যাক বাবা, ওঁর জ্ঞানের কচকচি শেষ হয়েছে তা হালে!
ইস, যদি সত্যিই একটা তিন নম্বর কোণ থাকত আমার! ধরা যাক, ওর নাম রোজালি—যার সারা শরীরে যৌবন মাখামাখি৷ যাকে শুধু চোখে দেখেই একটা পুরুষ জেগে ওঠে৷ যে স্বর্ণমালার মতো কামশীতল নয়, বরং উষ্ণকাম—উঁহু, তপ্তকাম৷ যার সঙ্গে বিছানায় হুড়োহুড়ি দাপাদাপির পর সব পুরুষই তপ্তকাম থেকে তৃপ্তকাম৷ যার কথা মনে পড়লেই শরীর আঁকুপাঁকু করে৷
সদর দরজা খুলে আমরা বাড়ির বাইরে এলাম৷
মোহনলাল আচমকা জিগ্যেস করলেন, ‘হারানো চাবিটা খুঁজে পেয়েছেন?’
আমি অবাক হয়ে ডিটেকটিভের দিকে তাকালাম৷ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর ঠান্ডা গলায় বললাম, ‘না, পাইনি—পেলে সঙ্গে-সঙ্গে আপনাদের জানাতাম…৷’
হাসলেন মোহনলাল৷
আর ঠিক তখনই পাশের বাড়ির দরজা খুলে মিসেস ব্যানার্জি বেরিয়ে এলেন৷ হাতে নীল রঙের একটা প্লাস্টিকের বালতি আর মগ৷ রোজ সন্ধের মুখে উনি তুলসীমঞ্চে জল দিতে আসেন৷ তুলসীমঞ্চের পাশে খানিকটা ফাঁকা জমিতে কয়েকটা ফুলগাছ রয়েছে৷ তুলসী গাছের পর সেই গাছগুলোর গোড়াতেও জল দেন৷
আমার বাড়ি আর ওঁদের বাড়ির মাঝে খাটো পাঁচিল৷ তাই আমাকে দেখতে পেয়েই একগাল হাসলেন৷ তখনই বোঝা গেল মিসেস ব্যানার্জি এককালে যথেষ্ট সুন্দরী ছিলেন৷
‘রীতেশ, কেমন আছ এখন? তোমাকে তো দেখতেই পাই না—৷’
ভদ্রমহিলা মাঝে-মাঝে বড় ভাট বকেন৷ গায়ে পড়ে পাড়ার এর-তার গল্প শুরু করে দেন৷ মোহনলাল পালের সামনে উনি আবার কী বলতে কী বলবেন এই ভেবে আমি ওঁকে কাটাতে চাইলাম৷ বললাম, ‘আছি একরকম৷ মন-টন ভালো নেই…৷’
‘কী করে ভালো থাকবে! তোমার ওপর দিয়ে যে-ঝড়টা গেল…৷’ মিসেস ব্যানার্জি এরপর মোহনলালের দিকে তাকালেন৷ ওঁকে বিলক্ষণ চিনতে পারলেন৷ হেসে বললেন, ‘আপনি ভালো আছেন?’
মোহনলাল সৌজন্যের হাসি হাসলেনঃ ‘চলে যাচ্ছে, মিসেস ব্যানার্জি৷ আপনারা ভালো আছেন তো?’
শেষ প্রশ্নটা যেন শুনতেই পেলেন না মিনতি৷ নিজের কথা বলে চললেন৷
‘আপনি আবার এসেছেন—তদন্তের কাজ কি মেটেনি না কি? মার্ডারারকে ধরতে পারলেন?’ মিসেস ব্যানার্জির কপালে ভাঁজ, চোখে কৌতূহল৷
এই নাকগলানে বুড়ির প্রশ্নমালা শুনে আমার বিরক্ত লাগছিল৷
বালতি আর মগ হাতে নিয়েই বাউন্ডারি ওয়ালের কাছে চলে এলেন৷ আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা, রীতেশ, তুমি সেই মেয়েটার কথা পুলিশকে বলেছিলে তো?’
‘কোন মেয়েটার কথা বলছেন বলুন তো?’
‘ওই যে…যে-মেয়েটার কথা আমি ওঁদের একজন কনস্টেবলকে রিপোর্ট করেছিলাম—বড়কর্তাদের আর বলা হয়নি৷ ওই কনস্টেবলটা একটু মাতব্বর টাইপের ছিল—সাহেবদের বলেছে কি বলেনি৷ সেজন্যে তোমাকেও তো বলেছিলাম—মনে নেই?’
মোহনলাল ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন৷
আমি এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়লামঃ ‘আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না, মিসেস ব্যানার্জি…৷’
‘মনে পড়ছে না?’ হাতের বালতি আর মগ তড়িঘড়ি মেঝেতে নামিয়ে চোখ একেবারে কপালে তুললেন: ‘সেই যে, তোমার বউয়ের মার্ডারের দিন দুপুরবেলা একটা মেয়ে আমাদের বাড়ির ওপাশটায় মল্লিকদের ফাঁকা জমিটায় দাঁড়িয়ে ফোন করছিল৷ আমি তখন খাওয়াদাওয়া সেরে ওইদিকের জানলার কাছে দাঁড়িয়েছিলাম…’ মোহনলালের দিকে তাকিয়ে একটু দুষ্টুমির হাসি হেসে বললেন, ‘জানেন তো, স্যার, আমার সব ব্যাপারে ইন্টারেস্ট৷ রোজ দুপুরে একটা ছেলে আর মেয়ে ওই জমিতে একটা গাছতলায় প্রেম করতে আসে৷ তার মধ্যে মাঝে-মাঝে অ্যাডাল্ট সিনও থাকে৷ সেদিন ওরা আসার আগেই এই মেয়েটা এল৷ দারুণ দেখতে৷ ডাঁসা চেহারা৷ কাকে যেন ফোন করছিল৷ মেয়েটা ফোনে বলছিল, ‘‘রীতেশ! রীতেশ! হেলপ! বাঁচাও! বাড়িতে একটা লোক ঢুকে পড়েছে! শিগগির এসো—!’’ রীতেশকে আমি এই পিকিউলিয়ার ব্যাপারটা বলেছিলাম৷ কিন্তু ও ঝড়ঝাপটা আর টেনশানে সেসব আপনাদের বলতে ভুলে গেছে…৷’
মোহনলালের দিকে চোখ গেল আমার৷
তিনি তখন আমারই দিকে তাকিয়ে৷ মিটিমিটি হাসছেন৷
যেন বলতে চাইছেন, পারফেক্ট মার্ডার বলে কিছু হয় না৷ ওটা পুরোপুরি থিওরিটিক্যাল৷ ইম্যাজিনারি৷ রুট ওভার মাইনাস ওয়ান…৷