প্ল্যাটফর্ম নিচে নামাতে বলল টপিটজিন। উপদেষ্টারা কথা বলতে চাইলেও, ইশারায় তাদের থামিয়ে দিল সে। প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করল একা, স্পটলাইটের উজ্জ্বল আলো উদ্ভাসিত করে রাখল তাকে। আলখেল্লার নিচে তার পা দেখা যাচ্ছে না, মনে হলো উড়ে হলেছে সে।
মাপা পদক্ষেপে এগোল টপিটজিন, কোল্ট পাইথন ৩৫৭ রিভলভারটা আলখেল্লার ভেতর বেল্টে রয়েছে, হাত দিয়ে ছুঁয়ে আছে সেটা। আরেক হাতে রয়েছে একটা স্মোক বম্ব।
কাছাকাছি পৌঁছে টপিটজিন দেখল রোমান সৈনিক জ্যান্ত নয় বা রোমান সৈনিকও নয়, ওটা একটা ম্যানিকিন, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এ ধরনের অনেক ডামি সাজিয়ে রাখতে দেখেছে সে। ডামির মুখে স্থির হয়ে আছে বিদ্রুপাত্মক এক চিলতে হাসি, রং করা চোখে নিষ্প্রাণ দৃষ্টি, প্লাস্টার করা হাত আর মুখ নিস্প্রভ।
ডামিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কৌতূহল আরও বেড়ে গেল টপিটজিনের, তবে প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্য বুঝতে না পারায় অস্বস্তিও বোধ করছে সে। এরই মধ্যে ঘাম ফুটে উঠেছে তার কপালে।
তারপর একটা ঝোঁপের আড়াল থেকে সিধে হলো দীর্ঘদেহী এক লোক। তার পায়ে রেঞ্চ বুট, পরনে ডেনিম আর সাদা টার্টল নেক সোয়েটার। এগিয়ে এসে আলোর বৃত্তে দাঁড়াল সে। ঘন সবুজ চোখ তার, আর্কটিক বরফের মতো ঠাণ্ডা দৃষ্টি। ম্যানিকিনের ঠিক পাশে দাঁড়িয়েছে সে।
তার কৌতূহলের জয় হয়েছে ভেবে খুশি হয়ে উঠল টপিটজিন। ইংরেজিতে কথা বলল সে, ডামি আর আলোর আয়োজন থেকে কী পেতে চাও তোমরা?
তোমার মনোযোগ।
দেখা যাচ্ছে সফল হয়েছ। এবার বলো, কী বরতে চায় তোমার সরকার?
তোমাকে দেখতে ভীষণ বমিজাগানিয়া লাগছে।
দপ করে জ্বলে উঠল টপিটজিনের চোখ দুটো। সরাসরি ঈশ্বরের সাথে যে অবতার কথা বলেন, তাঁর প্রতি অসম্মান দেখিয়ে বহুলোক নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে।
আমার নাম, পিট- ডার্ক পিট। আমি আমেরিকার যোগ্য নাগরিক। তুই ব্যাটা গোল্লায় যা!
মুখ সামলে কথা বলল।
কথা যদি বলতেই হয়, তবে শোনো, পিট বলে, তোমার এই অহেতুক ভাব বাদ দাও। তোমার এবং তোমার পয়গম্বর ভাইটির কথা জানি আমরা। লেডি ফ্ল্যামবোরোকে হাইজ্যাক করে আরোহীদের খুন করার জন্য যাকে তোমরা ভাড়া করেছিলে, সে কী করেছে শুনবে? হেসে উঠল পিট। যে সাম্রাজ্য তোমরা গড়ে তুলতে পারোনি, সেই সাম্রাজ্যের ভাবি সম্রাট পল ক্যাপেসটারকে খুন করেছে সে।
আমার ভাই…,
পল ক্যাপেসটার মারা গেছে শব্দ দুটো উচ্চারণ করতে পারল না টপিটজিন।
তোমার কথা আমি বিশ্বাস করি না।
এখনও তাহলে জানো না? একটু অবাকই হলো পিট।
চব্বিশ ঘণ্টা হয়নি তার সাথে কথা হয়েছে আমার, জেদের সুরে বলল টপিটজিন। পল… আখমত ইয়াজিদ অবশ্যই সুস্থ শরীরে বেঁচে আছে।
তোমার ভাই তো ছদ্মবেশে রাজা, তাই না? লাশের ছদ্মবেশ নিয়ে আছে কি না, দেখলে বলতে পারবে?
এই সব মিথ্য কথা বলে তোমার সরকার কী করতে চাইছে?
ভালোই হলো, তুমি নিজে থেকে কথাটা তুললে, পিট বলল, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি। তোমার অনুসারীরা ডিপোজিটরি চেম্বারে একবার ঢুকলে সব তছনছ করে ফেলবে। মূল্যবান নকশা, দলিল, পাণ্ডুলিপি সব নষ্ট হবে। চুরি হতে শিল্পকর্মগুলো…
আমি যা বলি, আমার অনুসারীরা তো শোনে।
তাহলে ওদের বলো, সবাই যেন সীমান্ত পেরিয়ে মেক্সিকোয় ফিরে যায়। মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে বলছি, ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনায় বসতে হলে তোমাকে কথা দিতে হবে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিকে একটা সাইন্টিফিক প্রজেক্ট হিসেবে গণ্য করবে তুমি।
তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে পিটর মুখে কী যেন খুঁজল টপিটজিন। টান টান করল শিরদাঁড়া। লম্বায় পিটের চেয়ে দশ সেন্টিমিটার ছোট সে। ফণা তোলা কেউটের মতো মৃদু দুলছে শরীরটা।
কথা দিতে হবে, তাই না? কর্কশ স্বরে হেসে উঠল সে। আমেরিকানদের স্পর্ধা দেখে অবাক হচ্ছি আমি। শর্ত তো যা দেয়ার আমি দেব। পাঁচ লাখ লোক নিয়ে সীমান্ত পেরিয়েছি আমি, আমেরিকান সেনাবাহিনী ঠেকাতে পারেনি। সমস্ত ভালো তাস এখন আমার হাতে। মিসরীয় গুপ্তধন আমার। গোটা সাউথওয়েস্টার্ন স্টেটস আমার হতে যাচ্ছে। আমার ভাই পল শাসন করবে মিসরকে। আমাদের ছোট ভাইও একদিন ক্ষমতা দখল করবে ব্রাজিলে। আমেরিকানদের জানিয়ে দাও, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি মেক্সিকোয় তুলে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। বাধা দেয়া হলে পাঁচ লাখ লোককে লেলিয়ে দেব আমি। আগুন ধরিয়ে দেব লাইব্রেরিতে।
বলতে বাধ্য হচ্ছি, তোমার চিন্তাভাবনা অত্যন্ত উন্নাসিক, ক্যাপেসটার। নিজেকে কি নেপোলিয়ন ভাবব নাকি?
পিটের শান্ত, নিরুদ্বিগ্ন হাবভাব লক্ষ করে অস্বস্তিবোধ করছে টপিটজিন। গুডবাই, মি, পিট। ফালতু আলাপ করার সময় নেই আমার হাতে। চিন্তা কোরো না, তোমার ছাল ছাড়িয়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে হোয়াইট হাউসে।
দুঃখের বিষয়, আমার চামড়ায় কোনো উল্কি নেই-কেউ চিনবে ওটাকে।
টপিটজিনের অস্বস্তি বাড়ল আরও। এমন নির্লিপ্ত তাচ্ছিল্যের সাথে কেউ তার সাথে কথা বলে না। পিটের দিকে পেছন ফিরল সে, নিচে দাঁড়ানো জনসমুদ্রের উদ্দেশে হাত দুটো তুলতে শুরু করল। আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি লুট করার সময় হয়েছে।
বিশাল সম্পদ, সব কিছুর মালিক তুমি হতে যাচ্ছ, জনতার মধ্যে বিলিয়ে দেয়ার আগে নিজের চোখে একবার দেখবে না? আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সোনার কফিন রয়েছে ওখানে। রয়েছে….