আমিও না, যোগ করল জন ডিলিঞ্জার।
ওদের বাড়ানো হাতগুলো এক এক করে মুচড়ে দেয়ার সময় আকস্মিক স্বস্তির একটা পরশ অনুভব করল পিট।
যদি বলি তোমাদের দেখে খুশি হয়েছি, তালকে তিল করার একটা উদাহরণ হবে সেটা জানতে পারি, আপনারা এখানে কেন?
আপনার বাবা, সিনেটর তার প্রভাব খাঁটিয়েছেন হোয়াইট হাউসে। লেডি ফ্ল্যামবোরো মিশন সম্পর্কে রিপোর্ট দেয়া মাত্র শেষ করেছি, ব্যাখ্যা করল কর্নেল, এই সময় অর্ডার হলো, দল রেডি করে এখানে হাজিরা দিতে হবে, মেঠোপথ ধরে। গোটা ব্যাপারটা চুপিচুপি সারার জন্য বারবার সতর্ক করা হয়েছে। ক্লাসিফায়েড, ক্লাসিফায়েড! আমাকে বলা হয়েছে, আমি রিপোর্ট করার পর শুধু আমাদের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারবেন ফিল্ড কমান্ডার।
পিট বলল, এখানে ফিল্ড কমান্ডার কে জানেন?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কার্টিস চ্যান্ডলার।
জানি, স্টিল-ট্রাপ চ্যান্ডলার। আট বছর আগে ন্যাটোয় তার অধীনে কাজ করেছি। এখনও তার ধারণা, শুধু আমার দিয়েই যুদ্ধে জেতা যায়।
আপনার ওপর দায়িতুটা কী?
আপনার ও ড. শার্পের প্রজেক্ট যাই হোক, আপনাদের অ্যাসিস্ট করা। অ্যাডমিরাল, সিনেটরের সাথে পরামর্শ করে সরাসরি পেন্টাগনে রিপোর্ট করবেন। ব্যস, এইটুকুই জানি আমি।
হোয়াইট হাউসের কথা উঠছে না?
কাগজে কিছু লেখা হয়নি, অ্যাডমিরাল ও লিলির দিকে তাকাল কর্নেল, সিঁড়ি বেয়ে এইমাত্র নেমে এসেছেন ওরা।
অ্যাল জিওর্দিনোকে আলিঙ্গন করল লিলি, অ্যাডমিরালকে নিজের পরিচয় জানাল জন ডিলিঞ্জার। পিটকে একপাশে টেনে নিয়ে গেল কর্নেল।
এখানে আসলে ঘটছেটা কী বলুন তো? নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল সে। সার্কাস?
ঠোঁট টিপে হাসল পিট। খুব একটা ভুল বলেননি।
আমার স্পেশাল ফোর্সের কাজটা কী হবে?
ওরা যখন এসে পড়বে, বলল পিট, হঠাৎ গম্ভীর হয়ে উঠল ও, আপনার কাজ হবে পাহাড়টা উড়িয়ে দেয়া।
.
৭১.
ভার্জিনিয়া থেকে মাটি কাটার বিরাট এক যন্ত্র ব্যাক-হো নিয়ে এসেছে স্পেশাল অপারেশনস ফোর্স। মার্কার পতাকা গাঁথা ঢালের ওপর উঠে এল সেটা। দশ মিনিট চেষ্টা করার পর যন্ত্রটা কীভাবে চালাতে হয় শিখে ফেলল পিট। আড়াই মিটার চওড়া বালতিতে করে পাথর আর মাটি সরানোর কাজ আরম্ভ হয়ে গেল।
এক ঘণ্টাও লাগল না, ছমিটার গভীর, বিশ মিটার লম্বা একটা ট্রেঞ্চ তৈরি করা হলো পাহাড়টার পেছন দিকের ঢালে। এই সময় বাধা পড়ল কাজে। তীর বেগে আগে আগে এল একটা স্টাফ কার, পেছনে ট্রাক ভর্তি সশস্ত্র সৈনিকের দল।
স্টাফ কারের ঢাকা পুরোপুরি থামেনি, লাফ দিয়ে নিচে নামল খাড়া মেরুদণ্ড নিয়ে একজন ক্যাপটেন। এটা একটা নিষিদ্ধ এলাকা, চিবুক উঁচু করে ধমকের সুরে বলল সে। কাল আমি নিজে আপনাদের এদিকে আসতে নিষেধ করেছি। ইকুইপমেন্ট নিয়ে চলে যান, এক্ষুনি চলে যান।
ব্যাক-হো-র সিট থেকে ধীরে সুস্থে নামল পিট, ট্রেঞ্চের কিনারায় দাঁড়িয়ে বুকে। ভেতরে তাকাল, ক্যাপটেন বা সৈনিকদের উপস্থিতি সম্পর্কে যেন সচেতন নয়।
লাল হয়ে উঠল ক্যাপটেনের চেহারা। সার্জেন্টের উদ্দেশে হুঙ্কার ছাড়ল সে, সার্জেন্ট ও হারা, তোমার লোকজনকে তৈরি হতে বললো, এলাকা থেকে সিভিলিয়ানদের সরিয়ে দিতে হবে।
ধীরে ধীরে ঘুরল পিট, মৃদু হাসল। দুঃখিত, আমরা কোথাও যাচ্ছি না।
হাসল ক্যাপটেনও, তবে সেটা তাচ্ছিল্যের হাসি। তিন মিনিট, মিস্টার। ইকুইপমেন্ট নিয়ে কেটে পড়ার জন্য তিন মিনিট সময় দেয়া হয়েছে আপনাদের।
কাগজপত্র দেখবেন না? এখানে আমাদের থাকার অধিকার আছে কি না জানতে চান না?
কাগজটা জেনারেল কার্টিসের সই করা না হলে, আমি বলব, আপনি অযথা সময় নষ্ট করছেন।
আপনার জেনারেলের চেয়েও ক্ষমতাবান একজন সই করেছেন যে।
তিন মিনিট, উপহাসের সুরে বলল ক্যাপটেন। তারপর আপনাদেরকে আমি জোর করে সরিয়ে দেব।
লিলি, জিওর্দিনো আর অ্যাডমিরাল বসে আছেন ছায়ার ভেতর, স্যামের জিপে } ঘটনাটা উপভোগ করার জন্য এগিয়ে এল সবাই। শুধু হল্টার আর টাইট শর্টস পরে আছে লিলি। এক লাইনে দাঁড়ানো সৈনিকদের চোখের সামনে সুস্বাদু পাকা ফলের মতো হাঁটাহাঁটি শুরু করল সে। প্রতিটি সৈনিক গিলছে তাকে।
ধীরে ধীরে মেজাজ গরম হচ্ছে পিটের।
আপনারা মাত্র বারোজন, ক্যাপটেন। বারোজন প্রকৌশলী, সব মিলিয়ে একশো ঘন্টা কমব্যাট ট্রেনিংও পাননি। আমাকে সাহায্য করছে চল্লিশজন, তাদের যেকোনো দু’জন ত্রিশ সেকেন্ডেরও কম সময়ে আপনাদের সব কটাকে শুইয়ে দিতে পারবে। আমি আবেদন করছি না, ওদের নিয়ে আপনাকে ফিরে যেতে বলছি।
শান্তভাবে এদিক-ওদিক তাকাল ক্যাপটেন। পিটের এক পাশে লিলিকে সৈনিকদের সামনে হাঁটাহাঁটি করতে দেখল সে। আকাশের দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্তভঙ্গিতে বড় একটা চুরুট ফুকছেন অ্যাডমিরাল। তার পাশে গোবেচারা চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরেকজন, সিলিংয়ের সাথে ঝুলছে একটা হাত।
লোকগুলোকে এই মুহূর্তে ঝেটিয়ে বিদায় করো! গলার রগ ফুলে উঠল তার।
সৈনিকরা দুপা এগোবার আগেই, যেন ভোজবাজির মতো উদয় হলো কর্নেল হোলিস। আশাপাশের কালচে সবুজ ও পাথুরে ধূসর পরিবেশের সাথে তার ক্যামোফ্লেজল্ড ব্রাটল ড্রেস ও গ্রিজ মাখানো হাত দুটো বিশ্বস্ততার সাথে প্রায় হুবহু সঙ্গতি বজায় রেখেছে। মাত্র পাঁচ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছে সে, ঝোঁপঝাড়ের ভেতর প্রায় গোটা শরীরটাই আড়াল করা।