পঞ্চাশ সেন্টে শুরু করছি আমি, বললেন জুলিয়াস শিলার।
বাড়িয়ে এক ডলার করলাম ওটাকে, বললেন আলেক্সেই কোরোলেঙ্কো।
বোবঝা এবার! রাশিয়ানদের বিশ্বাস করতে নেই! ব্যঙ্গের সুরে মন্তব্য করলেন ডেইল নিকোলাস।
জুলিয়াস শিলার, আলেক্সেই কোরোলেঙ্কোর দিকে না তাকিয়েই তাকে একটা প্রশ্ন করলেন মিসরে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়তে পারে কি পারে না, এর ওপর ভবিষ্যদ্বাণী করো তো, হে।
প্রেসিভেট নাদাভ হাসানকে ত্রিশ দিনের বেশি সময় দেব না, এরই মধ্যে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে আখমত ইয়াজিদ।
তুমি প্রলম্বিত যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছ না?
না, বিশেষ করে সামরিক বাহিনী যদি সমর্থন করে আখমত ইয়াজিদকে।
তুমি আছ, সিনেটর? জিজ্ঞেস করলেন ডেইল নিকোলাস।
শেষ পর্যন্ত।
ইউরি?
পটে তিনটে চিপস ফেললেন ভয়স্কি, প্রতিটি পঞ্চাশ সেন্টের।
মোবারক পদত্যাগ করার পর যেদিন থেকে হাসান ক্ষমতা পেয়েছেন, অল্প দিন। হলেও, ইতোমধ্যে স্থিতিশীলতার একটা পর্যায় পর্যন্ত তুলে আনতে পেরেছেন মিসরকে, বললেন জুলিয়াস শিলার। আমার ধারণা, তিনি টিকে যাবেন।
তুমি তো ইরানের শাহ সম্পর্কেও এই কথাই বলেছিলে, হে। অভিযোগের সুরে বললেন কোরোলেঙ্কো।
মানলাম, হারু পার্টির পক্ষে বাজি ধরেছিলাম, জুলিয়াস শিলার তাস ফেলে গম্ভীর সুরে বললেন, আমাকে দুটো তাস দাও।
আলেক্সেই কোরোলেঙ্কো নিজের কার্ড তুলে নিয়ে বললেন, তোমাদের বিপুল সাহায্য তলাবিহীন ঝুড়িতে ফেলা হচ্ছে কি না, সেটাই হলো প্রশ্ন। মিসরীয় জনতা অভুক্ত থাকার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমন উৎকট অভাবের কারণেই তো বস্তি আর গ্রামগুলোয় ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ছে আগুনের মতো। এটা-সেটা করে খোমনিকে যেভাবে বেশি বাড়াবাড়ি করতে দাওনি, যদি ভেবে থাকো আখমত ইয়াজিদকেও কেটেছেটে সাইজে রাখতে পারবে তাহলে হয়তো ভুল করবে তোমরা।
আমার জানার কৌতূহল, মস্কোর ভূমিকা কী হবে? প্রশ্ন করলেন সিনেটর পিট।
আমরা অপেক্ষা করব, শান্তভাবে বললেন আলেক্সেই কোরোলেঙ্কো। আগুন না নেভা পর্যন্ত অপেক্ষা করব আমরা।
নিজের কার্ডের ওপর দ্রুত চোখ বুলিয়ে জুলিয়াস শিলার বললেন, যাই ঘটুক না কেন, কেউ লাভবান হবে না।
কথাটা ঠিক, হারব আমরা সবাই। তোমরা হয়তো মৌলবাদীদের দৃষ্টিতে মহা শয়তান, কিন্তু কমিউনিস্ট হিসেবে আমাদেরকেও ভালোবাসা হয় না। তোমাকে বলার দরকার পড়ে না, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ইসরায়েলের। ইরানের কাছে ইরাকের পরাজয় এবং সাদ্দাম হোসেনকে মেরে ফেলার চেষ্টার পর, এখন ইরান আর সিরিয়ার পথ খোলা। ওরা মুসলিম বিশ্বকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়তে ইন্ধন জোগাবে। এবারে ইহুদিরা শেষ।
সন্দেহপূর্ণ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন সিনেটর। মধ্যপ্রাচ্যে সেরা যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে ইসরায়েলের। ওরা জিতে যাবে।
দুই মিলিয়ন আরব যখন একসাথে হামলা করবে, আর জিততে হবে না। ভয়স্কি সতর্ক করে দিয়ে বললেন। দক্ষিণে রওনা হবে আমাদের বাহিনী, আর ইয়াজিদের মিসরীয় বাহিনী উত্তর দিকে সিনাই পর্বতের দিকে আক্রমণ শানাবে। এবারে ইরানের সেনাবাহিনীর সাহায্যও পাবে তারা। যতই শক্তিশালী হোক, ইসরায়েল শেষ।
দক্ষযজ্ঞ থেমে যেতে, গম্ভীর স্বরে বলল আলেক্সেই, মুসলিম বিশ্ব ইচ্ছে মতো ছড়ি ঘোরাবে আমাদের ওপর। তেলের দাম বাড়াতে থাকবে তারা।
তোমার বেট, জুলিয়াস শিলারকে বললেন ডেইল নিকোলাস।
দু’ডলার।
চারে তুলে দিলাম, বললেন আলেক্সেই কোরোলেঙ্কো।
ভয়স্কি হাতের কার্ড টেবিলে ফেলে দিলেন, আমি নেই।
আমিও চার, বললেন সিনেটর।
চারদিকে নাগিনেরা ফেলিতেছে নিঃশ্বাস, হাসলেন ডেইল নিকোলাস। আমি নেই।
নিজেদের বোকা বানিয়ে লাভ নেই, সিনেটর বলে চলেন, কোনো সন্দেহ নেই, চাপে পড়লে নিউক্লিয়ার বোমা ব্যবহার করবে ইসরায়েলিরা।
বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন শিলার। ওটা নিয়ে ভাবতেও ভয় লাগে।
নক হলো দরজায়, ভেতরে ঢুকল বোটের স্কিপার। মি. শিলার, আপনার একটা জরুরি ফোন।
এক্সকিউজ মি, বলে চেয়ার ছাড়লেন জুলিয়াস শিলার। ইয়টে খেলতে বসে সবাই কয়েকটা শর্ত মেনে চলেন, তার মধ্যে একটা হলো, ভয়ানক জরুরি ফোন ছাড়া, সেটা উপস্থিত সবার জন্য জরুরি হতে বরে, কেউ টেবিল ছেড়ে উঠতে পারবেন না।
তোমার বাজি, আলেক্সি, সিনেটর বললেন।
আরও চার ডলার।
আই কল।
অসহায় ভঙ্গিতে কার্ড উল্টো করে টেবিলে মেলে দিলেন আলেক্সেই কোরোলেঙ্কো। শুধু একজোড়া চার রয়েছে তার।
মুচকি হেসে একজোড়া ছয় দেখালেন সিনেটর।
ওহ, গুড লর্ড! হায় হায় করে উঠলেন ডেইল নিকোলাস। একজোড়া কিং নিয়ে অফ গেছি আমি!
তোমার লাঞ্চের টাকাগুলো গচ্চা খেল, আলেক্সি, সহাস্যে বললেন ভয়স্কি।
তাহলে দু’জনই পরস্পরকে ব্লাফ দিয়েছি। এই মুহূর্তে একটা তাগাদা অনুভব করছি, কে.জি.বি. চিফকে সাবধান করে দেয়া দরকার সে যেন ভুলেও তোমার সাহায্য না চায়।
সে সাবধান হবে না, ডেইল নিকোলাস হেসে উঠে বললেল। কারণ উল্টোটাই সত্যি বলে জানে সে।
রুমে ফিরে এসে টেবিলে আবার বসলেন জুলিয়াস শিলার। যেতে হয়েছিল বলে দুঃখিত। কিন্তু ব্যাপার হলো, এইমাত্র আমাকে জানানো হয়েছে, জাতিসংঘের চার্টার করা একটা প্লেন গ্রিনল্যান্ডের উত্তর উপকূলে বিধ্বস্ত হয়েছে। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে পঞ্চাশের ওপর। কেউ বেঁচে আছ কি না এখনও জানা যায়নি।