আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, ঘোষণার সুরে বলল পিট। শিল্প আর প্যাপিরাস রয়েছে পাশের চেম্বারে।
মুগ্ধ চেহারা নিয়ে ধীরে ধীরে এগোল রবার্ট, একটা চোখ পিটের ওপর। ক্যাসকিটের পাশে গিয়ে দাঁড়াল সে। হাত বাড়িয়ে ছুঁলো। তারপর, হঠাৎ ঝট করে হাতটা তুলে নিয়ে পিটের দিকে পুরোপুরি ঘুরল সে। আমার সাথে চালাকি, তাই না? দুহাজার বছরের পুরনো কফিন এটা, তাই না? রাগে, আক্রোশে হাঁপাচ্ছে সে। এখনও রং পর্যন্ত শুকায়নি।
গ্রিক বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত অ্যাডভান্সড….
শাট আপ! গর্জে উঠল রবার্ট, ডান আস্তিন থেকে হাতে চলে এল রিভলভারটা। আর একটা কথাও শুনতে চাই না। আমি জানতে চাই, গুপ্তধনগুলো কোথায়?
পিছু হটতে শুরু করল পিট, চেহারায় কৃত্রিম আতঙ্ক।
আমাকে মেরো না, রবার্ট। প্রাচীন বর্শা আর তলোয়ার ঝুলে থাকা দেয়ালে পিঠ ঠেকল তোমাকে আমি সত্যি কথাটা বলে দিচ্ছি। মেইন ডিপোজিটরি চেম্বার এখনও পাইনি আমরা। পিটের দৃষ্টি প্রতি মুহূর্তে সোনালি কফিন আর রবার্টর মুখে ওঠানামা করছে, যেন ওটা থেকে হঠাৎ কেউ বেরিয়ে আসবে বলে ভয় পাচ্ছে ও।
পিটের চোরাদৃষ্টি লক্ষ করে হাসতে শুরু করল রবার্ট। কফিনটার দিকে রিভলভার তাক করল সে। ট্রিগার টেপার সময় তার চোখে পলক পড়ল না। চারটে ফুটো তৈরি হলো কফিনের গায়ে। পাথুর চেম্বারের ভেতর কামান দাগার শব্দ হলো।
চালাকিটা ধরল রবার্ট। তোমার ব্যাক আপ, মি. পিট? খেঁকিয়ে উঠল সে। তুমি দেখছি একটা রামছাগল।
ওকে লুকিয়ে রাখার আর কোনো জায়গা পাইনি, হতাশ সুরে বলল পিট।
এক ঝটকায় কফিনের চাকনিটা তুলে ভেতরে তাকাল রবার্ট। আচমকা রক্তশূন্য দেখাল তাকে। আতঙ্কে কেঁপে উঠল গোটা শরীর, হাত থেকে খসে গিয়ে সশব্দে বন্ধ হলো ঢাকনিটা। ঠোঁটের ফাঁক গলে বেরিয়ে এল অস্পষ্ট গোঙানির শব্দ।
সামান্য একটু ঘুরল পিট, ফলে ঢালের আড়ালে ওর ডান হাতের নড়াচড়া ধরা পড়ল না রবার্টর চোখে। চেম্বারের দেয়াল ঘেঁষে সরে যাচ্ছে ও, একসময় রবার্টর বাম দিকে মুখ করল। অস্বস্তির সাথে চোখ বুলালো একবার হাতঘড়ির ওপর। ওর জন্য নির্দিষ্ট করা সময় এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে।
কাঁপা হাতে আরেকবার কফিনের ঢাকনিটা ধরল রবার্ট। এবার ঢাকনিটা পুরোপুরি তুলল সে, ফলে ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথে উল্টো দিকে পড়ল সেটা, খোলা তাকল কফিন। ভেতরে তাকিয়ে বিড়বিড় করে উঠল সে,
পল….সত্যি পল ও… শোকে ও বিস্ময়ে পাথর হয়ে গেছে লোকটা।
প্রেসিডেন্ট হাসান চাননি আখমত ইয়াজিদকে মিসরে কবর দেয়া হোক, মৃদুকণ্ঠে বলল পিট। মৌলবাদীরা তাকে শহীদ বানিয়ে ফেলতে পারে। সেজন্যই লাশটা এখানে পাঠানো হয়েছে, তোমরা দু’জনেই যাতে এক জায়গায় শুয়ে থাকতে পারো।
কফিনের দিক থেকে চোখ তুলল রবার্ট। উদ্ভ্রান্ত দুষ্টি। এসবের সাথে তোমার কী সম্পর্ক?
যে দলটা লাইব্রেরি আর ট্রেজার খুঁজে বের করেছে, আমি সেই দলের নেতা, মৃদু হাসল পিট। লেডি ফ্ল্যামবোরোকেও আমি খুঁজে পেয়েছি। টানেলে আমারই সাথে গোলাগুলিতে মারা গেছে আখমতের ডান হাত, সুলেমান। দুঃখিত, এবারে তোমার মরণ এসে গেছে।
তুই মরার আগে নয়! বলেই লাফ দেয়ার ভঙ্গিতে নিচু হলো রবার্ট, রিভলভার ধরা হাতটা লম্বা করল পিটের দিকে।
তৈরি ছিল পিট। দেয়াল থেকে আগেই একটা তলোয়ার নিয়েছে ও। ইতোমধ্যে মাথার ওপর তুলেও ফেলেছে। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে নামিয়ে আনল সেটা।
গুলি হলো। মাত্র এক মিটার দূর থেকে পিটের মাথা লক্ষ্য করে দুহাতে ধরা রিভলভারের ট্রিগার টেনেছে রবার্ট। ঢালে লেগে পিছলে গেল বুলেট। পরমুহূর্তে বিকট আর্তনাদ বেরিয়ে এল তার গলা চিরে। অবিশ্বাসে বিস্ফারিত চোখে কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন জোড়া হাতের দিকে তাকিয়ে আছে সে, ছিটকে খানিকটা ওপরে উঠে এসেছে। সেগুলো।
শূন্যে ডিগবাজি খেয়ে নিচে নামলে জোড়া হাত, এখনও এক হয়ে আছে, দুই তালুর মাঝখানে আটকে রয়েছে রিভলভারটা। লাইমস্টোন মেঝেতে পড়ার পরও দুটো হাত আলাদা হলো না।
রবার্টের গলা ফাটানো চিৎকারে চেম্বারে টেকা দায় হয়ে উঠল। ধীরে ধীরে হাঁটু দুটো ভাঁজ হলো তার বিকৃত চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে হাত দুটোর দিকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ওগুলো এখন আর তার শরীরের অংশ নয়।
মেঝেতে হাঁটু গেড়ে থাকল রবার্ট, এদিক-ওদিক দুলছে। ধীরে ধীরে মুখ তুলে পিটর দিকে কাতাল সে। চোখে ঢুলু ঢুলু দৃষ্টি।
এটা কেন? ফিসফিস করে জানতে চাইল সে। একটা বুলেট নয় কেন?
তোমাকে দিয়ে ছোট্ট একটা ঋণ শোধ করানো হলো, বলল পিট। গাই রিভাসের কথা মনে পড়ে?
রিভাস তোর পরিচিত?
মাথা নাড়ল পিট। তার বন্ধুদের কাছে শুনছি, কীভাবে তুমি তাকে কষ্ট দিয়েছ। শুনেছি, আত্মীয়স্বজনরা জানত না যে তারা শুধু তার চামড়াটুকু কবর দিচ্ছে।
বন্ধু? বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল রবার্ট।
আমার নয়, আরেক ভদ্রলোকের, যিনি হোয়াইট হাউসে বাস করেন, ঠাণ্ডা সুরে বলল পিট। আরেকবার হাতঘড়ির ওপর চোখ বুলালো তারপর তাকাল রবার্ট ক্যাপেসটারর দিকে। লোকটার করুণ পরিণতি দেখে বিন্দুমাত্র সহানুভূতি জাগল না মনে। দুঃখিত, জায়গাটা পরিষ্কার করার কাজে তোমাকে আমি সাহায্য করতে পারছি না। আমাকে কেটে পড়তে হবে। ঘুরল পিট, পা বাড়াল এগজিট টানেলের দিকে।