হাদীস নং ১৪৬১
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ…….মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইবনে আব্বাস রা. -এর নিকটে ছিলাম, লোকেরা দাজ্জালের আলোচনা করে বলল যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তার দু’ চোখের মাঝে (কপালে) কা-ফি-র লেখা থাকবে। রাবী বলেন, ইবনে আব্বাস রা. বললেন, এ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু শুনিনি । অবশ্য তিনি বলেছেন : আমি যেন দেখছি মূসা আ. নীচু ভূমিতে অবতরণকালে তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
হাদীস নং ১৪৬২
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বিদায় হজ্জের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হয়ে উমরার নিয়্যাতে ইহরাম বাঁধি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যার সঙ্গে কুরবানীর পশু আছে সে যেন উমরার সাথে হজ্জের ইহরামও বেঁধে নেয়। তারপর সে উমরা ও হজ্জ উভয়টি সম্পন্ন না করা পর্যন্ত হালাল হতে পারবে না। (আয়িশা রা. বলেন) এরপর আমি মক্কায় ঋতুবতী অবস্থায় পৌঁছলাম। কাজেই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সায়ী কোনটিই আদায় করতে সমর্থ হলাম না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার অসুবিধার কথা জানালে তিনি বললেন : মাথার চুল খুলে নাও এবং তা আচড়িয়ে নাও এবং হজ্জের ইহরাম বহাল রাখ এবং উমরা ছেড়ে দাও। আমি তাই করলাম, হজ্জ সম্পন্ন করার পর আমাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা.-এর সঙ্গে তানঈম-এ প্রেরণ করেন। সেখান থেকে আমি উমরার ইহরাম বাঁধি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : এ তোমার (ছেড়ে দেওয়া) উমরার স্থলবর্তী। আয়িশা রা. বলেন, যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, তাঁরা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সায়ী সমাপ্ত করে হালাল হয়ে যান এবং মিনা থেকে ফিরে আসার পর দ্বিতীয়বার তাওয়াফ করেন আর যারা হজ্জ ও উমরা উভয়ের ইহরাম বেঁধেছিলেন তাঁরা একবার তাওয়াফ করেন।
হাদীস নং ১৪৬৩
মক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা-কে ইহরাম বহাল রাখার আদেশ দিলেন, এরপর জাবির রা. সুরাকা রা.-এর উক্তি বর্ণনা করেন। মুহাম্মদ ইবনে বকর রহ. ইবনে জুরাইজ রহ. থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন ; নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.-কে বললেন : হে আলী ! তুমি কোন প্রকার ইহরাম বেঁধেছ ? আলী রা. বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইহরামের অনুরূপ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে কুরবানীর পশু প্রেরণ কর এবং ইহরাম অবস্থায় যেভাবে আছ সে ভাবেই থাক।
হাদীস নং ১৪৬৪
হাসান ইবনে আলী খাল্লাল হুযালী রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী রা. ইয়ামান থেকে এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি প্রশ্ন করলেন : তুমি কী প্রকার ইহরাম বেঁধেছ ? আলী রা. বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুরূপ । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমার সঙ্গে কুরবানীর পশু না হলে আমি হয়ে যেতাম।
হাদীস নং ১৪৬৫
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু মূসা (আশআরী) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়ামানে আমার গোত্রের নিকট পাঠিয়েছিলেন; তিনি (হজ্জের সফরে) বাতহা নামক স্থানে অবস্থানকালে আমি (ফিরে এসে) তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বললেন : তুমি কোন প্রকার ইহরাম বেঁধেছ ? আমি বললাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুরূপ আমি ইহরাম বেঁধেছি। তিনি বললেন : তোমার সংগে কুরবানীর পশু আছে কি ? আমি বললাম, নেই। তিনি আমাকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে আদেশ করলেন। আমি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সায়ী করলাম। পরে তিনি আদেশ করলে আমি হালাল হয়ে গেলাম। তারপর আমি আমার গোত্রীয় এক মহিলার নিকট আসলাম। সে আমার মাথা আঁচড়িয়ে দিল অথবা বলেছেন, আমার মাথা ধুয়ে দিল। এরপর উমর রা. তাঁর খিলাফতকালে এক উপলক্ষে আসলেন। (আমরা তাকে বিষয়টি জানালে) তিনি বললেন : কুরআনের নির্দেশ পালন কর। কুরআন তো আমাদেরকে হজ্জ ও উমরা পৃথক পৃথকভাবে যথাসময়ে পূর্ণরূপে আদায় করার নির্দেশ দান করে। আল্লাহ বলেন : “তোমরা হজ্জ ও উমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে পূর্ণ কর”(২ : ১৯৬)। আর যদি আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতকে অনুসরণ করি, তিনি তো কুরবানীর পশু যবেহ করার আগে হালাল হননি।
হাদীস নং ১৪৬৬
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজ্জের মাসে, হজ্জের দিনগুলোতে, হজ্জের মৌসুমে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হয়ে সারিফ নামক স্থানে আমরা অবতরণ করলাম। আয়িশা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণের কাছে বেরিয়ে ঘোষণা করলেন : যার সাথে কুরবানীর পশু নেই এবং যে এ ইহরাম উমরার ইহরামে পরিণত করতে আগ্রহী, সে তা করতে পারবে। আর যার সাথে কুরবানীর পশু আছে সে তা পারবে না। আয়িশা রা. বলেন, কয়েকজন সাহাবী উমরা করলেন, আর কয়েকজন তা করলেন না। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কয়েকজন সাহাবী (দীর্ঘ ইহরাম রাখতে) সক্ষম ছিলেন এবং তাদের সাথে কুরবানীর পশুও ছিল। তাই তাঁরা (শুধু) উমরা করতে (ও পরে হালাল হয়ে যেতে) সক্ষম হলেন না। তিনি আরো বলেন, আমি কাঁদছিলাম, এমন সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন : ওহে কাঁদছ কেন ? আমি বললাম, আপনি সাহাবাদের যা বলেছেন, আমি তা শুনেছি, কিন্তু আমার পক্ষে উমরা করা সম্ভব নয়। তিনি বললেন : তোমার কি হয়েছে ? আমি বললাম, আমি আদম-সন্তানের এক মহিলা। সকর নারীর জন্য আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন, তোমার জন্যও তাই নির্ধারণ করেছেন। কাজেই তুমি হজ্জের ইহরাম অবস্থায় থাক। আল্লাহ তোমাকে উমরা করার সুযোগও দিতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা হজ্জের জন্য বের হয়ে মিনায় পৌঁছলাম। সে সময় আমি পবিত্র হলাম। পরে মিনা থেকে ফিরে (বায়তুল্লাহ পৌছে) তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করি। আয়িশা রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সর্বশেষ দলে বের হলাম। তিনি মহাসসাব নামক স্থানে অবতরণ করেন, আমি তাঁর সাথে অবতরণ করলাম। এখানে এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. কে ডেকে বললেন : তোমার বোন (আয়িশা)-কে নিয়ে হরম সীমারেখা হতে বেরিয়ে যাও। সেখান থেকে সে উমরার ইহরাম বেঁধে মক্কা থেকে উমরা সমাধা করলে তাকে নিয়ে এখানে ফিরে আসবে। আমি তোমাদের আগমন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকব। আয়িশা রা. বলেন, আমরা বের হয়ে গেলাম এবং আমি ও আমার ভাই তাওয়াফ সমাধা করে ফিরে এসে প্রভাত হওয়ার আগেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌছে গেলাম। তিনি বললেন : কাজ সমাধা করেছ কি ? আমি বললাম, জী হ্যাঁ। তখন তিনি রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দিলেন। সকলেই মদীনার দিকে রওয়ানা করলেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) রহ. বলেন, يضير শব্দটি ضيرا – يضير – ضار (ক্ষতিকর) শব্দ হতে উদগত এমনই ভাবে ضرورا – يضور – ضار ও ضرا – يضر – ضر একই অর্থ বোঝায়।