মুহূর্তের জন্য বাকশক্তি হারিয়ে ফেললেন প্রেসিডেন্ট। আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির তাৎপর্য এত বিরাট, ধারণার মধ্যে আনতে হিমশিম খেয়ে গেলেন তিনি। শিল্প হিসেবে এগুলোর প্রতিটি অমূল্য। জ্ঞান হিসেবে এগুলোর মূল্য অপরিসীম। অবশেষে অস্পষ্ট কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, এখানে কাজ শেষ করতে কত দিন লাগবে আপনাদের?
প্রথমে আমরা প্যাপিরাস সরাব, তারপর শিল্পকর্ম, জানাল লিলি। প্রথমে যাবে স্কালচার। শেষ না হওয়া পর্যন্ত দিনে চব্বিশ ঘণ্টা করে কাজ চলবে। ধরুন, আগামী বছরের জানুয়ারি নাগাদ শেষ করতে পারব আমরা।
তারমানে প্রায় ষাট দিন, বললেন অ্যাডমিরাল।
স্ক্রোল আর সাহিত্য?
আসলে, অনুবাদ বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। প্রায় পঁচিশ বছর কিংবা তার বেশি লেগে যেতে পারে। এছাড়া অর্থ-কড়ির ব্যাপারটাও আছে। লিলি জানাল।
বাজেট নিয়ে ভাববেন না, প্রেসিডেন্ট নিজে আশ্বস্ত করলেন। ওটাকে এক নম্বর গুরুত্ব দেয়া হবে।
অস্বস্তিভরে লিলি বলল, যদি কিছু মনে না করেন, সব কিছু খোলাসা করার আগে দশ দিন সময় চাই আমি। ততদিনে আমি এবং আমার দলের সদস্যরা একটা চমৎকার ভিডিও টেপ প্রস্তুত করে ফেলতে পারব।
সিনেটর পিট প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে ফিরলেন। ডক্টর শার্প চমৎকার একটা ফিলের মাধ্যমে পুরো দুনিয়াকে চমকে দেবেন, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে। কী বলেন?
লিলির হাত নিজের হাতে নিয়ে নিলেন প্রেসিডেন্ট। ধন্যবাদ, ডক্টর শার্প। আপনি আমাকে চিন্তা মুক্ত করলেন।
অতিথিদের নিয়ে আরেক দিকে এগোল লিলি। ওদিকে একজন বিশেষজ্ঞ, গ্রিক ল্যাটিন অনুবাদক, একটা প্যাপিরাস পরীক্ষা করছেন। তাঁর দুই কাঁধের ওপর হুমড়ি খেয়ে রয়েছে পিট আর জিওর্দিনো। ওদেরকে চিনতে পেরে তাড়াতাড়ি পা বাড়ালেন প্রেসিডেন্ট।
আপনি সুস্থ শরীরে বেঁচে আছেন দেখে আমি ভারি আনন্দিত, ডার্ক, বললেন তিনি, আন্তরিক হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল তার মুখ। গোটা আমেরিকান জাতি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমেরিকানদের পক্ষ থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
যতটা সম্ভব সিধে হলো পিট, একটা ছড়িতে ভর দিয়ে। ভাগ্যের একটা ভূমিকা, আর বন্ধুদের অবদান আছে, মি. প্রেসিডেন্ট, স্মিত হেসে বলল পিট। আমার বন্ধু অ্যাল জিওর্দিনো আর কর্নেল হোলিস যদি না থাকত, এখনও আমি গনগোরা হিলের নিচে থাকতাম।
রহস্যটা পরিষ্কার করবেন, প্লিজ? জিজ্ঞেস করলেন জুলিয়াস শিলার। এই ছোট পাহাড়টার নিচে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি আছে, আসলে গনগোরা হিলে নেই, আপনি জানলেন কীভাবে?
ভুল করে আপনি লাইব্রেরিটাই উড়িয়ে দিচ্ছেন কিন, এই ভয়ে সবাই আমরা রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, ডার্ক। প্রেসিডেন্ট স্বীকার করলেন।
তখন সব কিছু ব্যাখ্যা করার সময় ছিল না, বলল পিট। আপনারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে, আসলে কোনো সন্দেহ ছিল না। পাথরে যে সূত্র দিয়ে গেছেন জুনিয়াস ভেনাটর, সেটা অত্যন্ত পরিষ্কার, ভুল বোঝার অবকাশ নেই বললেই চলে। তিনি লিখেছেন, উত্তরে দাঁড়িয়ে দক্ষিণে তাকিয়ে আমি কী দেখলাম? দেখলাম আধ কিলোমিটার দূরে, আমার ডান অর্থাৎ পশ্চিম দিকে রয়েছে রোমা-ব্লাফ। নদীর দিকে তাকাতে বলেছেন ভেনাটর, তারমানে পাহাড়টা নদীর সবচেয়ে কাছে হবে। গনগোরা হিল নদীর সবচেয়ে কাছে নয়, রোমা ব্লাফ-ও নয়। কাজেই খানিকটা পশ্চিম দিকে এবং সামান্য উত্তর দিকে সরে গেলাম আমি, ফলে প্রথম যে পাহাড়টা গেলাম সেটা আকারে তত বড় না হলেও, নদীর সবচেয়ে কাছাকাছি।
পাহাড়টার নাম কী, ডার্ক জিজ্ঞেস করলেন সিনেটর।
এই পাহাড়টার? কেউ কোনো নাম বলতে পারছে না। বোধ হয় রাখা হয়নি।
রাখা হয়েছে, সহাস্যে বললেন প্রেসিডেন্ট। এইমাত্র। যে মুহূর্তে ডক্টর শার্প আর তার দল আমাকে পুরো আবিষ্কার ঘোষণার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেবেন, ওটার নাম হবে নাম-নেই পাহাড়।
.
জ্ঞানের বিপুল সমারোহ দেখে আচ্ছন্ন প্রেসিডেন্টের বাহিনী যখন ওয়াশিংটনে পৌঁছলেন, ততক্ষণে রাত পেরিয়ে ভোর হতে চলল। রিও গ্রান্ড নদী কুয়াশার অবগুণ্ঠন খুলছে।
নাম-নেই পাহাড়ের চূড়ায় বসেছিল পিট আর লিলি। ভ্যাপসা বাতাসে বসে রোমার আলো নিভে যেতে দেখছে ওরা।
ওর চোখে তাকিয়ে হাসল লিলি। নরম, আদুরে একটা ভঙ্গি ওর দৃষ্টিতে প্রথম সূর্যের আলো পড়ছে পিটের মুখে, কিন্তু লিলি জানে, ব্যাপারটা সম্পর্কে সচেতন নয় দুরন্ত এই পুরুষ, তার মন ঘুরে ফিরছে অতীতের কোনো এক সময়ে।
গত কয়েক দিনে লিলি জেনেছে, কোনো মেয়ের পক্ষেই একে সম্পূর্ণভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। দিগন্তের ওপারে, অজানা কোনো স্থানে, ঘোর রহস্য ওর একমাত্র ভালোবাসা। আবেগঘন প্রেম করা যেতে পারে এর সাথে, বিয়ে নয়। লিলি জানে, ওর এই প্রেম ভাঙল বলে। হঠাৎ একদিন হারানোর আগে এখনই ওর প্রাপ্যটুকু আদায় করে নিতে চাইছে মেয়েটা।
ডার্কের কাঁধে মাথা রেখে হেলান দিল লিলি। আচ্ছা, বলো তো, ওই টুকরোটাতে কী লেখা ছিল?
টুকরো?
ওই যে, যে স্ক্রোলটা নিয়ে তুমি আর অ্যাল খুব উত্তেজিত ছিলে।
আরো অনেক মহামূল্যবান আটিফ্যাক্টের অবস্থানের জোরাল সূত্র, ধীরে, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে মন্তব্য করল পিট।
কোথায়?
সাগরের নিচে। স্ক্রোলটার নাম, মূল্যবান মালামালসহ ডুবে যাওয়া জাহাজের সন্ধান।