বুলেট খেতে রাজি, চিন্তিত সুরে বলল লুইস, কচুকাটা হতে আপত্তি আছে।
.
কাছাকাছি ক্যাম্পে ফিরে গেল প্রকৌশলীরা। তারা অদৃশ্য হতেই কর্নেলের দিকে ফিরল পিট। আপনাদের ক্যামোফ্লেজ সত্যি দারুণ। গোটা টিমের মধ্যে আমি মাত্র তিনজনকে চিনতে পেরেছি।
আমার রীতিমতো ভৌতিক লাগছিল পরিবেশটা, বলল লিলি। জানি আপনারা সবাই চারপাশে আছেন অথচ কাউকে দেখতে পাচ্ছি না!
নির্ভেজাল লজ্জা পেল কর্নেল, কাঁধ দুটো আড়ষ্ট হয়ে গেল।
সত্যি নিখুঁত, কর্নেলের হাত মুচড়ে দিয়ে বললেন অ্যাডমিরাল।
এখন শুধু বেচারা ক্যাপটেনের রিপোর্ট জেনারেল কার্টিস গিললে হয়, মন্তব্য করল জিওর্দিনো।
যদি শোনার মতো সময় দিতে পারেন, বলল পিট। তাঁর সামনে লাখ খানেক শত্রু নদী পেরোবার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছে। আমাদের সাথে লাগালাগি করার সময় কোথায় তার?
রোমান তলোয়ারটা নিয়ে কী করা হবে? আবার সেটা মাথার ওপর খাড়া করে ধরল কর্নেল।
যেখান থেকে এসেছে সেখানে ফিরে যাবে, আঙ্কেল স্যামের মিউজিয়ামে।
ঝট করে পিটের দিকে তাকাল কর্নেল, চোখ বিস্ফারিত।
এটা আপনি ট্রেঞ্চে পাননি?
না।
মাই গড! আপনি দেখছি আমাকেও বোকা বানিয়েছেন।
পিট ভাব দেখাল, কথাটা নে শুনতে পায়নি। সামান্য হেঁটে চূড়ার ওপর উঠে এল ও, ঢাল ছাড়িয়ে মেক্সিকোর দিকে নেমে গেল ওর দৃষ্টি। ষোলো ঘণ্টা আগে যেমন দেখেছিল, তাবুর সংখ্যা আজ তার দ্বিগুণ হয়েছে। কাল রাতে, ভাবল ও। ঝড়ের লাগাম কাল রাতে ছাড়বে টপিটজিন। বাঁ দিকে ঘুরল ও, একটু বেশি উঁচু গনগোরা হিলের দিকে তাকাল।
চারদিন আগে লিলি যেখানে আন্দাজ করেছিল, ঠিক সে-জায়গাতেই মাটি খুঁড়ছে আর্মি প্রকৌশলীরা। দুটো আলাদা জায়গায় খুঁড়ছে ওরা। মাথায় ঝুলপাথরের ছাদ নিয়ে একটা টানেল আগে থেকেই আছে, সেটার বন্ধ মুখ থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। দ্বিতীয়টা খোলা একটা মানি, পাহাড়ের পাশে গভীর একটা গর্ত, ভেতরে ঢোকার জন্য আবর্জনা পরিষ্কার ও পথটা চওড়া করা হচ্ছে। খুবই ঢিলে তলে এগোচ্ছে কাজ, কারণ বেশির ভাগ প্রকৌশলীকে সীমান্তে ডেকে নিয়েছেনে জেনারেল কার্টিস।
ঢাল বেয়ে নেমে এল পিট। থামল কর্নেলের সামনে। আপনার সেরা ডিমোলিশন এক্সপার্ট কে?
গোটা আর্মিতে সেরা এক্সপ্লাসিভ এক্সপার্ট জন ডিলিঞ্জার। কেন?
জবাব না নিয়ে পিট বলল, দুকিলোগ্রাম সি-সিক্স নাইট্রোগ্লিসারিন জেল চাই। আমার।
অবাক দৃষ্টিতে পিটকে দেখল কর্নেল। দুকিলো সি-সিক্স? দশ কিলোর একটা যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দেয়া যায়। কী চাইছেন আপনি জানেন? জানেন নাইট্রোজেন সিক্স শক-বিপজ্জনক?
আরও চাই অনেকগুলো স্পটলাইট, বলে গেল পিট। ওগুলো আমরা কোনো রক-কনসার্ট গ্রুপের কাছ থেকে ধার করতে পারব। স্পটলাইট, স্ট্রোবলাইট আর কান ফাটানো অডিও ইকুইপমেন্ট। এরপর লিলির দিকে ফিরল ও। তোমার কাজ হলো, একজন কাঠমিস্ত্রী জোগাড় করা, তাকে একটা বাক্স বানাতে হবে।
ফর গডস সেক, এসব দিয়ে কী করবে তুমি? কৌতূহলে হাঁপিয়ে উঠল লিলি।
সে তুমি বুঝবে না, গুঙিয়ে ওঠার সুরে টিটকারি মারল জিওর্দিনো।
পরে আমি ব্যাখ্যা করব, এড়িয়ে গেল পিট।
শুনে আমার পাগলামি মনে হচ্ছে, ভ্রু কুঁচকে বলল লিলি।
কমিয়ে বলেছে লিলি, ভাবল পিট। ওর প্ল্যানটা পাগলামিরও বেশি। তবে, আপাতত সবাইকে অন্ধকারে রাখতে হবে। ও যে মঞ্চে অভিনয় করতে চায়, সে কথা বলার সময় এখনও আসেনি।
.
৭২.
গায়ে ট্যাক্সি লেখা ভলভো গাড়িটা আলেকজান্দ্রিয়ার কাছাকাছি ইয়াজিদের প্রাসাদতুল্য ভিলার গাড়ি-পথে থামল। প্রেসিডেন্ট হাসানের ব্যক্তিগত নির্দেশে মিসরীয় আর্মি গার্ডরা পাহারায় রযেছে গেছে। গাড়িটা থেকে কাউকে নামতে না দেখে সতর্ক হয়ে উঠল তারা।
পেছনের সিটে বসে আছে সুলেমান আজিজ, তার চোখ আর চোয়ালে মোটা ব্যান্ডেজ। নীল সিল্কের আলখেল্লা পরে আছে সে, মাথায় ছোট আকারের লাল পাগড়ি। সান্টা ইনেজ দ্বীপ থেকে পালাবার পর আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরের একজন সার্জেনের হাতে দুঘণ্টার জন্য নিজেকে ছেড়ে দিয়েছিল সে। তারপর একটা প্রাইভেট জেট ভাড়া করে মহাসাগর পেরিয়ে চলে এসেছে শহরের বাইরে ছোট একটা এয়ারপোর্টে।
খালি চোখের কোটরে কোনো ব্যথা নেই, কাজ হয়েছে ওষুধে। তবে গুঁড়িয়ে যাওয়া চোয়াল নিয়ে কথা বলতে এখনও তার জান বেরিয়ে যাবার উপক্রম হয়। গোটা অস্তিত্বে আচ্ছন্ন, ঘুমঘুম ভাব থাকলেও তার মন আর মাথা আগের মতোই নির্দয় দক্ষতার সাথে কাজ করছে।
আমরা পৌঁছে গেছি, ড্রাইভারের সিট থেকে বলল ইবনে।
কল্পনার চোখে ইয়াজিদের ভিলাটা দেখতে পেল সুলেমান আজিজ, এত পরিষ্কারভাবে, যেন চক্ষুস্মান একজন লোক টিলার ভেতর দিয়ে হাটছে।
জানি, মৃদুকণ্ঠে বলল সে।
এ-কাজ আপনার না করলেও চলে, হযরত।
আর কোনো ভয় নেই আমার, আর কোনো আশা নেই, শান্ত গলায়, ধীর ধীরে বলল সুলেমান আজিজ, প্রতিটি শব্দ উচ্চারণ করতে নরকযন্ত্রণা ভোগ করল। এ আল্লাহরই ইচ্ছা।
দরজা খুলে নিচে নামল, ইবনে সুলেমানকে নামতে সাহায্য করল। গাড়ি পথ ধরে কয়েক পা সামনে এসে দাঁড় করাল তাকে।
আপনার পাঁচ মিটার সামনে গেট জনাব, থেমে থেমে, আবেগে বুজে আসা গলায় বলল। সুলেমান আজিজকে বুকে টেনে নিয়ে আলিঙ্গন করল সে।