হাদীস নং ১৮৪৭
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ব্যতীত কোন মাসে পুরা মাসের সাওম পালন করেন নাই। তিনি এমনভাবে (নফল) সাওম পালন করতেন যে, কেউ বলতে চাইলে বলতে পারতো, আল্লাহর কসম ! তিনি আর সাওম পালন পরিত্যাগ করবেন না। আবার এমনভাবে (নফল) সাওম ছেড়ে দিতেন যে, কেউ বলতে চাইলে বলতে পারতো আল্লাহর কসম ! তিনি আর সাওম পালন করবেন না।
হাদীস নং ১৮৪৮
আবদুল আযীয আবদুল্লাহ রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাসে এভাবে সাওম ছেড়ে দিতেন যে, আমরা মনে করতাম, তিনি এ মাসে আর সাওম পালন করবেন না। আবার কোন মাসে এভাবে সাওম পালন করতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি এ মাসে আরমা সাওম ছাড়বেন না। আর তুমি যদি তাকে রাতে সালাত আদায়রত অবস্থায় দেখতে চাইতে তবে তা দেখতে পেতে, আবার যদি তুমি তাকে ঘুমন্ত দেখতে চাইতে তবে তাও দেখতে পেতে। সুলাইমান রহ. হুমায়দ রহ. সূত্রে বলেন, যে, তিনি আনাস রা.-কে সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন।
হাদীস নং ১৮৪৯
মুহাম্মদ রহ………হুমাইদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস রা.-কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর (নফল) সাওমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, যে কোন মাসে আমি তাকে সাওম পালনরত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি, তাকে সে অবস্থায় দেখেছি, আবার তাকে সাওম পালন না করা অবস্থায় দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। রাতে যদি তাকে সালাত আদায়রত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি, তা প্রত্যক্ষ করেছি। আবার ঘুমন্ত দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত মুবারক হতে নরম কোন পশমী বা রেশমী কাপড় স্পর্শ করি নাই। আর আমি তাঁর (শরীরের) ঘ্রাণ হতে অধিক সুগন্ধযুক্ত কোন মিশক বা আম্বর পাইনি।
হাদীস নং ১৮৫০
ইসহাক রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন। এরপর তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেন অর্থাৎ “তোমাদের উপর মেহমানের হক আছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে”। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সাওমে দাউদ আ. কি ? তিনি বললেন : “অর্ধেক বছর” (-এর সাওম পালন করা)।
হাদীস নং ১৮৫১
মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন : হে আবদুল্লাহ ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন সাওম পালন কর এবং সারারাত সালাত আদায় করে থাক। আমি বললাম, ঠিক (শুনেছেন) ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি বললেন : এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে) সাওম পালন কর আবার সাওম ছেড়েও দাও। (রাতে) সালাত আদায় কর আবার ঘুমাও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হক রয়েছে, তোমার চোখের হক রয়েছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রী হক আছে, তোমার মেহমানের হক আছে। তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম পালন কর। কেননা নেক আমলের বদলে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকী। এভাবে সারা বছরের সাওম হয়ে যায়। আমি (বললাম) আমি এর চেয়েও কঠোর আমল করতে সক্ষম। তখন এভাবে সারা বছরের সাওম হয়ে যায়। আমি (বললাম) আমি এর চেয়েও কঠোর আমল করতে সক্ষম। তখন আমাকে আরও কঠিন আমলের অনুমতি দেওয়া হল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আরো বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেন : তবে আল্লাহর নবী দাউদ আ.-এর সাওম পালন কর, এর থেকে বেশী করতে যেয়ো না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নবী দাউদ আ.-এর সাওম কেমন ? তিনি বললেন : অর্ধেক বছর। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ রা. বৃদ্ধ বয়সে বলতেন, আহা ! আমি যদি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত রুখসত (সহজতর বিধান) কবুল করে নিতেন।
হাদীস নং ১৮৫২
আবুল ইয়ামান রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আমার সম্পর্কে এ কথা পৌছে যায় যে, আমি বলেছি, আল্লাহর কসম ! আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন সাওম পালন করব এবং রাতভর সালাত আদায় করব। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করায় আমি বললাম, আপনার উপর আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক ! আমি এ কথা বলেছি । তিনি বললেন : তুমি তো এরূপ করতে সক্ষম হবে না। বরং তুমি সাওম পালন কর ও ছেড়েও দাও, (রাতে) সালাত আদায় কর ও নিদ্রা যাও। তুমি মাসে তিন দিন করে সাওম পালন কর, কারণ নেক কাজের ফল তার দশগুণ; এভাবেই সারা বছরের সাওম পালন হয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি এর থেকে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন : তাহলে একদিন সাওম পালন কর এবং একদিন সাওম পালন কর আর একদিন ছেড়ে দাও। এই হল দাউদ আ.-এর সাওম এবং এই হল সর্বোত্তম (সাওম) আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এর চেয়ে উত্তম সাওম (রাখার পদ্ধতি) আর নেই।
হাদীস নং ১৮৫৩
আমর ইবনে আলী রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌছে যে, আমি একটানা সাওম পালন করি এবং রাতভর সালাত আদায় করি। এরপর হয়ত তিনি আমার কাছে লোক পাঠালেন অথবা আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম। তিনি বললেন : আমি কি এ কথা ঠিক শুনি নাই যে, তুমি সাওম পালন করতে থাক আর ছাড় না এবং তুমি (রাতভর) সালাত আদায় করতে থাক আর ঘুমাও না ? (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) তুমি সাওম পালন কর এবং মাঝে মাঝে তা ছেড়েও দাও। রাতে সালাত আদায় কর এবং নিদ্রাও যাও। কেননা তোমার উপর তোমার চোখের হক রয়েছে এবং তোমার নিজের শরীরের ও তোমার পরিবারের হক তোমার উপর আছে। আবদুল্লাহ রা. বললেন, আমি এর চেয়ে বেশী শক্তি রাখি। তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : তাহলে তুমি দাউদ আ.-এর সিয়াম পালন কর। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ রা. বললেন, তা কিভাবে ? তিনি বললেন : দাউদ আ. একদিন সাওম পালন করতেন, একদিন ছেড়ে দিতেন এবং তিনি (শত্রুর) সম্মুখীন হলে পলায়ন করতেন না। আবদুল্লাহ রা. বললেন : হে আল্লাহর নবী ! আমাকে এ শক্তি কে যোগাবে ? বর্ণনাকারী আতা রহ. বলেন, (এই হাদীসে) কি ভাবে সব সময়ের সিয়ামের প্রসঙ্গ আসে সে কথাটুকু আমার মনে নেই (অবশ্য) এতটুকু মনে আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ বার এ কথাটি বলেছেন, সব সময়ের সাওম কোন সাওম নয়।