়াতীম মেয়েরা গরীব হলে এবং সুশ্রী না হলে তাদের বিয়ে করতে চায় না বরং অন্য মেয়ে তালাশ করে। আয়িশা রা. বলেন যে, আকর্ষণীয় না হলে তারা যেমন ইয়াতীম মেয়েদের পরিত্যাগ করে, তেমনি আকর্ষণীয় মেয়েদেরও তারা বিয়ে করতে পারবে না, যদি তাদের ইনসাফ মাফিক পূর্ণ মহর প্রদান এবং তাদের হক যথাযথভাবে আদায় না করে।

হাদীস নং ২৫৭৬

হারূন রহ………..ইবনে উম রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে উমর রা. নিজের কিছু সম্পত্তি সাদকা করেছিলেন, তা ছিল ছামাগ নামে একটি খেজুর বাগান। উমর রা. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি একটি সম্পদ পেয়েছি, যা আমার নিকট খুবই পছন্দনীয়। আমি সেটি সাদকা করতে চাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মূল সম্পদটি এ শর্তে সাদকা কর যে, তা বিক্রি করা যাবে না। এবং কেউ ওয়ারিস হবে না, বরং তার ফল দান করা হবে। তারপর উমর রা. সেটি এভাবেই সাদকা করলেন। তার এ সাদকা ব্যয় হবে আল্লাহর রাস্তায়, দাস মুক্তির ব্যাপারে, মিসকীন, মেহমান, মুসাফির ও আত্মীয়দের জন্য। এর যে মুতাওয়াল্লী হবে তার জন্য তা থেকে সঙ্গত পরিমাণ আহার করলে কিংবা বন্ধু-বান্ধবকে খাওয়ালে কোন দোষ নেই। তবে তা সঞ্চয় করতে পারবে না।

হাদীস নং ২৫৭৭

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (আল্লাহ তাআলার বাণী) যে বিত্তবান সে যেন বিরত থাকে আর যে বিত্তহীন সে যেন সংগত পরিমাণ ভোগ করে (৪:৬) আয়াতটি ইয়াতীমের অভিভাবক সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। অভিভাবক যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তাহলে বিধি মোতাবেক ইয়াতীমের সম্পত্তি থেকে প্রয়োজন পরিমাণ খেতে পারবে।

হাদীস নং ২৫৭৮

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেগুলো কি? তিনি বললেন, ১. আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা ২. যাদু ৩. আল্লাহ তা’আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা ৪. সুদ খাওয়া ৫. ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা ৬. রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং ৭. সরল প্রকৃতির সতী মুমিন নারীদের অপবাদ দেওয়া।

হাদীস নং ২৫৭৯

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ………….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় এলেন, তখন তাঁর কোন খাদিম ছিল না। আবু তালহা রা. আমার হাত ধরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আমাকে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আনাস একজন বুদ্ধিমান ছেলে। সে আপনার খেদমত করবে। এরপর প্রবাসে ও আবাসে আমি তাঁর খেদমত করেছি। আমার কৃত কোন কাজ সম্পর্কে তিনি কখনো বলেননি, তুমি এরূপ কেন করলে? কোন কাজ না করলে তিনি বলেননি, তুমি এটি এরূপ কেন করলে না?

হাদীস নং ২৫৮০

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, মদীনায় আনসারদের মধ্যে আবু তালহার খেজুর বাগান-সম্পদ সবচাইতে বেশী ছিল। আর সকল সম্পদের মধ্যে তাঁর কাছে সবচাইতে প্রিয় সম্পদ ছিল মসজিদের সামনে অবস্থিত বায়রুহা বাগানটি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে বাগানে যেতেন এবং এর সুস্বাদু পানি পান করতেন। আনাস রা. বলেন, যখন নাযিল হল: “তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা নেকী হাসিল করতে পারবে না। আবু তালহা রা. দাঁড়িয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আল্লাহ বলেছেন: তোমরা যা ভালবাস, তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো নেকী হাসিল করতে পারবে না। আমার কাছে সবচাইতে প্রিয় সম্পদ হল বায়রুহা । সেটি আল্লাহর নামে সাদকা। আমি আল্লাহর কাছে এর সওয়াব ও কিয়ামতের সঞ্চয়ের আশা করি। আল্লাহর মর্জি অনুযায়ী আপনি তা ব্যয় করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বেশ ! এটি লাভজনক সম্পদ অথবা (বলেন) অস্থায়ী সম্পদ। ইবনে মাসলামা সন্দেহ পোষণ করেন। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) তুমি যা বলেছ, আমি তা শুনেছি। আমার মতে তুমি তা তোমার আত্মীয়দের মধ্যে বন্টন করে দাও। আবু তালহা রা. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তা-ই করব। তারপর তিনি তা তার আত্মীয় ও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। ইসমাঈল,আবদুল্লাহ, ইবনে ইউসুফ, ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া রা. মালিক রহ-এর (সন্দেহ ছাড়াই (অস্থায়ী) বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২৫৮১

মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহীম রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলেন এবং তার মা মারা গেছেন। তার পক্ষ থেকে যদি আমি সাদকা করি তাহলে তা কি তার উপকারে আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সাহাবী বললেন, আমার একটি বাগান আছে, আপনাকে সাক্ষী রেখে আমি তার পক্ষ থেকে সাদকা করলাম।

হাদীস নং ২৫৮২

মুসাদ্দাদ রহ………….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ তৈরীর নির্দেশ দিলেন। তারপর বললেন, হে বানু নাজ্জার তোমরা এই বাগানটির মূল্য নির্ধারণ করে আমার কাছে বিক্রি কর। তারা বলল, এরূপ নয়। আল্লাহর কসম ! আমরা একমাত্র আল্লাহর কাছেই এর মূল্যের আশা রাখি।

হাদীস নং ২৫৮৩

মুসাদ্দাদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. খায়বারে কিছু জমি লাভ করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, আমি এমন ভাল একটি জমি পেয়েছি, যা ইতিপূর্বে পাইনি। আপনি এ সম্পর্কে আমাকে কি নির্দেশ দেন? তিনি বলেন, তুমি ইচ্ছা করলে আসল জমিটি ওয়াকফ করে তার উৎপন্ন সাদকা করতে পার। উমর রা. এটি গরীব, আত্মীয়-স্বজন, গোলাম আযাদ, আল্লাহর পথে, মেহমান ও মুসাফিরদের জন্য এ শর্তে সাদকা করলেন যে, আসল জমি বিক্রি করা যাবে না, কাউকে দান করা যাবে না, কেউ এর উত্তরাধিকারী হবে না। তবে যে এর মুতাওয়াল্লী হবে তার জন্য তা থেকে সংগত পরিমাণ খেতে বা বন্ধু-বান্ধবকে খাওয়াতে কোন দোষ নেই। তবে এ থেকে সঞ্চয় করবে না।

হাদীস নং ২৫৮৪

আবু আসিম রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, উমর রা. খায়বারে কিছু সম্পদ লাভ করেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাকে অবহিত করেন। তিনি বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে সেটি সাদকা করতে পার। তারপর তিনি সেটি অভাবগ্রস্ত, মিসকীন, আত্মীয়-স্বজন ও মেহমানদের মধ্যে সাদকা করে দেন।

হাদীস নং ২৫৮৫

ইসহাক রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় এলেন তখন মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিলেন এবং তিনি বললেন, হে বানু নাজ্জার! মূল্য নির্ধারিত করে তোমাদের এ বাগানটি আমার কাছে বিক্রি করে দাও। তারা বলল, এরূপ নয়, আল্লাহর কসম ! একমাত্র আল্লাহর কাছেই আমরা এর মূ্ল্যের আশা রাখি।

হাদীস নং ২৫৮৬

মুসাদ্দাদ রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, উমর রা. এক ব্যক্তিকে তার একটি ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দেন, যেটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আরোহণ করার জন্য দিয়েছিলেন, তিনি এক ব্যক্তিকে তা আরোহণ করার জন্য দিলেন। উমর রা.-কে জানান হল যে, ঘোড়াটি সে ব্যক্তি বিক্রির জন্য রেখে দিয়েছে। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা ক্রয় করার ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, তুমি তা ক্রয় করবে না এবং যা সাদকা করে দিয়েছ তা ফিরিয়ে নিবে না।

হাদীস নং ২৫৮৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উত্তরাধিকারী কোন স্বর্ণমুদ্রা এবং রৌপ্যমুদ্রা ভাগাভাগি করবে না, বরং আমি যা কিছু রেখে গেলাম তা থেকে আমার সহধর্মিণীদের খরচ এবং কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দেওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সাদকা।

হাদীস নং ২৫৮৮

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, উমর রা. তাঁর ওয়াকফে এই শর্তারোপ করেন যে, মুতাওয়াল্লী তা থেকে নিজে খেতে পারবে এবং বন্ধু-বান্ধবকেও খাওয়াতে পারবে, তবে সম্পদ সঞ্চয় করতে পারবে না।

হাদীস নং ২৫৮৯

মুসাদ্দাদ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বানূ নাজ্জার ! তোমাদের বাগানটি মূল্য নির্ধারণ করে আমার কাছে বিক্রি করে দাও। তারা বলল, আমরা এর মূল্য একমাত্র আল্লাহর কাছে আশা রাখি

হাদীস নং ২৫৯০

মুহাম্মদ ইবনে সাবিক রহ. কিংবা ফযল ইবনে ইয়াকুব রহ…………মুহাম্মদ ইবনে সাবিক রহ.-এর মাধ্যমে…….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত যে, তার পিতাকে উহুদের যুদ্ধে শহীদ করা হয়। তিনি ছয়টি কন্যা সন্তান রেখে যান আর তাঁর উপর ঋণও রেখে যান। খেজুর কাটার সময় হলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি জানেন যে, আমার পিতাকে উহুদের যুদ্ধে শহীদ করা হয়েছে আর তিনি অনেক ঋণ রেখে গেছেন।আমার মনে চায় যে, পাওনাদাররা আপনাকে দেখে নিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যাও। (খেজুর কেটে) এক এক রকম খেজুর এক এক স্থানে জমা কর। আমি তা-ই করলাম। এরপর তাকে অনুরোধ করে নিয়ে এলাম। লোকেরা যখন তাকে দেখল, তখন তারা আমার কাছে জোর তাগাদা করতে লাগল। তিনি তাদের এরূপ করতে দেখে খেজুরের বড় স্তুপটির চারদিকে তিনবার ঘুরলেন, এরপর তার উপর বসে পড়লেন। তারপর বললেন, তোমার পাওয়ানাদারদের ডাক। তিনি মেপে তাদের পাওনা আদায় করতে লাগলেন এবং শেষ পর্যন্ত আল্লাহ আমার পিতার সমস্ত ঋণ আদায় করে দিলেন। আর আল্লাহর কসম, আমি এতেই সন্তষ্ট যে, আমার পিতার ঋণ আল্লাহ পরিশোধ করে দেন, এবং আমি আমার বোনদের কাছে একটি খেজুরও নিয়ে না ফিরি। কিন্তু আল্লাহর কসম, সমস্ত স্তুপই যেমন ছিল তেমন রয়ে গেল। আমি সেই স্তুপটির দিকে বিশেষভাবে তাকিয়ে ছিলাম, যার উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে ছিলেন। মনে হল যে, তা থেকে একটি খেজুরও কমেনি। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, أغروا بي এর অর্থ হল هيجوا بي অর্থাৎ আমার কাছে জোর তাগাদা করতে লাগল। মহান আল্লাহর বাণী : আমি তাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ জাগরুক রেখেছি।(৫:১৪)

জিহাদ অধ্যায় (২৫৯১-২৯৬৩)

হাদীস নং ২৫৯১

হাসান ইবনে সাব্বাহ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা .থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! কোন কাজ সর্বোত্তম ? তিনি বললেন, সময়মত সালাত আদায় করা। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বলেন, এরপর পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা। আমি বললাম, তারপর কোনটি ? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে আমি চুপ রইলাম। আমি যদি (কথা) বাড়াতাম, তবে তিনি আরও অধিক বলতেন।

হাদীস নং ২৫৯২

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (মক্কা) বিজয়ের পর আর হিজরত নেই। বরং রয়েছে কেবল জিহাদ ও নিয়্যাত। যদি তোমাদের জিহাদের ডাক দেওয়া হয় , তাহলে বেরিয়ে পড়।

হাদীস নং ২৫৯৩

মুসাদ্দাদ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি, তবে কি আমরা জিহাদ করব না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হচ্ছে মকবুল হজ্জ।

হাদীস নং ২৫৯৪

ইসহাক ইবনে মানসুর রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন, যা জিহাদের সমতুল্য হয়। তিনি বলেন, আমি তা পাচ্ছি না। (এরপর বললেন) তুমি কি এতে সক্ষম হবে যে, মুজাহিদ যখন বেরিয়ে যায়, তখন থেকে তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে এবং দাঁড়িয়ে ইবাদত করবে এবং আলস্য করবে না, আর সিয়াম পালন করতে থাকবে এবং সিয়াম ভাঙ্গবে না। লোকটি বলল, তা করা সাধ্য? আবু হুরায়রা রা. বলেন, মুজাহিদের ঘোড়া রশিতে বাঁধা অবস্থায় ঘোরাফেরা করে, এতেও তার জন্য নেকী লেখা হয়।

হাদীস নং ২৫৯৫

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! মানুষের মধ্যে কে উত্তম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেই মুমিন যে নিজ জাল ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। সাহাবীগণ বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন, সেই মুমিন যে পাহাড়ের কোন গুহায় অবস্থান করে আল্লাহকে ভয় করে এবং নিজ অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে নিরাপদ রাখে?

হাদীস নং ২৫৯৬

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর পথের মুজাহিদ, অবশ্য আল্লাহই অধিক জ্ঞাত কে তাঁর পথে জিহাদ করছে, সর্বদা সিয়াম পালনকারী ও সালাত আদায়কারীর ন্যায়। আল্লাহ তা’আলা তার পথের মুজাহিদের জন্য এই দায়িত্ব নিয়েছেন, যদি তাকে মৃত্যু দেন তবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা পুরস্কার বা গনীমতসহ নিরাপদে ফিরিয়ে আনবেন।

হাদীস নং ২৫৯৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রা.-এর কাছে যাতায়াত করতেন এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খেতে দিতেন। উম্মে হারাম রা. ছিলেন, উবাদা ইবনে সামিত রা.-এর স্ত্রী। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে তাশরীফ নিয়ে গেলে তিনি তাকে আহার করান এবং তাঁর মাথার উকুন বাচতে থাকেন। এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জাগলেন। উম্মে হারাম রা. বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! হাসির কারণ কি? তিনি বললেন, আমার উম্মাতের কিছু লোককে আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হয়। তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমনভাবে আরোহী যেমন বাদশাহ তখতের উপর, অথবা বলেছেন, বাদশাহর মত তখতে উপবিষ্ট। এ শব্দ বর্ণনায় ইসহাক রহ. সন্দেহ করেছেন। উম্মে হারাম রা. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভূক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য দু’আ করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার মাথা রাখেন (ঘুমিয়ে পড়েন) তারপর হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনার হাসার কারণ কি? তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্য থেকে আল্লাহর পথে জিহাদরত কিছু লোককে আমার সামনে পেশ করা হয়। পরবর্তী অংশ প্রথম উক্তির মত। উম্মে হারাম রা. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভূক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তো প্রথম দলের মধ্যেই আছ। তারপর মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রা.-এর সময় উম্মে হারাম রা. জিহাদের উদ্দেশ্যে সামুদ্রিক সফরে যান এবং সমুদ্র থেকে যখন অবতরণ করেন তখন তিনি তাঁর সওয়ারী থেকে ছিটকে পড়েন। আর এতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

হাদীস নং ২৫৯৮

ইয়াহইয়া ইবনে সালিহ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যে ঈমান আনল, সালাত আদায় করল ও রমযানের সিয়াম পালন করল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমারা কি লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে মুজাহিরদের জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে একশটি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত রেখেছেন। দুটি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দূরত্বের ন্যায়। তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হল সবচাইতে উত্তম ও সর্বোচচ জান্নাত । আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ-ও বলেছেন, এর উপরে রয়েছে আরশে রহমান। আর সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে। মুহাম্মদ ইবনে ফুলাইহ রহ. তাঁর পিতার সূত্রে বলেন, এর উপর রয়েছে আরশে রহমান।

হাদীস নং ২৫৯৯

মূসা রহ……….সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি আজ রাতে (স্বপ্নে) দেখতে পেলাম যে, দু’ব্যক্তি আমার নিকট এল এবং আমাকে নিয়ে একটি গাছে উঠল। তারপর আমাকে এমন সুন্দর উৎকৃষ্ট একটি ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিল ; এর আগে আমি কখনো এর চাইতে সুন্দর ঘর দেখিনি। সে দু’ব্যক্তি আমাকে বলল, এই ঘরটি হচ্ছে শহীদদের ঘর।

হাদীস নং ২৬০০

মুআল্লা ইবনে আসাদ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তাঁতে যা কিছু আছে, তা থেকে উত্তম।

হাদীস নং ২৬০১

ইবরাহমীম ইবনে মুনযির রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান, তা (পৃথিবী) থেকে উত্তম যার উপর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা সূর্যের উদয়াস্তের স্থান (পৃথিবী)-এর চাইতে উত্তম।

হাদীস নং ২৬০২

কাবীসা রহ………..সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তাঁতে যা কিছু আছে, তা থেকে উত্তম।

হাদীস নং ২৬০৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কোন বান্দা এমতাবস্থায় মারা যায় যে, আল্লাহর কাছে তার সাওয়াব রয়েছে তাকে দুনিয়াতে এর সব কিছু দিলেও দুনিয়ায় ফিরে আসতে আগ্রহী হবে না। একমাত্র শহীদ ব্যতীত। সে শাহাদাতের ফযীলত দেখার কারণে আবার দুনিয়ায় ফিরে এসে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার প্রতি আগ্রহী হবে। রাবী হুমাইদ রহ. বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক রা.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে এ কথাও বর্ণনা করতে শুনেছি যে, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তাঁতে যা কিছু আছে, তা থেকে উত্তম। তোমাদের কারোর ধনুকের কিংবা চাবুক রাখার মত জান্নাতের জায়গাটুকু দুনিয়া ও এর সব কিছু থেকে উত্তম। জান্নাতী কোন মহিলা যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উকি দেয় তাহলে আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী সব কিছু আলোকিত এবং সুরভিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার সব কিছু থেকে উত্তম।

হাদীস নং ২৬০৪

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি যে, সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, যদি মুমিনদের এমন একটি দল না থাকত, যারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করে না এবং যাদের সকলকে সওয়ারী দিতে পারব না বলে আশংকা করতাম, তাহলে যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছে, আমি সেই ক্ষুদ্র দলটির সঙ্গী হওয়া থেকে বিরত থাকতাম না। সেই সত্তার কসম ! যার হাতে আমার প্রাণ, আমি পছন্দ করি আমাকে যেন আল্লাহর রাস্তায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, এরপর শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়। তারপর জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়।

হাদীস নং ২৬০৫

ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব আস সাফফার রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মুতার যুদ্ধে সৈন্য প্রেরণের পর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে গিয়ে বললেন, যায়েদ রা. পতাকা ধারণ করল এবং শহীদ হল, তারপর জাফর রা. পতাকা ধারণ করল, সেও শহীদ হল। তারপর আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. পতাকা ধারণ করল এবং সেও শহীদ হল। এরপর খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রা. বিনা নির্দেশেই পতাকা ধারণ করল এবং সে বিজয় লাভ করল। তিনি আরো বলেন, তারা আমাদের মাঝে জীবিত থাকুক তা আমাদের নিকট আনন্দদায়ক নয়। আইয়্যূব রহ. বলেন, অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তারা আমাদের মাঝে জীবিত থাকুক তা তাদের নিকট আদৌ আনন্দদায়ক নয়, এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল।

হাদীস নং ২৬০৬

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকটবর্তী একস্থানে শুয়েছিলেন, এরপর জেগে উঠে মুচকি হাসতে লাগলেন। আমি বললাম, আপনি হাসলেন কেন ? তিনি বললেন, আমার উম্মাতের এমন কিছু লোককে আমার সামনে উপস্থিত করা হল যারা এই নীল সমুদ্রে আরোহণ করছে, যেমন বাদশাহ সিংহাসনে আরোহণ করে। উম্মে হারাম রা. বললেন, আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করেন। তিনি তার জন্য দু’আ করলেন। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার নিদ্রা গেলেন এব আগের মত আচরণ করলেন। উম্মে হারাম রা. আগের মতই বললেন, এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগের মতই জবাব দিলেন। উম্মে হারাম রা. বললেন, আল্লাহর কাছে দু’আ করুন তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভূক্ত থাকবে। মুআবিয়া রা.-এর সাথে মুসলমানরা যখন প্রথম সমুদ্র পথে অভিযানে বের হয়, তখন তিনি তাঁর স্বামী উবাদা ইবনে সামিতের সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তাদের কাফেলা সিরিয়ায় থামে। আরোহণের জন্য উম্মে হারামকে একটি সওয়ারী দেয়া হল, তিনি সওয়ারীর উপর থেকে পড়ে মারা গেলেন।

হাদীস নং ২৬০৭

হাফস ইবনে উমর রা………. আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানূ সুলাইমের সত্তর জন্য লোকের একটি দলকে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বানূ আমিরের কাছে পাঠান। দলটি সেখানে পৌঁছলে আমার মামা তাদেরকে বললেন, আমি সর্বাগ্রে বনূ আমিরের কাছে যাব। যদি তারা আমাকে নিরাপত্তা দেয় আর আমি তাদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী পৌঁছাতে পারি, (তবে তো ভাল) অন্যথায় তোমরা আমার কাছেই থাকবে।তারপর তিনি এগিয়ে গেলেন। কাফিররা তাকে নিরাপত্তা দিল, কিন্তু তিনি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী শুনাতে লাগলেন, সেই সময় আমির গোত্রীয়রা এক ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করল। আর সেই ব্যক্তি তার প্রতি তীর মারল এবং তীর শরীর ভেদ করে বের হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ আকবার, কাবার রবের কসম! আমি সফলকাম হয়েছি। তারপর কাফিররা তার অন্যান্য সঙ্গীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং সকলকে শহীদ করল, কিন্তু একজন খোঁড়া ব্যক্তি বেঁচে গেলেন, তিনি পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন। হাম্মাম রহ. অতিরিক্ত উল্লেখ করেন, আমার মনে হয় তার সাথে অন্য একজন ছিলেন। তারপর জিবরাঈল আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খবর দিলেন যে, প্রেরিত দলটি তাদের রবের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরও সন্তুষ্ট করেছেন। পরে এ আয়াতটি মানসুখ হয়ে যায়। তারপর আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি অবাধ্যতার দরুন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রমাগত চল্লিশ দিন রিল, যাকওয়ান, বানূ লিহয়ান ও বানূ উসাইয়্যার বিরুদ্ধে দু’আ করেন।

হাদীস নং ২৬০৮

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….জুনদুব ইবনে সুফিয়ান রা. থেকে বর্ণিত, কোন এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হলে তিনি পড়েছিলেন : তুমি তো একটি আঙ্গুল মাত্র ; তুমি তো রক্তাক্ত হয়েছ আল্লাহরই পথে।

হাদীস নং ২৬০৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যক্তি আল্লাহর পথে আহত হলে কিয়ামতের দিন সে তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়ে আসবে এবং তা থেকে মিশকের ছড়াবে এবং আল্লাহই ভাল জানেন কে তার পথে আহত হবে।

হাদীস নং ২৬১০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, আবু সুফিয়ান ইবনে হারব রা. তাকে জানিয়েছেন যে, হিরাকল তাকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁর সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধের ফলাফল কিরূপ ছিল? তুমি চলেছ যে, যুদ্ধ বড় পানির পাত্র এবং ধন সম্পদের মত। রাসূলগণ এভাবেই পরীক্ষিত হয়ে থাকেন। তারপর ভাল পরিণতি তাদেরই হয়।

হাদীস নং ২৬১১

মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ খুযায়ী রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার চাচা আনাস ইবনে নাযার রা. বদরের যুদ্ধের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! মুশরিকদের সঙ্গে আপনি প্রথম যে যুদ্ধ করেছেন, আমি সে সময় অনুপস্থিত ছিলাম। আল্লাহ যদি আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধে শরীক মুসলিমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে আনাস ইবনে নাযার রা. বলেছিলেন, ইয়া আল্লাহ ! এরা অর্থাৎ তাঁর সাহাবীরা যা করেছেন, তার সম্বন্ধে আপনার কাছে ওযর পেশ করছি এবং এরা অর্থাৎ মুশরিকরা যা করেছে তা থেকে আমি নিজেকে সম্পর্কহীন বলে ঘোষণা করছি। তারপর তিনি এগিয়ে গেলেন, এবং সাদ ইবনে মুআযের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হল। তিনি বললেন, হে সাদ ইবনে মুআয, নাযারের রবের কসম, উহুদের দিক থেকে আমি জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি। সাদ রা. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি যা করেছেন, আমি তা করতে পারিনি। আনাস রা. বলেন, আমরা তাকে এমতাবস্থায় পেয়েছি যে, তার দেহে আশিটিরও অধিক তলোয়ার, বর্শা ও তীরের যখম রয়েছে। আমরা তাকে নিহত অবস্থায় পেলাম। মুশরিকরা তার দেহ বিকৃত করে ফেলেছিল। তার বোন ছাড়া কেউ তাকে চিনতে পারেনি এবং বোন তার আঙ্গুলের ডগা দেখে চিনতে পেরেছিল। আনাস রা. বলেন, আমাদের ধারণা, কুরআনের এই আয়াতটি: من المؤمنين رجال صدقوا ما عاهدوا الله عليه الآية তাঁর এবং তাদের মত মুমিনদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আনাস রা. আরো বলেন, রুবিয়্যা নামক তার এক বোন কোন এক মহিলার সামনের দাঁত ভেঙ্গে দিলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কিসাসের নির্দেশ দেন। আনাস রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে হকসহ পাঠিয়েছেন, তার দাঁত ভাঙ্গা হবে না। পরবর্তীতে তার বাদীপক্ষ কিসাসের পরিবর্তে ক্ষতিপূরণ নিতে রাযী হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছেন, যারা কসম করলে আল্লাহ তা পূরণ করে দেন।

হাদীস নং ২৬১২

আবুল ইয়ামান ও ইসমাঈল রহ………যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কুরআনের আয়াতসমূহ একত্রিত করে একটি মুসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম, তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমি পেলাম না। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পড়তে শুনেছি। একমাত্র খুযাইমা আনসারী রা.-এর কাছে পেলাম। যার সাক্ষ্যকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ব্যক্তির সাক্ষ্যের সমান সাব্যস্ত করেছিলেন। সে আয়াতটি : من المؤمنين رجال صدقوا ما عاهدوا الله عليه الآية (৩৩: ২৩)।

হাদীস নং ২৬১৩

মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম রহ………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লৌহবর্মে আবৃত এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে শরীক হব, না ইসলাম গ্রহণ করব? তিনি বললেন, ইসলাম গ্রহণ কর, তারপর যুদ্ধে যাও। তারপর সে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে যুদ্ধে গেল এবং শাহাদাত বরণ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে অল্প আমল করে বেশী পুরস্কার পেল।

হাদীস নং ২৬১৪

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, উম্মে রুবায়্যি বিনতে বারা, যিনি হারিসা ইবনে সুরাকার মা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলেন, ইয়া নবীয়াল্লাহ ! আপনি হারিসা রা. সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবেন কি? হারিসা রা. বদরের যুদ্ধে অজ্ঞাত তীরের আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন। সে যদি জান্নাতবাসী হয়ে থাকে তবে আমি সবর করব, তা না হলে আম তার জন্য অবিরত কাঁদতে থাকব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে হারিসার মা! জান্নাতে অসংখ্য বাগান আছে, আর তোমার ছেলে সর্বোচচ জান্নাতুল ফেরদাউস লাভ করেছে।

হাদীস নং ২৬১৫

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, এক ব্যক্তি গনীমতের জন্য, এক ব্যক্তি প্রসিদ্ধির জন্য এবং এক ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য জিহাদে শরীক হল। তাদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করল, তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা বুলন্দ থাকার জন্য যুদ্ধ করল, সে-ই আল্লাহর পথে জিহাদ করল।

হাদীস নং ২৬১৬

ইসহাক রহ………আবদুর রাহমান ইবনে জাবর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর পথে যে বান্দার দু’পা ধূলিধূসরিত হয়, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে এরূপ হয় না।

হাদীস নং ২৬১৭

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………ইকরিমা রহ. বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস রা. তাকে ও আলী ইবনে আবদুল্লাহকে বলেছিলেন যে, তোমরা আবু সাঈদ রা.-এর কাছে যাও এবং তার কিছু বর্ণনা শোনা । তারপর আমরা তার কাছে গেলাম। সে সময় তিনি ও তার ভাই বাগানে পানি সেচের কাজে ছিলেন। আমাদের দেখে তিনি আসলেন এবং দু’হাটু বুকের সাথে লাগিয়ে বসে বললেন, মসজিদে নববীর জন্য আমরা এক একটি করে ইট বহন করছিলাম। আর আম্মার রা. দু’দুটি করে বহন করছিল। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পাশ দিয়ে গেলেন এবং তার মাথা থেকে ধুলাবালি মুছে ফেললেন এবং বললেন, আম্মারের জন্য বড় দুঃখ হয়, বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করবে। সে তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করবে এবং তারা আম্মারকে জান্নামের পথে ডাকবে।

হাদীস নং ২৬১৮

মুহাম্মদ ইবনে সালাম রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, খন্দকের যুদ্ধ থেকে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে অস্ত্র রাখলেন এবং গোসল করলেন ,তখন জিবরীল আ.তাঁর কাছে এলেন, আর তাঁর মাথায় পট্রির ন্যায় ধূলি জমেছিল। তিনি বললেন, আপনি অস্ত্র রেখে দিলেন অথচ আল্লাহর কসম, আমি এখনো অস্ত্র রাখিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোথায় যেতে হবে? তনি বানূ কুরায়যার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, এদিকে। আয়িশা রা. বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দিকে বেরিয়ে গেলেন।

হাদীস নং ২৬১৯

ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যারা বীরে মাউনায় শরীক সাহাবীদেরকে শহীদ করেছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই রিল ও যাকওয়ানের বিরুদ্ধে ত্রিশ দিন পর্যন্ত ফজরে দু’আ করেছিলেন এবং উসাইয়্যা গোত্রের বিরুদ্ধেও যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করেছিল। আনাস রা. বলেন , বীরে মাউনার কাছে শহীদ সাহাবীদের সম্পর্কে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা আমরা পাঠ করেছি। পরে তা, মানসুখ হয়ে যায়। আয়াতটি হল: “তোমরা আমাদের কওমের কাছে এ সংবাদ পৌঁছিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের রবের সাক্ষাত লাভ করেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং আমরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট”।

হাদীস নং ২৬২০

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন কিছু সংখ্যক সাহাবী সকাল বেলায় শরাব পান করেন, এরপর যুদ্ধে তারা শাহাদাত বরণ করেন। সুফিয়ান রহ.-কে প্রশ্ন করা হল: সেই দিনের শেষ বেলায়? তিনি বললেন, এ কথাটি তাঁতে নেই।

হাদীস নং ২৬২১

সাদাকা ইবনে ফাযল রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধ শেষে আমার পিতাকে (তার লাশ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অংগ-প্রত্যঙ্গ কাটা অবস্থায় আনা হল এবং তাঁর সামনে রাখা হল। আমি তাঁর চেহারা খুলতে চাইলাম, আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে নিষেধ করল। এমন সময় তিনি কোন বিলাপকারিণীর বিলাপ ধ্বনি শুনতে পেলেন। বলা হল: সে আমার কন্যা বা ভগ্নি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কাঁদছে কেন? অথবা বলেছিলেন, সে যেন না কাঁদে। ফেরেশতারা তাকে ডানা দ্বারা ছায়া দান করছেন। আমি (ইমাম বুখারী রহ. বলেন) সাদকা রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এও কি বর্ণিত আছে যে, তাকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত ? তিনি বললেন, (জাবির রা.) কখনো তাও বলেছেন।

হাদীস নং ২৬২২

মুহাম্মদ ইবনে বাশ্শার রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : জান্নাতে প্রবেশের পর একমাত্র শহীদ ছাড়া আর কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্খা পোষণ করবে না, যদিও দুনিয়ার সকল জিনিস তার কাছে বিদ্যমান থাকবে। সে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্খা করবে যেন দশবার শহীদ হয়। কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখেছে।

হাদীস নং ২৬২৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..উমর ইবনে উবায়দুল্লাহ রা. এর আযাদকৃত গোলাম তার কাতিব সালিম আবুন নাযর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. তাকে লিখেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমারা জেনে রাখ, তরবারীর ছায়ায় নীচেই জান্নাত। উয়াইসী রহ. ইবনে আবুয যিনাদ রহ.-এর মাধ্যমে মূসা ইবনে উকবা রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় মুআবিয়া ইবনে আমর রহ. আবু ইসহাক রহ.-এর মাধ্যমে মূসা ইবনে উকবা রহ. থেকে বর্ণিত, হাদীসের অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ২৬২৪

আহমদ ইবনে আবদুল মালেক রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাপেক্ষা সুশ্রী, সাহসী ও দানশীল ছিলেন। মদীনাবাসীগণ একবার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় চড়ে সবার আগে আগে অগ্রসর হয়ে বললেন, আমরা একটি সমুদ্রের ন্যায় দ্রুত-সম্পন্ন পেয়েছি।

হাদীস নং ২৬২৫

আবুল ইয়ামান রহ……….যুবাইর ইবনে মুতঈম রা. থেকে বর্ণিত, হুনাইন থেকে ফেরার পথে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে চলছিলেন। তাঁর সঙ্গে আরো অনেক সাহাবী ছিলেন। এমন সময় কিছু গ্রাম্য লোক এসে তাকে জড়িয়ে ধরল এবং তাদের কিছু দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করল। এমনকি তারা তাকে একটি গাছের কাছে নিয়ে গেল এবং তাঁর চাদর আটকে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, আমার চাদরটি ফিরিয়ে দাও। আমার কাছে যদি এই সব কাঁটাযুক্ত গাছের সমপরিমাণ বকরী থাকত, তাহলে এর সবই তোমাদের ভাগ করে দিতেন। আর তোমরা আমাকে কৃপণ, মিথ্যাবাদী ও কাপুরুষ দেখতে পেতে না।

হাদীস নং ২৬২৬

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..আমর ইবনে মায়মূন আউদী রহ. থেকে বর্ণিত, শিক্ষক যেমন ছাত্রদের লেখা শিক্ষা দেন, সাদ রা. তেমনি তাঁর সন্তানদের এ বাক্যগুলো শিক্ষা দিতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পর এগুলো থেকে পানাহ চাইতেন, হে আল্লাহ! আমি ভীরুতা, অতি বার্ধক্য, দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আযাব থেকে আপনার নিকট পানাহ চাই। রাবী বলেন, আমি মুসআব রা.-এর নিকট হাদীসটি বর্ণনা করলে তিনি এর সত্যতা স্বীকার করেন।

হাদীস নং ২৬২৭

মুসাদ্দাদ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’আ করতেন, হে আল্লাহ! আমি অক্ষমতা, ভীরুতা ও বার্ধক্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং কবরের আযাব থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি।

হাদীস নং ২৬২৮

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ সাদ, মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ এবং আবদুর রাহমান ইবনে আওফা রা.-এর সঙ্গ লাভ করেছি। আমি তাদের কাউকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনিনি। তবে তালহা রা.-কে উহুদ যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে শুনেছি।

হাদীস নং ২৬২৯

আমর ইবনে আলী রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলেছিলেন, এই বিজয়ের পর আর হিজরতের প্রয়োজন নেই। এখন কেবল জিহাদ ও নিয়্যাত। যখনই তোমাদের বের হওয়ার আহবান জানানো হবে, তখনই তোমরা বেরিয়ে পড়বে।

হাদীস নং ২৬৩০

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দু’ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকবেন। তারা একে অপরকে হত্যা করে উভয়েই জান্নাতবাসী হবে। একজন তো এ কারণে জান্নাতবাসী হবে যে, সে আল্লাহর পথে জিহাদ করে শহীদ হয়েছে। তারপর আল্লাহ তা’আলা হত্যাকারীর তাওবা কবুল করেছেন। ফলে সেও আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছে।

হাদীস নং ২৬৩১

হুমাইদী রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সেখানে অবস্থানকালেই আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাকেও (গনীমতের) অংশ দিন। তখন সাঈদ ইবনে আসের কোন এক পুত্র বলে উঠল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তাকে অংশ দিবেন না।আবু হুরায়রা রা. বললেন, সে তো ইবনে কাউকালের হত্যাকারী। তা শুনে সাঈদ ইবনে আসের পুত্র বললেন, দান পাহাড়ের পাদদেশ থেকে আমাদের কাছে আগত বিড়াল মাশি জন্তুটি, (সেই ব্যক্তির) কথায় আশ্চর্যবোধ করছি, সে আমাকে এমন একজন মুসলিমকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছে যাকে আল্লাহ তা’আলা আমার হাতে সম্মানিত করেছেন এবং যার দ্বারা আমাকে লাঞ্চিত করেননি। আব্বাস রা. বলেন ,পরে তাকে অংশ দিয়েছেন কি দেননি, তা আমাদের জানা নেই। সুফাইয়ান রহ. বলেন, আমাকে সাঈদী রহ. তার দাদার মাধ্যমে আবু হুরায়রা রা. থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) রহ. বলেন, সাঈদী হলেন, আমর ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ ইবনে আমর ইবনে সাঈদ ইবনে আস।

হাদীস নং ২৬৩২

আদম রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনকালে আবু তালহা রা. জিহাদের কারণে সিয়াম পালন করতেন না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ব্যতীত তাকে আর কখনো সিয়াম ছেড়ে দিতে দেখিনি।

হাদীস নং ২৬৩৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পাঁচ প্রকার মৃত ব্যক্তি শহীদ : মহামারীতে মৃত ব্যক্তি, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি, ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং যে আল্লাহর পথে শহীদ হল, সে ব্যক্তি।

হাদীস নং ২৬৩৪

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য শাহাদত।

হাদীস নং ২৬৩৫

আবুল ওয়ালীদ রহ……..বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, لايستوى القاعدون من المؤمنين আয়াতটি নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়েদ রা.-কে ডেকে আনলেন। তিনি কোন জন্তুর একটি চওড়া হাঁড় নিয়ে আসনে এবং তাতে উক্ত আয়াতটি লিখে রাখেন। ইবনে উম্মে মাকতুম জিহাদে অংশ গ্রহণের ব্যাপারে তাঁর অক্ষমতা প্রকাশ করলে لايستوى القاعدون من المؤمنين غير أولى الضرر আয়াতটি নাযিল হয়।

হাদীস নং ২৬৩৬

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..সাহল ইবনে সাদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি মারওয়ান ইবনে হাকামকে মসজিদে বসা অবস্থায় দেখলাম। তারপর আমি তাঁর দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তাঁর পাশে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বর্ণনা করেন যে, যায়েদ ইবনে সাবিত রা. তাকে জানিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উপর অবতীর্ণ আয়াত, لا يستوى القاعدون من المؤمنين والمجاهدون في سبيل الله যখন তাকে দিয়ে লিখিয়েছিলেন, ঠিক সে সময় অন্ধ ইবনে উম্মে মাকতুম রা. সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমি যদি জিহাদে যেতে সক্ষম হতাম, তবে অবশ্যই অংশগ্রহণ করতাম। সে সময় আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলের উপর ওহী নাযিল করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উরু আমার উরুর উপর রাখা ছিল এবং তা আমার কাছে এতই ভারী মনে হচ্ছিল যে, আমি আমার উরু ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা করছিলাম। এরপর ওহী অবতীর্ণ হওয়ার অবস্থা কেটে গেল, এ সময় الضرر غير أولى আয়াতটি নাযিল হয়।

হাদীস নং ২৬৩৭

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………সালিম আবু নাযর রহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. লিখে পাঠালেন, আর আমি এতে পড়লাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা তাদের মুখোমুখি হবে তখন ধৈর্যধারণ করবে।

হাদীস নং ২৬৩৮

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের দিকে বের হলেন, হীম শীতল সকালে আনসার ও মুহাজিররা পরীখা খনন করছেন, আর তাদের এ কাজ করার জন্য তাদের কোন গোলাম ছিল না। যখন তিনি তাদের দেখতে পেলেন যে, তারা কষ্ট এবং ক্ষুধায় আক্রান্ত, তখন বললেন, হে আল্লাহ ! সুখের জীবন আখিরাতের জীবন। তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও। প্রত্যুত্তরে তারা বলে উঠেন: আমরা সেই লোক যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে জিহাদের বায়আত গ্রহণ করেছি, যতদিন আমরা বেঁচে আছি।

হাদীস নং ২৬৩৯

আবু মামার রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসার ও মুহাজিরগণ মদীনার পাশে পরীখা খনন করেছিলেন এবং তারা পিঠে করে মাটি বহন করছিলেন। আর তারা এই কবিতা আবৃত্তি করতেছিলেন: আমরা ইসলামের উপর মুহাম্মদের হাতে বায়আত নিয়েছি, ততদিন পর্যন্ত যতদিন আমরা বেঁচে থাকি। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উত্তরে বলেছিলেন: হে আল্লাহ ! আখিরাতের কল্যাণ ছাড়া কোন কল্যাণ নেই। তাই আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি বরকত নাযিল করুন।

হাদীস নং ২৬৪০

আবু ওয়ালীদ রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটি উঠাচ্ছিলেন এবং বলছিলেন, যদি আপনি না হতেন তাহলে আমরা হিদায়েত পেতাম না।

হাদীস নং ২৬৪১

হাফস ইবনে উমর রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাবের দিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি যে, তিনি মাটি বহন করছেন। আর তাঁর পেটের শুভ্রতা মাটি ঢেকে ফেলেছে। সে সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেন, (ইয়া আল্লাহ) আপনি না হলে আমরা হিদায়েত পেতাম না; সাদকা দিতাম না এবং সালাত আদায় করতাম না। তাই আমাদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করুন। যখন আমরা শত্রু সম্মুখীন হই তখন আমাদের পা সুদৃঢ় করুন। ওরা (মুশরিকরা) আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। তারা যখনই কোন ফিতনা সৃষ্টি করতে চায় তখনই আমরা তা থেকে বিরত থাকি।

হাদীস নং ২৬৪২

আহমদ ইবনে ইউনুস ও সুলাইমান ইবনে হারব রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক যুদ্ধে ছিলেন, তখন তিনি বললেন, কিছু লোক মদীনায় আমাদের পেছনে রয়েছে। আমরা কোন ঘাটি বা কোন উপত্যকায় চলিনি, কিন্তু তারাও এতে আমাদের সঙ্গে আছে। ওযরই তাদের বাঁধা দিয়েছে। মূসা রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, প্রথম সনদটি আমার নিকট অধিক সহীহ।

হাদীস নং ২৬৪৩

ইসহাক ইবনে নাসর রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও সিয়াম পালন করে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে (তাকে) দোযখের আগুন থেকে সত্তর বছরের দূরে সরিয়ে নেন।

হাদীস নং ২৬৪৪

সাদ ইবনে হাফস রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় দুটি করে কোন জিনিস ব্যয় করবে, জান্নাতের প্রত্যেক দরজার প্রহরী তাকে আহবান করবে। (তারা বলবে) হে অমুক! এদিকে আস। আবু বকর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে তো তার জন্য কোন ক্ষতি নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আশা করি যে, তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে।

হাদীস নং ২৬৪৫

মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ……..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমি আমার পর তোমাদের জন্য ভয় করি এবং এ ব্যাপারে যে, তোমাদের জন্য দুনিয়ার কল্যাণের দরজা খুলে দেয়া হবে। তারপর তিনি দুনিয়ার নিয়ামতের উল্লেখ করেন এতে তিনি প্রথমে একটির কথঅ বলেন, পরে দ্বিতীয়টির বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! কল্যাণও কি অকল্যাণ বয়ে আনবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব রইলেন, আমরা বললাম তাঁর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। সম¯ত লোকও এমনভাবে নীরবতা অবলম্বন করল, যেন তাদের মাথঅর উপর পাখী বসে আছে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখের ঘাম মুছে বললেন, এখনকার সেই প্রশ্নকারী কোথায়? তাকে কল্যাণকর ? তিনি তিনবার এ কথাটি বললেন। কল্যাণ কল্যাণই বনে আনে। কিন্তু যে পশু সেই ঘাস এ পরিমাণ খায় যাতে তার ক্ষুধা মিটে তারপর রোদ পোহায় এবং মলমূত্র ত্যাগ করে, এরপর আবার ঘাস খায়। নিশ্চয়ই এ মাল সবুজ শ্যামল সুস্বাদু। সেই মুসলিমের সম্পদই উত্তম যে ন্যায়ত তা উপার্জন করেছে এবং আল্লাহর পথে, ইয়াতীম ও মিসকীন ও মুসাফির জন্য খরচ করেছে। আর যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে অর্জন করে তার দৃষ্টান্ত এমন ভক্ষণ কারীর ন্যায় যার ক্ষুধা মিটে না এবং তা কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।

হাদীস নং ২৬৪৬

আবু মামার রহ………যায়েদ ইবনে খালিদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ কারীর আসবাবপত্র সরবরাহ করে সে যেন জিহাদ করল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন জিহাদ কারীর পরিবার-পরিজনকে উত্তমরূপে দেখাশোনা করে, সেও যেন জিহাদ করল।

হাদীস নং ২৬৪৭

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় উম্মে সুলাইম ব্যতীত কারো ঘরে যাতায়াত করতেন না কিন্ত তার সহধর্মিণীদের কথা ভিন্ন । এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, উম্মে সুলাইম ভাই আমার সাথে জিহাদে শরীক হয়ে সে শহীদ হয়েছে, তাই আমি তার প্রতি সহানুভূতি জানাই।

হাদীস নং ২৬৪৮

আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব রহ………মূসা ইবনে আনাস রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি ইয়ামামার যুদ্ধ সম্পর্কে বলেন, তিনি সাবিত ইবনে কায়সের নিকট গিয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি তার উভয় উরু থেকে কাপড় সরিয়ে সুগন্ধি ব্যবহার করছেন। আনাস রা. জিজ্ঞাসা করলেন, হে চাচা! যুদ্ধে যাওয়া থেকে আপনাকে কিসে বিরত রাখল? তিনি বললেন, ভাতিজা, এখনই যাব। এরপরও তিনি সুগন্ধি মালিশ করতে লাগলেন। তারপর তিনি বসলেন এবং যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে লোকদের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, তোমরা আমাদের সম্মুখ থেকে সরে পড়। যাতে আমরা শত্রুর সাথে মুখোমুখি লড়তে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমরা কখনো এরূপ করিনি। কত খারাপ তা যা তোমারা তোমাদের শত্রুদেরকে অভ্যস্ত করেছ। হাম্মাদ রহ. সাবিত রহ. সূত্রে আনাস রা. থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২৬৪৯

আবু নুআইম রহ……..জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে আমাকে শত্রু শিবিরের খবরাখবর এনে দিবে? যুবাইর রা. বললেন, আমি আনব। তিনি আবার বললেন, আমাকে শত্রু শিবিরের খবরাখবর কে এনে দিবে? যুবাইর রা. আবারও বললেন, আমি আনব। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক নবীরই সাহায্যকারী থাকে আর আমার সাহায্যকারী যুবাইর।

শত্রুদের তথ্য সংগ্রহকারী দলের ফযীলত।

২৬৪৯ আবু নুআইম রহ……..জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে আমাকে শত্রুশিবিরের খবরাখবর এনে দিবে? যুবাইর রা. বললেন, আমি আনব। তিনি আবার বললেন, আমাকে শত্রুশিবিরের খবরাখবর কে এনে দিবে? যুবাইর রা. আবারও বললেন, আমি আনব। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক নবীরই সাহায্যকারী থাকে আর আমার সাহায্যকারী যুবাইর।

হাদীস নং ২৬৫০

সাদকা রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের আহবান জানালেন। সাদাকা রহ. বলেন, আমার মনে হয় এটি খন্দকের যুদ্ধের সময়ের ঘটনা। যুবাইর রা. তার আহবানে সাড়া দিলেন। তিনি আবার লোকদের আহবান করলেন, এবারও কেবল যুবাইর রা. সাড়া দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক নবীরই সাহায্যকারী থাকে আর আমার সাহায্যকারী যুবাইর ইবনে আওয়াম রা.।

হাদীস নং ২৬৫১

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ……….মালিক ইবনে হুয়ায়রিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছ থেকে ফিরে এলাম। তিনি আমাকে ও আমার একজন সঙ্গীকে বললেন, তোমরা আযান দিবে ও ইকামত দিব এবং তোমাদের মধ্যে যে বয়সে বড় সে ইমামতি করবে।

হাদীস নং ২৬৫২

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশ গুচ্ছে কল্যাণ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত।

হাদীস নং ২৬৫৩

হাফস ইবনে উমর রহ………উরওয়া ইবসে জাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঘোড়ার ক লের কেশগুচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ রয়েছে। সুলাইমান রহ. শুবা রহ. সূত্রে উরওয়া ইবনে আবুল জাদ রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীস বর্ণনায় সুলাইমান রহ. এর অনুসরণ করেছেন মুসাদ্দাদ রহ……উরওয়া ইবনে আবুল জাদ থেকে।

হাদীস নং ২৬৫৪

মুসাদ্দাদ রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেরন ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে বরকত রয়েছেন।

হাদীস নং ২৬৫৫

আবু নুআইম রহ………উরওয়া বারিকী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে কল্যাণ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত। অর্থাৎ (আখিরাতের) পুরস্কার এবং গনীমতের মাল।

হাদীস নং ২৬৫৬

আলী ইবনে হাফস রহ…….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ঈমান তাঁর যত প্রতিশ্রুতির বিশ্বাস রাখে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ঘোড়া প্রস্তুত রাখে কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির পাল্লায় ঘোড়ার খাদ্য, পানীয়, গোবর ও পেশাব ওজন করা হবে।

হাদীস নং ২৬৫৭

মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রহ………আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বের হন। কিন্তু তিনি কয়েকজন সঙ্গী সহ পেছনে পড়ে গেলেন। আবু কাতাদা রা. ব্যতীত তার সঙ্গীরা সকলেই ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। আবু কাতাদা রা. দেখার পূর্বে তার সঙ্গীর একটি বন্য গাধা দেখতে পান এবং তাকে চলে যেতে দেন; আবু কাতাদা রা. গাধাটি দেখা মাত্রই জারাদা নামক তার ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করেন এবং ঘোড়ার চাবুকটি তুলে নেন এবং গাধাটি শিকার করে সঙ্গীদের নিয়ে এর গোশত আহার করেন। এতে তারা লজ্জিত হন। তারপর তারা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছলেন তখন তিনি বলেন, গাধাটির কোন অংশ তোমাদের কাছে অবশিষ্ট আছে কি? তারা বললেন, আমাদের সাথে একটি পায়া আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিয়ে আহার করলেন।

হাদীস নং ২৬৫৮

আলী ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রহ………সাহল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের বাগানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি ঘোড়া থাকত, যাকে লুহাইফ বলা হত। আর কেউ কেউ বলেছেন লুখাইফ খা আমর দিয়ে।

হাদীস নং ২৬৫৯

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ……….মুআয রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উফারই নামক একটি গাধার পিঠে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে আরোহী ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে মুআয, তুমি কি জান বান্দার উপর আল্লাহর হক কি? এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কি? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক হল, বান্দা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হল, তাঁর ইবাদতে কাউকে শরীক না করলে আল্লাহ তাকে শাস্তি দিবেন না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি কি লোকদের এ সুসংবাদ দিব না? তিনি বললেন, তুমি তাদের সুসংবাদটি দিও না, তাহলে লোকেরা (এর উপর) নির্ভর করবে।

হাদীস নং ২৬৬০

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, এক সময় মদীনায় ভীতি ছড়িয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মানদূব নামক ঘোড়াটি চেয়ে নিলেন। পরে তিনি বললেন, ভীতির কোন কারণ তো আমি দেখতে পেলাম না। আমি ঘোড়াটিকে সমুদ সেচাতের ন্যায় পেয়েছি।

হাদীস নং ২৬৬১

আবুল ইয়ামান রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনটি জিনিসে অকল্যাণ রয়েছে : ঘোড়া, নারী ও বাড়ীতে।

হাদীস নং ২৬৬২

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………সাহল ইবনে সাদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন কিছুতে অকল্যাণ থাকে, তবে তা নারী, ঘোড়া ও বাড়ীতে।

হাদীস নং ২৬৬৩

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা র……… আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘোড়া তিন শ্রেণীর লোকের জন্য। একজনের জন্য পুরস্কার ;একজনের জন্য আবরণ এবং একজনের জন্য (পাপের) বোঝা। আর যার জন্য পুরস্কার সে হলো , ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের জন্য) ঘোড়া বেঁধে রাখে এবং রশি কোন চারণভূমি বা বাগানে লম্বা করে দেয়, আর ঘোড়াটি যদি রশি ছিড়ে এক বা দুটি টিলা অতিক্রম করে তাহলেও তার গোবর ও পদক্ষেপ সমূহের বিনিময়ে তার জন্য নেকী রয়েছে। এমনকি ঐ ঘোড়া যদি কোন নহরে গিয়ে তা থেকে পানি পান করে, অথচ তার মালিক পানি পান করানোর ইচ্ছা করেনি, তবে এর ফলেও তার জন্য নেকী রয়েছে। আর যে ব্যক্তি অহংকার, লৌকিকতা প্রদর্শন এবং মুসলমানদের সাথে শত্রুতা করার জন্য ঘোড়া বেঁধে রাখে তবে তার জন্য তা বোঝা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে আমার উপর আর কিছু অবতীর্ণ হয়নি, ব্যাপক অর্থবোধক এই একটি আয়াত ছাড়া। (আল্লাহর বাণী) কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে। (৯৯:৭-৮)

হাদীস নং ২৬৬৪

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………আবুল মুতাওয়াককিল নাজী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনম আমি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী রা.-এর নিকট গিয়ে তাকে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে যা শুনেছেন, তা থেকে আমার কাছে কিছু বর্ণনা করুন। তখন জাবির রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কোন এক সফরে তার সঙ্গে ছিলাম। আবু আকীল বললেন, সেটি কি জিহাদের সফর না উমরা পালনের তোমাদের মধ্যে যারা পরিজনদের কাছে তাড়াতাড়ি যেতে আগ্রহী, তারা তাড়াতাড়ি যাও। জাবির রা. বলেন, তারপর আমি একটি উটের পিঠে চড়ে বেরিয়ে পড়লাম, সেটির দেহে কোন দাগ ছিল না এবং বর্ণ ছিল লাল-কালো মিশ্রিত। লোকেরা আমার পেছনে পেছনে চলছিল। পথিমধ্যে আমার উটটি ক্লান্ত হয়ে থেমে পড়লে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে জারিব ! তুমি থাম। তারপর তিনি চাবুক দিয়ে উটটিকে একটি আঘাত করলেন, আর উটটি অকস্মাৎ দ্রুত চলতে লাগল। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি উটটি বিক্রি করবে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তারপর মদীনায় পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের একদল সহ মসজিদে প্রবেশ করলেন। আমি আমার উটটিকে মসজিদের বালাত -এর পার্শ্বে বেঁধে রেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এগিয়ে গেলাম এবং বললাম, এই আপনার উট। তখন তিনি বেরিয়ে এসে উটটি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, হ্যাঁ, উটটিতো আমারই। তারপর তিনি কয়েক উকিয়া স্বর্ণসহ এই বলে পাঠালেন যে, এগুলো জাবিরকে দাও। তারপর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি উটের পুরা মূল্য পেয়েছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, মূল্য এবং উট তোমারই।

হাদীস নং ২৬৬৫

আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রহ………কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক রা.-কে বলতে শুনেছি যে, এক সময় মদীনাতে ভীতি দেখা দিলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু তালহার মানদূব নামক ঘোড়াটি চেয়ে নিলেন এবং এর উপর আরোহণ করলেন আর বললেন, আমি কোন ভীতি দেখিনি। কিন্তু ঘোড়াটি সমুদ্রের স্রোতের ন্যায় পেয়েছি।

হাদীস নং ২৬৬৬

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল থেকে ঘোড়ার জন্য দু’অংশ এবং আরোহীর জন্য এক অংশ করে দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২৬৬৭

কুতাইবা রহ………আবু ইসহাক রহ. থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি বারা ইবনে আযিব রা.কে বলল, আপনার কি হুনায়নের যুদ্ধ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ময়দানে রেখে পলায়ন করেছিলেন। বারা ইবনে আযিব রা. বলেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম পলায়ন করেননি। হাওয়াযিনরা ছিল সুদক্ষ তীরন্দাজ। আমরা সামনা-সামনি যুদ্ধে তাদের পরাস্ত করলে তারা পালিয়ে যেতে লাগল। এমতাবস্থায় মুসলমানরা তাদের পিছু ধাওয়া না করে গনীমতের মাল সংগ্রহে মনোনিবেশ করল। এই সুযোগ শত্রুরা তীর বর্ষণের মাধ্যমে আমাদের আক্রমণ করে বসল। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থান ত্যাগ করেননি। আমি তাকে তাঁর বাহনের লাগাম ধরে টানছেন; আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, আমি নবী তা মিথ্যা নয়, আমি আবদুল মুত্তালিবের বংশধর।

হাদীস নং ২৬৬৮

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ার হয়ে পা-দানীতে কদম মুবারক রাখার পর উটটি দাঁড়িয়ে গেলে যুল-হুলাইফা মসজিদের নিকট তিনি ইহরাম বেঁধে নিতেন।

হাদীস নং ২৬৬৯

আমর ইবনে আওন রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম গদিবিহীন ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে লোকদের সম্মুখে উপস্থিত হলেন, তাঁর কাঁধে ছিল ঝুলন্ত তলোয়ার।

হাদীস নং ২৬৭০

আবদূর আলা ইবনে হাম্মাদ রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, একবার মদীনাবাসীগণ ভীত হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু তালহা রা.-এর ধীরগতি সম্পন্ন ঘোড়ার আরোহণ করেন। তিনি (শহরে প্রদক্ষিণ করে) ফিরে এসে বললেন, আমি তোমার সমুদ্র স্রোতের ন্যায় (দ্রুতগতি সম্পন্ন) পেয়েছি। পরবর্তীকালে ঘোড়াটিকে আর কখনো পেছনে ফেলা যেতো না।

হাদীস নং ২৬৭১

কাবীসা রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়ার জন্য হাফয়া থেকে সানিয়্যাতুল বিদা পর্যন্ত এবং প্রশিক্ষণবিহীন ঘোড়ার জন্য সানিয়্যা থেকে বানূ যুরায়কের মসজিদ পর্যন্ত দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। ইবনে উমর রা. বলেন, আমি উক্ত প্রতিযোগিতার একজন অংশগ্রহণকারী ছিলাম। সুফিয়ান রহ. বলেন, হাফয়া থেকে সানিয়্যাতুল বিদার দূরত্ব পাঁচ কিংবা ছয় মাইল এবং সানিয়্যা থেকে বানূ যুরায়কের মসজিদের দূরত্ব এক মাইল।

হাদীস নং ২৬৭২

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশিক্ষণবিহীন ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন এবং এই দৌড়ের সীমান ছিল সানিয়্যা থেকে বানূ যুরায়কের মসজিদ পর্যন্ত। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, ‘আমাদান’ এর অর্থ সীমা।

হাদীস নং ২৬৭৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছেন। এই প্রতিযোগিতা হাফয়া থেকে শুরু হয়েছে এবং সানিয়্যাতুল বিদায় শেষ হয়েছে। (রাবী আবু ইসহাক রহ. বলেন) আমি মূসা রহ.-কে বললাম, এর দূরত্ব কী পরিমাণ হবে? তিনি বললেন, ছয় বা সাত মাইল। প্রশিক্ষণবিহীন ঘোড়ার প্রতিযোগিতা শুরু হতো সানিয়্যাতুল বিদা থেকে এবং শেষ হতো বানূ যুরাইকের মসজিদে। আমি বললাম, এর মধ্যকার দূরত্ব কত ? তিনি বললেন, এক মাইল বা তার অনুরূপ। ইবনে উমর রা. এতে অংশগ্রহণকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।

হাদীস নং ২৬৭৪

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………আনাস রহ. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একটি উষ্ট্রী ছিল যাকে আযবা বলা হত।

হাদীস নং ২৬৭৫

মালিক ইবনে ইসমাঈল রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আযবা নামক একটি উষ্ট্রী ছিল। কোন উষ্ট্রী তার আগে যেতে পারত না। হুমাইদ রহ. বলেন, কোন উষ্ট্রী তার আগে যেতে সক্ষম হতো না। একদিন এক বেদুঈন একটি জাওয়ান উটে চড়ে আসল এবং আযবা এর আগে চলে গেল। এতে মুসলমাগণের মনে কষ্ট হল। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম- ও তা বুঝতে পারলেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর বিধান এই যে, দুনিয়ার সবকিছুরই উত্থানের পর পতন রয়েছে।

হাদীস নং ২৬৭৬

আমর ইবনে আলী রহ………..আমর ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর (ইন্তিকালের সময়) তাঁর সাদা খচ্চর, কিছু যুদ্ধ সরঞ্জাম ও সামান্য ভূমি ব্যতীত আর কিছুই রেখে যাননি। এগুলোও তিনি সাদকা স্বরূপ ছেড়ে যান।

হাদীস নং ২৬৭৭

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্ন রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত যে, কোন এক ব্যক্তি তাকে বললেন, হে আবু উমারা। আপনারা হুনায়নের যুদ্ধে পলায়ন করেছিলেন? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো পলায়ন করেননি। বরং অতি উৎসাহী অগ্রবর্তী কিছু লোক হাওয়াযিনদের তীর নিক্ষেপের ফলে পালিয়ে ছিলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাদা খচ্চরটির উপর উপবিষ্ট ছিলেন এবং আবু সুফিয়ান ইবনে হারিস রা. এর লাগাম ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, আমি যে নবী তা মিথ্যা নয়, আমি আবদুল মুত্তালিবের বংশধর।

হাদীস নং ২৬৭৮

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ………উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে জিহাদের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, তোমাদের জিহাদ হল হজ্জ।

হাদীস নং ২৬৭৯

কাবীসা রহ………উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে তাঁর সহধর্মিনীগণ জিহাদের অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, (মহিলাদের জন্য) উত্তম জিহাদ হল হজ্জ।

হাদীস নং ২৬৮০

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম মিলহানের কন্যার কাছে গেলেন এবং সেখানে তিনি বিশ্রাম করলেন। তারপর তিনি হেসে উঠলেন। মিলহান রা.-এর কন্যা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি কেন হাসছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে কিছু লোক আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে এই সবুজ সমুদ্রে সফর করবে। তাদের দৃষ্টান্ত সিংহাসনের উপবিষ্ট বাদশাহদের ন্যায়। মিলহান রা.-এর কন্যা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহর কাছে আমার জন্য দু’আ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করেন। তিনি বললেন, ইয়া আল্লাহ ! আপনি মিলহানের কন্যাকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করুন। আবার তিনি বিশ্রাম নিলেন, এরপর হেসে উঠলেন। মিলহান রা.-এর কন্যা তাকে অনুরূপ জিজ্ঞাসা করলেন অথবা বললেন, এ কেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পূর্বের ন্যায় জবাব দিলেন। মিলহান রা.-এর কন্যা বললেন, আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তাদের প্রথম দলে আছ। পেছনের দলেন নয়। বর্ণনাকারী বলেন, আনাস রা. বলেছেন, তারপর তিনি উবাদা ইবনে সামিতের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং কারাযার কন্যার সঙ্গে সমুদ্র সফর করেন। তারপর ফেরার সময় নিজের সাওয়ারীতে আরোহণ করলেন, তখন তা থেকে পড়ে গিয়ে ঘাড় মটকে ইন্তিকাল করেন।

হাদীস নং ২৬৮১

হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা করলে তিনি তাঁর সহধর্মিণীদের মধ্যে কুরআর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন এবং এতে যার নাম আসত তাকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে নিয়ে যেতেন। কোন এক যুদ্ধে এভাবে তিনি আমাদের মধ্যে কুরআর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। তাঁতে আমার নাম আসল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বের হলাম। এ ছিল পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পরের ঘটনা।

হাদীস নং ২৬৮২

আবু মামার রহ……..আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধে সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন আমি দেখলাম আয়িশা বিনতে আবু বকর ও উম্মে সুলাইম রা. তাদের আচল এতটুকু উঠিয়ে নিয়েছেন যে, আমি তাদের উভয় পায়ের অলংকার দেখছিলাম। তারা উভয়েই মশক পিঠে বহন করে সাহাবীগণের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। আবার ফিরে গিয়ে মশক ভর্তি করে নিয়ে এসে সাহাবীগণের মুখে পানি ঢেলে ঢেলে দিচ্ছিলেন।

হাদীস নং ২৬৮৩

আবদান রহ……….সালাবা ইবনে আবু মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনুল খাত্তাব রা. মদীনায় কিছু সংখ্যক মহিলার মধ্যে কয়েকখানা চাঁদর বণ্টন করেন। তারপর একটি ভাল চাঁদর অবশিষ্ট রয়ে গেল। তাঁর কাছে উপস্থিত একজন তাকে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এ চাঁদরটি আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নাতিন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী রা. যিনি আপনার কাছে আছেন, তাকে দিয়ে দিন। উমর রা. বলেন, উম্মে সালীত রা. এই চাঁদরটির অধিক হকদার । উম্মে সালীত রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে বায়আত গ্রহণকারিণী আনসার মহিলাদের একজন। উমর রা. বলেন, কেননা উম্মে সালীত রা. উহুদের যুদ্ধে আমাদের কাছে মশক (ভর্তি পানি) বহন করে নিয়ে আসতেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, ‘তাযফিরু’ অর্থ তিনি সেলাই করতেন।

হাদীস নং ২৬৮৪

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..রুবাইয়ি বিনতে মুআববিয রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা লোকদের পানি পান করাতাম, আহতদের পরিচর্যা করতাম এবং নিহতদের মদীনায় পাঠাতাম।

হাদীস নং ২৬৮৫

মুসাদ্দাদ রহ………রুবাইয়ি বিনতে মুআববিয রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে লোকদের পানি পান করাতাম ও তাদের পরিচর্যা করতাম এবং আহত ও নিহত লোকদের মদীনায় ফেরত পাঠাতাম।

হাদীস নং ২৬৮৬

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (এক যুদ্ধে) আবু আমিরের হাটুতে তীর বিদ্ধ হলো, আমি তাঁর কাছে গেলাম। আবু আমির রা. বললেন, এই তীরটি বের কর। তখন আমি তীরটি টেনে বের করলাম। ফলে সে স্থান থেকে পানি প্রবাহিত হতে লাগল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম এবং তাকে ঘটনাটি জানালাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইয়া আল্লাহ ! আবু আমির উবাদাকে ক্ষমা করুন।

হাদীস নং ২৬৮৭

ইসমাঈল ইবনে খলীল রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (এক রাতে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে কাটান। তারপর তিনি যখন মদীনায় এলেন এই আকাঙ্খা প্রকাশ করলেন যে, আমার সাহাবীদের মধ্যে কোন যোগ্য ব্যক্তি যদি রাতে আমার পাহারায় থাকত। এমন সময় আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে? লোকটি বলল, আমি সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস , আপনার পাহারার জন্য এসেছি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন।

হাদীস নং ২৬৮৮

ইয়াহইয়া ইবনে ইউসুফ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লাঞ্ছিত হোক দীনার ও দিরহামের গোলাম এবং চাঁদর ও শালের গোলাম। তাকে দেয়া হলে সন্তুষ্ট হয়, না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। এই হাদীসটির সনদ ইসরাঈল এবং ইসমাঈল এবং মুহাম্মদ ইবনে জুহাদা, আবু হুসাইনের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছাননি। আর আমর, আবদূর রাহমান ইবনে আবদুল্লাহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে আমাদেরকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লাঞ্ছিত হেক দীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম এবং শালের গোলাম। তাকে দেওয়া হলে সন্তুষ্ট হয়, না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। এরা লাঞ্ছিত হোক, অপমানিত হোক। (তাদের পায়ে) কাটা বিদ্ধ হলে তা কেউ তুলে দিবে না। ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যে ঘোড়ার লাগাম ধরে জিহাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, যার মাথার চুল এলামেলো এবং পা ধূলিধূসরিত। তাকে পাহারায় নিয়োজিত করলে পাহারায় থাকে আর (সৈন্য দলের) পেছনে পেছনে রাখলে পেছনেই থাকে। সে কারো সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেওয়া হয় না এবং কোন বিষয়ে সুপারিশ করলে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হয় না। ‘ফাতা’সান’ বলা হয় ‘ফাআতআসাহুমূল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ তাদের অপমানিত করুক। ‘তুবা’ অর্থ উত্তম। ‘ফুলা’ এর কাঠামোতে গঠিত। মূলত ‘তুবইয়া’ ছিল। ‘ইয়া’ কে ‘ওয়াও’ দ্বারা পরিবর্তন করা হয়েছে।

হাদীস নং ২৬৮৯

মুহাম্মদ ইবনে আরআরা রহ…….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (কোন এক) সফরে আমি জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমার খেদমত করতেন। অথচ তিনি আনাস রা. এর চাইতে বয়সে বড় ছিলেন। জারীর রা. বলেন, আমি আনসারদের এমন কিছু কাজ দেখেছি, যার ফলে তাদের কাউকে পেলেই সম্মান করি।

হাদীস নং ২৬৯০

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে গিয়েছিলাম আর আমি তাঁর খেদমত করছিলাম। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে ফিরলেন এবং উহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টিগোচর হল, তিনি বললেন, এই পাহাড় আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি। তারপর তিনি হাত দ্বারা মদীনার দিকে ইঙ্গিত করলেন, ইয়া আল্লাহ! ইবরাহীম আ. যেমন মক্কাকে হারাম বানিয়েছিলেন, তেমনি আমিও এ দুই কংকরময় ময়দানের মধ্যবর্তী স্থান (মদীনা)-কে হারাম বরে ঘোষণা করছি। ইয়া আল্লাহ ! আপনি আমাদের সা’ ও মুদে বরকত দান করুন।

হাদীস নং ২৬৯১

সুলাইমান ইবনে দাউদ আবু রাবী রহ……..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (কোন এক সফরে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তির ছায়াই ছিল সর্বাধিক যে তার চাঁদর দ্বারা ছায়া গ্রহণ করছিল। তাই যারা সিয়াম পালন করছিল তারা কোন কাজই করতে পারছিল না। যারা সিয়াম রত ছিল না, তারা উটের তত্ত্বাবধান করছিল, খেদমতের দায়িত্ব পালন করছিল এবং পরিশ্রমের কাজ করছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা সাওম পালন করেনি তারাই আজ অধিক সাওয়াব হাসিল করল।

হাদীস নং ২৬৯২

ইসহাক ইবনে নাসর রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শরীরের প্রতিটি জোড়ার উপর প্রতিদিন একটি করে সাদকা রয়েছে। কোন লোককে তার সাওয়ারীর উপর উঠার ব্যাপারে সাহায্য করা, অথবা তার মাল-সরাঞ্জাম তুলে দেওয়া সাদকা। উত্তম কথা বলা ও সালাতের উদ্দেশ্যে গমনের প্রতিটি পদক্ষেপ সাদকা এবং রাস্তা বাতলিয়ে দেওয়া সাদকা।

হাদীস নং ২৬৯৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুনীর রহ………সাহল ইবনে সাদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও এর উপর যা কিছু আছে তার চাইতে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারো চিবুক পরিমাণ জায়গা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত কিছুর চাইতে উত্তম। আল্লাহর পথে বান্দার একটি সকাল বা বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সব কিছুর চাইতে উত্তম।

হাদীস নং ২৬৯৪

কুতাইবা রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু তালহাকে বলেন, তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে একটি ছেলে খুজে আন, যে আমার খেদমত করতে পারে। এমনকি তাকে আমি খায়বারেও নিয়ে যেতে পারি। তারপর আবু তালহা রা. আমাকে তার সাওয়ারীর পেছনে বসিয়ে নিয়ে চললেন। আমি তখন প্রায় সাবালক। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমত করতে লাগলাম। তিনি যখন অবতরণ করতেন, তখন প্রায়ই তাকে এই দু’আ পড়তে শুনতাম: ইয়া আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে, অক্ষমতা ও অসলতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে পানাহ চাচ্ছি। পরে আমরা খায়বারে গিয়ে উপস্থিত হলাম। তারপর যখন আল্লাহ তা’আলা তাকে দুর্গের উপর বিজয়ী করলেন, তখন তার কাছে সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই ইবনে আখতাবের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করা হল, তিনি ছিলেন সদ্য বিবাহিতা; তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিজের জন্য মনোনীত করলেন। তারপর তাকে নিয়ে রওয়ানা দিলেন। আমরা যখন সাদ্দুস সাহবা নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন সাফিয়্যা রা. হায়েয থেকে পবিত্র হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে তার সাথে বাসর যাপন করেন। এরপর তিনি চামড়ার ছোট দস্তরখানে হায়সা (এক প্রকার খাদ্য) প্রস্তুত করে আমাকে আশেপাশের লোকজনকে ডাকার নির্দেশ দিলেন। এই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সাফিয়্যার বিয়ের ওয়ালিমা । তারপর আমরা মদীনার দিকে রওয়ানা দিলাম। আনাস রা. বলেন, আমি দেখতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটের কাছে হাটু বাড়িয়ে বসতেন, আর সাফিয়্যা রা. তাঁর উপর পা রেখে উটে সাওয়ার হতেন। এভাবে আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের দিকে তাকিয়ে বললেন, এটি এমন এক পাহাড় যা আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি। তারপর মদীনার দিকে তাকিয়ে বললেন, ইয়া আল্লাহ ! এই কংকরময় দুটি ময়দানের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম বলে ঘোষণা করছি, যেমন ইবরাহীম আ. মক্কাকে হারাম ঘোষাণা করেছিলেন। ইয়া আল্লাহ! আপনি তাদের মুদ এবং সা’ তে বরকত দান করুন।

হাদীস নং ২৬৯৫

আবু নামান রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বলেন, উম্মে হারাম রা. আমাকে বলেছেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়ীতে ঘুমিয়ে ছিলেন। পরে তিনি হাসতে হাসতে জেগে উঠেন। উম্মে হারাম রা. জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিসে আপনাকে হাসাচ্ছে? তিনি বললেন, আমি আমার উম্মতের একদলের ব্যাপারে বিস্মিত হয়েছি, তারা সিংহাসনে উপবিষ্ট রাজা-বাদশাহদের মত সমুদ্র সফর করবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূল্লাহ ! আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভূক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে। তারপর তিনি আবার ঘুমালেন এবং হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আর তিনি দু’বার অথবা তিনবার অনরূপ বললেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের অগ্রগামীদের মধ্যে রয়েছ। পরে উবাদা ইবনে সামিত রা. তাকে বিয়ে করেন এবং তাকে নিয়ে জিহাদে বের হন। যখন তিনি তাঁর আরোহণের জন্য একটি সাওয়ারীর জানোয়ারের নিকটবর্তী করা হল। কিন্তু তিনি তা থেকে পড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায়।

হাদীস নং ২৬৯৬

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………মুসআব ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদ রা.-এর ধারণা ছিল অন্যদের চাইতে তাঁর মর্যাদা বেশী। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা দুর্বলদের উসিলায়ই সাহায্য ও রিযক প্রাপ্ত হচ্ছো।

হাদীস নং ২৬৯৭

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এমন এক সময় আসবে যখন একদল লোক আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের সাথে কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীদের কেউ আছেন? বলা হবে, হ্যাঁ। তারপর বিজয় দান করা হবে। তারপর এমন এক সময় আসবে যখন জিজ্ঞাসা করা হবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের সহচরদের মধ্যে কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছেন ? বলা হবে হ্যাঁ, তারপর তাদের বিজয় দান করা হবে। তারপর এক যুগ এমন আসবে যে, জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছেন, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের সহচরদের সাহচর্য লাভ করেছে, বলা হবে, হ্যাঁ। তখন তাদেরও বিজয় দান করা হবে।

হাদীস নং ২৬৯৮

কুতাইবা রহ……..সাহল ইবনে সাদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুশরিকাদের মধ্যে মুকাবিলা হয় এবং উভয়পক্ষ তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ সৈন্যদলের কাছে ফিরে এলেন, মুশরিকরাও নিজ সৈন্যদলে ফিরে গেল। সেই যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গীদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে কোন মুশরিককে একাকী দেখলেই তার পশ্চাদ্বাবন করত এবং তাকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ করত। বর্ণনাকারী (সাহল ইবনে সাদ রা) বলেন, আজ আমাদের কেউ অমুকের মত যুদ্ধ করতে পারেনি। তা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তো জাহান্নামের বাসিন্দা হবে। একজন সাহাবী বলে উঠলেন, আমি তার সঙ্গী হব। তারপর তিনি তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন সে দাঁড়ালে তিনিও দাঁড়াতেন এবং সে দ্রুত চললে তিনিও দ্রুত চলতেন। তিনি বললেন, এক সময় সে মারাত্মকভাবে আহত হল এবং সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করতে লাগল। এক সময় তলোয়ারের বাট মাটিতে রাখল এবং এর তীক্ষè দিকে বুকে চেপে ধরে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। অনুসরণকারী লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি কিছুক্ষণ আগেই বলেছিলেন যে, সে জাহান্নামী হবে। তা শুনে সাহাবীগণ বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করলেন। আমি তাদের বললাম যে, আমি লোকটির সম্পর্কে খবর তোমাদের জানাব। তারপর আমি তার পিছু পিছু বের হলাম এক সময় লোকটি মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং সে শীঘ্রই মৃত্যু কামনা করতে খাবে। তারপর তার তলোয়ারের বাট মাটিতে রেখে এর তীক্ষ্ণ ধার বুকে চেপে ধরল এবং তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোন ব্যক্তি জান্নাতবাসীর মত আমল করতে থাকে, প্রকৃতপক্ষে সে জাহান্নামী হয় এবং অনুরূপভাবে মানুষের বাহ্যিক কোন ব্যক্তি জাহান্নামীর মত আমল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতবাসী হয়।

হাদীস নং ২৬৯৯

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………সালামা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলাম গোত্রের একদল লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তীর নিক্ষেপ করতে থাক। কেননা তোমাদের পূর্বপুরুষ দক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন এবং আমি অমুক গোত্রের সঙ্গে আছি। রাবী বলেন, এ কথা শুনে দু’দলের একদল তীর নিক্ষেপ বন্ধ করে দিলে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কি হল যে, তোমরা তীর নিক্ষেপ করছ না? তারা জবাব দিল, আমরা কেমন করে তীর নিক্ষেপ করতে পারি, অথচ আপনি তাদের সঙ্গে রয়েছেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তীর নিক্ষেপ করতে থাকে আমি তোমাদের সকলের সঙ্গে আছি।

হাদীস নং ২৭০০

আবু নুআইম রহ……….আবু উসাইদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের দিন বলেছেন, আমরা যখন কুরাইশদের বিরুদ্ধে সারিবদ্ধ হয়েছিলাম এবং কুরাইশরা আমাদের বিরুদ্ধে সারিবদ্ধ হয়েছিল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বললেন, যখন তারা তোমাদের নিকটবর্তী হবে, তখন তোমরা তীর নিক্ষেপ করবে।

হাদীস নং ২৭০১

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা একদল হাবশী লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বর্শা নিয়ে খেলা করছিলেন। এমন সময় উমর রা. সেখানে এলেন এবং হাতে কংকর তুলে নিয়ে তাদের দিকে নিক্ষেপ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উমর! তাদের করতে দাও। আলী ……….মামার রহ. সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন (এ ঘটনা) মসজিদে ঘটেছিল।

হাদীস নং ২৭০২

আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালহা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে একই ঢাল ব্যবহার করেছেন। আর আবু তালহা রা. ছিলেন একজন ভাল তীরন্দাজ। তিনি যখন তীর নিক্ষেপ করতেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উচু করে তীর যে স্থানে পড়ত তা লক্ষ্য রাখতেন।

হাদীস নং ২৭০৩

সাঈদ ইবনে উফাইর রহ……..সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যুদ্ধের ময়দানে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথার শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গেল ও তাঁর মুখমণ্ডল রক্তাক্ত হয়ে গেল এবং তাঁর সামনের দাঁত ভেঙ্গে গেল, তখন আলী রা. ঢালে করে ভরে ভরে পানি আনতেন এবং ফাতিমা রা. ক্ষতস্থান ধুতে ছিলেন। যখন ফাতিমা রা. দেখলেন যে, পানির চাইতে রক্তক্ষরণ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন একখানা চাটাই নিয়ে তা পোড়ালেন এবং তার ছাই ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলেন, তাঁতে রক্ত বন্ধ হয়ে গেল।

হাদীস নং ২৭০৪

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনূ নযীরের সম্পদ আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফায় হিসেবে দান করেছিলেন। এত মুসলমানগণ অশ্ব বা সাওয়ারী চালনা করেনি। এ কারণে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এই সম্পদ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারকে এক বছরের খরচ দিয়ে দিতেন এবং অবশিষ্ট আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের প্রস্তুতি স্বরূপ হাতিয়ার ও ঘোড়া ইত্যাদিতে ব্যয় করতেন।

হাদীস নং ২৭০৫

কাবীসা রহ……..আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাদ রা. ব্যতীত আর কারো জন্যও তাঁর পিতা-মাতাকে উৎসর্গ করার কথা বলতে দেখিনি। আমি তাকে বলতে শুনেছি যে, তুমি তীর নিক্ষেপ কর, তোমার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ (ফিদা) হোক।

হাদীস নং ২৭০৬

ইসমাঈল রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। সে সময় দুটি বালিকা বুআস যুদ্ধ সম্পর্কীয় গৌরবগাঁথা গাইছিল। তিনি এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন এবং তাঁর মুখ ফিরিয়ে রাখলেন। এমন সময় আবু বকর রা. এলেন এবং আমাকে ধমক দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর রাসূলের কাছে শয়তানের বাদ্য? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে ফিরে বললেন, ওদের ছেড়ে দাও। তারপর যখন তিনি অন্য দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমি বালিকা দুটিকে (হাত দিয়ে) খোঁচা দিলাম। আর তারা বেরিয়ে গেল। আয়িশা রা. বলেন, ঈদের দিনে হাবশী লোকেরা ঢাল ও বর্শা নিয়ে খেলা করত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিলাম কিংবা তিনিই আমাকে বলেছিলেন, তুমি কি দেখতে আগ্রহী? আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর তিনি আমাকে তাঁর পেছনে দাঁড় করালেন। আমার গাল তাঁর গালের উপর ছিল। তিনি বলছিলেন, হে বানূ আরফিদা, চালিয়ে যাও। যখন আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তিনি আমাকে বললেন, যথেষ্ট হয়েছে? বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এখন যাও। আহমদ রহ. ইবনে ওয়াহব রহ. সূত্রে বলেন, তিনি যখন অন্য মনস্ক হলেন।

হাদীস নং ২৭০৭

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল লোকের চাইতে সুন্দর ও সাহসী ছিলেন। একরাতে মদীনার লোকেরা আতংকিত হয়ে উত্থিত শব্দের দিকে বের হল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সামনে এলেন এমন অবস্থায় যে, তিনি শব্দের যথার্থতা অন্বেষণ করে ফেলেছেন। তিনি আবু তালহার জিনবিহীন ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার ছিলেন এবং তার কাঁধে তরবারি ঝুলান ছিল। তিনি বলছিলেন, তোমরা ভীত হয়ো না। তারপর তিনি বললেন, আমি ঘোড়াটিকে সমুদ্রের ন্যায় গতিশীল পেয়েছি। অথবা তিনি বললেন, এটি সমুদ্র অর্থাৎ বেগবান।

হাদীস নং ২৭০৮

আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এই সব বিজয় এমন সব লোকদের দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল, যাদের তলোয়ার স্বর্ণ বা রৌপ্য খচিত ছিল না, বরং তাদের তলোয়ার ছিল উটের গর্দানের চামড়া এবং লৌহ কারুকার্য মণ্ডিত।

হাদীস নং ২৭০৯

আবুল ইয়ামান রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে নাজদের দিকে কোন এক যুদ্ধে বের হয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাবর্তন করলে তিনিও তাঁর সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করেন। তারা যখন কন্টকাকীর্ণ বৃক্ষরাজীতে ঢাকা এক উপত্যকায় উপস্থিত হলেন তখন তাদের দিবা বিশ্রামের সময় এল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে অবতরণ করেন। লোকেরা ছায়ার আশ্রয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাবলা গাছের নীচে অবতরণ করেন এবং তাতে তাঁর তরবারি ঝুলিয়ে রাখলেন। তারপর আমরা সকলেই ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ডাকতে লাগলেন। দেখলাম তাঁর পার্শ্বে একজন গ্রাম্য আরব। তিনি বললেন, আমার নিদ্রাবস্থায় এই ব্যক্তি আমারই তরবারি আমারই উপর বের করে ধরেছে। জেগে উঠে দেখতে পেলাম যে, তার হাতে খোলা তরবারি। সে বলল, আমার থেকে তোমাকে কে রক্ষা করবে, আমি বললাম, আল্লাহ! আল্লাহ! তিনবার। এবং তার উপর তিনি কোন প্রতিশোধ নেননি, অথচ সে সেখানে বসে আছে।

হাদীস নং ২৭১০

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….সাহল রা. থেকে বর্ণিত যে, তাকে উহুদের দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আঘাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখমণ্ডল আহত হল এবং তাঁর সামনের দুটি দাঁত ভেঙ্গে গেল, তাঁর মাথার শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গেল। ফাতিমা রা. রক্ত ধুইতে ছিলেন আর আলী রা. পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। তিনি যখন দেখতে পেলেন যে, রক্তক্ষরণ বাড়ছেই, তখন একটি চাটাই নিয়ে তা পুড়িয়ে ছাই করলেন এবং তা ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলেন। তারপর রক্তক্ষরণ বন্ধ হল।

হাদীস নং ২৭১১

আমর ইবনে আব্বাস রহ………..আমর ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুই রেখে যাননি, শুধু তাঁর অস্ত্র, একটি সাদা খচ্চর ও একখণ্ড জমি, যা তিনি সাদকা করে গিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২৭১২

আবুল ইয়ামান ও মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের দুপুরের বিশ্রামের সময় হল এমন একটি উপত্যকায় যাতে কাঁটাযুক্ত প্রচুর বৃক্ষ ছিল। লোকেরা কাঁটাযুক্ত বৃক্ষরাজির ছায়ায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বৃক্ষের নীচে অবতরণ করেন এবং একটি বৃক্ষে তাঁর তরবারি ঝুলিয়ে সেখানে ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি জেগে উঠলেন এবং হঠাৎ তাঁর পার্শ্বে দেখতে পেলেন যে, একজন লোক, অথচ তিনি তার সম্পর্কে টের পাননি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই লোকটি হঠাৎ আমার তরবারিটা উচিয়ে বলল, কে তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ! তখন সে লোক তলোয়ারটি কোষবদ্ধ করল। আর এই সে লোক, এখানে বসা, কিন্তু তিনি তাকে কোন শাস্তি দেননি।

হাদীস নং ২৭১৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত যে, একবার তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন। মক্কার পথে কোন এক স্থানে পৌঁছার পর আবু কাতাদা রা. কতিপয় সঙ্গীসহ তাঁর পেছনে রয়ে গেলেন। সঙ্গীরা ছিলেন ইহরাম অবস্থায় আর তিনি ছিলেন ইহরাম বিহীন। এ সময় তিনি একটি বন্য গাধা দেখতে পান এবং (তা শিকারের উদ্দেশ্যে) তাঁর ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করেন। তিনি তাঁর সঙ্গীদের তাঁর চাবুকটি উঠিয়ে দিতে বলেন ; কিন্তু তারা তা দিতে অস্বীকার করলেন। আবার তিনি তাঁর বর্শাটি উঠিয়ে দিতে বলেন। তারা তাও দিতে অস্বীকার করলেন। তখন তিনি নিজেই তা উঠিয়ে নিলেন। এরপর গাধাটির উপর আক্রমণ চালালেন এবং তাকে হত্যা করলেন। সাথীরা কেউ কেউ এর গোশত খেলেন এবং কেউ কেউ তা খেতে অস্বীকার করলেন। তারপর তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছে এ সম্পর্কে তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, এটি একটি আহার্য বস্তু, যা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের আহারের জন্য দিয়েছেন। যায়িদ ইবনে আসলাম রহ. আবু কাতাদা রা. থেকে আবু নাযর রা.-এর অনুরূপ বন্য গাধা সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের সাথে তার কিছু গোশত আছে কি?

হাদীস নং ২৭১৪

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের দিন একটি গুম্বুজ রাজি তাঁবুতে অবস্থান কালে দুআ করছিলেন, ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার প্রতিজ্ঞা ও ওয়াদার দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি যদি চান, তাহলে আজকের পরে আর আপনার ইবাদাত করা হবে না। এ সময় আবু বকর রা. তাঁর হাত ধরে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যথেষ্ট হয়েছে। আপনি বার বার মিনতির সঙ্গে আপনার রবের কাছে দু’আ করেছেন। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ম পরিহিত ছিলেন। এরপর তিনি এই আয়াত পাঠ করতে বেরিয়ে এলেন: শীঘ্রই দুশমনরা পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে অধিকন্তু কিয়ামত শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর। (৫৪: ৪৫. ৪৬) ওহাইব রহ. বলেন, খালিদ রহ. বলেছেন, ‘বদরের দিন’।

হাদীস নং ২৭১৫

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের সময় তাঁর বর্মটি ত্রিশ সা’-এর বিনিময়ে এক ইয়াহুদীর কাছে বন্ধক ছিল। মুআল্লা আবদুল ওয়াহিদ রহ. সূত্রে আমাশ রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর লৌহবর্ম বন্ধক রেখেছিলেন। আর ইয়ালা রহ. আমাশ রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, বর্মটি ছিল লোহার।

হাদীস নং ২৭১৬

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কৃপণ ও দানশীল ব্যক্তির উদাহরণ এমন দু’ ব্যক্তির ন্যায়, যারা লৌহবর্ম পরিহিত। বর্ম দু’টি এত আঁটসাট যে, তাদের উভয়ের হাত কব্জায় আবদ্ধ রয়েছে। দানশীল ব্যক্তি যখন দান করতে ইচ্ছা করে, তখন বর্মটি তার শরীরের উপর প্রসারিত হয়, এমনকি তা তার পদচিহ্ন মুছে ফেলে। আর কৃপণ ব্যক্তি যখন দান করতে ইচ্ছা করে তখন বর্মের কড়াগুলো পরস্পর গলে গিয়ে তার শরীরকে আকড়ে ধরে এবং তার উভয় হাত কণ্ঠের সাথে লেগে যায়। তারপর আবু হুরায়রা রা. বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, সে হাত দুটিকে প্রসারিত করতে চেষ্টা করে; কিন্তু প্রসারিত করতে পারে না।

হাদীস নং ২৭১৭

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……… মুগীরা ইবনে শুবা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন (প্রাকৃতিক) হাজত পূরণের জন্য গেলেন। সেখান থেকে ফিরে এলে আমি তাঁর কাছে পানি নিয়ে গেলাম। তিনি তা দিয়ে উযূ করেন। তাঁর পরিধানে ছিল শামী জোব্বা। তিনি কুলি করেন, নাকে পানি দেন ও মুখমণ্ডল ধৌত করেন। এরপর তিনি জামার আস্তিন গুটিয়ে দুটি হাত বের করতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন দুটি ছিল খুবই আঁটসাট। তাই তিনি ভেতর দিক দিয়ে হাত বের করে উভয় হাত ধুলেন এবং মাথা মসেহ করলেন এবং উভয় মোজার উপর মসেহ করলেন।

হাদীস নং ২৭১৮

আহমদ ইবনে মিকদাম রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রাহমান ইবনে আওফা রা. ও যুবাইর রা.-কে তাদের শরীরে চুলকানি থাকার কারণে রেশমী জামা পরিধান করার অনুমতি দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২৭১৯

আবুল ওয়ালিদ ও মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, আবদুর রাহমান ও যুবাইর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উকুনের অভিযোগ করলে তিনি তাদের রেশমী পোষাক পরিধানের অনুমতি দেন। আনাস রা. বলেন, আমি যুদ্ধে তাদের শরীরে তা দেখেছি।

হাদীস নং ২৭২০

মুসাদ্দাদ রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রাহমান ইবনে আওফ ও যুবাইর ইবনুল আওয়ামকে রেশমী বস্ত্র পরিধানের অনুমতি দেন।

হাদীস নং ২৭২১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, শরীরে চুলকানির জন্য তাদের দু’জনকে (আবদুর রাহমান ও যুবাইর) রেশমী বস্ত্র পরিধানের অনুমতি দিয়েছিলেন বা দেয়া হয়েছিল।

হাদীস নং ২৭২২

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আমর ইবনে উমায়্যা যামরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (বকরীর) বাহু থেকে কেটে কেটে খেতে দেখেছি। তারপর তাকে সালাতের জন্য ডাকা হলে তিনি সালাত আদায় করলেন; কিন্তু তিনি উযূ করেননি। আবুল ইয়ামান রহ. শুয়াইব সূত্রে যুহরী রহ. থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি রেখে দিলেন।

হাদীস নং ২৭২৩

ইসহাক ইবনে ইয়াযীদ দিমাশকী রহ………উমাইর ইবনে আসওয়াদ আনসী রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি উবাদা ইবনে সামিত রা.-এর কাছে আসলেন। তখন উবাদা রা. হিমস উপকূলে তাঁর একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন উম্মে হারাম। উমাইর রহ. বলেন, উম্মে হারাম রা. আমাদের কাছে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, আমার উম্মাতের মধ্যে প্রথম যে দলটি নৌ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তারা যেন জান্নাত অনিবার্য করে ফেলল। উম্মে হারাম রা. বলেন, আমি কি তাদের মধ্যে হবে? তিনি বললেন, তুমি তাদের মধ্যে হবে। উম্মে হারাম রা. বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার উম্মাতের প্রথম যে দলটি কায়সার (রোম সম্রাট) এর রাজধানী আক্রমণ করবে, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত। তারপর আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি তাদের মধ্যে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না।

হাদীস নং ২৭২৪

ইসহাক ইবনে মুহাম্মদ ফারবী রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি তাদের কেউ যদি পাথরের আড়ালে আত্মগোপন করে তাহলে পাথরেও বলবে, হে আল্লাহর বান্দা! আমার পেছনে ইয়াহুদী রয়েছে, তাকে হত্যা কর।

হাদীস নং ২৭২৫

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি কোন ইয়াহুদী পাথরের আড়ালে আত্মগোপন করে থাকলে, পাথর বলবে, হে মুসলিম, আমার পেছনে ইয়াহুদী রয়েছে, তাকে হত্যা কর।

হাদীস নং ২৭২৬

আবু নুমান রহ………আমর ইবনে তাগলিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের আলামত সমূহের একটি এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে করবে, যারা পশমের জুতা পরিধান করবে। কিয়ামতের আর একটি আলামত এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের মুখ হবে চাওড়া, যেন তাদের মুখমণ্ডল পিটানো চামড়ার ঢাল।

হাদীস নং ২৭২৭

সাঈদ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ততদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে না, তোমরা এমন তুর্ক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের চোখ ছোট, চেহারা লাল, নাক চেপটা এবং মুখমণ্ডল পেটানো চামড়ার ঢালের ন্যায়। আর ততদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন না তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের জুতা হবে পশমের।

হাদীস নং ২৭২৮

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমরা এমন জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যাদের জুতা হবে পশমের। আর কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমরা এমন জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের মুখমণ্ডল হবে পিটানো চামড়ার ঢালের ন্যায়। সুফিয়ান রহ. বলেন, আরাজ সূত্রে আবু হুরায়রা রা. থেকে আবু যযিনাদ এই রেওয়ায়তে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন; তাদের চোখ হবে ছোট, নাক হবে চেপ্টা, তাদের চেহারা যেন পিটানো ঢালের ন্যায়।

হাদীস নং ২৭২৯

আমর ইবনে খালিদ রহ………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তাকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আবু উমারা! হুনায়নের যুদ্ধে আপনারা কি পলায়ন করেছিলেন? তিনি বললেন, না, আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পলায়ন করেননি। বরং তাঁর কিছু সংখ্যক নওয়াজোয়ান সাহাবী হাতিয়ার বিহীন অবস্থায় অগ্রসর হয়ে গিয়েছিলেন। তারা বানূ হাওয়াযিন ও বানূ নাসর গোত্রের সুদক্ষ তীরন্দাজের সম্মুখীন হন। তাদের কোন তীরই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। তারা এদের প্রতি এমনভাবে তীর বর্ষণ করলে যে, তাদের কোন তীরই ব্যর্থ হয়নি। সেখান থেকে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এস উপস্থিত হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর শ্বেত খচ্চরটা পিঠে ছিলেন এবং তাঁর চাচাতো ভাই আবু সুফিয়ান ইবনে হারিস ইবনে আবদুল মুত্তালিব তাঁর লাগাম ধরে ছিলেন। তখন তিনি অবতরণ করলেন এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেন। এরপর তিনি বলেন, আমি নবী, এ কথা মিথ্যা নয়। আমি আবদুল মুত্তালিবের পৌত্র। এরপর তিনি সাহাবীদের সারিবদ্ধ করেন।

হাদীস নং ২৭৩০

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……..আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করেন, আল্লাহ তাদের (মুশরিকদের) ঘর ও কবর আগুনে পূর্ণ করুন। কেননা তারা আসরের সালাত থেকে আমাদের ব্যতিব্যস্ত রেখেছে, এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়।

হাদীস নং ২৭৩১

কাবীসা রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূতে নাযিলায় এই দু’আ করতেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি সালামা ইবনে হিশামকে নাজাত দিন। ইয়া আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনে ওয়ালীদকে নাজাত দিন। ইয়া আল্লাহ! আয়্যাশ ইবনে আবী রাবী-কে নাজাত দিন। ইয়া আল্লাহ! দুর্বল মুমিনদের নাজাত দিন। ইয়া আল্লাহ মুযার গোত্রকে সমূলে ধ্বংস করুন। ইয়া আল্লাহ! (মুশরিকদের উপর) ইউসুফ আ.-এর সময়কালের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষ নাযিল করুন।

হাদীস নং ২৭৩২

আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাবের দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে মুশরিকদের বিরুদ্ধে দু’আ করেছিলেন যে, হে কিতাব নাযিলকারী, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী আল্লাহ! ইয়া আল্লাহ! তাদের সকল দলকে পরাজিত কর। ইয়া আল্লাহ! আপনি তাদের পরাভূত করুন এবং পর্যুদস্ত করুন।

হাদীস নং ২৭৩৩

আবদুল্লাহ ইবনে আবু শায়বা রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার ছায়ায় সালাত আদায় করছিলেন। তখন আবু জাহল ও কুরাইশদের কিছু লোক পরামর্শ করে। সেই সময় মক্কার বাইরে, একটি উট যবেহ হয়েছিল। কুরাইশরা একজন পাঠিয়ে সেখান থেকে এর গর্ভথলি নিয়ে এল এবং তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিঠে ঢেলে দিল। তারপর ফাতিমা রা. এসে এটি তাঁর থেকে সরিয়ে দিলেন। এই সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে দু’আ করেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি কুরাইশদের ধ্বংস করুন। ইয়া আল্লাহ! আপনি কুরাইশদের ধ্বংস করুন। ইয়া আল্লাহ! আপনি কুরাইশদের ধ্বংস করুন। অর্থাৎ আবু জাহল, ইবনে হিশাম, উতবা ইবনে রবীআ, শায়বা ইবনে রবীআ, ওয়ালীদ ইবনে উতবা, উবাই ইবনে খালফ এবং উকবা ইবনে আবী মুআইত (তাদের ধ্বংস করুন)। আবদুল্লাহ রহ.বলেন, এরপর আমি তাদের সকলকে বদরের একটি পরিত্যক্ত কূপে নিহত দেখেছি। আবু ইসহাক রহ. বলেন, আমি সপ্তম ব্যক্তির নাম ভূলে গিয়েছি। শুবা রহ. বলেন, উমাইয়া অথবা উবাই। তবে সহীহ হল উমাইয়া। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, ইউসুফ ইবনে আবু ইসহাক রহ. আবু ইসহাক রহ. সূত্রে উমাইয়া ইবনে খালফ।

হাদীস নং ২৭৩৪

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, একদিন কয়েকজন ইয়াহুদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসল এবং বলল, তোমার মৃত্যু ঘটুক। (তা শুনে) আয়িশা রা. তাদের অভিশাপ দিলেন। তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কী হল? আয়িশা রা. বললেন, তারা কী বলেছে, আপনি কি তা শুনেননি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যে বলেছি, তোমাদের উপর, তা কি তুমি শোননি?

হাদীস নং ২৭৩৫

ইসহাক রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কায়সারের কাছে চিঠি লিখেছিলেন এবং এতে বলেছিলেন, যদি তুমি সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখ তাহলে প্রজাদের পাপের বোঝা তোমারই উপর বর্তাবে।

হাদীস নং ২৭৩৬

আবুল ইয়ামান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুফাইল ইবনে আমর দাওসী ও তাঁর সঙ্গীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দাওস গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণে অবাধ্য হয়েছে ও অস্বীকার করেছে। আপনি তাদের বিরুদ্ধে দু’আ করুন। তারপর বলা হল, দাওস গোত্র ধ্বংস হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইয়া আল্লাহ ! আপনি দাওস গোত্রকে হিদায়াত করুন এবং তাদের (ইসলাম) নিয়ে আসুন।

হাদীস নং ২৭৩৭

আলী ইবনে জাদ রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোমের (সম্রাটের) প্রতি লেখার ইচ্ছা করেন। তখন তাকে বলা হল যে, তারা মোহরকৃত পত্র ছাড়া পাঠ করে না। তারপর তিনি রূপার একটি মোহর নির্মাণ করেন। আমি এখনো যেন তাঁর হাতে এর শুভ্রতা দেখছি। তিনি তাঁতে খোদাই করেছিলেন, “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা”।

হাদীস নং ২৭৩৮
Missing

হাদীস নং ২৭৩৯

ইবরাহীম ইবনে হামযা রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কায়সারকে ইসলামের প্রতি আহবান সম্বলিত চিঠি লেখেন এবং দেহইয়া কালবীর রা.-এর মারফত সে চিঠি পাঠান এবং তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দেন যেন তা বুসরার গভর্নরের কাছে অর্পণ করেন, যাতে তিনি তা কায়সারের কাছে পৌঁছিয়ে দেন। আল্লাহ যখন পারস্যের সৈন্যবাহিনীকে কায়সারের এলাকা থেকে হটিয়ে দেন, তখন আল্লাহর অনুগ্রহের এই শুকরিয়া হিসাবে কায়সার হিমস থেকে পায়ে হেটে বায়তুল মুকাদ্দাস সফর করেন। এ সময় তাঁর নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চিঠি এসে পৌঁছলে তা পাঠ করে তিনি বললেন যে, তাঁর গোত্রের কাউকে খোঁজ কর যাতে আম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারি। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আবু সুফিয়ান রা. আমাকে জানিয়েছেন যে, সে সময় আবু সুফিয়ান রা. কুরাইশদের মধ্যে সন্ধির বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়ায় ছিলেন। এ সময়টি ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কাফির কুরাইশদের কিছু লোকের সঙ্গে বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়ায় ছিলেন। এ সময়টি ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কাফির কুরাইশদের মধ্যে সন্ধির যুগ। আবু সুফিয়ান রা. বর্ণনা করেন যে, কায়সারের সেই দূতের সঙ্গে সিরিয়ার কোন স্থানে আমাদের দেখা হলে সে আমাকে আমার সঙ্গী-সাথীসহ বায়তুল মুকাদ্দাসে নিয়ে গেল। তারপর আমাদের কায়সারের দরবারে হাজির করা হল। তখন কায়সার মুকুট পরিধান করে রাজ সিংহাসনে উপবিষ্ট ছিলেন। রোমের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাঁর পার্শ্বে ছিলেন। তারপর তিনি তাঁর দোভাষীকে বললেন, তাদের জিজ্ঞাসা কর, যিনি নিজেকে নবী বলিয়া দাবী করেন, এদের মধ্যে তাঁর নিকটাত্মীয় কে? আবু সুফিয়ান রা. বললেন, আমি বললাম, বংশের দিক দিয়ে আমি তাঁর সর্বাধিক নিকটতম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার ও তাঁর মধ্যে কি ধরনের আত্মীয়তা রয়েছে? আমি বললাম, তিনি আমার চাচাতো ভাই। সে সময় উক্ত কাফেলায় আমি ছাড়া আবদ মানাফ গোত্রের আর কেউ ছিল না। কায়সার বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এস। তারপর বাদশাহর নির্দেশে আমার সকল সঙ্গীকে আমার পেছনে কাঁধের কাছে সমবেত করা হল। এরপর কায়সার দোভাষীকে বললেন, লোকটির সাথীদের জানিয়ে দাও, আমি তার কাছে সেই লোকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে চাই, যিনি নবী বলিয়া দাবী করেন। যদি সে মিথ্যা বলে, তবে তোমরা তার প্রতিবাদ করবে। আবু সুফিয়ান রা. বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যদি এ ব্যপারে লজ্জাবোধ না করতাম যে, আমার সাথীরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করবে, তাহলে তাঁর প্রশ্নের জবাবে নবী সম্পর্কিত কিছু (মিথ্যা) কথা বলতাম। কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করলাম যে, আমার সঙ্গীরা আমি মিথ্যা বলছি বলে প্রচার করবে। ফলে আমি সত্যই বললাম। তারপর তিনি তাঁর দোভাষীকে বললেন, জিজ্ঞাসা কর, তোমাদের মধ্যে নবীর বংশ মর্যাদা কিরূপ? আমি বললাম, আমাদের মধ্যে তিনি উচ্চ বংশীয়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁর বংশের অন্য কোন লোক কি ইতিপূর্বে এরূপ দাবী করেছে? জবাব দিলাম, না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁর এ নুবওয়াতের আগে কোন সময় কি তাকে মিথ্যার অভিযোগে তোমরা অভিযুক্ত করেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাঁর পূর্বপুরুষদের কেউ কি বাদশাহ ছিল ? আমি বললাম, না। প্রভাবশালী লোকেরা তাঁর অনুসারী হচ্ছে, না দুর্বল (শ্রেণীর) লোকেরা? আমি বললাম, বরং দুর্বলরাই। তিনি বললেন, এদের সংখ্যা কি বৃদ্ধি পাচ্ছে না কমছে? আমি বললাম, বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বললেন, তাঁর দীনে প্রবেশ করার পর কেউ কি সে দীনের প্রতি অপছন্দ করে তা পরিত্যাগ করেছে? আমি বললাম, না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি কখনো চুক্তি ভঙ্গ করেছেন? আমি বললাম, না। তবে আমরা বর্তমানে তাঁর সঙ্গে একটি চুক্তির মেয়াদে আছি এবং আশঙ্খা করছি যে, তিনি তা ভঙ্গ করতে পারেন। আবু সুফিয়ান রা. বলেন, আমার বক্তব্যে এই কথা ব্যতীত এমন কোন কথা লুকানো সম্ভব হয়নি। যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খাট করা হয় আর আমার প্রতি অপপ্রচারের আশংকা না হয়। কায়সার জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি তাঁর বিরুদ্ধে এবং তিনি কি তোমাদের বিরুদ্ধে কখনো যুদ্ধ করেছেন ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাঁর ও তোমাদের মধ্যে যুদ্ধের ফলাফল কি ? আমি বললাম, যুদ্ধ কুয়ার বালতির মত। কখনো তিনি আমাদের উপর বিজয়ী হন, কখনো আমরা তাঁর উপর বিজয়ী হই। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি বিষয়ে আদেশ করেন? আমি বললাম, তিনি আমাদের আদেশ করেন, একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে এবং তাঁর সঙ্গে কিছুই শরীক না করতে। আমাদের পিতৃপুরুষেরা যে সবের ইবাদত করত, তিনি সে সবের ইবাদত করতে আমাদের নিষেধ করেন। আর তিনি আমাদের আদেশ করেন সালাত আদায় করতে; সাদকা দিতে, পূত পবিত্র থাকতে, চুক্তি পালন করতে এবং আমানত আদায় করতে। আমি তাকে এসব জানালে তিনি দোভাষীকে আদেশ দিলেন, তাকে বল, আমি তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশ মর্যাদা সম্পর্কে জানতে চাইলে তুমি বলেছ যে, তিনি উচ্চ বংশীয়। সেরূপই রাসূলগণ, তাদের কাওমের উচ্চ বংশেই প্রেরিত হন। আমি তোমাদের নিকট জানতে চেয়েছিলাম যে, তোমাদের কেউ কি ইতিপূর্বে এ ধরনের দাবী করেছে? তুমি বললে, না। তোমাদের মধ্যে ইতিপূর্বে যদি কোন ব্যক্তি এরূপ কথা বলে থাকত, তাহলে আমি বলতাম, লোকটি পূর্ব কথিত একটি কথারই কথারই অনুসরণ করছে। আমি জানতে চেয়েছি, তাঁর এ দাবীর পূর্বে কি তোমরা তাকে মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলে? তুমি বলেছ, না। এতে আমি বুঝতে পেরেছি যে, যে ব্যক্তি মানুষের ব্যাপারে মিথ্যা বলেননি, তিনি আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলবেন, এমন হতে পারে না। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁর পিতৃ পুরুষদের কেউ কি বাদশাহ ছিলেন? তুমি বলেছ, না। আমি বলছি, যদি তাঁর পিতৃ পুরুষদের কেউ বাদশাহ থাকত, তাহলে আমি বলতাম, সে পিতৃ পুরুষদের রাজত্ব উদ্ধার করতে ইচ্ছুক। আম তোমার কাছে জানতে চেয়েছি যে, প্রভাবশালী লোকেরাই তাঁর অনুসরণ করছে, না দুর্বল লোকেরা? তুমি বলেছ, দুর্বলরাই। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের লোকেরাই রাসূলগণের অনুসারী হয়ে থাকে। আমি তোমার কাছে জানতে চেয়েছি, তাদের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে? তুমি বলেছ, বাড়ছে। ঈমান এভাবেই পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁর দীন গ্রহণ করার পর কেউ কি অসন্তুষ্ট হয়ে তা পরিত্যাগ করেছে? তুমি বলেছ, না। ঈমান এরূপই হয়ে থাকে, যখন তা হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে, তখন কেউ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয় না। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি যে, তিনি কি চুক্তি ভঙ্গ করেন? তুমি বলেছ, না। ঠিকই রাসূলগণ কখনো চুক্তি ভঙ্গ করেন না। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তোমরা কি কখনো তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছ এবঙ তিনি কি কখনো তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেছন? তুমি বলেছ? করেছেন। তোমাদের ও তাঁর মধ্যকার লড়াই কূপের বালতির মত। কখনো তোমরা তাঁর উপর জয়ী হয়েছ, আবার কখনো তিনি তোমাদের উপর জয়ী হয়েছেন। এভাবেই রাসূলগণ পরীক্ষিত হন এবং পরিণাম তাদেরই অনুকূল হয়। আমি আরো জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি তোমাদের কি কি বিষয়ে আদেশ করে থাকেন? তুমি বলেছ, তিনি তোমাদের আদেশ করেন যেন তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে কিছুই শরীক না কর। আর তিনি তোমাদের পিতৃপুরুষেরা যে সবের ইবাদত করত তা থেকে নিষেধ করেন আর তোমাদের নির্দেশ দেন, সালাত আদায় করতে, সাদকা দিতে, পূত পবিত্র থাকতে, চুক্তি পালন করতে, আমানত আদায় করতে। এসব নবীগণের গুণাবলী। আমি জানতাম, তাঁর আগমন ঘটবে। কিন্তু তিনি তোমাদের মধ্যে আগমন করবেন, সে ধারণা আমার ছিল না। তুমি যা যা বললে, তা যদি সত্য হয়, তবে অচিরেই তিনি আমার এই পায়ের নীচের জায়গার মালিক হয়ে যাবেন। আমি যদি আশা করতে পারতাম যে, তাঁর কাছে পৌছতে পারব, তবে কষ্ট করে তাঁর সাক্ষাতের চেষ্টা করতাম। যদি আমি তাঁর নিকট থাকতাম, তবে তাঁর পদযুগল ধুইয়ে দিতাম। আবু সুফিয়ান রা. বলেন, তারপর তিনি তাঁর পত্রখানি চেয়ে নিলেন। তা পাঠ করে শুনানো হল। তাঁতে ছিল:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল মুহাম্মদের পক্ষ থেকে রোমের সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি……..যারা হিদায়াতের অনুসরণ করে তাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হউক। আম আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। আপনি ইসলাম গ্রহণ করলে আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিফল দান করবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেন তাহলে রোমের সমস্ত প্রজার পাপ আপনার উপর বর্তাবে। হে কিতাবীগণ ! এস এমন একটি কথার দিকে যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই, যেন আমরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে রব হিসাবে গ্রহণ না করে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বল: তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলিম। আবু সুফিয়ান রা. বলেন, তার কথা শেষ হলে তার পার্শ্বের রোমের পদস্থ ব্যক্তিরা চিৎকার করতে লাগল এবং হৈ চৈ করতে লাগল। তারা কি বলছিল তা আমি বুঝতে পারিনি এবং নির্দেশক্রমে আমাদের বের করে দেয়া হল। আমি সঙ্গীদের নিয়ে বেরিয়ে এসে তাদের সাথে একান্তে মিলিত হয়ে, তাদের বললাম, নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপারে তো বিরাট আকার ধারণ করেছে। এই যে রোমের বাদশাহ তাকে ভয় করছে। আবু সুফিয়ান রা. বললেন, আল্লাহর কসম! এরপর থেকে আমি অপমানবোধ করতে লাগলাম এবং এ ব্যাপারে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেল যে, মুহাম্মদের দাওয়াত অচিরেই বিজয় লাভ করবে, এমনকি শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা আমার অন্তরে ইসলাম প্রবেশ করিয়ে দিলেন, অথচ তখনও আমি তা অপছন্দ করছিলাম।

হাদীস নং ২৭৪০

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি খায়বারের যুদ্ধের সময় রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যার হাতে বিজয় অর্জিত হবে। এরপর কাকে পতাকা দেয়া হবে, সেজন্য সকলেই আশা করতে লাগলেন। পরদিন সকালে প্রত্যেকেই এ আশায় অপেক্ষা করতে লাগলেন যে, হয়ত তাকে পতাকা দেয়া হবে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আলী কোথায়? তাকে জানানো হল যে, তিনি চক্ষুরোগে আক্রান্ত। তখন তিনি আলীকে ডেকে আনতে বললেন। তাকে ডেকে আনা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুখের লালা তাঁর চোখে লাগিয়ে দিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলেন যে, তাঁর কোন অসুখই ছিল না। তখন আলী রা. বললেন, আমি তাদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সোজা এগিয়ে যাও। তুমি তাদের প্রান্তরে উপস্থিত হলে প্রথমে তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান কর এবং তাদের করণীয় সম্বন্ধে তাদের অবহিত কর। আল্লাহর কসম, যদি একটি লোকও তোমার দ্বারা হিদায়াত প্রাপ্ত হয়, তবে তা তোমার জন্য লাল রংয়ের উটের চাইতেও শ্রেয়।

হাদীস নং ২৭৪১

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কাওমের বিরুদ্ধে গেলে সকাল না হওয়া পর্যন্ত এক্রমণ করতেন না। যদি আযান শুনতে পেতেন, তাহলে আক্রমণ থেকে বিরত থাকতেন। আর যদি আযান শুনতে না পেতেন, তাহলে সকাল হওয়ার সাথে সাথে আক্রমণ করতেন। আমরা খায়বারে রাত্রিকালে পৌঁছলাম।

হাদীস নং ২৭৪২

কুতইবা ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে রাতে সেখানে পৌঁছলেন। তিনি জিহাদের উদেশ্যে রাত্রিকালে কোন জনপদে গেলে সকাল না হওয়া পর্যন্ত তাদের উপর আক্রমণ করেন না। যখন সকাল হল ইয়াহুদীরা কোদাল ও ঝুড়ি নিয়ে বের হল এবং রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেল, তখন তারা বলে উঠল, মুহাম্মদ, আল্লাহ কসম! মুহাম্মদ তাঁর পুরো সেনাবাহিনী নিয়ে উপস্থিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আল্লাহ আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করেন এবং বললেন, খায়বার ধ্বংস হল, নিশ্চয়ই আমরা যখন কোন জনপদের আঙ্গিনায় উপস্থিত হই, তখন সতর্ককৃতদের সকাল কত মন্দ।

হাদীস নং ২৭৪৩

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত লোকদের সাথে লড়াইয়ের আদেশ হয়েছে, যতক্ষণ না তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে আর যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলবে সে তার জান ও মাল আমার হাত থেকে হিফাজত করে নিল। অবশ্য ইসলামের বিধান আলাদা, আর তার (প্রকৃত) হিসাব আল্লাহর উপর ন্যস্ত।

হাদীস নং ২৭৪৪

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে কাব ইবনে মালিক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি ছিলেন কাবের পুত্রদের মধ্যে পথপ্রদর্শক, তিনি বলেন, আমি কাব ইবনে মালিক রা. থেকে শুনেছি, যখন তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পেছনে থেকে গিয়েছিলেন। রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোথাও যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি অন্য দিকে দৃষ্টি আকৃষ্ট করে তা গোপন রাখতেন।

হাদীস নং ২৭৪৫

আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….কাব ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অধিকাংশ সময় রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন নির্দিষ্ট জায়গায় যুদ্ধের ইচ্ছা করলে অন্য দিকে দৃষ্টি আকৃষ্ট করে তা গোপন রাখতেন কিন্তু যখন তাবুক যুদ্ধ এল, যে যুদ্ধে রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা দিলেন, প্রচণ্ড গরম এবং সম্মুখীন হলেন দীর্ঘ সফরের ও মরুময় পথের আর অধিক সংখ্যক সৈন্যের মোকাবিলায় অগ্রসর হলেন। তাই তিনি মুসলমানদের সামনে বিষয়টি প্রকাশ করলেন, যাতে তারা শত্রুর মোকাবিলার উপযোগী প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে এবং যুদ্ধের লক্ষ্যস্থল সবাইকে জানিয়ে দিলেন। আর ইউনুস রহ. যুহরী রহ. সূত্রে কাব ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন সফরে যাবার ইচ্ছা করতেন তখন বেশীর ভাগ সময় বৃহস্পতিবারেই রওয়ানা করতেন।

হাদীস নং ২৭৪৬

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….কাব ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের যুদ্ধে বৃহস্পতিবার বের হন আর বৃহস্পতিবার রওয়ানা হওয়াই তিনি পছন্দ করতেন।

হাদীস নং ২৭৪৭

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাতে যুহরের সালাত চার রাকআত আদায় করেন এবং যুল-হুলাইফাতে পৌঁছে দু’রাকআত আসরেরর সালাত আদায় করেন। আমি তাদের হজ্জ ও উমরা উভয়টির তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি।

হাদীস নং ২৭৪৮

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যুল-কাদার পাঁচ রাত থাকতে রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে রওয়ানা হলাম। হজ্জ আদায় ব্যতীত আমাদের আর কোন উদেশ্যে ছিল না । মক্কার নিকটবর্তী হলে রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আদেশ দিলেন যাদের নিকট কুরবানীর জন্তু নেই, তারা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা মারওয়ার সাঈ কররার পর ইহরাম খুলে ফেলবে। আয়িশা রা. বলেন, কুরবানীর দিন আমাদের নিকট গুরুর গোশত পৌঁছানো হল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এগুলো কিসের ? বলা হল, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধমিণীগণের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় করেছেন। ইয়াহইয়া রহ. বলেন, আমি হাদীসটি কাসেম ইবনে মুহাম্মদ রহ.-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! বর্ণনাকরিণী এ হাদীসটি আপনার নিকট যথাযথ বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২৭৪৯

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে সফরে বের হন এবং সিয়াম পালন করেন। যখন তিনি কাদীদ নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন সিয়াম ছেড়ে দেন। সুফিয়ান রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, এটা যুহরী রহ.-এর উক্তি এবং রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ কার্যই গ্রহণযোগ্য।

হাদীস নং ২৭৫০

মুসাদ্দাদ এবং মুহাম্মদ ইবনে সাব্বাহ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাপ কার্যের আদেশ না করা পর্যন্ত ইমামের কথা শোনা ও তার আদেশ মান্য করা অপরিহার্য। তবে পাপ কার্যের আদেশ করা হলে তা শোনা ও আনুগত্য করা যাবে না।

হাদীস নং ২৭৫১

আবুল ইয়ামান রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আমরা সর্বশেষে আগমনকারী (পৃথিবীতে) সর্বাগ্রে প্রবেশকারী (জান্নাতে)। আর এ সনদেই বর্ণিত হয়েছে যে, (রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন) যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলারই নাফরমানী করল আর যে ব্যক্তি (শরীআত স্বীকৃত) আমীরের আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আমারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমীরের নাফরমানী করল সে ব্যক্তি আমারই নাফরমানী করল। ইমাম তো ঢাল স্বরূপ। তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ এবং তাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন করা হয়। অনন্তর যদি সে আল্লাহর তাকওয়ার নির্দেশ দেয় এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে, তবে তার জন্য এর প্রতিদান রয়েছে আর যদি সে এর বিপরীত করে তবে এর মন্দ পরিণতি তার উপরই বর্তাবে।

হাদীস নং ২৭৫২

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন হুদায়বিয়া সন্ধির পরবর্তী বছর প্রত্যাবর্তন করলাম, তখন আমাদের মধ্য হতে দু’জন লোকও যে বৃক্ষের নীচে আমরা বায়আত করেছিলাম সেটি চিহ্নিত করার ব্যাপরে একমত হতে সক্ষম হয়নি। তা ছিল আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে রহমত স্বরূপ। বর্ণনাকারী বলেন, আমি নাফি রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তাদের নিকট হতে কিসের বায়আত গ্রহণ করা হয়েছিল? তা কি মৃত্যুর উপর ? তিনি বললেন, না, বরং রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট হতে অটল থাকার উপর বায়আত গ্রহণ করেছিলেন।

হাদীস নং ২৭৫৩

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাররা নামক যুদ্ধের সময়ে তাঁর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, ইবনে হানযালা রা. মানুষের নিকট থেকে মৃত্যুর উপর বায়আত গ্রহণ করছেন। তিনি বললেন, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর আমি তো কারো নিকট এরূপ বায়আত করব না।

হাদীস নং ২৭৫৪

মাক্কী ইবনে ইরবাহীম রহ……….সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বায়আত করলাম। তারপর আমি একটি বৃক্ষের ছায়াতলে গেলাম। মানুষের ভীড় কমে গেলে, (তাঁর নিকট উপস্থিত হলে) রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ইবনে আকওয়া! তুমি কি বায়আত করবে না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো বায়আত করেছি। রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আরেকবার হোক না। তখন আমি দ্বিতীয়বার রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বায়আত করলাম। (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু মুসলিম! সেদিন তোমরা কোন্ বিষয়ের উপর বায়আত করেছিলে? তিনি বললেন, মৃত্যুর উপর।

হাদীস নং ২৭৫৫

হাফস ইবনে উমর রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারগণ খন্দকের যুদ্ধের দিন আবৃত্তি করছিলেন: “আমরাই হচ্ছি সে সকল লোক, যারা রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হস্তে জিহাদ করার উপর বায়আত গ্রহণ করেছি, যতদিন আমরা বেচে থাকব”। রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তদুত্তরে ইরশাদ করেন, হে আল্লাহ ! আখিরাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ হচ্ছে প্রকৃত সুখ; সুতরাং আপনি আনসার ও মুহাজিরদেরকে সম্মানিত করুন।

হাদীস নং ২৭৬৫

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….ইয়ালা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহন করি। আমি একটি জওয়ান উট (জিহাদে) আরোহণের জন্য (জনৈক ব্যক্তিকে) দেই। আমার সঙ্গে এটিই ছিল আমার অধিক নির্ভরযোগ্য কাজ। আমি এক ব্যক্তিকে মজুরীর বিনিময়ে নিয়োগ করলাম। তখন সে এক ব্যক্তির সহিত ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, একজন অপরজনের হাত কামড়িয়ে ধরে সে তার হাত কামড়দাতার মুখ হতে সজোরে বের করে আনে। ফলে তার সামনের দাত উপড়ে আসে। উক্ত ব্যক্তি রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হল। তখন রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাতের কোন প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যবস্থা করেননি। আর তিনি বললেন, সে কি তার হাতটিকে তোমার মুখে রেখে দিবে, আমি তুমি তাকে উটের ন্যায় কামড়াতে থাকবে।

হাদীস নং ২৭৫৭

উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ……….আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আজ আমার নিকট জনৈক ব্যক্তি আগমন করে। সে আমাকে একটি বিষয়ে প্রশ্ন করে, যার উত্তর কি দিব, তা আমার বুঝে আসছিল না। লোকটি বলল, বলুন তো, এক ব্যক্তি সশস্ত্র অবস্থায় সন্তুষ্টচিত্তে আমাদের আমীরের সঙ্গে যুদ্ধে বের হল। কিন্তু সেই আমীর এমন সব নির্দেশ দেন যা পালন করা সম্ভব নয়। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি বুঝতে পারছি না যে, তোমাদের এ প্রশ্নের কি উত্তর দিব? হ্যাঁ, তবে এতটুক বলতে পারি যে, আমরা রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি সাধারণত আমাদেরকে কোন বিষয়ে কঠোর নির্দেশ দিতেন না। কিন্তু একবার মাত্র এরূপ নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমরা তা পালন করেছিলাম। আর তোমাদের যে কেউ ততক্ষণ ভাল থাকবে, যতক্ষণ সে আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করতে থাকবে। আর যখন সে কোন বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়বে, তখন সে এমন ব্যক্তির নিকট প্রশ্ন করে নিবে, যে তাকে সন্দেহ মুক্ত করে দেবে। আর সে যুগ অত্যাসন্ন যে, তোমরা এমন লোক পাবে না। শপথ সেই সত্তার যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। দুনিয়ায় যা অবশিষ্ট রয়েছে, তার উদাহরণ এরূপ যেমন একটি পুকুরের মধ্যে পানি সঞ্চিত হয়েছে। এর স্বচ্ছ পানি তো পান করা হয়েছে, আর নীচের ঘোলা পানি অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছে।

হাদীস নং ২৭৫৮

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………উমর ইবনে উবাইদুল্লাহর আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবু নাযর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. তার মনিবের নিকট পত্র লিখেন যা আমি পাঠ করলাম, তাঁতে ছিল যে, শত্রুদের সাথে কোন এক মুখোমুখি যুদ্ধে রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। এরপর তিনি তাঁর সাহাবীদের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন : হে লোক সকল! শত্রুর সাথে মোকাবেলায় অবর্তীর্ণ হওয়ার কামনা করবে না এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট নিরাপত্তার দু’আ করবে। তারপর যখন তোমরা শত্রুর সম্মুখীন হবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারীর ছায়াতলে অবস্থিত। তারপর রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেন, হে আল্লাহ ! কুরআন অবতীর্ণ কারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, সৈন্যদলকে পরাজয় দানকারী, আপনি কাফির সম্প্রদায়কে পরাজিত করুন এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।

হাদীস নং ২৭৫৯

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিন বলেন, আমি রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে অংশগ্রহন করি। তিনি বলেন, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ পরে এসে আমার সঙ্গে মিলিত হন; আমি তখন আমার পানি সেচের উটনীর উপর আরোহী ছিলাম। উটনী ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল ; এটি মোটেই চলতে পারছিল না। রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার উটের কি হয়েছে? আমি বললাম, ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তখন রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটনীটির পেছন দিক থেকে গিয়ে উটনীটিকে হাঁকালেন এবং এটির জন্য দু’আ করলেন। এরপর এটি সবকটি উটের আগে আগে চলতে থাকে। রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এখন তোমার উটনীটির কিরূপ মনে হচ্ছে? আমি বললাম, ভালই। এটি আপনার বরকত লাভ করেছে। রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এটি আমার নিকট বিক্রয় করবে? তিনি বলেন, আমি মনে মনে লজ্জাবোধ করলাম। (কারণ) আমার নিকট এ উটটি ব্যতীত পানি বহনকারী অন্য কোন উটনী ছিলনা। আমি বললাম, হ্যাঁ। রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে আমার নিকট বিক্রয় কর। অনন্তর আমি উটনীটি তাঁর নিকট এ শর্তে বিক্রয় করলাম যে, মদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত এর উপর আরোহণ করব। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি সদ্য বিবাহিত একজন পুরুষ। তারপর আমি তাঁর নিকট অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি লোকদের আগে আগে চললাম এবং মদীনায় পৌঁছে গেলাম। তখন আমার মামা আমার সঙ্গে সাক্ষাত করলেন। তিনি আমাকে উটনী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আম তাকে সে বিষয়ে অবহিত করলাম যা আমি করেছিলাম। তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন। তিনি (রাবী) বলেন, আর যখন আমি রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি চাইলাম, তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি কি কুমারী বিবাহ করেছ, না এমন মহিলাকে করেছ যার পূর্বে বিবাহ হয়েছিল? আমি বললাম, এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি যার পূর্বে বিবাহ হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি কুমারী বিবাহ করলে না কেন? তুমি তার সঙ্গে খেলাধুলা করতে এবং সেও তোমার সঙ্গে খেলাধুলা করত। আমি বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা শহীদ হয়েছেন। আমার কয়েকজন ছোট ছোট বোন রয়েছে। তাই আমি তাদের সমবয়সের কোন মেয়ে বিবাহ করা পছন্দ করিনি; যে তাদেরকে আদব-আখলাক শিক্ষা দিতে পারবে না এবং তাদের দেখাশোনা করতে পারবে না। তাই আমি একজন পূর্বে বিবাহ হয়েছে এমন মহিলাকে বিবাহ করেছ; যাতে সে তাদের দেখাশোনা করতে পারে এবং তাদেরকে আদব-কায়দা শিক্ষা দিতে পারে। তিনি বলেন, যখন রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসেন, পরদিন আমি তাঁর নিকট উটনীটি নিয়ে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে এর মূল্য দিলেন এবং উটটিও ফেরত দিলেন। মুগীরা রা. বলেন, আমাদের বিবেচনায় এটি উত্তম। আমরা এত কোন দোষ মনে করি না।

হাদীস নং ২৭৬০

মুসাদ্দাদ রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবর মদীনায় ভীতির সঞ্চার হল। তখন রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু তালহা রা.-এর ঘোড়ায় আরোহণ করেন এবং বলেন যে, আমি তো ভয়ের কিছু দেখতে পেলাম না। তবে আমি এ ঘোড়াটিকে দ্রুতগামী পেয়েছি।

হাদীস নং ২৭৬১

ফাযল ইবনে সাহল রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সময় লোকেরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েছিল। তখন রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু তালহা রা.-এর মন্থরগতি সম্পন্ন একটি ঘোড়ার উপর আরোহণ করেন এবং ঘোড়াটি হাঁকিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। লোকেরা তখন তাঁর পিছু পিছু ঘোড়ায় চড়ে ছুটে চলল। (ফিরে এসে) রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিছুই না, তোমরা ভয় করো না। এ ঘোড়াটি তো দ্রুতগামী। বর্ণনাকারী বলেন, সেদিন হতে আর কখনো সে ঘোড়াটি কারো পেছনে পড়েনি।

হাদীস নং ২৭৬২

হুমায়দী রহ……….উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাহে একটি অশ্ব আরোহণের জন্য দান করেছিলাম। তারপর আমি তা বিক্রয় হতে দেখতে পাই। আমি রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি তা ক্রয় করে নিব? রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তুমি তা ক্রয় করো না এবং তোমার (প্রদত্ত) সাদকা ফেরত নিও না।

হাদীস নং ২৭৬৩

ইসমাঈল রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, উমর ইবনে খাত্তাব রা. জনৈক অশ্বারোহীকে আল্লাহর রাহে একটি অশ্ব দান করেন। এরপর তিনি দেখতে পান যে, তা বিক্রয় করা হচ্ছে। তখন তিনি তা ক্রয় করার ইচ্ছা করলেন এবং রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তিনি (রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তা ক্রয় করো না এবং তোমার প্রদত্ত সাদকা ফেরত নিও না।

হাদীস নং ২৭৬৪

মুসাদ্দাদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তবে আমি কোন সেনা অভিযান থেকে পিছিয়ে থাকতাম না। কিন্তু আমি তো (সকলের জন্য) সাওয়ারী সংগ্রহ করতে পারছি না এবং আমি এতগুলো সাওয়ারী পাচ্ছি না যার উপর আমি তাদের আরোহণ করাতে পারি। আর আমার জন্য এটা কষ্টদায়ক হবে যে, তারা আমার থেকে পেছনে পড়ে থাকবে । আমি তো এটাই কামনা করি যে, আমি আল্লাহর রাহে জিহাদ করব এবং শহীদ হয়ে যাব, এরপর আমাকে পুনরায় জীবিত করা হবে এবং আমি পুনরায় শহীদ হব। এরপর আমাকে পুনরায় জীবিত করা হবে।

হাদীস নং ২৭৬৫

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….ইয়ালা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহন করি। আমি একটি জওয়ান উট (জিহাদে) আরোহণের জন্য (জনৈক ব্যক্তিকে) দেই। আমার সঙ্গে এটিই ছিল আমার অধিক নির্ভরযোগ্য কাজ। আমি এক ব্যক্তিকে মজুরীর বিনিময়ে নিয়োগ করলাম। তখন সে এক ব্যক্তির সহিত ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, একজন অপরজনের হাত কামড়িয়ে ধরে সে তার হাত কামড়দাতার মুখ হতে সজোরে বের করে আনে। ফলে তার সামনের দাত উপড়ে আসে। উক্ত ব্যক্তি রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হল। তখন রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাতের কোন প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যবস্থা করেননি। আর তিনি বললেন, সে কি তার হাতটিকে তোমার মুখে রেখে দিবে, আমি তুমি তাকে উটের ন্যায় কামড়াতে থাকবে।

হাদীস নং ২৭৬৬

সাঈদ ইবনে আবু মারিয়ম রহ……..কায়েস ইবনে সাদ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, আর তিনি ছিলেন রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পতাকা বহনকারী, তিনি হজ্জের সংকল্প করেন, তখন তিনি মাথার চুল আঁচড়িয়ে নিলেন।

হাদীস নং ২৭৬৭

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..সালামা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে আলী রা. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পেছনে থেকে যান, (কারণ) তাঁর চোখে অসুখ হয়েছিল। তখন তিনি বললেন, আমি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পিছিয়ে থাকব? এরপর আলী রা. বেরিয়ে পড়লেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এসে মিলিত হলেন। যখন সে রাত এল, যে রাত শেষে সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার জয় করেছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগমীকাল আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা অর্পণ করব, কিংবা (বলেন) আগমীকাল এমন এক ব্যক্তি পতাকা গ্রহণ করবে যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালবাসেন। অথবা তিনি বলেছিলেন, যে আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসে। আল্লাহ তা’আলা তারই হাতে খায়বার বিজয় দান করবেন। হঠাৎ আমরা দেখতে পেলাম যে, আলী রা. এসে উপস্থিত, অথচ আমরা তাঁর আগমন প্রত্যশা করিনি। তারা বললেন, এই যে আলী রা. এসে গিয়েছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পতাকা অর্পণ করলেন। আর আল্লাহ তা’আলা তারই হাতে খায়বারের বিজয় দান করলেন।

হাদীস নং ২৭৬৮

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি যুবাইর রা.কে বলেছিলেন, এখানেই কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে পতাকা পুঁতে রাখতে আদেশ করেছিলেন?

হাদীস নং ২৭৬৯

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমি প্রেরিত হয়েছি এবং শত্রুর মনে ভীতির সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, এমতাবস্থায় পৃথিবীর ধনভাণ্ডার সমূহের চাবি আমার হাতে অর্পণ করা হয়। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো চলে গেছেন আর তোমরা তা বের করছ।

হাদীস নং ২৭৭০

আবুল ইয়ামান রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তাকে আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, (রোম সম্রাট) হিরাকল আমাকে ডেকে পাঠান। তখন তিনি ইলিয়া (বর্তমান ফিলিস্তিন) নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তারপর সম্রাট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পত্রখানি আনতে আদেশ করেন, যখন পত্র পাঠ সমাপ্ত হল, তখন বেশ হৈ চৈ ও শোরগোল পড়ে গেল। এরপর আমাদেরকে (দরবার হতে) বাইরে নিয়ে আসা হল। তখন আমি আমার সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে করে বললাম, যখন আমরা বহিষ্কৃত হচ্ছিলাম, আবু কাবশার পুত্রের বিষয়ের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেল। রোমের বাদশাও তাকে ভয় করে।

হাদীস নং ২৭৭১

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ……….আসমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু বকর রা.-এর গৃহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাথেয় গুছিয়ে দিয়েছিলাম, যখন তিনি মদীনায় হিজরত করার সংকল্প করেছিলেন। আসমা রা. বলেন, আমি তখন মালপত্র কিংবা পানির মশক বাঁধার জন্য কিছুই পাচ্ছিলাম না। তখন আবু বকর রা.-কে বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি আমার কোমর বন্ধনী ব্যতীত বাঁধার কিছুই পাচ্ছি না। আবু বকর রা. বললেন, একে দ্বিখণ্ডিত কর। এক খণ্ড দ্বারা মশক এবং অপর খণ্ড দ্বারা মালপত্র বেধে দাও। আমি তাই করলাম। এজন্যই আমাকে বলা হত দু’ কোমর বন্ধনীর অধিকারিণী।

 

হাদীস নং ২৭৭২

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগের কুরবানীর গোশত মদীনা পর্যন্ত পাথেয় রূপে গ্রহণ করতাম।

হাদীস নং ২৭৭৩

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……….সুয়াইদ ইবনে নুমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, খায়বার যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে তিনি জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা যখন খায়বারের উপকণ্ঠে অবস্থিত খাবার নিয়ে আসতে বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যবের ছাতু ব্যতীত কিছুই উপস্থিত করা হয়নি। আমরা তা পানির সাথে মিশিয়ে আহার করলাম ও পান করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাঁড়ালেন এবং কুলি করলেন, আমরাও কুলি করলাম ও সালাত আদায় করলাম।

হাদীস নং ২৭৭৪

বিশর ইবনে মারহুম রহ………..সালাম (ইবনে আকওয়া) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে লোকদের পাথেয় কমে যায় এবং তারা অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাজির হয়ে তাদের উট যবেহ করার অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনুমতি দিলেন। সে সময় উমর রা.-এর সাথে তাদের সাক্ষাত হল। তারা তাকে বিষয়টি অবহিত করল। তিনি বললেন, উট যবেহ করে তারপর তোমরা কিরূপে টিকে থাকবে? উমর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ সকল লোক উট যবেহ করে খেয়ে ফেলার পর কিরূপে বাঁচবে? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিজ নিজ অবশিষ্ট পাথেয় নিয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে ঘোষণা দাও। তারপর রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খবারের জন্য বরকতের দু’আ করলেন। তারপর তাদেরকে নিজ নিজ পাত্র নিয়ে উপস্থিত হতে আদেশ করলেন। তারা তাদের পাত্র ভরে নিতে লাগল অবশেষে সকলই নিয়ে নিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আর আমি আল্লাহর রাসূল।

হাদীস নং ২৭৭৫

সাদকা ইবনে ফাযল রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক জিহাদে বের হলাম এবং আমরা সংখ্যায় তিনশত ছিলাম। প্রত্যেকে নিজ নিজ পাথেয় নিজেদের কাঁধে বহন করছিলাম। পথে আমাদের পাথেয় নিঃশেষ হয়ে গেল। এমনকি আমরা দৈনিক একটি মাত্র খেজুর খেতে থাকলাম। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আবু আবদুল্লাহ ! একটি মাত্র খেজুর একজন লোকের কি করে যথেষ্ট হত? তিনি বললেন, যখন আমরা তাও হারালাম তখন এর হারানোটা অনুভব করলাম। অবশেষে আমরা সমুদ্র তীরে এসে উপস্থিত হলাম। হঠাৎ সমুদ্র একটি বিরাট মাছ তীরে নিক্ষেপ করল। আমরা সে মাছটি তৃপ্তি সহকারে আঠার দিন পর্যন্ত খেলাম।

হাদীস নং ২৭৭৬

আমর ইবনে আলী রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সাহাবীগণ তো হজ্জ ও উমরার সাওয়াব নিয়ে প্রত্যাবর্তন করছেন, আর আমি তো হজ্জ থেকে অতিরিক্ত কিছুই করতে পারলাম না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি যাও, আবদুর রাহমান তোমাকে তার পেছনে সাওয়ারীতে বসিয়ে নিবে। তিনি আবদুর রাহমানকে আদেশ করলেন, তাকে তানয়ীম থেকে উমরার ইহরাম করিয়ে আনতে। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উচু ভূমিতে তাঁর জন্য অপেক্ষায় থাকলেন।

হাদীস নং ২৭৭৭

আবদুল্লাহ রহ…………আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর সিদ্দীক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা রা. কে আমার পেছনে বসিয়ে তানয়ীম থেকে উমরার ইহরাম করিয়ে আনতে আমাকে আদেশ দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২৭৭৮

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু তালহা রা.-এর পেছনে একই সাওয়ারীতে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন লোকেরা হজ্জ ও উমরা পালনার্থে লাব্বাইক ধ্বনি উচ্চারণ করছিল।

হাদীস নং ২৭৭৯

কুতাইবা রহ……….উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাধার পিঠে পালান লাগিয়ে তার উপর চাদর বিছিয়ে তাঁতে আরোহণ করেন। আর উসামা-রা.কে তাঁর পেছনে বসালেন।

হাদীস নং ২৭৮০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন আপন সাওয়ারীর পিঠে নিজের পেছনে উসামা ইবনে যায়েদ রা.-কে বসিয়ে মক্কার উচু ভূমির দিক থেকে আগমন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিলাল রা. এবং চাবি সংরক্ষক উসমান ইবনে তালহা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের পার্শ্বে উটটিকে বসালেন। তারপর উসমান রা.-কে কাবা গৃহের চাবি নিয়ে আসতে আদেশ করলেন। কাবার (দ্বার) খুলে হল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিতরে প্রবেশ করলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন উসামা, বিলাল ও উসমান রা.। দিনের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করলেন। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন। এ সময়ে লোকেরা প্রবেশ করার জন্য দৌঁড়িয়ে আসল। সকলের আগে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং বিলাল রা.-কে দরজার পেছনে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন স্থানে সালাত আদায় করেছিলেন? আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমি তাকে একথা জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গিয়েছিলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকআত সালাত আদায় করেছিলেন?

হাদীস নং ২৭৮১

ইসহাক রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, প্রত্যেক দিন যাতে সূর্য উদিত হয়, তাঁতে মানুষের দেহের প্রতিটি জোড়া হতে একটি মানুষের প্রত্যেক জোড়ার প্রতি সদকা রয়েছে। প্রতি দিন যাতে সূর্য উদিত হয়। দুজন লোকের মধ্যে সুবিচার করাও সাদকা। কাউকে সাহায্য করে সাওয়ারীতে আরোহণ করিয়ে দেওয়া বা তার উপর তার মালপত্র তুলে দেওয়াও সাদকা। ভাল কথাও সাদকা। সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে পথে চলায় প্রতিটি কদমেও সাদকা। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও সাদকা।

হাদীস নং ২৭৮২

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন সঙ্গে নিয়ে শত্রুর ভূখণ্ডে সফর করতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২৭৮৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতি প্রত্যুষে খায়বার প্রান্তরে প্রবেশ করেন। সে সময় ইয়াহুদীগণ কাঁধে কোদাল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। তারা যখন তাকে দেখতে পেল, তখন বলতে লাগল, মুহাম্মদ সেনাদল সহ আগমন করেছে, মুহাম্মদ সেনাদল সহ আগমন করেছে। ফলে তারা দুর্গে ঢুকে পড়ল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় হাত তুলে বললেন, আল্লাহু আকবার, খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন সম্প্রদায়ের অঞ্চলে অবতরণ করি, তখন ভয় প্রদর্শিতদের সকাল মন্দ হয় এবং আমরা সেখানে কিছু গাধা পেয়ে গেলাম। তারপর আমরা এগুলোর (গোশত) রান্না করলাম। এর মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ হতে ঘোষণা দানকারী ঘোষণা দিল, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে গাধার গোশত (আহার করা) হতে নিষেধ করেছেন। (এতদশ্রবণে) ডেকগুলো উল্টিয়ে দেওয়া হল তাঁতে যা ছিল তা সহ। আলী রা. সুফিয়ান রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু’হাত উপরে উঠান বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ২৭৮৪

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন কোন উপত্যকায় আরোহণ করতাম, তখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এবং আকবার বলতাম। আর আমাদের আওয়াজ অতি উচু হয়ে যেত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের উপর রহম কর। কেননা, তোমরা তো বধির বা দূরবর্তী সত্তাকে ডাকছ না। বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি তো শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।

হাদীস নং ২৭৮৫

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন কোন উচু স্থানে আরোহণ করতাম, তখন আল্লাহু আকবার বলতাম আর যখন কোন উপত্যকায় অবতরণ করতাম, তখন সুবহানাল্লাহ বলতাম।

হাদীস নং ২৭৮৬

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন উঁচুস্থানে আরোহণ করতাম, তখন আল্লাহু আকবার বলতাম আর যখন কোন উপত্যকায় অবতরণ করতাম, তখন সুবহানাল্লাহ বলতাম।

হাদীস নং ২৭৮৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হজ্জ কিংবা উমরা থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন, বর্ণনাকারী বলেন, আমি জানি না, নাকি এরূপ বলেছেন যে, যখন জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন, তখন তিনি ঘাঁটি অথবা প্রস্তরময় ভূমিতে পৌঁছে তিনবার আল্লাহু আকবার বলতেন। তারপর এ দু’আ পাঠ করতেন, “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই; তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, কর্তৃত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই; তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। আমরা সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারী, গুনাহ থেকে তাওবাকারী, ইবাদত পালনকারী, সিজদাকারী, আমাদের প্রতিপালকের প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, কাফির সৈন্যদলকে তিনি একাই পরাভূত করেছেন”। সালেহ রহ. বলেন, আমি তাকে বললাম, আবদুল্লাহ কি ইনশাআল্লাহ বলেননি? তিনি বললেন, না।

হাদীস নং ২৭৮৮

মাতার ইবনে ফাযল রহ……..আবু বুরদা ইবনে আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি এবং ইয়াযিদ ইবনে আবু কাবশা রা. সফরে ছিলেন। আর ইয়াযিদ রা. মুসাফির অবস্থায় রোযা রাখতেন । আবু বুরদা রা. তাকে বললেন, আমি আবু মূসা (আশআরী) রা.-কে একাধিকবার বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন বান্দা রোগাক্রান্ত হয় কিংবা সফর করে, তখন তার জন্য তা-ই লিখিত হয়, যা সে মুকীম অবস্থায় বা সুস্থ অবস্থায় আমল করত।

হাদীস নং ২৭৮৯

হুমাইদী রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের যুদ্ধের দিন লোকদেরকে আহবান করেন। যুবাইর রা. সে আহবানে সাড়া দিলেন, পুনরায় তিনি লোকদের আহবান করলেন, আবারও যুবাইর রা. সে আহবানে সাড়া দিলেন। পুনরায় তিনি লোকদের আহবান করলেন, এবারও যুবাইর রা. সে আহবানে সাড়া দিলেন। এরূপ তিনবার বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক নবীর জন্য একজন বিশেষ মদদগার থাকে আর বিশেষ মদদগার হচ্ছে যুবাইর। সুফিয়ান রহ. বলেন, হাওয়ারী সাহায্যকারীকে বলা হয়।

হাদীস নং ২৭৯০

আবুল ওয়ালীদ ও আবু নুআইম রহ………..ইবনে উমর রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যদি লোকেরা একা সফর করতে কি অনিষ্ট রয়েছে তা জানত, যা আমি জানি, তবে কোন আরোহী রাতে একাকী ভ্রমণ করত না।

হাদীস নং ২৭৯১

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………হিশাম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা বর্ণনা করেছেন যে, উসামা ইবনে যায়েদ রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিরূপ গতিতে পথ চলেছিলেন। রাবী ইয়াহয়া রহ. বলতেন, উরওয়া রহ. বলেন, আমি শুনতে ছিলাম, তবে আমার বর্ণনায় তা বাদ পড়েছে। উসামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহজ দ্রুতগতিতে চলতেন আর যখন প্রশস্ত খালি জায়গা পেতেন, তখন দ্রুত চলতেন। নাস হচ্ছে সহজ গতির চাইতে দ্রুত গতিতে চলা।

হাদীস নং ২৭৯২

সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ………আসলাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর সঙ্গে ছিলাম। পথে তাঁর নিকট সাফিয়্যা বিনতে আবু উবাইদ রা.-এর ভীষণ অসুস্থতার সংবাদ পৌঁছে। তখন তিনি দ্রুতগতিতে চলতে থাকেন। এমনকি যখন সূর্যাস্তের পরে লালিমা অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন তিনি উট থেকে অবতরণ করে মাগরিব ও এশার সালাত একত্রে আদায় করেন। আর আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা .বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি, যখন তাঁর দ্রুত চলার প্রয়োজন হত, তখন তিনি মাগরিবকে বিলম্বিত করে মাগরিব ও এশার উভয় সালাত পরপর এক সাথে আদায় করতেন।

হাদীস নং ২৭৯৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সফর যেন আযাবের একটি অংশ। যা তোমাদেরকে নিদ্রা, আহার ও পান করা থেকে বিরত রাখে। কাজেই তোমাদের কেই যখন সফরে নিজ কাজ সম্পন্ন করে ফেলে, সে যেন তারপর নিজ পরিবার পরিজনের কাছে দ্রুত চলে আসে।

হাদীস নং ২৭৯৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনে খাত্তাব রা. আল্লাহর রাহে আরোহণের জন্য একটি ঘোড়া দান করেন। তারপর তিনি সে ঘোড়াটিকে বিক্রি হতে দেখতে পান। তিনি তা ক্রয় করে নিতে ইচ্ছা করলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তা ক্রয় কর না এবং তোমার দেওয়া সাদকা ফেরত নিও না।

হাদীস নং ২৭৯৫

ইসমাঈল রহ…………উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাহে একটি ঘোড়া দান করি। সে তা বিক্রি করতে চেয়েছিল কিংবা যার নিকট সেটা সে তাকে বিনষ্ট করার উপক্রম করেছিল। আমি ঘোড়াটি ক্রয় করতে ইচ্ছা করলাম। আর আমি ধারণা করেছিলাম যে, সে তাকে সস্তায় বিক্রি করে দিবে। আমি এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, তুমি তা ক্রয় কর না, যদিও তা একটি মাত্র দিরহামের বিনিময়ে হয়। কেননা সাদকা দান করত ফেরত গ্রহণকারী এমন কুকুরের তুল্য, যে বমি করে পুনরায় তা খায়।

হাদীস নং ২৭৯৬

আদম রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এস জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইল। তখন তিনি বললেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছেন কি ? সে বলল, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তাদের খেদমত করতে চেষ্টা কর।

হাদীস নং ২৭৯৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু বাশীর আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সফরে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন। (রাবী) আবদুল্লাহ বলেন, আমার মনে হয়, তিনি (আবু বাশীর আনসারী) বলেছেন যে, মানুষ শয্যায় ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সংবাদ বাহককে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন যে, কোন উটের গলায় যেন ধনুকের রশির মালা কিংবা মালা না থাকে, থাকলে তা যেন কেটে ফেলা হয়।

হাদীস নং ২৭৯৮

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন পুরুষ যেন অপর কোন মহিলার সাথে নির্জনে অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন মাহরাম সঙ্গী ব্যতীত সফর না করে। এব ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য আমার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জে যাবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে যাও নিজ স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।

হাদীস নং ২৭৯৯

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং যুবাইর ও মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রা.-কে পাঠিয়ে বললেন, তোমরা খাখ বাগানে যাও। সেখানে তোমরা এক মহিলাকে দেখতে পাবে। তার নিকট একটি পত্র আছে, তোমরা তার কাছ থেকে তা নিয়ে আসবে। তখন আমরা রওনা করলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদের নিয়ে দ্রুতবেগে চলছিল। অবশেষে আমরা উক্ত খাখ নামক বাগানে পৌঁছলাম এবং সেখানে আমরা মহিলাটিকে দেখতে পেলাম। আমরা বললাম, পত্র বাহির কর। সে বলল, আমার কাছে তো কোন পত্র নেই। আমরা বললাম, তুমি অবশ্যই পত্র বের করে দিবে, নচেৎ তোমার কাপড় খুলতে হবে। তখন সে তার চুলের খোপা থেকে পত্রটি বের করে দিল। আমরা তখন সে পত্রটি নিয়ে রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলাম। দেখা গেল, তা হাতিব ইবন আবু বালতাআ রা.-এর পক্ষ থেকে মক্কার কতিপয় মুশরিক ব্যক্তির নিকট লেখা হয়েছে। যাতে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন পদক্ষেপ সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে হাতিব! একি ব্যাপার? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ব্যাপারে কোন তড়িত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। মূলত আমি কুরাইশ বংশীয় লোক ছিলাম না। তবে তাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। আর যারা আপনার সঙ্গে মুহাজিরগণ রয়েছেন, তাদের সকলেরই মক্কাবাসীদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। যার কারণে তাদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ নিরাপদ। তাই আমি চেয়েছি, যেহেতু আমার বংশগতভাবে এ সম্পর্ক নেই, কাজেই আমি তাদের প্রতি এমন কিছু অনুগ্রহ প্রদর্শন করি, যদ্বারা অন্তত তারা আমার আপনজনদের রক্ষা করবে। আর আমি তো কুফরী কিংবা মুরতাদ হওয়ার উদ্দেশ্যে করিনি এবং ইসলাম গ্রহণের পর পুনঃ কুফরীতে প্রত্যাবর্তন করার প্রতি আকৃষ্ট হবার কারণেও নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাতিব তোমাদের নিকট সত্য কথা বলেছে। তখন উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। সম্ভবত তোমার হয়ত জানা নেই, আল্লাহ তাআলা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের ব্যাপারে অবহিত আছেন। তাই তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা যা ইচ্ছা আমল কর। আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি’। সুফিয়ান রহ. বলেন, এ সনদটি কতই না উত্তম।

হাদীস নং ২৮০০

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন বদর যুদ্ধের দিন কাফির বন্দীদেরকে হাযির করা হল এবং আব্বাস রা.-কেও আনা হল তখন তাঁর শরীরে পোশাক ছিলনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শরীরের জন্য উপযোগী জামা খুজতে গিয়ে দেখলেন আবদুল্লাহ ইবন উবাই এর জামা তাঁর গায়ের উপযোগী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে জামাটি তাকেই পরিয়ে দেন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ জামা খুলে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে (তার মৃত্যুর পর) পরিয়ে দিয়েছিলেন। ইবনে উয়াইনাহ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-এর একটি সৌজন্য আচরণ ছিল, তাই তিনি তার প্রতিদান দিতে চেয়েছেন।

হাদীস নং ২৮০১

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….সাহল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধের দিন বলেন, আগমীকাল আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা দিব, যার হাতে আল্লাহ তাআলা বিজয় দান করবেন। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে, আর আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল তাকে ভালবাসে। লোকেরা সারা রাত এ চিন্তায় কাটিয়ে দেয় যে, কাকে পতাকা দেওয়া হয়? পরদিন সকালে প্রত্যেকেই এ আশায় অপেক্ষা করতে লাগলেন যে, হয়ত তাকে পতাকা দেয়া হবে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আলী কোথায়? বলা হল যে, তিনি চক্ষুরোগে আক্রান্ত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুখের লালা তাঁর চোখে লাগিয়ে দিলেন এবং দু’আ করলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলেন যে, তাঁর কোন অসুখই ছিল না। তারপর তাঁর হাতে পতাকা দিলেন। আলী রা. জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তাদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে যায়। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি স্বাভাবিকভাবে অগ্রসর হয়ে তাদের আঙিনায় অবতরণ কর। তারপর তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান কর এবং তাদের করণীয় সম্বন্ধে তাদের অবহিত কর। আল্লাহর কসম, আল্লাহ তাআলা যদি তোমার মাধ্যমে এক ব্যক্তিকে হিদায়েত দান করে, তবে তা তোমার জন্য লাল রংয়ের উটের মালিক হওয়া অপেক্ষা শ্রেয়।

হাদীস নং ২৮০২

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা সে সকল লোকের উপর সন্তুষ্ট হন, যারা শৃঙ্খলে আবদ্ধ অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।

হাদীস নং ২৮০৩

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন প্রকারের ব্যক্তিকে দ্বিগুণ সাওয়াব দান করা হবে। যে ব্যক্তির একটি বাঁদী আছে, সে তাকে শিক্ষা দান করে, শিষ্টাচার শিক্ষা এবং তাকে উত্তমরূপে শিষ্টাচার শিক্ষা দান করে। তারপর তাকে আযাদ করে দিয়ে তাকে বিয়ে করে। সে ব্যক্তির জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। আর আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে মু’মিন ব্যক্তি যে তার নবীর প্রতি ঈমান এনেছিল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ঈমান এনেছে। তার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। যে গোলাম আল্লাহর হক যথাযথভাবে আদায় করে এবং স্বীয় মনীবের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে, (তার জন্যও দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে) শাবী রহ. এ হাদীসটি বর্ণনা করে সালেহকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি তোমাকে এ হাদীসটি কোন বিনিময় ছাড়াই শুনিয়েছি। অথচ এর চেয়ে সহজ হাদীস শোনার জন্য লোকেরা মদীনা পর্যন্ত সফর করতেন।

হাদীস নং ২৮০৪

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..সাব ইবনে জাসসামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবওয়া অথবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে আমার কাছে দিয়ে পথ অতিক্রম করেন। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, যে মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে, যদি রাত্রিকালীন আক্রমণে তাদের মহিলা ও শিশুগণ নিহত হয়, তবে কি হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারাও তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। আর আমি তাকে আরো বলতে শুনেছি যে, সংরক্ষিত চারণভূমি আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত আর কারো জন্য হতে পারে না।

হাদীস নং ২৮০৫

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক যুদ্ধে জনৈক মহিলাকে নিহত পাওয়া যায়, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলা ও শিশুদের হত্যা করা সম্পর্কে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

হাদীস নং ২৮০৬

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন এক যুদ্ধে জনৈক মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলা ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেন।

হাদীস নং ২৮০৭

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কোন এক অভিযানে প্রেরণ করেন এবং বলেন, তোমরা যদি অমুক ও অমুক ব্যক্তিকে পাও, তবে তাদের উভয়কে আগুনে জ্বালিয়ে দিবে। তারপর আমরা যখন বের হতে চাইলাম, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিন্তু আগুন দ্বারা শাস্তি দেওয়া আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কারও জন্য সমীচীন নয়। কাজেই তোমরা যদি তাদের উভয়কে পেয়ে যাও, তবে তাদেরকে হত্যা কর।

হাদীস নং ২৮০৮

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….ইকরামা রা. থেকে বর্ণিত, আলী রা. এক সম্প্রদায়কে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। এ সংবাদ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, যদি আমি হতাম, তবে আমি তাদেরকে জ্বালিয়ে ফেলতাম না। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আল্লাহ নির্ধারিত শাস্তি দ্বারা কাউকে শাস্তি দিবে না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দীন পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা করে ফেল।

হাদীস নং ২৮০৯

মুআল্লা ইবনে আসাদ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, উকল নামক গোত্রের আট ব্যক্তির একটি দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এল। মদীনার আবহাওয়া তারা উপযোগী মনে করেনি। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য দুগ্ধবতী উটনীর ব্যবস্থা করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা বরং সাদকার উটের পালের কাছে যাও। তখন তারা সেখানে গিয়ে সেগুলোর পেশাব ও দুধ পান করে সুস্থ এবং মোটাতাজা হয়ে গেল। তারপর তারা উটের রাখালকে হত্যা করে উটের পাল হাঁকিয়ে নিয়ে গেল এবং মুসলামান হওয়ার পর তার মুরতাদ হয়ে গেল। তখন জনৈক সংবাদদাতা রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্বারোহীদের কে তাদের সন্ধানে পাঠালেন। তখন পর্যন্ত দিনের আলো পূর্ণতা লাভ করেনি। ইতোমধ্যেই তাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হাত পা কেটে ফেললেন। তারপর তাঁর নির্দেশে লৌহশলাকা উত্তপ্ত করে তাদের চোখে প্রবেশ করানো হয় এবং তাদেরকে প্রস্তরময় উত্তপ্ত ভূমিতে ফেলে রাখা হয়। তারা পানি চেয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে পানি দেওয়া হয়নি। অবশেষে তারা মারা যায়। আবু কিলাব রা. বলেন, (তাদেরকে এরূপ শাস্তি এ জন্য দেয়া হয়েছে যে,) তারা হত্যা করেছে, চুরি করেছে, আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে (ধর্ম ত্যাগী হয়ে) যুদ্ধ করেছে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়াতে চেষ্টা করেছে।

হাদীস নং ২৮১০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, কোন একজন নবীকে একটি পিপিলিকা কামড় দেয়। তিনি পিপীলিকার সমগ্র আবাসটি জ্বালিয়ে দেয়ার আদেশ করেন এবং তা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি ওহী অবতীর্ণ করেন, তোমাকে একটি পিপিলিকা কামড় দিয়েছে আর তুমি আল্লাহর তাসবীহ পাঠকারী জাতিকে জ্বালিয়ে দিয়েছ।

হাদীস নং ২৮১১

মুসাদ্দাদ রহ……….জারীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আমাকে যিলখালাসার ব্যাপারে শান্তি দিবে না? খাশআম গোত্রে একটি মূর্তি ঘর ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা নামে আখ্যায়িত করা হত। জারীর রা. বলেন, তখন আমি আহমাসের দেড়শ অশ্বারোহীর সাথে নিয়ে রওয়ানা করলাম। তারা নিপুন অশ্বারোহী ছিল। জারীর রা. বলেন, আর আমি অশ্বের উপর স্থির থাকতে পারতাম না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলির চিহ্ন দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য এ দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! তাকে স্থির রাখুন এবং হিদায়েত প্রাপ্ত, পথ প্রদর্শনকারী করুন। তারপর জারীর রা. সেখানে গমন করেন এবং যুলখালাসা মন্দির ভেঙ্গে ফেলেন ও জ্বালিয়ে দেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ সংবাদ নিয়ে এক ব্যক্তিকে তাঁর নিকট প্রেরণ করেন। তখন জারীর রা.-এর দূত বলতে লাগল, কসম সে মহান আল্লাহ তাআলার! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনার নিকট তখনই এসেছি যখন যুলখালাসাকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। জারীর রা. বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাসের অশ্ব ও অশ্বারোহীদের জন্য পাঁচবার বরকতের দু’আ করেন।

হাদীস নং ২৮১২

মুহাম্মদ ইবন কাসীর রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাযীর ইয়াহুদীদের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২৮১৩

আলী ইবনে মুসলিম রহ………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীগণের একটি দল আবু রাফে ইয়াহুদীকে হত্যা করার জন্য প্রেরণ করেন। তাদের মধ্য থেকে একজন এগিয়ে গিয়ে ইয়াহুদীদের দুর্গে ঢুকে পড়ল। তিনি বলেন, তারপর আমি তাদের পশুর আস্তাবলে প্রবেশ করলাম। এরপর তারা দুর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। তারা তাদের একটি গাধা হারিয়ে ফেলেছিল এবং তার খোঁজে তারা বেরিয়ে পড়ে। আমিও তাদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। তাদেরক আমি বুঝতে চেয়েছিলাম যে, আমি তাদের সঙ্গে গাধার খোঁজ করছি। অবশেষে তারা গাধাটি পেল। তখন তারা দুর্গে প্রবেশ করে এবং আমিও প্রবেশ করলাম। রাতে তারা দুর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। আর তারা চাবিগুলো একটি কুলুঙ্গির মধ্যে রেখে দিল। আমি তো দেখতে পাচ্ছিলাম। যখন তারা ঘুমিয়ে পড়ল, আমি চাবিগুলো নিয়ে নিলাম এবং দুর্গের দরজা খুললাম। তারপর আমি আবু রাফের নিকট পৌঁছলাম এবং বললাম, হে আবু রাফে! সে আমার ডাকে সাড়া দিল। তখন আমি আওয়াজের প্রতি লক্ষ্য করে তরবারীর আঘাত হানলাম, অমনি সে চিৎকার দিয়ে উঠল। আমি বেরিয়ে এলাম। আমি পুনরায় প্রবেশ করলাম, যেন আমি তার সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছি। আর আমি আমার গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবু রাফে! সে বলল, তোমার কি হল, তোমার মা ধ্বংস হোক। আমি বললাম, তোমার কি অবস্থা? সে বলল, আমি জানি না, কে বা কারা আমার এখানে এসেছিল এবং আমাকে আঘাত করেছে। রাবী বলেন, তারপর আমি আমার তরবারী তার পেটের উপর রেখে সব শক্তি দিয়ে চেপে ধরলাম, ফলে তার হাঁড় পর্যন্ত কট করে উঠল। এরপর আমি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় বের হয়ে এলাম। আমি অবতরণের উদ্দেশ্যে তাদের সিড়ির কাছে এলাম। যখন আম পড়ে গেলাম, তখন এতে আমার পায়ে আঘাত লাগল। আমি আমার সাথীদের সঙ্গে এসে মিলিত হলাম। আমি তাদেরকে বললাম, আমি এখান হতে ততক্ষণ পর্যন্ত যাব না, যাবত না আমি মৃত্যুর সংবাদ প্রচারকারীণীর আওয়াজ শুনতে পাই। হিজাযবাসীদের বণিক আবু রাফের মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা না শোনা পর্যন্ত আমি সে স্থান ত্যাগ করলাম না। তিনি বলেন, তখন আমি উঠে পড়লাম এবং আমার তখন কোনরূপ ব্যথা বেদনাই অনুভব হচ্ছিল না। অবশেষে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছে এ বিষয়ে তাকে সংবাদ দিলাম।

হাদীস নং ২৮১৪

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীগণের একদলকে আবু রাফে ইয়াহুদীর নিকট প্রেরণ করেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে আতীক রা. রাত্রিকালে তার ঘরে ঢুকে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করেন।

হাদীস নং ২৮১৫

ইউসুফ ইবনে মূসা রহ………উমর ইবনে উবাইদুল্লাহ আযাদকৃত গোলাম আবুন নাযার রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর ইবনে উবাদুল্লাহর লেখক ছিলাম। তিনি বলেন, তাঁর নিকট আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. একখানা পত্র লিখেন। যখন তিনি হারুরিয়ার দিকে অভিযানে বের হন। আমি পত্রটি পাঠ করলাম–তাঁতে লেখা ছিল যে, শত্রুর সাথে কোন এক মুখোমুখি যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। এরপর তিনি তাঁর সাহাবীদের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সাথে মোকাবেলায় অবতীর্ণ হওয়ার কামনা করবে না এবং আল্লাহ তাআলার নিকট নিরাপত্তার দু’আ করবে। তারপর যখন তোমরা শত্রুর সম্মুখীন হবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারীর ছায়াতলে অবস্থিত। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেন, হে আল্লাহ, কুরআন অবতরণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, সৈন্যদলকে পরাজয় দানকারী, আপনি কাফির সম্প্রদায়কে পরাজিত করুন এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন। মূসা ইবনে উকবা রহ. বলেন, সালিম আবুন নাযার আমাকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি উমর ইবনে উবাইদুল্লাহর লেখক ছিলাম। তখন তার কাছে আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা.-এর একখানা পত্র পৌঁছল এই মর্মে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্খা করবে না। আমি আমি রহ. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্খা করবে না। আর যখন তোমরা তাদের মুখোমুখি হবে তখন ধৈর্যধারণ করবে।

হাদীস নং ২৮১৬

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. সুত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিসরা ধ্বংস হবে, তারপর আর কিসরা হবে না। আর কায়সার অবশ্যই ধ্বংস হবে, তারপর আর কায়সার হবে না। এবং এটা নিশ্চিত যে, তাদের ধনভাণ্ডার আল্লাহর রাহে বণ্টিত হবে। আর তিনি যুদ্ধকে কৌশল নামে আখ্যায়িত করেন।

হাদীস নং ২৮১৭

আবু বকর ইবনে আসরাম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধকে কৌশল নামে আখ্যায়িত করেছেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, আবু বকর হলেন বূর ইবনে আসরাম।

হাদীস নং ২৮১৮

সাদকা ইবনে ফাযল রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যুদ্ধ হল কৌশল।

হাদীস নং ২৮১৯

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেন, কে আছ যে কাব ইবনে আশরাফ-এর (হত্যার) দায়িত্ব নিবে? কেননা সে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলাম রা. বলেন, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. কাব ইবনে আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কষ্টে ফেলেছে এবং আমাদের থেকে সাদকা চাচ্ছে। বারী বলেন, তখন কাব বলল, এখন আর কী হয়েছে? তোমরা তো তার থেকে আরো অতিষ্ট হয়ে পড়বে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আমরা তাঁর অনুসরণ করেছি, এখন তাঁর পরিণতি না দেখা পর্যন্ত তাকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করা পছন্দ করি না। রাবী বলেন, মুহাম্মদ ইবনে মাসলাম রা. এভাবে তার সাথে কথা বলতে থাকেন এবং সুযোগ পেয়ে তাকে হত্যা করে ফেলেন।

হাদীস নং ২৮২০

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………জাবির রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাব ইবনে আশরাফ হত্যা করার দায়িত্ব কে নিবে? তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আপনি কি এ পছন্দ করেন যে, আমি তাকে হত্যা করি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, তবে আমাকে অনুমতি দিন, আমি যেন তাকে কিছু বলি । তিনি বললেন, আমি অনুমতি প্রদান করলাম।

হাদীস নং ২৮২১

মুসাদ্দা রহ……..বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খন্দক যুদ্ধের দিন দেখেছি, তিনি স্বয়ং মাটি বহন করেছেন। এমনকি তাঁর সমগ্র বক্ষদেশের কেশরাজিকে মাটি আবৃত করে ফেলেছে আর তাঁর শরীরে অনেক পশম ছিল। তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. রচিত কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন: “হে আল্লাহ আপনি যদি আমাদেরকে হিদায়েত না করতেন, তাহলে আমরা হিদায়েত পেতাম না। আর আমরা সাদকা করতাম না এবং সালাত আদায় করতাম না। আপনি আমাদের প্রতি প্রশান্তি অবতীর্ণ করুন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদেরকে অবিচল রাখুন। শত্রুগণ আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে, যখন তারা ফিতনা সৃষ্টির সংকল্প করেছে, আমরা তা অস্বীকার করেছি”। আর তিনি এ কবিতাগুলো আবৃত্তি কালে স্বর উঁচু করেছিলেন।

হাদীস নং ২৮২২

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নুমাইর রহ……..জারীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি তখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর কাছে প্রবেশ করতে বাধাঁ দেননি এবং যখনই তিনি আমার চেহারার দিকে তাকাতেন তখন তিনি মুচকি হাসতেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আমার অসুবিধার কথা জানালাম যে, আমি ঘোড়ার পিঠে স্থির থাকতে পারিনা। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে হাত দিয়ে আঘাত করলেন এবং এ দু’আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! তাকে (ঘোড়ার পিঠে) স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়েতকারী ও হিদায়েতপাপ্ত বানান’।

হাদীস নং ২৮২৩

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….সাহল ইবনে সাদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত, তাকে লোকেরা জিজ্ঞাসা করেছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যখন কিরূপে চিকিৎসা করা হয়েছিল? তখন সাহল রা. বলেন, এখন আর এ বিষয়ে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত কেউ অবশিষ্ট নেই । আলী রা. তাঁল ঢালে করে পানি বহন করে নিয়ে আনছিলেন, আর ফাতিমা রা. তাঁর মুখমণ্ডল হতে রক্ত ধৌত করছিলেন এবং একটি চাটাই নিয়ে পোড়ানো হয় আর তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যখমের মধ্যে পুরে দেওয়া হয়।

হাদীস নং ২৮২৪

ইয়াহইয়া রহ………..আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয ও আবু মূসা রা.-কে ইয়ামানে প্রেরণ করেন ও নির্দেশ দেন যে, লোকদের প্রতি নম্রতা করবে, কঠোরতা করবে না, তাদের সুসংবাদ দিবে, ঘৃণা সৃষ্টি করবে না। পরস্পর মতৈক্য পোষণ করবে, মতভেদ করবে না।

হাদীস নং ২৮২৫

আমর ইবনে খালিদ রহ………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহুদ যুদ্ধের দিন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-কে পঞ্চাশ জন পদাতিক যোদ্ধার উপর আমীর নিযুক্ত করেন এবং বলেন, তোমরা যদি দেখ যে, আমাদেরকে পক্ষীকূল ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে, তথাপি তোমরা আমার পক্ষ হতে সংবাদ প্রেরণ করা ব্যতীত স্বস্থান ত্যাগ করবে না। আর যদি তোমরা দেখ যে, আমরা শত্রু দলকে পরাস্ত করেছি এবং আমরা তাদেরকে পদদলিত করেছি, তখনও আমার পক্ষ হতে সংবাদ প্রেরণ করা ব্যতীত স্বস্থান ত্যাগ করবে না। অনন্তর মুসলমানগণ কাফিরদেরকে যুদ্ধে পরাস্ত করে দিল। বারা রা. বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি মুশরিকদের মহিলাদেরকে দেখতে পেলাম তারা নিজ পরিধেয় বস্ত্র উপরে উঠিয়ে পলায়ন করেছে। যাতে পায়ের অলঙ্কার ও পায়ের নলা উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-এর সহযোগীগণ বলতে লাগলেন, লোক সকল! এখন তোমরা গনীমতের মাল সংগ্রহ কর। তোমাদের সাথীরা বিজয় লাভ করেছে। আর অপেক্ষা কিসের? তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে যা বলেছিলেন, তা তোমরা ভুলে গিয়েছো? তাঁরা বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা লোকদের সাথে মিলিত হয়ে গনীমতের মাল সংগ্রহে অংশগ্রহণ করব। তারপর যখন তাঁরা স্বস্থান ত্যাগ করে নিজেদের লোকজনের নিকট পৌঁছল, তখন (কাফিরগণ কর্তৃক) তাদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয় আর তাঁরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে থাকেন। এটা সে সময় যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে পেছন থেকে ডাকছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বারজন লোক ব্যতীত অপর কেউই অবশিষ্ট ছিলনা। কাফিরগণ এ সুযোগ মুসলমানদের সত্তর জনকে বন্দী ও সত্তর জনকে নিহত করেন। এ সময় আবু সুফিয়ান তিনবার আওয়াজ দিল, লোকদের মধ্যে কি মুহাম্মদ জীবিত আছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উত্তর দিতে নিষেধ করেন। পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল–লোকদের মধ্যে কি আবু কুহাফার পুত্র (আবু বকর রা.) জীবিত আছে? পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল, লোকদের মধ্যে কি খাত্তাবের পুত্র (উমর রা.) জীবিত আছে? তারপর সে নিজ লোকদের নিকট গিয়ে বলল, এর সবাই নিহত হয়েছে। এ সময় উমর রা. ধৈর্যধারণ করতে পারলেন না। তিনি বলে উঠলেন, ওহে আল্লাহর শত্রু ! আল্লাহর শপথ! তুমি মিথ্যা বলছো। যাদের তুমি নাম উচ্চারণ করেছো তাঁরা সবাই জীবিত আছেন। তোমাদের জন্য চরম পরিণতি অবশিষ্ট রয়েছে। আবু সুফিয়ান বলল, আজ বদরের দিনের প্রতিশোধ। যুদ্ধ তো বালতির ন্যায়। তোমরা তোমাদের লোকদের মধ্যে নাক-কান কর্তিত দেখবে, আমি এর আদেশ করিনি কিন্তু তা আমি অপছন্দও করিনি। এরপর বলতে লাগল, হে হুবাল (মূর্তি) তুমি উন্নত শির হও। হে হুবাল! তুমি উন্নত শির হও। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা এর উত্তর দিবে না? তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি বলবে? তিনি বললেন, তোমরা বল, আল্লাহ তাআলাই সর্বোচচ মর্যাদাবান তিনিই মহিমান্বিত। আবু সুফিয়ান বলল, আমাদের জন্য উযযা (দেবতা) রয়েছে, তোমাদের উযযা নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা বল, আল্লাহ আমাদের সাহায্যকারী বন্ধু তোমাদের কোন সাহায্যকারী বন্ধু নেই।

হাদীস নং ২৮২৬

কুতাইবা রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাধিক সুন্দর সর্বাধিক দানশীল ও সর্বাধিক শৌর্য-বীর্যের অধিকারী ছিলেন। আনাস রা. বলেন, একবার এমন হয়েছিল যে, মদীনাবাসী রাতের বেলায় একটি আওয়াজ শুনে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু তালহা রা.-এর গদীবিহীন ঘোড়ায় আরোহণ করে তরবারী ঝুলিয়ে তাদের সম্মুখে এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ভয় পেয়ো না, তোমরা ভয় পেয়োনা । তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এ ঘোড়াটিকে দ্রুতগামী পেয়েছি।

হাদীস নং ২৮২৭

মক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ………..সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি গাবাহ নামক আমার সাথে স্থানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে বের হলাম। যখন আমি গাবাহর উঁচুস্থানে পৌঁছলাম, সেখানে আমার সাথে আবদুর রাহমান ইবনে আউফ রা.-এর গোলামের সাক্ষাত হল। আমি বললাম, আশ্চর্য‍! তোমার কি হয়েছে? সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুগ্ধবতী উটনীগুলো ছিনতাই হয়েছে। আমি বললাম, কারা ছিনতাই করেছে? সে বলল, গাতফান ও ফাযারাহ দুই গোত্রের লোকেরা। তখন আমি বিপদ, বিপদ বলে তিনবার চিৎকার দিলাম। আর মদীনার দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে যত লোক ছিল সকলকে আওয়ায শুনিয়ে দিলাম। এরপর আমি দ্রুত ছুটে গিয়ে ছিনতাইকারীদের পেয়ে গেলাম। তারা উটনীগুলোকে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম। আর তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম। আর বলতে লাগলাম, আমি আকওয়াযের পুত্র (সালামা) আর আজ কমিনাদের ধ্বংসের দিন। আমি তাদের থেকে উটগুলো ছিনিয়ে নিলাম, তখনও তারা পানি পান করতে পারেনি। আর আমি সেগুলোকে হাঁকিয়ে নিয়ে আসছিলাম। এ সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমার সাক্ষাত হয়, তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! লোকগুলো পিপাসার্ত। আমি এত দ্রুততার সাথে কাজ সেরেছি যে, তারা পানি পান করার অবকাশ পায়নি। শীঘ্র তাদের পেছনে সৈন্য পাঠিয়ে দিন। তখন তিনি বললেন, হে ইবনে আকওয়া! তুমি তাদের উপর জয়ী হয়েছ, এখন তাদের ব্যাপারে ছাড়। তারা তাদের গোত্রের নিকট পৌঁছে গেছে, তথায় তাদের আতিথেয়তা হচ্ছে।

হাদীস নং ২৮২৮

উবাইদুল্লাহ রহ……….আবু ইসহাক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বারা ইবনে আযিব রা.-কে জিজ্ঞাসা করল এবং বলল, হে আবু উমারাহ! আপনারা কি হুনাইনের যুদ্ধে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিলেন? বারা রা. বললেন, (আবু ইসহাক রহ. বলেন) আর আমি তা শুনছিলাম, সেদিন তো রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেননি। আবু সুফিয়ান ইবনে হারিস রা. তাঁর খচ্চরের লাগাম ধরেছিলেন। যখন মুশরিকগণ তাকে ঘিরে ফেলল, তখন তিনি অবতরণ করলেন এবং বলতে লাগলেন, আমি আল্লাহর নবী, মিথ্যা নয়। আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। তিনি (বারা) রা. বলেন, সেদিন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা সুদৃঢ় আর কাউকে দেখা যায়নি।

হাদীস নং ২৮২৯

সুলাইমান ইবনে হারব রহ…………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরায়যার ইয়াহুদীরা সাদ ইবনে মুআয রা.-এর মিমাংসায় দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে পাঠান। আর তিনি তখন ঘটনাস্থলের নিকটেই ছিলেন। তখন সাদ রা. একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি নিকটবর্তী হলেন, তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তোমাদের নেতার প্রতি দণ্ডায়মান হও। তিনি এসে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসলেন। তখন তাকে বললেন, এরা তোমরা মীমাংসায় সম্মত হয়েছে। (কাজেই তুমিই তাদের ব্যাপারে ফয়সালা কর) সাদ রা. বলেন, আমি এই রায় ঘোষণা করছি যে, তাদের মধ্য থেকে যুদ্ধ করতে সক্ষমদেরকে হত্যা করা হবে এবং মহিলা ও শিশুদের বন্দী করা হবে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলার ফয়সালার অনুরূপ ফয়সালাই করেছে।

হাদীস নং ২৮৩০

ইসমাঈল রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথায় শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় প্রবেশ করেন। যখন তিনি তা খুলে ফেললেন, এক ব্যক্তি এসে বলল, ইবনে খাতাল কাবার পর্দা ধরে জড়িয়ে আছে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাকে হত্যা কর।

হাদীস নং ২৮৩১

আবুল ইয়ামান রহ……….আমর ইবনে আবু সুফিয়ান রা. বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ ব্যক্তিকে গোয়েন্দা হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করেন এবং আসিম বিনে সাবিত আনসারীকে তাদের দলপতি নিযুক্ত করেন। যিনি আসিম ইবনে উমর ইবনে খাত্তাবের মাতামহ ছিলেন। তাঁরা রওয়ানা হয়ে গেলেন, যখন তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী হাদআত নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন হুযায়েল গোত্রের একটি প্রশাখা যাদেরকে লেহইয়ান বলা হয় তাদের কাছে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। তারা প্রায় দুশত তীরন্দাজ ব্যক্তিকে তাদের পশ্চাদ্বাবনে প্রেরণ করে। এরা তাদের চিহ্ন অনুসরণ করে চলতে থাকে। সাহাবীগণ মদীনা থেকে সাথে নিয়ে আসা খেজুর যেখানে বসে খেয়েছিলেন, অবশেষে এরা সে স্থানে সন্ধান পেয়ে গেল, তখন এরা বলল, ইয়াসরিবের খেজুর। তখন তাঁরা একটি উঁচু স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। আর কাফিরগণ তাদের ঘিরে ফেলল এবং তাদেরকে বলতে লাগল, তোমরা অবতরণ কর ও স্বেচ্ছায় বন্দিত্ব বরণ কর। আমরা তোমাদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে আমরা হত্যা করব না। তখন গোয়েন্দা দলের নেতা আসিম ইবনে সাবিত রা. বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তো আজ কাফিদের নিরাপত্তায় অবতরণ করবো না। হে আল্লাহ! আমাদের পক্ষ থেকে আপনার নবীকে সংবাদ পৌঁছিয়ে দিন। অবশেষে কাফিরগণ তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করল। আর তারা আসিম রা. সহ সাত জনকে শহীদ করল। এরপর অবশিষ্ট তিন জন খুবাইব আনসারী, যায়েদ ইবনে দাসিনা রা. ও অপর একজন তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর নির্ভর করে তাদের নিকট অবতরণ করলেন। যখন কাফিররা তাদেরকে আয়ত্বে নিয়ে নিল, তখন তারা তাদের ধনুকের রশি খুলে ফেলে (সেই রশি দিয়ে) তাদের বেঁধে ফেলল। তখন তৃতীয় জন বলে উঠলেন, সূচনাতেই বিশ্বাসঘাতকা! আমি তোমাদের সাথে যাব না, আমি তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করব, যারা শাহাদাত বরণ করেছেন। কাফিরগণ তাকে তাদের সঙ্গে টেনে নিয়ে চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি যেতে অস্বীকার করেন। তখন তারা তাকে শহীদ করে ফেলে এবং তারা খুবাইব ও ইবনে দাসিনাকে নিয়ে চলে যায়। অবশেষে তাদের উভয়কে মক্কায় বিক্রয় করে ফেলে। এ বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব রা. হারিস ইবনে আমিরকে হত্যা করেছিলেন। খুবাইব রা. কিছু দিন তাদের নিকট বন্দী থাকেন। ইবনে শিহাব রহ. বলেন, আমাকে উবায়দুল্লাহ ইবনে আয়ায অবহিত করেছেন, তাকে হারিসের কন্যা জানিয়েছে যে, যখন হারিসের পুত্রগণ খুবাইব রা.-কে শহীদ করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিল, তখন তিনি তার নিকট থেকে ক্ষৌর কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে একটা ক্ষুর ধার চাইলেন। তখন হারিসের কন্যা তাকে একখানা ক্ষুর ধার দিল। সে (সে বলেছে) সে সময় ঘটনাক্রমে আমার এক ছেলে আমার অজ্ঞাতে খুবাইবের নিকট চলে যায় এবং আমি দেখলাম যে, আমার ছেলে খুবাইবের উরুর উপর বসে রয়েছে এবং খুবাইবের হাতে রয়েছে ক্ষুর। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। খবাইব আমার চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন যে, আমি ভয় পাচ্ছি। তখন তিনি বললেন, তুমি কি এ ভয় করো যে, আমি এ শিশুটিকে হত্যা করে ফেলব? কখনো আমি তা করব না। (হারিসের কন্যা বলল) আল্লাহর কসম! আমি খুবাইবের ন্যায় উত্তম বন্দী কখনো দেখিনি। আল্লাহর শপথ! আমি একদিন দেখলাম, তিনি লোহার শিকলে আবদ্ধ অবস্থায় আঙ্গুর ছড়া থেকে খাচ্ছেন, যা তাঁর হাতেই ছিল। অথচ এসময় মক্কায় কোন ফলই পাওয়া যাচ্ছিল না। হারিসের কন্যা বলত, এ তো ছিল আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে প্রদত্ত জীবিকা, যা তিনি খুবাইবকে দান করেছেন। এরপর তারা খুবাইবকে শহীদ করার উদ্দেশ্যে হেরেম থেকে হিল্লের দিকে নিয়ে বের হয়ে পড়ল, তখন খুবাইব রা. তাদের বললেন, আমাকে দু’রাকআত সালাত আদায় করতে দাও। তারা তাকে সে অনুমতি দান করল। তিনি দু’রাকআত সালাত আদায় করে নিলেন। তারপর তিনি বললেন, তোমরা যদি ধারণা না করতে যে, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছি তবে আমি সালাতকে দীর্ঘয়িত করতাম। হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে ধ্বংস করুন। তারপর তিনি এ কবিতা দুটি আবৃত্তি করলেন: “যখন আমি মুসলিম হিসাবে শহীদ হচ্ছি তখন আমি কোনরূপ ভয় করি না। আল্লাহর উদ্দেশ্যে আমাকে যেখানেই মাটিতে লুটিয়ে ফেলা হোক না কেন, (তাতে আমার কিছু যায় আসেনা) আমার এ মৃত্যু আল্লাহ তা’আলার জন্যই হচ্ছে। তিনি যদি ইচ্ছা করেন, তবে আমার দেহের প্রতিটি খণ্ডিত জোড়াসমূহে বরকত সৃষ্টি করে দিবেন”। অবশেষে হারিসের পুত্র তাকে শহীদ করে ফেলে। বন্তুত যে মুসলিম ব্যক্তিকে বন্দী অবস্থায় শহীদ করা হয় তার জন্য দু’রাকআত সালাত আদায়ের এ রীতি খুবাইব রা.-ই প্রবর্তন করে গেছেন। যে দিন আসিম রা. শাহাদাত বরণ করেছিলেন, সেদিন আল্লাহ তা’আলা তাঁর দু’আ কবুল করেছিলেন। সেদিনই রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাগণকে তাদের সংবাদ ও তাদের উপর যা যা আপতিত হয়েছিল সবই অবহিত করেছিলেন। আর যখন কুরাইশ কাফিরদেরকে এ সংবাদ পৌঁছানো হয় যে, আসিম রা.-কে শহীদ করা হয়েছে তখন তারা তাঁর নিকট এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করে, যাতে সে ব্যক্তি তাঁর মরদেহ থেকে কিছু অংশ কেটে নিযে আসে। যেন তারা তা দেখে চিনতে পারে। কারণ, বদর যুদ্ধের দিন আসমি রা. কুরাইশদের জনৈক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন। আসিমের মরদেহের (হেফাজতের জন্য) মৌমাছির ঝাঁক প্রেরিত হল (এই মৌমাছিরা) তাঁর দেহ আবৃত করে রেখে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করল। ফলে তারা তাঁর দেহ হতে কোন এক টুকরা গোশত কেটে নিতে সক্ষম হয়নি।

হাদীস নং ২৮৩২

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা বন্দীকে মুক্ত কর, ক্ষুধার্তকে আহার দান কর এবং রোগীর সেবা-শুশ্রূষা কর।

হাদীস নং ২৮৩৩

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………..আবু জুহাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আলী রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর কুরআনে যা কিছু আছে তা ছাড়া আপনাদের নিকট ওহীর কোন কিছু আছে কি? তিনি বললেন, না, সে আল্লাহ তা’আলার কসম! যিনি শস্যদানাকে বিদীর্ণ করেন এবং প্রাণী সৃষ্টি করেন। আল্লাহর কুরআন সম্পর্কে মানুষকে যে জ্ঞান দান করেছেন এবং সহীফার মধ্যে যা রয়েছে, এ ছাড়া আমি আর কিছু জানি না। আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কি আছে? তিনি বললেন, দীয়াতের বিধান, বন্দী মুক্ত করণ এবং কোন মুসলিমকে যেন কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা না হয় (এ সম্পর্কিত নির্দেশ)।

হাদীস নং ২৮৩৪

ইসমাঈল ইবনে আবু উয়াইস রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, আনসারীগণের কয়েকজন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি চেয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি যদি আমাদের অনুমতি দান করেন, তবে আমরা আমাদের ভাগ্নে আব্বাসের মুক্তিপণ ছেড়ে দিতে পারি। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, একটি দিরহাও ছেড়ে দিবে না। ইবরাহীম রহ……..আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বাহরাইন থেকে অর্থ-সম্পদ আনা হয়। তখন তাঁর নিকট আব্বাস রা. এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে কিছু দিন। আমি আমার নিজের মুক্তিপণ আদায় করেছি এবং আকীলেরও মুক্তিপণ আদায় করেছি। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিয়ে নিন এবং তাঁর কাপড়ে দিয়ে দিলেন।

হাদীস নং ২৮৩৫

মাহমুদ রহ……….জুবাইর (ইবনে মুতয়িম) রা. থেকে বর্ণিত, আর তিনি (কাফির থাকা অবস্থায়) বদর যুদ্ধে বন্দীদের মুক্ত করার জন্য (রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট) এসেছিলেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের সালাতে সূরায়ে তূর পড়তে শুনেছি।

হাদীস নং ২৮৩৬

আবু নুআঈম রহ……….সালামা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন এক সফরে মুশরিকদের একদল গুপ্তচর তাঁর নিকট এল এবং তাঁর সাহাবীগণের সঙ্গে বসে কথাবার্তা বলতে লাগল ও কিছুক্ষণ পরে চলে গেল। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে খুঁজে আন এবং হত্যা কর। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মালপত্র হত্যাকারীকে দিয়ে দিলেন।

হাদীস নং ২৮৩৭

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (আমার পর যিনি খলীফা হবেন) আমি তাকে এ অসীয়াত করছি যে, আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ থেকে কাফিরদের সাথে কৃত অঙ্গীকার যেন যথাযথভাবে পূরণ করা হয়, তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে যুদ্ধ করা হয়, তাদের সামর্থ্যের বাইরে তাদের উপর যেন জিযিয়া (নিরাপত্তা কর) ধার্য করা না হয়।

হাদীস নং ২৮৩৮

কাবীসা রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি (কোন এক সময়) বললেন, বৃহস্পতিবার! হায় বৃহস্পতিবার! এরপর তিনি কাঁদতে শুরু করলেন, এমনকি তাঁর অশ্রুতে (যমিনের) কংকর গুলো সিক্ত হয়ে গেল। আর তিনি বলতে লাগলেন? বৃহস্পতিবারে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রোগ যাতনা বেড়ে যায়। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার জন্য লিখার কোন জিনিস নিয়ে এসো, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখিয়ে দিব। যাতে এরপর তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট না হও। এতে সাহাবীগণ পরস্পরে মতপার্থক্য করেন। অথচ নবীর সম্মুখে মতপার্থক্য সমীচীন নয়। তাদের কেউ কেউ বললেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া ত্যাগ করছেন? তিনি বললেন, আচ্ছা, আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দাও। তোমরা আমাকে যে অবস্থার দিকে আহবান করছ তার চেয়ে আমি যে অবস্থায় আছি তা উত্তম। অবশেষে তিনি ইন্তিকালের সময় তিনটি বিষয়ে ওসীয়ত করেন। ১. মুশরিকদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বিতাড়িত কর, ২. প্রতিনিধি দলকে আমি যেরূপ উপঢৌকন দিয়েছি তোমরাও অনুরূপ দিও (রাবী বলেন) তৃতীয় ওসীয়তটি আমি ভুলে গিয়েছি। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, ইবনে মুহাম্মদ রহ. ও ইয়াকুব রহ. বলেন, আমি মগীরা ইবনে আবদুর রহমানকে জাযীরাতুল আরব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, তা হল মক্কা, মদীনা ইয়ামামা ও ইয়ামান। ইয়াকুব রহ. বলেন, তিহমা আরম্ভ হল আরজ থেকে।

হাদীস নং ২৮৩৯

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. একজোড়া রেশমী কাপড় বাজারে বিক্রি হতে দেখতে পেলেন। তিনি তা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রতিনিধিদল আগমন উপলক্ষে এর দ্বারা আপনি সুসজ্জিত হবেন। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ লেবাস তো তার (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই। অথবা (বলেন, রাবীর সন্দেহ) এরূপ লেবাস সে-ই পরিধান করে (আখিরাতে) যার কোন অংশ নাই। এ অবস্থায় উমর রা. কিছুদিন অবস্থান করেন, যে পরিমাণ সময় আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছে ছিল। এরপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি রেশমী জুব্বা উমর রা.-এর নিকট পাঠিয়ে দেন। তিনি তা নিয়ে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এস আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আপনি বলেছিলেন যে, এ তো তারই লেবাস (আখিরাতে) যার কোন অংশ নাই, কিংবা (রাবীর সন্দেহ) এ লেবাস তো সে-ই পরিধান করে, যার (আখিরাতে) কোন অংশ নাই। এরপরও আপনি তা আমার জন্য প্রেরণ করলেন। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এজন্য প্রেরণ করেছি যে,) তুমি তা বিক্রয় করে ফেলবে অথবা (রাবীর সন্দেহ) বলেছেন, (এজন্য প্রেরণ করেছি যে) তুমি তা তোমার কোন কাজে লাগবে।

হাদীস নং ২৮৪০

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. কয়েকজন সাহাবীসহ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ইবনে সাইয়াদের কাছে যান। তাঁরা তাকে বনী মাগালার টিলার উপর ছেলে-পেলেদের সঙ্গেদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে দেখতে পান। আর এ সময় ইবনে সাইয়াদ বালিগ হওয়ার নিকটবর্তী হয়েছিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (আগমন সম্পর্কে) সে কোন কিছু টের না পেতেই রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পিঠে হাত দিয়ে দৃদু আঘাত করলেন। এরপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (হে ইবনে সাইয়াদ) তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল? তখন ইবনে সাইয়াদ তাঁর প্রতি তাকিয়ে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মী লোকদের রাসূল। ইবনে সাইয়াদ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর সকল রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি দেখ? ইবনে সাইয়াদ বলল, আমার নিকট সত্য সংবাদ ও মিথ্যা সবাদ সবই আসে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রকৃত অবস্থা তোমার নিকট সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত হয়ে আছে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, আচ্ছা! আমি আমার অন্তরে তোমার জন্য কিছু কথা গোপন রেখেছি (বলতো তা কি ?) ইবনে সাইয়াদ বলল, তা হচ্ছে ধুয়া। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আরে থাম, তুমি তোমার সীমার বাইরে যেতে পার না। উমর রা. বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সে প্রকৃত দাজ্জাল হয়, তবে তুমি তাকে কাবু করতে পারবে না আর যদি সে দাজ্জাল না হয়, তবে তাকে হত্যা করে তোমার কোন লাভ নেই। ইবনে উমর রা. বললেন, রাসূলূল্লাহ ও উবাই ইবনে কাব রা. উভয়ে সে খেজুর বৃক্ষের নিকট গমন করেন, যেখানে ইবনে সাইয়াদ অবস্থান করছিল। যখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে পৌঁছলেন, তখন তিনি খেজুর ডালের আড়ালে চলতে লাগলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল, ইবনে সাইয়াদের অজ্ঞাতসারে তিনি তার কিছু কথা শুনে নিবেন। ইবনে সাইয়াদ নিজ বিছানা পেতে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়েছিল এবং কি কি যেন গুণগুণ করছিল। তার মা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখে ফেলেছিল যে, তিনি খেজুর বৃক্ষ ডালের আড়ালে আসছেন। তখন সে ইবনে সাইয়াদকে বলে উঠল, হে সাফ! আর এ ছিল তার নাম। সে দ্রুত উঠে দাঁড়াল। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহিলাটি যদি তাকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিত, তবে তার ব্যাপারটা প্রকাশ পেয়ে যেত। আর সালিম রহ. বলেন, ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেছেন যে, এরপর নবী লোকদের মাঝে দাঁড়ালেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর তা’আলার যথাযথ প্রশংসা করলেন। তারপর দাজ্জাল সম্পর্কে উল্লেখ করলেন। আর বললেন, আমি তোমাদের দাজ্জাল থেকে সতর্ক করে দিচ্ছি। প্রতোক নবীই তাঁর সম্প্রদায়কে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। নূহ আ. তাঁর সম্প্রদায়কেও দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তার সম্পর্কে এমন একটি কথা জানিয়ে দিব, যা কোন নবী তাঁর সম্প্রদায়কে জানন নি।

হাদীস নং ২৮৪১

মাহমুদ রহ………..উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্জে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আগামীকাল আপনি মক্কায় পৌঁছে কোথায় অবতরণ করবেন? তিনি বললেন, আকীল কি আমাদের জন্য কোন ঘরবাড়ি অবশিষ্ট রেখেছে? এরপর বললেন, আমরা আগামীকাল খায়ফে বানু কানানার মুহাসসাব নামক স্থানে অবতরণ করবে। যেখানে কুরায়েশ লোকেরা কুফরীর উপর শপথ করেছিল। আর তা হচ্ছে এই যে, বানু কানানা ও কুরায়েশগণ একত্রে এ শপথ করেছিল যে, তারা বানু হাশেমের সহিত ক্রয়-বিক্রয় করবে না এবং তাদের নিজগৃহে আশ্রয়ও দিবে না। যুহরী রহ. বলেন, খায়ফ হচ্ছে একটি উপত্যকা।

হাদীস নং ২৮৪২

ইসমাঈল রহ………..আসলামা রা. থেকে বর্ণিত, উমর রা. হুনাইয়া নামক তাঁর এক আযাদকৃত গোলামকে সরকারী চারণভূমির তত্বাবধানে নিয়োগ করেন। আর তাকে আদেশ করেন, হে হুনাইয়া! মুসলমানদের সাথে অত্যন্ত বিনয়ী থাকবে, মজলুমের বদ দু’আ থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, মজলুমেরে দু’আ কবূল হয়। আর স্বল্প সংখ্যক উট ও স্বল্প সংখ্যক বকরীর মালিককে এ (চারণভূমিতে) প্রবেশ করতে দিবে। আর আবদুর রহমান ইবনে আউফ ও উসমান ইবনে আফফান রা.-এর পশু ব্যাপারে সতর্ক থাকবে (প্রবেশ করতে দিবেনা)। কেননা যদি তাদের পশুগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, তবে তাঁরা তাদের কৃষি ক্ষেত ও খেজুর বাগানের প্রতি মনোনিবেশ করবেন। কিন্তু স্বল্প সংখ্যক উট-বকরীর মালিকদের পশু ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের পরিবার-পরিজনন নিয়ে আমার নিকট উপস্থিত হবে। আর বলবে, হে আমীরুল মুমিনীন! হে আমীরুল মুমিনীন! আমি কি তাদের বঞ্চিত করতে পারব? হে অবুঝ! সুতরাং পানি ও ঘাস দেওয়া আমার পক্ষে সহজ, স্বর্ণ-রৌপ্য দেওয়ার চাইতে। আল্লাহর শপথ! এ সব লোকেরা মনে করবে, আমি তাদের প্রতি জুলুম করেছি। এটা তাদেরই শহর, জাহেলী যুগে তারা এতে যুদ্ধ করেছে, ইসলামের যুগে তারা এতেই ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে মহান আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, যে সব ঘোড়ার উপর আমি যোদ্ধাগণকে আল্লাহর রাস্তায় আরোহণ করিয়ে থাকি যদি সেগুলো না হতো তবে আমি তাদের দেশের এক বিঘত পরিমাণ জমিও সংরক্ষণ করতাম না।

হাদীস নং ২৮৪৩

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ……..হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের মধ্যে যারা ইসলামের কালেমা উচ্চারণ করেছে, তাদের নাম তালিকাভুক্ত করে আমাকে দাও। হুযাইফা রা. বলেন, তখন আমরা একহাজার পাঁচশ লোকের নাম তালিকাভুক্ত করে তাঁর নিকট পেশ করি। তখন আমরা বলতে লাগলাম, আমরা একহাজার পাঁচশত লোক, এক্ষণে আমাদের ভয় কিসের? (রাবী) হুযাইফা রা. বলেন, পরবর্তীকালে আমরা দেখেছি যে, আমরা এমনভাবে ফিতনায় পতিত হয়েছি যাতে লোকেরা ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় একা একা সালাত আদায় করছে।

হাদীস নং ২৮৪৪

আবদান রহ………আমাশ রহ. থেকে এ বর্ণনা করেছেন, তাঁতে উল্লেখ হয়েছে, আমরা তাদের পাঁচশ পেয়েছি। আবু মুয়াবিয়ার বর্ণনায় উল্লেখিত হয়েছে ছয়শ ছয়শ হতে সাতশ এর মাঝামাঝি।

হাদীস নং ২৮৪৫

আবু নুআইম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে আর আমার স্ত্রী হজ্জ আদায়ের সংকল্প করেছে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ফিরে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ করে নাও।

হাদীস নং ২৮৪৬

আবুল ইয়ামান ও মাহমুদ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি ইসলামের দাবীদার এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, এ ব্যক্তি জাহান্নামী অথচ যখন যুদ্ধ শুরু হল, তখন সে লোকটি ভীষণ যুদ্ধ করল এবং আহত হল। তখন বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যে লোকটি সম্পর্কে আপনি বলেছিলেন, সে লোকটি জাহান্নামী। আজ সে ভীষণ যুদ্ধ করেছে এবং মারা গেছে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামে গেছে। রাবী বলেন, এ কথার উপর কারো কারো অন্তরে এ বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির উপক্রম হয় এবং তাঁরা এ সম্পর্কিত কথাবার্তায় রয়েছেন, এ সময় সংবাদ এল যে, লোকটি মরে যায়নি বরং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। যখন রাত্রি হল, সে আঘাতের কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে পারল না এবং আত্মহত্যা করল। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছানো হল, তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহু আকবার! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি অবশ্যই আল্লাহর তা’আলার বান্দা এবং তাঁর রাসূল। এরপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল রা.-কে আদেশ করলেন, তখন তিনি লোকদের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, মুসলমান ব্যতীত কেউ বেহেশতে প্রবেশ করবে না। আর আল্লাহ তা’আলা (কখনো কখনো) এই দীনকে মন্দ লোকের দ্বারা সাহায্য করেন।

হাদীস নং ২৮৪৭

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে গিয়ে বললেন, (মোতার যুদ্ধে) যায়েদ (ইবনে সাবিত রা.) পতাকা ধারণ করেছেন এবং শাহাদাত বরণ করেছেন, এরপর জাফর (ইবনে আবু তালিব রা.) পতাকা ধারণ করেছেন এবং শাহাদাত বরণ করেছেন। তারপর আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. পতাকা ধারণ করেছেন এবং শাহাদাত বরণ করেছেন। এরপর খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রা. মনোনয়ন ছাড়াই পতাকা ধারণ করেছেন , আল্লাহ তা’আলা তাঁর মাধ্যমে বিজয় দান করেছেন আর বললেন, এ আমার নিকট পছন্দনীয় নয় অথবা রাবী বলেন, তাদের কাছে পছন্দনীয় নয় যে, তারা দুনিয়ায় আমার নিকট অবস্থান করত। রাবী বলেন, (রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছিলেন) আর তাঁর চক্ষু যুগল হতে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল।

হাদীস নং ২৮৪৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট রিল, যাকওয়ান, উসাইয়া ও বানু লাহইয়ান গোত্রের কিছু লোক এসে বলল, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি। এবং তারা তাঁর নিকট তাদের সম্প্রদায়ের মোকাবেলায় সাহায্য প্রার্থনা করল। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্তর জন আনসার পাঠিয়ে তাদের সাহায্য করলেন। আনাস রা. বলেন, আমরা তাদের ক্বারী নামে আখ্যায়িত করতাম। তাঁরা দিনের বেলায় লাকড়ী সংগ্রহ করতেন, আর রাত্রিকালে সালাতে মগ্ন থাকতেন। তারা তাদের নিযে রওয়ানা হয়ে গেল। যখন তাঁরা বীরে মাউনা নামক স্থানে পৌঁছল, তখন তারা বিশ্বাসঘাতকতা করল এবং তাদের হত্যা করে ফেলল। এ সংবাদ শোনার পর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিল, যাকওয়ান ও বানু লাহইয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে দু’আ করে একমাস যাবত কুনূতে নাযিলা পাঠ করেন। কাতাদা রহ. বলেন, আনাস রা. আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা তাদের সম্পর্কে কিছুকাল যাবৎ কুরআনের এ আয়াতটি পড়তে থাকেন: “আমাদের সংবাদ আমাদের কাওমের নিকট পৌঁছিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের সাক্ষাত পেয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তিনি আমাদের সন্তুষ্ট করেছেন”। এরপর এ আয়াত পাঠ করা বন্ধ করে দেওয়া হয় অর্থাৎ মানসূখ হয়ে যায়।

হাদীস নং ২৮৪৯

মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম রহ……….আবু তালহা রা. সূত্রে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায়ের উপর বিজয় লাভ করতেন, তখন তিনি তাদের বহিরাঙ্গনে তিন রাত অবস্থান করতেন। মুআয ও আবদুল আ’লা আবু তালহা রা. সূত্রে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনায় রাওহা ইবনে উবাদা রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ২৮৫০

হুদবা ইবনে খালিদ রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিরানা নামক স্থান থেকে উমরার জন্য ইহরাম বাঁধলেন, যেখানে তিনি হুনাইন যুদ্ধের গনীমত বণ্টন করেছিলেন।

হাদীস নং ২৮৫১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে উমর রা.-এর একটি গোলাম পলায়ন করে রোমের মুশরিকদের সাথে মিলিত হয়। এরপর খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রা. রোম জয় করেন। তখন তিনি সে গোলামটি আবদুল্লাহ (ইবনে উমর রা.)-কে ফেরত দিয়ে দেন। আর আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর একটি ঘোড়া ছুটে গিয়ে রোমে পৌঁছে যায়। এরপর উক্ত এলাকা মুসলমানদের করতলগত হলে তারা ঘোড়াটি ইবনে উমর রা.-কে ফেরত দিয়ে দেন। আবু আবদুল্লাহ রা. বলেন,عار শব্দটি عير থেকে উদগত। আর তা হল বন্য গাধা। عار এর অর্থ هرب অর্থাৎ পলায়ন করেছে।

হাদীস নং ২৮৫২

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি একটি ঘোড়ার উপর আরোহী ছিলেন, যখন মুসলমানগণ রোমীদের সাথে যুদ্ধ করছিলেন, সে সময় মুসলমানদের অধিনায়ক হিসেবে খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রা.-কে আবু বকর সিদ্দীক রা. নিয়োগ করেছিলেন। সে সময় শত্রুরা তাঁর ঘোড়াটিকে নিয়ে যায়। এরপর যখন শত্রু দল পরাজিত হল তখন খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রা. তাঁর ঘোড়াটি তাকে ফেরত দেন।

হাদীস নং ২৮৫৩

আমর ইবনে আলী রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার একটি ছানা যবেহ করেছি এবং আমার স্ত্রী এক সা যবের আটা পাকিয়েছে। আপনি কয়েকজন সঙ্গীসহ আসুন। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, হে আহলে খন্দক! তোমাদের জন্য খাবার আয়োজন করেছে, তাই তোমরা চল।

হাদীস নং ২৮৫৪

হিব্বান ইবনে মূসা রহ……..উম্মে খালিদ ইবনে সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে হলুদ বর্ণের জামা পরে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলাম। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সান্না-সান্না। (রাবী আবদুল্লাহ রহ.) বলেন, হাবশী ভাষায় তা সুন্দর অর্থে ব্যবহৃত । উম্মে খালিদ রা. বলেন, এরপর আমি তাঁর মহরে নবুয়্যতের স্থান নিয়ে কৌতুক করতে লাগলাম। আমার পিতা আমাকে ধমক দিলেন। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ছোট মেয়ে তাকে করতে দাও। এরপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, এ কাপড় পরিধান কর আর পুরানো কর, আবার পরিধান কর, পুরানো কর, আবার পরিধান কর, পুরানো কর। (অর্থাৎ দীর্ঘদিন পরিধান কর) আবদুল্লাহ (ইবনে মুবারক) রহ. বলেন, উম্মে খালিদ রা. এতদিন জীবিত থাকেন যে, তাঁর আলোচনা চলতে থাকে।

হাদীস নং ২৮৫৫

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, হাসান ইবনে আলী রা. সাদকার খেজুর থেকে একটি খেজুর নিয়ে তা তাঁর মুখে রাখেন। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাখ-কাখ (ফেলে দাও, ফেলে দাও) বললেন, তুমি কি জাননা যে, আমরা (বানু হাশিম) সাদকা খাই না। ইকরিমা রহ. বলেন, সান্নাহ হাবশী ভাষায় সুন্দর অর্থে ব্যবহৃত হয়। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, উম্মে খালিদের মত কোন মহিলা এত দীর্ঘজীবী হয়নি।

হাদীস নং ২৮৫৬

মুসাদ্দাদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং গনীমতের মাল আত্মসাত প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। আর তিনি তা মারাত্মক অপরাধ হওয়া ও তার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের কাউকে যেন এ অবস্থায় কিয়ামতের দিন না পাই যে, তার কাঁধে বকরী বয়ে বেড়াচ্ছে আর তা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে চিৎকার দিচ্ছে। অথবা তাঁর কাঁধে রয়েছে ঘোড়া আর তা হি হি করে আওয়াজ দিচ্ছে। ঐ ব্যক্তি আমাকে বলবে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো (দুনিয়ায়) তোমার নিকট (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে উট যা চিৎকার করছে, সে আমাকে বলবে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো (দুনিয়ায়) তোমার নিকট (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে কাপড়ের টুকরা সমূহ যা দুলতে থাকবে। সে আমাকে বলবে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো (দুনিয়ায়) তোমার নিকট (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দিয়েছি।

হাদীস নং ২৮৫৭

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাহারা দেওয়ার জন্য এক ব্যক্তি নিযুক্ত ছিল। তাকে কারকারা নামে ডাকা হত। সে মারা গেল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামী ! লোকেরা তার অবস্থা দেখতে গেল তারা একটি আবা পেল যা সে আত্মসাত করেছিল। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, ইবনে সালাম রহ. বলেছেন, কারকারা।

হাদীস নং ২৮৫৮

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………রাফি ইবনে খাদীজ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যুল-হুলাইফায় অবস্থান করছিলাম। লোকেরা ক্ষুধার্ত হয়েছিল। আর আমরা গনীমত স্বরূপ কিছু উট ও বকরী লাভ করেছিলাম। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের পেছন সারিতে ছিলেন। লোকেরা তাড়াতাড়ি করে (জন্তু যবেহ করে) ডেগ চড়িয়ে দিয়েছিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডেগগুলো (উপুড় করে ফেলার) নির্দেশ দিলেন এবং উপুড় করে ফেলে দেওয়া হল। এরপর তিনি দশটি বকরীকে একটি ঘোড়া কম ছিল। তাঁরা তা অনুসন্ধানে বেরিয়ে গেল এবং তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ল। এরপর এক ব্যক্তি উটটির প্রতি তীর নিক্ষেপ করল, আল্লাহ তা’আলা তার গতিরোধ করে দিলেন। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ সকল গৃহপালিত জন্তুর মধ্যেও কতক বন্য জন্তুর মত অবাধ্য হয়ে যায়। সুতরাং যা তোমাদের নিকট হতে পলায়ন করে তার সঙ্গে এরূপ আচরণ করবে। রাবী বলেন, আমার দাদা রাফি ইবনে খাদীজ রা. বলেছেন, আমরা আশা করি কিংবা বলেছেন আশংকা করি যে, আমরা আগামীকাল শত্রুর মুখোমুখি হব। আর আমাদের সঙ্গে ছুরি নেই। আমরা কি বাঁশের ধারালো চোকলা দ্বারা যবেহ করব? রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং (যার যবেহকালে) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে (বিসমিল্লাহ পাঠ করা হয়েছে) তা আহার কর। কিন্তু দাঁত ও নখ দিয়ে নয়। কারণ আমি বলে দিচ্ছি : তা এই যে, দাঁত হল হাঁড় আর নখ হল হাবশীদের ছুরি।

হাদীস নং ২৮৫৯

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্ন রহ……..জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কি যুলখালাসা মন্দিরটিকে ধ্বংস করে আমাকে সান্ত্বনা দিবে না? এ ঘরটি খাসআম গোত্রের একটি মন্দির ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা বলা হত। এরপর আমি আহমাস গোত্রের দেড়শ লোক নিয়ে রওয়ানা হলাম। তাঁরা সবাই নিপুণ অশ্বারোহী ছিলেন। আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালাম যে, আমি ঘোড়ার উপর স্থির থাকতে পারি না। তখন তিনি আমার বুকে হাত দ্বারা আঘাত করলেন। এমনকি আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলের ছাপ দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য দু’আ করে বললেন, হে আল্লাহ! তাকে ঘোড়ার পিঠে স্থির রাখ এবং তাকে পথপ্রদর্শক ও সুপথ প্রাপ্ত করুন। অবশেষে জারীর রা. তথায় গমন করলেন। ঐ মন্দিরটি ভেঙ্গে দিলেন ও জ্বালিয়ে দিলেন। এরপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সুসংবাদ প্রদানের জন্য দূত প্রেরণ করলেন। জারীর রা.-এর দূত রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, যিনি আপনাকে সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, সে সত্তার কসম! আমি ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার নিকট আসিনি, যতক্ষণ না আমি তাকে জ্বালিয়ে কাল উটের ন্যায় করে ছেড়েছি। (অর্থাৎ তা জ্বালিয়ে ছাই করে দিয়েছি) তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক লোকদের জন্য পাঁচবার বরকতের দু’আ করলেন। মুসাদ্দাদ রহ. বলেন, হাদীসে উল্লেখিত যুলখালাসা অর্থ গোত্রের একটি ঘর।

হাদীস নং ২৮৬০

আদম আবু ইয়াস রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেন, মক্কা বিজয়ের পর থেকে (মক্কা থেকে) হিজরতের প্রয়োজন নেই। তখন তোমরা বেরিয়ে পড়বে।

হাদীস নং ২৮৬১

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……….মুজাশি ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুজাশি তাঁর মুজালিদ ইবনে মাসউদ রা.-কে নিয়ে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, এ মুজালিদ আপনার কাছে হিজরত করার জন্য বাইয়াত করতে চায়। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরতেরে প্রয়োজন নেই। কাজেই আমি তার কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে বায়আত নিচ্ছি।

হাদীস নং ২৮৬২

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আতা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবাইদ ইবনে উমাইর রা. সহ আয়িশা রা.-এর নিকট গমন করি। তখন তিনি সাবীর পাহাড়ের উপর অবস্থান করছিলেন। তিনি আমাদের বললেন, যখন থেকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মক্কা বিজয় দান করেছেন, তখন হিজরত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

হাদীস নং ২৮৬৩

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হাওশাব তায়িফী রহ……….আবু আবদুর রহমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি ছিলেন উসমান রা.-এর সমর্থক। তিনি ইবনে আতিয়্যাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যিনি আলী রা.-এর সমর্থক ছিলেন, কোন বস্তু তোমাদের সাথী (আলী রা.-কে রক্তপাতে সাহস যুগিয়েছে, তা আমি জানি। আমি তাঁর কাছে শুনেছি, তিনি বলতেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং যুবাইর (ইবনে আওয়াম) রা.কে প্রেরণ করেছেন, আর বলেছেন, তোমরা খাক বাগান অভিমুখে চলে যাও, সেখানে তোমরা একজন মহিলাকে পাবে, হাতিব তাকে একটি পত্র দিয়েছি। আমরা সে বাগানে পৌঁছলাম এবং মহিলাটিকে বললাম, পত্রখানি দাও সে বলল, সে বলল, (হাতিব) আমাকে কোন পত্র দেয়নি। তখন আমরা বললাম, হয় তুমি পত্র বের করে দিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদের পত্রসহ প্রত্যাবর্তনের পর) হাতিবকে ডেকে পাঠান। তখন সে বলল, আমার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করবেন না। আল্লাহর কসম! আমি কুফরী করিনি, আমার হৃদয়ে ইসলামের প্রতি অনুরাগই বর্ধিত হয়েছে। আপনার সাহাবীগণের মধ্যে কেউই এমন নেই, মক্কায় যার সাহায্যকারী আত্মীয়-স্বজন না আছে। যদ্বারা আল্লাহ তা’আলা তাঁর পরিবার-পরিজন ধন-সম্পদ রক্ষা করেছেন। আর আমার এমন কেউ নেই। তাই আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে চেয়েছি। (যার বিনিময়ে তারা আমার মাল-আওয়াদ হিফাজত করবে) তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সত্যবাদী রূপে স্বীকার করে নিলেন। উমর রা. বললেন, লোকটিকে আমার আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই, সে তো মুনাফিকী করেছে। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি জান কি ? অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা আহলে বদর সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত রয়েছেন এবং তাদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, তোমরা যেমন ইচ্ছা আমল কর। একথাই তাকে (আলী রা. দুঃসাহসী করেছে।

হাদীস নং ২৮৬৪

আবদুল্লাহ ইবনে আবুল আসওয়াদ রহ……….ইবনে আবু মুলাইকা রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে যুবাইর রা. ইবনে জাফর রা.-কে বললেন, তোমার কি স্মরণ আছে, যখন আমি ও তুমি এবং ইবনে আব্বাস রা. রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম? ইবনে জাফর রা. বললেন, হ্যাঁ, স্মরণ আছে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বাহনে তুলে নিলেন আর তোমাকে ছেড়ে আসেন।

হাদীস নং ২৮৬৫

মালিক ইবনে ইসমাঈল রহ……….সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে আমারাও রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সানিয়্যাতুল বিদা পর্যন্ত গিয়েছিলাম।

হাদীস নং ২৮৬৬

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, যে, যখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন, তখন তিনবার তাকবীর বলতেন। এরপর বলতেন, আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, গুনাহ থেকে তাওবাকারী, ইবাদতকারী, প্রশংসাকারী, আমাদের প্রতিপালক কে সিজদাকারী। আল্লাহ তা’আলা তাঁর অঙ্গীকার সত্য প্রমাণিত করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রু দলকে পরাস্ত করেছেন।

হাদীস নং ২৮৬৭

আবু মামার রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উসফান থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় আমরা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম, আর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাওয়ারীর উপর আরোহী ছিলেন। তিনি সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রা.-কে তাঁর পেছনে সাওয়ারীর উপর বসিয়েছিলেন। এ সময় উট পিছলিয়ে গেল এবং তাঁরা উভয়ে ছিটকে পড়েন। এ দেখে আবু তালহা রা. দ্রুত এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তা’আলা আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগে মহিলার খোঁজ নাও। আবু তালহা রা. তখন একখানি কাপড় দিয়ে নিজ মুখমণ্ডল ঢেকে তাঁর নিকট আসলেন এবং উক্ত কাপড়খানি দিয়ে তাকে ঢেকে দিলেন। এরপর তাদের উভয়ের জন্য সাওয়ারীকে ঠিক করলেন। তাঁরা উভয়ে আরোহণ করলেন, আর আমরা সবাই রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চারপাশে বেষ্টন করে চললাম। যখন আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলাম, তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আ পড়লেন أيبون تائبون عابدون لربنا حامدون আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, আমরা তাওবাকারী, আমরা ইবাদতকারী আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রশংসাকারী। আর মদীনায় প্রবেশ করা পর্যন্ত তিনি এ দু’আ পড়তে থাকলেন।

হাদীস নং ২৮৬৮

আলী রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি ও আবু তালহা রা. রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে চলছিলাম। আর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাফিয়্যা রা.-ও ছিলেন। তিনি তাকে নিজ সাওয়ারীতে তাঁর পেছনে বসিয়ে ছিলেন পথিমধ্যে এক জায়গায় উটনীটির পা পিছলিয়ে গেল। এতে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যা রা. ছিটকে পড়ে গেলেন। আর আবু তালহা রা. তার উট থেকে তাড়াতাড়ি নেমে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ! আল্লাহ তা’আলা আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। আপানার কি কোন আঘাত লেগেছে? রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। তবে তুমি মহিলাটির খোঁজ নাও। আবু তালহা রা. তখন একখানি কাপড় দিয়ে নিজ মুখমণ্ডল ঢেকে তাঁর নিকট আসলেন এবং উক্ত কাপড়খানা দিয়ে তাকে ঢেকে দিলেন। তখন সাফিয়্যা রা. উঠে দাঁড়ালেন। এরপর তাদের উভয়ের জন্য সাওয়ারীকে উত্তমরূপে বাঁধলেন। তাঁরা উভয়ে আরোহণ করে চলতে শুরু করেন। অবশেষে যখন তাঁরা মদীনার উপকণ্ঠে পৌঁছলেন অথবা বর্ণনাকারী বলেন, যখন মদীনার নিকটবর্তী হলেন, তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আ পড়লেন “আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, আমরা তাওবাকারী, আমরা ইবাদতকারী আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রশংসাকারী। আর মদীনায় প্রবেশ করা পর্যন্ত তিনি এ দু’আ পড়তে থাকলেন।

হাদীস নং ২৮৬৯

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন মদীনায় পৌঁছলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, (হে জাবির!) মসজিদে প্রবেশ কর এবং দু’রাকআত সালাত আদায় কর।

হাদীস নং ২৮৭০

আবু আসিম রহ……….কাব (ইবনে মালিক) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন চাশতের সময় সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন, তখন মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নিতেন।

হাদীস নং ২৮৭১

মুহাম্মদ (ইবনে সালাম) রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় প্রত্যাবর্তন করতেন, তখন তিনি একটি উট অথবা একটি গাভী যবেহ করতেন। আর মুআয রা…………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, (জাবির রা. বলেন) রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট থেকে একটি উট দু’ উকিয়া ও এক দিরহাম কিংবা দু’দিরহাম দ্বারা ক্রয় করেন এবং তিনি যখন সিরার নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন একটি গাভী যবেহ করার নির্দেশ দেন। এরপর তা যবেহ করা হয় এবং সকলে তার গোশত আহার করে। আর যখন তিনি মদীনায় পৌঁছলেন তখন আমাকে মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকআত সালাত আদায় করার আদেশ দিলেন এবং আমাকে উটের মূল্য পরিশোধ করে দিলেন।

হাদীস নং ২৮৭২

আবুল ওয়ালীদ রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করলাম। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও। সিরার হচ্ছে মদীনার উপকণ্ঠে একটি স্থানের নাম।

হাদীস নং ২৮৭৩

আবদান রহ………..আলী রা. বর্ণিত, তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের গনীমতের মালের মধ্য থেকে যে অংশ আমি পেয়েছিলাম তাতে একটি জাওয়ান উটনীও ছিল। আর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুমুসের মধ্য থেকে আমাকে একটি জওয়ান উটনী দান করেন। আর আমি যখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ফাতিমা রা.-এর সাথে বাসর যাপন করব, তখন আম বানূ কায়নুকা গোত্রের জনৈক স্বর্ণকারের সাথে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হলাম যে, সে আমার সঙ্গে যাবে এবং আমরা উভয়ে মিলে ইযখির ঘাস (জঙ্গল হতে) সংগ্রহ করে আনব। ইতিমধ্যে আমি যখন আমার জওয়ান উটনী দুটির জন্য আসবাপত্র যেমন পালান (বসার আসন) থলে ও রশি ইত্যাদি একত্রিত করছিলাম, আর আমার উটনী দুটি জনৈক আনসারীর হুজরার পার্শ্বে বসা ছিলে। আম আসবাবপত্র যোগাড় করে এসে দেখি উট দুটির কুঁজ কেটে ফেলা হয়েছে এবং কোমরের দিকে পেট কেটে কলিজা বের করে নেয়া হয়েছে। উটনী দুটির এ দৃশ্য দেখে আমি অশ্রু সম্বরণ করতে পারলাম না। আমি বললাম, কে এমনটি করেছে? লোকেরা বলল, হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব এমনটি করেছে। সে এ ঘরে আছে এবং শরাব পানকারী কতিপয় আনসারীর সাথে আছে। আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট চলেন গেলাম। তখন তাঁর নিকট যায়েদ ইবনে হারিসা রা. উপস্থিত ছিলেন। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চেহারা দেখে আমার মানসিক অবস্থা উপলব্ধি করতে পারলেন। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আজকের মত দুঃখজনক অবস্থা দেখিনি। হামযা আমার উট দুটির উপর অত্যাচার করেছে। সে দুটর কুঁজ কেটে ফেলেছে এবং পাঁজর ফেড়ে ফেলেছে। আর সে এখন অমুক ঘরে শরাব পানকারী দলের সাথে আছ। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাদরখানা আনতে আদেশ করলেন এবং চাদরখানা চড়ায়ে পায়ে হেঁটে চললেন। আমি এবং যায়েদ ইবনে হারিসা রা. তাঁর অনুসরণ করলাম। হামযা যে ঘরে ছিল সেখানে পৌঁছে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তারা অনুমতি দিল। তখন তারা শরাব পানে মত্ত ছিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযাকে তার কাজের জন্য তিরস্কার করতে লাগলেন। হামযা তখন পূর্ণ নেশাগ্রস্ত। তার চক্ষু দুটি ছিল রক্তলাল। হামযা তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি তাকাল। আবার সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল এবং তাঁর হাঁটু পানে তাকাল। পুনরায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁর নাভীর দিকে তাকাল। আবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁর মুখমণ্ডলের প্রতি তাকাল। এরপর হামযা বলল, তোমরাই তো আমার পিতার গোলাম। এ অবস্থা দেখে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারলেন, সে এখন পূর্ণ নেশাগ্রস্ত আছে। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছনে হেঁটে সরে আসলেন। আর আমরাও তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে আসলাম। (এ ছিল মদ হারাম হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা)।

হাদীস নং ২৮৭৪

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর ছিদ্দীক রা.-এর নিকট রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর তাঁর মিরাস বণ্টনের দাবী করেন। যা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফায় (বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ) হিসাবে আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক তাকে প্রদত্ত সম্পদ থেকে রেখে গেছেন। তখন আবু বকর রা. তাকে বললেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টিত হবে না আমরা যা ছেড়ে যাই, তা সাদকা রূপে গণ্য হয়। এতে ফাতিমা বিনতে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হলেন এবং আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর সঙ্গে কথাবার্তা বলা ছেড়ে দিলেন। এ অবস্থা তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত বহাল ছিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর ফাতিমা রা. ছয় মাস জীবিত ছিলেন। আয়িশা রা. বলেন, ফাতিমা রা. আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর নিকট রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ত্যাজ্য খায়বার ও ফাদাকের ভূমি এবং মদীনার সাদকাতে তাঁর অংশ দাবী করেছিলেন। আবু বকর রা. তাকে তা প্রদানে অস্বীকৃতি জানান এবং তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা আমল করতেন, আমি তাই আমল করব। আমি তার কোন কিছুই ছেড়ে দিতে পারি না। কেননা আমি আশংকা করি যে, তাঁর কোন কথা ছেড়ে দিয়ে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে না যাই। অবশ্য রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদীনার সাদকাকে উমর রা. তা আলী ও আব্বাস রা.-কে হস্তান্তর করেন। আর খায়বার ও ফাদাকের ভূমিকে পূর্ববৎ রেখে দেন। উমর রা. এ প্রসঙ্গে বলেন, এ সম্পত্তি দুটিকে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জরুরী প্রয়োজন পূরণ ও বিপত্কালীন সময়ে ব্যয়ের জন্য রেখেছিলেন। সুতরাং এ সম্পত্তি দুটি তারই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে, যিনি মুসলমানদের শাসন ক্ষমতার অধিকারী খলীফা হবেন। যুহরী রহ. বলেন, এ সম্পত্তি দুটির ব্যবস্থাপনা অদ্যাবধি সেরূপই রয়েছে।

হাদীস নং ২৮৭৫

ইসহাক ইবনে মুহাম্মদ ফারবী রহ………মালিক ইবনে আউস ইবনে হাদাসান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আমার পরিবার-পরিজনের সাথে বসা ছিলাম, যখন রোদ প্রখর হল তখন উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর দূত আমার নিকট এসে বলল, আমীরুল মুমিনীন আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি তার সঙ্গে রওয়ানা হয়ে উমর রা. -এর নিকট পৌঁছলাম। দেখতে পেলাম, তিনি একটি চাটাইয়ের উপর বসা ছিলেন। যাতে কোন বিছানা ছিলনা। আর তিনি চামড়ার একটি বালিশে হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। আমি তাকে সালাম করে বসে পড়লাম। তিনি বললেন, হে মালিক! তোমার গোত্রের কতিপয় লোক আমার নিকট এসেছেন। আমি তাদের জন্য স্বল্প পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী প্রদানের আদেশ দিয়েছি। তুমি তা বুঝে নিয়ে তাদের মধ্যে বণ্টন করে দাও। আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! এ কাজটির জন্য আমাকে ছাড়া যদি অন্য কাউকে নির্দেশ দিতেন। তিনি বললেন, ওহে তুমি তা গ্রহণ কর। আমি তাঁর কাছেই বসা ছিলাম। এমন সময় তাঁর দারোয়ান ইয়ারফা এসে বলল, উসমান ইবনে আফফান, আবদুর রহমান ইবনে আউফ, যুবাইর (ইবনে আওয়াম) ও সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. আপনার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছেন। উমর রা. বললেন, হ্যাঁ, তাদের আসতে দাও। তাঁরা এসে সালাম করে বসে পড়লেন। ইয়ারফা ক্ষণিক সময় পরে এসে বলল, আলী ও আব্বাস রা. আপনার সাক্ষাতের জন্য অনুমতির অপেক্ষায় আছেন। উমর রা. বললেন, হ্যাঁ, তাদেরকে আসতে দাও। এরপর তাঁরা উভয়ে প্রবেশ করে সালাম করলেন এবং বসে পড়লেন। আব্বাস রা. বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার ও এ ব্যক্তির মধ্যে মিমাংসা করে দিন। বানূ নাযীরের সম্পদ থেকে আল্লাহ তা’আলা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যা দান করেছিলেন, তা নিয়ে তাঁরা উভয়ে বিরোধ করছিলেন। উসমান রা. এবং তাঁর সাথীগণ বললেন, হ্যাঁ, আমীরুল মুমিনীন! এদের মধ্যে মিমাংসা করে দিন এবং তাদের একজনকে অপরজন থেকে নিরুদ্বেগ করে দিন। উমর রা. বললেন, একটু থামুন। আমি আপনাদেরকে সে মহান সত্তার শপথ দিয়ে বলছি, যার আদেশে আসমান ও যমীন স্থির রয়েছে। আপনার কি জানেন যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের (নবীগণ) মীরাস বণ্টিত হয় না। আমরা যা রেখে যাই তা সাদকারূপে গণ্য হয়? এর দ্বারা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকেই উদ্দেশ্য করেছেন। উসমান রা. ও তাঁর সাথীগণ বললেন, হ্যাঁ, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এইরূপ বলেছেন। এরপর উমর রা. আলী এবং আব্বাস রা.-এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আমি আপনাদের আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি। আপনারা কি জানেন যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ বলেছেন? তাঁরা উভয়ে বললেন, হ্যাঁ, তিনি এরূপ বলেছেন।উমর রা. বললেন, এখন এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের বুঝিয়ে বলছি। ব্যাপার হল এই যে, আল্লাহ তা’আলা ফায়ের সম্পদ থেকে স্বীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বিশেষভাবে দান করেছেন যা তিনি ছাড়া কাউকেই দান করেননি। এরপর উমর রা. নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করলেন: “আর আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের অর্থাৎ ইহুদীদের নিকট থেকে যে ফায় দিয়েছেন , তজ্জন্য তোমরা ঘোড়া কিংবা উটে আরোহণ করে যুদ্ধ করনি। আল্লাহ তা’আলাই তো যাদের উপর ইচ্ছা তাঁর রাসূলগণকে কর্তৃত্ব দান করেন। আল্লাহ তা’আলা সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান” (৫৯ : ৬)। সুতারাং এ সকল সম্পত্তি নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখেননি এবং আপনাদের বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দেননি। বরং আপনাদেরকেও দিয়েছেন এবং আপনাদের কাজই ব্যয় করেছেন। এ সম্পত্তি থেকে যা উদ্ধৃত্ত রয়েছে, তা থেকে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ পরিবার-পরিজনের বাৎসরিক খরচ নির্বাহ করতেন। এরপর যা অবশিষ্ট থাকত, তা আল্লাহর সম্পদে (বায়তুলমালে) জমা করে দিতেন। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজীবন এরূপই করেছেন। আপনাদেরকে আল্লাহর কসম দিচ্ছি, আপনারা কি এ বিষয় অবগত আছেন? এরপর উমর রা. বললেন, এরপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ওফাত দিলেন তখন আবু বকর রা. বললেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত একথা বলে তিনি এ সকল সম্পত্তি নিজ দায়িত্বে নিয়ে নেন এবং রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসবের আয়-উৎপাদন যে সব কাজে ব্যয় করতেন, সে সকল কাজে ব্যয় করেন। আল্লাহ তা’আলা জানেন যে, তিনি এক্ষেত্রে সত্যবাদী, পুণ্যবান, সুপথপ্রাপ্ত ও সত্যাশ্রয়ী ছিলেন। এরপর আল্লাহ তা’আলা আবু বকর রা.কে ওফাত দেন। এখন আম বকর রা.-এর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমি আমার খেলাফতকালের প্রথম দু’বছর এ সম্পত্তি আমার দায়িত্বে রেখেছি এবং এর দ্বারা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা. যা যা করতেন, তা করেছি। আল্লাহ তা’আলা জানেন যে, তিনি এক্ষেত্রে সত্যবাদী, পুণ্যবান, সুপথ প্রাপ্ত ও সত্যাশ্রয়ী রয়েছি। এরপর এখন আপনারা উভয়ে আমার নিকট এসেছেন। আর আমার সঙ্গে এ সম্পর্কে আলোচনা করছেন এবং আপনাদের উভয়ের কথা একই । আর আপনাদের ব্যাপারে একই। হে আব্বাস রা.! আপনি আমার নিকট আপনার ভ্রাতুষ্পুত্রের সম্পত্তির অংশের দাবী নিয়ে এসেছেন আর আলী রা.-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, ইনি আমার নিকট তাঁর স্ত্রী কর্তৃক পিতার সম্পত্তিতে প্রাপ্য অংশ নিতে এসেছেন। আমি আপনাদের উভয়কেই বলছি যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমরা নবীগণের সম্পদ বণ্টিত হয় না আমরা যা ছেড়ে যাই তা সাদকা রূপে গণ্য হয়। এরপর আমি সঙ্গত মনে করেছি যে, এ সম্পত্তিকে আপনাদের নিকট দায়িত্বে অর্পণ করব। এখন আমি আপনাদের বলছি যে, আপনারা যদি চান, তবে আমি এ সম্পত্তি আপনাদের নিকট সমর্পণ করে দিব। এ শর্তে যে, আপনাদের উপর আল্লাহ তা’আলার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার থাকবে, আপনারা এ সম্পত্তির আয় আমদানী সে সকল কাজে ব্যয় করবেন, যে সকল কাজে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রা. ও আমি আমার খেলাফতকালে এযাবৎ ব্যয় করে এসেছি। তদুত্তরে আপনারা বলেছেন, এ সম্পত্তিকে আমাদের নিকট সমর্পণ করুন। আমি উক্ত শর্তের উপর আপনাদের প্রতি সমর্পণ করেছি। আপনাদেরকে (উসমান রা. ও তাঁর সাথীগণকে) উদ্দেশ্য করে আমি আল্লাহর কসম দিচ্ছি যে, বলুন তো আমি কি তাদেরকে এ শর্তে এ সম্পত্তি সমর্পণ করেছি? তাঁরা বললেন, হ্যা। এরপর উমর রা. আলী ও আব্বাস রা.-এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আমি আপনাদের উভয়কে আল্লাহর নামে কসম দিচ্ছি, বলুন তো আমি কি তা শর্তে আপনাদের প্রতি এ সম্পত্তি সমর্পণ করেছি? তাঁরা উভয়ে বললেন, হ্যাঁ। এরপর উমর রা. বললেন, আপনারা কি আমার নিকট এ ছাড়া অন্য কোন মিমাংসা চান? আল্লাহর কসম! যার আদেশে আকাশ ও পৃথিবী আপন স্থানে প্রতিষ্ঠিত আছে, আমি এক্ষেত্রে এর বিপরীত কোন মিমাংসা করব না। যদি আপনারা এ শর্ত পালনে অপারগ হন, তবে এ সম্পত্তি আমার দায়িত্বে অর্পণ করুন। আপনাদের উভয়ের পক্ষ থেকে এ সম্পত্তির তত্ত্বাবধানে আমিই যথেষ্ট।

হাদীস নং ২৮৭৬

আবু নুমান রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লহ! আমরা রাবীআ গোত্রের একটি উপদল। আপনার ও আমাদের মাঝে মুযার (কাফির) গোত্রের বসবাস। তাই আমরা আপনার নিকট নিষিদ্ধ মাসসমূহ ব্যতীত অন্য সময় আসাতে পারি না। কাজেই আপনি আমাদের এমন কাজের আদেশ করুন, যার উপর আমরা আমল করব এবং আমাদের পশ্চাতে যারা রয়ে গেছে, তাদেরকেও তা আমল করতে আহবান জানাব। তিনি (রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেন, আমি তোমাদেরকে চারটি কাজের আদেশ করছি এবং চারটি কাজ থেকে নিষেধ করছি। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের আঙ্গুলীতে তা গণনা করে বলেন, আল্লাহ তা’আলার প্রতি ঈমান আন। আর তা হচ্ছে এ সাক্ষ্য দান করা যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই আর সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দান করা, রমযান মাসে সিয়াম পালন করা এবং আল্লাহর জন্য গনীমত লব্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ আদায় করা। আর আমি তোমাদের শুস্ক লাউয়ের খোলে তৈরী পাত্র, খেজুর গাছের মূল দ্বারা তৈরী পাত্র, সবুজ মটকা, আলকাতরা প্রলিপ্ত মটকা ব্যবহার করতে নিষেধ করছি।

হাদীস নং ২৮৭৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (আমার ওফাতের পর) আমার উত্তরাধিকারীগণ একটি দীনারও ভাগ বণ্টন করে নিবে না। আমি যা রেখে যাব, তা থেকে আমার সহধর্মিণীগণের ব্যয়ভার ও আমার কর্মচারীদের ব্যয় নির্বাহের পর অবশিষ্ট যা থাকবে, তা সাদকারূপে গণ্য হবে।

হাদীস নং ২৮৭৮

আবদুল্লাহ ইবনে আবু শায়বা রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হল, তখন আমার ঘরে এমন কোন বস্তু ছিলনা, যা খেয়ে কোন প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে। শুধুমাত্র তাকের উপর আধা ওয়াসাক আটা পড়ে রয়েছিল। আমি তা থেকে খেতে থাকলাম এবং বেশ কিছুদিন কেটে গেল। এরপর আমি তা মেপে দেখালাম, ফলে তা নিঃশেষ হয়ে গেল।

হাদীস নং ২৮৭৯

মুসাদ্দাদ রহ………আমর ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর যুদ্ধাস্ত্র, সাদা খচ্চর ও কিছু যমীন ব্যতীত কিছুই রেখে যান নি এবং তাও তিনি সাদকারূপে রেখে গেছেন।

হাদীস নং ২৮৮০

হিব্বান ইবনে মূসা ও মুহাম্মদ রহ……….উবাইদুল্লাহ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. বলেছেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রেগ যখন অত্যাধিক বেড়ে গেল তখন তিনি আমার ঘরে অবস্থান করে রোগের পরিচর্যা বিষয়ে তাঁর অপর সহধর্মিণীগণের নিকট অনুমতি চান। তাঁরা তাকে অনুমতি প্রদান করেন।

হাদীস নং ২৮৮১

ইবনে আবু মারইয়াম রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার ঘরে আমার পালার দিন আমার কণ্ঠ ও বুকের মধ্য বরাবর মাথা রাখা অবস্থায় রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা (মৃত্যুকালেও) তাঁর ও আমার মুখের লালাকে একত্রিত করেছেন। তিনি বলেন, আবদুর রাহমান রা. একটি মিসওয়াক নিয়ে প্রবেশ করে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা চিবুতে অপরাগ হন। তখন আমি সে মিসওয়াকটি নিয়ে নিজে চিবিয়ে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাঁত মেজে দেই।

হাদীস নং ২৮৮২

সাঈদ ইবনে উফাইর রহ……..আলী ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী সাফিয়্যা রা. তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আসেন। তখন তিনি রমযানের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ রত ছিলেন। এরপর যখন তিনি ফিরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ান, তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। যখন তিনি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অপর সহধর্মিণী উম্মে সালামা রা.-এর দরজার নিকটবর্তী মসজিদের দরজার নিকট পৌঁছলেন তখন দুজন আনসার তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, একটু থাম, (এ মহিলা আমার স্ত্রী) তারা বলল, সুবহানাল্লাহ! ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এরূপ বলাটা তাদের নিকট কষ্টদায়ক মনে হল। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শয়তান মানুষের রক্ত কণিকার ন্যায় সর্বত্র বিচরণ করে। আমার আশংকা হয়েছিল, না জানি সে তোমাদের মনে কোন সন্দেহের উদ্রেক করে দেয়।

হাদীস নং ২৮৮৩

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (আমার বোন) হাফসা রা.-এর ঘরের উপর (ছাদে) আরোহণ করি। তখন আমি দেখতে পেলাম, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলাকে পিছনে রেখে শাম মুখী হয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে নিচ্ছেন।

হাদীস নং ২৮৮৪

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত তখন আদায় করতেন, যখন সূর্যের আলো তার আঙ্গিনা থেকে বেরিয়ে যায়নি।

হাদীস নং ২৮৮৫

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় তিনি আয়িশা রা.-এর ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে তিনবার বললেন, এ দিক থেকেই ফিতনা, যে দিক থেকে সূর্য উদয়ের সময় শয়তান দাঁড়িয়ে থাকে।

হাদীস নং ২৮৮৬

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আমরা বিনতে আবদুর রাহমান রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা তাঁর নিকট ছিলেন। তখন আয়িশা রা. আওয়াজ শুনতে পেলেন যে, জনৈক ব্যক্তি হাফসা রা.-এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ ব্যক্তি আপনার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার মনে হয়, সে অমুক, হাফসা রা.-এর দুধ চাচা। (নবীজী বললেন) দুধপান তা-ই হারাম করে, যা জন্মগত সম্পর্কের কারণে হারাম হয়।

হাদীস নং ২৮৮৭

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, যখন আবু বকর রা. খলীফা হন, তখন তিনি তাকে বাহরাইনে প্রেরণ করেন এবং তাঁর এ বিষয়ে একটি নিয়োগপত্র লিখে দেন। আর তাতে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুহর দ্বারা মোহরাঙ্কিত করে দেন। উক্ত মোহরে তিনটি লাইন খোদিত ছিল। এক লাইনে মুহাম্মদ, এক লাইনে রাসূল ও এক লাইনে আল্লাহ।

হাদীস নং ২৮৮৮

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..ঈসা ইবনে তাহমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস রা. দুটি পশম বিহীন পুরাতন চপ্পল বের করলেন, যাতে দুটি ফিতা লাগানো ছিল। সাবিত বুনানী রহ. পরে আনাস রা. থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন যে, এ দুটি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাদুকা (মুবারক) ছিল।

হাদীস নং ২৮৮৯

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..আবু বুরদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়িশা রা. একটি মোটা তালী বিশিষ্ট কম্বল বের করলেন আর বললেন, এ কম্বল জড়ানো অবস্থায়ই রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ওফাত হয়েছে। আর সুলাইমান রহ. হুমাইদ রহ. সূত্রে আবু বুরদা রা. থেকে বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন যে, আয়িশা রা. ইয়ামানে তৈরী একটি মোটা তহবন্দ এবং কম্বল যাকে তোমরা জোড়া লাগানো বলে থাক, আমাদের কাছে বের করেন।

হাদীস নং ২৮৯০

আবদান রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেয়ালা ভেঙ্গে যায়। তখন তিনি ভাঙ্গার স্থানে রূপার পাত দিয়ে জোড়া লাগালেন। আসিম রহ. বলেন, আমি সে পেয়ালাটা দেখেছি এবং তাঁতে আমি পান করেছি।

হাদীস নং ২৮৯১

সাঈদ ইবনে মুহাম্মদ জারমী রহ…………আলী ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, যখন তাঁরা ইয়াযীদ ইবনে মুআবিয়ার নিকট থেকে হুসাইন রা.-এর শাহাদাতের পর মদীনায় আসলেন, তখন তাঁর সঙ্গে মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. মিলিত হলেন এবং বললেন, আপনার কি আমার কাছে কোন প্রয়োজন আছে? তবে তা বলুন। তখন আমি তাকে বললাম, না। তখন মিসওয়ার রা. বললেন, আপনি কি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরবারীটি দিবেন? আমার আশংকা হয়, লোকেরা আপনাকে কাবু করে তা ছিনিয়ে নিবে। আল্লাহর কসম! আপনি যদি আমাকে এটি দেন, তবে আমার জীবন থাকা পর্যন্ত কেউ আমার নিকট থেকে তা নিতে পারবে না। একবার আলী ইবনে আবু তালিব রা ফাতিমা রা. থাকা অবস্থায় আবু জাহেল কন্যাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন। আমি তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর মিম্বারে দাঁড়িয়ে লোকদের এ খুতবা দিতে শুনেছি, আর তখন আমি সাবালক। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উক্ত ভাষণে) বললেন, ফাতিমা আমার থেকে (অতি আদরের)। আমি আশংকা করছি সে দীনের ব্যাপারে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। তারপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানু আবদে শামস গোত্রের এক জামাতার প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি তাঁর জামাতা সম্পর্কে প্রশংসা করেন এবং বলেন, সে আমার সঙ্গে যা বলেছে, তা সত্য বলেছে, আমার সঙ্গে যে ওয়াদা করেছে, তা পূরণ করেছে। আমি হালালকে হারামকারী নই এবং হারামকে হালালকারী নই। কিন্তু আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসূলের কন্যা এবং আল্লাহর শত্রুর কন্যা একত্রিত হতে পারে না।

হাদীস নং ২৮৯২

কুতাইবা রহ…………ইবনে হানাফিয়্যা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ,আলী রা. যাদি উসমান রা.-এর সমালোচনা করতেন, তবে সেদিনই করতেন, যেদিন তাঁর নিকট কিছু লোক এসে উসমান রা. কর্তৃক নিযুক্ত যাকাত উসূলকারী কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল। আলী রা. আমাকে জানিয়েছেন, উসমান রা.-এর নিকট যাও এবং তাকে সংবাদ দাও যে, এটি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফরমান। কাজেই আপনার কর্মচারীদের কাজ করার আদেশ দিন। তারা যেন সে অনুসারে কাজ করে। তা নিয়ে আমি তাঁর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, আমার এটির দরকার নেই । তারপর আমি তা নিয়ে আলী রা.-এর নিকট ফিরে এসে তাকে এ সম্পর্কে অবহিত করি। তখন তিনি বললেন, এটি যেখান থেকে নিয়েছ সেখানে রেখে দাও। হুমাইদী রহ……….ইবনে হানাফিয়্যাহ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে বলেন, আমাকে পাঠিয়ে বলেন, এ ফরমানটি নাও এটি উসমান রা.-এর নিয়ে যাও, এতে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকা (যাকাত) সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন।

হাদীস নং ২৮৯৩

বদল ইবনে মুহব্বার রহ………..আলী রা. থেকে বর্ণিত যে, ফাতিমা রা. আটা পিষার কষ্টের কথা জানান। তখন তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছে যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কয়েকজন বন্দী আনা হয়েছে। ফাতিমা রা. রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে একজন খাদিম চাইলেন। তিনি তাকে পেলেন না। তখন তিনি আয়িশা রা.-এর কাছে তা উল্লেখ করেন। তারপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলে আয়িশা রা. তাঁর কাছে বিষয়টি বললেন। (রাবী বলেন) রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন। তখন আমরা শয্যা গ্রহণ করেছিলাম। আমরা উঠতে হলাম। তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাক। আমি তাঁর পায়ের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা যা চেয়েছ, আমি কি তোমাদের তার চাইতে উত্তম বস্তুর সন্ধান দিব না? (তিনি বললেন) যখন তোমরা শয্যা গ্রহণ করবে, তখন চৌত্রিশ বার ‘আল্লাহ আকবার’, তেত্রিশবার ‘আলহামদু লিল্লাহ’ এবং তেত্রিশবার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, এই তোমাদের জন্য তার চাইতে উত্তম, যা তোমরা চেয়েছ।

হাদীস নং ২৮৯৪

আবুল ওয়ালীদ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের আনসারীর এক ব্যক্তির একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সে তার নাম মুহাম্মদ রাখার ইচ্ছা করল। মানসুর রহ. সূত্রে বর্ণিত হাদীসে শুবা বলেন, সে আনসারী বলল, আমি তাকে আমার ঘাড়ে তুলে নিয়ে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম। আর সুলাইমান রহ. হাদীসে রয়েছে যে, তার একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। তখন সে তার নাম মুহাম্মদ রাখার ইচ্ছা করে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা আমার নামে নাম রাখ। কিন্তু আমার কুনীয়াতের অনুরূপ কুনীয়াত রেখ না। আমাকে বণ্টনকারী করা হয়েছে। আমি তোমাদের মাঝে বণ্টন করি। আর হুসাইন রহ. বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি বণ্টনকারী রূপে প্রেরিত হয়েছি। আমি তোমাদের মধ্যে বণ্টন করি। আর আমর রা. জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, সে ব্যক্তি তার সন্তানের নাম কাসিম রাখতে চেয়েছিল, তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা আমার নামে নাম রাখ, আমার কুনীয়াতের অনুরূপ কুনীয়াত রেখ না।

হাদীস নং ২৮৯৫

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে এক জনের পুত্র সন্তান জন্ম হয়। সে তার নাম রাখল কাসিম। তখন আনসারগণ বললেন, আমরা তোমাকে আবুল কাসিম কুনীয়াত ব্যবহার করতে দিব না এবং এর দ্বারা তোমার চক্ষু শীতল করব না। সে ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিয়েছে। আমি তার নাম রেখেছি কাসিম। তখন আনসারগণ বললেন, আমরা তোমাকে আবুল কাসিম কুনীয়াত ব্যবহার করতে দিব না এবং এর দ্বারা তোমার চক্ষু শীতল করব না। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আনসারগণ ভালই করেছে। তোমরা আমার নামে নাম রাখ, কিন্তু কিন্তু কুনীয়াত ব্যবহার করো না। কেননা, আমি তো কাসিম (বণ্টনকারী)।

হাদীস নং ২৮৯৬

হিব্বান ইবনে মূসা রহ………মুআবিয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা যার মঙ্গল চান, তাকে দীনের প্রজ্ঞা দান করেন। আল্লাহই দানকারী আর আমি বণ্টনকারী। এ উম্মত সর্বদা তাদের প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী, আল্লাহর আদেশ (কিয়ামত) আসা পর্যন্ত আর তারা থাকবে বিজয়ী।

হাদীস নং ২৮৯৭

মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি তোমাদের দানও করি না এবং তোমাদের বঞ্চিত করি না। আমি তো কেবল বণ্টনকারী, যেভাবে আদিষ্ট হই, সেভাবে ব্যয় করি।

হাদীস নং ২৮৯৮

আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ রহ……….খাওলাহ আনসারীয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কিছু লোক আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত।

হাদীস নং ২৮৯৯

মুসাদ্দাদ রহ………..উরওয়া আল-বারেকী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘোড়ার কপালের উপরিভাগের কেশগুচ্ছে বাঁধা রয়েছে কল্যাণ, সাওয়াব ও গনীমত কিয়ামত পর্যন্ত।

হাদীস নং ২৯০০

আবুল ইয়ামান রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কিসরা ধ্বংস হয়ে যাবে, তারপরে আর কোন কিসরা হবে না। আর যখন কায়সার ধ্বংস হয়ে যাবে, তারপর আর কোন কায়সার হবে না। যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, তোমরা অবশ্যই ব্যয় করবে উভয় সম্রাজ্যের ধন ভাণ্ডার আল্লাহর পথে।

হাদীস নং ২৯০১

ইসহাক রহ……….জাবির ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কিসরা ধ্বংস হয়ে যাবে তারপর আর কোন কিসরা হবে না। আর যখন কায়সার ধ্বংস হয়ে যাবে, তারপর আর কোন কায়সার হবে না। যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, তোমরা অবশ্যই ব্যয় করবে উভয় সম্রাজ্যের ধন ভাণ্ডার আল্লাহর পথে।

হাদীস নং ২৯০২

মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ…….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গনীমতের মাল হালাল করা হয়েছে।

হাদীস নং ২৯০৩

ইসমাঈল রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং তাঁরই প্রতি দৃঢ় আস্থায় তাঁরই পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়, আল্লাহর তার জিম্মা গ্রহণ করেছেন, হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা সে যে সাওয়াব ও গনীমত অর্জন করেছে তা সহ তাকে ঘরে ফিরাবেন, যেখান থেকে সে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল।

হাদীস নং ২৯০৪

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন একজন নবী জিহাদ করেছিলেন। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, এমন কোন ব্যক্তি আমার অনসরণ করবে না, যে কোন মহিলাকে মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা রাখে, কিন্তু সে এখনো মিলিত হয়নি। এমন ব্যক্তিও না যে ঘর তৈরী করেছে কিন্তু তার ছাদ তোলেনি। আর এমন ব্যক্তিও না যে গর্ভবতী ছাগল বা উটনী কিনেছে এবং সে তার প্রসবের অপেক্ষা করছে। তারপর তিনি জিহাদে গেলেন এবং আসরের সালাতের সময় কিংবা এর কাছাকাছি সময়ে একটি জনপদের নিকটবর্তী হলেন। তখন তিনি সূর্যকে বললেন, তুমিও আদিষ্ট আর আমিও আদিষ্ট। ইয়া আল্লাহ! সূর্যকে থামিয়ে দিন। তখন তাকে থামিয়ে দেওয়া হল। অবশেষে আল্লাহ তাকে বিজয় দান করেন। এরপর তিনি গনীমত একত্রিত করলেন। তখন সেগুলো জ্বালিয়ে দিতে আগুন এল কিন্তু আগুন তা জ্বালাল না। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তোমাদের মধ্যে (গনীমতের) আত্মসাৎকারী রয়েছে। প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন যেন আমার কাছে বাইআত করে। সে সময় একজনের হাত নবীর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যেই আত্মসাৎ রয়েছে। কাজেই তোমার গোত্রের লোকেরা যেন আমার কাছে বাইআত করে। এ সময় দুব্যক্তির বা তিন ব্যক্তির হাত তাঁর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যেই আত্মসাৎ রয়েছে। অবশেষে তারা একটি গাভীর মস্তক সমতুল্য স্বর্ণ উপস্থিত করল এবং তা রেখে দিল। তারপর আগুন এসে তা জ্বালিয়ে ফেলল। এরপর আল্লাহ আমাদের জন্য গনীমত হালাল করে দিলেন এবং আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা লক্ষ্য করে তা আমাদের জন্য হালাল করে দিলেন।

হাদীস নং ২৯০৫

সাদকা রহ……….যায়েদ ইবনে আসলাম রহ.-এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. বলেছেন, যদি পরবর্তী মুসলিমদের ব্যাপার না হতো, তবে যে জনপদই বিজিত হতো, তাই আমি সেই জনপদবাসীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম, যেমন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার এলাকা বণ্টন করে দিয়েছেন।

হাদীস নং ২৯০৬

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক বেদুঈন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রশ্ন করল যে, কেউ যুদ্ধ করে গনীমতের জন্য, কেউ যুদ্ধ করে জনসাধারণ্যে খ্যাতি লাভের উদ্দেশ্যে আর যুদ্ধ করে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য, এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করল? তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে, সেই আল্লাহর রাহে জিহাদকারী ।

হাদীস নং ২৯০৭

আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওহহাব রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আবু মুলায়কা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সোনালী কারুকার্য খচিত রেশমী কাবা জাতীয় পোষাক হাদীয়া দেয়া হল। তিনি তাঁর সাহাবীগণের মধ্য থেকে কয়েকজনকে তা বণ্টন করে দেন এবং তা থেকে একটি কাবা মাখরামা ইবনে নাওফল রা.-এর জন্য আলাদা করে রাখেন। তারপর মাখরামা রা. তাঁর পুত্র মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা.-কে সাথে নিয়ে এসে দরজায় দাঁড়ালেন আর (পুত্রকে) বললেন, তাকে আমার জন্য আহবান কর। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি একটি কাবা নিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। আর এক কারুকার্য খচিত অংশ তার সামনে তুলে ধরে বললেন, হে আবুল মিসওয়ার! আমি এটি তোমার জন্য রেখে দিয়েছি। আমি এটি তোমার জন্য রেখে দিয়েছি। আর মাখরামা রা.-এর স্বভাবে কিছুটা রূঢ়তা ছিল। এ হাদীসটি ইসমাঈল ইবনে উলাইয়া রহ. ও আইউব রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন। আর হাতিম ইবনে ওয়ারদান রহ. বলেন, আইউব রহ. ইবনে আবু মুলাইকা রহ. সুত্রে মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কয়েকটি কাবা জাতীয় পোষাক এসেছিল। (বাকী অংশ আগের মত)। লাইস রহ. ইবনে মুলাইকা রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় আইয়ূব রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ২৯০৮

আবদুল্লাহ ইবনে আবুল আসওয়াদ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য কিছু খেজুর গাছ নির্দিষ্ট করতেন কুরায়যা ও নাযীরের উপর বিজয় লাভ করা পর্যন্ত । তারপর তিনি সে গাছগুলো তাদের ফেরত দিয়ে দেন।

হাদীস নং ২৯০৯

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ………আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উষ্ট্র যুদ্ধের দিন যুবাইর রা. যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান গ্রহণ করে আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে বললেন, হে পুত্র! আজকের দিন জালিম অথবা মাজলুম ব্যতীত কেউ নিহত হবে না। আমার মনে হয়, আমি আজ মাজলুম হিসেবে নিহত হব। আর আমি আমার ঋণ সম্পর্কে বেশী চিন্তিত। তুমি কি মনে কর যে, আমার ঋণ আদায় করার পর আমার সম্পদের কিছু অবশিষ্ট থাকবে? তারপর তিনি বললেন, হে পুত্র! আমার সম্পদ বিক্রয় করে আমার ঋণ পরিশোধ করে দাও। তিনি এক তৃতীয়াংশের ওসীয়্যাত করেন। আর সেই এক তৃতীয়াংশের এক তৃতীয়াংশ ওয়াসিয়্যাত করেন তাঁর পুত্রদের জন্য তার অর্থাৎ আবদুল্লাহ, তিনি বললেন, এক তৃতীয়াংশকে তিন ভাগে বিভক্ত করবে ঋণ পরিশোধ করার পর যদি আমার সম্পদের কিছু উদ্বৃত্ত থাকে, তবে তার এক তৃতীয়াংশ তোমার পুত্রদের জন্য। হিশাম রহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-এর কোন কোন পুত্র যুবাইর রা.-এর পুত্রদের সমবয়সী ছিলেন। যেমন, খুবায়েব ও আব্বাদ। আর মৃত্যুকালে তাঁর নয় কন্যা ছিল। আবদুল্লাহ রা. বলেন, তিনি আমাকে তাঁর ঋণ সম্পর্কে ওসীয়্যাত করছিলেন এবং বলছিলেন, হে পুত্র! যদি এ সবের কোন বিষয়ে তুমি অক্ষম হও, তবে এ ব্যাপারে আমার মাওলার সাহায্য চাইবে। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি বুঝে উঠতে পারিনি যে, তিনি মাওলা দ্বারা কাকে উদ্দেশ্য করেছেন। অবশেষে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে পিতা ! আপনার মাওলা কে? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ। আব্দুল্লাহ রা. বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যখনই তাঁর ঋণ আদায়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, তখনই বলেছি, হে যুবাইরের মাওলা! তাঁর পক্ষ থেকে তাঁর ঋণ আদায় করে দিন। আর তাঁর করয শোধ হয়ে যেত। এরপর যুবাইর রা. শহীদ হলেন এবং তিনি নগদ কোন দীনার রেখে যাননি আর না কোন দিরহাম। তিনি কিছু জমি রেখে যান যার মধ্যে একটি হল গাবা। আরো রেখে যান মদীনায় এগারোটি বাড়ী, বসরায় দুটি, কূফায় একটি ও মিসরে একটি। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বলেন, যুবাইর রা.-এর ঋণ থাকার কারণ এই ছিল যে, তাঁর একটি কেউ যখন কোন মাল আমানত রাখতে আসত তখন যুবাইর রা. বলতেন, না, এভাবে নয় ; তুমি তা আমার কাছে ঋণ হিসাবে রেখে যাও। কেননা আমি ভয় করছি যে, তোমার মাল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যুবাইর রা. কখনও কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা বা কর আদায়কারী অথবা অন্য কোন কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। অবশ্য তিনি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গী হয়ে অথবা আবু বকর, উমর ও উসমান রা.-এর সঙ্গী হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বলেন, তারপর আমি তাঁর ঋণের পরিমাণ হিসাব করলাম এবং দেখলাম তাঁর ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ পেলাম। রাবী বলেন, সাহাবী হাকীম ইবনে হিযাম রা. আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেন, হে ভাতিজা! বল তো আমার ভাইয়ের কত ঋণ আছে? তিনি তা প্রকাশ না করে বললেন, এক লাখ। তখন হাকীম বিনে হিযাম রা. বললেন, আল্লাহর কসম! এ সম্পদ দ্বারা এ পরিমাণ ঋণ শোধ হতে পারে, আমি এরূপ মনে করি না। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. তাকে বললেন, যদি ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ হয়, তবে কী ধারণা করেন? হাকীম ইবনে হিযাম রা. বললেন, আমি মনে করি না যে, তোমরা এর সামর্থ রাখ। যদি তোমরা এ বিষয়ে অক্ষম হও, তবে আমার সহযোগিতা গ্রহণ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বলেন, যুবাইর রা. গাবাস্থিত ভূমিটি এক লাখ সত্তর হাজারে কিনেছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. তা ষোল লাখের বিনিময়ে বিক্রয় করেন। আর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, যুবাইর রা.-এর নিকট কারা পাওনাদার রয়েছে, তারা আমার সঙ্গে গাবায় এসে মিলিত হবে। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-কে বললেন, তোমরা চাইলে আমি তা তোমাদের জন্য ছেড়ে দিব। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. -কে বললেন, না। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা. বললেন, যদি তোমরা তা পরে দিতে চাও, তবে তা পরে পরিশোধের অন্তর্ভূক্ত করতে পার। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বললেন, না। তখন আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা. বললেন, তবে আমাকে এক টুকরা ভূমি দাও। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বললেন, এখান থেকে ওখান পর্যন্ত জমি আপনার। রাবী বলেন, তারপর আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. গাবার জমি থেকে বিক্রয় করে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করেন। তখনও তাঁর নিকট গাবার জমির সাড়ে চার অংশ অবশিষ্ট থেকে যায়। তারপর তিনি মুআবিয়া রা.-এর কাছে এলেন। সে সময় তাঁর কাছে আমর ইবনে উসমান, মুনযির ইবনে যুবাইর ও আবদুল্লাহ ইবনে যামআ রা. উপস্থিত ছিলেন। মুআবিয়া রা. তাকে বললেন, গাবার মূল্য কত নির্ধারিত হয়েছে? তিনি বললেন, প্রত্যেক অংশ এক লাখ হারে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কত অবশিষ্ট আছে ? আবদুল্লাহ রা. বললেন, সাড়ে চার অংশ। তখন মুনযির ইবনে যুবাইর রা. বললেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। আমর ইবনে উসমান রা. বলেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। আর আবদুল্লাহ ইবনে যামআ রা. বললেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। তখন মুআবিয়া রা. বললেন, আর কি পরিমাণ অবশিষ্ট আছে? আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বললেন, দেড় অংশ অবশিষ্ট রয়েছে। মুআবিয়া রা. বললেন, আমি তা দেড় লাখে নিলাম। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা. তাঁর অংশ মুআবিয়া রা.-এর নিকট ছয় লাখে বিক্রয় করেন। তারপর যখন ইবনে যুবাইর রা. তাঁর পিতার ঋণ পরিশোধ করে সারলেন তখন যুবাইর রা.-এর পুত্ররা বললেন, আমাদের মীরাস ভাগ করে দিন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বললেন, না, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মাঝে ভাগ করব না, যতক্ষণ আমি চারটি হজ্জ মৌসুমে এ ঘোষণা প্রচার না করি যে, যদি কেউ যুবাইর রা.-এর কাছে ঋণ পাওনা থাকে, সে যেন আমাদের কাছে আসে, আমরা তা পরিশোধ করব। রাবী বলেন, তিনি প্রতি হজ্জের মৌসুমে ঘোষণা প্রচার করেন। তারপর যখন চার বছর অতিবাহিত হল, তখন তিনি তা তাদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। রাবী বলেন, যুবাইর রা.-এর চার স্ত্রী ছিলেন। এক তৃতীয়াংশ পৃথক করে রাখা হল। প্রত্যেক স্ত্রী বার লাখ করে পেলেন। আর যুবাইর রা.-এর মোট সম্পত্তি পাঁচ কোটি দু’লাখ ছিল।

হাদীস নং ২৯১০

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উসমান রা. বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। কেননা, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ছিলেন তাঁর সহধর্মিণী আর তিনি ছিলেন পীড়িত। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব ও (গনীমতের) অংশ তুমি পাবে।

হাদীস নং ২৯১১

সাঈদ উফাইর রহ…………..উরওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাকে মারওয়ান ইবনে হাকাম ও মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. বর্ণনা করেছেন যে, যখন হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধি দল মুসলমান হয়ে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল যে, তাদের মাল ও বন্দী উভয়ই ফেরত দেওয়া হোক। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, আমার নিটক সত্য কথা অধিক প্রিয়। তোমরা দুয়ের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ কর। হয় বন্দী, নয় মাল। আর আমি তো তাদের (হাওয়াযিন গোত্রের) প্রতীক্ষা করেছিলাম আর তায়েফ থেকে ফেরার সময় রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ দিন থেকে বেশী সময় তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। অবশেষে যখন তাদের কাছে স্পষ্ট হল যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দুটোর মধ্যে যে কোন একটিই ফেরত দিবেন, তখন তারা বলল, আমরা আমাদের বন্দীদের ফেরত লাভই পছন্দ করি। তারপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের সামনে দাঁড়ালেন। প্রথমে তিনি আল্লাহ তা’আলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। তারপর বললেন, তোমাদের এ সকল ভাই তাওবা করে আমার নিকট এসেছে। আর আমি সমীচীন মনে করছি যে, তাদের বন্দীদের ফেরত দিব। যে ব্যক্তি সন্তুষ্টচিত্তে তা করতে চায়, সে যেন তা করে আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি চায় যে, তার অংশ বহাল থাকুক সে যেন অপেক্ষা করে (কিংবা) আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে প্রথম যে গনীমতের মাল দান করবেন, আমি তাকে তা দিয়ে দিব, তাও করতে পারে। সমবেত লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা সন্তুষ্টচিত্তে সেটি গ্রহণ করলাম। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সঠিক জানতে পারিনি, তোমাদের মধ্যে কে এতে সম্মতি দিয়েছে, আর কে দেয়নি। কাজেই তোমরা ফিরে যাও এবং নিজ নিজ প্রতিনিধির মাধ্যমে আমাকে তোমাদের সিদ্ধান্ত জানাও। লোকেরা চলে গেল। আর তাদের প্রতিনিধিরা নিজেদের লোকের সঙ্গে আলোচনা করে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফেরত এল এবং তাকে জানাল যে, তারা সন্তুষ্টচিত্তে (বন্দী ফেরত দানের ব্যাপারে) সম্মতি দিয়েছে। (ইবনে শিহাব বলেন) হাওয়াযিনের বন্দীগণ সম্পর্কিত বিবরণ আমাদের নিকট এরূপই পৌঁছেছে।

হাদীস নং ২৯১২

আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব রহ……….যাহদাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আবু মূসা রা.-এর কাছে ছিলাম, এ সময় মুরগীর (গোশত) সম্বন্ধে আলোচনা উঠল। তথায় তাইমুল্লাহ গোত্রের এমন লাল বর্ণের এক ব্যক্তিও উপস্থিত ছিল, যেন সে মাওয়ালী (রোমক ক্রীতদাস)-দের একজন। তাকে খাওয়ার জন্য ডাকলেন। তখন সে বলে উঠল, আমি মুরগীকে এমন বস্তু খেতে দেখেছি যাতে আমার ঘৃণা জন্মেছে। তাই আমি শপথ করেছি যে, তা খাব না। আবু মূসা রা. বললেন, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে হাদীস শুনাচ্ছি। আমি কয়েকজন আশআরী ব্যক্তির পক্ষে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সাওয়ারী চাইতে যাই। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাওয়ারী দিব না এবং আমার কাছে তোমাদের দেয়ার মত কোন সাওয়ারীও নেই। এ সময় রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গনীমতের কয়েকটি উট আনা হল। তখন তিনি আমাদের খোঁজ নিলেন এবং বললেন, সেই আশআরী লোকেরা কোথায়? তারপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঁচু সাদা চুলওয়ালা পাঁচটি উট আমাদের দিতে বললেন। যখন আমরা উট নিয়ে রওয়ানা হলাম বললাম, আমরা আপনার নিকট সাওয়ারীর জন্য আবেদন করেছিলাম, তখন আপনি শপথ করে বলেছিলেন, আমাদের সাওয়ারী দিবেন না। আপনি কি তা ভুলে গিয়েছেন? রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের সাওয়ারী দেইনি বরং আল্লাহ তা’আলা তোমাদের সাওয়ারী দান করেছেন। আর আল্লাহর কসম, আমার অবস্থা এই যে, ইনশাআল্লাহ কোন বিষয়ে আমি কসম করি এবং তার বিপরীতটি মঙ্গলজনক মনে করি, তখন সেই মঙ্গলজনকটি আমি করি এবং কাফফারা দিয়ে কসম থেকে মুক্ত হই।

হাদীস নং ২৯১৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদের দিকে একটি সেনাদল পাঠালেন, যাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন উমর রা.ও ছিলেন। এ যুদ্ধে গনীমত স্বরূপ তাঁরা বহুসংখ্যক উট লাভ করেন। তাদের প্রত্যেকের ভাগে এগারোটি কিংবা বারটি কের উট পড়েছিল এবং তাদেরকে পুরস্কারস্বরূপ আরো একটি করে উট দেয়া হয়।

হাদীস নং ২৯১৪

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রেরিত কোন কোন সেনাদলে কোন কোন ব্যক্তিকে সাধারণ সেনাদের প্রাপ্য অংশের অতিরিক্ত দান করতেন।

হাদীস নং ২৯১৫

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ……….আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইয়ামানে থাকতেই আমাদের নিকট রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিজরত করার সংবাদ পৌঁছে। তখন আমরাও তাঁর নিকট হিজরত করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। আমি এবং আমার আরো দুই ভাই এর মধ্যে ছিলাম। আমি ছিলাম সর্বকনিষ্ঠ। তাদের একজন হলেন আবু বুরদাহ, অপরজন আবু রুহম। রাবী হয়ত বলেছেন, আমার গোত্রের আরোও কতিপয় লোকের মধ্যে; কিংবা বলেছেন, আমার গোত্রের তিপ্পান্ন বা বায়ান্ন জন লোকের মধ্যে। তারপর আমরা একটি নৌযানে আরোহণ করলাম। ঘটনাক্রমের আমাদেরকে নৌযানটি হাবশার নাজ্জাশী বাদশাহর দিকে নিয়ে যায়। সেখানে আমরা জাফর ইবেন আবু তালিব রা. ও তাঁর সঙ্গীদের সাথে মিলিত হই। জাফর রা. বললেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন এবং এখানে অবস্থান করার নির্দেশে দিয়েছেন। তাই আপনারাও আমাদের সঙ্গে এখানে অবস্থান করুন। তখন আমরা তাঁর সঙ্গে থেকে গেলাম। অবশেষে আমরা সকলে একত্রে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলাম। এমন সময় আমরা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য অংশ নির্ধারণ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) কিংবা তিনি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরও তা থেকে দিয়েছেন। আমাদের ব্যতীত খায়বার বিজয়ে অনুপস্থিত কাউকেই তা থেকে অংশ দেননি, জাফর রা. ও তাঁর সঙ্গীগণের সাথে আমাদের এ নৌযানে আরোহীদের মধ্যে বণ্টন করেছেন।

হাদীস নং ২৯১৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আমার নিকট বাহরাইনের মাল আসে, তবে আমি তোমাকে (দুই হাত মিলিয়ে) এ পরিমাণ ও এ পরিমাণ দান করব। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকাল অবধি তা এলো না। তারপর যখন বাহরাইনের মাল এল, তখন আবু বকর রা. ঘোষণা দানকারীকে এ ঘোষণা দেয়ার আদেশ করলেন যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যার কোন ঋণ বা প্রতিশ্রুতি রয়েছে, সে যেন আমার নিকট আসে। এরপর আমি তাঁর নিকট গিয়ে বললাম, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এত এত ও এত দেয়ার কথা বলেছেন। তখন আবু বকর রা. তিনবার অঞ্জলী ভরে দান করেন। সুফিয়ান রা. তাঁর দুই হাত একত্র করে অঞ্জলী করে আমাদের বললেন, ইবনে মুনকাদির এরূপই বলেছেন। জাবির রা. বলেন, তারপর আমি আবু বকর রা.-এর নিকট এলাম এবং তাঁর কাছে চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন না। আবার আমি তাঁর কাছে এলাম। তখনও তিনি আমাকে দিলেন না। আবার আমি তাঁর কাছে তৃতীয়বার এসে বললাম, আমি আমি আপনার নিকট চেয়েছি, আপনি আমাকে দেননি। আবার আমি তাঁর কাছে চেয়েছি, তখনও আপনি আমাকে দেননি। পুনরায় আমি আপনার নিকট চেয়েছি, আপনি আমাকে দেননি। এখন আমাকে আপনি দেবেন, না হয় আমার সঙ্গে কার্পণ্য করবেন। আবু বকর রা. বললেন, তুমি আমাকে বলছ, কার্পণ্য করবেন? আমি যতবারই তোমাকে দিতে অস্বীকার করি না কেন, আমার ইচ্ছা যে, আমি তোমাকে দেই। সুফিয়ান রহ. বলেন, আমর রহ. মুহাম্মদ ইবনে আলী রহ. সুত্রে জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, (তিনি বলেন) আবু বকর রা. আমকে এক অঞ্জলী দিয়ে বললেন, এটা গুণে নাও। আমি গণনা করে দেখলাম, পাঁচশত। তখন তিনি বললেন, এরূপ আরও দুবার নিয়ে নাও। আর ইবনুল মুনকাদিরের বর্ণনায় আছে যে, (আবু বকর রা.) কার্পণ্য অপেক্ষা বড় রোগ কী হতে পারে?

হাদীস নং ২৯১৭

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিয়রানা নামক স্থানে গনীমতের মাল বণ্টন করছিলেন, তখন এক ব্যক্তি বলল, (বণ্টন) ইনসাফ করুন। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে তুমি হবে হতভাগ্য।

হাদীস নং ২৯১৮

ইসহাক ইবনে মানসুর রহ………..যুবাইর ইবনে মুতয়িম রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের যুদ্ধ বন্দীদের প্রসঙ্গে বলেন, যদি মুতয়িম ইবনে আদী রা. জীবিত থাকতেন আর নিকট এ সকল নোংরা লোকের ব্যাপারে সুপারিশ করতেন, তবে আমি তাঁর খাতিরে এদের ছেড়ে দিতাম।

হাদীস নং ২৯১৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….যুবাইর ইবনে মুতয়িম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং উসমান ইবনে আফফান রা. রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম এবং বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি বানু মুত্তালিবকে দিয়েছেন, আমাদের বাদ দিয়েছেন। অথচ আমরা এবং তারা আপনার সাথে একই পর্যায়ে সম্পর্কিত। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বানু মুত্তালিব ও বানু হাশিম একই পর্যায়ের। লায়স রহ. বলেন, ইউনুস রহ. আমাকে এ হাদীসটিতে অতিরিক্ত বলেছেন যে, যুবাইর রা. বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানু আবদ শামস ও বানু নাওফলকে অংশ দেননি। ইবনে ইসহাক রহ. বলেন, আবদ শামস, হাশিম ও মুত্তালিব একই মায়ের গর্ভজাত সহোদর ভাই। তাদের মা আতিকা বিনতে মুররা আর নাওফল তাদের বৈমাত্রেয় ভাই ছিলেন।

হাদীস নং ২৯২০

মুসাদ্দাদ রহ………..আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আমি বদর যুদ্ধে সারিতে দণ্ডায়মান, আমি আমার ডানে বামে তাকিয়ে দেখলাম, অল্প বয়স্ক দু’জন আনসার যুবকের মাঝখানে রয়েছি। আমার আকাংখা ছিল, তাদের অপেক্ষা শক্তিশালীদের মধ্যে থাকি। তখন তাদের একজন আমাকে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, চাচা! আপনি কি আবু জাহলকে চিনেন? আমি বললাম হ্যাঁ। তবে ভাতিজা তাতে তোমার কি প্রয়োজন? সে বলল, আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে সে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গালমন্দ করে। সে মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ। আমি যদি তাকে দেখতে পাই, তবে আমার দেহ দেহ থেকে বিছিন্ন হবে না যতক্ষণ না আমাদের মধ্যে যার মৃত্যু আগে অবধারিত, সে মারা যায়। আমি তার কথায় বিস্মিত হলাম। তা শুনে দ্বিতীয়জন আমাকে খোঁচা দিয়ে অনুরূপ বলল। তৎক্ষণাৎ আমি আবু জাহালকে দেখলাম, সে মানুষের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন আমি বললাম, এই যে, তোমাদের সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলে। তারা তৎক্ষণাৎ নিজের তরবারী নিয়ে তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাকে আঘাত করে হত্যা করল। এরপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে ফিরে এসে তাকে অবহিত করল। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে কে তাকে হত্যা করেছে? তারা উভয়ে দাবী করল, আমি তাকে হত্যা করেছি। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের তরবারী তোমরা মুছে ফেলনি তো? তারা উভয়ে বলল, না। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়ের তরবারী দেখলেন এবং বললেন, তোমরা উভয়ে তাকে হত্যা করেছো। অবশ্য তার থেকে প্রাপ্ত মালামাল মুআয ইবনে আমর ইবনে জামুহের জন্য। তারা দু’জন হল, মুআয ইবনে আফরা ও মুআয ইবনে আমর ইবনে জামূহ।

হাদীস নং ২৯২১

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ…………আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের বছর আমরা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন শত্রুর মুখোমুখি হলাম, তখন মুসলিম দলের মধ্যে ছুটোছুটি আরম্ভ হল। এমন সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যক্তিকে দেখলাম, সে একজন মুসলমানের উপর চড়ে বসেছে। আমি ঘুরে তার পেছনের দিক দিয়ে এসে তরবারী দ্বারা তার ঘাড়ের রগে আঘাত হানলাম। তখন সে আমার দিকে এগিয়ে এল এবং আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল যে, আমি তাতে মৃত্যুর আশংকা করছিলাম। মৃত্যু তাকেই পাকড়াও করল এবং আমাকে ছেড়ে দিল। তারপর আমি উমর রা.-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললাম, লোকদের কি হয়েছে? লোকদের কি হয়েছে? উমর রা. বললেন, আল্লাহর হুকুম। এরপর লোকজন ফিরে এলো এবং রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসলেন, তখন তিনি বললেন, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার নিকট থেকে প্রাপ্ত মাল-সামান তারই প্রাপ্ত। তখন আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছে যে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? তারপর আমি বসে পড়লাম। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার নিকট থেকে প্রাপ্ত মাল-সামান তারই প্রাপ্য। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছ যে, আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? তারপর আমি বসে পড়লাম। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয়বার অনুরূপ বললেন, আমি আবার দাঁড়ালাম, তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু কাতাদা ! তোমার কি হয়েছে? আমি তখন সম্পূর্ণ ঘটনা বললাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবু কাতাদা রা. সত্য বলেছে। সে ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল-সামান আমার নিকট আছে। আপনি আমার পক্ষ থেকে একে সম্মত করিয়ে দিন। তখন আবু বকর ছিদ্দীক রা. বলে উঠলেন, কখনো না, আল্লাহর শপথ! রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এমন করবেন না যে, আল্লাহর সিংহাদের মধ্যে থেকে কোন সিংহ আল্লাহ ও রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষে যুদ্ধ করবে আর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল-সামান তোমাকে দিবেন! তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু বকর রা. ঠিকই বলেছে। ফলে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা আমাকে দিলেন। আমি তা থেকে একটি বর্ম বিক্রি করে বানূ সালমায় একটি বাগান ক্রয় করি। এটাই ইসলাম গ্রহণের পর আমার প্রথম সম্পত্তি, যা আমি লাভ করি।

হাদীস নং ২৯২২

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু চাইলাম। তখন তিনি আমাকে দিলেন। আমি আবার চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। এরপর আমাকে বললেন, হে হাকীম, এ সকল মাল সবুজ শ্যামল ও সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা নির্লোভ অন্তরে গ্রহণ করে, তার তাতে বরকত দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি তা লোভনীয় অন্তরে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয় না। তার উদাহরণ সে ব্যক্তির ন্যায়, যে আহার করে কিন্তু উদর পূর্ণ হয় না। আর উপরের হাত নীচের হাত থেকে উত্তম। হাকীম রা. বলেন, আমি বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ সে মহান সত্তার কসম! যিনি আমাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন আপনার পর আমি দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া পর্যন্ত আর কারো মাল কামনা করব না। পরে আবু বকর রা.(তাঁর খিলাফত কালে) হাকীম ইবনে হিযাম রা.-কে ভাতা নেওয়ার জন্য আহবান করতেন কিন্তু তিনি কোন কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। তারপর উমর রা. তাকে ভাতা দানের উদ্দেশ্যে আহবান করেন কিন্তু তিনি তাঁর নিকট থেকেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তখন উমর রা. বললেন, হে মুসলিমগণ! আমি হাকীম ইবনে হিযাম রা.-কে তার জন্য সে প্রাপ্য দিতে চেয়েছি। যা আল্লাহ তা’আলা তার জন্য সম্পদ থেকে হিসসা রেখেছেন। আর সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। এভাবে হাকীম ইবনে হিযাম রা. রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরে আর কারো নিকট থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কিছুই গ্রহণ করেন নি।

হাদীস নং ২৯২৩

আবুন নুমান রহ………..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনে খাত্তাব রা. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জাহেলী যুগে আমার উপর একদিনের ইতিকাফ (মান্নত) ছিল। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তা পূরণ করার আদেশ করেন। নাফি রহ. বলেন, উমর রা. হুনাইনের যুদ্ধের বন্দী থেকে দুটি দাসী লাভ করেন। তখন তিনি তাদেরকে মক্কায় একটি গ্রহে রেখে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনের বন্দীদেরকে সৌজন্যমূলক ছেড়ে দেয়ার আদেশ দান করলেন। তারা মুক্ত হয়ে অলি-গলিতে ছুটাছুটি লাগল। উমর রা. আবদুল্লাহ রা.-কে বললেন, দেখ তো ব্যাপার কি? তিনি বললেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বন্দীদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। উমর রা. বললেন, তবে তুমি গিয়ে সে দাসী দুজনকে ছেড়ে দাও। নাফি রহ. বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিয়েররানা থেকে উমরা করেন নি। যদি তিনি উমরা করতেন তবে তা আবদুল্লাহ রা. থেকে গোপন থাকত না। আর জারীর ইবনে হাযিম রহ. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করতেন যে, (উমর রা. দাসী দুটি) খুমুস থেকে পেয়েছিলেন। মাআমার রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে নযরের (মান্নতের) ব্যাপারটির উল্লেখ করেন, কিন্তু একদিনের কথা বলেনি।

হাদীস নং ২৯২৪

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..আমর ইবনে তাগলিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দলকে দিলেন আর অন্য দলকে দিলেন না। তারা যেন এতে মনক্ষুণ্ন হলেন। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এমন লোকদের দেই, যাদের সম্পর্কে বিগড়ে যাওয়া কিংবা ধৈর্যহারা হওয়ার আশংকা করি। আর অন্যদল যাদের অন্তরে আল্লাহ তা’আলা যে কল্যাণ ও অমুখাপেক্ষিতা দান করেছেন, তার উপর ছেড়ে দেই। আর আমর ইবনে ইবনে তাগলিব রা. তাদের অন্তর্ভূক্ত। আমর ইবনে তাগলিব রা. বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সম্পর্কে যা বলেছেন, তার পরিবর্তে যদি আমাকে লাল বর্ণের উট দেওয়া হত তাতে আমি এতখানি খুশী হতাম না। আর আবু আসিম রহ. জারীর রহ. থেকে হাদীসটি এতটুকু অতিরিক্তসহ বর্ণনা করেছেন যে, হাসান রহ. বলেন, আমাকে আমর ইবনে তাগলিব রা. বলেছেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু মাল অথবা বন্দী আনীত হয়, তখন তিনি তা বণ্টন করেন।

হাদীস নং ২৯২৫

আবুল ওয়ালীদ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কুরাইশদের দিয়ে থাকি তাদের মন রক্ষা করার জন্য। কেননা তারা জাহেলী যুগের কাছাকাছি।

হাদীস নং ২৯২৬

আবুল ইয়ামান রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, যখন আল্লাহ তা’আলা গোত্রের লোকদের একশ করে উট দিতে লাগলেন। তখন আনসারদের থেকে কিছু সংখ্যক লোক বলতে লাগল, আল্লাহ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ক্ষমা করুন। তিনি কুরাইশদেরকে দিচ্ছেন, আমাদেরকে দিচ্ছেন না। অথচ আমাদের তরবারী থেকে রক্ত এখনও ঝরছে। আনাস রা. বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তাদের উক্তি পৌঁছান হল। তখন তিনি আনসারদের ডেকে পাঠালেন এবং চর্ম নির্মিত একটি তাবুতে তাদের একত্রিত করলেন আর তাদের সঙ্গে তাদের ছাড়া আর কাউকে ডাকলেন না। যখন তারা সকলে একত্রিত হলেন, তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, আমার নিকট তোমাদের সম্পর্কে যে কথা পৌঁছেছে তা কি? তাদের মধ্যে সমঝদার লোকেরা তাকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্য থেকে মুরুব্বীরা কিছুই বলেননি। আমাদের কতিপয় তরুণরা বলেছে। আল্লাহ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ক্ষমা করুন। তিনি আনসারদের না দিয়ে কুরাইশদের দিচ্ছেন; অথচ আমাদের তরবারী থেকে এখনও তাদের রক্ত ঝরছে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এমন লোকদের দিচ্ছি , যাদের কুফরীর যুগ সদ্য সমাপ্ত হয়েছে। তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা পার্থিব সম্পদ নিয়ে ফিরবে, আর তোমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নিয়ে মানযিলে ফিরবে আর আল্লাহর কসম! তোমরা যা নিয়ে মানযিলে ফিরবে, তা তারা যা নিয়ে ফিরবে, তার চাইতে উত্তম। তখন আনসারগণ বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা এতে সন্তুষ্ট। তারপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার পরে তোমরা তোমাদের উপর অন্যদের প্রাধান্য দেখতে পাবে। তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করে থাকবে, যে পর্যন্ত না তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হাউযে (কাওসারে) মিলিত হবে। আনাস রা. বলেন, কিন্তু আমরা (আনসারগণ) ধৈর্যধারণ করতে পারিনি।

হাদীস নং ২৯২৭

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ উয়াইসী রহ……….যুবাইর ইবনে মুতইম রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন, আর তখন তাঁর সঙ্গে আরো লোক ছিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইন থেকে আসছিলেন। বেদুঈন লোকেরা তাঁর কাছে গনীমতের মাল চাইতে এসে তাকে আকড়িয়ে ধরল। এমনকি তারা তাকে একটি বাবলা গাছের সাথে ঠেকিয়ে দিল এবং কাঁটা তাঁর চাদরে আটকে ধরল। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থামলেন। তারপর বললেন, আমার চাদরখানা দাও। আমার নিকট যদি এ সকল কাঁটাদার বন্য বৃক্ষের সমপরিমাণ পশু থাকত, তবে সেগুলো তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। এরপরও আমাকে তোমরা কখনো কৃপণ, মিথ্যাবাদী এবং দুর্বল চিত্ত পাবে না।

হাদীস নং ২৯২৮

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রাস্তায় চলছিলাম। তখন তিনি মোটা পাড়ের নাজরানে প্রস্তুত চাদর পরিহিত ছিলেন। এক বেদুঈন তাকে পেয়ে খুব জোরে টেনে ধরল। অবশেষে আমি লক্ষ্য করলাম, তার জোরে টানার কারণে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাঁধে চাদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। তারপর বেদুঈন বলল, আল্লাহর যে সম্পদ আপনার কাছে রয়েছে তা থেকে আমাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দিন। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি তাকিয়ে একটি মুচকি হাসি দিলেন, আর তাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।

হাদীস নং ২৯২৯

উসমান ইবনে আবু শাইবা রহ……….আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের দিনে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন লোককে বণ্টনে অন্যদের উপর প্রাধান্য দেন। তিনি আকরা ইবনে হাবিছকে একশ উট দিলেন। উয়াইনাকেও এ পরিমাণ দেন। সম্ভ্রান্ত আরব ব্যক্তিদের দিলেন এবং বণ্টনে তাদের অতিরিক্ত দিলেন। এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! এখানে সুবিচার করা হয়নি। অতবা সে বলল, এতে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়নি। (রাবী বলেন) তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবশ্যই জানিয়ে দিব। তখন আমি তাঁর কাছে এলাম এবং তাকে একথা জানিয়ে দিলাম। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ সুবিচার না করেন, তবে কে সুবিচার করবে? আল্লাহ তা’আলা মূসা আ.-এর প্রতি রহমত করুন, তাকে এর চাইতেও অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি সবর করেছেন।

হাদীস নং ২৯৩০

মাহমুদ ইবনে গায়লান রহ……….আসমা বিনতে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নিজ মাথায় করে সে জমীন থেকে খেজুর দানা বহন করে আনতাম, যা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর রা.-কে দান করেছিলেন। যে জমীনটি আমার ঘর থেকে এক ফারসাখের দু’তৃতীয়াংশ ব্যবধানে অবস্থিত ছিল। আর আবু যামরাহ রহ……….হিশামের পিতা উরওয়া রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর রা.-কে বানূ নাযীর গোত্রের সম্পত্তি থেকে একখণ্ড জমি দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২৯৩১

আহমদ ইবনে মিকদাম রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনে খাত্তাব রা. ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে হিজায ভূখণ্ড থেকে নির্বাসিত করেন। আর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বার জয় করেন, তখন তিনিও ইয়াহুদীদের সেখান থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। আর সে জমীন বিজিত হওয়ার পর তা আল্লাহ, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলিমগণের অধিকারে এসে গিয়েছিল। তখন ইয়াহুদীরা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আবেদন করল, যেন তিনি তাদের এখানে এ শর্তে থাকার অনুমতি দেন যে, তারা কৃষি কাজ করবে এবং তাদের জন্য অর্ধেক ফসল থাকবে। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, যতদিন আমরা চাই তোমাদের এ শর্তে থাকার অনুমতি দিচ্ছি। তারা এভাবে রয়ে গেল। অবশেষে উমর রা. তাঁর শাসনামলে তাদের তায়মা আরীহা নামক স্থানের দিকে নির্বাসিত করেন।

হাদীস নং ২৯৩২

আবুল ওয়ালীদ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খায়বারের দুর্গ অবরোধ করেছিলাম। কোন এক ব্যক্তি একটি থলে দিল; তাঁতে ছিল চর্বি। আমি তা নেয়ার জন্য উদ্যত হলাম। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে আছেন। তখন আমি তা নেয়ার ব্যাপারে লজ্জিত হয়ে পড়লাম।

হাদীস নং ২৯৩৩

মুসাদ্দাদ রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধকালে মধু ও আঙ্গুর পেতাম। আমরা তা খেয়ে নিতাম এবং জমা রাখতাম না।

হাদীস নং ২৯৩৪

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….(আদুল্লাহ) ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বারের যুদ্ধের সময় আমরা ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছিলাম। খায়বার বিজয়ের দিন আমরা পালিত গাধার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তা যবেহ করলাম। যখন তা হাঁড়িতে বলক আসছিল তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঘোষণা দানকারী ঘোষণা দিল : তোমরা হাঁড়িগুলো উপুর করে ফেল। গাধার গোশত থেকে তোমরা কিছুই খাবে না। আবদুল্লাহ (ইবনে আবু আওফা) রা. বলেন, আমরা (কেউ কেউ) বললাম, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্য নিষেধ করেছেন, যেহেতু তা থেকে খুমুস বের করা হয়নি। (রাবী বলেন) আর অন্যরা বললেন, বরং তিনি এটাকে নিশ্চিতভাবে হারাম করেছেন। (শাইবানী বলেন) আমি এ ব্যাপারে সাঈদ ইবনে যুবাইর রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নিশ্চিতভাবে তিনি তা হারাম করেছেন।

হাদীস নং ২৯৩৫ থেকে হাদীস নং ২৯৬৩ Missing

 

সৃষ্টির সূচনা অধ্যায় (২৯৬৪-৩০৯০)

হাদীস নং ২৯৬৪

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ………ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বানু তামীমের একদল লোক রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে এল, তখন তিনি তাদের বললেন, হে তামীম সম্প্রদায়! সুসংবাদ গ্রহণ কর। তখন তারা বলল, আপনি তো সুসংবাদ জানিয়েছেন, এবার আমাদের দান করুন। এতে তাঁর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে গেল। এ সময় তাঁর কাছে ইয়ামানের লোকজন আসল। তখন তিনি বললেন, হে ইয়ামানবাসী! তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেনা তামীম সম্প্রদায়ের লোকেরা তা গ্রহণ করেনি। তারা বলল, আমরা গ্রহণ করলাম। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টির সূচনা এবং আরশ সম্পর্কে বর্ণনা করেন। এর মধ্যে একজন লোক এসে বলল, হে ইমরান! তোমার উটনীটি পালিয়ে গেছে। হায়! আমি যদি উঠে না চলে যেতাম।

হাদীস নং ২৯৬৫

উমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস রহ……….ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার উটনীটি দরজার সাথে বেঁধে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমত উপস্থিত হলাম। তখন তাঁর কাছে তারা বলল, আপনি তো আমাদের সুসংবাদ দিয়েছেন, এবার আমাদের কিছু দান করুন। একথা দু’বার বলল। এরপর তাঁর কাছে ইয়ামানের কিছু লোক আসল। তিনি তাদের বললেন, ইয়া ইয়ামানবাসী ! তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। কারণ বানু তামীমগণ তা গ্রহণ করে নাই। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তা গ্রহণ করলাম। তারা আরো বলল, আমরা দীন সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করার জন্য আপনার খেদমতে এসেছিলাম। তখন তিনি বললেন, একমাত্র আল্লাহই ছিলেন, আর তিনি ব্যতীত আর কোন কিছুই ছিলনা। তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে। এরপর তিনি লাওহে মাহফুজে সবকিছু লিপিবদ্ধ করলেন এবং আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। এ সময় জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা করল, হে ইবনে হুসাইন! আপনার উটনী পালিয়ে গেছে। তখন আমি এর তালাশে চলে গেলাম। দেখলাম তা এত দূরে চলে গেছে যে, তার এবং আমার মধ্যে মরীচিকাময় ময়দান ব্যবধান হয়ে পড়েছে। আল্লাহর কসম! আমি তখন উটনীটিকে একেবারে ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা করলাম। ঈসা রহ………..তারিক ইবনে শিহাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর রা. -কে বলতে শুনেছি, একদা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে দাঁড়ালেন। এরপর তিনি আমাদের সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কে অবহিত করলেন। অবশেষে তিনি জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসী তাদের নিজ নিজ নির্ধারিত স্থানে প্রবেশ করার কথাও উল্লেখ করলেন। যে ব্যক্তি এ কথাটি স্মরণ রাখতে পেরেছে, সে স্মরণ রেখেছে আর যে ভুলে যাবার সে ভুলে গেছে।

হাদীস নং ২৯৬৬

আবদুল্লাহ ইবনে আবু শাইবা রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, আদম সন্তান আমাকে গালমন্দ করে অথচ আমাকে গালমন্দ করা তার উচিত নয়। আর সে আমাকে অস্বীকার করে অথচ তার তা উচিত নয়। আমাকে গালমন্দ করা হচ্ছে, তার এ উক্তি যে, আমার সন্তান আছে। আর তা অস্বীকার করা হচ্ছে, তার এ উক্তি, যেভাবে আল্লাহ আমাকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন, সেভাবে কখনও তিনি আমাকে পুন: সৃষ্টি করবেন না।

হাদীস নং ২৯৬৭

কুতাইবা রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ যখন সৃষ্টি কার্য সমাধা করলেন, তখন তিনি তাঁর কিতাব লাওহে মাহফুজে লিখেন, যা আরশের উপর তাঁর কাছে বিদ্যমান। নিশ্চয়ই আমার করুণা আমার ক্রোধের চেয়ে প্রবল।

হাদীস নং ২৯৬৮

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………আবু সালামা ইবনে আবদুর রাহমান রা. থেকে বর্ণিত , (তিনি বলেন) কয়েকজন লোকের সাথে একটি জমি নিয়ে তাঁর বিবাদ ছিল। আয়িশা রা.-এর কাছে এসে তা ব্যক্ত করল। তিনি বললেন, হে আবু সালমা! জমা-জমির ঝামেলা থেকে দূরে থাক। কেননা, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ অন্যের জমি জুলুম করে আত্মসাৎ করেছে, কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীনের হার তার গলায় পরানো হবে।

হাদীস নং ২৯৬৯

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ……….সালিম রা.-এর পিতা (ইবনে উমর রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো জমির সামান্যতম অংশও আত্মসাৎ করে, কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীনের নীচে তাকে ধ্বসে দেওয়া হবে।

হাদীস নং ২৯৭০

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……….আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিন বলেন, আল্লাহ যে দিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সে দিন থেকে সময় যেরূপে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেরূপে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত । যুল-কাদাহ, যুল-হিজ্জাহ ও মুহাররাম। তিনটি মাস পরপর রয়েছে। আর এক মাস হল রজব ই-মুযার যা জুমাদা ও শাবান মাসের মধ্যে অবস্থিত।

হাদীস নং ২৯৭১

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ………..সাঈদ ইবনে যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল রা. থেকে বর্ণিত, ‘আরওয়া’ নামক জনৈক মহিলা এক সাহাবীর বিরুদ্ধে মারওয়ানের নিকট (জমি সংক্রান্ত বিষয়ে) তার ঐ পাওনা সম্পর্কে মামলা দায়ের করল, যা তার (মহিলাটির) ধারণায় তিনি (সাঈদ) নষ্ট করেছেন। ব্যপার শুনে সাঈদ রা. বললেন, আমি কি তার (মহিলাটির) সামান্য হকও নষ্ট করতে পারি? আমি তো সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুলুম করে অন্যের এক বিঘত যমীনও আত্মসাৎ করে, কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীনের শৃংখল তার গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। ইবনে আবুয যিনাদ রহ. হিশাম রহ. থেকে তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, তিনি (হিশামের পিতা উরওয়া) রা. বলেন, সাঈদ ইবনে যায়েদ রা. আমাকে বলেছেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হলাম (তখন তিনি এ হাদীস বর্ণনা করেন)।

হাদীস নং ২৯৭২

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু যার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আবু যার রা.-কে বললেন, তুমি কি জান, সূর্য কোথায়? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, তা যেতে যেতে আরশের নীচে গিয়ে সিজদায় পড়ে যায়। এরপর সে পুন: উদিত হওয়ার অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেয়া হয়। আর অচিরেই এমন সময় আসবে যে, সিজদা করবে কিন্তু তা কবুল হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া হবে না। তাকে বলা হবে, যে পথে এসেছ সে পথে ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক হতে উদিত হবে। এটাই মর্ম হল মহান আল্লাহর বাণী: আর সূর্য গমন করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এটাই পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।(৩৬:৩৮)

হাদীস নং ২৯৭৩

মুসাদ্দাদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্র উভয়কে লেপটিয়ে দেওয়া হবে।

হাদীস নং ২৯৭৪

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কারো মৃত্যু এবং জন্মের কারণে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না, এ দুটো আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। অতএব যখন তোমরা তা সংঘটিত হতে দেখবে তখন সালাত আদায় করবে।

হাদীস নং ২৯৭৫

ইসমাঈল ইবনে আবু উওয়াইস রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। কারো মৃত্যু এবং জন্মের কারণে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। অতএব যখন তোমরা তা সংঘটিত হতে দেখবে তখন যিকির করবে।

হাদীস নং ২৯৭৬

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, যেদিন সূর্যগ্রহণ হল, সেদিন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। তারপর তাকবীর বললেন, এবং দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করলেন। তারপর দীর্ঘ রুকু করলেন এরপর তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন, ‘সামিআল্লাহু লিমান হামীদা’ এবং তিনি পূর্বের ন্যায় দাঁড়ালেন। আর দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করলেন কিন্তু তা প্রথম কিরাআত থেকে কম ছিল। এরপর তিনি দীর্ঘক্ষণ রুকু করলেন কিন্তু তা প্রথম রাকআতের তুলনায় কম ছিল। তারপর তিনি দীর্ঘ সিজদা করলেন। তিনি শেষ রাকআতেও অনুরূপই করলেন, পরে সালাম ফিরালেন। এ সময় সূর্য উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে। তখন তিনি লোকজনকে লক্ষ্য করে খুতবা দিলেন। তিনি সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে বললেন, অবশ্য এ দুটো আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। কারো মৃত্যু এবং জন্মের কারণে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না, অতএব যখন তোমরা তা সংঘটিত হতে দেখবে তখনই সালাতে ভয়-ভীতি নিয়ে ধাবিত হবে।

হাদীস নং ২৯৭৭

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ কারো মৃত্যু এবং জন্মের কারণে হয় না বরং উভয়টি আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। অতএব যখন তোমরা তা সংঘটিত হতে দেখবে তখন সালাত আদায় করবে।

হাদীস নং ২৯৭৮

আদম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পূবালী বায়ু দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে, আর পশ্চিমের বায়ু দ্বারা আদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছে।

হাদীস নং ২৯৭৯

মাক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আকাশে মেঘ দেখতেন, তখন একবার সামনে অগ্রসর হতেন, আবার পেছনে সরে যেতেন। আবার কখনও ঘরে প্রবেশ করতেন, আবার বের হয়ে যেতেন আর তাঁর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে যেত। পরে যখন আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করত তখন তাঁর এ অবস্থা কেটে যেত। আয়িশা রা.-এর কারণ জানতে চাইলে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি জানিনা, এ মেঘ ঐ মেঘও হতে পারে যা দেখে আদ জাতি যেমন বলেছিল: এরপর যখন তারা তাদের উপত্যকার অভিমুখে উক্ত মেঘমালা অগ্রসর হতে দেখল।(৪৬:২৪)

হাদীস নং ২৯৮০

হুদবা ইবনে খালিদ ও খলীফা (ইবনে খাইয়াত) রহ………..মালিক ইবনে সাসাআ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কাবা ঘরের নিকট নিদ্রা ও জাগরণ-এ দু’অবস্থায় মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এরপর তিনি দু’ব্যক্তির মাঝে অপর এক ব্যক্তি অর্থাৎ নিজের অবস্থা উল্লেখ করে বললেন, আমার নিকট স্বর্ণের একটি তশতরী নিয়ে আসা হল-যা হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তারপর আমার বুক থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হল। এরপর আমার পেট যমযমের পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলা হল। তারপর তা হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ করা হল এবং আমার নিকট সাদা চতুষ্পদ জন্তু আনা, যা খচ্চর হতে ছোট আর গাধা থেকে বড় অর্থাৎ বুরাক। এরপর তাতে আরোহণ করে আমি জিবরাঈল আ.. সহ চলতে চলতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে গিয়ে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? উত্তর দেয়া হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । প্রশ্ন করা হল তাকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ, তাঁর শুভাগমণ কতই না উত্তম। তারপর আমি আমি আদম আ.-এর কাছে গেলাম। তাকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, পুত্র ও নবী ! তোমার প্রতি ধন্যবাদ। এরপর আমরা দ্বিতীয় আসমানে, গেলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল, তাকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতইনা উত্তম। তারপর আমি ঈসা ও ইয়াহইয়া আ.-এর নিকট আসলাম। তাঁরা উভয়ে বললেন, ভাই ও নবী! আপনার প্রতি ধন্যবাদ। তারপর আমরা তৃতীয় আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । প্রশ্ন করা হল, তাকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতইনা উত্তম। তারপর আমি ইউসুফ আ.-এর কাছে গেলাম। তাকে আমি করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনার প্রতি ধন্যবাদ। এরপর আমরা চতুর্থ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । প্রশ্ন করা হল, তাকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতইনা উত্তম। তারপর ইদ্রীছ আ.-এর কাছে গেলাম। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী ! আপনাকে ধন্যবাদ। এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । প্রশ্ন করা হল, তাকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতইনা উত্তম। তারপর আমরা হারুন আ.-এর কাছে গেলাম। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ। তারপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । প্রশ্ন করা হল, তাকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতইনা উত্তম। তারপর আমরা মূসা আ.-এর কাছে গেলাম। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী ! আপনাকে ধন্যবাদ। তারপর যখন তাঁর কাছ দিয়ে অতিক্রম করলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাকে বলা হল আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, হে রব! এ ব্যক্তি যে আমার পরে প্রেরিত, তাঁর উম্মাম আমার উম্মাতের চেয়ে অধিক পরিমাণে বেহশতে যাবে। এরপর আমরা সপ্তম আকাশে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতইনা উত্তম। তারপর আমি ইবরাহীম আ.-এর কাছে গেলাম। তাকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, হে পুত্র ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ। এরপর বায়তুল মামূরকেআমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিবরাঈল আ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটি বায়তুল মামূর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফেরেশতা সালাত আদায় করেন। এরা এখান থেকে একবারে বের হলে দ্বিতীয়বার ফিরে আসেন না। এটাই তাদের শেষ প্রবেশ। তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা দেখানো দেখানো হল। দেখলাম, এর ফল যেন, হাজারা নামক স্থানের মটকার ন্যায়। আর তার পাতা যেন হাতীর কান। তার মূলদেশে চারটি ঝরণা প্রবাহিত। দুটি অভ্যন্তরে আর দুটি বাইরে। এ সম্পর্কে আমি জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, অভ্যন্তরের দুটি জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের দুটির একটি হল ফুরাত আর অপরটি হল নীল নদ। তারপর আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়। আমি তা গ্রহণ করে মূসা আ.-এর কাছে ফিরে এলাম। তিনি বললেন, কি করে এলেন? আমি বললাম, আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, আমি আপনার চেয়ে মানুষ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত আছি। আমি বনী ইসরাঈলের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি আর আপনার উম্মাত এত (সালাত আদায়ে) সমর্থ হবে না। অতএব আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং তা কমানোর অনুরোধ করুন। আমি ফিরে গেলাম এবং তাঁর নিকট আবেদন করলাম। তিনি সালাত চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। পুনরায় অনুরূপ ঘটল। আর সালাতও ত্রিশ ওয়াক্ত করে দেয়া হল। পুনরায় অনুরূপ ঘটলে তিনি সালাত বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার অনুরূপ হল। তিনি সালাতকে দশ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপর আমি মূসা-এর কাছে আসলাম। তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, এবার আল্লাহ সালাতকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিলেন। আমি মূসার নিকট আসলাম। তিনি বললেন, কি করে আসলেন? আমি বললাম, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিয়েছেন। এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, আমি বললাম, আমি তা মেনে নিয়েছি। তখন আওয়াজ এল, আমি আমার ফরয জারি করে দিয়েছি। আর আমার বান্দাদের থেকে হালকা করে দিয়েছি। আর আমি প্রতিটি পূণ্যের জন্য দশগুণ সওয়াব দিব। আর বায়তুল মামূর সম্পর্কে হাম্মাম রহ……..আবু হুরায়রা রা. সূত্রে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

হাদীস নং ২৯৮১

হাসান ইবনে রাবী রহ……….যায়েদ ইবনে ওহাব রা. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ রা. বলেন, সত্যবাদীরূপে স্বীকৃত রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপকরণ নিজ নিজ মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্য রূপে অবস্থান করে, এরপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। অনুরূপভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। তারপর তা মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়ে (আগের ন্যায় চল্লিশ দিন) থাকে। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর তাকে চারটি বিষয় নির্দেশ দেওয়া হয়। তাকে (ফেরেশতাকে) লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়, তার আমল, তার রিযক, তার জীবনকাল এবং সে কি পাপী হবে না পূণ্যবান হবে। এরপর তার মধ্যে আত্ম ফুঁকে দেওয়া হয়। কাজেই তোমাদের কোন ব্যক্তি আমল করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তার এবং জান্নাতের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকে। এমন সময় তার আমলনামা তার উপর অগ্রগামী হয়। তখন সে জাহান্নামবাসীর মত আমল করে আর একজন আমল করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তার এবং জাহান্নমের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকে, এমন সময় তার আমলনামা তার উপর অগ্রগামী হয়। ফলে সে জান্নাতবাসীর মত আমল করে।

হাদীস নং ২৯৮২

মুহাম্মদ ইবনে সালাম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন তিনি জিবরাঈল আ.-কে ডেকে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুক বান্দাহকে ভালবাসেন, অতএব তুমিও তাকে ভালবাস। তখন জিবরাঈল আ.-ও তাকে ভালবাসেন এবং জিবরাঈল আ. আকাশবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন। কাজেই তোমরা তাকে ভালবাস। তখন আকাশবাসী তাকে ভালবাসতে থাকে। এরপর পৃথিবীতেও তাকে গ্রহণ করার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।

হাদীস নং ২৯৮৩

মুহাম্মদ (ইবনে ইয়াহইয়া) রহ…………নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, ফেরেশতাগণ মেঘমালার আড়ালে অবতরণ করেন এবং আকাশে (আল্লাহর) মিমাংসা কৃত বিধান আলোচনা করেন। তখন শয়তানেরা তা চুরি করে শোনার চেষ্টা করে এবং তার কিছু শোনেও ফেলে। এরপর তারা তা গণকের কাছে পৌঁছিয়ে দেয় এবং তারা তার সেই শোনা কথার সাথে নিজেদের পক্ষ থেকে শত মিথ্যা মিলিয়ে (মানুষের কাছে) বলে থাকে।

হাদীস নং ২৯৮৪

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জুমুআর দিন হয় তখন মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতা এসে দাঁড়িয়ে যায় এবং যে ব্যক্তি প্রথম মসজিদে প্রবেশ করে, তার নাম লিখে নেয়। তারপর পরবর্তীদের পর্যায়ক্রমে নাম। ইমাম যখন (মিম্বারে) বসে পড়েন তখন তারা এসব লিখিত পুস্তিকা বন্ধ করে দেন এবং তাঁরা মসজিদে এসে যিকর (খুতবা) শুনতে থাকেন।

হাদীস নং ২৯৮৫

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা উমর রা. মসজিদে নববীতে আগমন করেন, তখন হাসসান ইবনে সাবিত রা. কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। (উমর রা. তাকে বাঁধা দিলেন) তখন তিনি বললেন, এখানে আপনার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি (রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপস্থিতিতেও আমি কবিতা আবৃত্তি করতাম। তারপর তিনি আবু হুরায়রা রা.-এর দিকে তাকালেন এবং বললেন, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি; আপনি কি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, তুমি আমার পক্ষ থেকে জবাব দাও। হে আল্লাহ ! আপনি তাকে রুহুল কুদুস (জিবরাঈল আ.) দ্বারা সাহায্য করুন। তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ।

হাদীস নং ২৯৮৬

হাফস ইবনে উমর রহ…………বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসান রা.-কে বলেছেন, তুমি তাদের (কাফিরদের) কুৎসা বর্ণনা কর অথবা তাদের কুৎসার উত্তর দাও। তোমরা সাথে (সাহায্যার্থে) জিবরাঈল আ. আছেন।

হাদীস নং ২৯৮৭

ইসহাক রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যেন বানু গানমের গলিতে উর্ধ্বে উত্থিত ধূলা স্বয়ং দেখতে পাচ্ছি আর (রাবী) মূসা এতটুকু বাড়িয়ে বলেছেন, জিবরাঈলের বাহনের পদচালনা করান।

হাদীস নং ২৯৮৮

ফারওয়াহ রহ…………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, হারিস ইবনে হিশাম রা. রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নিকট ওহী কিরূপে আসে? তিনি বললেন, এর সব ধরনের ওহী নিয়ে ফেরেশতা আসেন। কোন কোন সময় ঘন্টার আওয়াজের ন্যায় শব্দ করে (আসে) যখন ওহী আমার নিকট আসা শেষ হয়ে যায়, তখন তিনি যা বলেছেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। আর এরূপ শব্দ করে ওহী আসাটা আমার নিকট কঠিন মনে হয়। আর কখনও কখনও ফেরেশতা আমার কাছে মানুষের আকৃতিতে আসেন এবং আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই।

হাদীস নং ২৯৮৯

আদম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু জোড়ায় জোড়ায় দান করবে, তাকে জান্নাতের তত্ত্বাবধায়কগণ ডাকতে থাকবে, হে অমুক ব্যক্তি! এ দিকে আস। তখন আবু বকর রা. বললেন, এমন ব্যক্তি সে তো এমন ব্যক্তি যার কোন ধ্বংস নেই। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আশা করি, তুমি তাদের একজন হবে।

হাদীস নং ২৯৯০

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে আয়িশা! এই যে জিবরাঈল আ. তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। তখন তিনি বললেন, তাঁর প্রতি সালাম আল্লাহর রহমত এবং তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আপনি তো এমন কিছু দেখেন যা আমি দেখতে পাই না।

হাদীস নং ২৯৯১

আবু নুআইম রহ. ও ইয়াহইয়া ইবনে জাফর রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈল আ.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি আমার নিকট যতবার আসেন তার চেয়ে বেশী আমার সাথে কেন দেখা করেন না? রাবী বলেন, তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় : আর আমরা আপনার রবের নির্দেশ ব্যতীত আসতে পারি না। আমাদের সামনে এবং আমাদের পেছনে যা কিছু আছে সবই তাঁর নিয়ন্ত্রণে।

হাদীস নং ২৯৯২

ইসমাঈল রহ…………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জিবরাঈল আ. আমাকে এক আঞ্চলিক ভাষায় কুরআন পাঠ করে শুনিয়েছেন। কিন্তু আমি সর্বদা তাঁর নিকট অধিক ভাষায় পাঠ করে শুনাতে চাইতাম। অবশেষে তা সাতটি আঞ্চলিক ভাষায় সমাপ্ত হয়।

হাদীস নং ২৯৯৩

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ…………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দানশীল ছিলেন আর রমযান মাসে যখন জিবরাঈল আ. তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি আরো বেশী দানশীল হয়ে যেতেন। জিবরাঈল আ. রমযানের প্রত্যেক রাতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কুরআন পাঠ করে শুনাতেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যখন জিবরাঈল আ. দেখা করতেন, তখন তিনি মানুষের কল্যাণে প্রেরিত বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল হতেন। আবদুল্লাহ রহ. হতে বর্ণিত। মামার রহ. এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন আর আবু হুরায়রা রা. এবং ফাতিমা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে فيدارسه القرآن এর স্থলে أن جبريل كان يعارضه القرآن বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২৯৯৪

কুতাইবা রহ……….ইবনে শিহাব রহ. থেকে বর্ণিত, একবার উমর ইবনে আবদুল আযীয রহ. আসরের সালাত কিছুটা দেরী করে আদায় করলেন। তখন তাকে উরওয়া রা. বললেন, একবার জিবরাঈল আ. আসলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইমাম হয়ে সালাত আদায় করলেন। তা শুনে উমর ইবনে আবদুল আযীয রহ. বললেন, হে উরওয়া ! কি বলছ, চিন্তা কর। উত্তরে তিনি বললেন, আমি বশীর ইবনে আবু মাসউদকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, একবার জিবরাঈল আ. আসলেন, এরপর তিনি আমার ইমামতী করলেন এবং তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। এরপর আমি তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। তারপরও আমি তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। তারপরও আমি তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। এ সময় তিনি তাঁর আঙ্গুলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত গুনছিলেন।

হাদীস নং ২৯৯৫

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..আবু যার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একবার জিবরাঈল আ. আমাকে বললেন, আপনার উম্মাত থেকে যদি এমন ব্যক্তি মারা যায়, যে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে নাই, তবে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে কিংবা তিনি বলেছেন, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে। জিবরাঈল আ. বললেন, যদিও (সে যিনা করে ও চুরি করে তবুও)।

হাদীস নং ২৯৯৬

আবুল ইয়ামান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফেরেশতাগণ একদলের পেছনে আর একদল আগমন করেন। একদল ফেরেশতা রাতে আসেন আর একদল ফেরেশতা দিনে আগমন করেন। তাঁরা ফজর ও আসর সালাতে একত্রিত হয়ে থাকেন। তারপর যারা তোমাদের কাছে রাত্রি যাপন করেছিল তারা আল্লাহর কাছে উর্ধ্বে চলে যান। তখন তিনি তাদেরকে মানুষের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। অথচ তিনি তাদের চেয়ে এ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী অবহিত আছেন। তখন তিনি বলেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? উত্তরে তাঁরা বলেন, আমরা তাদের সালাতের অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর আমরা তাদের কাছে সালাতের অবস্থাতেই পৌঁছেছিলাম।

হাদীস নং ২৯৯৭

মুহাম্মদ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য প্রাণীর ছবিযুক্ত মাঝখানে দাঁড়ালেন এবং তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কি অপরাধ হয়েছে? তিনি বললেন, এ বালিশটি কেন? আমি বললাম, এ বালিশটি আপনি এর উপর ঠেস দিয়ে বসতে পারেন আমি সে জন্য তৈরী করেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (হে আয়িশা রা.) তুমি কি জাননা? যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সেখানে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না? আর যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে তাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে? তাকে (আল্লাহ) বলবেন, তুমি যে প্রাণীর ছবি বানিয়েছ, এখন তাকে প্রাণ দান কর।

হাদীস নং ২৯৯৮

ইবনে মুকাতিল রহ………আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ঘরে কুকুর থাকে আর প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না।

হাদীস নং ২৯৯৯

আহমদ রহ……….আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। বুসুর রহ. বলেন, এরপর যায়েদ ইবনে খালিদ রা. অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা তাঁর শুশ্রূষার জন্য গেলাম। তখন আমরা তাঁর ঘরে একটি পর্দায় কিছু ছবি দেখতে পেলাম। তখন আমি (বুসুর) ওবায়দুল্লাহ খাওলানী রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কি আমাদের নিকট ছবি সম্পর্কীয় হাদীস বর্ণনা করেননি? তখন তিনি বললেন, তিনি বলেছেন, প্রাণীর (ছবি নিষিদ্ধ) তবে কাপড়ের মধ্যে কিছু অংকন করা নিষিদ্ধ নয়, তুমি কি তা শুননি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি তা বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩০০০

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ……….সালিম রা. তাঁর পিতার নিকট হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জিবরাঈল আ. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (সাক্ষাতের) ওয়াদা দিয়েছিলেন। (কিন্তু তিনি সময় মত আসেননি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বললেন, আমরা ঐ ঘরে প্রবেশ করি না, যে ঘরে ছবি এবং কুকুর থাকে।

হাদীস নং ৩০০১

ইসমাঈল রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামীদা’ বলবে তখন তোমরা বলবে ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদু’। কেননা, যার এ উক্তি ফেরেশতাগণের উক্তির অনুরূপ হবে, তাঁর পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয় হবে।

হাদীস নং ৩০০২

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতে রত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ এ বলে দু’আ করতে থাকে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করে দিন ; হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত লোকটি সালাত ছেড়ে না দাঁড়াবে অথবা তার উযু ভঙ্গ না হবে।

হাদীস নং ৩০০৩

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..সাফওয়ান ইবনে ইয়ালা রা. তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারে উঠে এ আয়াত তিলাওয়াত করতে শুনেছি “আর তারা ডাকল, হে মালিক!) (মালিক জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতার নাম) সুফিয়ান রহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর نادوا مالك ক্বিরাআতে স্থলে نادوا يا مال রয়েছে।

হাদীস নং ৩০০৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, একবার তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, উহুদের দিনে চাইতে কঠিন কোন দিন কি আপনার উপর এসেছিল? তিনি বললেন, আমি তোমার কওম থেকে যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, তা তো হয়েছি। তাদের থেকে সবচেয়ে বেশী কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, আকাবার দিন আম নিজেকে ইবনে আবদে ইয়ালীল ইবনে আবদের কলালের নিকট পেশ করেছিলাম। আমি যা চেয়েছিলাম, সে তার জবাব দেয়নি। তখন আমি এমনভাবে বিষণ্ন চেহারা নিয়ে ফিরে এলাম যে, কারনুস সাআলিবে পৌঁছা পর্যন্ত আমার চিন্তা লাঘব হয়নি। তখন আমি মাথা উপরে উঠাইলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম এক টুকরো মেঘ আমাকে ছায়া দিচ্ছে। আমি সে দিকে দৃষ্টি দিলাম। তার মধ্যে ছিলেন জিবরাঈল আ.। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, আপনার কওম আপনাকে যা বলেছে এবং তারা প্রতি উত্তরে যা বলেছে তা সবই আল্লাহ শুনছেন। তিনি আপনার কাছে পাহাড়ের ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। এদের সম্পর্ক আপনার যা ইচ্ছে আপনি তাকে হুকুম দিতে পারেন। তখন পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। তারপর বললেন, হে মুহাম্মদ! এসব ব্যাপার আপনার ইচ্ছাধীন। আপনি যদি চান, তাহলে আমি তাদের উপর আখশাবাইনক চাপিয়ে দিব। উত্তরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বরং আমি আশা করি মহান আল্লাহ তাদের বংশ থেকে এমন সন্তান জন্ম দেবেন যে, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে আর তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।

হাদীস নং ৩০০৫

কুতাইবা রহ……….আবু ইসহাক শায়বানী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যির ইবনে হুবাইস রা.-কে মহান আল্লাহর এ বাণী : “ফলে তাদের মধ্যে দু’ধনুকের পরিমাণ বা তার চেয়েও কম ব্যবধান রইল। তখন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন”। এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ইবনে মাসউদ রা. আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈল আ.-কে দেখেছেন। তাঁর ছয়শটি ডানা ছিল।

হাদীস নং ৩০০৬

হাফস ইবনে উমর রহ………..আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এ আয়াত : “নিশ্চয়ই তিনি তাঁর রবের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছেন” এর মর্মার্থে বলেন, তিনি সবুজ বর্ণের রফরফ দেখেছেন, যা আকাশের দিগন্তকে ঢেকে রেখেছিল।

হাদীস নং ৩০০৭

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ইসমাঈল রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মনে করবে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রবকে দেখেছেন, সে ব্যক্তি বিরাট ভুল করবে। বরং তিনি জিবরাঈল আ.-কে তাঁর আসল আকৃতি এবং অবয়বে দেখেছেন। তিনি আকাশের দিগন্ত জুড়ে অবস্থান করছিলেন।

হাদীস নং ৩০০৮

মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ রহ……….মাসরূক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা রা.কে আল্লাহর বাণী : “এরপর তিনি তার নিকটবর্তী হলেন, অতি নিকটবর্তী। ফলে তাদের মধ্যে দু’ধনুকের ব্যবধান অথবা তার চেয়েও কম”-এর মর্মার্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তিনি জিবরাঈল আ. ছিলেন। তিনি স্বভাবত মানুষের আকৃতিতে তাঁর কাছে আসতেন। কিন্তু এবার তিনি কাছে এসেছিলেন তাঁর মূল আকৃতি ধারণ করে। তখন তিনি আকাশের সম্পূর্ণ দিগন্ত ঢেকেছিলেন।

হাদীস নং ৩০০৯

মূসা রহ……….সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আজ রাতে আমি দেখেছি, দু’ব্যক্তি আমার কাছে এসেছে। তারা বলল, যে অগ্নি প্রজ্ব্বলিত করছিল সে হল, দোযখের দারোগা মালিক আর আমি হলাম জিবরাঈল এবং ইনি হলেন মীকাঈল।

হাদীস নং ৩০১০

মুসাদ্দাদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি স্বীয় স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকেন আর সে অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর ক্ষোভ নিয়ে রাত যাপন করে, তবে ফেরেশতাগণ এমন স্ত্রীর উপর ভোর পর্যন্ত লানত দিতে থাকে। শুবা, আবু হামযা, ইবনে দাউদ ও আবু মুআবিয়া রহ. আমাশ রহ থেকে হাদীস বর্ণনায় আবু আওয়ানা রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ৩০১১

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি (হেরা গুহায় ওহী নাযিলের পর) আমার থেকে কিছু দিনের জন্য ওহী বন্ধ হয়ে গেল। (একদিন) আমি পথ চলতে ছিলাম। এরই মধ্যে আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন আমি আকাশের প্রতি দৃষ্টি উঠাইলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম, হেরা পর্বতের গুহায় আমার কাছে যে ফেরেশতা এসেছিলেন, তিনি আকাশ ও যমীনের মাঝখানে একটি কুরসীর উপর বসে আছেন। আমি তাতে ভয় পেয়ে গেলাম, এমনকি মাটিতে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলাম। তারপর আমি পরিবার-পরিজনের কাছে আসলাম এবং বললাম, আমাকে কম্বল দ্বারা আবৃত কর, আমাকে কম্বল দ্বারা আবৃত কর। তখন মহান আল্লাহর তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন : يا أيها المدثر “হে বস্ত্রাচ্ছাদিত। উঠ, সতর্কবাণী প্রচার কর………অপবিত্রতা থেকে দূরে থাক। (৭৪: ১-৫) আবু সালামা রা. বলেন, অত্র আয়াতে الرجز দ্বারা প্রতিমা বুঝানো হয়েছে।

হাদীস নং ৩০১২

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার ও খলীফা রহ……… নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাতো ভাই ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মিরাজের রাত্রিতে আমি মূসা আ.-কে দেখেছি। তিনি গোধুম বর্ণের পুরুষ ছিলেন ; দেহের গঠন ছিল লম্বা। মাথার চুল ছিল কুঞ্চিত। যেন তিনি শানূআ গোত্রের একজন লোক। আমি ঈসা আ.-কে দেখতে পাই। তিনি ছিলেন মধ্যম গঠনের লোক। তাঁর দেহবর্ণ ছিল সাদা লালে মিশ্রিত। তিনি ছিলেন মধ্যম অবয়ব বিশিষ্ট। মাথার চুল ছিল অকুঞ্চিত। জাহান্নামের খাজাঞ্চি মালিক এবং দাজ্জালকেও আমি দেখেছি। (সে রাতে) আল্লাহ তা’আলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিশেষ করে যে সকল নিদর্শনাবলি দেখিয়েছেন তন্মধ্যে এগুলোও ছিল। সুতরাং তাঁর সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে তুমি সন্দেহ পোষণ করবে না। আনাস এবং আবু বকরা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, ফেরেশতাগণ মদীনাকে দাজ্জাল থেকে পাহারা দিয়ে রাখবেন।

হাদীস নং ৩০১৩

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মারা যায় তখন সকাল-সন্ধ্যায় তার পরকালের আবাসস্থল তার কাছে পেশ করা হয়। সে যদি জান্নাতবাসী হয় তবে তাকে জান্নাতবাসীর আবাসস্থল আর যদি সে জাহান্নামবাসী হয় তবে তাকে জাহান্নামবাসীর আবাসস্থল দেখানো হয়।

হাদীস নং ৩০১৪

আবুল ওয়ালীদ রহ……….ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতের অধিবাসী সম্পর্কে অবহিত হয়েছি। আমি জানতে পারলাম, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী হবে গরীব লোক। জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত হয়েছি, আমি জানতে পারলাম, এর অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা।

হাদীস নং ৩০১৫

সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নিদ্রিত ছিলাম। দেখলাম আমি জান্নাতে অবস্থিত। হঠাৎ দেখলাম এক মহিলা একটি প্রাসাদের পাশে উযু করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ প্রাসাদটি কার? তারা উত্তরে বললেন, উমরের। তখন তাঁর (উমরের) আত্মমর্যাদাবোধের কথা আমার স্মরণ হল। আমি পেছনের দিকে ফিরে চলে আসলাম। একথা শুনে উমর রা. কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার সম্মুখে কি আমার মর্যাদাবোধ থাকতে পারে?

হাদীস নং ৩০১৬

হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (জান্নাতে মুমিনদের জন্য) গুণগত মোতির তাঁবু থাকবে যার উচ্চতার দৈর্ঘ্য ত্রিশ মাইল। এর প্রতিটি কোনে মুমিনদের জন্য এমন স্ত্রী থাকবে যাদেরকে অন্যরা কখনো দেখেনি। আবু আবদুস সামাদ ও হারিস ইবনে উবায়দ আবু ইমরান রহ. থেকে (ত্রিশ মাইলের স্থলে) ষাট মাইল বলে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩০১৭

হাদীস নং ৩০১৮

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে প্রথম প্রবেশকারী দলের আকৃতি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল হবে। তারা সেখানে থুথু ফেলবে না, নাক ঝড়বে না, পায়খানা করবে না। সেখানে তাদের পাত্র হবে স্বর্ণের ; তাদের চিরুনী হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের, তাদের ধুনুচিত থাকবে সুগন্ধ কাঠ। তাদের গায়ের ঘাম মিসকের ন্যায় সুগন্ধযুক্ত হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দুজন স্ত্রী থাকবে যাদের সৌন্দর্যের ফলে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতভেদ থাকবে না; পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সকলের অন্তর এক অন্তরের মত থাকবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করতে থাকবে।

হাদীস নং ৩০১৯

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা পূর্ণিমা রাতে চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল আকৃতি ধারণ করবে আর তাদের পর যারা প্রবেশ করবে তারা অতি উজ্জ্বল তারকার মত রূপ ধারণ করবে। তাদের অন্তরগুলো এক ব্যক্তির অন্তরের মত হয়ে থাকবে। তাদের মধ্যে কোনরূপ মতভেদ থাকবে না আর পরষ্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের প্রত্যেকের দু’জন করে স্ত্রী থাকবে। সৌন্দর্যের ফলে গোশত ভেদ করে পায়ের নলাস্থিত মজ্জা দেখা যাবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে। তারা অসুস্থ হবে না, নাক ঝাড়বে না, থুথু ফেলবে না। তাদের পাত্রসমূহ হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের আর চিরুনীসমূহ হবে স্বর্ণের। তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধ কাঠ। আবুল ইয়ামান রহ . বলেন, অর্থাৎ কাঠ। তাদের গায়ের ঘাম মিসকের ন্যায় সুগন্ধযুক্ত হবে। মুজাহিদ রহ. বলেন, البكار অর্থ উষাকালের প্রথম অংশ العشي অর্থ সূর্য ঢলে পড়ার সময় হতে তার অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত সময়কাল।

হাদীস নং ৩০২০

মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর মুকাদ্দামী রহ…………সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মাতের সত্তর হাজার লোক অথবা (বলেছেন) সাত লক্ষ লোক একই সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের কেউ আগে পেছনে এভাবে নয় আর তাদের মুখমণ্ডল পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল থাকবে।

হাদীস নং ৩০২১

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ জুফী রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি রেশমী জুব্বা হাদীয়া দেয়া হল। অথচ তিনি রেশমী কাপড় ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন; লোকেরা (এর সৌন্দর্যের করণে) তা খুব পছন্দ করল। তখন তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম! যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, অবশ্যই জান্নাতে সাদ ইবনে মুআযের রুমাল এর চেয়েও অধিক সুন্দর হবে।

হাদীস নং ৩০২২

মুসাদ্দাদ রহ………..বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একখানা রেশমী কাপড় আনা হল। লোকজন এর সৌন্দর্য এবং কমনীয়তার কারণে তা খুব পছন্দ করতে লাগল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অবশ্যই জান্নাতে সাদ ইবনে মুআযের রুমাল এর চেয়েও অধিক উত্তম হবে।

হাদীস নং ৩০২৩

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…………সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে চাবুক পরিমাণ সামান্যতম স্থানও দুনিয়া এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়েও উত্তম।

হাদীস নং ৩০২৪

রাওহ ইবনে আবদুল মুমিন রহ………….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় কোন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত চললেও তা অতিক্রম করতে পারবে না।

হাদীস নং ৩০২৫

মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় কোন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত চললে পারবে। আর তোমরা ইচ্ছা করলে (কুরআনের এ আয়াত) তিলাওয়াত করতে পার وظل ممدود এবং দীর্ঘ ছায়া। আর জান্নাতে তোমাদের কারও একটি ধনুকের পরিমাণ জায়গাও ঐ জায়গার চেয়ে অনেক উত্তম যেখানে সূর্যোদয় হয় এবং সূর্যাস্ত যায় (অর্থাৎ পৃথিবীর চেয়ে)।

হাদীস নং ৩০২৬

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা পূর্ণিমা রাতে চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল আকৃতি ধারণ করবে আর তাদের পর যারা প্রবেশ করবে তারা অতি উজ্জ্বল তারকার অধিক হবে। তাদের অন্তরগুলো এক ব্যক্তির অন্তরের মত হয়ে থাকবে। তাদের মধ্যে থাকবে না কোনরূপ বিদ্বেষ আর থাকবে না কোন হিংসা । তাদের প্রত্যেকের জন্য ডাগর ডাগর চোখ বিশিষ্ট দু’জন করে স্ত্রী এমন থাকবে, যাদের পায়ের নলার মজ্জা হাঁড় ও গোশত ভেদ করে দেখা যাবে।

হাদীস নং ৩০২৭

হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এর ছেলে) ইবরাহীম রা. ইন্তিকাল করেন, তখন তিনি বলেন, জান্নাতে এর জন্য একজন ধাত্রী রয়েছে।

হাদীস নং ৩০২৮

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই জান্নাতবাসীগণ তাদের উপরের বালাখানার অধিবাসীদের এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জ্বল দীপ্তমান তারকা দেখতে পাও। এটা হবে তাদের মধ্যে মর্যাদার ব্যবধানের কারণে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ তো নবীগণের জায়গা। তাদের ছাড়া অন্যরা তথায় পৌঁছতে পারবে না। তিনি বললেন, হ্যাঁ, সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, যেসব লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং রাসূলগণকে সত্য বলে স্বীকার করবে (তারা সেখানে পৌঁছতে পারবে)।

হাদীস নং ৩০২৯

সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ………..সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতে আটটি দরজা থাকবে। তন্মধ্যে একটি দরজার নাম হবে রাইয়্যান। একমাত্র রোযাদারগণই এ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।

হাদীস নং ৩০৩০

আবুল ওয়ালীদ রহ………..আবু যার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সফরে ছিলেন, তখন (যুহরের সালাতের ওয়াক্ত হল) তিনি বললেন, ঠাণ্ডা হতে দাও। পুনরায় বললেন, টিলাগুলোর ছায়া নীচে নেমে আসা পর্যন্ত ঠাণ্ডা হতে দাও। আবার বললেন, (যুহরের) সালাত ঠাণ্ডা হলে পরে আদায় করবে। কেননা, গরমের তীব্রতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে হয়ে থাকে।

হাদীস নং ৩০৩১

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………….আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, সালাত (রৌদ্রের উত্তাপ) ঠাণ্ডা হলে পরে আদায় করবে। কেননা, গরমের তীব্রতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে হয়ে থাকে।

হাদীস নং ৩০৩১

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………….আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, সালাত (রৌদ্রের উত্তাপ) ঠাণ্ডা হলে পরে আদায় করবে। কেননা, গরমের তীব্রতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে হয়ে থাকে।

হাদীস নং ৩০৩২

আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নাম তার রবের নিকট অভিযোগ করে বলেছে, হে রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন তিনি তাকে দুটি নিঃশ্বাস ছাড়ার অনুমতি প্রদান করেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে আর একটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকালে। অতএব তোমরা যে শীতের তীব্রতা পেয়ে থাক। (তা নিঃশ্বাসের প্রভাব)।

হাদীস নং ৩০৩৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………….আবু জামরা যুবায়ী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কায় ইবনে আব্বাস রা.-এর কাছে বসতাম। একবার আমি জ্বরে আক্রান্ত হই। তখন তিনি আমাকে বললেন, তুমি তোমার গায়ের জ্বর যমযমের পানি দ্বারা শীতল কর। কেননা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এটা দোযখের উত্তাপ হতেই হয়ে থাকে। অতএব তোমরা তা পানি দ্বারা ঠাণ্ডা কর অথবা বলেছেন, যমযমের পানি দ্বারা ঠাণ্ডা কর। (এর কোনটা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন) এ বিষয়ে বর্ণনাকারী হাম্মাম সন্দেহ পোষণ করেছেন।

হাদীস নং ৩০৩৪

আমর ইবনে আব্বাস রহ………..রাফি ইবনে খাদিজ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, জ্বরের উৎপত্তি জাহান্নামের প্রচণ্ড উত্তাপ হতে । অতএব তোমাদের গায়ের সে তাপ পানি দ্বারা ঠাণ্ডা কর।

হাদীস নং ৩০৩৫

মালিক ইবনে ইসমাঈল রহ………….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জ্বরের উৎপত্তি জাহান্নামের প্রচণ্ড উত্তাপ হতে । অতএব তোমাদের গায়ের সে তাপ পানি দ্বারা ঠাণ্ডা কর।

হাদীস নং ৩০৩৬

মুসাদ্দাদ রহ………….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জ্বরের উৎপত্তি জাহান্নামের প্রচণ্ড উত্তাপ হতে । অতএব তোমাদের গায়ের সে তাপ পানি দ্বারা ঠাণ্ডা কর।

হাদীস নং ৩০৩৭

ইসমাঈল রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, তোমাদের (ব্যবহৃত) আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ মাত্র। বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জাহান্নামের শাস্তির জন্য দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ট ছিল। তিনি বললেন, দুনিয়ার আগুনের উপর জাহান্নামের আগুনের তাপ আরো ঊনসত্তর গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, প্রত্যেক অংশে তার সমপরিমাণ উত্তাপ রয়েছে।

হাদীস নং ৩০৩৮

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ…………ইয়ালা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারে আরোহণ করে তিলাওয়াত করতে শুনেছেন, “আর তারা ডাকবে, হে মালিক”। (মালিক জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়কের নাম)।

হাদীস নং ৩০৩৯

আলী রহ………….আবু ওয়াইল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উসামা রা.-কে বলঅ হল, কত ভাল হত ! যদি আপনি ঐ ব্যক্তির (উসমান রা.-এর কাছে যেতেন এবং তাঁর সঙ্গে (বিদ্রোহ দমনের বিষয়ে) আলোচনা করতেন। উত্তরে তিনি বললেন, আপনারা মনে করছেন যে, আমি তাঁর সঙ্গে (বিদ্রোহ দমনের ব্যাপারে) আপনাদেরকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলব। অথচ আমি তাঁর সাথে (দাঙ্গা দমনের ব্যাপারে) গোপনে আলোচনা করছি, যেন আমি একটি দ্বার খুল না বসি। (এ বিদ্রোহের) আমি দ্বার উন্মক্ত কারীর প্রথম ব্যক্তি হতে চাইনা। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু শুনেছি, যার পরে আমি কোন ব্যক্তিকে যিনি আমাদের আমীর নির্বাচিত হয়েছেন সেজন্য তিনি আমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তি এ কথা বলতে পারি না। লোকেরা তাকে বলল, আপনি তাকে কি বলতে শুনেছেন? উসামা রা. বললেন, আমি তাকে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন এক ব্যাক্তিকে আনয়ন করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে ফেলে দেয়া হবে। তখন আগুনে পুড়ে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। এ সময় সে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে যেমন গাধা তার চাকা নিয়ে তার চারপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামবাসীর তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, হে অমুক ব্যক্তি ! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদিগকে সৎকাজের আদেশ করতে আর অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতে? সে বলবে, আমি তোমাদেরকে সৎকাজে আদেশ করতাম বটে, কিন্তু আমি তা করতাম না আর আমি তোমাদেরকে অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতাম, অথচ আমিই তা করতাম। এ হাদীসটি গুনদার রহ. শুবা রহ. সূত্রে আমাশ রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ৩০৪০

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যাদু করা হয়েছিল। লায়স রহ. বলেন, আমার নিকট হিশাম পত্র লিখেন, তাঁতে লেখা ছিল যে, তিনি তাঁর পিতার সূত্রে আয়িশা রা. থেকে হাদীস শুনেছেন এবং তা ভাল করে মুখস্থ করেছন। আয়িশা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যাদু করা হয়। এমনকি যাদুর প্রভাবে তাঁর খেয়াল হত যে, তিনি স্ত্রীগণের বিষয়ে কোন কাজ করে ফেলেছেন অথচ তিনি তা করেননি। শেষ পর্যন্ত একদিন তিনি রোগ আরোগ্যর জন্য বারবার দু’আ করলেন, এরপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি কি জান? আল্লাহ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন, যাতে আমার রোগের আরোগ্য নিহিত আছে? আমার একজন অপরজনকে জিজ্ঞাসা করল, এ ব্যক্তির রোগটা কি? জিজ্ঞাসিত লোকটি জবাব দিল, তাকে যাদু করা হয়েছে। প্রথম লোকটি বলল, তাকে যাদু কে করল? সে বলল, লবীদ ইবনে আসাম। প্রথম ব্যক্তি বলল, কিসের দ্বারা (যাদু করল) ? দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, তাকে যাদু করা হয়েছে চিরুনি, সুতার তাগা এবং খেজুরের খোসায়। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, এগুলো কোথায় আছে? দ্বিতীয় ব্যক্তি জবাব দিল, যারওয়ার কূপে। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গেলেন এবং ফিরে আসলেন, এরপর তিনি আয়িশা রা.-কে বললেন, কূপের কাছের খেজুর গাছগুলো যেন এক একটা শয়তানের মুক্ত। তখন আমি (আয়িশা) জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি সেই যাদু করা জিনিসগুলো বের করতে পেরেছেন? তিনি বলেন, না। তবে আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দিয়েছেন। আমার আশংকা হয়েছিল এসব জিনিস বের করলে মানুষের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি হতে পারে। এরপর সেই কূপটি বন্ধ করে দেয়া হল।

হাদীস নং ৩০৪১

ইসমাঈল ইবনে আবী উআইস রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন নিদ্রা যায় তখন শয়তান তার মাথার শেষাংশে তিনটি করে গিরা দিয়ে দেয়। প্রত্যেক গিরার সময় এ কথা বলে কুমন্ত্রণা দেয় যে, এখনো অধিক রাত রয়ে গেছে, অতএব শুয়ে থাক। এরপর সে লোক যদি জেগে উঠে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে তখন একটি খুলে যায়। (অলসতা দূর হয়) তারপর যদি সে উযু করে তবে দ্বিতীয় গিরাও খুলে যায় (এটা অপবিত্রতার গিরা)। আর যদি সে সালাত আদায় করে তবে সব কয়টি গিরাই খুলে যায়। আর এ ব্যক্তি খুশীর সাথে পবিত্র মনে ভোর উদযাপন করবে, অন্যথায় সে অপবিত্র মনে অলসতার সাথে ভোর উদযাপন করবে।

হাদীস নং ৩০৪২

উসমান ইবনে আবু শাইবা রহ………..আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমন এক ব্যক্তির সম্পর্কে উল্লেখ করা হল, যে সারা রাত এমনকি ভোর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিল। তখন তিনি বললেন, সে এমন এক ব্যক্তি যার উভয় কানে অথবা তিনি বললেন, তার কানে শয়তান পেশাব করেছে।

হাদীস নং ৩০৪৩

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দেখ, তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রীর নিকট আসে, আর তখন বলে, বিসমিল্লাহ। হে আল্লাহ ! আমাদেরকে শয়তানের প্রভাব হতে দূরে রাখ। আর আমাদেরকে যে সন্তান দান করবে তাকেও শয়তানের প্রভাব হতে বাঁচিয়ে রাখ। এরপর তাদেরকে যে সন্তান দান করা হবে তাকে শয়তান কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

হাদীস নং ৩০৪৪

মুহাম্মদ (ইবনে সালাম) রহ………….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন সূর্যের এক কিনারা উদিত হয়, তখন তা পরিষ্কারভাবে উদিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা সালাত আদায় বন্ধ রাখ। আবার যখন সূর্যের এক কিনারা অস্ত যাবে তখন তা সম্পূর্ণ অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা সালাত আদায় করা বন্ধ রাখ। কেননা তা শয়তানের দু’শিং-এর মাঝখানে দিয়ে উদিত হয়। বর্ণনাকারী বলেন, হিশাম রহ. কি শয়তান বলেছেন না আশ-শয়তান বলেছেন তা আমি জানি না।

হাদীস নং ৩০৪৫

আবু মামার রহ…………..আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়ের সময় তোমাদের কারো মুখ দিয়ে যখন কেউ চলাচল করবে তখন সে তাকে অবশ্যই বাঁধা দিবে। সে যদি অমান্য করে তাবে আবারো তাকে বাধা দিবে। এরপরও যদি সে অমান্য করে তবে অবশ্যই তার সাথে লড়াই করবে। কেননা সে শয়তান। উসমান ইবনে হাইসাম রহ………আবু হুয়রারা রা. থেকে বর্ণিত, বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমযানের যাকাত (সাদকায়ে ফিতরের) হেফাজতের দায়িত্ব প্রদান করলেন। এরপর আমার নিকট এক আগন্তুক আসল। সে তার দুহাতের কোষ ভরে খাদ্যশস্য গ্রহণ করতে লাগল। তখন আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি অবশ্যই তোমাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাব। তখন সে একটি হাদীস উল্লেখ করল এবং বলল, যখন তুমি বিছানায় শুতে যাবে, তখন আয়তুল কুরসী পড়বে । তাহলে সর্বদা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার জন্য একজন হেফাজতকারী থাকবে এবং ভোর হওয়া পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,সে তোমাকে সত্য বলেছে, অথচ সে মিথ্যাবাদী এবং শয়তান ছিল।

হাদীস নং ৩০৪৬

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো কাছে শয়তান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে, এ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? ঐ বস্তু কে কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমার প্রতিপালক কে কে সৃষ্টি করেছে? যখন বিষয়টি এ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর কাছে পানাহ চায় এবং বিরত হয়ে যায়।

হাদীস নং ৩০৪৭

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন রমযান মাস আরম্ভ হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।

হাদীস নং ৩০৪৮

হুমাইদী রহ…………উবাই ইবনে কাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, মূসা আ. তাঁর সঙ্গীকে বললেন, আমাদের সকালের খাবার নিয়ে এসো। সে বলল, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন পাথরটির কাছে বিশ্রাম করছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তানই এর কথা বলতে ভুলিয়ে দিয়েছিল (১৮:৬২, ৬৩)। আল্লাহ তা’আলা মূসা আ.-কে যে স্থানটি সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে স্থানটি অতিক্রম করা পর্যন্ত তিনি কোনরূপ ক্লান্তিবোধ করেননি।

হাদীস নং ৩০৪৯

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তিনি পূব দিকে ইশারা করে বলেছেন, সাবধান‍! ফিতনা এখানেই। সাবধান! ফিতনা এখানেই । যেখান হতে শয়তানের শিং উদিত হবে।

হাদীস নং ৩০৫০

ইয়াহইয়া ইবনে জাফর রহ………..জাবির রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূর্যাস্তের পরপরই যখন রাত শুরু হয় অথবা বলেছেন, যখন রাতের অন্ধকার নেমে আসে তখন তোমরা তোমাদের শিশুদেরকে ঘরে আটকে রাখবে। কেননা এ সময় শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর যখন রাতের কিছু অংশ চলে যাবে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার আর তুমি তোমার ঘরের দরজা বন্ধ করে দাও এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমাদের ঘরের বাতি নিভিয়ে দাও এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার পানি রাখার পাত্রের মুখ বন্ধ রাখ এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার বাসনপত্র ঢেকে রাখ এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। সামান্য কিছু হলেও তার উপর দিয়ে রেখে দাও।

হাদীস নং ৩০৫১

মুহাম্মদ ইবনে গায়লান রহ………..সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মসজিদে নববীতে) ইতিকাফ অবস্থায় ছিলেন। আমি রাতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসলাম। এরপর তাঁর সাথে কিছু কথাবার্তা বললাম। তারপর আমি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালাম। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও আমাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমার সাথে উঠে দাঁড়ালেন। আর তাঁর (সাফিয়্যার) বাসস্থান ছিল উসামা ইবনে যায়েদের বাড়ীতে । এ সময় দু’জন আনসারী সে স্থান দিয়ে অতিক্রম করল। তারা যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখল তখন তারা তাড়াতাড়ি চলে যেতে লাগল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা একটু অপেক্ষা কর। এ মহিলাটি (আমার স্ত্রী) সফিয়্যা বিনতে হুয়াই। তারা বললেন, সুবহানাল্লাহ! ইয়া রাসূলাল্লাহ! (আমরা কি আপনার ব্যঅপারে অন্যরূপ ধারণা করতে পারি?) তিনি বললেন, মানুষের শরীরে রক্তধারায় শয়তান প্রবাহমান থাকে। আমি আশংকা করছিলাম, সে তোমাদের মনে কোন খারাপ ধারণা অথবা বললেন, অন্যকিছু সৃষ্টি করে না কি।

হাদীস নং ৩০৫২

আবদান রহ………..সুলাইমান ইবনে সুরাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বসা ছিলাম। তখন দু’জন লোক পরস্পর গালমন্দ করছিল। তাদের একজনের চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার রগগুলো ফুলে গিয়েছিল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এমন একটি দু’আ জানি, যদি এ লোকটি তা পড়ে তবে সে যে রাগ অনুভব করছে তা দূর হয়ে যাবে। (তিনি বললেন) সে যদি পড়ে: ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তান’- আমি শয়তান হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তবে তার রাগ চলে যাবে। তখন তাকে বলল, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি যেন আল্লাহর কাছে শয়তান হতে আশ্রয় চাও। সে বলল, আমি কি পাগল হয়েছি?

হাদীস নং ৩০৫৩

আদম রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রীর নিকট গমন করে এবং বলে, হে আল্লাহ! আমাকে শয়তান হতে রক্ষা কর আর আমাকে এ দ্বারা যে সন্তান দিবে তাকেও শয়তানের প্রভাব হতে হেফাজত কর। তাহলে যদি তাদের কোন সন্তান জন্মায়, তবে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না এবং তার উপর কোন কর্তৃত্বও চলবে না। আসমা রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

হাদীস নং ৩০৫৪

মাহমুদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করলেন। তারপর বলবেন, শয়তান আমার সামনে এসেছিল। সে আমার সালাত নষ্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আল্লাহ আমাকে তার উপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তারপর পূর্ণাঙ্গ হাদীসটি উল্লেখ করেন।

হাদীস নং ৩০৫৫

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন সালাতের উদ্দেশ্যে আযান দেওয়া হয় তখন শয়তান (আযানের স্থান) সশব্দে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালাতে থাকে। আযান শেষ হলে সামনে এগিয়ে আসে। আবার যখন (সালাতের জন্য) ইকামত দেওয়া হয় তখন আবার পালাতে থাকে। ইকামত শেষ হলে আবার সামনে আসে এবং মানুষের মনে খটকা সৃষ্টি করতে থাকে আর বলতে থাকে অমুক অমুক বিষয় মনে কর। এমনকি সে ব্যক্তি আর স্মরণ রাখতে পারে না যে, সে কি তিন রাকআত পড়ল না চার রাকআত পড়ল। এমন যদি কারো হয়ে যায়, সে মনে রাখতে পারে না কি তিন রাকআত পড়েছে না চার রাকআত ? তবে সে যেন দুটি সাহু সিজদা করে।

হাদীস নং ৩০৫৬

আবুল ইয়ামান রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্মের সময় তার পার্শ্বদেশে শয়তান তার উপর আঙ্গুল দ্বারা মারে। ঈসা ইবনে মারয়াম আ.-এর ব্যতিক্রম। সে তাকে টোকা মারতে গিয়েছিল। (কিন্তু ব্যর্থ হয়) তখন সে পর্দার উপর টোকা মারে।

হাদীস নং ৩০৫৭

মালিক ইবনে ইসমাঈল রহ………..আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গমন করলাম, লোকেরা বলেন, ইনি আবু দারদা রা.। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মাঝে কি সে লোক আছে, যাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৌখিক দু’আয় আল্লাহ শয়তান থেকে রক্ষা করেছেন?

হাদীস নং ৩০৫৮

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………..মুগীরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তাঁর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৌখিক দু’আয় শয়তান থেকে রক্ষা করেছেন, তিনি হলেন, আম্মার রা.। লায়স রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফেরেশতাগণ মেঘের মধ্যে এমন সব বিষয় আলোচনা করেন, যা পৃথিবীতে ঘটবে। তখন শয়তানেরা দু’একটি কথা শুনে ফেলে এবং তা গনকদের কানে এমনভাবে ঢেলে দেয় যেমন বোতলে পানি ঢালা হয়। তখন তারা এ সত্য কথার সাথে শত প্রকারের মিথ্যা কথা বাড়িয়ে বলে।

হাদীস নং ৩০৫৯

আসিম ইবনে আলী রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের কারো যখন হাই আসবে তখন যথাসম্ভব তা দমন করবে। কেননা তোমাদের কেউ হাই তোলার সময় যখন ‘হা’ বলে, তখন শয়তান হাসতে থাকে।

হাদীস নং ৩০৬০

যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদের দিন যখন মুশরিকরা পরাজিত হলো, তখন ইবলিস চীৎকার করে বলল, হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা তোমাদের পেছনের লোকদের প্রতি সতর্ক হও। অতএব সামনের লোকেরা পেছনের লোকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ফলে উভয় দলের মধ্যে নতুনভাবে সংঘর্ষ শুরু হল। হুযায়ফা রা. হঠাৎ তাঁর পিতা ইয়ামানকে দেখতে পেলেন। (মুসলমানগণ তাঁর উপর আক্রমণ করছে) তখন তিনি (হুযায়ফা) বললেন, হে আল্লাহর বান্দারা ! আমার পিতা! আমার পিতা! (তিনি মুসলিম) কিন্তু আল্লাহর কসম, তারা বিরত হয়নি। শেষ পর্যন্ত তারা তাকে হত্যা করে ফেলল। তখন হুযায়ফা রা. বললেন, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। উরওয়া রা. বলেন, আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত হুযায়ফা রা. (তাঁর পিতার হত্যাকারীদের জন্য) দু’আ ও ইস্তিগফার করতে থাকেন।

হাদীস নং ৩০৬১

হাসান ইবনে রাবী রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতের মধ্যে মানুষের এদিক-ওদিক তাকানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তা হল শয়তানের এক ধরণের ছিনতাই, যা সে তোমাদের একজনের সালাত থেকে ছিনিয়ে নেয়।

হাদীস নং ৩০৬২

আবুল মুগীরা ও সুলাইমান ইবনে আবদুর রহমান রহ…………আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সৎ ও ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন ভীতিকর মন্দ স্বপ্ন দেখে তখন সে যেন তার বাম দিকে থুথু নিক্ষেপ করে আর শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাহলে এরূপ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

হাদীস নং ৩০৬৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি একশ বার এ দু’আটি পড়বে : আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই; বাদশাহী একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সকল বস্তুর উপর সর্বশক্তিমান। তাহলে দশটি গোলাম আযাদ করার পরিমাণ সাওয়াব তার হবে। তার জন্য একশটি সাওয়াব লেখা হবে এবং একশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান থেকে মাহফুজ থাকবে। কোন লোক তার চেয়ে উত্তম সাওয়াবের কাজ করতে সক্ষম হবেনা। তবে হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে ঐ দু’আটির আমল অধিক পরিমাণ করবে।

হাদীস নং ৩০৬৪

আলী ইবনে আবদুল্লহ রহ………সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, একদা উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তাঁর সঙ্গে কয়েকজন কুরাইশ মহিলা কথাবার্তা বলছিল। তারা খুব উচ্চস্বরে কথা বলছিল। এরপর যখন উমর রা. অনুমতি চাইলেন, তারা উঠে দ্রুত পর্দার আড়ালে চরে গেলেন। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি প্রদান করলেন। তখন তিনি মুচকি হাসছিলেন। তখন উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ আপনাকে সর্বদা স্মিতহাস্যে রাখুন। তিনি বললেন, আমার কাছে যে সব মহিলা ছিল তাদের ব্যাপারে আমি আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। তারা যখনই তোমার কণ্ঠস্বর শুনতে পেল তখনই দ্রুত পর্দার আড়ালে চলে গেল। উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকেই তাদের অধিক ভয় করা উচিত ছিল। এরপর তিনি মহিলাদের লক্ষ্য করে বললেন, হে আত্ম শত্রু মহিলাগণ! তোমরা আমাকে ভয় করছ অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভয় করছ না? তারা জবাব দিল, হ্যাঁ কারণ তুমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে অধিক কর্কশ ভাষী ও কঠোর হৃদয় ব্যক্তি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কসম ঐ সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, তুমি যে পথে গমন কর শয়তান কখনও সে পথে চলে না বরং সে তোমার পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে।

হাদীস নং ৩০৬৫

ইবরাহীম ইবনে হামযা রহ………..আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন নিদ্রা থেকে উঠল এবং উযু করল তখন তার নাক তিনবার ঝেড়ে ফেলা উচিত। কেননা, শয়তান তার নাকের ছিদ্রে রাত যাপন করেছে।

হাদীস নং ৩০৬৬

কুতাইবা রহ…………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান রহ.-কে বলেছেন, আমি তোমাকে দেখছি তুমি ছাগপাল ও মরুভূমি পছন্দ করছ। অতএব, তুমি যখন তোমার ছাগপালসহ মরুভূমিতে অবস্থান করবে, সালাতের সময় হলে আযান দিবে, তখন তুমি উচ্চস্বরে আযান দিবে। কেননা মুআযযিনের কণ্ঠস্বর জ্বিন, মানুষ ও যে কোন বস্তু শুনে, তারা কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। আবু সাঈদ রা. বলেন, আমি এ হাদীসটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।

হাদীস নং ৩০৬৭

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ…………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারের উপর ভাষণ দানকালে বলতে শুনেছেন, সাপ মেরে ফেল। বিশেষ করে মেরে ফেল ঐ সাপ, যার মাথার উপর দু’টো সাদা রেখা আছে এবং লেজ কাটা সাপ। কেননা, এ দু’ প্রকারের সাপ চোখের জ্যোতি নষ্ট করে দেয় ও গর্ভপাত ঘটায়। আবদুল্লাহ রা. বললেন, একদিন আমি একটি সাপ মারার জন্য তার পেছনে ধাওয়া করছিলাম। এমন সময় আবু লুবাবা রা. আমাকে ডেকে বললেন, সাপটি মেরো না। তখন আমি বললাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাপ মারার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তিনি বললেন, এরপরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সাপ ঘরে বাস করে যাকে ‘আওয়ামিন’ বলা হয় এমন সাপ মারতে নিষেধ করেছেন। আবদুর রাজ্জাক রহ. মামার রহ. সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, আমাকে দেখেছেন আবু লুবাবা অথবা ইবনে খাত্তাব রা. আর অনুসরণ করেছেন মামার রহ.-কে ইউনুস ইবনে উয়াইনা, ইসহাক কালবী ও যুবাইদী রহ. এবং সালিহ, ইবনে আবু হাফসা ও ইবনে মুজাম্মি রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, আমাকে দেখেছেন আবু লুবাবা ও যায়েদ ইবনে খাত্তাব রা.।

হাদীস নং ৩০৬৮

ইসমাঈল রহ…………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে সময় অতি নিকটে যখন একজন মুসলিমের সর্বোত্তম সম্পদ হবে ছাগপাল। যা নিয়ে সে পাহাড়ের চূড়ায় এবং বৃষ্টির এলাকায় চলে যাবে ; সে ফিতনা থেকে স্বীয় দীন রক্ষার্থে পলায়ন করবে।

হাদীস নং ৩০৬৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুফরীর মূল পূর্বদিকে, গর্ব এবং অহংকার ঘোড়া এবং উটের মালিকদের মধ্যে এবং গ্রাম্য কৃষকদের মাঝে, আর শান্তি ছাগপালের মালিকদের মাঝে।

হাদীস নং ৩০৭০

মুসাদ্দাদ রহ………..উকবা ইবনে আমর আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাতের দ্বারা ইয়ামানের দিকে ইশারা করে বললেন, ঈমান এদিকে। দেখ কঠোরতা এবং অন্তরের কাঠিন্য ঐসব কৃষকদের মধ্যে যারা উটের লেজের কাছে থেকে চিৎকার করে, যেখান থেকে শয়তানের শিং দুটি উদয় হবে অর্থাৎ রাবীয়া ও মুযার গোত্র দ্বয়ের মধ্যে।

হাদীস নং ৩০৭১

কুতাইবা রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে তখন তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চেয়ে দু’আ কর। কেননা এ মোরগ ফেরেশতাদের দেখে আর যখন গাধার আওয়াজ শুনবে তখন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে, কেননা এ গাধাটি শয়তান দেখেছে।

হাদীস নং ৩০৭২

ইসহাক রহ………..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন রাতের আঁধার নেমে আসবে অথবা বলেছেন, যখন সন্ধ্যা হয়ে যাবে তখন তোমরা তোমাদের শিশুদেরকে (ঘরে) আটকিয়ে রাখবে। কেননা এ সময় শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে। আর যখন রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হয়ে যাবে তখন তাদেরকে ছেড়ে দিতে পার। তোমরা ঘরের দরজা বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারেনা। ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন, হাদীসটি আমর ইবনে দীনার রহ……..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ থেকে আতা রহ.-এর অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি “আল্লাহর নাম স্মরণ কর” বলেননি।

হাদীস নং ৩০৭৩

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বনী ইসরাঈলের একদল লোক নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। কেউ জানেনা তাদের কি হল আর আমি তাদেরকে ইঁদুর বলেই মনে করি। কেননা তাদের সামনে যখন উটের দুধ রাখা হয়, তারা তা পান করেনা, আর তাদের সামনে ছাগলের দুধ রাখ হয় তারা তা পান করে (আবু হুরায়রা রা. বলেন) আমি এ হাদীসটি কাবের নিকট বললাম, তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আ