সম্ভবত কয়েকজনকে, বলল হার্ব গার্জা। কুকুর বা বন্য জন্তু যেগুলোকে টেনে নিয়ে যায়নি, পরে ফিরে এসে ভেনাটর সেসব মাটি চাপা দেন। আমরা ধরে নিতে পারি, সেগুলোও ধুলো হয়ে গেছে।
হার্ব ঠিকই বলছে, সায় দিল পিট। সারফেস গ্রাউন্ডে থাকলে যেকোনো হাড় একসময় ভেঙে যাবে।
স্থির পাথর হয়ে গেল লিলি। গনগোরা হিলের একটা চুড়ার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল সে, যেন সম্মোহিত হয়ে পড়েছে। গুপ্তধনের কয়েক মিটার দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছি, সত্যিই কি তাই? এখনও আমার বিশ্বাস হতে চাইছে না।
ষোলোশো বছর আগে তখনকার জ্ঞানভাণ্ডার রক্ষার জন্য অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, নিচু গলায় বলল পিট। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার আমাদের পালা। মাটি খুঁড়ে ওগুলো উদ্ধার করা দরকার।
.
৬৭.
পরদিন সকালে লেক ওজাকস, মিসৌরীতে পৌঁছলেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। লোহার প্রকাণ্ড গেট খুলে তাকে ভেতরে ঢুকতে দিল সিক্রেট সার্ভিস গার্ডরা। আঁকাবাঁকা পথ ধরে নিজেই গাড়ি চালিয়ে প্রেসিডেন্টের হান্টিং লজে চলে এলেন তিনি।
শিপস্কিন জ্যাকেট পরে পোর্চ থেকে ধাপের ওপর নেমে এলেন প্রেসিডেন্ট। সময়মতো আসতে পেরেছেন, সেজন্য ধন্যবাদ, অ্যাডমিরাল।
ওয়াশিংটনে ডাকলে আরও দেরি হতো।
আপনাকে ব্যস্ততার মধ্যে ফেলে দেয়ায় সত্যি আমি দুঃখিত।
বৈঠকের গুরুত্ব সম্পর্কে আমি সচেতন।
অ্যাডমিরালের পিঠে একটা হাত রাখলেন প্রেসিডেন্ট, ধাপ বেয়ে উঠছেন। চলুন, আগে ব্রেকফাস্টটা সেরে নেবেন। ডেইল নিকোলাস, জুলিয়াস শিলার আর সিনেটর পিট অপেক্ষা করতে পারেননি, ডিম আর ভেড়ার মাংসের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
আপনার আবিষ্কারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে অর্ধেক রাত আলোচনা করেছি আমরা।
লোক মারফত যে রিপোর্ট পাঠিয়েছি, নতুন আর কিছু বলার নেই আমার, জানালেন অ্যাডমিরাল।
কোথায় খুঁড়বেন তার কোনো ডায়াগ্রাম পাঠাননি।
রিপোর্ট পাঠানোর পর স্থির করা হয়েছে, কোথায় খোঁড়া হবে।
হালকা সুরে প্রেসিডেন্ট বললেন, ব্রেকফাস্টের সময় সবাই আমরা দেখব।
কয়েকটা সুদৃশ্য কামরা পেরিয়ে লম্বা লিভিংরুমে চলে এলেন তারা। পাথুরে ফায়ারপ্লেসে ছোট্ট আগুন জ্বলছে, সেটাকে পাশ কাটিয়ে আরেক দরজা দিয়ে ডাইনিংহলে ঢুকলেন। ডেইল নিকোলাস আর জুলিয়াস শিলার জেলেদের পোশাক পরে আছেন, সিনেটর পিট পরেছেন সোয়েটসুট খাওয়ায় ছেড়ে তিনজনই ওরা মুখ তুলে তাকালেন। সিনেটরের গম্ভীর চেহারা দেখে মনে মনে সতর্ক হয়ে উঠলেন অ্যাডমিরাল।
এক ভদ্রলোকের কথা প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেননি- হারল্ড উইজমার, প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা, প্রশাসনে তাঁর বিরাট প্রভাব রয়েছে। ইনি কেন উপস্থিত রয়েছেন বুঝতে পারলেন না অ্যাডমিরাল।
সাদা কোট পরা একজন স্টুয়ার্ড অ্যাডমিরালের অর্ডার নিয়ে চলে গেল।
কুশলাদি বিনিময়ের পর প্রথম কথা বললেন হারল্ড উইজমার। কোনো ভণিতার মধ্যে গেলেন না ভদ্রলোক, সরাসরি বললেন, আবিষ্কারটা বিস্ময়কর, কাজেই আমরা সবাই আপনাকে অভিনন্দন জানাই। ঘন দাড়ি গোঁফ তার ঠোঁট দুটো প্রায় ঢেকে রেখেছে, টাক-মাথাটা ঠিক যেন একটা বাস্কেটবল। বাদামি চোখ। মাটি আপনারা কখন সরাবেন বলে ঠিক করেছেন?
কাল। ব্রিফকেস থেকে একটা জিওলজিককাল সার্ভে ম্যাপ বের করলেন অ্যাডমিরাল, তাকে ঝোমার উপরকার টপোগ্রাফি দেখানো হয়েছে। কোথায় কোথায় খোঁড়া হবে তা দেখানোর জন্য ব্রিফকেস থেকে বের করলেন আরেকটা নকশা। চূড়া থেকে আট মিটার নিচে দুটো টানেল তৈরি করে এগোব আমরা।
চড়াটা গনগোরা হিল-এর?
হ্যাঁ। টানেলগুলো উল্টোদিকের ঢালে বেরোবে, নদীর সামনে, দুটো আলাদা লেভেলে। দুটোর একটা, আমরা আশা করছি, পাথরে লেখা জুনিয়াস ভেনাটরের স্মারক বা আদি এন্ট্রি শ্রাফট ছুঁয়ে যাবে।
আপনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির শিল্পকর্ম ওখানে আছে? তীক্ষ্ণকণ্ঠে জানতে চাইলেন হারল্ড উইজম্যান।
কোনো সন্দেহ নেই, শান্তসুরে বললেন অ্যাডমিরাল। গ্রিনল্যান্ডের জাহাজ থেকে উদ্ধার করা ম্যাপ রোমায় স্যামের পাওয়া শিল্পকর্মের কাছে নিয়ে গেছে আমাদেরকে, ফলে খাপে খাপে মিলে গেছে সব।
কিন্তু ওগুলো কী
না, জিনিসগুলো খাঁটি রোমান, উইজম্যানকে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন। অ্যাডমিরাল এর মধ্যে কোনো ফাঁকিবাজি বা জালিয়াতি নেই, কেউ ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করতে না কাউকে। জিনিসগুলো ওখানে আছে, আমরা জানি একমাত্র প্রশ্ন হলো ভাণ্ডারটা কত বড়।
গুপ্তধন, সম্পদ, লাইব্রেরি বা শিল্পকর্ম যাই বলি না কেন, ওগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা সন্দিহান নই, পরিবশে হালকা করার জন্য বললেন জুলিয়াস শিলার। আমরা যেটা নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি, তা হলো, এ-ধরনের বিশাল একটা আবিষ্কারের ফলে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কী হবে। আমার ধারণা, প্রতিক্রিয়া আন্দাজ করা অত্যন্ত কঠিন। আরও কঠিন পরিস্থিতিটা সামাল দেয়া।
নিস্পলক চোখে শিলারের দিকে তাকিয়ে থাকলেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। প্রাচীন দুনিয়ার জ্ঞান প্রকাশ পেলে দাঙ্গা বেঁধে যাবে, এ রকম মনে করার কী কারণ আছে আমি বুঝতে পারছি না। তাছাড়া, বিষয়টা নিয়ে আলোচনা আরও আগে করা উচিত ছিল না কি? হে’লা কামিল তো তার ভাষণে ঘোষণা করেছেন…।