হাদীস নং ৯০৮
সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করে সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হলে সালাত। আর সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা তাদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাদের নসীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন, তবে তা জারী করতেন। তারপর তিনি ফিরে যেতেন। আবু সাঈদ রা. বলেন, লোকেরা বরাবর এ নিয়মই অনুরসরণ করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মদীনার আমীর হলেন, তখন ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যে আমি তাঁর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ঈদগাহে পৌঁছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বর দেখতে পেলাম সেটি কাসীর ইবনে সালত রা. তৈরী করেছিলেন। মারওয়ান সালাত আদায়ের আগেই এর উপর আরোহণ করতে উদ্যত হলেন। আমি তাঁর কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু তিনি কাপড় ছাড়িয়ে খুতবা দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহর কসম ! তোমরা (রাসূলের সুন্নাত) পরিবর্তন করে ফেলেছ । সে বলল, হে আবু সাঈদ ! তোমরা যা জানতে, তা গত হয়ে গিয়েছে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম ! আমি যা জানি, তা তার চেয়ে ভাল, যা আমি জানি না। সে তখন বলল, লোকজন সালাতের পর আমাদের জন্য বসে থাকে না, তাই আমি খুতবা সালাতের আগেই দিয়েছি।
হাদীস নং ৯০৯
ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের সালাত আদায় করতেন। আর সালাত শেষে খুতবা দিতেন।
হাদীস নং ৯১০
ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন বের হতেন। এরপর খুতবার আগে সালাত শুরু করেন। রাবী বলেন, আমাকে আতা রহ. বলেছেন যে, ইবনে যুবাইর রা. এর বায়আত গ্রহণের প্রথম দিকে ইবনে আব্বাস রা. এ বলে লোক পাঠালেন যে, ঈদুল ফিতরের সালাতে আযান দেওয়া হত না এবং খুতবা দেওয়া হত সালাতের পরে। আতা রহ. ইবনে আব্বাস ও জাবির ইবনে আবদুল্লাহ সূত্রে বর্ণিত তাঁরা বলেন, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে আযান দেওয়া হত না।জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে এ-ও বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাত আদায় করলেন, এবং পরে লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা শেষ করলেন, তিনি (মিম্বর থেকে) নেমে মহিলাগণের (কাতারের) কাছে আসলেন এবং তাদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল রা. -এর হাতে ভর করেছিলেন এবং বিলাল রা. তাঁর কাপড় জড়িয়ে ধরলে, মহিলাগণ এতে সাদকার বস্তু দিতে লাগলেন। আমি আতা রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি এখনো জরুরী মনে করেন যে, ইমাম খুতবা শেষ করে মহিলাগণের নিকট এসে তাদের নসীহত করবেন ? তিনি বললেন, নিশ্চয় তা তাদের জন্য অবশ্যই জরুরী। তাদের কি হয়েছে যে, তাঁরা তা করবে না ?
হাদীস নং ৯১১
আবু আসিম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর, উমর এবং উসমান রা.-এর সঙ্গে সালাতে হাজির ছিলাম। তাঁরা সবাই খুতবার আগে সালাত আদায় করতেন।
হাদীস নং ৯১২
ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর এবং উমর রা. উভয় ঈদের সালাত খুতবার পূর্বে আদায় করতেন।
হাদীস নং ৯১৩
সুলাইমান ইবনে হারব রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরে দু’রাকাআত সালাত আদায় করেন। এর আগে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি। তারপর বিলাল রা. কে সঙ্গে নিয়ে মহিলাগণের কাছে এলেন এবং সাদকা প্রদানের জন্য তাদের নির্দেশ দিলেন। তখন তাঁরা দিতে লাগলেন। কেউ দিলেন আংটি, আবার কেউ দিলেন গলার হার।
হাদীস নং ৯১৪
আদম রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আজকের এ দিনে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে সালাত আদায় করা। এরপর আমরা (বাড়ী) ফিরে আসব এবং কুরবানী করব। কাজেই যে ব্যক্তি তা করল, সে আমাদের নিয়ম পালন করল। যে ব্যক্তি সালাতের আগে কুরবানী করল, তা শুধু গোশত বলেই গন্য হবে, যা সে পরিবারবর্গের জন্য আগেই করে ফেলেছে। এতে কুরবানীর কিছুই নেই। তখন আবু বুরদা ইবনে নিয়ার রা. নামক এক আনসারী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তো (আগেই) যবেহ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি মেষ শাবক আছে যা এক বছর বয়সের মেষের চাইতে উৎকৃষ্ট। তিনি বললেন, সেটির স্থলে এটাকে যবেহ করে ফেল । তবে তোমার পর অন্য কারো জন্য তা যথেষ্ট হবে না।
হাদীস নং ৯১৫
যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া আবু সুকাইন রহ………..সাঈদ ইবনে জুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর রা.-এর সঙ্গে ছিলাম যখন বর্শার অগ্রভাগ তাঁর পায়ের তলদেশে বিদ্ধ হয়েছিল। ফলে তাঁর পা রেকাবের সাথে আটকে গিয়েছিল। আমি তখন নেমে সেটি টেনে বের করে ফেললাম। এ ঘটে ছিল মিনায়। এ সংবাদ হাজ্জাজের নিকট পৌঁছলে তিনি তাকে দেখতে আসেন। হাজ্জাজ বলল, যদি আমি জানতে পারতাম কে আপনাকে আঘাত করেছে, (তাকে আমি শাস্তি দিতাম)। তখন ইবনে উমর রা. বললেন, তুমিই আমাকে আঘাত করেছ। সে বলল, তা কিভাবে ? ইবনে উমর রা. বললেন, তুমিই সেদিন (ঈদের দিন) অস্ত্র ধারণ করেছ, যে দিন অস্ত্র ধারণ করা হত না। তুমিই অস্ত্রকে হারাম শরীফে প্রবেশ করিয়েছ, অথচ হারাম শরীফে কখনো অস্ত্র প্রবেশ করা হয় না।