ড্রাগ ব্যবসা বাদ দেয়ার পারিবারিক সিদ্ধান্তের পর এটা তিনি ব্যবহার করেন না বললেই চলে। ঘুরে দাঁড়াল পল ক্যাপেসটার, ভাইকে নিয়ে ডাইনিং সেলুনের দিকে এগোল। এসো, লাঞ্চ তৈরি হয়ে আছে। শ্যাম্পেনের স্বাদ নিতে শিখেছ জেনে আঙ্কেল থিওডোরের কাছ থেকে কয়েকটা বোতলও চেয়ে এনেছি।
ডাইনিং সেলুনে ঢুকে ভাইয়ের হাত থেকে একটা গ্লাস নিল রবার্ট। আমি ভেবেছিলাম প্রেসিডেন্ট হাসান তোমাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে।
দেখতে হবে তো গৃহটা কার! হেসে উঠল পল। ওটা আমি কিনেছিলাম গোপন একটা টানেল আছে বলে। মাটির নিচ দিয়ে একশো মিটার গেছে ওটা, উঠেছে একটা মেকানিকের রিপেয়ার শপে।
সেটার মালিকও তুমি।
অবশ্যই।
রবার্ট তার গ্লাসটা উঁচু করল। মা ও বাবার পুণ্য স্মৃতি এবং তাদের রাজকীয় পরিকল্পনা উদ্দেশ্যে।
মাথা ঝাঁকাল পল। যদিও এই মুহূর্তে সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনাটা আমার দ্বারা মিসরে নয়, বরং তোমার দ্বারা মেক্সিকোয় বাস্তবায়িত হবার সম্ভাবনাই বেশি দেখা যাচ্ছে।
লেডি ফ্ল্যামবোরো নাটকের জন্য তোমাকে দায়ী করা যায় না। পরিবারের তরফ থেকে পরিকল্পনাটা অনুমোদন করা হয়। আমেরিকানদের চালাকি সম্পর্কে আগে থেকে কিছু আন্দাজ করা সত্যি ভারি কঠিন।
আমাকে আসলে ডুবিয়েছে সুলেমান আজিজ। অপারেশনটা সামলাতে পারেনি সে। দুঃখ এই যে আমি তাকে নিজের হাতে শান্তি দিতে পারলাম না।
কেউ বাঁচেনি?
পারিবারিক এজেন্টরা রিপোর্ট করেছে, বেশির ভাগই মারা গেছে, সুলেমান আজিজ ও ম্যাকাডোসহ। কয়েকজনকে বন্দি করা হয়েছে, তবে তারা কেউ আমাদের ভূমিকা সম্পর্কে কিছু জানেন না।
সেক্ষেত্রে নিজেদেরকে আমরা ভাগ্যবান ধরে নিতে পার। ম্যাকাডো, সুলেমান আজিজ নিহত হওয়ায়, দুনিয়ার কোনো ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি আমাদেরকে ছুঁতে পারবে না। ওরা দু’জনেই একমাত্র লিঙ্ক ছিল।
প্রেসিডেন্ট হাসান দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে নিয়েছে, তা না হলে আমাকে গৃহবন্দি করত না।
তা ঠিক, একমত হলো রবার্ট। তবে নিরেট প্রমাণ ছাড়া তোমার বিরুদ্ধে কিছু করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সে চেষ্টা করলে তোমার ভক্ত আর অনুসারীরা দাঁড়িয়ে যাবে, ঠেকিয়ে দেবে যেকোনো ট্রায়াল। পরিবারের তরফ থেকে পরামর্শ হলো, ধৈর্য ধরে চুপচাপ থাকো, এই ফাঁকে তোমার শক্তির ভিতগুলো শক্ত করে নাও। অন্তত একটা বছর কোনো শব্দ কোরো না, দেখেই না কোনো দিকে তাকাস বয়।
বাতাস এখন শুধু হাসান, হে’লা কামিল আর আবু হামিদের পিঠে লাগবে, তিক্তকণ্ঠে বলল পল।
আরে, রসো! ধর্মীয় উন্মাদনা কী জিনিস, বোঝেই তো। মোল্লা-মৌলবীদের যদি ঠিকমতো উত্তেজিত করতে পারো, ওরাই তোমাকে মিসরের পার্লামেন্টে বসাবে। এই আফিম আজও বিক্রি হয়, বিপুল চাহিদা আছে, আর সেজন্যই তো আমাদের দুভাইকে জিনিসটা বিলি করতে পাঠানো হয়েছে।
চোখ কুঁচকে রবার্টর দিকে তাকাল পল। আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির গুপ্তধন আবিষ্কার হলে ঘটনার গতি সম্ভবত খানিকটা দ্রুত হতো।
শেষ খবরটা পড়েছ তুমি? জিজ্ঞেস করল রবার্ট।
হ্যাঁ, আমেরিকানরা দাবি করছে স্টোরেজ চেম্বারটা নাকি টেক্সাসে পেয়েছে তারা।
প্রাচীন জিওলজিকাল চার্টগুলো হাতে পেলে তোমার খুব কাজে লাগবে। তেল ও সোনার খনি পাওয়া গেলে, মিসরের অর্থনীতি বদলে দেয়ার সমস্ত কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করতে পারবে তুমি।
সম্ভাবনাটা নিয়ে ভেবেছি, বলল পল। আমেরিকানদের যতটুকু চিনি, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির সম্পদ নিয়ে দর কষাকষি করবে ওরা, আর মিসরের প্রাপ্য জিনিসগুলো থেকে সামান্য কিছু পাবার জন্য ওদের হাতে-পায়ে ধরবে হাসান। আমি জনগণকে সাথে নিয়ে দাবি তুলতে পারি, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির সমস্ত সম্পত্তি আমাদের পূর্বপুরুষদের, কাজেই আংশিক নয়, সবটুকু চাই আমাদের। বাঁকা হাসি ফুটল তার ঠোঁটে। ইসলামের ইতিহাস এক-আধটু রং চড়িয়ে আর পবিত্র কোরানের ব্যাখ্যায় সামান্য হেরফের ঘটিয়ে জেহাদের ডাক দিলেই সাধারণ ধর্মভীরুরাও হাসানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
হেসে উঠল রবার্ট। ভাষণ দেয়ার সময় সাবধান। তিনশো একানব্বই খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টানরা হয়তো বেশির ভাগ পার্চমেন্ট আর প্যাপরিরাস পুড়িয়ে ফেলেছিল, তবে লাইব্রেরিটাকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয় মুসলমানরা ছয়শো ছেচল্লিশ সালে।
ইরানের ক্যাভিয়ার আর স্কটল্যান্ডের স্মোকড় স্যামন পরিবেশন করল একজন ওয়েটার। খাওয়ার সময় কয়েক মিনিট চুপচাপ থাকলে দুই ভাই।
তারপর পল বলল, লাইব্রেরির সম্পদ দখল করার গুরুদায়িত্ব তোমার কাঁধে পড়েছে, আশা করি ব্যাপারটা তুমি উপলব্ধি করতে পারছ?
শ্যাম্পেন ভর্তি গ্লাসের কিনারা দিয়ে পলের দিকে তাকাল রবার্ট। তুমি আমার সাথে কথা বলছ, নাকি টপিটজিনের সাথে?
হেসে উঠল পল। টপিটজিনের সাথে।
গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখল রবার্ট, তারপর ধীরে ধীরে হাত দুটো মাথার দুপাশে খাড়া করল, যেন সিলিংয়ের একটা পোকাকে ধরতে চায়। তার চোখে সম্মোহিত দৃষ্টি ফুটে উঠল, উদাত্ত কণ্ঠে শুরু করল সে, আমরা হাজারে হাজারে মাথাচাড়া দেব। আমরা মাথাচাড়া দেব লাখে লাখে। লক্ষ জনতা, কিন্তু এক দেহ এক প্রাণ। জনতা আমরা নদী পেরোব। নদী পেরিয়ে আমাদের ভূমি থেকে উদ্ধার করব প্রাচীন সম্পদ। ওই জমি আমাদের, কারণ আমেরিকানরা ওটা আমাদের কাছ থেকে চুরি করে নিয়েছিল। হয়তো বহুলোক প্রাণ হারাবে, কিন্তু সেটা হবে আত্মত্যাগ। দেবতারা চান, ন্যায্য অধিকার সূত্রে যা মেক্সিকানদের, তা প্রাণ বিসর্জন দিয়ে হলেও উদ্ধার করতে হবে। হাত নামিয়ে লাজুকে হাসি হাসল সে। তবে একটু মাজা-ঘষা করতে হবে।