হ্যারল্ড কথা বলতে চাইল। কিন্তু বলতে পারল না। ঘাস কাটার যন্ত্রটা আবার চালু হয়েছে। শব্দ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, যেন গর্জন করে ফাটিয়ে ফেলবে দুনিয়া।
আপনি কী বলছেন কিছুই শুনতে পাচ্ছি না, বলল সার্জেন্ট। আপনার ফোনের লাইনের বোধহয় কোনো সমস্যা হয়েছে–
দড়াম শব্দে খুলে গেল সামনের দরজা।
চরকির মতো ঘুরল হারল্ড। লনমোয়ার ম্যানের ঘাস কাটার প্রকাণ্ড যন্ত্র দরজা দিয়ে ঢুকছে ভেতরে। পিছনে লনমোয়ার ম্যান। এখনও নগ্ন। ভয়ঙ্কর লাগছে দেখতে। মাথার বেসবল ক্যাপটা একটা আঙুলের ডগায় রেখে বনবন করে ঘোরাচ্ছে লোকটা।
কাজটা ঠিক করলেন না, ভায়া, বলল সে ভসনার ভঙ্গিতে।
হ্যালো, হ্যালো, মি. পারকিট–
ঘাস কাটার যন্ত্রটাকে সামনে বাড়তে দেখে আতঙ্কিত হারল্ডের অবশ হাত থেকে খসে পড়ল টেলিফোন। কার্লার নতুন মোহাক কার্পেট কাটতে কাটতে এগিয়ে আসছে ওটা।
সাপ যেন সম্মোহন করেছে ব্যাঙকে, সেই দৃষ্টিতে হারল্ড তাকিয়ে আছে। যন্ত্রটার দিকে। ওটা কফি টেবিলটাকে নিখুঁতভাবে টুকরো করে ফেলল। চেয়ারের উপর দিয়ে লাফিয়ে পিছন দিকে চলে এল হারল্ড, চেয়ারটাকে শরীরের সামনে ঢালের মতো ধরে পিছু হটতে লাগল রান্নাঘরের দিকে।
এতে কোনো লাভ হবে না, ভায়া, উদাস গলায় বলল লনমোয়ার ম্যান। খামোকা জিনিসপত্র আরও নষ্ট হবে। আপনি যদি শুধু একটু দেখিয়ে দিতেন আপনার সবচেয়ে ধারাল ছুরিখানা কোথায় রাখেন। আপনার এই স্যাক্রিফাইসটা তা হলে যন্ত্রণাহীন হতে পারত…।
হ্যারল্ড লোকটার গায়ে ছুঁড়ে মারল চেয়ার। সে তখন দরজায় ছিটকিনি লাগাচ্ছে। ঠাস করে লোকটার গায়ে বাড়ি খেল চেয়ার। ক্রুদ্ধ গর্জন ছাড়ল লনমোয়ার ম্যান। হারল্ড বারান্দায় স্ক্রিন ডোর দিয়ে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে এল, নামতে লাগল সিঁড়ি বেয়ে। শুনল পিছনে হুংকার ছাড়ছে হিংস্র লোকটা। ছুটে আসছে। লনের উপর দিয়ে তীর বেগে ছুটল হারল্ড। পিছনে ধাওয়া করল লনমোয়ার ম্যান। লোকটা কতটুকু পিছনে আছে দেখার জন্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল হারল্ড এবং নিজেই নিজের পায়ে বেঁধে পড়ে গেল ধপাশ করে।
শেষমুহূর্তে হারল্ড দেখল ঘাস কাটার যন্ত্রটা ওর দিকে এগিয়ে আসছে, ধারাল ব্লেডগুলো যেন লোকটার শ্বদন্ত, হিংস্র ভঙ্গিতে হাসছে। যন্ত্রের পিছনে লনমোয়ার ম্যান। হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ছে।
.
পুরো নরক একটা, শেষ ছবিটি ভোলা হলে মন্তব্য করল লেফটেন্যান্ট গুডউইন। সাদা পোশাক পরা দুই লোকের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকাল সে। তারা হাতের ঝুড়ি নিয়ে লন ধরে হাঁটা দিল।
ঘণ্টা দুই আগে লোকটা বলেছিল তার লনে কে এক নগ্ন লোক এসে হামলা করেছে।
তাই নাকি? জিজ্ঞেস করল পেট্রলম্যান কুলি।
হ্যাঁ। ক্যাস্টনমেয়ার নামে এক লোকের ধারণা ওই লোকটা আর কেউ নয়, হারল্ড পারকিট নিজে। হতে পারে, কুলি। এটা ঘটাও বিচিত্র নয়।
স্যার?
প্রচণ্ড গরমে হয়তো লোকটার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, মাথার তালুতে টোকা দিল লেফটেন্যান্ট গুডউইন। সিজোফ্রেনিয়া।
জি, স্যার। বলল কুলি।
লোকটার শরীরের বাকি অংশ কোথায়? জানতে চাইল এক সাদা কোট।
বার্ডবাথে। বলল গুডউইন।
বার্ডবাথ! বিস্ময় সাদা কোটের কণ্ঠে।
হুঁ। বলল গুডউইন। ট্রেলম্যান বার্ডবাথের দিকে তাকাল। সাথে সাথে ফ্যাকাসে হয়ে গেল চেহারা।
সেক্স ম্যানিয়াক, বলল লেফটেন্যান্ট গুডউইন। কোনো সন্দেহ নেই।
প্রিন্ট? গম্ভীর গলায় জানতে চাইল কুলি।
ফুলপ্রিন্টের কথা জানতে চাইছ নিশ্চয়। নতুন কাটা ঘাসের দিকে তাকাল গুডউইন।
গলা দিয়ে ভোঁতা একটা আওয়াজ বেরিয়ে এল কুলির।
লেফটেন্যান্ট গুডউইন পকেটে হাত ঢোকাল, পায়ের গোড়ালির উপর ভর দিয়ে ঘুরল। পৃথিবী মাথা পাগলা, উন্মাদ লোকে ভর্তি। এ কথা ভুলে না, কুলি। প্রচুর সিজোফ্রেনিক আছে। ল্যাবের ছেলেটা বলল কেউ পারকিটকে তার লিভিংরুমে তাড়া করে নিয়ে গিয়েছিল ঘাস কাটার যন্ত্র হাতে। ভাবতে পারো?
না, স্যার। বলল পেট্রলম্যান কুলি।
গুডউইন হারল্ড পারকিটের তকতকে লনের দিকে তাকাল। তারপর বাড়িটি একপাক ঘুরে দেখার জন্য পা বাড়াল। তাকে অনুসরণ করল কুলি। তাদের পিছনে, বাতাসে ভেসে রইল নতুন কাটা ঘাসের মিষ্টি একটা গন্ধ।
–স্টিফেন কিং
সেই মেয়েটি
বাড়িটাকে কোনোদিনই পছন্দ হয়নি আমার। আজ যখন বাড়িটার কথা ভাবছি তখনও মনে হচ্ছে না অ্যান কোনোদিন বাড়িটাকে পছন্দ করতে পেরেছে। তবে বাড়িটা মোটামুটি ভালোই, যদিও প্রথম দিনেই আমরা দুজনই সেখানে কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করেছি।
সেটা ছিল আগস্ট মাসের উজ্জ্বল একটি দিন। আগের সপ্তাহে আমরা অন্তত কুড়িটা বাড়ি দেখেছি। তখন আমরা সুসজ্জিত একটি ফ্ল্যাটে থাকতাম; আর নিজস্ব একটি আলাদা বাড়ির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরেছিলাম। খুব বেশি টাকা খরচ করার সামর্থ্য আমাদের ছিল না। বাড়িটা দেখেই মনে হলো, এজেন্ট ভদ্রলোক বাড়িটার দাম বলতে গিয়ে নিশ্চয় ভুল করেছে। অন্তত বাইরেটা দেখলে মনে হয় বাড়ির দাম যা চাওয়া হয়েছে তার চেয়ে। বেশি হওয়াই উচিত।
বললাম, বাড়িটা বেশ ভালই, তবে ছাদটা যেন কেমন দেখতে।
অ্যান সন্দিগ্ধ গলায় বলল, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। দেখতে তো ভালই লাগছে। যদিও বাড়িটা এমন সাধারণ না হলেই ভাল হত।