আমরা কি কোনো সমস্যায় পড়েছি? ক্যাপটেনকে জিজ্ঞেস করল সে, খোশগল্পের সুরে।
মুখ ঝুলে পড়ল ক্যাপটেনের, তার সৈনিকরা স্থির হয়ে গেল। কয়েক পা সামনে বাড়ল সে, কর্নেলকে ভালো করে দেখল। কিন্তু এমন কোনো চিহ্ন চোখে পড়ল না যা দেখে পদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। কে আপনি? কড়া সুরে জিজ্ঞেস করল সে। কোন আউটফিটের?
কর্নেল মরটন হোলিস, স্পেশাল অপারেশনস ফোর্স।
ক্যাপটেন লুইস ক্রেনস্টোন, স্যার-চারশো পাঁচ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ন।
স্যালুট বিনিময় হলো। বাগিয়ে ধরা অটোমেটিক অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রকৌশলীদের দিকে ইঙ্গিত করল কর্নেল।
তুমি ওদেরকে স্ট্যান্ড-অ্যাট-রেস্ট-এর অর্ডার দিতে পারো।
আকাশ থেকে পড়া চেনা একজন কর্নেলকে কীভাবে গ্রহণ করবে, ঠিক বুঝতে পারল না ক্যাপটেন।
জিজ্ঞেস করতে পারি, কর্নেল স্পেশাল ফোর্সের একজন অফিসার এখানে কী করছে?
ওরা আর্কিলজিক্যাল সার্ভে চালাচ্ছে, আমরা লক্ষ রাখছি কেউ যাতে ওদেরকে বিরক্ত না করে।
আপনাকে মনে করিয়ে না দিয়ে উপায় নেই, স্যার, যে নিষিদ্ধ ঘোষিত মিলিটারি জোনে সিভিলিয়ানদের প্রবেশ করার অনুমতি নেই।
ধরো, যদি বলি, এখানে থাকার পূর্ণ অধিকার ওদের আছে?
দুঃখিত, কর্নেল। জেনারেল কার্টিস চ্যান্ডলার সরাসরি অর্ডার করেছেন আমাকে। তার নির্দেশে কোনো অস্পষ্টতা নেই। ব্যাটালিয়নের সদস্য নয়, এমন কেউ এই এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না, তাদের মধ্যে আপনিও পড়েন, স্যার।
তার মানে ধরে নিতে পারি, আমাকেও তুমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাও?
জেনারেল কার্টিসের সই করা অনুমতিপত্র যদি দেখাতে না পারেন, নার্ভাস ভঙ্গিতে বলল ক্যাপটেন লুইস। নির্দেশ দেয়া হলে, সেটা আমি পালন করি।
গোয়ার্তুমি করলে তোমার বিপদ হবে, ক্যাপটেন। কিসে নিজের ভালো হবে, সেটা আরেকবার চিন্তা করে দেখো।
প্লিজ, নো ট্রাবল, কর্নেল।
তাহলে যা বলছি করো। লোকদের নিয়ে বেসে ফিরে যাও, পেছন ফিরে তাকাবার কথা চিন্তা পর্যন্ত কোরো না।
বিতর্কটা উপভোগ করছিল পিট, তবে চেহারায় অনিচ্ছার একটা ভাব নিয়ে ওদের দিকে পেছন ফিরল ও, ঢাল বেয়ে নেমে গেল ট্রেঞ্চে। পায়ের নিচের আলগা মাটি সরাতে শুরু করল। অলস পায়ে এগিয়ে এসেট্রেঞ্চের কিনারায় দাঁড়ালেন অ্যাডমিরাল, তার পাশে জিওর্দিনো। দু’জনেই পিটের কাজ দেখছে।
এখনও ইতস্তত করছে ক্যাপটেন লুইস। পদের দিক থেকে অনেক ছোট সে, কিন্তু তাকে দেয়া নির্দেশটা পরিষ্কার। সিদ্ধান্ত নিল, সে যে ভূমিকা নিয়েছে সেটাই সঠিক। তদন্ত হলে জেনারেল কার্টিস তাকে সমর্থন করবেন।
এলাকাটা খালি করার জন্য সার্জেন্টকে নির্দেশ দিতে যাচ্ছে সে, তার আগেই ঠোঁটে হুইসেল তুলে বাজিয়ে দিল কর্নেল হোলিস।
হরর ফিল্মেই শুধু এ ধরনের দৃশ্য দেখা যায়, কবর থেকে একযোগে উঠে দাঁড়ায় অতৃপ্ত আত্মারা। এতক্ষণ যেগুলোকে ঝোঁপ-ঝাড় বলে মনে হচ্ছিল, হঠাৎ সেগুলো সটান দাঁড়িয়ে পড়ল খাড়া হয়ে। সচল ঝোঁপগুলো দ্রুত ক্যাপটেন আর তার সৈনিকদের ঘিরে ফেলল এটা অর্ধবৃত্তের ভেতর।
অগ্নিদৃষ্টি হানল কর্নের হোলিস। বুমম, তুমি মারা গেছ!
ক্যাপটেন লুইসের জেদ চুরমার হয়ে গেল। আমি… আমি অবশ্যই রিপোর্ট করব.. জেনারেল কার্টিসের কাছে …, হাঁপাতে শুরু করল সে।
করবে বৈকি, ঠাণ্ডা সুরে বলল কর্নেল। তাকে তুমি আরও রিপোর্ট করবে, আমি যে নির্দেশ পেয়েছি সেটা এসেছে জয়েন্ট চিফস-এর জেনারেল মেটক্যাফের কাছ থেকে। পেন্টাগনের সাথে যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাই সম্ভব। সিভিলিয়ান না আমরা, গনগোরা হিলে তোমরা যে কাজ করছে তাতে বাধা দিতে আসিনি এখনও। বা, নদীর কিনারায় জেনারেল যে দায়িত্ব পালন করছেন, তাকেও নাক গলাবার কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই। আমাদের কাজ হলো রোমান সারফেস আর্টিফ্যাক্টস খুঁজে বের করা ও সংসরক্ষণ করা, হারিয়ে বা চুরি হয়ে যাওয়ার আগে। ডু ইউ রিড, ক্যাপটেন?
বুঝেছি, স্যার, জবাব দিল ক্যাপটেন হিল, চঞ্চল দৃষ্টিতে স্পেশাল ফোর্সের ঝোঁপ ঢাকা সদস্যদের দেখছে। রং লাগানো মুখগুলোয় কোনো ভাব ফোটেনি।
পেয়েছি! আরেকটা পেয়েছি! ট্রেঞ্চ থেকে পিটের চিৎকার ভেসে এল।
সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকলেন অ্যাডমিরাল। কিছু একটা আবিষ্কার করেছে।
অধিকার নিয়ে ঝগড়াটা ভুলে যাওয়া হলো, দুদলের সব কজন ভিড় করল ট্রেঞ্চের কিনারায়। ট্রেঞ্চের মেঝেতে হামাগুড়ি দেয়ার ভঙ্গিতে রয়েছে পিট, লম্বা একটা ধাতব বস্তুর গা থেকে আলগা মাটি পরিষ্কার করছে। কাজটা শেষ করতে প্রায় দুমিনিট সময় নিল ও। তারপর, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ধরিয়ে দিল লিলির হাতে।
রাগ বা রেষারেষি দূর হয়েছে, সবাই আগ্রহের সাথে তাকিয়ে থাকল লিলির দিকে। গভীর মনোযোগের সাথে জিনিসটা পরীক্ষা করছে ড. শার্প। চতুর্থ শতাব্দীর তলোয়ার, সমস্ত রোমান, বৈশিষ্ট্য উপস্থিত, ঘোষণা করল সে।
সামান্য মরচের ছাপ, প্রায় অক্ষতই বলা যায়।
মে আই? জিজ্ঞেস করল কর্নেল।
তলোয়ারটা তার দিকে বাড়িয়ে দিল লিলি, দুহাত দিয়ে সেটার হাতলটা শক্ত করে ধরল কর্নেল, ফলাটা মাথার ওপর খাড়া করে তুলল। ভেবে দেখো, একাবার শুধু কল্পনা করো, শেষ যে লোক এটা ধরেছিল সে ছিল রোমান সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক। সতর্কতার সাথে তলোয়ারটা ক্যাপটেনের হাতে ধরিয়ে দিল সে। অটোমেটিক ফায়ার আর্মের বদলে এটা দিয়ে যুদ্ধ করতে কেমন লাগবে তোমার?