–লর্ড হ্যালিফ্যাক্স
সেই ভয়ঙ্কর লোকটা
হ্যারল্ড পারকিটের নিজের লন বা বাগান নিয়ে গর্বের অন্ত ছিল না। লনের ঘাস কাটার জন্য পাঁচ ডলার দিয়ে সে একটি ছেলে রেখেছিল। লনমোয়ার বা ঘাস কাটার যন্ত্র দিয়ে ছেলেটি চমৎকার ঘাস কাটত। কিন্তু গত বছরে, অক্টোবরের মাঝামাঝিতে ঘটে গেল মারাত্মক এক দুর্ঘটনা। লনের ঘাস কাটার সেটা ছিল শেষ ঋতু। ঘাস কাটার যন্ত্র দিয়ে ঘাস কাটা হচ্ছে, এমন সময় কোত্থেকে প্রতিবেশী কাস্টনমেয়ারদের কুকুরটা ধাওয়া করে নিয়ে এল স্মিথদের বেড়ালটাকে। দিশেহারা বেড়াল তাল সামলাতে না পেরে, ছুটতে গিয়ে ঢুকে পড়ল ঘাস কাটা যন্ত্রের নিচে। মুহূর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল জানোয়ারটার শরীর।
ভয়াবহ এ দৃশ্য দেখে হারল্ডের মেয়ে এলিসিয়া এমন জোরে লাফিয়ে উঠল, হাতের আইসক্রিম ছিটকে পড়ে নষ্ট হয়ে গেল নতুন জাম্পারটা। তবে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হলো হারল্ডের বউ কার্লার। রক্ত সে এমনিতেই সইতে পারে না, চোখের সামনে জলজ্যান্ত একটা প্রাণীকে যন্ত্রের নিচে পড়ে কচুকাটা হতে দেখে দাঁত কপাটি লেগে গেল তার। অজ্ঞান হয়ে পড়ল কার্লা।
লনের ঘাস কাটা মাথায় উঠল হারল্ডের। বউকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। ওই বছর আর ঘাস কাটা হলো না। পরের বছর, জুলাইর মাঝামাঝিতে লনের ঘাস এমন বড় হয়ে উঠল যেন একটা জঙ্গল। ওই জঙ্গলে সুযোগ পেলেই লুকিয়ে পড়ল ডন স্মিথের চার বছরের মেয়ে জেনি, যখনই তাকে সকালের নাস্তায় দুধ কিংবা দুপুরে স্পিনাচ খাওয়ার জন্য জোরাজুরি করা হলো।
জুলাইর শেষের দিকে একদিন, বারান্দায় বসে খবরের কাগজের পাতায় চোখ বুলাচ্ছে হারল্ড, নজর আটকে গেল পাস্ট টাইম কলামে। ওখানে লেখা : বাগানের ঘাস কাটা হয়। ন্যায়সঙ্গত দামে। ৭৭৬-২৩৯০।
হ্যারল্ড ফোন করল এ নাম্বারে। ভেবেছিল আবেগশূন্য গলার কোনো মহিলার গলা শুনবে, চেঁচিয়ে ডাকছে তার ছেলেকে। বদলে ভেসে এল প্রাণবন্ত, পেশাদার একটি কণ্ঠ, প্যাস্টোরাল গ্রিনারি অ্যান্ড আউটডোর সার্ভিসেস… আপনার কোনো সাহায্যে আসতে পারি?
হ্যারল্ড ফোন রেখে দিল। কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। বারান্দায় গিয়ে বসল। রেডিও ছেড়ে তাকিয়ে রইল লনের দিকে। কার্লা মেয়েকে নিয়ে তার মার বাসায় গেছে। বাড়িতে একা হারল্ড। মা-মেয়ে ফিরে আসার আগে প্যাস্টোরাল গ্রিনারির লোকটা এসে লন সাফ করে দিয়ে গেলে বেশ হয়।
বিয়ারের ক্যান খুলল হারল্ড। পান করল। ছুঁড়ে ফেলে দিল ক্যান। লম্বা লম্বা ঘাসের দিকে তাকিয়ে রইল অলস চোখে। ঝিমুনি এসে গেল ওর।
আধঘণ্টা পর ডোর বেলের শব্দে ঘুমের চটকা ভেঙে গেল হারল্ডের। চেয়ার ছেড়ে সিধে হলো। গেল দরজা খুলতে। ঘাসের ছাপঅলা ডেনিস ওভারঅল পরা এক লোক দাঁড়িয়ে আছে সিঁড়িতে। একটা টুথপিক চিবুচ্ছে। লোকটা মোটা। জীর্ণ, নীল ওভারঅল ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে ভুড়ি। হারল্ডের মনে হলো লোকটা পেটের মধ্যে বাস্কেটবল লুকিয়ে রেখেছে।
বলুন? জিজ্ঞেস করল হারল্ড পারকিট, এখনও ঘুম যায়নি চোখ থেকে।
দাঁত বের করে হাসল লোকটা, মুখের এক কোনা থেকে আরেক কোনায় টুথপিকটা ঠেলে নিয়ে গেল জিভ দিয়ে। লোকটার গা থেকে ঘাস, মাটি আর তেলের অদ্ভুত একটা গন্ধ আসছে।
প্যাস্টোরাল পাঠিয়েছে আমাকে, উৎফুল্ল গলা তার, খ্যাচখ্যাচ করে কুঁচকি চুলকাল। আপনিই বোধহয় ফোন করেছিলেন, না? দাঁত বের হয়েই আছে।
অ। লনের ব্যাপারে আপনি এসেছেন? হারল্ড বোকা বোকা চোখে চেয়ে আছে।
জি, আমি। লোকটা খ্যাক খ্যাক করে হাসল। আমি লনমোয়ার ম্যান।
হ্যারল্ড একপাশে সরে দাঁড়াল। লোকটা চট করে ঢুকে পড়ল ঘরে। লিভিংরুম এবং কিচেন পার হয়ে চলে এল পিছনের বারান্দায়।
পিছনের লনের দশা তো একেবারে ছ্যাড়াব্যাড়া, হারল্ড বলল লোকটাকে। অনেকদিন ঘাসটাস কাটা হয়নি কিনা।
ও নিয়ে আপনি কি ভাববেন না, ভায়া, চোখে কৌতুক ফুটিয়ে বলল লোকটা। ঘাস যত লম্বা হবে ততই ভাল। এখানকার মাটি খুবই উর্বর। বলে এক লাফে বাড়ির ভিতরে আবার ঢুকে পড়ল সে। পা বাড়াল সামনের হলঘরে। ভুরু কুঁচকে তাকে দেখল হারল্ড। তারপর বসল একটা চেয়ারে। ঝিমুতে লাগল আবার। হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ছুটে গেল হারল্ডের। লাফ মেরে উঠল। ধাক্কা খেয়ে ছিটকে গেল চেয়ার। এক ছুটে চলে এল সদর দরজায়। তাকাল। বাইরে একটা লঝঝড়ে সবুজ রঙের ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে, গায়ে লেখা প্যাস্টোরাল গ্রিনারি ইনক। বিকট গর্জনের আওয়াজ এবার বাড়ির পেছন দিক থেকে আসছে। ওদিকে ছুটল হারল্ড। পেছনের বারান্দায় এসে জমে গেল মূর্তির মতো।
মোটা লোকটা সঙ্গে যে লাল রঙের ঘাস কাটার যন্ত্রটি নিয়ে এসেছিল ওটা নিজে নিজে চলছে। কেউ ঠেলছে না ওটাকে। যন্ত্রটার পাঁচ হাতের মধ্যে কেউ নেই। হারল্ড পারকিটের পিছনের লনের ঘাস সাফ করে চলেছে ওটা। রীতিমতো চিৎকার ছাড়ছে যন্ত্রটা, নীল তেলতেলে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। বাতাসে কাটা ঘাসের টকটক গন্ধ।
তবে হারল্ডকে আতঙ্কিত করে তুলেছে লনমোয়ার ম্যান।
লোকটা পরনের সমস্ত জামাকাপড় খুলে ফেলেছে। গায়ে সুতোগাছিটিও নেই। পাখির খাবার রাখা হয় যে পাত্রে, লনের মাঝখানে, ওটার ওপর জামাকাপড়গুলো ভাজ করে রাখা। সারা গায়ে ঘাস মাখা, ন্যাংটো লোকটা ঘাস কাটার যন্ত্রের হাত পাঁচেক পিছনে, হামাগুড়ি দিয়ে এগোচ্ছে। কচমচ করে ঘাস চিবুচ্ছে সে। চিবুক বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে সবুজ রস, ফোলানো পেট বেয়ে নামছে। যন্ত্রটা মোড় ঘোরার সময় লোকটা অশ্লীল ভঙ্গিতে লাফিয়ে উঠছে।