.
ভুল ভেবেছি আমি। ওই কণ্ঠগুলো আমার সাথেই আছে। গত দুই মাস ধরে কথা বলছে আমার সঙ্গে। ভয় পাচ্ছি আমি। কারণ ওরা যা বলছে বাস্তবে ঠিক তেমনটি ঘটে চলেছে। ইদানিং ওরা একটা অ্যাক্সিডেন্টের কথা বলছে। বোঝাতে চেষ্টা করছে অ্যাক্সিডেন্টের শিকার কে হবে। কিন্তু আমি বুঝে গেছি কে হবে ওদের পরবর্তী শিকার।
-জে.বি. স্টাম্পার
আতশবাজির রাত
পান্ডা সেভেন, তুমি কি একবার ওক কটেজে যেতে পারবে? ওখানকার একজন বাসিন্দা নালিশ করছেন তাকে কিছু বাচ্চাকাচ্চা নাকি খুব জ্বালাতন করছে।
রজার।
কনেস্টবল ওয়ারলেস তার রেডিওটি পুলিশ কারের প্যাসেঞ্জার সিটে ফেলে দিল। চালু করল ইঞ্জিন। সে এতক্ষণ বড় রাস্তার ধারে গাড়ি থামিয়ে কিছু জরুরি কাগজপত্রে চোখ বুলাচ্ছিল। ভোরবেলার শিফটে খুব একটা কোলাহল থাকে না, অন্তত এখন পর্যন্ত তেমন কিছু চোখে পড়েনি, তাই সে গন্তব্যহীনভাবে এদিক সেদিক গাড়ি চালিয়ে বিরক্তই হচ্ছিল। আর এখন, যে মুহূর্তে সে গাড়ি থামিয়ে, কাগজপত্র বের করে কলমটা হাতে নিয়েছে, বেজে উঠল রেডিও।
ওক কটেজ হাফএকর লেনে। জায়গাটা ভালোই চেনা আছে ওয়ালেসের। ওদিকে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার আগে কৃষিকাজ হতো। বেশ কিছু কুটির তৈরি করা হয়েছিল। তবে সে সব কটেজের বেশিরভাগ ভেঙে কৃষিজমিতে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দুএকটি যে ভগ্নদশা নিয়ে এখনও টিকে রয়েছে তারই একটি ওক কটেজ। ওক মিডো নামে মস্ত একটা মাঠের পাশেই জরাজীর্ণ কুটিরখানা।
গাড়ি চালাতে চালাতে ওয়ালেসের চোখে পড়ল পোলাপান লাকড়ি জোগাড় করছে। এক মিডোতে জ্বালানি কাঠের অভাব নেই। আর পাঁচ নভেম্বর এক সপ্তাহ পরেই। বাচ্চাদেরকে দেখা গেল সব জায়গায়। কেউ লাকড়ি আনছে, কেউ বা পুরানো কার্ড বোর্ডের বাক্স সংগ্রহে ব্যস্ত। এসব জিনিসপত্রের বিশাল স্তূপ গড়ে তুলছে তারা মাঠের মাঝখানে।
হাফএকর লেনে মোড় নিল ওয়ালেস। পাশ কাটাল আধুনিক স্থাপত্যের কয়েকটি বাড়িঘর। সবুজ রঙের বিরাট ঝোঁপের ধারে থামাল গাড়ি। এ ঝোঁপটি বিরাট ঝোঁপের ধারে থামাল গাড়ি। এ ঝোঁপটি ওক কটেজকে পথচারীদের নজর থেকে আড়াল করে রেখেছে। সে কাঠের পুরানো একটি গেট খুলল কাঁচকোচ শব্দে এবং নিজেকে আবিষ্কার করল অন্য এক ভুবনে।
সামনের বাগানের ঘাস কোমর ছুঁয়েছে, তাতে আগাছা ভর্তি। ঝোঁপঝাড়গুলো বাড়িটিকে বাইরের পৃথিবী থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে, এমনকী গাড়ি ঘোড়ার শব্দও শোনা যায় দূরাগত এবং ক্ষীণ।
শান্তিময় এলাকা, মনে মনে বলল পুলিশম্যান, ভাঙা পাথর বেছানো পথ ধরে কদম বাড়াল। দরজার কড়া নাড়াল। বহুদিন রঙ করা হয়নি দরজায়।
এক মুহূর্ত চুপচাপ, তারপর খসখস আওয়াজ। কেউ হেঁটে আসছে বাড়ির ভেতর থেকে। এ সেকেন্ড পরে ফটকের সেই ক্যাচক্যাচ শব্দ তুলে অল্প ফাঁক হলো কপাট।
ডাইনি। প্রথম দর্শনে তাই মনে হলো কনেস্টবলের। তার সামনে দাঁড়ানো বৃদ্ধা খুব একটা লম্বা নন, জরাগ্রস্ত চেহারার, তবে যেভাবে ঝুঁকে আছেন এবং অসংখ্য বলিরেখায় কুঞ্চিত মুখ দেখে ছেলেবেলার ছবির বইয়ের ডাইনির সঙ্গে একদম মিলে গেল। এবং রূপকথার ডাইনির মতো এরও পরনে কালো পোশাক।
ওহ, আসুন, অফিসার। বৃদ্ধা পেছনে সরে নিয়ে পুরোপুরি মেলে ধরলেন দরজা। গলার স্বরও, যেমনটি আশা করেছিল ওয়ালেস, খনখনে এবং কর্কশ।
ধন্যবাদ, বাড়িতে ঢুকল ওয়ালেস।
আপনি এত তাড়াতাড়ি চলে আসবেন ভাবিনি, ওকে নিয়ে বাসিগন্ধযুক্ত হলওয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বললেন তিনি। বাড়ির পেছন দিকের একটি কামরায় প্রবেশ করলেন। ওদেরকে আপনি ধরতে পারবেন।
ওদেরকে ধরতে পারব?
পোলাপানগুলো, জবাব দিলেন বৃদ্ধা। আমি তো ফোনে বলেছি। স্থানীয় বাচ্চাকাচ্চারা যখন তখন এসে আমার পেছনের বাগানে হামলা করে, বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ওরা ওখানে খেলা করুক তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু ওরা বোনফায়ারের জন্য কাঠকুটো সংগ্রহ করতে লেগেছে।
গাছপালা কেটে ফেলছে? জিজ্ঞেস করল ওয়ালেস। মাথা নাড়লেন বৃদ্ধা।
আমার পুরানো গোলাঘরের সমস্ত লাকড়ি ওরা নিয়ে যাচ্ছে। জবাব দিলেন তিনি। ওই যে দেখুন। তিনি কাঠের তৈরি বিরাট একটি কাঠামোর দিকে ইঙ্গিত করলেন আঙুল তুলে। এ ঘরের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে। গোলাঘরের অর্ধেকটা ঢাকা পড়েছে গাছপালা আর লম্বা ঝোঁপঝাড়ের আড়ালে।
কান খাড়া করলেই ওদের কথা শুনতে পাবেন। আগুন জ্বালাবার জন্য ওরা ওখানে ঢুকে লাকড়ি নিয়ে যাচ্ছে। তা নিয়েও আমার মাথাব্যথা নেই। যা লাকড়ি লাগে নিয়ে যাক না কিন্তু আমি উদ্বিগ্ন গোলাবাড়িটি বিপজ্জনক বলে। ওটা বেশ কয়েক বছর ধরেই ভেঙে পড়ছে। পুরো ঘরটা যদি ওদের মাথার ওপর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে তাহলে আমি নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারব না।
আপনি চাইছেন ওদেরকে যেন আমি কষে একটা ধমক দিই? বলল ওয়ালেস।
যদি পারেন তো খুব ভালো হয়, প্রত্যুত্তর এল।
বাড়ির পেছন দিক দিয়ে যাওয়ার কোনো রাস্তা আছে?
বৃদ্ধা কিচেনে ঢুকে খিড়কির দোর খুললেন। ওয়ালেস ঝোঁপঝাড়ে ভরা বাগানে উঁকি দিল।
দেখবেন! ঝাড়তে উল্টে যেন পড়ে না যান!
ওয়ালেস দরজা থেকে অর্ধেকটা শরীর বের করেছে, এমন সময় প্রতিবন্ধকতাটি চোখে পড়ল। মুখ টিপে হাসল সে। বৃদ্ধাকে প্রথম দর্শনের অনুভূতির সঙ্গে ঝাড়ুর সংযোগটি বেশ খাপে খাপ মিলে যাচ্ছে। ঝাড়র হাতলটি লম্বা কাঠের, শলাগুলো রশি দিয়ে বাঁধা।