হাদীস নং ১৩৯১
ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ…….শাবী রহ. থেকে বর্ণিত যে, মুগীরা ইবনে শু’বা রহ.-এর কাতিব (একান্ত সচিব) বলেছেন, মুআবিয়া রা. মুগীরা ইবনে শু’বা রা.-এর কাছে লিখে পাঠালেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে আপনি যা শুনেছেন তার কিছু আমাকে লিখে জানান। তিনি তাঁর কাছে লিখলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজ অপছন্দ করেন, ১. অনর্থক কথাবার্তা, ২. সম্পদ নষ্ট করা এবং ৩. অত্যাধিক সাওয়াল করা।
হাদীস নং ১৩৯২
মুহাম্মদ ইবনে গুরাইর যুহরী রহ………সা’দ ইবনে আবু ওক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে কিছু দান করলেন। আমি তাদের মধ্যে বসা ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তিকে দিলেন না। অথচ সে ছিল আমার বিবেচনায় তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে চুপে চুপে বললাম, অমুক সম্পর্কে আপনার কি হল ? আমি তো তাকে অবশ্য মু’মিন বলে মনে করি। তিনি বললেন : বরং মুসলিম (বল) সা’দ রা. বলেন, এরপর আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। আবার তার সম্পর্কে আমর ধারণা প্রবল হয়ে উঠলে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক সম্পর্কে আপনার কি হল ? আল্লাহর কসম ! আমি তো তাকে মুমিন বলে মনে করি। তিনি বললেন : বরং মুসলিম। এবারও কিছুক্ষণ নিরব রইলাম। আবার তার সম্পর্কে আমার ধারণা প্রবল হয়ে উঠলে আমি বললাম, অমুক সম্পর্কে আপনার কি হল ? আল্লাহর কসম ! আমি তো তাকে মু’মিন বলে মনে করি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : অথবা মুসলিম ! এভাবে তিনবার বললেন : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি একজনকে দিয়ে থাকি অথচ অন্য ব্যক্তি আমার কাছে অধিক প্রিয় ই আশংকায় যে, তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অপর সনদে ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মদ রহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে এভাবে বলতে শুনেছি, তিনি হাদীসটি বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন, তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাঁধে হাত রাখলেন, এরপর বললে, হে সা’দ ! অগ্রসর হও। আমি তো এক ব্যক্তিকে দিয়ে থাকি……..। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, فكبكبوا অর্থ উল্টিয়ে দেওয়া হয়েছে। مكبا আরবী বাগধারা অনুসারে أكب الرجل থেকে গৃহীত হয়েছে অর্থাৎ কর্তার কর্ম যখন কারো প্রতি না বর্তায় তখনই এরূপ বলা হয়ে থাকে। আর যদি কর্ম কারোর উপর বর্তায়, তখন বলা হয় كبه الله لوجهه ও كببته أنا আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, সালিহ ইবনে ফায়সাল রহ. যুহরী রহ. থেকে বয়সে বড় ছিলেন আর তিনি ইবনে উমর রা.-এর সাক্ষাত পেয়েছেন।
হাদীস নং ১৩৯৩
ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রকৃত মিসকীন সে নয়, যে মানুষের কাছে ভিক্ষায় জন্য ঘুরে বেড়ায় এবং এক-দু’ লুকমা অথবা এক-দুটি খেজুর পেলে ফিরে যায় বরং প্রকৃত মিসকীন সে ব্যক্তি, যার এতটুকু সম্পদ নেই যাতে তার প্রয়োজন মিটাতে পারে এবং তার অবস্থা সেরূপ বোঝা যায় না যে, তাকে দান খয়রাত করা যাবে আর সে মানুষের কাছে যাচনা করে বেড়ায় না।
হাদীস নং ১৩৯৪
উমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে সূত্রে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা বের হয়, (রাবী বলেন) আমার ধারণা যে, তিনি বলেছেন, পাহাড়ের দিকে, তারপর লাকড়ী সংগ্রহ করে এবং তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে, তা তার পক্ষে লোকের কাছে যাচনা করার চাইতে উত্তম।
হাদীস নং ১৩৯৫
সাহল ইবনে বাক্কার রহ………আবু হুমাইদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাবুকের যুদ্ধে শরীক হয়েছি। যখন তিনি ওয়াদিল কুরা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন এক মহিলা তার নিজের বাগানে উপস্থিত ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের লক্ষ্য করে বললেন : তোমরা এই বাগানের ফলগুলোর পরিমাণ আন্দাজ কর। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে দশ ওসাক পরিমাণ আন্দাজ করলেন। তারপর মহিলাকে বললেন : উৎপন্ন ফলের হিসাব রেখো। আমরা তাবুক পৌঁছলে, তিনি বললেন : সাবধান ! আজ রাতে প্রবল ঝড় প্রবাহিত হবে। কাজেই কেউ যেন দাঁড়িয়ে না থাকে এবং প্রত্যেকেই যেন তার উট বেঁধে রাখে। তখন আমরা নিজ নিজ উট বেঁধে নিলাম। প্রবল ঝড় হতে লাগল। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেলে ঝড় তাকে তায় নামক পর্বতে নিক্ষেপ করল। আয়লা নগরীর শাসনকর্তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য একটি সাদা খচ্চর ও চাদর হাদিয়া দিলেন। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেখানকার শাসনকর্তারূপে বহাল থাকার লিখিত নির্দেশ দিলেন। (ফেরার পথে) ওয়াদিল কুরা পৌছে সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তোমার বাগানে কি পরিমাণ ফল হয়েছে ? মহিলা বলল, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি পরিমাণ, দশ ওসাকই হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি দ্রুত মদীনায় পৌঁছতে ইচ্ছুক। তোমাদের কেউ আমার সাথে দ্রুত যেতে চাইলে জলদী কর। ইবনে বাক্কার রহ. এমন একটি বাক্য বললেন, যার অর্থ, যখন তিনি মদীনা দেখতে পেলেন তখন বললেন : ইহা ত্বাবা (মদীনার অপর নাম) এরপর যখন তিনি উহুদ পর্বত দেখতে পেলেন তখন বললেন : এই পর্বত আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি। আনসারদের সর্বোত্তম গোত্রটি সম্পর্কে আমি তোমাদের খবর দিব কি ? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন : বনু নাজ্জার গোত্র, তারপর বনু আবদুল আশহাল গোত্র, এরপর বনু সাঈদা গোত্র অথবা বনু হারিস ইবনে খাযরাজ গোত্র। আনসারদের সকল গোত্রই কল্যাণ রয়েছে। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, যে বাগান দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত তাকে বলা হয় (হাদীকাতুন) এবং যা দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত নয় তাকে (হাদীকাতুন) বলা হয় না। সাহল ইবনে বাক্কার রহ. সুলাইমান ইবনে বিলাল সুত্রে আমর রহ. থেকে বর্ণনা করেন : এরপর বনু হারিস ইবনে খাযরাজ গোত্র, এরপর বনু সায়িদা গোত্র। এবং সুলাইমান রহ…….. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ পর্বত আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও তাকে ভালবাসি।