ম্যাসেজের মেঝে ক্রমশ উঁচু হতে শুরু করল। কমলা রঙের ধোঁয়া এখনও আছে, তবে আগের চেয়ে অনেক হালকা। একটু কি বাড়ল তাপমাত্রা? গায়ে কি মৃদু বাতাসের ছোঁয়া পেল? প্রথমে অস্পষ্ট, তারপর উজ্জ্বল লাগল চোখে আলোটা। টানেল থেকে বেরিয়ে এল পিট। সামনে তারা জ্বলছে, ফ্লাডলাইটের আলোয় স্নান দেখাচ্ছে।
পিট জানে, বিপদ এখনও কাটেনি। মাইনের মুখ থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। ও। ক্রমশ উঁচু হয়ে আরও পাঁচ মিটারের মতো উঠে গেছে সামনের মেঝে। উঠতে গিয়ে পিছলে নেমে আসছে শরীরটা। মাত্র একটা পা ব্যবহার করতে পারছে, ডান পা বোঝা হয়ে আছে পিছলে। গর্তের মুখটা এত কাছে অথচ কত দূরে। মাত্র পাঁচ মিটার। ঢালু মেঝের নিচে মৃত্যু, ওপরে জীবন।
চুপ মেরে গেছে কর্নেল হোলিস। তার আর কিছু বলার নেই। তৃতীয়বার ঢল থেকে নিচে খসে পড়ে পিট উপলব্ধি করল, নিজের হাতে সাজানো মৃত্যু ফাঁদে ধরা পড়ে গেছে ও। বিস্ফোরকগুলো সাজাবার সময় ডিলিঞ্জারের সাথে সে-ও ছিল।
প্ৰায় যখন হাল ছেড়ে দিয়েছে পিট, গর্তের খোলা মুখে একটা ছায়ামূর্তি উদয় হলো। গর্তের কিনারায় শুয়ে একটা হাত পিটের দিকে লম্বা করে দিল সে। শত্রু না মিত্র? না জেনেই হাতটা ধরল পিট। ওকে টেনে গর্তের মুখে তুলল লোকটা। সমতল মাটিতে পৌঁছে হাঁপাতে লাগল পিট।
লোকটা দুহাতে ধরল পিটকে, অনায়াস ভঙ্গিতে তুলে নিল বুকে। ছুটতে ছুটতে এগোল জিপের দিকে।
জিওর্দিনোকে চিনতে পেরেছে পিট। কৃতজ্ঞতায় চোখে পানি এসে গেল ওর। স্টার্ট নিল জিপ, একশো মিটারও এগোতে পারেনি, বিস্ফোরিত হলো গনগোরা হিল।
বিশাল মিছিল প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ল মাটির ওপর। প্রথমে থরথর করে কাপল পাহাড়টা। তারপর আগ্নেয়গিরির নিক্ষিপ্ত লাভার মতো মাটি আর পাথর সবেগে ছুটল আকাশের দিকে। গনগোরা হিলের গোটা চূড়াটা লাফ দিয়ে দশ মিটার শূন্যে উঠে পড়ল। চারদিকে এখন শুধু পাথর আর ধুলো।
.
৫ নভেম্বর, ১৯৯১, রোমা, টেক্সাস
৭৮.
পাঁচ দিন পর, মাঝরাত হতে আর মাত্র তিন মিনিট বাকি, রোমার কয়েক মাইল দূরে ছোট্ট একটা এয়ারপোর্টে নামল প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার। তাঁর সফর সঙ্গীদের মধ্যে সিনেটর পিট ও সিনেটর পিট রয়েছেন। ওঁদেরকে অভ্যথনা জানালেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার।
কনগ্রাচুলেশন্স, অ্যাডমিরাল, সহাস্যে বললেন প্রেসিডেন্ট। তবে স্বীকার করতে আপত্তি নেই, বিশ্বাস করতে পারিনি নুমা এত নিখুঁতভাবে করতে পারবে কাজটা।
ধন্যবাদ, মি. প্রেসিডেন্ট। আপনি আমাদের প্ল্যান অনুমোদন করায় আমরা সবাই আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
আমাকে রাজি করানোর জন্য আপনার ধন্যবাদ দেয়া উচিত সিনেটরকে, জর্জ পিটের কাঁধে একটা হাত রেখে বললেন প্রেসিডেন্ট। উনি, সত্যি কথা বলতে কি, আমার একেবারে ঘাড়ে চেপে বসেছিলেন।
দশটা চাকা লাগানো বিরাট একটা ট্রাকে উঠে পড়লেন ওঁরা। ড্রাইভারের পাশে আগেই দু’জন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট উঠে বসেছে। ট্রাক রওনা হয়ে গেল, পিছু নিল একটা ডুজ ভ্যান।
গোটা এলাকায় মৌমাছির মতো হেলিকপ্টার উড়ে বেড়াচ্ছে, বললেন অ্যাডমিরাল, ব্যাপারটা গোপন রাখার স্বার্থে এই ট্রাক ছাড়া উপায় ছিল না। ভেতরে ছয়টা চেয়ার রয়েছে। ট্রাকের দুই পাশ ও মাথার দিকটা মোটা ক্যানভাস দিয়ে ঢাকা।
খানিক পর প্রেসিডেন্ট বললেন, আমরা আসলে ভাগ্যবান। টপিটজিন মারা গেছে জানার পর মেক্সিকান জনতা দাঙ্গা বাধিয়ে দিলে আমরা সামলাতে পারতাম না।
পাহাড়টা ভেঙে পড়ার পর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে লোজন, বললেন অ্যাডমিরাল বাচ্চা আর মেয়েরা ছিল বলে দাঙ্গা বাধেনি। তাছাড়া, জনতাকে উত্তেজিত করার জন্যও কেউ ছিল না। টপিটজিনের ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা অবস্থা সুবিধার নয় বুঝতে পেরে সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যায়। খিদে, পরিশ্রম, আর হতাশায় ক্লান্ত হয়ে নদীর দিকে হাঁটা ধরে সবাই।
সিনেটর পিট বললেন, সীমান্তের ওপারে মেক্সিকান পুলিশ টপিটজিনের বেশির ভাগ অনুসারীকে গ্রেফতার করেছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন প্রেসিডেন্ট। নিরীহ মানুষজনের রক্তপাত ঘটেনি তাতেই আমি খুশি।
কিন্তু ক্যাপেসটার পরিবার? প্রশ্ন করলেন অ্যাডমিরাল।
এদেশে ওদের কোনো সম্পত্তি আছে কি না খোঁজ নিয়ে দেখছে বিচার বিভাগ, প্রেসিডেন্ট বললেন। কর্নেল হোলিস তার স্পেশাল ফোর্সকে নিয়ে ক্যারিবিয়ানের একটা দ্বীপে হানা দেয়ার প্ল্যান করছে। ক্যাপেসটার পরিবারের কেউ যদি ওখানে থাকে, তার কপালে খারাপি আছে।
সিনেটর পিট হেসে বললেন, ইয়াজিদ আর টপিটজিন মারা যাওয়ায় আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ বেশ নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবে এবারে।
মাথা নেড়ে অসম্মতি জানালেন শিলার। মনে হয় না। কেবল দুটো আবর্জনা গিয়েছে। আরো বহু বহু বাকি।
আরে, এত বাজে চিন্তা করো না তো, জুলিয়াস। বললেন প্রেসিডেন্ট। মিসর আপাতত শান্ত। স্বাস্থ্যগত কারণে প্রেসিডেন্ট নাদাভ হাসান পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ক্ষমতা ছেড়ে দিচ্ছেন আবু হামিদের হাতে। মুসলিম মৌলবাদীরা দারুণ চাপে আছে ওখানে।
হে’লা কামিল, আবু হামিদকে বিয়ে করার ফলে পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক হচ্ছে। বললেন সিনেটর পিট।
ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়ল, খুলে গেল দরজা, সিঁড়ি বেয়ে সবাই নামতে শুরু করলেন।