ভিয়েতনামে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন কার্টিস। বিনা নোটিশে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা উন্মত্ত নারী ও পুরুষদের হত্যা করার তিক্ত অভিজ্ঞতা আজও ভুলে যাননি তিনি। মেক্সিকানরা নদী পেরোতে শুরু করলে তাদের মাথার ওপর ফাঁকা গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন সৈনিকদের।
তাতে যদি তারা না থামে, সৈনিক হিসেবে নিজের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন কার্টিস চ্যান্ডলার। যতই রক্তপাত ঘটুক না কেন, মারা যাক নারী ও শিশু, নির্দেশ পেলে নির্বিচারে গুলিবর্ষণের আদেশ দেবেন তিনি।
.
টেলিস্কোপটা শখের জিনিস, ছাদে শুয়ে মাঝেমধ্যে তারা দেখে স্যাম ট্রিনিটি। সেটা চেয়ে নিয়ে তার দোকানের ছাদে উঠে পড়েছে পিট।
পশ্চিম পাহাড় সারির পেছনে ঢলে পড়েছে সূর্য, দ্রুত অন্ধকার নেমে আসছে চারদিকে। হঠাৎ করে রিয়ো গ্র্যান্ডের অপর তীর উদ্ভাসিত হয়ে উঠল উজ্জ্বল আলোর বন্যায়। একসাথে জ্বলে উঠল অসংখ্য বহুরঙা ফ্লাডলাইট, কোনোটা অন্ধকার আকাশের গায়ে নকশা তৈরি করল, কোনোটা শহরের মাঝখানে খাড়া করা উঁচু টাওয়ারের গায়ে স্থির আলো ফেলল।
রঙচঙে কাপড় ও পাখির পালক দিয়ে মাথা ঢাকা একটা মূর্তির ওপর স্থির হলো পিটের দৃষ্টি। নল ঘুরিয়ে মূর্তিটাকে আকারে বড় করল ও। টাওয়ারের মাথায়, সরু একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে সে। পরনে হাঁটু ঢাকা সাদা আলখেল্লা। তার হাত না আর লাফঝাঁপ লক্ষ করে পিট অনুমান করল, বক্তৃতা দিচ্ছে।
কে হতে পারে লোকটা? জিজ্ঞেস করল পিট, নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ করে নয়। সার্ভের ফলাফল, আন্ডারগ্রাউন্ড প্রোফাইল রেকডিং পরীক্ষা করছেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার ও লিলি।
অদ্ভুত কাপড় পরে আছে, ভাব দেখে মনে হচ্ছে লোকজনকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে সে।
মুখ তুলে পিটের দিকে তাকালেন অ্যাডমিরাল। কে আবার হবে, নিশ্চয়ই ভুয়া টপিটজিন।
লিলি জানতে চাইল, লক্ষণ দেখে কী বুঝছ, আজ রাতে ওরা সীমান্ত পেরোবে?
টেলিস্কোপ থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নাড়ল পিট। সব কিছু গুছিয়ে আনার জন্য অমানুসিক পরিশ্রম করছে ওরা। আমার ধারণা, আরও আটচল্লিশ ঘণ্টা সময় নেবে। কাঁচা কাজ করার লোক টপিটজিন নয়।
টপিটজিন ওর আসল নাম নয়, পিটকে জানালেন অ্যাডমিরাল। ওর আসল নাম রবার্ট ক্যাপেসটার।
ব্যবসাটা ভালোই ধরেছে, মন্তব্য করল পিট।
দুটো আঙুল খাড়া করলেন অ্যাডিমিরাল, দুটো মাঝখানে এক ইঞ্চির মতো ব্যবধান। এটুকু দূরত্ব পেরোতে পারলেই মেক্সিকো দখল করে নেবে রবার্ট।
নদীর ওপারে ওই সমাবেশ যদি কোনো লক্ষণ হয়, লোকটা আমেরিকার গোটা দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল দাবি করে বসবে।
দাঁড়াল লিলি, কোমরে হাত রেখে আড়মোড়া ভাঙল। কাজ ছেড়ে দিয়ে এইভাবে বসে থাকা, একদম ভাল্লাগছে না। সব কাজ আমরা করলাম, আর কৃতিত্ব চলে যাচ্ছে সামরিক প্রকৌশলীদের ভাগে। খোঁড়াখুঁড়ির কাজ দেখতে দিতেও আপত্তি ওদের, স্যাম সাহেবের সম্পত্তি থেকে সরে আসতে বাধ্য করল। ওরা মানুষকে যেন মানুষ বলেই গণ্য করে না।
পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করে হাসল পিট ও অ্যাডমিরাল, কেউ কোনো মন্তব্য করার ঝুঁকি নিল না।
কলমের মাথাটা চিবাচ্ছে লিলি। সিনেটর সাহেব, তোমার বাবা, তিনিই বা কেন যোগাযোগ করছেন না?
কী জানি? কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন অ্যাডমিরাল, পিট কী চায় আমি তাকে জানিয়েছি। বলল, যা হোক একটা ব্যবস্থা করবে সে।
হোয়াইট হাউসে কী ঘটছে জানতে পারলে ভালো হতো, বিড়বিড় করল লিলি।
অ্যাপ্রন পরে ছাদে উঠে এল স্যাম ট্রিনিটি।
স্যুপ যে ঠাণ্ডা হয়ে এল। উত্তরে কেউ কিছু বলার আগে ঘাড় ফিরিযে তাকাতেই সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে রাস্তার ওপর এক সার আলো দেখতে পেল সে।
সন্দেহ নেই, আরেকটা আর্মি কনভয়, ঘোষণার সুরে বলল সে। দাড়িওয়ালা জেনারেল
রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে, গাড়ি বা ট্রাকের এ-পথে আসার কথা নয়।
পাঁচটা ট্রাক দেখতে পেল ওরা, সামনে একটা জিপ। পেছনের ট্রাকটা টেনে আনছে ইকুইপমেন্ট বোঝাই লম্বা এক ট্রেইলরকে, ক্যানভারস দিয়ে ঢাকা। কনভয়টা বাঁক নিয়ে গনগোরা হিলে প্রকৌশলীদের ক্যাম্পের দিকে বা সোজা পথে রোমার দিকে গেল না। জিপের পিছু পিছু ট্রাকগুলো চলে এল স্যামস মিউজিয়ামের ড্রাইভওয়েতে, থামল গ্যাস পাম্প আর দোকানের মাঝখানে। জিপ থেকে নিচে নেমে চারদিকে তাকাল আরোহীরা, কাকে যেন খুঁজছে।
তিনটে চেনামুখ দেখতে পেল পিট। দু’জন ইউনিফর্ম পরে আছে, অপরজন পরেছে সোয়েটার আর ডেনিম। ছাদের কার্নিস থেকে সানশেডে নামল পিট, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে। সানশেডের কিনারা ধরে ঝুলে পড়ল ও। কোনো শব্দ করেনি। কিনারা ছেড়ে দিতেই লোকগুলোর মাঝখানে ঝুপ করে পড়ল, আহত পায়ে ব্যথা লাগায় গুঙিয়ে উঠল। পিট যেমন ওদেরকে এখানে দেখে অবাক হয়েছে, ওরাও তেমনি হঠাৎ করে পিটকে দেখে বিস্মিত হলো।
আকাশ থেকে পড়ার অভ্যেসটা দেখছি তোমার গেল না! দুকান বিস্তৃত হাসি নিয়ে বলল অ্যাল জিওর্দিনো। ফ্লাডলাইটের আলোয় রক্তশূন্য, স্নান দেখার তার চেহারা, সিলিংয়ে ঝুলছে একটা হাত। তবে হাসিখুশি ভাব আর মনের জোর আগের মতোই অটুট আছে তার।
সে অভিযোগ তো আমারও।
সামনে এগিয়ে এল কর্নেল হোলিস। ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি আবার দেখা হবে আমাদের।