পরিচিত এয়ার লাইনের সাথে রংগুলো মেলে না।
আরও নিচে নেমে চক্কর দাও, বলল পিট। তুমি ল্যান্ডিঙের জন্য জায়গা খোঁজো, আমি লেখাগুলো পড়ার চেষ্টা করি।
দুবার চক্কর দিতেই পিট বলল, নেবুলা। নেবুলা এয়ার।
জীবনে কখনও শুনিনি, বলল জিওর্দিনো, বরফের ওপর স্থির হয়ে আছে দৃষ্টি।
শুধু ভিআইপিদের বহন করে। চার্টার করতে হয়।
কমার্শিয়াল ফ্লাইটের পথ ছেড়ে এখানে এটা এল কেন?
বলার জন্য কেউ বেঁচে থাকলে একটু পরই জানতে পারব। পেছনে বসা আটজন লোকের দিকে ঘাড় ফিরিয়ে একবার তাকাল ও হেলিকপ্টারের গরম পেটে আরাম করে বসে আছে সবাই। আর্কটিক আবহাওয়ার উপযোগী নেভি-ব্লু পোশাক সবার পরনে। একজন সার্জেন, তিনজন মেডিকেল সহকারী। বাকি চারজন ড্যামেজ-কন্ট্রোল এক্সপার্ট। ওদের পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে মেডিকেল সাপ্লাইয়ের বাক্স, কম্বল, স্ট্রেচার আর আগুন নেভানোর উপকরণ ও যন্ত্রপাতি।
প্রধান দরজার উল্টোদিকে একটা হিটিং ইউনিট রয়েছে, মোটা কেবল-এর সাথে সংযুক্ত, কেবলের অপর প্রান্ত মাথার ওপর ঝুলে থাকা উইঞ্চের সাথে জড়ানো। ওটার পাশেই রয়েছে ঘেরা কেবিনসহ একটা স্নোমোবাইল।
পিটের ঠিক পেছনে বসেছেন ডাক্তার জ্যাক গেইল। সদালাপী সদাহাস্যময় ভদ্রলোক মৃদু হেসে জানতে চাইলেন, নিজেদের বেতন হালাল করার সময় এল বলে!
ডাক্তারের হাসিখুশি মনোভাব কখনোই পাল্টায় না।
নামার পর বুঝতে পারব, বলল পিট। প্লেনের চারধারে কিছুই নড়ছে না। তবে আগুনে ধরেনি। ককপিট ডুবে আছে। ফিউজিলাজ তোবড়ালেও কোথাও ফুটো হয়নি বলে মনে হচ্ছে। মেইন কেবিনে প্রায় এক মিটার উঁচু পানি উঠেছে।
আহত লোক যদি ভিজে গিয়ে থাকে, ঈশ্বর তার সহায় হোন। ডাক্তার গেইল গম্ভীর হলেন। ফ্রিজিং ওয়াটারে আট মিনিটের বেশি বাঁচার কথা নয়।
ওরা যদি ইমার্জেন্সি একজিট খুলতে না পারে, প্লেনের গা কেটে ভেতরে ঢুকতে হবে।
লেফটেন্যান্ট কর্ক সিমোন, ড্যামেজ-কন্ট্রোল টিমের নেতা, বলল, কাটিং ইকুইপমেন্ট থেকে আগুনের ফুলকি বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়া তেলে আগুন ধরে যেতে পারে। ভালো হয় আমরা যদি মেইন কেবিনের দরজা দিয়ে ঢুকি। স্ট্রেচার ঢোকানোর জন্য চওড়া জায়গা লাগবে ডাক্তার গেইলের।
আপনার কথায় যুক্তি আছে, বলল পিট। তবে মেইন কেবিনের দরজা খুলতে অনেক সময় লাগবে। আমাদের প্রথম কাজ যেকোনো একটা ফাঁক দিয়ে হিটারের ভেন্ট পাইপ ভেতরে ঢোকানো।
হেলিকপ্টার ল্যান্ড করল সমতল বরফের ওপর, প্লেনের কাছ থেকে সামান্য দূরে। নামার জন্য তৈরি হলো সবাই। রোটর ব্লেডের বাতাসে চারদিকে তুলোর মতো উড়ছে তুষার। লোডিং ডোর এক ঝটকায় খুলে লাফ দিয়ে নিচে নামল পিট, নেমেই প্লেনের দিকে ছুটল। মেডিকেল সাপ্লাই নামানোর কাজে সহায়তা করলেন ডাক্তার গেইল। বাকি সবাই ধরাধরি করে স্নোমোবাইল আর হিটিং ইউনিট বের করছে।
এক ছুটে প্লেনের ফিউজিলাজটাকে একবার চক্কর দিয়ে এল পিট। প্রতি মুহূর্তে সজাগ থাকতে হলো কোনো ফাটলে যেন পা গলে না যায়। জেট ফুয়েলের গন্ধে ভারী হয়ে আছে বাতাস। ককপিটের জানালা ছাড়িয়ে উঁচু হয়ে আছে তুষারের একটা স্তূপ, সেটার ওপর চড়ল ও। হাত দিয়ে তুষার সরিয়ে ককপিটের দিকে একটা সুড়ঙ্গ তৈরি করার চেষ্টা করল। একটু পরই সম্ভব নয় বুঝতে পেরে নিচে নেমে এল আবার। আলগা তুষার জমাট বেঁধে শক্ত বরফ হয়ে গেছে, হাত দিয়ে ভাঙতে কয়েক ঘন্টা লাগবে।
হন হন করে অবশিষ্ট ডানার দিকে এগোল ও। মূল অংশটা মোচড় খেয়ে সাপোর্টিং মাউন্ট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, ডগাটা লেজের দিকে তাক করা। পানিতে ডুবে থাকা ফিউজিলজের পাশে লম্বা হয়ে রয়েছে গোটা ডানা, জানালাগুলোর এক হাত নিচে। আবরণহীন পারিন ওপর ডানাটাকে সেতু হিসেবে ব্যবহার করল পিট, একটা জানালার সামনে হাটুগেড়ে বসে ভেতরে উঁকি দিল। হেলিকপ্টারের আলো প্লেক্সিপ্লাসে প্রতিফলিত হয়ে চোখ ধাধিয়ে দিল ওর, দুই হাত দিয়ে চোখ দুটোকে আড়াল করতে হলো।–
প্রথম কিছুই দেখল না পিট। শুধু অন্ধকার আর নিস্তব্ধতা। তারপর হঠাৎ, জানালার উল্টোদিকে কিম্ভুতকিমাকার একটা অবয়ব উদয় হলো, পিটের মুখ থেকে মাত্র দেড় ইঞ্চি দূরে। নিজের অজান্তেই পিছিয়ে এল ও।
একটা নারীমুখ, একটা বন্ধ চোখের নিচে লালচে কাটা দাগ, রক্তে ভিজে গেছে শরীরের একটা দিক। প্রায় ভূত দেখার মতোই চমকে উঠল পিট।
তারপর মুখের অক্ষত অংশটার ওপর চোখ পড়ল। উঁচু চোয়াল, লম্বা কালো চুল, ধারাল নাক, অলিভ বাদামি চোখ। সুন্দরী যে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
জানালার কাছে নাক ঠেকিয়ে চেঁচিয়ে উঠল ও, ইমার্জেন্সি হ্যাঁচ খুলতে পারবেন?
সুন্দর একটা ভ্রু সামান্য উঁচু হলো, কিন্তু অক্ষত চোখে কোনো ভাব ফুটল না।
আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?
ঠিক সেই মুহূর্তে লে. সিমোন্সের লোকজন অক্সিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিট চালু করল, চারদিকে উজ্জ্বল আলোর বন্যা বইয়ে দিয়ে জ্বলে উঠল কয়েকটা ফ্লাডলাইট। হিটার ইউনিটে পাওয়ার সংযোগ দেয়া হলো, বরফের ওপর দিয়ে টেনে আনা হলো ফ্লেক্সিবল হোস।
এদিকে, ডানার ওপর, হাত নেড়ে লোকগুলার দৃষ্টি আকর্ষণ করল পিট। জানালা ভাঙার জন্য কিছু একটা আনো।
জানালার দিকে ফিরল ও, কিন্তু ভদ্রমহিলা ইতোমধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেছেন।