হাদীস নং ১৮৪০
উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ. ও মুহাম্মদ রহ……. আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের উপর দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে সাওমে বেসাল হতে নিষেধ করলে তারা বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল করে থাকেন। তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। আবু আবদুল্লাহ বুখারী রহ. বলেন, রাবী উসামন রহ. ‘তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে’ কথাটি উল্লেখ করেননি।
হাদীস নং ১৮৪১
আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি যে বিরতিহীন সাওম পালন করেন ? তিনি বললেন : তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছ ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালাক আমাকে পানাহার করান। এরপর যখন লোকেরা সাওমে বেসাল করা হতে বিরত থাকল না তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন সাওমে বেসাল করতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ দেখতে পেল তখন তিনি বললেন : যদি চাঁদ উঠতে আরো দেরী হত তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে আরো বেশী দিন সাওমে বেসাল করতাম। এ কথা তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান স্বরূপ বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
হাদীস নং ১৮৪২
ইয়াহইয়া রহ…….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমরা সাওমে বেসাল পালন করা হতে বিরত থাক (বাক্যটি তিনি) দু’ বার বললেন । তাকে বলা হল, আপনি তে সাওমে বেসাল করেন। তিনি বললেন : আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন। তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আমল করার দায়িত্ব গ্রহণ করো।
হাদীস নং ১৮৪৩
ইবরাহীম ইবনে হামযা রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা সাওমে বেসাল করবে না। তোমাদের কেউ যদি সাওমে বেসাল করতে চায়, তবে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি তো সাওমে বেসাল পালন করেন ? তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই। আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার জন্য একজন আহার দাতা রয়েছেন যিনি আমাকে আহার করান, একজন পানীয় দানকারী আছেন যিনি আমাকে পান করান।
হাদীস নং ১৮৪৪
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..আবু জুহায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান রা. ও আবুদ দারদা রা.-এর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। (একবার) সালমান রা. আবুদ দারদা রা.-এর সাথে সাক্ষাত করতে এসে উম্মুদ দারদা রা.-কে মলিন কাপড় পরিহিত দেখতে পান । তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে উম্মদ দারদা রা. বললেন, আপনার ভাই আবুদ দারদার পার্থিব কোন কিছুর প্রতি মোহ নেই । কিছুক্ষণ পরে আবুদ দারদা রা. এলেন। তারপর তিনি সালমান রা.-এর জ্য আহার্য প্রস্তুত করান এবং বলেন, আপনি খেয়ে নিন, আমি সাওম পালন করছি। সালমান রা. বললেন, আপনি না খেলে আমি খাবো না। এরপর আবুদ দারদা রা. সালমান রা.–এর সঙ্গে খেলেন। রাত হলে আবুদ দারদা রা. (সালাত আদায়ে) দাঁড়াতে গেলেন। সালমান রা. বললেন, এখন ঘুমিয়ে যান। আবুদ দারদা রা. ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবুদ দারদা রা. আবার সালাতে দাঁড়াতে উদ্যত হলেন, সালমান রা. বললেন, ঘুমিয়ে যান। যখন রাতের শেষ ভাগ হল, সালমান রা. আবুদ দারদা রা.-কে বললেন, এখন দাঁড়ান। এরপর তাঁরা দু’ জনে সালাত আদায় করলেন। পরে সালমান রা. তাকে বললেন, আপনার প্রতিপালকের হক আপনার উপর আছে। আপনার নিজেরও হক আপনার উপর রয়েছে। আবার আপনার পরিবারেরও হক রয়েছে। প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করুন। এরপর আবুদ দারদা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। (সব শুনে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সালমান ঠিকই বলেছে।
হাদীস নং ১৮৪৫
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে (এত বেশী) সাওম পালন করতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর সাওম পরিত্যাগ করবেন না। (আবার কখনো এত বেশী) সাওম পালন না করা অবস্থায় একাধারে কাটাতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর (নফল) সাওম পান করবেন না। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে রমযান ব্যতীত কোন পুরা মাসের সাওম পালন করতে দেখিনি এবং শা’বান মাসের চেয়ে কোন মাসে বেশী (নফল) সাওম পালন করতে দেখিনি।
হাদীস নং ১৮৪৬
মুআয ইবনে ফাযালা রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শা’বান মাসের চেয়ে বেশী (নফল) সাওম কোন মাসে পালন করতেন না। তিনি (প্রায়) পুরা শা’বান মাসই সাওম পালন করতেন এবং তিনি বলতেন : তোমাদের সাধ্যে যতটুকু কুলায় ততটুকু (নফল) আমল কর, কারণ তোমরা (আমল করতে করতে) ক্লান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা (সাওয়াব দান) বন্ধ করেন না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় সালাত ছিল তাই-যা যথাযথ নিয়মে সর্বদা আদায় করা হত, যদিও তা পরিমাণে কম হত এবং তিনি যখন কোন (নফল) সালাত আদায় করতেন পরবর্তীতে তা অব্যাহত রাখতেন।