পনেরো মিনিট পর। আর ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্টের সাথে হেলিকপ্টারে আরাম করে বসে আছেন হে’লা কামিল { ককপিটের সামনে দাঁড়িয়ে আল উদ্দেশে হাত নাড়ল পিট, অ্যাল জিওর্দিনো পাল্টা সঙ্কেত দিল। ঘুরতে শুরু করল রোটর, তারপর তুষারের ঝড় তুলে আকাশে উঠে পড়ল কপ্টার। একশো আশি ডিগ্রী বাক নিয়ে ছুটে চলল আইসব্রেকার পোশর এক্সপ্লোরার অভিমুখে। এতক্ষণে খোঁড়াতে খোঁড়াতে হিটিং ইউনিটের দিকে এগোল পিট।
পানি ভরা বুট আর ভিজে ভারী ওঠা মোজা খুলে ফেলল ও, পা দুটো ঝুলিয়ে রাখল এগজস্টের ওপর। রক্ত চলাচল নতুন করে শুরু হতে ব্যথা অনুভব করল, সহ্য করল মুখ বুঝে। খেয়াল করল, পাশে এসে দাঁড়াল লে, সিমোন।
বিধ্বস্ত প্লেনটাকে দেখছে সিমোন। জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল? অস্ফুটস্বরে জিজ্ঞেস করল সে। আসলেও কি তাই?
কয়েকজন ছিলেন সাধারণ পরিষদের সদস্য, বলল পিট। বাকি সবাই জাতিসংঘের বিভিন্ন এজেন্সির ডিরেক্টর বা এইড। হে’লা কামিল জানালেন, ফিল্ড সার্ভিস অর্গানাইজেশনের একটা টুর থেকে ফিরছিলেন ওঁরা।
ওঁদের মেরে কার কী লাভ?
মোজা জোড়া হিটার টিউবের ওপর শুকাতে দিল পিট। কী করে বলব?
মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসবাদীরা দায়ী? সিমোন নাছোড়বান্দা।
তারা বিষ খাইয়ে মানুষ মারতে শুরু করেছে, এটা আমার কাছে নতুন খবর।
আপনার পা কেমন?
ঠিকই আছে। আপনার?
নেভি ইস্যু ফাউল-ওয়েদার বুট জোড়াকে ধন্যবাদ। পা দুটো গরম টোস্টের মতো শুকনো। আমার ধারণা, আবার প্রসঙ্গে ফিরে এল সিমোন, জীবিত তিনজনের একজন দায়ী।
মাথা নাড়ল পিট। সত্যি যদি প্রমাণ হয় যে বিষক্রিয়াতেই মারা গেছেন ওঁরা, তাহলে ধরে নিতে হবে প্লেনে তোলার আগে ফুড সার্ভিস কিচেন থেকে বিষ মেশানো হয়েছে খাবারে।
কেন, চিফ স্টুয়ার্ড বা ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট গ্যালিতে বসে কাজটা করতে পারে না?
কারও চোখে ধরা না পড়ে পঞ্চাশ-ষাটজন লোকের খাবারে বিষ মেশানো অত্যন্ত কঠিন।
খাবার না হয়ে, ড্রিংকেও তো হতে পারে।
আপনি দেখছি দারুণ গোঁয়ার-গবিন্দ মানুষ- তর্ক করেই যাচ্ছেন।
মনে মনে ভারি খুশি হলো সিমোন, তার একটা ধারণা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছে বলে। তাহলে বলুন তো দেখি, মি. পিট, তিনজনের মধ্যে কাকে আপনার সবচেয়ে বেশি সন্দেহ হয়?
তিনজনের একজনকেও নয়।
তার মানে কি আপনি বলতে চাইছেন জেনেশুনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে কালপ্রিট? তাজ্জব হয়ে জানতে চাইল সিমোন।
না, আমি চার নম্বর লোকটার কথা বলছি, যে এখন বেঁচে আছে।
চার নম্বর! হাঁ হয়ে গেল সিমোন। কিন্তু আমরা তো মাত্র তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করেছি!
প্লেন ক্র্যাশ করার পর। তার আগে চারজন ছিল ওরা।
আপনি নিশ্চয়ই ছোট্ট মেক্সিকান লোকটার কথা বলছেন না, ককপিটের সিটে যাকে দেখলাম?
হ্যাঁ, আমি তার কথাই বলছি।
হতভম্ব হয়ে পিটের দিকে তাকিয়ে থাকল লে, সিমোন। এই উপসংহারে পৌঁছনোর পক্ষে অকাট্য কোনো যুক্তি দেখাতে পারবেন আপনি, মি, পিট?
উঁচুদরের রহস্য কাহিনী পড়া নেই আপনার? মুচকি হাসল পিট। জানেন না, রহস্য বা হত্যাকাণ্ডের ঐতিহ্য হলো সবচেয়ে যাকে কম সন্দেহ করা যায়, সেই শেষ পর্যন্ত খুনি প্রমাণিত হয়?
.
১১.
এমন জঘন্য তাস কে বাটল?
চেহারায় অসন্তোষ নিয়ে প্রশ্ন করলেন রাজনৈতিক সচিব জুলিয়াস শিলার। কার্ডের ওপর চোখ বুলাচ্ছেন তিনি, কার্ডের কিনারা দিয়ে চুরি করে তাকাচ্ছেন অন্যান্য খেলোয়াড় সঙ্গীদের দিকে, চোখে চিকচিক করছে কৌতুক।
পোকার টেবিলে বসে পাঁচজন খেলছেন ওঁরা। কেউ ধূমপান করছেন না, তবে শিলারের হাতে একটা চুরুট রয়েছে, এখনও ধরাননি। ইয়টটা শিলারের, পঁয়ত্রিশ মিটার দীর্ঘ, নোঙর ফেলেছে পটোম্যাক নদীতে, সাউথ আইল্যান্ডের কাছাকাছি আলেকজান্দ্রিয়া, ভার্জিনিয়ার ঠিক উল্টোদিকে।
অপর সঙ্গীদের মধ্যে একজন হলেন সোভিয়েত মিশন-এর ডেপুটি চিফ আলেক্সেই কোরোলেঙ্কো। দৈহিক গড়নের দিক থেকে লম্বায় একটু কম কিন্তু চওড়ায় বিশাল। ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সমাজে তার হাসিখুশি চেহারা অত্যন্ত পরিচিত। জুলিয়াস শিলার অসন্তোষ প্রকাশ করায় তিনিই প্রথম তাঁকে সমর্থন করলেন।
আমাদের দেশে সাইবেরিয়া বলে চমৎকার একটা জায়গা আছে, খেলাটা যদি মস্কোয় হত তাহলে ডিলারকে সেখানে পাঠানোর ব্যাপারে তদ্বির করতাম আমি।
জুলিয়াস শিলার ডিলারের দিকে তাকালেন।
পরের বার, ডেইল, কার্ড ভালো করে ফেটে নিয়ো, বুঝলে হে! আলেক্সেই তোমাকে সাইবেরিয়ায় পাঠাতে চাইছে, আর জর্জ হয়তো চাইবে সামরিক আইনে তোমার বিচার করতে।
কৃত্রিম গাম্ভীর্যের সাথে ঘেৎ ঘোৎ করে ডেইল নিকোলাস, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ অ্যাসিস্ট্যান্ট বললেন, এতই যদি খারাপ হয় কার্ড, রেখে দিলেই তো পারো!
সিনেটের পররাষ্ট্র-সম্পর্ক বিষয়ক বিভাগের সভাপতি, সিনেটের জর্জ পিট উঠে দাঁড়িয়ে গায়ের জ্যাকেট খুলে ফেললে। চেয়ারের হাতলে ওটা বিছিয়ে রেখে ইউরি ভয়স্কির দিকে তাকালেন।
বুঝলাম না, এরা কেন কমপ্লেইন করছে, তুমি আর আমি তো একদম জিতিনি।
সোভিয়েত দূতাবাসের আমেরিকা বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা মাথা ঝাঁকালেন, মনে হচ্ছে, পাঁচ বছর আগে শেষ একটা ভালো হাত পেয়েছিলাম।
শিলারের ইয়টে সেই ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার চলে এই পোকার খেলা। কালক্রমে শুধু তাস খেলা নয়, বন্ধুদের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে এই আসর। বিশ্বের বড় বড় শক্তিগুলোর প্রতিনিধিরা এক জায়গায় মিলিত হয় এখানে। কোনো অফিশিয়াল ব্যাপার নেই, প্রেসের ঝুট-ঝামেলা নেই- সবমিলিয়ে বিশ্বশান্তির জন্য এই অনাড়ম্বর বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ বৈকি।