কোনো সোভিয়েত প্রতিনিধি ছিল? প্রশ্ন করলেন ভয়স্কি।
আরোহীদের তালিকা এখনও আসেনি।
সন্ত্রাসবাদীদের বোমা নাকি?
এক্ষুনি বলা সম্ভব নয়, তবে প্রাথমিক আভাস বলা হয়েছে ব্যাপারটা দুর্ঘটনা নয়।
কোন ফ্লাইট?
লন্ডন টু নিউ ইয়র্ক।
উত্তর গ্রিনল্যান্ড? চিন্তিতভাবে পুনরাবৃত্তি করলেন ডেইল নিকোলাস। কোর্স ছেড়ে হাজার মাইল দূরে সরে গেল!
হাইজ্যাকিঙের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, বললেন ভয়কি।
উদ্ধারকারী দল, পৌঁছেছে, ব্যাখ্যা করলেন জুলিয়াস শিলার। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আরও খবর পাওয়া যাবে।
থমথম করছে সিনেটরের চেহারা, এতক্ষণে চুরুটটা ধরালেন তিনি। আমার সন্দেহ হচ্ছে, ওই ফ্লাইটে হে’লা কামিল আছেন। সামনের সপ্তায় সাধারণ পরিষদের অধিবেশন, ইউরোপ থেকে হেডকোয়ার্টারে ফেরার কথা তার।
জর্জ বোধ হয় ঠিকই সন্দেহ করছে, বললেন ভয়স্কি। আমাদেরও দু’জন প্রতিনিধি তাঁর পার্টির সাথে ভ্রমণ করছে।
এ স্রেফ পাগলামি, বিষণ্ণ চেহারা নিয়ে মাথা নাড়লেন জুলিয়াস শিলার। অর্থহীন পাগলামি। প্লেনভর্তি জাতিসংঘ প্রতিনিধিকে মেরে কার কী লাভ?
কেউই সাথে সাথে উত্তর দিল না। দীর্ঘ একটা নিস্তব্ধতা জমাট বাঁধতে শুরু করল। আলেক্সেই কোরোলেঙ্কো তাকিয়ে আছেন টেবিলের মাঝখানে। অনেকক্ষণ পর শান্ত সুরে তিনি শুধু উচ্চারণ করলেন, আখমত ইয়াজিদ।
সিনেটর জর্জ পিট রুশ ডিপ্লোম্যাটের চোখে সরাসরি তাকালেন। তুমি জানতে।
অনুমান।
তোমার ধারণা আখমত ইয়াজিদ, হে’লা কামিলকে খুন করার নির্দেশ দিয়েছে?
আমাদের ইন্টেলিজেন্স জানতে পারে, কায়রোর একটা মৌলবাদী উপদল হে’লা কামিলকে খুন করার প্ল্যান নিয়ে ভাবছে।
অথচ চুপচাপ দাঁড়িয়ে মজা দেখেছ, লাভের মধ্যে পঞ্চাশজন নিরীহ মানুষ মারা গেল!
হিসেবের গরমিল, স্বীকার করলেন আলেক্সেই কোরোলেঙ্কো। কখন বা কোথায় খুন করার চেষ্টা করা হবে তা আমরা জানতে পারিনি। ধরে নেয়া হয়েছিল, হে’লা কামিল শুধু যদি মিসরে ফেরেন তাহলে বিপদ হবে তার। না, ইয়াজিদের তরফ থেকে নয়, বিপদ হবে তার ফ্যানাটিক অনুসারীদের দ্বারা। সন্ত্রাসবাদী কোনো তৎপরতার সাথে কখনোই জড়ানো সম্ভব হয়নি আখমত ইয়াজিদকে। তার সম্পর্কে তোমাদের আর আমাদের রিপোর্টে কোনো পার্থক্য নেই। প্রতিভাবান এক ধর্মীয় নেতা, নিজেকে যে মুসলিম গান্ধী বলে মনে করে।
এই হলো কে. জি. বি. আর সি.আই.এ-র দৌড়! ক্ষোভের সাথে বললেন ভয়স্কি।
হ্যাঁ, যা ভাবা হয়েছিল, লোকটা তার চেয়ে অনেক বড় সাইকো কেস।
জুলিয়াস শিলার সায় দিয়ে মাথা ঝাঁকালেন। দুঃখজনক ঘটনাটার জন্য দায়ী হতে হবে আখমত ইয়াজিদকেই। তার সমর্থন ছাড়া অনুসারীরা এত বড় একটা ক্রাইম করতে পারে না।
তার মোটিভ আছে, বললেন নিকোলাস। হে’লা কামিল এমন একটা আকর্ষণ, তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা মিসরীয়দের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি তাঁর একার যোগ্যতায় গোটা মিসরকে সারা দুনিয়ার চোখে দুর্লভ একটা সম্মানের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন। শুধু জনসাধারণের মধ্যে নয়, সামরিক বাহিনীতেও তার জনপ্রিয়তা প্রেসিডেন্ট হাসানের জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে গেছে। স্বাভাবিক কারণেই আখমত ইয়াজিদ তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে। হে’লা কামিল মারা যাবার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চরমপন্থী মোল্লারা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করবে।
কিন্তু হাসানের পতন হবার পর? ঠোঁটে ধারালো হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আলেক্সেই কোরোলেঙ্কো। হোয়াইট হাউস তখন কী করবে?
জুলিয়াস শিলার আর ডেইল নিকোলাস দৃষ্টি বিনিময় করলেন। কেন, রাশিয়ানরা যা করবে আমরাও তাই করব, বললেন জুলিয়াস শিলার। আগুন না নেভা পর্যন্ত অপেক্ষা।
কিন্তু যদি চরমপন্থী মিসরীয় সরকার অন্যান্য আরব দেশগুলোকে সাথে নিয়ে ইসরায়েলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আলেক্সেই কোরোলেঙ্কোর গলা তীক্ষ্ণ হলো।
অবশ্যই ইসরায়েলকে আমরা সাহায্য করব, অতীতে যেমন করেছি।
তোমরা কি মার্কিন সৈন্য পাঠাবে?
বোধ হয় না।
আর চরমপন্থী নেতারা সেটা জানে, কাজেই তারা হাতে ক্ষমতা পেলে নির্ভয়ে ইসরায়েলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।
সৈন্য পাঠাব না তা ঠিক, গম্ভীর সুরে বললেন জুলিয়াস শিলার, কিন্তু এবার আমরা নিউক্লিয়ার উইপন ব্যবহার করতে ইসরায়েলকে বাধাও দেব না। খুব সম্ভব ওদেরকে আমরা কায়রো, দামেস্ক আর বৈরুত দখল করতে দেব।
তুমি বলতে চাইছ, ইসরায়েলিরা পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করতে চাইলে তোমাদের প্রেসিডেন্ট আপত্তি করবেন না?
অনেকটা তাই, নির্লিপ্ত সুরে বললেন জুলিয়াস শিলার। ডেইল নিকোলাসের দিকে ফিরলেন তিনি। কার ডিল?
বোধ হয় আমার, বললেন সিনেটর, ওদের আলাপ শুনলেও তার চেহারা সম্পূর্ণ ভাবলেশহীন।
পঞ্চাশ সেন্ট।
ধীর কণ্ঠে ভয়কি বললেন, আমার কাছে ব্যাপারটা উদ্বেগজনক বলে মনে হলো।
মাঝেমধ্যে ভূমিকা বদলানোর দরকার পড়ে, নতুন কিছু একটা ঘটা উচিত, অজুহাত খাড়া করার সুরে বললেন ডেইল নিকোলাস। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দারুণ ফল পেয়েছি আমরা। আমাদের তেলের রিজার্ভ এখন আশি বিলিয়ান ব্যারেল। প্রতি ব্যারেল যেহেতু পঞ্চাশ ডলারে উঠে যাচ্ছে আমাদের তেল কোম্পানিগুলো এখন বিশাল জায়গাজুড়ে তেল খোঁজার খরচ জোগাতে পারবে। তাছাড়া, মেক্সিকো আর দক্ষিণ আমেরিকার রিজার্ভ থেকেও প্রচুর তেল পাব আমরা। মোদ্দা কথা হলো, তেলের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভর করার কোনো দরকার নেই আমাদের। সোভিয়েত রাশিয়া যদি উপহার চায়, গোটা আরব জাহানই নিয়ে যেতে পারে তারা।