আমাদের ইন্টেলিজেন্স খবর পাওয়া মাত্র ধেই ধেই করে নাচবে।
যদি লাল কমিউনিস্টরা চালাক হয়, তবে আর নাচতে হবে না, জিওর্দিনো বলে। .. আমাদেরকে এই জায়গায় ফিরে আসতে দেখে মনে করেছেন চুপ করে বসে থাকবে। ওদের জাহাজ গ্লোমার এক্সপ্লোরার?
অর্থাৎ তুমি বলছে, সাগরের তলদেশের জিওলজিক্যাল সার্ভের ব্যাপারে আমাদের ঘোষণা তারা বিশ্বাস করেনি? কণ্ঠে কপট বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইল পিট।
তিক্ত একটা দৃষ্টি উপহার দিল জিওর্দিনো, পিটকে। ইন্টেলিজেন্স অদ্ভুত এক ব্যাপার, সে বলে চলে, এই দেয়ালের ওপাশে বসা ত্রুরা জানে না, তুমি আমি কী করতে যাচ্ছি; কিন্তু ওয়াশিংটনে সোভিয়েত চরেরা আমাদের মিশনের উদ্দেশ্য টের পেয়েছে বহু মাস আগে। বাধা দেয়নি, তার একটাই কারণ, আমাদের টেকনোলজি ওদের চেয়ে ঢের উন্নত। ওরা চাইছে, আমরা খুঁজে দেই ওদের জিনিস।
ওদের ধোঁকা দেয়া সহজ হবে না, একমত হলেন নাইট। বন্দর ছাড়ার পর থেকেই ওদের দুটো ট্রলার আমাদের প্রতিটি মুভ অনুসরণ করছে।
সার্ভেইল্যান্স স্যাটেলাইট তো অনুসরণ করছেই, যোগ করে জিওর্দিনো।
এ জন্যই ব্রিজে ফোন করে আমি বলে দিয়েছি, যেই কোর্সে আছে ওটা শেষ করে আবার এই স্থানে ফিরে আসতে, পিট বলে।
ভালো চেষ্টা। কিন্তু আবার এইখানে ফিরে এলে রাশিয়ানরা সন্দেহ করবে।
তা করবে। কিন্তু আমরা একটা নিয়ম ধরে সার্চ করা থামাবো না। ওয়াশিংটনে রেডিওতে আমি জানাব, ইকুইপমেন্টে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে, কী করা উচিত এই ব্যাপারে পরামর্শও চাইব। কয়েক মাইল পর পরই এলোমেলো ঘুরে ওদের ধাঁধায় ফেলে দেবো একদম।
হ্যাঁ বিশ্বাসযোগ্য হবে ব্যাপারটা, টোপটা ওরা গিলতে পারে। ওয়াশিংটনে পাঠান আমাদের মেসেজ অবশ্যই শুনতে পাবে রাশিয়ানরা। বায়রন নাইটের উদ্দেশে বলল জিওর্দিনো।
ঠিক আছে। মেনে নিলেন নাইট। আমরা এখানে থামব না। টার্গেটের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছি, ভাব করছি যেন এখনো সার্চ চলছে।
ত্রিশ মাইল দূরে ভুয়া একটা আবিষ্কারের ব্যাপারে শোরগোল তুলে বিষয়টা আরো ঘোলাটে করা যাবে, পিট পরামর্শ দেয়।
তবে তাই হোক, বায়রন নাইট মুচকি হাসেন।
জাহাজ ঘুরে গেল। পানিতে ডুবে থাকা রোবট, নাম শারলক, একজোড়া মুভি ক্যামেরা আর একটা স্টিল ক্যামেরার সাহায্যে ছবি পাঠাতে শুরু করল। আবার গর্তের কিনারায় ফিরে এসেছে ওরা। গভীর তলদেশের ফটো দেখতে পাচ্ছে। ওই যে, আবার আসছে ওটা! ফিসফিস করে বলল জিওর্দিনো।
সোনোগ্রাফের পোর্টসাইড প্রায় সবটুকু দখল করে রেখেছে রাশিয়ান সাবমেরিন। গর্তের মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে ওটা, প্রায় কাত অবস্থায়, গর্তের মুখের দিকে বো। তবে অক্ষত। ১৯৬০ সালে ডুবে যাওয়া মার্কিন সাবমেরিন প্রেসার কিংবা স্করপিয়নের মতো টুকরো টুকরো হয়ে যায়নি। নিখোঁজ হবার পর দশ মাস পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনও ওটার গায়ে শ্যাওলা বা মরচে ধরেনি। আলফা-ক্লাস যে তাতে কোনো সন্দেহ নেই, বিড়বিড় করে বললেন বায়রন নাইট। পারমাণবিক শক্তিচালিত, খোলটা টাইটানিয়ামে তৈরি, লবণাক্ত পানিতে মরচে ধরে না, ননম্যাগনেটিক।
সাথে লেটেস্ট সাইলেন্ট-প্রপেলার টেকনোলজিও আছে, বলল জিওর্দিনো। ওটার মতো দ্রুতগামী সাবমেরিন আর নেই কোথাও।
সোনার রেকর্ড আর ভিডিও ফটো আগেপিছে আসছে। ঘন ঘন ঘাড় ফেরাচ্ছে ওরা, যেন টেনিস ম্যাচ দেখছে সবাই। ধীরে ধীরে ক্যামেরার আওতা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ান সাবমেরিন। দেড়শো ক্রু নিয়ে ডুবে যাবার পর আজই প্রথম ওটার ওপর কোনো মানুষের চোখ পড়ল, ভাবতে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল ওরা।
রেডিও অ্যাকটিভিটির অস্বাভাবিক কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছ? জিজ্ঞেস করল পিট।
সামান্য একটু বেড়েছে, বলল জিওর্দিনো। সম্ভবত সাবমেরিনের রিয়্যাক্টর থেকে।
সাবমেরিনের কিছু গলে যায়নি?
রিডিং তা বলছে না।
গলুইয়ের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হয়, বায়রন নাইট বললেন, মনিটরগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে তিনি। পোর্ট ডাইভিং প্লেন ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে। পোর্ট বটমে গভীর দাগ, প্রায় বিশ মিটার লম্বা।
বেশ গভীর, বলল পিট। ব্যালাস্ট ট্যাংক ভেদ করে ইনার প্রেশার-হাল-এ ছুঁয়েছে। গর্তের ভেতর নামার সময় মুখের কোথাও বাড়ি খেয়েছিল। ক্যামেরার রেঞ্জ থেকে হারিয়ে গেল সাবমেরিনটা।
তার পরও মনিটরগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকল ওরা, কারও মুখে কথা নেই, তাকিয়ে আছে সাগরতলের দিকে, ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে স্ক্রিন। প্রায় আধ মিনিট চুপ করে থাকল ওরা। তারপর ঢিল পড়ল পেশিতে, যে যার চেয়ারে হেলান লি সবাই। পিট আর জিওর্দিনোর কাজ বলতে গেলে শেষ হয়েছে। খড়ের গাদার ভেতর একটা সূচ খুঁজে পেয়েছে ওরা।
পিটকে নির্লিপ্ত চেহারা নিয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকাতে দেখে জিওর্দিনো বুঝতে পারল, কী ভাবছে ও। চ্যালেঞ্জ নেই, কাজেই ভালো লাগাও নেই। এবার অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে যাবার তাড়না অনুভব করছে দুঃসাহসী লোকটা।
দারুণ দেখালে, ডার্ক, আর তুমিও, অ্যাল, উচ্ছ্বাসের সুরে বললেন নাইট। তোমরা নুমার লোকেরা ভাই সেরা। নিজেদের কাজ বোঝে।
আরে, এখনই খুশি হচ্ছেন কেন? পিট বলে। কঠিন কাজ পড়ে আছে। রাশিয়ানদের নাকের ডগা থেকে ওটা উত্তোলন করবেন কীভাবে? গ্লোমার এক্সপ্লোরারের সাহায্য তো আর পাচ্ছেন না। পানির তলে সমস্ত কাজ সারতে হবে