ধীরে ধীর শরীরের দুপাশে নেমে এল টপিটজিনের হাত দুটো। তার মুখ লালচে হয়ে উঠল উত্তেজনায়।
কী বললে? আলেকজান্ডারের কফিন? সত্যি ওটার অস্তিত্ব আছে?
অবশ্যই আছে। শুধু তাই নয়, আলেকজান্ডারের দেহাবশেষ দেখাতে পারি তোমাকে। যদি ভয় না পাও, আমি তোমার গাইড হতে রাজি আছি।
ভ্রু কুঁচকে পিটের দিকে তাকিয়ে থাকল টপিটজিন। জনতার দিকে পেছন ফিরে রয়েছে সে, আলখেল্লার ভেতর থেকে রিভলভারটা বের করে আস্তিনের একটা পকেটে রাখল ভক্তরা জানে, আধ্যাত্মিক শক্তিই রক্ষা করবে তাকে, তাদের আযটেক অবতার সাথে কোনো রকম অস্ত্র রাখেন না। অপর হাতে স্মোক বমটা শক্ত করে ধরল সে।
যদি ভেবে থাকো আমার কোনো ক্ষতি করবে, ভুলে যাও। টানেলে আর কেউ যদি থাকে, দেখামাত্র প্রথমে তোমার শিরদাঁড়ায় গুলি করব আমি।
চেহারায় কৃত্রিম গোবেচারা ভাব ফুটিয়ে পিট বলল, তোমার ক্ষতি করে আমার কী লাভ? ভেবেছে জানি না, তোমার ক্ষতি হলে মেক্সিকান জনতা আমাকে টুকরো টুকরো করবে?
প্রকৌশলীরা কোথায়, টানেলে যারা কাজ করছিল?
সবাইকে ডেকে নেয়া হয়েছে নদীর ধারে।
কথাটা সত্যি বলে বিশ্বাস করল টপিটজিন।
তোমার শার্ট ভোলো, আমাকে দেখাও বগলের নিচে বা শোল্ডার ব্লেডের মাঝখানে কিছু লুকিয়ে রখেছ কি না।
এত লোকের সামনে?
যা বলছি করো, ধমক দিল টপিটজিন। বুট দুটোও খুলবে।
কাঁধ ঝাঁকিয়ে তাই করল পিট। লুকানো ট্রান্সমিটার বা অস্ত্র, কিছুই টপিটজিনের চোখে পড়ল না।
মাথা ঝাঁকাল সে। শ্যাফটের প্রবেশমুখের দিকে ইঙ্গিত করল। তুমি আগে থাকো, আমি অনুসরণ করব।
ডামিটা ভেতরে বয়ে নিয়ে গেলে তুমি কিছু মনে করবে? অস্ত্রগুলো সত্যি রোমান যুগের।
ভেতরে ঢোকার পর একপাশে নামিয়ে রাখবে ওগুলো, অনুমতি দিল টপিটজিন। পিটের দিকে পেছন ফিরে উপদেষ্টাদের সঙ্কেত দিল সে, জানাল সব ঠিক আছে।
কাপড়চোপড় ঠিকঠাক করে নিয়ে তৈরি হলো পিট। ডামি থেকে অস্ত্রগুলো খুলে নিয়ে শ্যাফটের ভেতর ঢুকল।
ছাদটা দুমিটারের চেয়ে কম উঁচু, হাঁটার সময় মাথা নিচু করে রাখতে হলো পিটকে। বর্শা আর তলোয়ারটা টানেলের দেয়াল ঘেঁষে নামিয়ে রাখল ও, শুধু ঢালটা সাথে থাকল। মাথার ওপর আড়াল হিসেবে ধরে রাখল সেটাকে, যেন ভয় করছে ছাদ থেকে পাথর খসে পড়তে পারে।
ব্যাপারটা দেখেও গুরুত্ব দিল না টপিটজিন। .৩৫৭ ম্যাগনাম হ্যান্ডগানের একটা বুলেটের সামনে ঢালটা একটা পাতলা কাগজ ছাড়া আর কী।
টানেলের মেঝে প্রথম বারো ফুট চালু হয়ে নেমে গেছে। ছাদ থেকে ঝুলে আছে খানিক পর পর একটা করে ফ্লাডলাইট। আর্মি প্রকৌশলীরা। দক্ষতার সাথে পরিচ্ছন্ন কাজ করেছে, মেঝে ও দেয়াল প্রায় সমতল ও মসৃণ। হাঁটতে কোনো অসুবিধা হলো না ওদের। তবে ভাপসা একটা গন্ধ আছে বাতাসে। আর পায়ের চারধারে উড়ছে ধুলো।
.
ছবি আর শব্দ রিসিভ করছেন, মি. প্রেসিডেন্ট? জিজ্ঞেস করলেন জেনারেল কার্টিস চ্যান্ডলার।
সব ঠিক আছে, জেনারেল। ওদের কথাবার্তা পরিষ্কার শ্যোনা যাচ্ছে। তবে টানেলে ঢোকার পর ক্যামেরার নাগাল থেকে বেরিয়ে গেছে।
কফিন চেম্বারে আবার ওদেরকে দেখতে পাব আমরা, ওখানেও আমাদের লুকানো ক্যামেরা আছে।
পিটের সাথে যোগাযোগের কী ব্যবস্থা করা হয়েছে? মার্টিন ব্রোগানের প্রশ্ন।
প্রাচীন ঢালের ভেতর ঢোকানো আছে মাইক্রোফোন আর ট্রান্সমিটার।
উনি কি সশস্ত্র?
সিচ্যুয়েশন রুমে নেমে এল নিস্তব্ধতা। উপস্থিত সবার দৃষ্টি সরে গেল দ্বিতীয় মনিটরে, গনগোরা হিলের নিচের একটা সদ্য খোঁড়া চেম্বার দেখা যাচ্ছে সেটায়। ক্যামেরা তাক করা রয়েছে চেম্বারের মাঝখানে রাখা সোনালি ক্যাসকিটের ওপর।
ও আবার কে? কঠিন সুরে জিজ্ঞেস করলেন ডেইল নিকোলাস।
চোখ সরু হয়ে গেল ব্রোগানের। কার কথা বলছেন?
টানেলে ঢোকার প্রবেশমুখে তাক করে থাকা ক্যামেরার ছবি প্রথম মনিটরে এখনও ফুটে রয়েছে, সেটার দিকে হাত তুললেন ডেইল নিকোলাস। পরিষ্কার দেখলাম ক্যামেরার সামনে দিয়ে একটা ছায়া সরে গেল। টানেলে ঢুকেছে কেউ।
আমি কিছু দেখিনি, বললেন জেনারেল মেটকাফ।
আমিও দ্বিতীয় মনিটরের দিকে তাকিয়েছিলাম, বললেন প্রেসিডেন্ট। সামনে ঝুঁকে মাইক্রোফোনের বোতামে চাপ দিলেন তিনি।
জেনারেল কার্টিস?
মি, প্রেসিডেন্ট, তাড়াতাড়ি সাড়া দিলেন জেনারেল।
ডেইল নিকোলাস বলছেন, পিট ও টপিটজিনের পিছু পিছু আরেকজন কেউ টানেলে ঢুকেছে।
আমার এইডদের একজনও তাই বলছে।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলেন ডেইল নিকোলাস, আমি তাহলে ভূত দেখিনি।
কোনো ধারণা আছে, কে হতে পারে লোকটা?
যে-ই হোক, বললেন জেনারেল কার্টিস, উদ্বেগ ফুটে উঠল তার চেহারায়, লোকটা আমাদের কেউ নয়।
.
৭৬.
তুমি দেখছি খোঁড়াচ্ছ, বলল রবার্ট। কেন?
ও কিছু না, সামান্য চোট পেয়েছি, বলল পিট। বিনিময়ে রক্ষা পেয়েছে দু’জন প্রেসিডেন্ট আর মহাসচিব হে’লা কামিলের প্রাণ।
পিটের প্রতিটি নড়াচড়ার ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে রবার্ট। মনে প্রশ্ন ও কৌতূহল থাকলেও, এ প্রসঙ্গে আলোচনাটা বাড়তে দিল না সে।
আরও খানিকটা সামনে চওড়া হয়ে গেছে টানেল, মিশেছে বৃত্তাকার একটা গ্যালারিতে। চারটে পায়ার ওপর রয়েছে সোনালি কফিনটা, পায়াগুলো দেখতে অনেকটা চাইনিজ ড্রাগনের মতো। মাথার ওপর থেকে আলো পড়ায় সোনালি রং চকচক করছে। একদিকে দেয়ালে কাত করে রাখা হয়েছে রোমান সৈনিকদের বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র।