ধন্যবাদ, সে ঝাড় ডিঙিয়ে ঝোঁপঝাড়ের জগতে পা বাড়াল। রেডিওর ভলুম কমিয়ে দিল একদম। গোলাঘরের দিকে এগোতে বাচ্চাদের গলার আওয়াজ শুনতে পেল। হো হো হিহি হাসির শব্দ। হঠাৎ কান ফাটানো শব্দে লাকড়ির বড় একটা স্তূপ দুড়ুম করে পড়ল মাটিতে।
এটা দিয়ে দারুণ আগুন জ্বালানো যাবে। আমরা এটাকে…
ওয়ালেস গোলাবাড়ির দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল ভেতরে।
ওরা পাঁচজন। তার দিকে পেছন ফিরে আছে। কারোরই বয়স দশ এগারোর বেশি হবে না। ওদের সমস্ত মনোযোগ ষষ্ঠ ছেলেটির দিকে, সে লাকড়ির একটি স্তূপ বাঁধছে রশি দিয়ে।
হচ্ছেটা কী এখানে? হাউ করে উঠল ওয়ালেস।
চরকির মতো ঘুরল বাচ্চাগুলো এবং উর্দিধারী ওয়ালেসকে দেখে জায়গায় জমে গেল। সব কটার চেহারায় অপরাধীর ছাপ। কাঠ বিছানো মেঝেতে পা ফেলে ওদের দিকে এগিয়ে গেল ওয়ালেস। তাকাল ছাদের দিকে। নিঃসন্দেহে বিপজ্জনক অবস্থা। বড় বড় বিমগুলো ঝুলছে। যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে।
তো? কঠোর গলায় বলল ওয়ালেস। এখানে কী করছ তোমরা?
আমরা কাঠকুটো জোগাড় করছিলাম, মিস্টার, বলল একটা বাচ্চা।
তোমরা অনুপ্রবেশ করেছ, বলল ওয়ালেস। আশা করল অনুপ্রবেশ কথার অর্থ বাচ্চাগুলো বুঝতে পারবে। অবশ্য অনুপ্রবেশ নিয়ে বাচ্চাদের কখনো মাথা ব্যথা থাকে না, গোলাবাড়িটি খুবই বিপজ্জনক দশায় রয়েছে তা বুঝিয়ে বললেও এরা তা গ্রাহ্য করবে কিনা সন্দেহ। সে কটমট করে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল। হয়তো ওর অগ্নিদৃষ্টি দেখে ওরা ভয় পাবে।
হঠাৎ করেই বুদ্ধিটি মাথায় এল ওয়ালেসের। যদিও সন্দেহ জাগল মনে এতে কাজ হবে কিনা ভেবে। তার কথা ওরা বিশ্বাস নাও করতে পারে। কারণ আজকালকার বাচ্চারা কম বয়সেই পেকে যাচ্ছে।
তোমাদের জায়গায় আমি হলে এ বাড়ির ত্রিসীমানাতেও ঘেঁষতাম না, গম্ভীর গলায় বলল সে।
ওরা কথা শুনে আগ্রহের ছাপ পড়ল বাচ্চাগুলোর চোখে মুখে।
কেন ঘেঁষতেন না? একটু আগে যে ছেলেটি কথা বলেছিল সে জিজ্ঞেস করল।
ওই বৃদ্ধা মহিলা, বাড়ির দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে ইঙ্গিত করল ওয়ালেস। উনি কে তোমরা নিশ্চয় জানো, জানো না?
উনি কে? সমস্বরে উচ্চারিত হলো প্রশ্নটি।
উনি একজন ডাইনি, সবার দিকে কটমটিয়ে তাকাল ওয়ালেস দেখতে কারও চেহারায় অবিশ্বাসের ছাপ ফুটে ওঠে কিনা। নাহ, সেরকম কোনো লক্ষণ তো লক্ষ করা যাচ্ছে না। বেশ, বেশ। তিনি পছন্দ করেন না তাঁর বাগানে কেউ আসুক। তাই তোমাদেরকে আমি সাবধান করে দিতে এসেছি। তিনি বলেছেন, আবার যদি তিনি তোমাদেরকে এদিকে আসতে দেখেন… থেমে গিয়ে মাথা নাড়ল সে। ঈশ্বর জানেন কী ঘটবে?
ডাইনি বলে কিছু নেই, যে ছেলেটি লাকড়ির বোঝা রশি দিয়ে বাঁধছিল সে চ্যালেঞ্জের সুরে বলল।
বিশ্বাসীদের দলে কেউ না কেউ অবিশ্বাসী থাকেই, ভাবল ওয়ালেস। ভাবছে কী জবাব দেয়া যায়। তবে তার সমস্যার সমাধান করে দিল বিশ্বাসীদের একজন।
অবশ্যই ডাইনি আছে, বলল একটি ছেলে। আমার ভাই ডাইনিদের নিয়ে লেখা বই পড়েছে এবং গত রোববার খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে এই ইংল্যান্ডেই ডাইনি আছে।
তাই নাকি? চ্যালেঞ্জারের গলার স্বরে সন্দেহ।
তোমার বন্ধু ঠিকই বলেছে, বলল ওয়ালেস। কাজেই তোমাদের এখানে আবার আসা উচিত হবে না।
আপনি ওকে গ্রেপ্তার করতে পারেন না? জানতে চাইল চ্যালেঞ্জার। ডাইনি হিসেবে ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে পুরে দিলেন?
ওঁকে গ্রেপ্তার করতে যাব আমি? বলল ওয়ালেস। তাহলে তিনি হয়তো আমার গাড়িটাকে ব্যাঙ বা অন্য কিছু বানিয়ে দেবেন।
সবাই চুপ হয়ে গেল। তাহলে যাও সবাই, বলল ওয়ালেস। কেটে পড়ো এখন।
গোলাঘর থেকে সারি বেঁধে বেরিয়ে গেল ছেলের দল।
তোমাদেরকে বলেছিলাম, একজনকে বলতে শুনল ওয়ালেস। ওই ঝাড়টা দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছিল মহিলা ডাইনি। কিন্তু তখন তোমরা আমরা কথা বিশ্বাস করনি। এখন?
আপন মনে হাসল পুলিশম্যান, পা বাড়াল বৃদ্ধার বাড়ির দিকে। চলে গেছে ওরা? জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
হ্যাঁ, জবাব দিল ওয়ালেস। মনে হয় না আর আপনাকে জ্বালাতন করবে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, বললেন বৃদ্ধা। এক কাপ চা দিই? সঙ্গে এক পিস কেক?
চা খেতে কোনো আপত্তি নেই আমার।
.
চা আর কেক খেয়ে আধঘণ্টা পরে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল ওয়ালেস। বৃদ্ধাকে কথা দিল ফোন করে খোঁজখবর নেবে জানতে ছেলেপিলেরা তাঁকে আবার বিরক্ত করছে কিনা। ভাবল ওদেরকে কী বলে ভাগিয়ে দিয়েছে যদি জানতেন বৃদ্ধা তাহলে তাঁর প্রতিক্রিয়া কী হতো!
সে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করল রেডিওতে।
ওক কটেজ থেকে বাচ্চাগুলোকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, বাড়ির বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়েছে।
.
নভেম্বরের পাঁচ তারিখ বিকেলের শিফটে ডিউটি পড়ল ওয়ালেসের। বেলা তিনটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত। বিশেষ এই দিনটিতে এরকম শিফটে কাজ করতে মোটেই পছন্দ করে না সে। আজকের দিনটাতে সবাই বোন ফায়ার নিয়ে উন্মাদ হয়ে উঠবে, যথেচ্ছভাবে আতশবাজি জ্বালাবে… গত বছর এক পাগলা দুধের বোতলে পেট্রল ভরে বোনফায়ার করতে গিয়ে কেলেংকারির একশেষ করেছিল। ট্ৰেল ভর্তি বোতল বিস্ফোরিত হয়ে সেবার চারজন লোক আহত হয়।
রাতে নটা নাগাদ টহল দিতে দিতে বেজায় ক্লান্ত হয়ে পড়ল ওয়ালেস। সে চারটে বোনায়ারের আগুন নেভাতে গিয়েছিল। দমকল বাহিনীকে খবর দিলে তারা এসে আগুন নেভায়। ওয়ালেসের ইউনিফর্ম থেকে এখন বিশ্রী ধোঁয়ার গন্ধ আসছে। আগুন জ্বালানো হয়েছিল বাড়িঘরের খুব কাছে। একটি বাড়িতে আগুন ধরলে আর দেখতে হতো না। পাশাপাশি সবগুলো বাড়িকে ছোবল দিত সর্বনাশা আগুনের জিভ। তাকে লোকজন নালিশ করেছে পোলাপান নাকি আতশবাজি জ্বালিয়ে তাদের লেটারবক্সে ছুঁড়ে মেরেছে।