আরেক সেন্টিমিটার সরল পিট।
ভ্রু কপালে তুলে মিসরীয় আততায়ী জিজ্ঞেস করল, আখমত ইয়াজিদ তোমার ভাই ছিল?
দেখলে তুমি আখমত ইয়াজিদকে চিনতে পারবে? জিজ্ঞেস করল পিট।
পিটের দিকে ফিরে নিঃশব্দে মাথা ঝাঁকাল ইবনে। মিসরে কে তাকে চেনে না?
মরিয়া হয়ে ভাবল পিট, কিছু সুবিধা সে পাচ্ছে, কিন্তু সময় মতো কাজে লাগাতে পারবে তো? আখমত ইয়াজিদকে দেখার পর ইবনের কী প্রতিক্রিয়া হয় তার ওপর নির্ভর করছে সব।
তাহলে কফিনটার ভেতর উঁকি দাও।
নোড়ো না, পিট। নড়ার কথা ভাবতেও নিষেধ করছি তোমাকে, বলতে বলতে কফিনটার দিকে এগোল ইবনে। পিটের দিকে তাকিয়ে আছে সে, পা ফেলছে ধীরে ধীরে, প্রতিবার একটা করে। তার ডান নিতম্বে কফিনের একটা কোণ ঠেকল। হাতের শটগান পিটের দিকে স্থির রেখে কফিনের ভেতর একবার তাকাল সে, পরমুহূর্তে পিটের দিকে ফিরল।
এক চুলও নড়েনি পিট।
এ এক ধরনের জুয়া খেলা। অপ্রত্যাশিত কিছু দেখলে একবার নয়, অন্তত দুইবার তাকায় মানুষ। প্রথমবার ইবনে শুধু চোখ বুলিয়েছে। আরেকবার ভালো করে দেখার একটা তীব্র ইচ্ছে তার অজান্তেই মনের ভেতর মাথাচাড়া দিচ্ছে। পিটের বিশ্বাস, দ্বিতীয় বার কফিনের ভেতর তাকাতেই হবে ইবনেকে। ঠিক তাই করল সে।
.
গনগোরা পাহাড়ের আধ কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে স্পেশাল অপারেশনস ফোর্সের কমান্ড ট্রাক। টিভি মনিটরের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার, তার দুপাশে বাকি সবাই।
অনড় মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে লিলি, মুখ রক্তশূন্য।
অস্থির পায়ে পায়চারি করছে কর্নেল হোলিস। তার একহাতে ছোট একটা আলট্রা হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ডিটোনেশন ট্রান্সমিটার, অপর হাতে শক্ত করে ধরা ফোনের রিসিভার। রিসিভার চিৎকার করছে সে, জেনারেল কার্টিসের একজন এইডের উদ্দেশে,
বললেই আমি ডিটোনেট করব? সবদিক আমাকে ভেবে দেখতে হবে না? মেক্সিকানরা আগে ডেঞ্জার পেরিমিটার পেরুক, তারপর দেখা যাবে।
এইড, একজন কর্নেল, বলল, ঢাল বেয়ে প্রায় উঠে পড়েছে লোকজন।
আরও ত্রিশ সেকেন্ড পর। তার আগে নয়! হুঙ্কার ছাড়ল কর্নেল হোলিস।
জেনারেল কার্টিস চাইছেন এই মুহূর্তে আপনি উড়িয়ে দিন পাহাড়টা। পাল্টা হুঙ্কার ছাড়ল এইড। আপনার প্রতি এটা একটা অর্ডার, স্বয়ং প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে।
আপনি টেলিফোনে একটা কণ্ঠস্বর ছাড়া কিছু নন, কর্নেল, প্রায় বিদ্রুপের সুরে বলল কর্নেল হোলিস। অর্ডারটা আমি সরাসরি প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে পেতে চাই।
আপনি কোর্ট মার্শালের ঝুঁকি নিচ্ছেন, কর্নেল স্যার।
এই প্রথমবার নয়।
ভয়ে আর অস্থিরতায় হাঁপাচ্ছেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। পারবে না। ডার্ক পারবে না।
আপনারা শুধু বসে বসে চিৎকার করবেন আর মাথার চুল ছিঁড়বেন। কিছু করতে পারেন না? আবেদনভরা দৃষ্টিতে অ্যাডমিরালের দিকে তাকাল লিলি। ওর সাথে কথা বলুন। টিভি-ক্যামেরার সাথে লাগানো স্পিকারে আপনাদের গলা শুনতে পাবে পিট।
ওর মনোযোগ নষ্ট করলে সর্বনাশ ঘটে যাবে, জবাব দিল কর্নেল। স্পিকার থেকে আওয়াজ বেরোলেই চমকে উঠবে পিট, সাথে সাথে ওকে খুন করবে ইবনে।
পেয়েছি! হ্যাঁচকা টানে কমান্ড ট্রাকের দরজা খুলে নিচে লাফ দিয়ে পড়ল সে, ছুটল স্যামের জিপ লক্ষ্য করে। কর্নেল হোলিসের লোকজন বাধা দেয়ার আগেই তীরবেগে রওনা হয়ে গেল জিপটা গনগোরা হিলের উদ্দেশে।
.
দ্রুত লাফ দিল পিট, যেন কুণ্ডলী খুলে ছোবল দিল একটা সাপ। আবার ঝিক করে উঠল তলোয়ারের ফলা।
ওর পেশিবহুল হাতটা কাঁধের সমস্ত শক্তি নিয়ে নিচে নামল। অনুভব করল, শুনতেও পেল, তলোয়ারের ফলা নরম কিছুতে সেঁধোবার আগে কঠিন কিছুর সাথে ঘষা খেয়েছে। একটা বিস্ফোরণ ঘটল, ঠিক যেন ওর মুখের ওপর। বিস্ফোরণের ধাক্কা প্রায় সবটুকু ঢালের মাঝখানে লাগল, পিছলে সিলিংয়ের দিকে উঠে গেল পেলেটগুলো। প্রাচীন ঢালের গায়ে শক্ত কাটের আবরণ লাগিয়েছে আজ দুপুরে জন ডিলিঞ্জার, সেটায় গর্ত হলেও ফুটো হলো না তলোয়ার ধরা রার হাত বৃত্ত রচনা শেষ করল। দেরি না। করে আবার সেটাকে হ্যাঁচকা টানে ওর ওপর দিকে তুলল পিট।
ইবনে যথেষ্ট ক্ষিপ্র, তবে আখমত ইয়াজিদকে কফিনের ভেতর দেখে, বিস্ময়ের ঘোর কাটতে এক সেকেন্ড দেরি হলো তার। চোখের কোণ থেকে পিটকে লাফ দিতে দেখতে পেয়ে ঠিকমতো লক্ষস্থির না করেই শটগানের টিগার টেনে দেয়, পরমুহূর্তে ঘটগনের ব্রিচে ঘষা খেয়ে কব্জির কয়েক ইঞ্চি নিয়ে আঘাত করল তলোয়ারের ফলা। পাঁচটার মধ্যে চারটে আঙুলই হাত থেকে খসে মেঝেতে পড়ে গেল।
এমনভাবে গোঙাতে শুরু করল ইবনে, যেনে বিষম খেয়েছে। রবার্ট ক্যাপেসটারের জোড়া হতে এখনও ধরা রয়েছে কোল্ট পাইথন, ঠিক সেটার পাশে ছিটকে পড়েছে শটগানটা। তবে নিচের দিক থেকে উঠে আসা পিটের দ্বিতীয় আঘাতটা এগিয়ে গেল ইবনে ছোট্ট একটা লাখ দিয়ে। পরমুহূর্তে, দমকা বাতাসের মতো শরীরে মোচড়া দিয়ে পিটকে লক্ষ্য করে ঝাঁপিয়ে পড়ল সে।
সরে যেতে গিয়ে বিপদটা টের পেল পিট। লাফ দিল, কিন্তু ভাজ হয়ে গেল ডান হাঁটু। দেরিতে হলেও, কারণটা বুঝতে পারল ও। শটগানের একটা কি দুটো পেলেট ওর পায়ের ঢুকেছে। আহত পা-টাই জখম হয়েছে আবার।
ভাঁজ করা হাত-পা নিয়ে পিটের ওপর আছড়ে পড়ল ইবনে। তাল সামলাতে গিয়ে তলোয়ারটা হাতছাড়া হয়ে গেল পিটের। অপর হাতটা ঢালের ভেতর দিকে স্ট্র্যাপের সাথে আটকে গেছে। ধীরে ধীরে, সচেতনভাবে, অক্ষত হাতটা দিয়ে পিটের গলা চেপে ধরল ইবনে।