- বইয়ের নামঃ পৃথিবীর সেরা ভৌতিক গল্প
- লেখকের নামঃ অনীশ দাস অপু
- বিভাগসমূহঃ ভূতের গল্প
পৃথিবীর সেরা ভৌতিক গল্প
অনুসরণ
আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু পাগল হয়ে যাচ্ছে এমন ভাবনায়ই কেমন গা ছমছমে। আমার প্রিয় বান্ধবী লারার অবস্থা দেখে তেমনটিই মনে হলো। ও আমার কাছে ওর সমস্ত গোপন কথা শেয়ার করে। যেসব কথা অন্য কেউ জানে না। এমন গোপন কথা যা বুকের রক্ত হিম করে দেয়! তারপর আমি জানতে পারলাম কণ্ঠগুলোর কথা। এখন আমার সত্যি দুশ্চিন্তা হচ্ছে….
লারা দীর্ঘদিন কথাটি আমার কাছে গোপন রেখেছিল। তবে আমি বুঝতে পারছিলাম ওর কিছু একটা হয়েছে। অনেক দিন ধরেই দেখছি সব সময়। অন্ধকার করে রাখে মুখ। চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ পরিষ্কার। প্রশ্ন করলে কিছু হয়নি বলে এড়িয়ে যায়। কিন্তু ও যে বড় ধরনের কোনো সমস্যায় পড়েছে। তা আচার-আচরণ দেখে বোঝা যায়। লারাকে শেষ কবে হাসতে দেখেছি মনে পড়ে না আমার। সেদিন ইংরেজির ক্লাসে ওকে চেহারা আরও ম্লান করে ঢুকতে দেখলাম। আমার পাশের ডেস্কে বসল। তারপর ভীষণ করুণ মুখ করে জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইল বাইরে। আমাকে গ্রাহ্যই করল না।
খুব রাগ হলো আমার। নোট খাতা থেকে এক টুকরো কাগজ ছিঁড়ে লিখলাম, কী রে চেহারাটা অমন করে রেখেছিস কেন? মনে হচ্ছে তোর কেউ মরেছে।
কাগজটা লারার ডেস্কে রেখে কনুই দিয়ে মৃদু পুঁতো দিলাম। লাফিয়ে উঠল। ইঙ্গিতে কাগজের টুকরোটা দেখালাম। লেখাটা পড়ল ও। বুকটা ধক করে উঠল আমার।
ঠিক ওই সময় আমাদের ইংরেজির টিচার মি. ডাডলি ডাক দিলেন আমাকে। এডগার অ্যালান পোর দ্য র্যাভেন আবৃত্তি করে শোনাতে বলছেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম। শুরু করলাম আবৃত্তি। পোর এই কবিতাটি বেশ প্রিয় আমার। কিন্তু আজ কেন জানি গাটা শিউরে উঠল কবিতা পড়ার সময়।
প্রথম স্তবক পড়ার পর স্যার আরেকজনকে দ্বিতীয় স্তবক পড়তে বললেন। আমি বসে পড়লাম ডেস্কে। তাকালাম লারার দিকে। আমাকে একটা কাগজ এগিয়ে দিল ও স্যারের চোখ বাঁচিয়ে।
ভাঁজ খুলে মেলে ধরলাম কাগজটি। একটি মাত্র বাক্য লেখা : ভয়ানক একটি দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছে।
সরাসরি চাইলাম লারার দিকে। ওর মায়াবী চোখে ফুটে আছে ভয়। আবার চিরকুটের দিকে নজর ফেরালাম। আবার লেখাটা পড়লাম। কোনো প্রশ্ন বা অনুমান নয়, লারা পরিষ্কার বলে দিচ্ছে একটি ঘটনা ঘটতে চলেছে। বুঝতে পারলাম না এ লেখার মানে কী।
আরেকটা কাগজ ছিঁড়ে লিখলাম, তোমার মাথা ঠিক আছে তো? কাগজটা মুড়ে চালান করে দিলাম লারার ডেস্কে।
লেখাটা পড়ে ঠোঁট কামড়াল লারা। সাথে সাথে আরেকটা কাগজে দ্রুত কী যেন লিখে ফেলল। তারপর ওটা ঠেলে দিল আমার ডেস্কে। আমার দিকে তাকাল না পর্যন্ত।
কাঁপা হাতে কাগজটা খুললাম আমি। দেখতেই পাবে লেখা চিরকুটে।
সেদিন লারার সাথে স্কুলে আর কথা হলো না। ওকে খুঁজে পেলাম না কোথাও। আরেক বন্ধুর সাথে ফিরে এলাম বাড়ি। রাতে একবার ভাবলাম ফোন করি লারাকে। কিন্তু ও আমাকে বারবার এড়িয়ে চলছে মনে পড়তেই রাগ হলো। চলে গেল ফোন করার ইচ্ছে।
পরদিন সকালে দেখা হয়ে গেল লারার সাথে ইংরেজি ক্লাসে ঢোকার সময়। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েছিল। শূন্য দৃষ্টি চোখে। একটু পরে ইংরেজির টিচার এলেন। তবে ডাডলি স্যার নন, অন্য আরেকজন।
আমার পেছনে বসেছে লারা। আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল, ডাডলি স্যার আর তার স্ত্রী কাল রাতে কার অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। দুজনেই মারাত্মক আহত। শুনেছি স্যার অনেক দিন ক্লাস নিতে পারবেন না।
ডাডলি স্যারের জন্য খুব কষ্ট হলো আমার। মাত্র গত বছর বিয়ে করেছেন ভদ্রলোক। হঠাৎ একটা কথা মনে পড়তে হিম একটা স্রোত বয়ে গেল শিরদাঁড়া বেয়ে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম লারার দিকে। ওর চোখ ঝকঝক করে জ্বলছে দামি পাথরের মতো। বাঁকা হাসি ঠোঁটে। দেখলে তো আমি মিথ্যা বলিনি, ফিসফিস করল লারা।
ওর ঝকঝকে চোখের চাউনি সহ্য হলো না আমার, নামিয়ে নিলাম চোখ । ভাবতে কষ্ট হলো এই আমার বাল্যবন্ধু লারা। যার সাথে কেজি থেকে পড়ছি স্কুলে। স্যারের জন্য ওর একটুও কষ্ট হচ্ছে না? সেই কথাটা মনে পড়ে গেল আবার। কাল রাতেই না লারা চিরকুটে অ্যাক্সিডেন্টের কথা লিখেছিল? হঠাৎ অসুস্থ বোধ করতে লাগলাম আমি।
সারাটা ক্লাসে একবারও লারার দিকে চাইতে পারলাম না চোখ তুলে। ঘণ্টা পড়তেই ওর আগে বেরিয়ে পড়লাম ক্লাস থেকে। আমার মনে তখন। একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে করেই হোক লারা অ্যাক্সিডেন্টের কথা। আগেভাগে জেনে ফেলেছিল। সেদিন আর অন্য ক্লাসও করতে ইচ্ছে করল না। এতটাই অস্বস্তিবোধ করছিলাম আমি। লারাকে এড়িয়ে যেতে চাইলেও পারলাম না। বাসে ওঠার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, দৌড়াতে দৌড়াতে এল ও। ওকে দেখে কেটে পড়ার তাল করছিলাম, হাত তুলে থামিয়ে দিল।
দাঁড়াও, চেঁচাল লারা। কথা আছে তোমার সাথে।
দাঁড়িয়ে থাকলাম। হাঁপাচ্ছে তারা। ঘাম ফুটেছে মুখে। তোমাকে ক্লাসে খুঁজে না পেয়ে ভাবলাম বাস স্টপেজে যাই, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল লারা। বাসায় যাচ্ছ?
হ্যাঁ, ওর দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলাম আমি।
আজ রাতে কোথাও বেরুচ্ছ না তো? জানতে চাইল লারা।
কোথাও বেরুচ্ছি না। কেন?