গুড লর্ড! আঁতকে উঠলেন ডগলাস ওটস। প্রথমে শুধু দেখছি মহিলা আর শিশুদের পাঠিয়েছে।
কেউ কোনো কথা বললেন না, কারণ মনিটরে দেখা যাচ্ছে ব্রিজের ওপর ব্যারিকেডের দিকে এগোচ্ছে বিশাল একটা মিছিল। তাদের সামনে বড় বড় ট্যাংকে আর আর্মারড কার, পথরোধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
জেনারেল, ওদের মাথার ওপর ফাঁকা গুলি করতে পারেন? জিজ্ঞেস করলেন প্রেসিডেন্ট।
ইয়েস, স্যার, জবাব দিলেন জেনারেল কার্টিস।
ব্ল্যাঙ্ক রাউন্ড লোড করার জন্য আগেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ফাইন, জয়েন্ট চিফস-এর জেনারেল মেটকাফ বললেন, কার্টিস তার কাজ বোঝে।
এইডদের একজনের দিকে ফিরলেন জেনারেল কার্টিস। এক পশলা ফাঁকা গুলি করার নির্দেশ দাও।
এইড, একজন মেজর, রেডিও রিসিভারে গর্জে উঠল, ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার।
বিকট আওয়াজের সাথে রাতের আকাশে লাল শিখার একটা চাদর উড়ল। কানের পর্দা ফাটানো কামানের শব্দগুলো ফিরে এল পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে। শকওয়েভে নিভে গেল অনেক মোমবাতি। বিরতিহীন আওয়াজে কেঁপে উঠল উপত্যকা।
মাত্র দশ সেকেন্ড পর নির্দেশ হলো সিজ ফায়ার।
নিশ্চয় অনারণ্যে নেমে এল অটুট নিস্তব্ধতা। পরমুহূর্তে সম্মিলিত নারীকণ্ঠের তীক্ষ্ণ চিৎকার শোনা গেল, শুরু হলো শিশুদের গলা ফাটানোর প্রতিযোগিতা। অনেকেই আতঙ্কে শুয়ে পড়েছিল, কোথাও ব্যথা লাগেনি বা রক্ত ঝরছে না দেখে আবার তারা দাঁড়াল।
সীমান্তের ওপারে হঠাৎ জ্বলে উঠল সার সার স্পটলাইট। সাদা আলখেল্লা পরা কিছু লোক কাঁধে একটা প্ল্যাটফর্ম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যিশুর মতো হাত তুলে ছোট্ট প্ল্যাটফর্মে স্থির হয়ে রয়েছে টপিটজিন, লাউডস্পিকারের মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে তার ভাষণ। হোক গুলি, কিন্তু প্রিয় শিষ্যরা আমার পবিত্র আধ্যাত্মিক শক্তিবলে তোরা কেউ আহত হবে না। এক ফোঁটা রক্ত, দেখাতে পারো কেউ। কেউ কি তোমরা আহত হয়েছ? আমার ওপর বিশ্বাস রাখো, মা ও বোনেরা।
উন্মাদিনীর মতো হেসে উঠল অনেক মহিলা। দুলে উঠল জনসমুদ্র।
কার্টিসের আর কোনো উপায় থাকল না, বিষণ্ণ কণ্ঠে বললেন ডেইল নিকোলাস।
মাথা ঝাঁকালেন জেনারেল মেটক্যাফ। হ্যাঁ, সমস্ত দায়িত্ব এখন ওকেই কাঁধে নিতে হবে।
.
থমথমে চেহারা নিয়ে ব্লাফের মাথায় দাঁড়িয়ে আছেন জেনারেল কার্টিস। সীমান্ত পেরিয়ে মেক্সিকানদের দ্বিতীয় স্রোতটা হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকছে। প্রথম স্রোতটা এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে ট্যাংক বহরের কাছে।
স্যার, গুলি করার অর্ডার? একজন এইড জিজ্ঞেস করল।
অসহায় শিশুদের কান্না শুনতে পাচ্ছেন জেনারেল, দেখতে পাচ্ছেন আদর করে মায়েরা চুমো খাচ্ছে তাদের। মা ও শিশু, দু’জনেই হাঁ করে তাকিয়ে আছে ট্যাংকার কামানগুলোর দিকে।
জেনারেল, আপনার অর্ডার? প্রায় চিৎকার করে উঠল এইড।
বিড়বিড় করে কী যেন বললেন জেনারেল, কিন্তু মেক্সিকানদের মহা হৈচৈ-এর মধ্যে এইড তা শুনতে পেল না।
স্যার! দুঃখিত, স্যার, আমি কী শুনলাম … ফায়ার?
ঘাড় ফিরিয়ে তাকালেন জেনারেল, চোখ দুটো চকচক করছে। ওদের আসতে দাও।
স্যার?
আমার অর্ডার তুমি শুনতে পেয়েছে, মেজর। শিশু হত্যাকারী হিসেবে নাম কেনার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। ফর গডস সেক, ভুলে এমনকি ডোন্ট ফায়ার শব্দ দুটো উচ্চারণ কোরো না। হাঁদা কোনো প্লাটুন কমান্ডার ভুল করতে পারে।
দ্রুত মাথা ঝাঁকায়ে ব্যস্ত সুরে মাইক্রোফোনে কথা বলল এইড।
মাফ করবেন, মি. প্রেসিডেন্ট, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বললেন জেনারেল কার্টিস, জানি, কমান্ডার ইন-চিফ-এর সরাসরি নির্দেশ অমান্য করে ক্যারিয়ারের বারোটা বাজিয়েছি। কিন্তু সব দিক বিবেচনা করে আমি বুঝেছি… চিন্তা করবেন না, জেনারেলকে থামিয়ে দিয়ে বললেন প্রেসিডেন্ট। সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন আপনি।
জেনারেল মেটক্যাফের দিকে ফিরলেন তিনি। সিনিয়রিটি তালিকায় জেনারেল কার্টিস কোথায় রয়েছেন আমি জানতে চাই না, দেখতে চাই আরেকটা স্টার পেয়েছেন উনি।
ওটা সত্যিই ওর পাওনা হয়েছে। আমি আপনার সাথে একমত, মি, প্রেসিডেন্ট।
কার্টিস আর আমি, মৃদু স্বরে বললেন প্রেসিডেন্ট। কোরিয়ায় একসঙ্গে লড়েছি। কোনো দিনও আর নারী, শিশুদের ওপর গুলি বর্ষণ করব না।
জেনারেল মেটক্যাফে অবশ্য খারাপ দিকটাও দেখলেন। এখন তো আমেরিকার জনতার কাছে আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে।
মাথা ঝাঁকালেন প্রেসিডেন্ট।
তবে মানবিক দিকটা বিচার করে দেখতে হবে তাদেরও। ঠিকমতো ব্যাখ্যা করতে পারলে, শুধু দেশে নয়, ল্যাটিন আমেরিকাতেও আপনার জনপ্রিয়তা ও গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে, মি. প্রেসিডেন্ট।
অ্যালান মারসিয়ার বললেন, দাঙ্গা বেঁধে যাবার আগে মেক্সিকান পুরুষগুলোকে ঘিরে ফেলবে আমাদের বাহিনী, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দেয়া হবে ওদের।
এটা কথা বোধ হয় আমরা সবাই ভুলে যাচ্ছি।
ইয়েস, জেনারেল? জেনারেল মেটক্যাফের দিকে ফিরলেন প্রেসিডেন্টভ।
আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি। শিল্পকর্মগুলো লুট করে দেবে টপিটজিন।
বিদেশি একজন অতিথির দিকে ফিরলেন প্রেসিডেন্ট, ভদ্রলোক টেবিলের আরেক প্রান্তে চুপচাপ বসে আছেন।
সিনেটর, তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন তিনি। দেখতেই পাচ্ছেন, আমেরিকান সৈনিকরা নিরুপায়। প্লিজ, আপনি কি বিকল্প প্ল্যানটা সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করবেন? উপস্থিত সবার দিকে পালা করে তাকালেন তিনি।