হাদীস নং ১৪৬৭
উসমান রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বের হলাম এবং একে হজ্জের সফর বলেই আমরা জানতাম। আমরা যখন (মক্কায়) পৌছে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলাম তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন : যারা কুরবানীর পশু সংগে নিয়ে আসেনি তারা যেন ইহরাম ছেড়ে দেয়। তাই যিনি কুরবানীর পশু সংগে আনেননি তিনি ইহরাম ছেড়ে দেন। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীগণ তাঁরা ইহরাম ছেড়ে দিলেন। আয়িশা রা. বলেন, আমি ঋতুবতী হয়েছিলাম বিধায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারিনি। (ফিরতি পথে) মুহাসসাব নামক স্থানে রাত যাপনকালে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সকলেই উমরা ও হজ্জ উভয়টি সমাধা করে ফিরছে আর আমি কেবল হজ্জ করে ফিরছি। তিনি বললেন : মক্কা পৌঁছলে তুমি কি সে দিনগুলোতে তাওয়াফ করনি ? আমি বললাম, জী-না। তিনি বললেন : তোমার ভাই-এর সাথে তানঈম চলে যাও, সেখান থেকে উমরার ইহরাম বাঁধবে। তারপর অমুক স্থানে তোমার সাথে সাক্ষাত ঘটবে। সাফিয়্যা রা. বললেন, আমার মনে হয় আমি আপনাদেরকে আটকে রাখার কারণ হয়ে যাচ্ছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : কি বললে ! তুমি কি কুরবানীর দিনগুলোতে তাওয়াফ করনি। আমি বললাম, হ্যাঁ, করেছি। তিনি বললেন : তবে কোন অসুবিধা নেই, তুমি চল। আয়িশা রা. বলেন, এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এমতাবস্থায় আমার সাক্ষাত হল যখন তিনি মক্কা ছেড়ে উপরের দিকে উঠছি ও তিনি অবতরণ করছেন।
হাদীস নং ১৪৬৮
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজ্জাতুল বিদার বছর আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বের হই। আমাদের মধ্যে কেউ কেবল উমরার ইহরাম বাঁধলেন, আর কেউ হজ্জ ও উমরা উভয়টির ইহরাম বাঁধলেন। আর কেউ শুধু হজ্জ-এর ইহরাম বাঁধলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ-এর ইহরাম বাঁধলেন। যারা কেবল হজ্জ বা এক সংগে হজ্জ ও উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন তাদের একজনও কুরবানী দিনের পূর্বে ইহরাম খোলেন নি।
হাদীস নং ১৪৬৯
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….মারওয়ান ইবনে হাকাম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উসমান ও আলী রা.-কে দেখেছি, উসমান রা. তামাত্তু ও হজ্জ ও উমরা একত্রে আদায় করতে নিষেধ করতেন। আলী রা. এ অবস্থা দেখে হজ্জ ও উমরার ইহরাম একত্রে বেঁধে তালবিয়া পাঠ করেন “হে আল্লাহ ! আমি উমরা ও হজ্জ-এর ইহরাম বেঁধে হাযির হলাম) এবং বললেন, কারো কথায় আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত বর্জন করতে পারব না।
হাদীস নং ১৪৭০
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা হজ্জ-এর মাসগুলোতে উমরা করাকে দুনিয়ার সবচেয়ে ঘৃণ্য পাপের কাজ বলে মনে করত। তারা মুহাররম মাসের স্থলে সফর মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ মনে করত। তারা বলত, উটের পিঠের যখম ভাল হলে, রাস্তার মুসাফিরের পদচিহ্ন মুছে গেলে এবং সফর মাস অতিক্রান্ত হলে উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি উমরা করতে পারবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ হজ্জ-এর ইহরাম বেঁধে চার তারিখ সকালে (মক্কায়) উপনীত হন। তখন তিনি তাদের এই ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিণত করার নির্দেশ দেন। তাঁরা এ কাজকে কঠিন মনে করলেন (উমরা শেষ করে) তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাদের জন্য কি কি জিনিস হালাল ? তিনি বললেন : সবকিছু হালাল (ইহরামের পূর্বে যা হালাল ছিল তার সব কিছু এখন হালাল)।
হাদীস নং ১৪৭১
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……….আবু মূসা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি আমাকে (ইহরাম ভঙ্গ করে) হালাল হয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন।
হাদীস নং ১৪৭২
ইসমাঈল ও আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..নবী সহধর্মিণী হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! লোকদের কি হল, তারা উমরা শেষ করে হালাল হয়ে গেল, অথচ আপনি আপনার উমরা থেকে হালাল হচ্ছেন না ? তিনি বললেন : আমি মাথায় আঠালো বস্তু লাগিয়েছি এবং কুরবানীর পশুর গলায় মালা ঝুলিয়েছি। কাজেই কুরবানী করার পূর্বে হালাল হতে পারিনা।
হাদীস নং ১৪৭৩
আদম রহ………আবু জামরা নাসর ইবনে ইমরান যুবায়ী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তামাত্তু হজ্জ করতে ইচ্ছা করলে কিছু লোক আমাকে নিষেধ করল । আমি তখন ইবনে আব্বাস রা.-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা করতে আমাকে নির্দেশ দেন। এরপর আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন এক ব্যক্তি আমাকে বলছে, উত্তম হজ্জ ও মাকবুল উমরা। ইবনে আব্বাস রা.-এর নিকট স্বপ্নটি বললাম। তিনি বললেন, তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত । এরপর আমাকে বললেন, তুমি আমার কাছে থাক, তোমাকে আমার মালের কিছু অংশ দিব। রাবী শুবা রহ. বলেন, আমি (আবু জামরাকে) বললাম, তা কেন ? তিনি বললেন, আমি যে স্বপ্ন দেখেছি সে জন্য।
হাদীস নং ১৪৭৪
আবু নুআইম রহ…….আবু শিহাব রহ. থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমি উমরার ইহরাম বেঁধে হজ্জে তামাত্তুর নিয়্যাতে তারবিয়্যা দিবস (আট তারিখ)-এর তিন দিন পূর্বে মক্কায় প্রবেশ করলাম, মক্কাবাসী কিছু লোক আমাকে বললেন, এখন তোমার হজ্জের কাজ মক্কা থেকে শুরু হবে। আমি বিষয়টি জানার জন্য আতা রহ.-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি বললেন, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. আমাকে বলেছেন, যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর উট সংগে নিয়ে হজ্জে আসেন তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন। সাহাবীগণ ইফরাদ হজ্জ-এর নিয়্যাতে শুধু হজ্জের ইহরাম বাঁধেন। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায় পৌছে) তাদেরকে বললন : বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সায়ী সমাধা করে তোমরা ইহরাম ভঙ্গ করে হালাল হয়ে যাও এবং চুল ছোট কর। এরপর হালাল অবস্থায় থাক। যখন যিলহজ্জ মাসের আট তারিখ হবে তখন তোমরা হজ্জ-এর ইহরাম বেঁধে নিবে, আর যে ইহরাম বেঁধে এসেছ তা তামাত্তু হজ্জের উমরা বানিয়ে নিবে। সাহাবীগণ বললেন, এই ইহরামকে আমরা কিরূপে উমরার ইহরাম বানাব ? আমরা হজ্জ-এর নাম নিয়ে ইহরাম বেঁধেছি। তখন তিনি বললেন : আমি তোমাদেরকে যা আদেশ করেছি তাই কর। কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়ে না আসলে তোমাদেরকে যা করতে বলছি, আমিও সেরূপ করতাম। কিন্তু কুরবানী করার পূর্বে (ইহরামের কারণে) নিষিদ্ধ কাজ (আমার জন্য) হালাল নয়। সাহাবীগণ সেরূপ পশু যবেহ করলেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) বহ. বলেন, আবু শিহাব রহ. থেকে মারফু বর্ণনা মাত্র এই একটিই পাওয়া যায়।