এক লোকের সাথে অল্প সময়ের জন্য দেখা হয়েছিল তার, সেই লোকটাই তার নিয়তি নির্ধারণ করে দিয়েছে। লম্বা, ঘন সবুজ চোখের সেই লোকটা ঠোঁটে ব্যঙ্গের হাসি।
ঘৃণায় তার সারা শরীর কেঁপে উঠল। ডার্ক পিট তোমাকে আমি… এর বেশি কিছু ভাবতে পারল না সুলেমান আজিজ। মারা গেল সে, তবে একটা আশা নিয়ে। ইবনেকে সব বলে গেছে সে, তার হয়ে ইবনেই করবে যা করার।
.
৭৩.
লেদার আর্মচেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে টেলিভিশন মনিটরগুলোর দিকে তাকালেন প্রেসিডেন্ট। প্রথম শ্রেণীর নেটওয়ার্ক-এর টিউন করা হয়েছ তিনটে, অপরটা সরাসরি রোমার একটা আর্মি কমিউনিকেশন ট্রাক থেকে খোরাক সংগ্রহ করছে। ক্লান্তি বোধ করছেন তিনি, তবে চকচকে চোখে ফুটে আছে তীব্র দৃষ্টি। পালা করে এক মনিটর থেকে আরেক মনিটরে তাকাচ্ছেন।
বিশ্বাস করা কঠিন এত অল্প জায়গায় এত বেশি লোক জড় হতে পারে, মৃদুকণ্ঠে বললেন তিনি।
ওদের খাবার প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সিআইএ তাজা একটা রিপোর্ট থেকে মুখ তুললেন জুলিয়াস শিলার। খাবার পানির সঙ্কট চলছে। প্রায় অচল হয়ে পড়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা।
আমার ধারণা আজ রাতেই। রুদ্ধশ্বাসে বললেন ডেইল নিকোলাস। টপিটজিন আর সময় নেবে না।
কত লোক দেখা যাচ্ছে? জানতে চাইলেন প্রেসিডেন্ট। সংখ্যাটা আসলে কত হতে পারে?
এরিয়ার ফটোগ্রাফ থেকে কম্পিউটর মাথা শুনেছে-চার লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার, জবাব দিলেন জুলিয়াস শিলার।
এক কিলোমিটারেরও কম চওড়া একটা করিডর ধরে হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসবে। গম্ভীর হলেন ডেইল নিকোলাস।
ড্যাম দ্যাট মার্ডারিং বাস্টার্ড। হাঁটুর ওপর মৃদু ঘুষি মেরে বললেন প্রেসিডেন্ট। হারামজাদা বুঝতে পারছে না, ধাক্কাধাক্কিতেই মারা যাবে কয়েক হাজার লোক। আর ডুবে যে কত মরবে….
বেশির ভাগ মহিলা আর শিশু, ডেইল নিকোলাস যোগ করলেন।
এখনও দেরি হয়ে যায়নি, মার্টিন ব্রোগান বললেন, ওকে আমরা শেষ করার কথা ভাবতে পারি।
কিন্তু আপনার আততায়ীকে ওর যথেষ্ট কাছাকাছি পৌঁছাতে হবে তো, বললেন ডেইল নিকোলাস। তারপর কী ঘটবে? ওর ভক্তরা ছিঁড়ে টুকরো করে ফেরবে আপনার লোককে।
চারশো মিটার দূরে থেকে হাই পাওয়ারড রাইফেলের কথা বলছি আমি।
জুলিয়াস শিলার মাথা নাড়লেন। এটা কোনো সমাধান নয়। উঁচু কোথা থেকে গুলি করা হয়েছে, বুঝতে পারবে ওরা। টের পেয়ে যাবে, আমরা দায়ী। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বা মিছিলের বদলে জেনারেল কার্টিসকে সামলাতে হবে বিশাল উন্মত্ত জনতাকে। সত্যিকার যুদ্ধের মোকাবিলা করতে হবে আমাদের।
আমি একমত, ডেইল নিকোলাস জানালেন। আমেরিকান নাগরিক ও সৈনিকেঁদের বাঁচাবার জন্য মেক্সিকানদের ওপর ফায়ার ওপেন করা ছাড়া জেনারেল কার্টিসের আর কোনো উপায় থাকবে না।
হাঁটুর ওপর আবার মৃদু ঘুষি মেরে প্রেসিডেন্ট জানতে চাইলেন, পাইকারি হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কোনো সমাধান নেই?
আছে। ওদেরকে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে সীমান্ত পেরোতে দেয়া।
আর যদি আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জোর হাতে তুলে দিই? জিজ্ঞেস করলেন প্রেসিডেন্ট। তাতে অন্তত লাইব্রেরির ওপর টপিটীজনের নোংরা হাত পড়বে না।
টপিটজিন তো আসলে লাইব্রেরিটাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে, মার্টিন ব্রোগান বললেন। আমাদের ইন্টেলিজেন্স সোর্স রিপোর্ট করেছে, এই একই ধরনের জন-সমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে সে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া আর আরিজোনা সীমান্তে।
চারটে টেলিফোন, একটা বেজে উঠল। রিসিভার তুলে শুনলেন ডেইল উইলপোর্স। জেনারেল কার্টিস মি. প্রেসিডেন্ট। মনিটরে আসছেন তিনি।
প্রায় সাথে সাথে মনিটরে ফুটে উঠল জেনারেল কার্টিসের ছবি। বয়স পঞ্চাশ, বাঘের মতো চেহারা, মাথা জোড়া প্রকাণ্ড চকচকে টাক। নীল চোখে কঠোর দৃষ্টি।
গুড মর্নিং, জেনারেল, বললেন প্রেসিডেন্ট। দুঃখের বিষয় আপনাকে আমি দেখতে পেলেও, আপনি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন না। এদিকে কোনো ক্যামেরা নেই।
বুঝতে পারছি, মি. প্রেসিডেন্ট।
পরিস্থিতিটা কী?
এইমাত্র তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বেচারা মেক্সিকানদের জন্য আশীর্বাদ বলা যায়। পানির সঙ্কট কিছুটা ঘুচবে, ধুলো থাকবে না।
ওদিক থেকে কোনোভাবে প্ররোচিত করার চেষ্টা হয়েছে?
আপত্তিকর স্লোগান শুনছি, ব্যানারের লেখাগুলোও গা জ্বালিয়ে দেয়ার মতো, তবে কোনো ভায়োলেন্সের লক্ষণ এখনও দেখছি না।
হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে লোকজন, এমন ঘটনা দুএকটা ছোখে পড়েনি?
না, স্যার। উৎসাহ বরং প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে। সবার ধারণা ওদের আধুনিক আটেক দেবতা বৃষ্টি আনিয়েছে। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে নিজের বুকে চাপড় মারতে মারতে সেই দাবি করছে টপিটজিন।
আমার উপদেষ্টাদের ধারণা, জনতাকে নিয়ে আজ রাতেই সীমান্ত পেরোবে সে।
আমার ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টও তাই বলে। খানিক ইতন্তত করে জেনারেল কার্টিস : চ্যান্ডলার জানতে চাইলেন, স্যার, আগের নির্দেশই কি বহাল থাকবে? যেকোনো মূল্যে ওদেরকে হটিয়ে দেব আমি?
যতক্ষণ না নতুন নির্দেশ দিই, জেনারেল।
আপনি স্যার, আমাকে উভয় সঙ্কটে ফেলে দিয়েছেন। নির্দেশ দিলেও আমার লোকেরা নিরীহ শিশু আর মহিলাদের ওপর নির্বিচারে গুলি করবে কি না আমি জানি না।
নিয়তি আপনাকে এই ভূমিকা দান করেছে, প্রেসিডেন্ট বললেন। কিন্তু রোমায় যদি ওদেরকে ঢুকতে দেয়া হয়, মেক্সিকানরা মনে করবে বিনা বাধায় অন্যান্য সীমান্ত দিয়েও অনায়াসে ঢুকতে পারে তারা। তখন কয়েক মিলিয়ন মেক্সিকানকে সামলাতে হবে আমাদের।