দুপা এগিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল পিট। বেঁটেখাটো, স্থূল এক লোক চেম্বারে ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, হাতে একটা শটগান-পিস্তল, সরাসরি পিটের তলপেট লক্ষ্য করে ধরা।
তাড়াহুড়োর কোনো দরকার নেই, মি. পিট। কর্তৃত্বের সুরে থমথমে গলায় বলল সে। কেউ আপনারা কোথাও যাচ্ছেন না।
.
৭৭.
তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা থাকলেও লোকটাকে আচমকা উদয় হতে দেখতে সিচ্যুয়েশন রুমের দর্শকরা প্রায় সবাই আঁতকে উঠলেন। গনগোরা হিলের গভীর পাতালে উত্তেজনাকর নাটকটা বিপজ্জনক মোড় নিতে যাচ্ছে।
জেনারেল কার্টিস, তীক্ষ্ণকণ্ঠে প্রশ্ন করলেন প্রেসিডেন্ট, কী ঘটছে ওখানে? কে এই লোক?
মনিটরে আমরাও ওকে দেখতে পাচ্ছি, মি. প্রেসিডেন্ট। ঠিক বুঝতে পারছি না, সম্ভবত টপিটজিনের লোকই হবে।
পিটকে সাহায্য করার জন্য একটা দল পাঠান, নির্দেশ দিলেন জেনারেল মেটকাফ।
প্রতিবাদ করলেন জেনারেল কার্টিস, স্যার, জনতা বাধা দেবে। ভিড়ের ভেতর দিয়ে ছাড়া ওখানে ওঠার আর কোনো পথ নেই।
উনি ঠিকই বলছেন, সায় দিলেন জুলিয়াস শিলার। জনতা খেপে উঠলে সামলানো যাবে না।
আগন্তক গেল কীভাবে? জিজ্ঞেস করলেন জেনারেল মেটক্যাফ। সে যদি পারে, তোমরা দু’জন লোক পাঠাতে পারবে না কেন?
সেটা দশ মিনিট আগের ঘটনা, এখন আর সম্ভব নয়, স্যার। টপিটজিনের লোকেরা আরও ফ্লাডলাইটের ব্যবস্থা করেছে। গোটা এলাকায় গিজ গিজ করছে। মেক্সিকানরা। ঢালগুলোয় পা ফেলার জায়গা নেই। গাড়ি নিয়ে এগোনো তো অসম্ভব।
সিনেটরের দিকে তাকালেন প্রেসিডেন্ট কথা বলার আগে বড় করে দম নিলেন তিনি। জর্জ, মেক্সিকানরা যদি পাহাড়ের ওপর উঠতে শুরু করে, আপনার ছেলে বেরিয়ে আসার আগেই অপারেশনের ইতি ঘটাতে হবে আমাদের।
চোখের ওপর একবার হাত বোলালেন সিনেটর পিট। তারপর মনিটরের দিকে তাকালেন। ডার্ক পারবে, ছোট্ট করে বললেন তিনি।
আচমকা চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন ডেইল নিকোলাস। মনিটরের দিকে একটা হাত লম্বা করে দিয়ে চিৎকার করে উঠলেন তিনি, পাহাড় বেয়ে উঠছে ওরা!
.
আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে সবাই যখন ওর প্রাণরক্ষার সম্ভাবনা নিয়ে তর্ক করছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে পিটের প্রধান মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে শটগান পিস্তলের কালো মুখ। অস্ত্রটা বাগিয়ে ধরার ভঙ্গি দেখেই বুঝতে পারল এ লোক আরও বহুবার খুন করেছে। অস্ত্রের পেছনে লোকটার মুখ ম্লান, চোখে উৎসাহহীন দৃষ্টি, সব মিলিয়ে যেন একঘেয়েমির শিকার। আরেকজন জাতখুনি, ভাবল
কে তুমি?
ইবনে তেলমুক। সুলেমান আজিজ আমাকে তার বিশ্বস্ত ভক্ত হিসেবে চিনতেন।
হ্যাঁ, ভাবল পিট। কল্পনার চোখে ক্রাশিং মিলের সামনের রাস্তায় আতঙ্কবাদীদের দেখতে পেল ও তোমরা দেখছি প্রতিশোধ নেয়ার কথা ভোলো না।
তার শেষ ইচ্ছে ছিল আমি যেন তোমাকে খুন করি।
ডান হাতটা অত্যন্ত ধীর নিচে নামাল পিট, তলোয়ারের ডগাটা চেম্বারের মেঝের দিকে তাকল করল। তার এই ভঙ্গি, সাহসী লোকের পরাজয় মেনে নেয়ার ভঙ্গি। পেশি শিখিল করে দিল ও, ঝুলে পড়ল কাঁধ, সামান্য বাঁকা হলো হাঁটু দুটো।
সান্টা-ইনেজে ছিলে তুমি।
হ্যাঁ, সুলেমান আজিজ আর আমি একসাথে মিসরে পালিয়ে যাই।
পিটের ঘন কালো ভ্রু দুটো এক হলো। গুলি খাবার পর সুলেমান আজিজ তাহলে বেঁচে গিয়েছিল? নাহ, আর বোধ হয় পালাবার সময়ও হাতে নেই। কথার জবাব না দিয়ে লোকটার উচিত ছিল ওকে লক্ষ্য করে গুলি করা। লোকটা ওকে নিয়ে খেলছে, বিড়াল যেমন ইঁদুরকে নিয়ে খেলে। পঞ্চাশটা পেলেট ছুটে আসবে কথার মাঝখানে হঠাৎ।
সময় নষ্ট করলেও পুরস্কার পাওয়ার কোনো উপায় নেই। ইবনের দিকে তাকিয়ে দূরত্বটা আন্দাজ করার চেষ্টা করল পিট। কোন দিকে লাফ দেয়া যায়, যখন গুলি হলে? সহজ ভঙ্গিতে ঢালটা শরীরের সামনে আনল।
রক্তাক্ত দুই কনুইয়ে আলখেল্লা, জড়ানো শেষ করল রবার্ট ক্যাপেসটার। সারাক্ষণ ফোঁপাচ্ছে সে। রক্তে ভিজে আলখেল্লার একটা অংশ লালে লাল। ইবনের দিকে তাকাল সে।
মারো ওকে! নিস্তেজ গলা থেকে চিচি আওয়াজ বেরোল। দেখো আমার কী অবস্থা করেছে ও! মারো! গুলি করো।
তুমি কে? জিজ্ঞেস করল ইবনে, পিটের ওপর চোখ।
আমি টপিটজিন।
ওর আসল নাম রবার্ট ক্যাপেসটার, বলল পিট। শাল এক নম্বরের ভন্ড।
ক্রল করে ইবনের দিকে এগোল রবার্ট, তার পায়ের কাছে এসে থামল। কাঁদছে, হাঁপাচ্ছে, মুখ তুলে তাকিয়ে আছে ইবনের দিকে। ওর কথায় কান দিয়ো না, আবেদনে কাঙালের সুর। এই ব্যাটা ছিঁচকে চোর একটা।
এই প্রথম নিঃশব্দে হাসল ইবনে। তা কী করে হয়। ওর ফাইল আমি পড়েছি। কোনো ব্যাপারেই ছিঁচকে নয় ও।
পরিস্থিতি অনুকুল, ভাবল পিট। মুহূর্তের জন্য হলেও ইবনের মনেযোগ কেড়ে নিতে পেরেছে রবার্ট। এক পাশে সরতে শুরু করল ও, প্রতিবার এক সেন্টিমিটারের বেশি নয়, চেষ্টা করছে ওর এবং ইবনের মাঝখানে যেন চলে আসে রবার্ট।
সুলেমান আজিজ কোথায়? হঠাৎ জিজ্ঞেস করল পিট।
উনি মারা গেছেন, জানাল ইবনে। হঠাৎ জ্বলে উঠল তার চোখ দুটো। শুয়োরের বাচ্চা আখমত ইয়াজিদটাকে খুন করার পর উনি মারা গেছেন।
চেম্বারে যেন বোমা ফাটল, অন্তত রবার্টকে চমকে উঠতে দেখে তাই মনে হলো পিটের। নিজের অজান্তেই রবার্টর দৃষ্টি ছুটে গেল সোনালি কফিনটার ওপর। আবার সেই চিচি, অস্পষ্ট গলায় বলল সে, তার মানে আমার ভাই নিজের লোকের হাতে খুন হয়েছে। ওই লোককেই তো পল, লেডি ফ্ল্যামবোরো হাইজ্যাক করার দায়িত্ব দিয়েছিল।