থামো! চেঁচিয়ে উঠল হারল্ড পারকিট। থামো বলছি!
কিন্তু লোকটা হারল্ডের কথা শুনেছে বলে মনে হলো না। কচমচ করে ঘাস চিবিয়েই চলেছে।
এমন সময় ছুঁচোটাকে দেখতে পেল হারল্ড। ঘাস কাটার যন্ত্রের সামনে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আতঙ্কে বোধহয় লোপ পেয়ে গেছে বুদ্ধি, কোথায় যাবে বুঝে উঠতে পারছে না। থরথর করে কাঁপছে। লোকটাও দেখতে পেল প্রাণীটাকে। বিকট, জান্তব একটা চিৎকার বেরিয়ে এল গলা চিরে। পরমুহূর্তে যন্ত্রটা হামলা চালাল ছুঁচোটার ওপর। ধারাল ফলার আঘাতে শতখণ্ড হয়ে গেল ছুঁচো। লোকটা ওদিকে একবার তাকিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হলো আবার।
লনমোয়ার ম্যান হামাগুড়ি দিয়ে এগোচ্ছে ঘাস খেতে খেতে। আতঙ্কে জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে হারল্ড। দেখছে লোকটার বিরাট ভূঁড়ি বেলুনের মতো ফুলে উঠছে। সে হাত বাড়িয়ে ছিন্নভিন্ন ছুঁচোর লাশ টেনে নিল। ঘাস চিবানোর মতো ছুঁচো চিবাতে লাগল এবার।
আর সহ্য করতে পারল না হারল্ড। হড়হড় করে বমি করে দিল। দুনিয়া হঠাৎ ধূসর হয়ে এল, বুঝতে পারল চেতনা হারাচ্ছে। বারান্দায় দড়াম করে পড়ে গেল সে….
.
কেউ ধরে ঝাঁকাচ্ছে ওকে। কার্লা। হয়তো বাসন মেজে রাখেনি হারল্ড কিংবা ময়লার ঝুড়ি পরিষ্কার করেনি। তাই রেগে গেছে কার্লা। দুঃস্বপ্ন দেখছিল হারল্ড। ঝাঁকির চোটে দুঃস্বপ্নের জগৎ থেকে ফিরে এল সে। চাইল চোখ মেলে। প্রথমেই দেখতে পেল একজোড়া শ্বদন্ত। কিন্তু কার্লার তো শ্বদন্ত নেই। তাছাড়া এই দাঁত দুটিতে লোমও গজিয়েছে-সবুজ লোম। দেখতে অনেকটা ঘাসের মতো।
ওহ, মাই গড! বলল হারল্ড।
আপনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন, ভায়া। কানে ভেসে এল লনমোয়ার ম্যানের গলা। ঝুঁকে আছে সে হারন্ডের উপর, লোমঅলা দাঁত বের করে হাসছে। ওর ঠোঁট এবং থুতনিতেও লোম ঝুলছে। সারা মুখেই লোম। চারদিক পুরো নিস্তব্ধ। ঘাস কাটার যন্ত্রের শব্দ শোনা যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো উঠে বসল হারল্ড। তাকাল নিশ্চল যন্ত্রের দিকে। লনের সমস্ত ঘাস চমৎকারভাবে হেঁটে ফেলা হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখার আর দরকার নেই। লনমোয়ার ম্যানের দিকে ফিরল হারল্ড। লোকটা এখনও নগ্ন, ঠোঁটের কোনা দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ছে সবুজ রস।
এসব কী? কাতর গলায় জানতে চাইল হারল্ড।
লনের দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দেখাল লোকটা। এটা? বেশ, এটা নতুন একটা জিনিস যা করার জন্য বস চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমরা এক ঢিলে দুই পাখি মারছি, ভায়া। আমাদের কাজের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছি, আমাদের অন্যান্য কাজগুলো করার জন্য টাকার জোগাড়ও চলছে। মাঝে মাঝে আপনার মতো দুএকজন বোকাসোকা খদ্দের পেয়ে যাই। বস সবসময়ই স্যাক্রিফাইস করতে রাজি।
হ্যারল্ড কিছু বলল না। মাথায় একটা শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছে– স্যাক্রিফাইস। মনশ্চক্ষে দেখতে পেল বিবর্ণ লাল ঘাস কাটার যন্ত্রটি থেকে ছিটকে বেরুচ্ছে ছুঁচোর খণ্ডিত দেহ।
ধীরে ধীরে সিধে হলো সে, পক্ষাঘাতগ্রস্ত বুড়োদের মতো। মনে পড়ল এলিসিয়ার ছড়ার একটা লাইন। অস্ফুটে বলল, ঈশ্বর ঘাসের মঙ্গল করুন।
লনমোয়ার ম্যান তার আপেল রঙা উরুতে চাপড় বসাল। ঠিক বলেছেন, ভায়া। আপনার কথাটা আমি লিখে রাখব অফিস ফাইলে, অফিসে গিয়েই।
আচ্ছা, খিড়কির দুয়ারে পা বাড়াল হারল্ড, মুখে চেষ্টাকৃত হাসি ফোঁটাল। আপনি বরং অফিসে চলে যান। আমি একটু ঘুমাব–
শিওর, বাডি, বলল লনমোয়ার ম্যান, ভারী শরীর নিয়ে সিধে হলো। হারল্ড লক্ষ করল লোকটার পায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় আঙুলের মাঝখানে অনেকটা চেরা, দেখাচ্ছে পশুর খুড়ের মতো।
প্রথম প্রথম ব্যাপারটা দেখে চমকে যায় সকলেই, বলল লোকটা।
আপনি এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন, ধূর্ত চোখে পরখ করল সে হারল্ডকে। বস নতুন প্রতিভার অন্বেষণ করছেন সবসময়ই।
বস? অস্পষ্ট গলায় শব্দটি পুনরাবৃত্তি করল হারল্ড।
প্যান। প্যান হলেন বস। বলে হেসে উঠল লনমোয়ার ম্যান, তারপর এক লাফে নেমে পড়ল লনে। বিকট গলায় চেঁচাতে চেঁচাতে বাড়ির চারপাশে গড়িয়ে যেতে লাগল।
প্রতিবেশীরা-– হারল্ড বলতে গেল, ওকে হাত তুলে বাধা দিল লনমোয়ার ম্যান, তারপর অদৃশ্য হয়ে গেল ঘরের কোণে।
বাড়ির সামনে এসে নেকড়ের মতো গর্জন ছাড়ল লনমোয়ার ম্যান।
ওদিকে তাকাল না হারল্ড, ঘরে ঢুকল সে। এগিয়ে গেল টেলিফোনের দিকে, থাবা মেরে তুলল রিসিভার। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে ডায়াল করল ।
সার্জেন্ট হল, বলল ওপাশের কণ্ঠ।
মুক্ত কানে একটা আঙুল ঢুকিয়ে হারল্ড বলল, আমার নাম হারল্ড পারকিট। আমার ঠিকানা ১৪২১ ইস্ট এন্ডিকট স্ট্রিট। আমি ফোন করেছি… কী বলবে হারল্ড? বলবে প্যান নামে এক লোকের অধীনে কাজ করতে এসেছে জানোয়ারের খুড়অলা পায়ের একটা লোক, সে হারল্ডের লনের দফারফা করছে?
বলুন, মি. পারকিট?
আমি অশস্নীল শরীর প্রদর্শনের অভিযোগ করতে চাই।
অশস্নীল শরীর প্রদর্শনের অভিযোগ? পুনরাবৃত্তি করল সার্জেন্ট হল।
হ্যাঁ। এক লোক এসেছে আমার লন পরিষ্কার করতে। সে পুরো ন্যাংটো। আপনি দয়া করে এখানে কাউকে পাঠাবেন?
ঠিকানা কী বললেন? ১৪২১ ওয়েস্ট এন্ডিকট? জিজ্ঞেস করল সার্জেন্ট হল।
ইস্ট! চেঁচিয়ে উঠল হারল্ড। ফর গডস শেক–
আপনি বলছেন সে পুরো নগ্ন? তার পুরুষাঙ্গও দেখতে পাচ্ছেন?