কিল হিম! উন্মাদের মতো চিৎকার জুড়ে দিল রবার্ট ক্যাপেসটার। এই সুযোগ ছেড়ো না! খুন করো ওকে! কিল হিম! কিল হিম!
ইবনের ভারী শরীর বুকে নিয়ে ঘড়ির কাঁটার মতো ঘুরতে চেষ্টা করল পিট, হাতের কিনারা দিয়ে কোপ মারল শত্রুর কণ্ঠায়। এ ধরনের আঘাতে বেশির ভাগ মানুষ দম আটকে মারা যায়, অন্তত জ্ঞান না হারিয়ে পারে না। ইবনে শুধু ঘর্ঘর ঘর্ঘর আওয়াজ ছেড়ে দুহাতে চেপে ধরল নিজের গলাটা, গড়িয়ে নেমে গেল পিটের বুক থেকে।
মাতালের মতো টলতে টলতে দু’জনেই দাঁড়াল ওরা। এক পায়ে এই জায়গায় লাফাচ্ছে পিট, বাতাসের অভাবে হাঁপাচ্ছে ইবনে, মাত্র একটা আঙুল নিয়ে তার ডান হাতটা ঝুলে আছে শরীরের পাশে। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে ওরা।
প্রথম হামলাটা এল তৃতীয় পক্ষ থেকে। হঠাৎ মেঝের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল রবার্ট তার কোল্ট লক্ষ্য করে। বগল আর বাহুর মাঝখানে ফোল্টটা আটকাতে চেষ্টা করছে। সে। সন্দেহ নেই, অস্ত্রটা ইবনেকে দেয়ার ইচ্ছে তার। কিন্তু তার নিজের বিচ্ছিন্ন হাত শক্ত হয়ে আটকে গেছে, বগলের নিচে আটকে টান দিতেও কোল্টটা বেরোল না আঙুলগুলো থেকে টানটা আরও জেকারে না হলে বেরোবে না।
পিট আর ইবনে, দু’জনেই ওরা আশপাশে তাকাল অস্ত্রের খোঁজে।
হার হলো পিটের। শটগানটা ইবনের দিকে পড়ে রয়েছে। তার পাশে রোমান তলোয়ারটাও। ঝড়ের সময় যেকোনো বন্দরে নোঙর ফেলা যায়, ভাবল পিট! ঢালসহ হাতটা ইবনের দিকে ছুড়ল ও, আহত ডান পা দিয়ে সরাসরি লাথি মারল রবার্টের বুকে। শটগানটা ভোলার জন্য ঝুঁকতে যাচ্ছিল ইবনে, ঢালের বাড়িটা কাঁধে লাগল তার। ভারসাম্য রক্ষার জন্য অস্থির হয়ে উঠল সে। ঝুঁকল পিট রবার্টর বিচ্ছিন্ন হাতে আটকে থাকা কোল্টটা ধরে হ্যাঁচকা টান দিল। জোড়া হাতসহ উঠে এল সেটা।
লাথি খেয়ে ত্রাহি চিৎকার জুড়ে দিয়েছে রবার্ট। জোড়া হাত থেকে কোল্টটা ছাড়াতে চেষ্টা করছে পিট। মুক্ত হলো, কিন্তু আঙুল থেকে পিছলে বেরিয়ে গেল সেটা, শূন্যে ডিগবাজি খেয়ে উঠে যাচ্ছে ওপর দিকে। লাফ দিয়ে ধরে ফেলল পিট।
ট্রিগার গার্ড রক্তে পিচ্ছিল হয়ে আছে।
তাল সামলে শটগানের দিকে বাম হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছে ইবনে। ধরল। তুলছে। এই সময় গুলি করল পিট।
পরবর্তী রিকয়েলের জন্য মুঠো শক্ত করল পিট। চেম্বারের দেয়ালে বাড়ি খেয়ে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল ইবনে।
দুসারি দাঁতের ফাঁক দিয়ে শিসের মতো শব্দ করে বাতাস ছাড়ল পিট। এতক্ষণে ওর খেয়াল হলো, টিভি ক্যামেরায় সংযুক্ত স্পিকার থেকে কর্নেল হোলিসের চিৎকার ভেসে আসছে, বেরিয়ে আসুন, ফর গডস সেক, বেরিয়ে আসুন।
দিগভ্রান্ত হয়ে পড়েছে পিট। অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে এতই মগ্ন ছিল, এখন মনেই করতে পারছে না কোন পথ ধরে টানেল থেকে বেরোতে হবে। অনেকগুলো সুড়ঙ্গ, মাত্র একটা দিয়ে বেরোনো সম্ভব।
শেষবার রবার্ট ক্যাপেসটারের দিকে একবার তাকাল পিট। ভয়ে নয়, রক্তক্ষরণে সাদা হয়ে গেছে মুখটা। অর্ধনিমীলিত নেত্রে পিটের দিকে তাকিয়ে আছে সে, দৃষ্টিতে রাজ্যের ঘৃণা। ক্লান্ত, মৃদু হেসে বলল পিট, নরকের পথে যাত্রাটা উপভোগ করো!
জবাবে স্মোক বমটা ফাটিয়ে দিল রবার্ট। যেভাবেই হোক, পিনটা খুলে ফেলেছে সে। এক পলকে ঘন কমলা রঙের ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে গেল চেম্বারটা।
.
কী ঘটল? জিজ্ঞেস করলেন প্রেসিডেন্ট। কমলা রঙের কুয়াশায় ক্যামেরা কোনো ছবি পাঠাতে পারছে না।
রবার্ট সম্ভবত একটা স্মোক বোমা ফাটিয়ে দিয়েছে, জেনারেল কার্টিস রুদ্ধশ্বাসে বললেন।
এক্সপ্লোনিভগুলো এখনও ফাটছে না কেন?
এক সেকেন্ড, স্যার। রাগের সাথে একজন এইডের দিকে ফিরলেন জেনারেল। কথা বলে ক্যামেরার দিকে তাকালেন আবার।
কর্নেল হোলিস বলছেন সরাসরি আপনি অর্ডার দিলে তবে সে বিস্ফোরণ ঘটাবে।
যোগাযোগ চাই! ধমকের সুরে বললেন প্রেসিডেন্ট।
চার সেকেন্ড পর একটা মনিটরে দেখা গেল কর্নেল হোলিসকে।
আপনি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন না, কর্নেল হোলিস, প্রেসিডেন্ট বললেন। আশা করি, আমার গলা চিনতে পারছেন?
পারছি, প্রেসিডেন্ট।
আপনার কমান্ডার ইন-চিফ হিসেবে, আপনাকে আমি অর্ডার দিচ্ছি, পাহাড়টা উড়িয়ে দিন-এই মুহূর্তে।
ঢাল বেয়ে প্রায় চূড়ায় উঠে পড়েছে জনতা, ডেইল নিকোলাস বললেন। আতঙ্কের সাথে সবাই মনিটরে দৃশ্যটা দেখলেন। আবার মিছিল শুরু হয়েছে। পাহাড়ের নিচ থেকে হাজার হাজার লোক বেয়ে উঠছে চূড়ার দিকে, সবার মুখে টপিটজিনের নাম, সুর করে উচ্চারণ করছে।
এরপরও যদি অপেক্ষা করো, কর্নেল হোলিস, থমথমে গলায় বললেন জেনারেল মেটকাফ, কয়েক হাজার লোককে খুব করবে তুমি। ফাটিয়ে দাও।
সুইচের ওপর স্থির হয়ে আছে কর্নেল হোলিসের একটা আঙুল। ট্রান্সমিটারে ঘোষণা করল সে, ডিটোনেশন!
তারপরও সুইচটা টিপল না সে। হুকুম মানতে রাজি না হলে বিচার হবে। কিন্তু যদি হুকুম মানতে দেরি করা হয় বা দেরি হয়ে যায়? কোর্ট মার্শাল হলেও, অযোগ্যতা প্রমাণ করা ভারি কঠিন কাজ।
সুইচ টিপবে কর্নেল, কিন্তু তার আগে যতটা পারা যায় সময় দেবে সে পিটকে।
.
ধোঁয়া নয়, যেন গভীর আর ভারী পানির তলায় রয়েছে পিট। চোখ বুজে আছে ও, দম বন্ধ করে রেখেছে। ইচ্ছাশক্তির জোরে পা দুটো নাড়তে চাইছে, ইচ্ছে হচ্ছে দৌড় দেয় বা হামাগুড়ি দিয়ে এগোয়। আতঙ্কভরা চেম্বার থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দূরে সরে যেতে চায়। একটা প্যাসেজে বেরিয়ে এসেছে বটে, কিন্তু জানে না এটাই ঠিক পথ কি না। ছোটার ক্ষমতা নেই, দেয়াল ধরে এক পা এক পা করে এগোচ্ছে। হয় টানেলের মুখে বেরোতে হবে, নয়তো মাইনের মুখে। দুটোই যদি হারিয়ে ফেলে, মাটি খুঁড়ে ওর লাশ বের করতে হবে।