মরিস বললেন, এ জিনিস আপনি রেখে দিতে পারেন। তবে তারপর যা ঘটবে সেজন্য আমাকে যেন দোষ দেবেন না। তাই বলি, বুদ্ধিমান লোকের মতো থাবাটিকে ফের আগুনেই ফেলে দিন।
হোয়াইট মাথা নাড়লেন। খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন তার নতুন সম্পত্তিটিকে। তারপর বললেন, আচ্ছা বলুন তো কীভাবে ইচ্ছের কথা বলতে হয়।
থাবাটিকে ডান হাত তুলে ধরে তারপর ইচ্ছের কথা জোরে বলবেন, সার্জেন্ট মেজর বললেন, ফের বলছি এর পরিণাম কিন্তু খারাপ হতে পারে।
আরব্য রজনীর গল্পের মতো শোনাচ্ছে, বললেন মিসেস হোয়াইট। তিনি উঠে পড়লেন। রাতের খাবারের জোগাড় যন্ত্র করতে হবে। একটু হেসে বললেন, তুমি যেন আমার জন্য চার জোড়া হাত চেয়ে বোসো না।
মি. হোয়াইট পকেট থেকে থাবাটি বার করলেন। সার্জেন্ট মেজর তাঁর হাতটি ধরে ফেললেন চট করে। কর্কশ গলায় বলে উঠলেন, যদি কিছু চাইতেই হয়, তাহলে বরং ভালো কিছু চান। তিনি যেন সবাইকে সাবধান করে দিতে চাইছিলেন। তাঁর ভাবভঙ্গি দেখে তিনজনেই হেসে উঠলেন।
মি. হোয়াইট ফের তার পকেটে পুরে ফেললেন থাবাটি। এরপর সবাই বসলেন খাবার টেবিলে। খাওয়া-দাওয়া চলতে লাগল। থাবাটির কথা প্রায় ভুলেই গেলেন সবাই। তিনজন শ্রোতা ভারতে মরিসের সৈনিক জীবনের দুর্ধর্ষ সব ঘটনার কথা মুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগলেন।
খাওয়া শেষে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন মরিস। তাঁকে শেষ ট্রেনটি ধরতে হবে।
হার্বার্ট বলল, উনি যেসব গল্প বলছিলেন তার চেয়ে বোধ হয় এই বানরের থাবার গল্পটা বেশি বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটা দিয়ে তোমার খুব একটা লাভ হবে না বাবা।
মিসেস হোয়াইট বললেন, এই জন্য তুমি কি ওকে কিছু দিয়েছ?
সামান্য কিছু, তিনি একটু বাড়িয়ে বললেন, মরিস নিতে চাননি। আমি জোর করেই দিলাম। উনি আবার আমাকে বলেছেন ওটাকে ফেলে দিতে।
হাবার্ট হালকা গলায় বলল, কেন আমরা তো বড়লোক হয়ে যাব। চারদিকে নাম ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের সুখের শেষ থাকবে না। বাবা, তুমি বরং রাজা হতে চাও। তাহলে দেখবে তোমাকে আর মায়ের কথা মতো ওঠ-বস করতে হবে না।
রাগের ভান করে মিসেস হোয়াইট ঢাকনা হাতে নিয়ে ছেলের দিকে তেড়ে গেলেন। হাবার্টি টেবিলের অন্যদিকে গিয়ে লুকালো।
মি. হোয়াইট তাঁর পকেট থেকে থাবাটি বের করলেন। সন্দেহের চোখে তাকিয়ে রইলেন জিনিসটার দিকে। তারপর আস্তে আস্তে বললেন, এর কাছে যে কী চাইব তাই বুঝতে পারছি না।
হার্বার্ট বলল, বাড়িটার দেনা শোধ হলেই তো তুমি খুশি হও, তাই না? তাহলে এক কাজ করো। দুশো পাউন্ড চাও। ওতেই কাজ মিটে যাবে।
মি. হোয়াইট থাবাটি ডান হাতে নিয়ে উপরে তুলে ধরলেন। হার্বার্টি গম্ভীর মুখ করে পিয়ানোর ধারে বসে পড়ল। বেশ কয়েকটা সুর তুলল। এরই মধ্যে মায়ের দিকে তাকিয়ে সে একবার চোখ টিপল।
মি. হোয়াইট স্পষ্ট গলায় বললেন, আমার দুশো পাউন্ড চাই। তারপর তিনি ভয়ার্ত চিৎকার দিলেন।
মিসেস হোয়াইট আর হাবাটি দৌড়ে গেলেন তাঁর কাছে।
ভীষণ ভয় পাওয়া গলায় হোয়াইট সাহেব বললেন, নড়ে উঠেছিল ওটা। মেঝেয় পড়ে আছে থাবাটি। ওটার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার বললেন, যখন আমি ওই কথাগুলো বললাম তখন থাবাটি আমার হাতের মধ্যে সাপের মতো কিলবিল করে উঠল।
হার্বার্ট থাবাটি তুলে নিয়ে টেবিলে রাখল। তারপর বলল, কই, তোমার টাকা কই? আমি হলফ করে বলতে পারি ওই টাকা আর আসবে না।
মিসেস হোয়াইট উদ্বেগের চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়েছিলেন। তিনি বললেন, থাবা আবার নড়বে কেন? ও তোমার কল্পনা।
মি. হোয়াইট মাথা নাড়লেন। বললেন, যাকগে, বাদ দাও। এতে তো কোনো ক্ষতি হয়নি। আমি কিন্তু চমকে গিয়েছিলাম।
আগুনের ধারে তারা আবার বসলেন। বাবা ও ছেলের মুখে পাইপ। বাইরে জোরে বাতাস বইছিল। ওপরতলার একটা দরজায় জোর শব্দ হচ্ছিল।
মি. হোয়াইটের চোখে ভয় ফুটে উঠল। একটা অস্বাভাবিক নীরবতা এবং অবসাদ যেন সবাইকে গিলে ফেলল। শেষে হোয়াইট দম্পতি উঠে পড়লেন। তাদের শোবার সময় হয়ে গেছে।
হাবার্ট তাদের শুভরাত্রি জানাল। বলল, মনে হচ্ছে তোমাদের বিছানার মাঝখানে একটা বড় থলের মধ্যে তোমরা টাকাটা পাবে। আর বাবা, তুমি যখন ওই টাকাটা পকেটে পুরবে, তখন দেখবে ওয়ার্ডরোবের ওপর থেকে একজোড়া ভয়ঙ্কর চোখ তোমার ওপর নজর রাখছে।
দুই
শীতের সকালের ঝলমলে রোদ টেবিলের ওপর খেলা করছে। ব্রেকফাস্টে বসেছেন ওঁরা তিনজন। হার্বার্ট গতরাত্রের ঘটনা নিয়ে হাসিঠাট্টা করছিল। আলমারির তাকের ওপর অবহেলায় পড়ে আছে নোংরা, কোঁচকানো সেই থাবাটি। যেন নির্দোষ, নিষ্ঠুণ একটা জিনিস।
মিসেস হোয়াইট বললেন, অবসর নেয়া সব সৈনিকই সমান। আর আমরাও বোকার মতো বসে বসে আজগুবি গল্প শুনলাম। আজকের দিনে ইচ্ছা পূরণের ঘটনা ঘটে?
হালকা গলায় হার্বার্ট বলল, হয়তো আকাশ থেকেই বাবার মাথার ওপর টাকাগুলো খসে পড়বে।
মি. হোয়াইট বললেন, মরিস বলেছিলেন ঘটনাগুলো এত স্বাভাবিকভাবে ঘটে যে তোমরা ব্যাপারগুলোকে ইচ্ছে করলে দৈবের মতো কোনো ঘটনা নামনে করতেও পারো।
হার্বার্ট টেবিলে ছেড়ে উঠে পড়ল, আমি ফেরার আগে যেন টাকাটা খরচ করে ফেল না। ভয় হয় টাকাটা পাছে তোমাকে অন্য মানুষ করে। তোলে। তখন কিন্তু তোমাকে আর বাবা বলে ডাকতে পারব না!