- বইয়ের নামঃ দুনিয়া কাঁপানো ভূতের গল্প
- লেখকের নামঃ অনীশ দাস অপু
- বিভাগসমূহঃ ভূতের গল্প
দুনিয়া কাঁপানো ভূতের গল্প
ভূমিকা
বইয়ের নাম দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে এতে কি ধরনের গল্প আছে। এ বইয়ে যাদের গল্প রয়েছে তারা প্রায় সকলেই বিশ্বখ্যাত হরর রাইটার। প্রচুর ভালো ভালো ভূতের গল্প লিখেছেন তাঁরা। সেসব গল্প থেকে সেরা গল্পটি বাছাই করা খুবই দুঃসাধ্য কাজ। তবু আমি চেষ্টা করেছি এ সংকলনে এ লেখকদের খুব ভালো গল্প দিতে।
এডগার অ্যালান পোর যে দুটি গল্প এখানে দেওয়া হয়েছে তা তাঁর সেরা ভৌতিক গল্পগুলোর মধ্যে সেরা। গাই প্রেস্টনের গা ছমছমে সরাইখানার ভূত-এর বিষয়েও আমার একই ধারণা! রোজমেরি টিম্পারলির ক্রিসমাস মিটিং তাঁর সবচেয়ে সাড়া জাগানো ভূতের গল্প। রাসকিন বন্ড প্রচুর ভূতের গল্প লিখেছেন। বানরের প্রতিশোধ তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি। গি দ্য মোপাসাঁর লাশ এর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। লাফসাডিও হিয়ার্ন জগদবিখ্যাত হয়ে আছেন চাইনিজ এবং জাপানি ভূতের গল্প লিখে। তাঁর দারুণ একটি জাপানি ভৌতিক গল্প এ বইতে সন্নিবেশিত হলো। আলজারনন ব্ল্যাকউডের সেরা একটি ভূতের গল্প এ সংকলনে দেওয়া হলো। আশা করি সবকটা গল্পই কিশোর পাঠকদের মুগ্ধ ও চমকিত করবে!
অনীশ দাস অপু
এক ভয়ংকর রাত – লাফসাডিও হিয়ার্ন
অনেক অনেক দিন আগে জাপানের ছোট একটি গায়ে বাস করত এক গরিব চাষা এবং তার বউ। তারা দুজনেই ছিল বেজায় ভালোমানুষ। তাদের অনেকগুলো বাচ্চা। ফলে এতগুলো মানুষের ভরণপোষণ করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যেত চাষার। বড় ছেলেটির বয়স যখন চৌদ্দ, গায়ে-গতরে বেশ বলিষ্ঠ, সে বাপকে কৃষিকাজে সাহায্য করতে নেমে পড়ল। আর ছোট মেয়েগুলো হাঁটতে শেখার পরপরই মাকে ঘরকন্নার কাজে সহযোগিতা করতে লাগল।
তবে চাষি-দম্পতির সবচেয়ে ছোট ছেলেটি কোনো শক্ত কাজ করতে পারত না। তার মাথায় ছিল ক্ষুরধার বুদ্ধি-সে তার সবকটা ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে চালাক ছিল। কিন্তু খুব দুর্বল শরীর এবং দেখতে নিতান্তই ছোটখাটো ছিল বলে লোকে বলত ওকে দিয়ে কোনো কাজ হবে না। কোনো কাজেই লাগবে না সে। বাবা-মা ভাবল কৃষিকাজের মতো কাজ করা যেহেতু ছোট ছেলের পক্ষে সম্ভব নয় কাজেই ওকে পুরোহিতের কাজে লাগিয়ে দেওয়া যাক। বাবা-মা একদিন ছোট ছেলেকে নিয়ে গায়ের মন্দিরে চলে এল। বুড়ো পুরোহিতকে অনুনয় করল, তিনি যেন তাদের ছেলেটিকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ওকে পড়ালেখা শেখান। যাতে বড় হয়ে সে মন্দিরে যজমানি (পুরোহিতগিরি) করতে পারে।
বৃদ্ধ ছোট ছেলেটির সঙ্গে সদয় আচরণ করলেন। তাকে কিছু কঠিন প্রশ্ন করা হলো। ছেলেটি এমন চতুর জবাব দিল যে তাকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে কোনো আপত্তি করলেন না ধর্মগুরু। তিনি ওকে মন্দিরের টোলে ভর্তি করে দিলেন। ওখানে ধর্ম শিক্ষা দেওয়া হতো।
বৃদ্ধ পুরোহিত ছেলেটিকে যা শেখালেন, সবকিছু দ্রুত শিখে নিল সে। সে গুরুর অত্যন্ত বাধ্যগত ছাত্র। তবে তার একটা দোষ ছিল। সে পড়ার সময় ছবি আঁকত। এবং তার ছবির বিষয়বস্তু ছিল বেড়াল। ওই সময় মন্দিরে বেড়ালের ছবি আঁকার ব্যাপারে নিষেধ ছিল।
একা যখন থাকত ছেলেটি, তখনই এঁকে ফেলত বেড়ালের ছবি। সে ধর্মগুরুর ধর্মীয় বইয়ের মার্জিনে ছবি আঁকত, মন্দিরের সমস্ত পর্দা, দেয়াল এবং পিলারগুলো ভরে গিয়েছিল বেড়ালের ছবিতে। পুরোহিত বহুবার তাকে এসব ছবি আঁকতে মানা। করেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ছেলেটি ছবি আঁকত কারণ না এঁকে পারত না। ছবি না আঁকলে কেমন অস্থির লাগত তার। সে ছিল অত্যন্ত প্রতিভাবান একজন। চিত্রকর। ছবি এঁকেই একদিন নাম কামানোর স্বপ্ন দেখত ছেলেটি। এ জন্য ধর্মশিক্ষায় মন দিতে পারত না। ভালো ছাত্র হবার খায়েশও তার ছিল না। ভালো। ছাত্র হতে হলে বই পড়তে হয়। কিন্তু পড়ার চেয়ে আঁকাআঁকিই তাকে টানত বেশি।
একদিন এক দেবতার পোশাকে বেড়ালের ছবি আঁকতে গিয়ে ধর্মগুরুর কাছে হাতেনাতে ধরা খেল ছেলেটি। বুড়ো খুবই রেগে গেলেন। বললেন, তুমি এখনই এখান থেকে চলে যাও। তুমি কোনো দিনও পুরোহিত হতে পারবে না। তবে চেষ্টা। করলে একদিন হয়তো বড় মাপের চিত্রকর হতে পারবে। তোমাকে শেষ একটি উপদেশ দিই শোনো। উপদেশটি কখনো ভুলো না। রাতের বেলা বড় জায়গা এড়িয়ে চলবে; ঘুমাবে ছোট জায়গায়!
গুরুর এ কথার মানে কিছুই বুঝতে পারল না ছেলেটি। এ কথার মানে ভাবতে ভাবতে সে তার ছোট বোঁচকা গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল মন্দির থেকে। গুরুকে তাঁর কথার অর্থ জিজ্ঞেস করার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু ধমক খাওয়ার ভয়ে প্রশ্ন করল না। শুধু বিদায় বলতে পারল।
মনে দুঃখ নিয়ে মন্দির ছেড়েছে ছেলেটি। কোথায় যাবে, কী করবে বুঝতে পারছে না। যদি বাড়ি যায়, পুরোহিতের কথা না শোনার অভিযোগে বাপ ওকে বেদম পিটুনি দেবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বাড়ি যাওয়ার চিন্তা নাকচ করে দিল সে। হঠাৎ পাশের বাড়ির গাঁয়ের কথা মনে পড়ল। এখান থেকে চার ক্রোশ দূরে। ওই গাঁয়ে বিশাল একটি মন্দির আছে। মন্দিরে তরুণ-বুড়ো অনেক পুরোহিত আছেন। ছেলেটি শুনেছে ওখানেও একটি টোল আছে। সেখানে ধর্ম শিক্ষা দেওয়া হয়। সে ঠিক করল ওই গাঁয়ে যাবে। মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের হাতে পায়ে ধরে বসবে তাকে টোলে ভর্তি করানোর জন্য। ওর কাতর অনুরোধ নিশ্চয় ফেলতে পারবেন না পুরোহিত।