হাদীস নং ১৩১৯
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নুমাইর রহ………জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট সালাত কায়েম করা, যাকাত দেয়া ও সকল মুসলমানের কল্যাণ করার উপর বায়আত করি।
হাদীস নং ১৩২০
আবুল ইয়ামান হাকাম ইবনে নাফি রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের উটের (উপর দরিদ্র, বঞ্চিত, মুসাফিরের) হক আদায় না করবে, (কিয়ামত দিবসে) সে উট দুনিয়া অপেক্ষ অধিক শক্তিশালী হয়ে খুর দিয়ে আপন মালিককে পিষ্ট করতে আসবে এবং যে ব্যক্তি নিজের বকরীর হক আদায় না করবে, সে বকরী দুনিয়া অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে এসে মালিককে খুর দিয়ে পদদলিত করবে ও শিং দিয়ে আঘাত করবে। উট ও বকরীর হক হল পানির নিকট (জনসমাগম স্থলে) ওদের দোহন করা (ও দরিদ্র বঞ্চিতদের মধ্যে দুধ বন্টন করা)। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন : তোমাদের কেউ যেন কিয়ামত দিবসে (হক অনাদায়জনিত কারণে শাস্তিস্বরূপ) কাঁধের উপর চিৎকার রত বকরী বহন করে (আমার নিকট) না আসে এবং বলেন, হে মুহাম্মদ ! (আমাকে রক্ষা করুন) । তখন আমি বলব : তোমাকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। আমি তো (হক অনাদায়ের পরিণতির কথা) পৌঁছে দিয়েছি। আর কেউ যেন চিৎকার রত উট কাঁধের উপর বহন করে এসে না বলে, হে মুহাম্মদ ! (আমাকে রক্ষা করুন)। তখন আমি বলব : তোমাকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। আমি তো (শেষ পরিণতির কথা) পৌঁছে দিয়েছি।
হাদীস নং ১৩২১
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে) টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পার্শ্ব কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করেন : “আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথচ তার সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরেই কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হবে”।(৩ : ১৮০)
হাদীস নং ১৩২২
আহমদ ইবনে শাবীব ইবনে সাঈদ রহ……..খালিদ ইবনে আসলাম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর সাথে বের হলাম। এক মরু বাসী তাকে বলল, আল্লাহ তা’আলার বাণী : “যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে-এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। ইবনে উমর রা. বললেন, যে ব্যক্তি সম্পদ জমা করে রাখে আর এর যাকাত আদায় করে না, তার জন্য রয়েছে শাস্তি-এ তো ছিল যাকাত বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগের কথা। এরপর যখন যাকাত বিধান অবতীর্ণ হল তখন একে আল্লাহ সম্পদের পবিত্রতা লাভের উপায় কারে দিলেন।
হাদীস নং ১৩২৩
ইসহাক ইবনে ইয়াযীদ রহ………..আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পাঁচ উকিয়া পরিমাণের কম সম্পদের উপর যাকাত নেই এবং পাঁচ উটের কমের উপর যাকাত নেই। পাঁচ ওসাকের কম উৎপন্ন দ্রব্যের উপর যাকাত নেই।
হাদীস নং ১৩২৪
আলী ইবনে আবু হাশিম রহ……….যায়েদ ইবনে ওহব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাবাযা নামক স্থান দিয়ে চলার পথে আবু যার রা. -এর সাথে আমার সাক্ষাত হল। আমি তাকে বললাম, আপনি এখানে কি কারণে আসলেন ? তিনি বললেন, আমি সিরিয়ার অবস্থানকালে নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে মুআবিয়া রা.-এর সাথে আমার মতানৈক্য হল : “যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় তা ব্যয় করে না……..”। মুআবিয়া রা. বলেন, এ আয়াত কেবল আহলে কিতাবদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি বললাম আমাদের ও তাদের সকলের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এক সময় মু’আবিয়া রা. উসমান রা.-এর নিকট আমার নামে অভিযোগ করে পত্র পাঠালেন। তিনি পত্রযোগে আমাকে মদীনায় ডেকে পাঠান। মদীনায় পৌঁছলে আমাকে দেখতে লোকেরা এত ভিড় করল যে, এর পূর্বে যেন তারা কখনো আমাকে দেখিনি। উসমান রা.-এর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি আমাকে বললেন, ইচ্ছা করলে আপনি মদীনার বাইরে নিকটে কোথাও থাকতে পারেন। এ হল আমার এ স্থানে অবস্থানের কারণ। খলীফা যদি কোন হাবশী লোককেও আমার উপর কর্তৃত্ব প্রদান করেন তবুও আমি তাঁর কথা শুনব এবং আনুগত্য করব।
হাদীস নং ১৩২৫
আয়্যাশ ও ইসহাক ইবনে মানসুর রহ……..আহনাফ ইবনে কায়স রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি কুরাইশ গোত্রীয় একদল লোকের সাথে বসেছিলাম, এমন সময় রুক্ষ্ম চুল, মোটা কাপড় ও খসখসে শরীর বিশিষ্ট এক ব্যক্তি তাদের নিকট এসে সালাম দিয়ে বলল, যারা সম্পদ জমা করে রাখে তাদেরকে এমন গরম পাথরের সংবাদ দাও, যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হচ্ছে। তা তাদের স্তনের বোঁটার উপর স্থাপন করা হবে আর তা কাঁধের পেশী ভেদ করে বের হবে এবং কাঁধের উপর স্থাপন করা হবে, তা নড়াচড়া করে সজোরে স্তনের বোঁটা ছেদ করে বের হবে। এরপর লোকটি ফিরে গিয়ে একটি স্তম্ভের পাশে বসল। আমিও তাঁর অনুগমন বক্তব্য লোকেরা পছন্দ করেনি। তিনি বললেন, তারা কিছুই বুঝে না। কথাটি আমাকে আমার বন্ধু বলেছেন। রাবী বলেন, আমি বললাম, আপনার বন্ধু কে ? সে বলল, তিনি হলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন) হে আবু যার ! তুমি কি উহুদ পাহাড় দেখেছ ? তিনি বলেন, তখন আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দিনের কতটুকু অংশ বাকি রয়েছে। আমার ধারণা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে পাঠাবেন। আমি জওয়াবে বললাম, জী-হ্যাঁ। তিনি বললেন : তিনটি দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ব্যতীত উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ স্তূপ আমার কাছে আসুক আর আমি সেগুলো দান করে দেই তাও আমি নিজের জন্য পছন্দ করি না। (আবু যার রা. বলেন) তারা তো বুঝে না, তারা শুধু দুনিয়ার সম্পদই একত্রিত করছে। আল্লাহর কসম, না ! না ! আমি তাদের নিকট দুনিয়ার কোন সম্পদ চাই না এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করা পর্যন্ত দীন সম্পর্কেও তাদের নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করব না।