হাদিস ৩৬৪
ইয়া’কূব ইবন ইবরাহীম (র)……আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সঃ) খায়রব যুদ্ধে বের হয়েছিলেন। সেখানে আমরা ফজরের সালাত খুব ভরে আদায় করলাম। তারপর নবী (সঃ) সওয়ার হলেন। আবূ তালহা (রা)-ও সওয়ার হলেন, আর আমি আবূ তালহার পেছনে বসা ছিলাম। নবী (সঃ) তাঁর সওয়ারীকে খায়বরের পথে চালিত করলেন। আমার হাঁটু নবী (সঃ) এর ঊরুতে লাগছিল। এরপর নবী (সঃ) –এর ঊরু থেকে ইযার সরে গেল। এমনকি নবী (সঃ) –এর ঊরু উজ্জলতা এখনও আমি দেখছি। তিনি যখন নগরে প্রবেশ করলেন তখন বললেনঃ আল্লাহ আকবার। খায়বর ধ্বংস হউক। আমরা যখন কোন কওমের প্রাঙ্গনে অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের ভোর হবে কতই না মন্দ! এ কথা তিনি তিনবার উচ্চারন করলেন। আনাস (রা) বলেনঃ খায়বরের অধিবাসীরা নিজেদের কাজে বেরিয়েছিল। তারা বলে উঠলঃ মুহাম্মদ! ‘আবদুল ‘আযীয (র) বলেনঃ আমাদের কোন কোন সাথী “পূর্ণ বাহিনীসহ” (ওয়াল খামীস) শব্দও যোগ করেছেন। পরে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা খায়বর জয় করলাম। তখন যুদ্ধবন্দীদের সমবেত করা হল। দিহরা (রা) এসে বললেনঃ হে আল্লাহর নবী (সঃ)! বন্দীদের থেকে আমাকে একটি দাসী দিন। তিনি বললেনঃ যাও তুমি একটি দাসী নিয়ে যাও। তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াই (রা)-কে নিলেন। তখন এক ব্যক্তি নবী (সঃ) এর কাছে এসে বললঃ ইয়া নবী (সঃ)য়াল্লাহ! বনূ কুরাইযা ও বনূ নাযীরের অন্যতম নেত্রী সাফিয়্যা বিনত হুয়াইকে আপনি দিহয়াকে দিচ্ছেন? তিনি তো একমাত্র আপনার এ যোগ্য। তিনি বললেনঃ দিহয়াকে সাফিয়্যাসহ ডেকে আন। তিনি সাফিয়্যাসহ উপস্থিত হলেন। যখন নবী (সঃ) সাফিয়্যা (রা)-কে দেখলেন তখন (দিহয়াকে) বললেনঃ তুমি বন্দীদের থেকে অন্য একটি দাসী দেখে নাও। রাবী বলেনঃ নবী (সঃ) সাফিয়্যা (রা)-কে আযাদ করে দিলেন এবং তাঁকে বিয়ে করলেন। রাবী সাবিত (র) আবূ হামযা (আনাস) (রা)-কে জিজ্ঞেসা করলেনঃ নবী (সঃ) তাঁকে কি মাহর দিলেন? আনাস (রা) জওয়াব দিলেন তাঁকে আযাদ করায় তাঁর মাহর। এর বিনিময়ে তিনি তাঁকে বিয়ে করেছেন। এরপর পথে উম্মে সুলায়ম (রা) সাফিয়্যা (রা)-কে সাজিয়ে রাতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) –এর খিদমতে পেশ করলেন। নবী (সঃ) বাসর রাত যাপন করে ভোরে উঠলেন। তিনি ঘোষণা দিলেনঃ যার কাছে খানার কিছু আছে সে যেন তা নিয়ে আসে। এ বলে তিনি একটা চামড়ার দস্তরখান বিছালেন। কেউ খেজুর নিয়ে আসলো, কেউ ঘি আনলো। ‘আবদুল ‘আযীয (র) বলেনঃ আমার মনে হয় আনাস (রা) ছাতুর কথাও উল্লেখ করেছেন। তারপর তাঁরা এসব মিশিয়ে খাবার তৈরি করলেন। এ-ই ছিল রাসূল (স) এর ওয়ালীমা।
হাদিস ৩৬৫
আবুল ইয়ামান (র)……’আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী (সঃ) ফযরের সালাত আদায় করতেন আর তাঁর সঙ্গে অনেক মু’মিন মহিলা চাদর দিয়ে গা ঢেকে শরীক হতো। তারপর তাঁরা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতো। আর তাঁদের কেউ চিনতে পারত না।
হাদিস ৩৬৬
আহমদ ইবন ইউনুস (র)……’আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা একটি কারুকার্য খচিত চাদর গায়ে দিয়ে সালাত আদায় করলেন। আর সালাতে সে চাদরের কারুকার্যের প্রতি তাঁর দৃষ্টি পড়ল। সালাত শেষে তিনি বললেনঃ এ চাদরখানা আবু জাহমের কাছে নিয়ে যাও, আর তাঁর কাছ থেকে আম্বিজানিয়্যা (কারুকার্য ছাড়া মোটা চাদর) নিয়ে আস। এটা ত আমাকে সালাত থেকে অমনোযোগী করে দিচ্ছিল। হিশাম ইবন ‘উরওয়া (র) তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি ’আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ আমি সালাত আদায়ের সময় এর কারুকার্যের প্রতি আমার দৃষ্টি পরে। তখন আমি আশংকা করছিলাম যে, এটা আমাকে ফিতনায় ফেলে দিতে পারে।
হাদিস ৩৬৭
আবূ মা’মার ‘আবদুল্লাহ ইবন আমর (র)……আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, ‘আয়িশা (রা)-এর কাছে একটা বিচিত্র রঙের পাতলা পর্দার একটা কাপড় ছিল। তিনি তা ঘরের একদিকে পর্দা হিসাবে ব্যাবহার করছিলেন। নবী (সঃ) বললেনঃ আমার সম্মুখ থেকে এই পর্দা সরিয়ে নাও। কারণ সালাত আদায় করার সময় এর ছবিগুল আমার সামনে ভেসে ওঠে।
হাদিস ৩৬৮
‘আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র)……’উকবা ইবন ‘আমির (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী (সঃ) –কে একটা রেশমি জুব্বা হাদিয়া হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা পরিধান করে সালাত আদায় করলেন। কিন্তু সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত তা খুলে ফেললেন, যেন তিনি তা পরা অপছন্দ করছিলেন। তারপর তিনি বললেনঃ মুত্তাকীদের জন্য এই পোশাক সমীচীন নয়।
হাদিস ৩৬৯
মুহাম্মদ ইবন ‘আর’আর (র)……আবূ জুহায়ফা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) –কে চামড়ার একটা লাল তাঁবুতে দেখলাম এবং তাঁর জন্য উযূর পানি নিয়ে বিলাল (রা ) –কে উপস্থিত দেখলাম। আর লোকেরা তাঁর উযূর পানির জন্য প্রতিযোগিতা করছে। কেউ সামান্য পানি পাওয়া মাত্র তা দিয়ে শরীর মুছে নিচ্ছে। আর যে পায়নি সে তাঁর সাথীর ভেজা হাত থেকে নিয়ে নিচ্ছে। তারপর বিলাল (রা) রাসূলুল্লাহ (সঃ) –এর একটি লৌহফলকযুক্ত ছড়ি নিয়ে এসে তা মাটিতে পুতে দিলেন। নবী (সঃ) একটা লাল ডোরাযুক্ত পোশাক পরে বের হলেন, তাঁর হতবন্দ কিঞ্চিত উঁচু করে পরা ছিল। সে চরিটি সামনে রেখে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। আর মানুষ ও জন্তু-জানোয়ার ঐ ছড়িটির বাইরে চলাফেরা করছিল।